প্রানীজ আমিষের অন্যতম উৎস হলো মাছ। মাছ একটি পুষ্টিকর খাবার, মাছের মধ্যে বিভিন্ন পুষ্টি উপাদান রয়েছে। এছারাও মাছ হলো বানিজ্যিক চাষাবাদের ভালো একটি উৎস। মাছ চাষের বিভিন্ন পদ্ধতি রয়েছে, তবে বর্তমানে আধুনিক পদ্ধতিতে মাছ চাষ বেশি করা হচ্ছে। কারন উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করে অল্প সময়ে, স্বল্প পুঁজি দিয়ে এ পদ্ধতিতে মাছ চাষ করা হয়।
আধুনিক পদ্ধতিতে আপনিও কি মাছ চাষ করতে চান? কিংবা ছোট পুকুরে মাছ চাষ করতে চান? তাহলে মাছ চাষে লাভবান হতে আপনাকে সঠিক নিয়ম জানতে হবে। আজকের আর্টিকেলটি পড়ে জেনে নিন মাছ চাষের আধুনিক পদ্ধতি ও ছোট পুকুরে মাছ চাষের পদ্ধতি সম্পর্কে।
মাছ চাষের আধুনিক পদ্ধতি
শারিরিক সুস্থতার জন্য আমাদের পর্যাপ্ত আমিষের প্রয়োজন। আর শারিরিক সুস্থতায় যতটুকু আমিষ প্রয়োজন তা অধিক আসে মাছ থেকে। ফলে আধুনিক পদ্ধতিতে মাছ চাষ করে একদিকে চাষিরা যেমন লাভবান হচ্ছে, অন্যদিকে আমিষের চাহিদা পূরণ সহজ হয়ে উঠেছে। মাছ চাষে সফল হতে হলে, আপনাকে আধুনিক পদ্ধতিতে মাছ চাষ করতে হবে, তাহলে আপনি সফলতা অর্জন করতে পারবেন। মাছ চাষের সঠিক পদ্ধতি হিসেবে আধুনিক পদ্ধতি বেছে নেওয়াই উত্তম। আধুনিক মাছ চাষের পদ্ধতি যারা জানতে চান তারা নিচের আলোচনা থেকে জেনে নিন।
- মাছ চাষ করে সফল হতে হলে প্রথমেই আপনাকে, মাছ চাষের পূর্ব পরিকল্পনা করে নিতে হবে। কোন জাতের মাছ চাষ করবেন, কতদিন পর্যন্ত করবেন, মোট খরচ কত করবেন এসব বিষয় ভালোভাবে আপনাকে চিন্তাভাবনা করে নিতে হবে।
- পুকুর খনন সঠিকভাবে করতে হবে, পকুর যেখানে খনন করবেন তার পরিবেশ ঠিক রাখতে হবে। পুকুরের গভীরতা সঠিকভাবে করতে হবে, বন্যা, অনাবৃষ্টি এসব মোকাবেলার ব্যবস্থা রাখতে হবে। পুকুরে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা থাকতে হবে, রাক্ষুসে মাছগুলো নিধন করতে হবে।
- মাছ চাষে গুরুত্বপূর্ন একটি বিষয় হলো সঠিক পোনা নির্বাচন। পোনার জাত সঠিক হতে হবে এবং রোগমুক্ত পোনা বাছাই করতে হবে। হ্যাচারি থেকে পোনা সংগ্রহ করার পর, পোনা সরাসরি পুকুরে ছাড়া যাবে না। পোনা সঠিকভাবে নার্সিং করার পর পুকুরে ছাড়তে হবে। সঠিকভাবে পোনা নার্সিং এবং পরিবহন না করলে পোনা দুর্বল হয়ে যায় এবং মারা যায়। এজন্য আপনি নতুন হয়ে থাকলে অভিজ্ঞ মৎস চাষীর পরামর্শ নিবেন।
- পুকুরে পোনা পরিবহনের সময় একটি বিষয় খেয়াল রাখবেন, পুকুরের জায়গা অনুযায়ী পোনা পরিবহন করতে হবে।
- মাছ যাতে দীর্ঘদীন বেঁচে থাকে, সেজন্য পানির গুনাগুন ঠিক রাখতে হবে। গুনাগন ঠিক রাখতে, পানির পিএইচ, অম্লত্ব ও ক্ষারত্ব, অক্সিজেন, অ্যামোনিয়া প্রভৃতি স্বাভাবিক রাখতে হবে।
- মাছ চাষে লাভবান হতে মাছের খাবারের দিকে বিশেষভাবে নজর দিতে হবে। মাছের আকার ও বয়স অনুযায়ী মাছকে পর্যাপ্ত পরিমানে পুষ্টিকর ও মানসম্মত খাদ্য দিতে হবে। মাছের খাবার কম ও অতিরিক্ত হওয়া যাবে না এবং নিয়মিত খাবার দিতে হবে।
- মাছকে পর্যাপ্ত পরিমাণে যাতে খাবার দেওয়া সুবিধা হয়, সেজন্য ১৫ দিন পর পর নিয়মিত মাছের ওজন পরীক্ষা করে নিবেন।
- মাছের নিয়মিত স্বাস্থ পরিচর্যা করতে হবে, মাছের শরীরে কোনো ক্ষত আছে কি-না লক্ষ্য রাখতে হবে। মাছের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ার জন্য অভিজ্ঞ মাছ চাষীর পরামর্শ নিয়ে বিভিন্ন ওষধ দিতে হবে।
- পুকুরে নিয়মিত জৈব ও অজৈব সার প্রয়োগ করতে হবে। তবে অতিরিক্ত পরিমাণে প্রয়োগ করা যাবে না। অতিরিক্ত পরিমাণে সার দেওয়ার ফলে পুকুরের পানি নষ্ট হয়ে মাছ মারা যেতে পারে।
- কয়েকদিন পর পর একটি পুকুরে একাধারে মাছ ধরা থেকে বিরত থাকবেন। এতে মাছ আঘাতপ্রাপ্ত হতে পারে, অনেক সময় মাছ খাওয়া বন্ধ করে দেয়। তাই সময় দিয়ে বেশ কিছুদিন পরপর মাছ ধরতে হবে। মাছ ধরার পর দীর্ঘক্ষন যাতে মাছ জীবিত থাকে সেজন্য মাছ ধরার ৮ থেকে ১০ ঘন্টা আগে কোনো খাবার পুকুরে দিতে হবে না।
মাছ চাষ সতর্কতার সাথে করলে সহজেই মাছ চাষ করে সফল হওয়া যায়। আপনি যদি মাছ চাষ করতে চান, তাহলে উপরের বিষয়গুলো ফলো করবেন এবং একজন অভিজ্ঞ মৎস চাষীর পরামর্শ নিবেন। তাহলে মাছ চাষে লোকসান না হয়ে লাভবান হতে পারবেন।
ছোট পুকুরে মাছ চাষ পদ্ধতি
প্রায় অনেকের বাড়ির আশেপাশে ছোট খাটো পুকুর দেখতে পাওয়া যায়। যারা স্বল্প ব্যায়ে, অল্প জায়গায় মাছ চাষ করতে চায়, তাদের জন্য বাড়ির পাশের ছোট পুকুরগুলো বেছে নিতে হবে। ছোট পুকুরে মাছ চাষ করেও লাভবান হওয়া যায়। শুধু মাছ চাষের সঠিক নিয়ম সম্পর্কে জানতে হবে এবং সতর্কতার সাথে পরিশ্রম দিয়ে সে অনুযায়ী কাজ করতে হবে। তো চলুন ছোট পুকুরে মাছ চাষের পদ্ধতি সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক।
ছোট পুকুরে মাছ চাষে সফল হতে আপনাকে প্রথমেই জানতে হবে কোন ধরনের মাছ চাষ ছোট পুকুরে করা ভালো। ছোট পুকুরে আপনাকে এমন ধরনের মাছ চাষ করতে হবে, যেগুলো সাধরণত প্রাপ্ত বয়স্ক অবস্থাতে ১০ থেকে ১২ ইঞ্চি হয়। এর থেকে যে মাছ গুলো বেশি বড় হয়, সেগুলো ছোট পুকুরে চাষ করা যাবে না। ছোট পুকুরে দেশি মাছ যেগুলো ১০ থেকে ১২ ইঞ্চি মতো লম্বা হয় সেগুলো চাষ করতে হবে। ছোট পুকুরে যে মাছগুলো চাষ করবেন সেগুলো হলো- শিং মাছ, গুলসা মাছ, ট্যাংরা মাছ, মলা মাছ, বাটা মাছ, পাবদা মাছ, টাটকিনি মাছ, চিংড়ি মাছ, কৈ মাছ প্রভৃতি। এ মাছগুলোর মধ্যে যেকোনো একটি মাছ আপনি ছোট পুকুরে চাষ করতে পারেন।
ছোট পুকুরে মাছ চাষে প্রথমেই পুকুর প্রস্তুত করে নিতে হবে। পুকুর ভালোভাবে পরিষ্কার করে, বড় ডালপালাগুলোকে কেটে ফেলতে হবে, পুকুরে রাক্ষুসে মাছ থাকলে সেগুলো নিধন করতে হবে। এরপর চুন ও সার প্রয়োগ করে পুকুর প্রস্তুত করতে হবে। প্রতি ১ শতক জায়গায় ১ কেজি হারে চুন প্রয়োগ করতে হবে। এরপর পানির অম্লত ও ক্ষারত্ব বিবেচান করে পুকুরে জৈব সার প্রয়োগ করতে হবে। পুকুরের আয়তন অনুযায়ী সেখানে মাছ পরিবহন করবেন। মাছের ওজন অনুযায়ী সঠিক খাবার মাছকে দিতে হবে।
সঠিক পদ্ধতি ও সঠিক পরিচর্যা নিয়ে ছোট পুকুরে মাছ চাষ করতে হবে। এ পুকুরে যে মাছগুলো চাষ করা হয়, সেগুলো তুলনামূলকভাবে ছোট হলেও এ মাছগুলো সুস্বাদু এবং পুষ্টিকর। ফলে এ মাছগুলো বাজারে ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। চাহিদা থাকায় সময়ে এ মাছগুলোর দাম ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পায়। আর সেজন্য ছোট পুকুরে মাছ চাষ করেও লাভবান হওয়া যায়।
পুকুরে মিশ্র মাছ চাষ পদ্ধতি
প্রানীজ আমিষের চাহিদা মেটাতে মিশ্র চাষ পদ্ধতি বাংলাদেশেও করা হচ্ছে। একটি পুকুরে একসাথে একের অধিক মাছের পোনা চাষ করার পদ্ধতিকে মাছের মিশ্র চাষ পদ্ধতি বলা হয়। মিশ্র মাছ চাষ পদ্ধতিতে মাছ চাষে একদিকে যেমন উৎপাদিত খাদ্যের স্বদব্যবহার হয়, অন্যদিকে মাছের ফলন ভালো হয়। ফলে মিশ্র চাষ পদ্ধতিতে মাছ চাষ করে চাষিদের তুলনামূলকভাবে লাভ বেশি হচ্ছে। একটি পুকুরে কিভাবে মিশ্র চাষ করতে হবে, কোন মাছের সাথে কোন মাছ চাষ করতে হবে এবং কোন স্তরে কোন মাছ চাষের উপযোগি তার সঠিক ধারণা নিয়ে মিশ্র চাষ করতে হবে। পুকুরের আকার, গভীরতা, আয়তন, পানির দীর্ঘায়িত্বের উপর মিশ্রচাষের পোনা মজুদের ধরন নির্ভর করে। এসব বিষয়ের দিকে লক্ষ্য রেখে মিশ্র পদ্ধতিতে মাছ চাষ করলে, মাছ চাষে অধিক লাভবান হওয়া যাবে। পুকুরে মিশ্র পদ্ধতিতে মাছ চাষ নিয়ে আপনাদের সামনে কিছু তথ্য নিচে তুলে ধরা হলো।
মিশ্র চাষ করার ক্ষেত্রে পোনা মজুদের সময় যে বিষয়গুলো খেয়াল রাখবেন সেগুলো হলো-
- পোনা যেসব প্রজাতির নির্বাচন করবেন, সেগুলো যাতে একে অপরে খাদ্য নিয়ে প্রতিযোগিতা না করে।
- যে পোনাগুলো নির্বাচন করবেন, তারা যেন পরস্পর পরস্পরকে খেয়ে না ফেলে এবং ক্ষতিসাধন না করে।
- সকল স্তরের খাবারের স্বদব্যবহার করতে হবে।
- উভয় মাছ যেন একই সময়ে বিক্রির উপযোগি হয় সে মাছগুলোর পোন বাছাই করতে হবে।
- যেসব মাছের চাহিদা বাজারে বেশি সে মাছগুলো চাষ করতে হবে।
পুকুরের প্রস্তুতি: পুকুরে আগাছা, ডালপালা ভালোভাবে পরিষ্কা করতে হবে। ক্ষতিকর ও রাক্ষুসি মাছগুলো সরিয়ে ফেলতে হবে। একর প্রতি ৯০ থেকে ১০০ কেজি চুন প্রয়োগ করতে হবে। পুকুরের আয়তন অনুযায়ী পুকুরে পর্যাপ্ত পরিমাণে জৈব ও অজৈব সার প্রয়োগ করতে হবে।
পুকুর নির্বাচন: সব ধরনের মাছের মিশ্র চাষে একই ধরনের পুকুর উপযোগি নয়। মাছের বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী পুকুরের ধরন নির্ধারণ করতে হবে। যেমন ধরুন কার্পের সাথে গলদা চিংড়ির মিশ্র চাষ করলে পুকুরের গভীরতা ৪ থেকে ৬ ফুট হতে হবে এবং পুকুরের আয়তন ২০-১০০ শতাংশ হতে হবে।
রুই, কাতলা, সিলাভার কার্প, গ্রাসকার্প এ জাতীয় মাছের মিশ্র চাষের ক্ষেত্রে, পুকুরের গভীরতা ৫ থেকে ১০ ফুট হতে হবে এবং আয়তন ২০ থেকে তার যত উপরে হওয়া যায়।
কার্প ও মাগুরের যদি মিশ্রচাষ করতে চান তাহলে গভীরতা ৪ থেকে ৭ ফুট এবং আয়তন ২০ থেকে ৫০ শতাংশ হতে হবে।
নাইলোটিকা ও মাগুড়ের মিশ্রচাষ যদি করতে চান তাহলে পুকুরের গভীরতা খুব একটা বেশি না হলেও হবে এবং আয়তন ৫ থেকে ৫০ শতাংশ হতে হবে। ৩ থেকে ৫ মাসের মধ্যে এ মাছগুলো আহরন করা হয়, এবং পানি না শুকালে আহরণ করা যায় না, তাই গভীরতা কম হওয়াই ভালো।
পোনা মজুদকালীন সময়: মাছ চাষে লাভবান হতে সতর্কতার সাথে পোনা মজুদ করতে হবে। সুস্থ ও রোগমুক্ত পোনা ভালোভাবে চিনে ক্রয় করতে হবে। সুস্থ পোনাগুলোর চলাফেরা স্বাভাবিক থাকবে। বিশ^স্ত নার্সারী থেকে পোনা নিতে হবে। পুকুরের পানিতে ভালোভাবে খাপ খাওয়ানোর পর পোনা মজুদ করতে হবে। এরপর সঠিক নিয়ম মেনে পোনাগুলো পরিবহন করতে হবে।
মাছকে পর্যাপ্ত পরিমাণে উন্নতমানের খাবার দিতে হবে। পুকুরের পানি ঠিক রাখতে হবে, পরিষ্কার রাখতে হবে। তাহলে মাছের রোগ বালাই কম হবে। এজন্য নিয়মিত পুকুরে পর্যাপ্ত পরিমাণে চুন ও ব্লিচিং পাউডার দিতে হবে। পানির রং অতিরিক্ত সবুজ হওয়া ভালো নয়, তাই অতিরিক্ত সবুজ হয়ে গেলে পুকুরে তুঁতে বা সিউইড রোধ করে এমন ধরণের ওষুধ প্রয়োগ করতে হবে। পানি কমে গেলে পানি সরবরাহ করতে হবে। সঠিক পরিচর্যা, সঠিক পদ্ধতি নিতে পারলে মিশ্র চাষ করে অধিক লাভবন হওয়া যাবে।
কোন মাছে লাভ বেশি
মাছ চাষ করে লাভবান হওয়া সকল মৎস চাষির আশা। মাছ চাষ করতে যারা আগ্রহী তাদের অনেকের মনে একটি প্রশ্ন আসে, কোন মাছে লাভ বেশি। এমন কয়েকটি মাছ রয়েছে যেগুলো চাষে লাভ বেশি হয়। সে মাছগুলো উচ্চ সহনশীল এবং পরিবেশগত হুমকির প্রতিরোধ করতে পারে। তবে মাছ চাষে লাভবান হতে হলে প্রথমেই আপনাকে মাছ চাষের সঠিক পদ্ধতি, সঠিক পুকুর নির্বাচন, পানির পিএইচ এবং মাছ চাষে আপনার দক্ষতার প্রয়োজন। আসুন এবার জেনে নিই কোন মাছে লাভ বেশি হয়-
- চিংড়ি মাছ
- তেলাপিয়া
- সিলভার কার্প
- পাবদা মাছ
- কাতলা মাছ
- শিং মাছ
- টেংরা মাছ
- গুলসা
মাছ চাষে লাভবান হতে উপরের এ মাছগুলো বেছে নিতে পারেন। তবে মাছ শুধু বাছাই করলেই লাভবান হতে পারবেন না। মাছ চাষে সফল হতে মাছ চাষের পুকুর নির্বাচন থেকে শুরু করে মাছ সংগ্রহ পর্যন্ত ভালোভাবে পরিচর্যা করতে হবে।
শতক প্রতি মাছ ছাড়ার নিয়ম
মাছ চাষে গুরুত্বপূর্ন একটি বিষয় হলো শতক প্রতি পুকুরে সঠিক নিয়মে মাছ ছাড়া। মাছ চাষে লাভবান হতে হলে আপনাকে অবশ্যই জানতে হবে, শতক প্রতি পুকুরে কিভাবে মাছ ছাড়তে হয়। মাছ চাষ করার জন্য শতক প্রতি মাছ ছাড়ার কতকগুলো নিয়ম রয়েছে, যেগুলো মাছ চাষ করতে জানা প্রয়োজন। অনেকেই মনে করেন, পুকুরে যত বেশি মাছ ছাড়া হবে তত বেশি লাভবান হবে। তবে এ ধারণা একেবারেই ভুল। শতক প্রতি সঠিক নিয়মে মাছ না ছাড়লে, মাছ চাষিদের বড় একটি লোকসানের সম্মুখিন হতে হয়।
অতিরিক্ত মাছ ছাড়ার ফলে মাছ বাড়ে কম এবং মাছের রোগবালাই বেশি হয়, ফলে পুকুরে অধিক হারে মাছ মারা যায়। আপনি শতক প্রতি কতটুকু মাছ ছাড়বেন সেটা বেশ কয়েকটি বিষয়ের ওপর নির্ভর করে। সেগুলো জেনে নেওয়া যাক-
- আপনি শতক প্রতি পুকুরে কতগুলো মাছ ছাড়বেন সেটা পোনার সাইজের ওপর নির্ভর করবে। বড় পোনার থেকে ছোট পোনা পুকুরে বেশি পরিমাণে ছাড়তে হয়।
- শতক প্রতি মাছ ছাড়তে আপনাকে পুকুরের সাইজ ও গভীরতার দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। দুটি ৩০ শতকের পুকুরে, একটির গভীরতা যদি ৩ ফুট এবং আরেকটির গভীরতা ৫ ফুট হয়। তাহলে ৩ ফুটের পুকুরে আপনি যে পরিমাণ মাছ ছাড়বেন তার থেকে বেশি পরিমাণ মাছ ৫ ফুটের পুকুরে ছাড়তে হবে।
- আপনি কোন পদ্ধতিতে মাছ চাষ করতে চান, মিশ্র নাকি একক ভাবে সেটার ওপর আপনার মাছ ছাড়া নির্ভর করবে।
- কোন জাতের মাছ চাষ করবেন তার ওপরেও মাছ ছাড়ার নিয়ম নির্ভর করে।
- পানির ধারন ক্ষমতা ও মাছের উৎপাদন ক্ষমতার উপর মাছ ছাড়ার নিয়ম নির্ভর করবে। মাছের ওজন কত হলে আপনি বাজারজাত করবেন সেদিক বিবেচনা করেও পুকুরে মাছ ছাড়তে হয়।
এসব বিষয়ের ওপর নির্ধারন করা হবে আপনি শতক প্রতি কতটুকু মাছ পানিতে ছাড়বেন। এসব বিবেচনা করে, যাচাই করে নিবেন শতক প্রতি কতুটুকু মাছ পুকুরে ছাড়বেন। তবে শতক প্রতি কতটি মাছ আপনি ছাড়বেন তার একটি ধারনা আপনাকে দিতে পারি, সে অনুযায়ী প্রথমে চাষ করে দেখতে পারেন।
আপনি যদি স্বল্প মেয়দী মাছ চাষ করতে চান এবং মাছের ওজন ৮০০ গ্রাম থেকে ১ কেজি ওজনের হয়ে গেলে বাজারজাত করতে চান। তাহলে শতক প্রতি আপনাকে ১০০ গ্রাম সাইজের মাছ ২০ থেকে ৩০ টা মতো ছাড়তে হবে। তবে পুকুরের আয়তন ও গভীরতার দিকে বিশেষ ভাবে খেয়াল রাখবেন। আর আপনি যদি মাছ চাষ প্রথম করতে যান, তাহলে মৎস চাষে অভিজ্ঞ ব্যক্তির পরামর্শ নেওয়াই আপনার ভালো উপায় হবে।
লেখকের শেষ বক্তব্য
মাছ চাষের আধুনিক পদ্ধতি – ছোট পুকুরে মাছ চাষ পদ্ধতি সম্পর্কে আজকের এই ব্লগে সকল তথ্য তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। আশা করি মাছ চাষের আধুনিক পদ্ধতি – ছোট পুকুরে মাছ চাষ পদ্ধতি সম্পর্কে আপনি বিস্তারিত জানতে পেরেছেন।
এতক্ষণ আমাদের সঙ্গে থাকার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। যদি আপনি এই ধরনের প্রয়োজনীয় বিভিন্ন ব্লগ পোস্ট নিয়মিত পড়তে চান তাহলে আপনাকে প্রতিনিয়ত আমাদের এই ওয়েবসাইট ফলো করতে হবে।