বর্তমানে এই আধুনিক প্রযুক্তিতে এসে প্রতিবন্ধী ভাতার জন্য খুব সহজেই মোবাইল বা কম্পিউটার থেকে অনলাইনেই আবেদন করা যায়। এবং আপনার আবেদন সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে পরে সরাসরি আপনি ঘরে বসেই মোবাইল ব্যাংকিং একাউন্টে ভাতা নিতে পারবেন। তাই বলা যায় প্রতিবন্ধী ভাতা এখন ঘরে বসে গ্রহণ করা যাবে। তো আপনি কি প্রতিবন্ধী ভাতা অনলাইন আবেদন করার নিয়ম জানতে চাচ্ছেন?
তাহলে আমাদের আজকের এই ব্লগ পোষ্টটি আপনার জন্যে খুবই উপকার হতে চলেছে। কেননা এই ব্লগে আমরা প্রতিবন্ধী ভাতা অনলাইন আবেদন করার নিয়ম সম্পর্কে আলোচনা করার পাশাপাশি প্রতিবন্ধী ভাতা কত টাকা, প্রতিবন্ধী ভাতা মোবাইল নাম্বার, প্রতিবন্ধী ভাতা কার্ড চেক এবং প্রতিবন্ধী ব্যক্তির পরিচয়পত্র নিয়ে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করার চেষ্টা করেছি।
উপস্থাপনা
একজন বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবে তার এনআইডি কার্ডের মাধ্যমে বিভিন্ন জরুরি সুযোগ-সুবিধা পেয়ে থাকে, ঠিক তেমন একজন প্রতিবন্ধী ব্যক্তি তার প্রতিবন্ধী কার্ড এর মাধ্যমে কয়েকটি বিশেষ সুবিধা পেয়ে থাকে যেমন বিভিন্ন ধরনের ভাতা, বিভিন্ন স্কুল কলেজে পড়াশোনার সুযোগ সুবিধা, বিভিন্ন সরকারি চাকরির ক্ষেত্রে তাদের জন্য কোটা ব্যবস্থা করা করেছে।
বর্তমানে প্রতিবন্ধী কার্ড ঘরে বসেই অনলাইনের মাধ্যমে খুব সহজেই করা সম্ভব। আমাদের মাঝে এমন অনেকেই আছেন যারা প্রতিবন্ধী ভাতা পাওয়ার যোগ্য রয়েছে কিন্তু প্রতিবন্ধী ভাতা পাওয়ার নিয়ম সঠিক ভাবে না জানার কারণে, আবেদন করতে ব্যর্থ হয়। তাই আমরা আপনাদের সুবিধার কথা ভেবে প্রতিবন্ধী কার্ড করার নিয়ম নিয়ে এই পোষ্টে বিস্তারিত তথ্য শেয়ার করলাম।
প্রতিবন্ধী ভাতা কি
যে সকল মানুষের মূলত চলাফেরা করতে পারেনা, শরীর বিকলাঙ্গ, কাজকর্ম করতে পারেনা, হাতের সমস্যা, পায়ের সমস্যা, এবং বাকি মানুষের মতো তাদের শরীর স্বাভাবিক নয় তাদেরকেই আমরা প্রতিবন্ধী বলে থাকি। আর তাদের জন্য আমাদের বাংলাদেশ সরকার সমাজসেবা অধিদপ্তরের মাধ্যমে একটি ভাতা দেওয়ার ব্যবস্থা করে দিয়েছে যার নাম হচ্ছে তাকে প্রতিবন্ধী ভাতা।
মূলত আমাদের সমাজে যারা অসহায়, হতদরিদ্র, অবলা এবং অসহায় নারী-পুরুষ, ছেলে-মেয়ে, কিশোর কিশোরী রয়েছেন তাদের সাহায্য করার জন্য প্রতিবন্ধী ভাতা সরকারের পক্ষ থেকে দেয়া হয়ে থাকে। প্রতিবছর সমাজসেবা অধিদপ্তরের মাধ্যমে আমাদের বাংলাদেশে সকল জেলা উপজেলায় লক্ষ লক্ষ প্রতিবন্ধীদের কাছে এই ভাতার টাকা পৌঁছে দেওয়া হয়।
প্রতিবন্ধী ভাতা অনলাইন আবেদন
প্রতিবন্ধী ভাতা অনলাইন আবেদন করার জন্য আপনাকে যা যা করতে হবে তা নিম্নে উল্লেখ করা হলঃ
ধাপ ১: প্রথমত প্রতিবন্ধী ভাতা অনলাইন আবেদন করতে হলে আপনাকে অবশ্যই যেকোন একটি ব্রাউজারে গিয়ে https://mis.bhata.gov.bd/onlineApplication এটা লিখে সার্চ করে প্রবেশ করতে হবে।
ধাপ ২: এই সাইটে প্রবেশ করার পর আপনি পেজের নিচের দিকে “আমি বুঝেছি, ও পরবর্তী ধাপে যান” লেখা দেখতে পাবেন। এই লেখাটির সামনে টিক দিয়ে লেখাটির উপর ক্লিক করতে হবে।
ধাপ ৩: এরপর কার্যক্রম অপশনে যেয়ে প্রতিবন্ধী ভাতা নামক অপশনটি সিলেক্ট করতে হবে। এবার ডান পাশের সংরক্ষণ অপশনে ক্লিক করতে হবে।
ধাপ ৪: তারপর আপনার নিজের তথ্যের নিচে এনআইডি নম্বর বা জন্মনিবন্ধন নম্বর নির্বাচন করতে হবে এবং জন্মতারিখ লিখে খালি ঘর পূরণ করতে হবে। তারপর যাচাই করুন অপশনে ক্লিক করুন।
ধাপ ৫: এরপরে খেয়াল করবেন অটোমেটিক আবেদনকারীর তথ্য পূরণ হয়ে যাবে। আর কোন ঘর ফাকা থাকলে আপনাকে আলাদা ভাবে লিখে পূরণ করতে হবে।
এছাড়া আপনাকে আরও কয়েকটি তথ্য প্রদান করতে হবে। যথাঃ
- বৈবাহিক অবস্থা
- শিক্ষাগত যোগ্যতা
- পরিবারের সদস্য সংখ্যা
- পেশা
- বার্ষিক আয়
- স্বাস্থ্য বা কর্মক্ষমতা সম্পর্কিত তথ্য
- সরকারি বা বেসরকারি আর্থিক সুবিধার তথ্য
- বাসস্থানের তথ্য
- ভূমির পরিমাণ
- প্রতিবন্ধীর ধরন কোড ( DIS অনুযায়ী)
- প্রতিবন্ধীর মাত্রা ( DIS অনুযায়ী)
ধাপ ৭: এরপরে ব্যক্তিগত যোগাযোগ মাধ্যম উল্লেখ করতে হবে। এখানে আবেদনকারীর বাসস্থানের জেলা, উপজেলা, ওয়ার্ড ইত্যাদি এবং আপনার মোবাইল ব্যাংকিং (বিকাশ,নগদ) নম্বর এবং মোবাইল নাম্বারের মালিকানা উল্লেখ করতে হবে।
ধাপ ৮: আবেদন ফর্মে উপরোক্ত তথ্যগুলি পুনরায় একবার যাচাই করে নিন যে সবগুলো তথ্য স্টহিক দিয়েছেন কিনা। সব ঠিক ঠাক থাকলে সংরক্ষণ বাটনে ক্লিক করতে হবে। তারপর প্রিন্ট অপশন থেকে আপনার আবেদন পত্রটির pdf file ডাউনলোড করে নিয়ে প্রিন্ট করে নিয়ে নিজের কাছে রাখুন।
ধাপ ৯: পরিশেষে ফরমটি পৌরসভার কাউন্সিলর বা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এর সিগনেচার নিতে হবে। তারপর উপজেলা সমাজসেবা অফিসে গিয়ে জমা দিতে হবে। এরপর যদি আবেদনকারী এ ভাতা পাবার জন্য এলিজেবল বা যোগ্য বলে বিবেচিত হয় তাহলে ফরম-এ দেওয়া সে মোবাইল ব্যাংকিং এর মাধ্যমে তার আর্থিক অনুদান পেয়ে যাবে বলে আশা করা যায়।
প্রতিবন্ধী ভাতা কত টাকা
আমাদের মাঝে এমন অনেকেই আছেন যারা জানেন না যে প্রতিবন্ধী ভাতা কত টাকা দেয়া হয়। এজন্য তাদের সুবিধার কথা ভেবেই পোষ্টের এই পাঠে ২০২৪ সালে প্রতিবন্ধী ভাতা কত টাকা দেওয়া হয় তা তুলে ধরেছি। এ বিষয় সাধারনত ২০২৩ সালের দিকে প্রতি মাসে ৭৫০ টাকা করে প্রতিবন্ধী ভাতা প্রদান করা হত কিন্তু এই বছর মানে ২০২৪ সালে এসে তা সামান্য বৃদ্ধি করে ৮৫০ টাকা করা হয়েছে।
এই ভাতা মূলত প্রতি মাসে মোবাইলে বিকাশ অথবা নগদের মাধ্যমে দেওয়া হয়। তাই আপনি প্রতিবন্ধী ভাতা পাবার জন্য এলিজেবল হয়ে থাকেন, তাহলে আপনি এই টাকাটি প্রতি মাসে পেয়ে যাবেন। প্রতিবন্ধী ভাতার পরিমাণ মাসিক ৮৫০ টাকা ২০২৪ সালেও দেওয়া হয় প্রতিবন্ধী ভাতা। আশা করছি প্রতিবন্ধী ভাতা কত টাকা তা আপনারা এই অংশ থেকে জানতে পেরেছেন।
প্রতিবন্ধী ভাতা মোবাইল নাম্বার
আপনি যখন প্রতিবন্ধী ভাতা এর জন্য মোবাইল নাম্বার দিবেন তখন খুব সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে কেননা, এই নাম্বারেই সকল টাকা আসবে। এক্ষেত্রে উক্ত নাম্বারে বিকাশ কিংবা নগদ যেকোনো একটা বা দুইটাই মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস থাকা জরুরি।
কেননা অনেক সময় দেখা যায় আপনার মোবাইল ব্যাংকিং নাম্বারটি আর সচল নেই, কিংবা যেকোন কারণে আপনার প্রতিবন্ধী ভাতা গ্রহণ করার মোবাইল নাম্বার পরিবর্তন করতেই হয়। এক্ষেত্রে আপনার একেবারেই অবহেলা করা উচিৎ নয়।
প্রতিবন্ধী ভাতা মোবাইল নাম্বার পরিবর্তন করতে হলে আপনাকে কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করতে হবে। তবে এখানেই শেষ নয়, সম্পন্ন প্রক্রিয়াটি আপনাকে শেষ করতে হবে বা আপনার কি করণীয় সে বিষয়ে জেনে নিতে হবে।
প্রথমেই আপনাকে কিছু প্রয়োজনীয় জিনিস সাথে করে নিয়ে সমাজসেবা অধিদপ্তর অথবা আপনার এরিয়ার কাউন্সিল অফিস যেতে হবে। এক্ষেত্রে আপনাকে যেগুলো তথ্য সাথে করে নিয়ে যেতে হবে তা নিম্নে উল্লেখ করা হলো:
- মোবাইল নাম্বার
- ভাতা বহি
- জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি
এবার সেখানে উপস্থিত হওয়ার পর আপনাকে একটি ফরম দিবে যা পূরণ করতে হবে।
প্রতিবন্ধী ভাতা কার্ড চেক
অনলাইনে প্রতিবন্ধী ভাতা কার্ড চেক করার জন্যআবেদনের একটি প্রিন্ট কপি সহ ডাক্তারি রিপোর্ট নিকটস্থ সমাজসেবা কার্যালয়ে গিইয়ে যথাসময়ে জমা দিতে হবে। কাগজপত্র জমা দেওয়ার পর আপনি যদি প্রতিবন্ধী ভাতার কার্ড পাওয়ার জন্য এলিজেবল হয়ে থাকে, তাহলে, আপনার আবেদনে দেওয়া নম্বরে একটি SMS প্রদান করা হবে।
এবং প্রাপ্ত SMS নির্দিষ্ট দিনে এসে আপনার প্রতিবন্ধী আইডি কার্ড চেক করার পর কালেক্ট করতে হবে। তবে আপনি চাইলে অনলাইনে প্রতিবন্ধী আইডি কার্ড চেক করে নিতে পারবেন এবং অনলাইনে প্রতিবন্ধী কার্ড ডাউনলোড করা যায়। এক্ষেত্রে কার্ড চেক করা সম্পন্ন হলে তা ডাউনলোড করার জন্য আপনাকে http://dis.gov.bd গুগল গিয়ে এইটা লিখে প্রবেশ করতে হবে।
এই ওয়েবসাইটে প্রবেশ করার পরে আবেদন করার সময় যে, User ID এবং Password পেয়েছিলেন সেটি ব্যবহার করে আপনার প্রতিবন্ধী কার্ড হয়েছে কিনা তা জেনে নিতে পারবেন। সেখানে যদি দেখেন যে কার্ড পাওয়ার জন্য আপনি যোগ্য হয়েছেন তাহলে আপনি সেখান থেকে আপনার প্রতিবন্ধী ভাতার কার্ড ডাউনলোড করে নিতে পারবেন।
প্রতিবন্ধী ব্যক্তির পরিচয়পত্র
প্রতিবন্ধী ভাতার জন্য আবেদন করার আগে একজন প্রতিবন্ধী ব্যক্তির পরিচয়পত্র কেমন হবে কিংবা প্রতিবন্ধী ভাতার জন্য আবেদনের যোগ্যতা হিসেবে কি কি থাকা আবশ্যক সেই সম্পর্কে জানতে হবে।
প্রতিবন্ধী ব্যক্তির পরিচয়পত্র নিম্নে বিস্তারিতভাবে উল্লেখ করা হলঃ
- প্রতিবন্ধী ব্যক্তিকে প্রথমে সমাজ সেবা কার্যালয় থেকে নিবন্ধন ও পরিচয় পত্র কালেক্ট করতে হবে।
- সংশ্লিষ্ট এলাকার স্থায়ী বাসিন্দা হতে হবে।
- আবেদনকারীর যেই জেলার স্থায়ীভাবে বসবাস করেন সে জেলার নিবন্ধন ও পরিচয় কালেক্ট করতে হবে।
- প্রতি বছরে ৩৬ হাজার টাকার বেশি আয় নয় এমন ব্যক্তিগণ আবেদন করতে পারবেন
- আবেদনকারীকে অবশ্যই দুস্থ প্রতিবন্ধী হতে হবে
- মূলত ৬ বছরের বেশি প্রতিটা প্রতিবন্ধীকে ভাতা দেওয়ার জন্য বিবেচনায় নেয়া জরুরি।
- বাছাই কমিটি কর্তৃক নির্বাচিত হতে হবে।
প্রতিবন্ধী ভাতা সম্পর্কে লেখকের মতামত
পরিশেষে একটি কথা বলে আজকের আলোচনা সমাপ্তি করতে চাই সেটা হল প্রতিবন্ধী ভাতার আবেদন করতে হলে নির্দিষ্ট সময়ে করতে হবে যখন তখন করা যাবে না। মূলত আগস্টের শুরুতেই এই কাজের তালিকা প্রণয়ন করা হয়। তাই প্রতিবন্ধী ভাতার আবেদন গ্রহণ করা হয় সেটা খেয়াল রাখতে হবে।
নির্দিষ্ট সময় মোতাবেক প্রতিবন্ধী ভাতা পাওয়ার জন্য অনলাইনে আবেদন করে, চেয়ারম্যান বা পৌরসভা কাউন্সিলর এর স্বাক্ষর নিয়ে উপজেলা সমাজসেবা কার্যালয়ে আপনার প্রয়োজনীয় কাগজপত্র নিয়ে আবেদনপত্র জমা দিতে হবে। তাহলে আপনি ভাতা পাওয়ার জন্য এলিজেবল হতে সক্ষম হবেন।
আমরা ইতিমধ্যে প্রতিবন্ধী ভাতা অনলাইন আবেদন করার নিয়ম নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছি। আপনি যদি পুরো পোস্টটি পড়ে থাকেন তাহলে আশা করছি আপনারা এতক্ষণে প্রতিবন্ধী ভাতা সম্পর্কে সকল ধরণের প্রশ্নের উত্তর জানতে পেরেছেন। তবে এছাড়াও প্রতিবন্ধী ভাতা সম্পর্কে আপনার কোন মতামত থাকলে তা এই পোষ্টের কমেন্ট বক্সে জানাতে ভুলবেন না। ধন্যবাদ।