অনলাইনে জাতীয় পরিচয় পত্র সংশোধন

জাতীয় পরিচয় পত্র একটি দেশের একজন নাগরিকের পরিচয় বহন করে থাকে। এই জাতীয় পরিচয় প্রত্র খুবই গুরুত্ব পূর্ণ একটি নথি। আপনি যে একজন বাংলাদেশের নাগরিক তার অন্যতম প্রমণ পত্র হল জাতীয় পরিয়চ পত্র। এছাড়াও জাতীয় পরিচয় পত্র ছাড়া রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত হতে হবে। আপনি কি অনলাইনে জাতীয় পরিচয় পত্র সংশোধন করার উপায় বা নিয়ম জানতে চাচ্ছেন?

অনলাইনে জাতীয় পরিচয় পত্র সংশোধন

তাহলে আমাদের আজকের এই ব্লগপোষ্টটি আপনার জন্যে খুবই উপকার হতে চলেছে। কেননা এই ব্লগে আমরা অনলাইনে জাতীয় পরিচয় পত্র সংশোধন সম্পর্কে আলোচনা করার পাশাপাশি ভোটার আইডি কার্ড নাম সংশোধন, ভোটার আইডি কার্ড সংশোধন করতে কত দিন লাগে এবং ভোটার আইডি কার্ড সংশোধন করতে কত টাকা লাগে তা বিস্তারিতভাবে আলোচনা করার চেষ্টা করেছি।

উপস্থাপনা – জাতীয় পরিচয় পত্র

আমাদের মাঝে এমন অনেকেই আছেন যাদের জাতীয় পরিচয় পত্রে অনেক সময় ভুল বশত বিভিন্ন তথ্য ভুল হয়ে যায়। বিশেষ করে নামের বানান, জন্ম তারিখ ইত্যাদি। যার ফলে আমাদের বিভিন্ন সমস্যার সম্মূখীন হতে হয়। কেননা এই জাতীয় পরিচইয় পত্রের একটি ভুলের জন্য কোনো কাজ হয়না। যার ফলে দিনের পর দিন অতিবাহিত হতে থাকে।

আবার আমরা অনেকেই জানিনা যে কিভাবে আমাদের জাতীয় পরিচয় পত্রের ভুল সংশোধন করতে হয় এই সম্পর্কে যার জন্য আমাদের অনেক সময় বিভিন্ন ধরনের সমস্যার সম্মূখীন হতে হয়। কিন্তু জাতীয় পরিচয় পত্র সংশোধনের সঠিক নিয়ম যদি আমাদের জানা থাকে, তাহলে খুবই সহজেই এই কাজ সম্পূর্ণ করা সম্ভব হবে। যা পোষ্টে তুলে ধরা হয়েছে। আর্টিকেলটি সম্পূর্ণ পড়ে বিস্তারিত তথ্য জেনে নিন।

অনলাইনে জাতীয় পরিচয় পত্র সংশোধন

জাতীয় পরতিচয় পত্রের সংশোধনের নিয়ম খুবই সহজ একটি বিষয়। এর জন্য প্রথমে আপনাকে আপনার হাতে থাকা স্মার্ট ফোন বা ল্যাপটপ বা কম্পিউটারের সাহায্যে অনলাইনের মাধ্যমে আবেদন করতে হবে। এখনকার সময়ে বলতে প্রায় অধিকাংশ কাজ অনলাইনেই করা যায় ঠিক তেমনি আপনি চাইলে আপনার জাতীয় পরিচয় পত্র (NID) সংশোধনও অনলাইনেই খুব সজজেই করতে পারবেন।

তাই অনলাইন ছাড়া অন্য কোনো মাধ্যমে জাতীয় পরিচয় পত্র বা ভোটার আইডি কার্ডের সংশোধনী করা যায় না। অনলাইনে জাতীয় পরিচয় পত্র বা NID কার্ড সংশোধনের নিয়ম নিচে উল্লেখ করা হল-

আরো পড়ুনঃ-  সরকারি ভাবে বিদেশ যাওয়ার উপায় - বিদেশ যাওয়ার নিয়ম

অনলাইনে আপনার NID কার্ড সংশোধন করার জন্য প্রথমে স্মার্ট ফোনের প্লে স্টোরে গিয়ে NID WALLET নামক অ্যাপ্লিকেশন টি ইন্সটল করতে হবে। কেননা এই অ্যাপে আপনার প্রয়োজনীয় নতিপত্র পরিস্কারভাবে স্ক্যান করে সাবমিট করতে হবে।

এই APP ডাউনলোড সম্পূর্ণ হয়ে গেলে তারপরে আপনাকে গুগলে যেতে হবে এবং টাইপ করুন services.nidw.gov.bd তারপরে এখানে আপনার বর্তমান জাতীয় পরিচয় পত্র বা NID নাম্বার, জন্ম তারিখ, নাম, ঠিকানা সহ প্রয়োজনীয় তথ্য দিয়ে রেজিট্রেশন করতে হবে। তবে আপনি দি একাউন্ট তৈরি না করেন তাহলে কাজ করতে পারবেন না।

রেজিস্ট্রেশন সম্পন্ন হওয়ার পরে আপনার রিসেন্ট ক্রিয়েট করা প্রোফাইলে প্রবেশ করতে হবে। এরপর অনেক গুলো অপশন দেখতে পাবেন, সেগুলো অপশন গুলোর মধ্যে আপনাকে ‘Edit’ অপশনে ক্লিক করে প্রবেশ করতে হবে তারপরে করে আপনার জাতীয় পরিচয় পত্রের যেসব তথ্য গুলো ভুল ছিল সেই তথ্য গুলো সঠিক করে সব ঠিকঠাক আছে কিনা পুনরায় সকল তথ্য গুলো ভালো ভাবে যাছাই করে নিন।

তারপরে আপনার জাতীয় পরিচয় পত্র সংশোধনের জন্য প্রয়োজনীয় ফি অর্থাৎ, প্রতিটি সংশোধনী ( যেমন- নাম, জন্ম তারিখ) এর জন্য আলাদা আলাদা নির্দিষ্ট পরিমান ফি জমা দিতে হবে মোবাইল ব্যাংকিং ( বিকাশ, নগদ, রকেট) এর মাধ্যমে। ফি দেওয়া হয়ে গেলে প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট বা কাগজ পত্র আপনি যেই APP টি ডাউনলোড করেছেন সেখানে জমা দিন।

ভোটার আইডি কার্ড নাম সংশোধন

আমাদের জাতীয় পরিচয় পত্রে নিজের নামের বানান অনেক সময় ভুল থাকে। যেমন ধরুন আপনার মো সানি রহমান এর জায়গায় অনেক সময় “মো সানী রাহমান” হয়ে যায়। ভোটার আইডি কার্ড এ এমন ভুল সংশোধন করার জন্য আপনার যে সকল কাগজপত্র প্রয়োজন পড়বে তা নিচে উল্লেখ করা হলো-

  • JSC/SSC/HSC যে কোন শিক্ষা বোর্ডের সনদ
  • জন্ম নিবন্ধন বা অনলাইন জন্ম নিবন্ধন কপি
  • ড্রাইভিং লাইসেন্স এর কপি (যদি থাকে)
  • পাসপোর্ট এর কপি (যদি থাকে)
  • পাবলিক বা বোর্ড পরীক্ষার সনদ
  • এমপিও অথবা সার্ভিস বইয়ের কপি
  • বৈবাহিক সনদ বা কাবিননামার ফটোকপি
  • তদন্ত প্রতিবেদন (যদি করা হয়)
  • উপজেলা নির্বাচন অফিসারের প্রতিবেদন।

উপরোক্ত কাগজপত্র গুলি আপনার কাছে মিনিমাম এক কপি থাকতেই হবে তাহলে আপনি আপনার নামের সম্পূর্ণ বানান ভুল সংশোধন করার জন্য আবেদন করতে পারবেন। আপনারা উপরোক্ত উপায় অনুসরণ করলে নিজের ভোটার আইডি কার্ড নাম সংশোধন করতে সক্ষম হবেন। তো আশা করছি এই অংশ থেকে কিভাবে ভোটার আইডি কার্ড নাম সংশোধন করা যায় তা জানতে পেরেছেন। এবার চলুন,   স্মার্ট আইডি কার্ড সংশোধন সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে জেনে নেওয়া যাক।

স্মার্ট আইডি কার্ড সংশোধন

স্মার্ট আইডি কার্ড সংশোধন

স্মার্ট কার্ড সংশোধন করার জন্য প্রথমে services.nidw.gov.bd ওয়েবসাইটে আপনার স্মার্ট কার্ড নম্বর ও জন্ম তারিখ দিয়ে রেজিস্ট্রেশন করুন। ফেইস ভেরিফিকেশন করে লগইন করুন। এবার প্রোফাইল অপশনে যান এবং এডিট লিংকে ক্লিক করে তথ্য সংশোধন করুন। সংশোধন ফি পরিশোধ ও প্রয়োজনীয় প্রমাণপত্র আপলোড করে আবেদন জমা দিন। আবেদন অনুমোদন হলে তথ্য সংশোধন হবে।

আরো পড়ুনঃ-  স্মার্ট কার্ড স্ট্যাটাস চেক অনলাইন বিস্তারিত জানুন

সংশোধন করতে কত দিন লাগে

অনলাইনে ভোটার আইডি কার্ড সংশোধন করতে কত দিন লাগে। আপনার যদি জরুরী ভোটার আইডি কার্ড সংশোধন করতে হয় এবং অনলাইনের মাধ্যমে ভোটার আইডি কার্ড সংশোধন করতে চান। তাহলে কত দিন সময় লাগতে পারে চলুন জেনে নেয়া যাক।

ভোটার আইডি কার্ড সংশোধন করতে সর্বোচ্চ সাত দিন থেকে ৪৫ দিন পর্যন্ত সময় লাগতে পারে ক ক্যাটাগরি সংশোধনের আবেদন সাত দিন খ ক্যাটাগরির আবেদন সংশোধনী ১৫ দিন গ ক্যাটাগরি সংশোধনের আবেদন ৩০ দিন এবং সংশোধনীয় আবেদন ৪৫ দিনের মধ্যে সম্পন্ন হয়ে থাকে।

এখানে দিন বলতে সাধারনত কার্যদিবস কে বোঝানো হয়। অফিস আদালত যে কার্যদিবসে চলে মূলত সেই দিনগুলোকে কার্যদিবস হিসেবে গন্য করা হয়। তবে নির্বাচন অফিস থেকে ভোটার আইডি কার্ড সংশোধন করার জন্য সময় অফিসিয়াল ভাবে নির্ধারণ করা হয়ে থাকে।

  • উপজেলা নির্বাচন অফিসার এর ক্ষেত্রে ৭ দিন
  • জেলা নির্বাচন অফিসার এর ক্ষেত্রে ১৫ দিন
  • আঞ্চলিক নির্বাচন অফিসার এর ক্ষেত্রে ১ মাস বা ৩০ দিন
  • NID wing এর মহাপরিচালক এর ক্ষেত্রে  ৪৫ দিন

অনলাইনে অথবা উপজেলা নির্বাচন অফিসের মাধ্যমে ভোটার আইডি কার্ড এর ভুল সংশোধন করার জন্য আবেদন করা হয়ে গেলে ক্যাটাগরী হওয়ার জন্য ঢাকায় নির্বাচন কমিশনের NID wing এর হেড অফিসে কর্মরত দায়িত্বপ্রাপ্ত অফিসারের কাছে জমা হয়। তারপরে নির্দিষ্ট সময় অনুযায়ী এর কার্যক্রম সম্পন্ন করা হয়। আশা করছি ভোটার আইডি কার্ড সংশোধন করতে কত দিন লাগে জানতে পেরেছেন।

সংশোধন করতে কত টাকা লাগে

এখন অধিকাংশ মানুষের ভোটার আইডি কার্ড সংশোধন করতে হয় তার জন্য দিতে হয় নির্দিষ্ট পরিমাণ ফি। তো জাতীয় পরিচয় পত্রের ভুল সংশোধন করতে আসলে কত টাকা খরচ হয় এই সম্পর্কে অনেকেই জানেন না। আপনার ভোটার আইডি কার্ড কোন ধরণের ভুল ত্রুটি থাকলে অবশ্যই সেই ভুল আজ হোক বা কাল হোক সংশোধন করে নিতে হবে। যার জন্য ভোটার আইডি কার্ড সংশোধন করতে কত টাকা ফি লাগতে পারে এটাও জানা জরুরী।

আরো পড়ুনঃ-  দুবাই বাংলাদেশ এম্বাসি মোবাইল নাম্বার

কারণ ভোটার আইডি কার্ড সংশোধন করতেও কিন্তু সরকারকে একটি সার্ভিস চার্জ বা ফ্রি দিতে হয়। জাতীয় পরিচয় পত্র বা ভোটার আইডি কার্ড সংশোধন করতে হলে আপনার ভোটার আইডি কার্ড সংশোধনের জন্য ২৩০ টাকা লাগবে এখানে ফ্রি ২০০ টাকা এবং এর ওপর ১৫ পার্সেন্ট ভ্যাট ৩০ টাকা তবে জাতীয় পরিচয় পত্রের অন্যান্য তথ্য সংশোধন করতে এই ফি ভ্যাট সহ ১১৫ টাকা।

জাতীয় পরিচয় পত্রের ভুল সংশোধন করতে হলে মিনিমাম আপনাকে ২০০ টাকা খরচ করাই লাগবে। তবে তার সাথে অন্যান্য তথ্য সংশোধন করতে চাইলে আলাদাভাবে ১১৫ টাকা এবং উভয় ধরনের তথ্য সংশোধনের জন্য মোট ৩৪৫ টাকা খরচ করতে হবে। এই ফি আপনি চাইলে মোবাইল ব্যাংকিং এর মাধ্যমে খুব সহজেই পরিশোধ বা পেমেন্ট করতে পারেন।

ভোটার আইডি কার্ড সংশোধন করার জন্য একটি নির্দিষ্ট ফি তালিকা নিচে উল্লেখ করা হল:

  • তথ্য সংশোধন এর ক্ষেত্রে ২০০ টাকা, এর সাথে ১৫% ভ্যাট সংযুক্ত হয়ে মোট ২৩০ টাকা
  • অন্যান্য তথ্য সংশোধন এর ক্ষেত্রে ১০০ টাকা, এর সাথে ১৫% ভ্যাট সংযুক্ত হয়ে মোট ১৫০ টাকা
  • উভয় তথ্য সংশোধন এর ক্ষেত্রে ৩০০ টাকা, এর সাথে ১৫% ভ্যাট সংযুক্ত হয়ে মোট ৩৪৫ টাকা
  • রিইস্যু এর ক্ষেত্রে ৩০০ টাকা, এর সাথে ১৫% ভ্যাট সংযুক্ত হয়ে মোট ৩৪৫ টাকা
  • রিইস্যু জরুরী ক্ষেত্রে ৫০০ টাকা, এর সাথে ১৫% ভ্যাট সংযুক্ত হয়ে মোট ৫৭৫ টাকা

আপনি যদি ভোটার আইডি কার্ড সংশোধন করেন তাহলে আপনার উপরোক্ত দেওয়া ফি গুলো আপনার প্রয়োজন হবে যে তথ্যগুলো সংশোধন করবেন সেই তথ্যের উপর ভিত্তি করে ফি এর পরিমাণ নির্ধারণ করা হয়।

জাতীয় পরিচয় পত্র সম্পর্কে লেখকের মতামত

জাতীয় পরিচয় পত্র এমন একটি জিনিস যা ছাড়া এই দেশের নাগরিক হিসেবে যেকোনো কাজ করাটা খুবই মুশকিল হয়ে পড়ে। এখন যদি এই জাতীয় পরিচয় পত্রে তথ্যে কোন ভুল চলে আসে তাহলে সেটা দিয়ে কাজ করতে অনেক ঝামেলায় পড়তে হতে পারে। এজন্য জাতীয় পরিচয় পত্রের তথ্যে ভুল আসলে সেটা আপনাকে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব সেই ভুল সংশোধন করে নিতে হবে।

আমরা ইতিমধ্যে অনলাইনে জাতীয় পরিচয় পত্র সংশোধন নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছি। আশা করছি আপনারা এতক্ষণে ভোটার আইডি কার্ড সম্পর্কে সকল ধরণের প্রশ্নের উত্তর জানতে পেরেছেন। তবে এছাড়াও ভোটার আইডি কার্ড সম্পর্কে আপনার কোন মতামত থাকলে তা এই পোষ্টের কমেন্ট বক্সে জানতে দ্বিধাবোধ করবেন না। আমরা আপনাদের অনুপ্রেরণা জানাতে খুবই আগ্রহী।

Leave a Comment