নিউমোনিয়া রোগের লক্ষণ ও প্রতিকার

ফুসফুসের প্রদাহ জনিত একটি রোগ হলো নিউমোনিয়া। শিশু থেকে শুরু করে বড়রাও এ রোগে আক্রান্ত হয়ে থাকে। এ রোগের বেশ কিছু লক্ষন রয়েছে যেগুলো জানা থাকলে আমরা নিউমোনিয়া রোগ খুব সহজে চিহ্নিত করতে পারবো। আমাদের আজকের আর্টিকেলে নিউমোনিয়া রোগের লক্ষণ ও প্রতিকার সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে।

নিউমোনিয়া রোগের লক্ষণ ও প্রতিকার

নিউমোনিয়া রোগের লক্ষণ ও প্রতিকার সম্পর্কে বিস্তারিত জানাতে আমাদের আজকের আর্টিকেলটি সম্পূর্ন পড়ুন। এছারাও পুরো আর্টিকেল পড়ার মাধ্যমে জেনে যাবেন নিউমোনিয়া রোগের কারন, নিউমোনিয়ার ঔষুধ ও নিউমোনিয়া হলে কি খেতে হবে এসব সম্পর্কে বিস্তারিত। তো চলুন বিস্তারিত শুরু করা যাক।

নিউমোনিয়া রোগের কারন কি

ফুসফুসের প্রদাহজনি রোগের নাম নিউমোনিয়া। মানবদেহের ফুসফুসের ছোটো ছোট বায়ু থলিতে জীবানুর সংক্রামন হলে ফুসফুসের প্রদাহের সৃষ্টি হয়। শিশু থেকে শুরু করে, বয়স্ক ও তরুনসহ প্রায় সব বয়সিদের এ রোগে আক্রান্ত হতে দেখা যায়। এ রোগের চিকিৎসা দ্রুত নেওয়া হলে রোগির মৃত্যু পর্যন্ত হয়ে যায়। তাই আমাদের এ রোগ প্রতিরোধ করতে হবে এবং জানতে হবে নিউমোনিয়া রোগের কারনগুলো আসলে কি। বেশ কিছু কারনে নিউমোনিয়া রোগ হয়ে থাকে। তো চলুন সঠিক তথ্য জেনে নিন নিউমোনিয়া রোগের কারনগুলো সম্পর্কে।

জীবানু ঘটিত একটি রোগের নাম হলো নিউমোনিয়া। বিভিন্ন ব্যাকটেরিয়া, ছত্রাক, ফাঙ্গাস ও ভাইরাসের সংক্রামনের কারনে নিউমোনিয়া হয়ে থাকে। এসব জীবানু সংক্রামিত হয়ে ফুসফুসের বায়ু থলিতে গিয়ে আক্রমন করে এবং প্রদাহ সৃষ্টি করে। প্রদাহ সৃষ্টি হওয়ার কারনে বায়ু থলিগুলোতে পুঁজ  হয়ে যায় এবং অবশেষে নিউমোনিয়ার লক্ষণগুলো শরীরে প্রকাশ পায়।

আরো পড়ুন: হজমের সমস্যা দূর করার উপায় - হজম শক্তি বৃদ্ধির উপায়

নিউমোনিয়া রোগের লক্ষণ

নিউমোনিয়া ফুসফুসজনিত একটি রোগ । তাই এটি সাধারনত কোনো রোগ নয়। এ রোগের দ্রুত চিকিৎসা নেওয়ার প্রয়োজন পড়ে, তা না হলে রোগির মৃত্যু ঝুঁকি বেড়ে যায়। তাই এ রোগের লক্ষণগুলো সবার জেনে থাকা জরুরি। রোগের লক্ষণ সম্পর্কে ধারনা থাকলে এ রোগের ব্যবস্থা তাড়াতাড়ি নেওয়া যায়। তাই জেনে নিতে হবে নিউমোনিয়া রোগের লক্ষণ সম্পর্কে।

  • টানা তিন সপ্তাহের বেশি সময় ধরে কাশি হওয়া। 
  • কাশির সঙ্গে রক্তপাত। 
  • জ্বর। 
  • বমি বমি ভাব এবং বমি হওয়া। 
  • শরীর দুর্বল ও ক্লান্তি অনুভূত হওয়া। 
  • শ্বাস প্রস্বাসে কষ্ট। 
  • শ্বাস নেওয়ার সময় বুকে ব্যাথা। 
  • খাবারের অরুচি। 
  • পেটে ব্যাথা। 
  • মানসিক অবস্থার পরিবর্তন।

এসব লক্ষণগুলো কারও মধ্যে দেখা দিলে এবং সেটা যদি দীর্ঘস্থায়ী হয়, তাহলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

নিউমোনিয়া রোগের প্রতিকার

নিউমোনিয়া জটিল একটি রোগ। তবে এটি প্রথমে স্বাভাবিক থাকে, পরবর্তীতে এ রোগ জটিল আকার নেই। এ রোগের লক্ষণগুলো প্রকাশ পেলে দ্রুত চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যেতে হবে। বাড়িতে বসে থেকে এর প্রতিকার খুঁজবেন না। নিউমোনিয়ার চিকিৎসা বিভিন্ন ধরনের রয়েছে। রোগির অবস্থা বিবেচনা করে রোগিকে চিকিৎসা প্রদান করা হয়। সঠিক চিকিৎসায় এ রোগ ভালো করা সম্ভব। তবে যেকোনো রোগের প্রতিকার থেকে প্রতিরোধ করায় গুরুত্বাপূর্ন। তাই জেনে নিন নিউমোনিয়া রোগের প্রতিরোধ সম্পর্কে।

নিউমোনিয়া রোগের প্রতিরোধ:

  • পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকতে হবে, ভালোভাবে হাত পরিষ্কার করে খাবার খেতে হবে। 
  • শরীরের বিষেশ যত্ন নিতে হবে। 
  • পর্যাপ্ত পরিমাণে বিশ্রাম ও ঘুমাতে হবে। 
  • স্বাস্থকর খাবার খেতে হবে, নিয়মিত ব্যায়াম করতে হবে।  
  • ধূমপান ত্যাগ করতে হবে। 
  • হাঁচি কাশি দেওয়ার সময় মুখ ঢেকে হাঁচি কাশি দিতে হবে। 
  • সময়মতো টিকা দিতে হবে।

নিউমোনিয়া রোগ থেকে বাঁচতে উপরের বলা প্রতিরোধগুলো মেনে চলবেন। আর নিউমোনিয়ার লক্ষণ প্রকাশ পেলে ডাক্তারের পরামর্শ নিবেন। চিকিৎসা নেওয়ার পাশাপাশি ঘরোয়া কিছু প্রতিকার রয়েছে যেগুলো মেনে চললে, এ রোগ দ্রুত সারে। জেনে নিন নিউমোনিয়া রোগের ঘরোয়া প্রতিকারগুলো কি।

নিউমোনিয়া রোগের ঘরোয়া প্রতিকার:

  • নিউমোনিয়ার সমস্যা দেখা দিয়ে লবন পানির গার্গল করতে পারেন। হালকা গরম পানির সাথে লবন মিশিয়ে গার্গল করলে, গলার কফ অপসারন হয় এবং রোগি অনেকটাই আরাম পায়। 
  • নিউমোনিয়া রোগ হলে পিপারমেন্ট চা খাবেন অনেকটাই উপকার পাবেন। 
  • আদার মধ্যে ব্যাথা উপশমের বৈশিষ্ট রয়েছে, তাই নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত ব্যক্তি আদা চা খেলে অনেকটাই আরাম পায়। 
  • মেথি চা নিউমোনিয়া রোগ থেকে অনেকটাই উপশম দিতে সাহায্য করে। 
  • নিউমোনিয়ার সমস্যায় বুকে ব্যাথা হলে হালকা গরম পানির সাথে ১ চা চামচ হলুদ গুড়ো মিশিয়ে খাবেন। ব্যাথা থেকে অনেকটাই উপশম পাওয়া যাবে।
বড়দের নিউমোনিয়া হলে করণীয়

বড়দের নিউমোনিয়া হলে করণীয়

নিউমোনিয়া ফুসফুসের একটি রোগ। নিউমোনিয়া রোগ কারও হয়ে থাকলে, তার ফুসফুস ভালোভাবে কাজ করে না। ফলে এ রোগের বিভিন্ন শ্বাসপ্রস্বাসজনিত লক্ষণগুলো দেখা দেয়।প্রতিবছর নিউমোনিয়া রোগে অনেক মানুষ আক্রান্ত হচ্ছে। আক্রান্তদের তালিকায় শিশু এবং বড়রা অর্থ্যাৎ বয়স্করা বেশি। অনেকেই জানতে চেয়ে থাকেন বড়দের নিউমোনিয়া হলে কি করা উচিত। তো চলুন জেনে নেওয়া যাক বড়দের নিউমোনিয়া হলে করণীয় কি। 

বয়স্কদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম হওয়ায়, তাদের নিউমোনিয়া রোগটি বেশি হতে দেখা যায়। কিংবা বড়রা যারা কোনো স্থায়ী রোগে ভুগছেন, তাদের এ রোগ হওয়ার ঝুঁকি বেশি। বয়স্কদের নিউমোনিয়া হলে সাধারনত জ্বর, বুকে বা শরীরে ব্যাথা, কাশি এ লক্ষণগুলো দেখা দেয়। বয়স্কদের  এসব লক্ষণ দেখা দিলে তাদের দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন। বয়স্কদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম হওয়ায়, এসব লক্ষণ তাদের ক্ষেত্রে বিপদজনক হতে পারে।

বয়স্কদের বা যাদের কোনো দীর্ঘস্থায়ী রোগ রয়েছে যেমন- কিডনি রোগ, ডায়াবেটিস, অ্যার্থ্রাইটিস ইত্যাদি, তাদের সবসময় সাবধানে থাকা জরুরি। শুধু নিউমোনিয়া রোগ নয়, সাবধানে থাকলে বিভিন্ন রোগ হওয়ার ঝুঁকি অনেকটাই কম। কি কি সাবধানতা প্রয়োজন জেনে নিন-

  • শীতকালে অথবা বর্ষাকালে ঠান্ডা লাগার ঝুঁকি বেশি, তাই এ মৌসুমে ঠান্ডা থেকে সতর্ক থাকতে হবে। 
  • হাঁচি, কাশি দেওয়ার সময় মুখ-নাক ঢেকে দিতে হবে। 
  • নিউমোনিয়ার টিকা নিতে হবে। 
  • স্বাস্থ সম্মত খাবার খেতে হবে ও পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকতে হবে। 

আরো পড়ুন: জন্ডিস এর লক্ষণ ও প্রতিকার - জন্ডিস হলে করনীয়

নিউমোনিয়া ওষুধের নাম

বিভিন্ন ভাইরাস বা ব্যকটেরিয়া যখন ফুসফুসে আক্রমন করে তখন নিউমমোনিয়া রোগটি হয়ে থাকে। এ রোগ শিশুদের ও বয়স্কদের জন্য বেশি মারাত্মক। তবে সঠিক চিকিৎসা নিলে এ থেকে সেরে ওঠা যায়। নিউমোনিয়া রোগিদের জন্য কি ওষুধ দেওয়া হয়, অনেকেই বিভিন্ন ওয়েবসাইটে খুঁজাখুঁজি করে থাকেন। তবে চিকিৎসকের পরামর্শ না নিয়ে নিউমোনিয়া রোগের ওষুধ খাওয়া একেবারেই ঠিক নয়। সংক্রামনের ধরন ও রোগির অবস্থা বুঝে চিকিৎসকেরা ওষুধ দিয়ে থাকেন।

নিউমোনিয়া রোগের জন্য ওফুক্সিন ২০০ এম জি ইনজেকশন অনেক চিকিৎসকেরা দিয়ে থাকেন। এটি একটি অ্যান্টিবায়োটিক ড্রাগ, যা বিভিন্ন ব্যাকটেরিয়ার সংক্রামনে দেওয়া হয়। এটি কোনো চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে ব্যবহার করতে পারেন। তবে যে ঔষুধই আপনি ব্যবহার করুন না কেন, চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া করা যাবে না।

নিউমোনিয়া হলে কি খাবার খেতে হবে

শীতের মৌসুমে নিউমোনিয়া রোগ হতে বেশি দেখা যায়। অনান্য সময়ের থেকে এ সময় সাবধানে থাকাটা অনেক বেশি জরুরি। সাবধানতার সাথে রাখতে হবে স্বাস্থকর খাবার, নিউমোনিয়া রোগিদের স্বাস্থকর খাবার খাওয়া অত্যন্ত জরুরি। এছারা এ রোগ প্রতিরোধ করতে অনেক বেশি ভূমিকা পালন করে থাকে স্বাস্থকর খাবার তালিকা। তাই রোগির চিকিৎসা গ্রহনের পর অবশ্যই তাকে স্বাস্থকর খাবারগুলো খাওয়াতে হবে।

কমলালেবু: কমলালেবু থেকে প্রচুর পরিমানে ভিটামিন সি পাওয়া যায়। কমলালেবুতে থাকা ভিটামিন সি’ ইমিউন সিস্টেমমে শক্তিশালী করতে সাহায্য করে, যা নিউমোনিয়া রোগিদের জন্য উপকারী। 

মধু: মধু ঠান্ডা, কাশি, গলাব্যাথার জন্য খুবই উপকারী। নিউমোনিয়া রোগিদের এসব সমস্যা হয়ে থাকে, তাই তাদের খাদ্য তালিকায় মধু রাখতে পারেন এতে অনেকটাই উপকৃত হবেন। 

আদা: আদার মধ্যে প্রদাহবিরোধি বৈশিষ্ট্য রয়েছে। যার ফলে এটি নিউমোনিয়া রোগিদের উপশমে সাহায্য করে। 

লেবু: লেবুতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি রয়েছে, যা নিয়মিত খেলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে। তাই নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত ব্যক্তিদের লেবু খাওয়া অনেক উপকারী। 

টাটকা ফলের রস: ফুসফুসের স্বাস্থকে ভালো রাখতে টাটকা ফলের রস খুবই উপকারী। তাই  নিউমোনিয়া রোগিদের খাবার তালিকায় টাটকা ফলের রস রাখলে, তাদের স্বাস্থের অনেকটাই উন্নতি হবে। 

সবুজ শাক সবজি: সুস্বাস্থ রক্ষায় শাকসবজির জুড়ি মেলা ভার। বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধ করতে অনেক উপকারী  টাটকা শাকসবজি। তাই নিউমোনিয়া রোগিদের খাবার তালিকায় বিভিন্ন শাকসবজি যেমন-কলমি শাক, পালং শাক, লাল শাক, ব্রকলি, ফুলকপি প্রভৃতি মৌসুমি সবজি রাখতে হবে। 

প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার: প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবারগুলোর মধ্যে প্রদাহবিরোধি গুন রয়েছে। যার ফলে এ খাবারগুলো নিউমোনিয়া রোগিদের সুস্থ হতে সহায়তা করে। তাই খাদ্য তালিকায় বিভিন্ন বাদাম যেমন-কাঠবাদাম, কাজুবাদাম, আখরোট ইত্যাদি, বিভিন্ন বীজ  এবং মাংসসহ আরও অনান্য প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবারগুলো রাখুন। 

নিউমোনিয়া রোগিদের খাদ্য তালিকায় উপরের বলা খাবারগুলো রাখতে হবে এবং ঠান্ডা খাবার, ঠান্ডা পানীয়, অতিরিক্ত লবন, স্যাচুরেটেড ফ্যাট যুক্ত খাবার এড়িয়ে চলতে হবে। স্বাস্থকর খাবারগুলো নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত ব্যক্তিদের সেরে উঠাতে সাহায্য করে। নিউমোনিয়া রোগ নিয়ে ভয় পাওয়ার কিছু নেই, চিকিৎসকের পরামর্শ ও সঠিক যত্ন নিলে এ রোগ থেকে আরোগ্য লাভ করা যায়।

আরো পড়ুন: দ্রুত পেটের গ্যাস কমানোর উপায় - গ্যাসট্রিক দূর করার উপায়

লেখকের শেষ বক্তব্য

নিউমোনিয়া রোগের লক্ষণ ও প্রতিকার সম্পর্কে আজকের এই ব্লগে সকল তথ্য তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। আশা করি নিউমোনিয়া রোগের লক্ষণ ও প্রতিকার সম্পর্কে আপনি বিস্তারিত জানতে পেরেছেন।

এতক্ষণ আমাদের সঙ্গে থাকার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। যদি আপনি এই ধরনের প্রয়োজনীয় বিভিন্ন ব্লগ পোস্ট নিয়মিত পড়তে চান তাহলে আপনাকে প্রতিনিয়ত আমাদের এই ওয়েবসাইট ফলো করতে হবে।

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন
comment url