জন্ডিস এর লক্ষণ ও প্রতিকার এবং জন্ডিস হলে করনীয় কি এসব বিষয় নিয়ে আমাদের আজকের আর্টিকেল। সুস্থ থাকতে এসব বিষয়গুলো আমাদের অবশ্যই জানা প্রয়োজন। তাই আজকের আর্টিকেলটি পড়ার মাধ্যমে বিস্তারিতভাবে জেনে নিন জন্ডিস এর লক্ষন ও প্রতিকার এবং জন্ডিস হলে করনীয় কি।
জন্ডিস রোগ কে অনেকেই সাধারন মনে করে, তবে রোগটি একেবারে সাধারন নয়। কোনো কোনো সময় এ রোগ মারাত্মক ঝুঁকির কারন হতে পারে। তাই জন্ডিস রোগের লক্ষনগুলো সম্পর্কে আমাদের সবার জেনে রাখা উচিত। তো চলুন বিস্তারিতভাবে নিচের আর্টিকেলটি পড়ুন এবং জেনে নিন জন্ডিস এর লক্ষণ ও প্রতিকার এবং জন্ডিস হলে কি করতে হবে।
জন্ডিস হলে করণীয়
বিশেষজ্ঞদের মতে জন্ডিস কোনো রোগ নয়, এটিকে কোনো রোগের উপসর্গ হিসেবে ধরা হয়। সাধারণত শরীর, প্রসাবের রঙ ও চোখ হলুদ হয় জন্ডিসের কারনে। বিভিন্ন কারনে জন্ডিস হতে পারে। রক্তে বিলিরুবিনের মাত্রা বেড়ে যাওয়ায় জন্ডিসের প্রধান কারন। বিলিরুবিনের মাত্রা বাড়ার কয়েকটি কারন রয়েছে যেমন-রক্তে লোহিত রক্ত কনিকা দ্রুত ভেঙে যাওয়া, পিত্তরসের প্রবাহ বাধাগ্রস্থ হওয়া, মেটাবলিজম বাধাগ্রস্থ হওয়, অতিরিক্ত মদ্যপান প্রভৃতি। এছারাও ভাইরাসের সংক্রামন, ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া, লিভার ক্যান্সার, থ্যালাসেমিয়া এসব প্রভৃতি কারনে জন্ডিস হয়ে থাকে। জন্ডিস হলে কি করবেন জেনে নিন।
- জন্ডিসের লক্ষন শরীরের মধ্যে প্রকাশিত হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিবেন। চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে নিশ্চিত হবে যে আপনার জন্ডিস হয়েছে কি না। চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া কোনো ওষুধ সেবন করবেন না।
- জন্ডিসে আক্রান্ত হলে বেশি বেশি বিশ্রাম নেওয়ার চেষ্টা করবেন, অতিরিক্ত পরিশ্রম করবেন না।
- জন্ডিসে আক্রান্ত ব্যাক্তিকে বিশুদ্ধ পানি ও খাদ্য খেতে হবে। বেশি বেশি তরল খাবার খেতে হবে। সেক্ষেত্রে সাধারন পানি, আখের রস, ডাবের পানি খাবেন।
- নরম ও সহজপাচ্য খাবারগুলো খেতে হবে।
- ধুমপান ও মদ্যপানের অভ্যাস থাকলে পরিহার করতে হবে।
- বাইরের খাবারগুলো খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে।
জন্ডিস হলে উপরের নিয়মগুলো ফলো করবেন। আর জন্ডিসের লক্ষন টানা দেখা দিলে ডাক্তারের পরামর্শ নিবেন, দেরিতে ডাক্তারের কাছে গেলে সমস্যা বেড়ে যেতে পারে।
জন্ডিসের লক্ষণ ও প্রতিকার
জন্ডিস আমাদের কাছে পরিচিত একটি শব্দ। যকৃৎ বা পিত্তনালির সমস্যা হলে জন্ডিস হয়ে থাকে। জন্ডিসের সমস্যাকে আমরা তেমন গুরুত্বর চোখে দেখি না। তবে এ সমস্যা বেশি সময় ধরে থাকলে মারাত্বক ঝুঁকি আসতে পারে। তাই এ সমস্যাকে গুরত্বসহকারে দেখা উচিত। এজন্য জন্ডিসের লক্ষণগুলো এবং প্রতিকার সম্পর্কে আমাদের ধারনা রাখতে হবে। তো চলুন জন্ডিসের লক্ষণ ও প্রতিকার সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক।
জন্ডিসের লক্ষণ:
- জন্ডিসের অন্যতম লক্ষণ হলো শরীর, চোখ ও প্রসাবের রং হলুদ হয়ে যাওয়া।
- শরীরে দুর্বলতা অনুভব করা।
- জ্বর জ্বর অনুভব।
- বমি বা বমি বমি ভাব।
- ক্ষুধামন্দা।
- যকৃত শক্ত হয়ে যাওয়া।
- পায়খানা ফ্যাকাসে হওয়া।
- পেটে ব্যাথা।
জন্ডিসের প্রতিকার:
জন্ডিস প্রতিকারে প্রথমে যেটা করবেন, সেটা হলো পর্যাপ্ত পরিমানে বিশ্রাম। এ সময় অতিরিক্ত পরিশ্রমের ফলে জন্ডিসের ঝুঁকি বেড়ে যেতে পারে। পর্যাপ্ত পরিমানে বিশ্রাম নেওয়ার ফলে জন্ডিস সেরে যেতে পারে। লক্ষণ গুরুত্বর হলে বসে থাকবেন না। চিকিৎসকের পরামর্শ নিন, চিকিৎসক যে ওষুধগুলো খেতে বলবে সেগুলো খাবেন। এছারা এ সময় বিভিন্ন ওষুধ যেমন-ঘুমের ওষুধ, ব্যাথানাশক ওষুধ, অ্যাসপিরিন এ জাতীয় ওষুধসহ বিভিন্ন ওষুধ খাওয়া যাবে না, প্রয়োজন হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে খেতে হবে। বাইরের খাবার, তেলে ভাজা ও অতিরিক্ত মসলাযুক্ত খাবার জন্ডিসে আক্রান্ত রোগিকে খাওয়া যাবেনা, সবসময় বিশুদ্ধ খাবার ও পানীয় পান করতে হবে।
চোরা জন্ডিস এর লক্ষণ
মানবদেহের রক্তের প্রবাহে বিলিরুবিনের আধিক্যের কারনে জন্ডিস হয়ে থাকে। আমাদের শরীরের ত্বক, চোখ এবং শ্লেষ্মা ঝিল্লি বিলিরুবিনের সাথে হলুদ হয়ে যায়। আর হলুদ ত্বকই হলো জন্ডিস। আপনাদের মধ্যে অনেকেই আছেন যারা জানতে চেয়ে থাকেন চোরা জন্ডিস এর লক্ষন সম্পর্কে। বিভিন্ন প্রকারের জন্ডিস রয়েছে, তবে জন্ডিসের কোনো প্রকারের মধ্যে এটি নেয়। মানবদেহে তিন ধরনের জন্ডিস হতে দেখা যায়। সেগুলো হলো-
- হেমালাইটিক জন্ডিস: লোহিত রক্তকনিকার ভাঙ্গন বৃদ্ধির ফলে যখন রক্তের প্রবাহে বিলিরুবিনের মাত্রা বেড়ে যায় তখন হেমালাইটিক জন্ডিস হয়।
- হেপাটোসেলুলার জন্ডিস: লিভারের বিলিরুবিন প্রক্রিয়াকরণ নিষ্কাশন হলো হেপাটোসেলুলার জন্ডিস।
- পোস্ট-হেপাটিক জন্ডিস: কোনো কারনে যখন পিত্তনালীতে বাধার সৃষ্টি হয়ে তখন সেটা পোস্ট-হেপাটিক জন্ডিস।
এসব ধরনের জন্ডিসের লক্ষণ একই হয়ে থাকে। উপরের জন্ডিসের লক্ষণ সম্পর্কে বলা হয়েছে, সেখান থেকে জেনে নিন জন্ডিসের লক্ষণসমূহগুলো কি কি।
জন্ডিস হলে কি খেতে হয়
জন্ডিস হলে খাবারের দিকে বিশেষভাবে নজর দেওয়া জরুরি। যকৃৎ বা পিত্তথলির ওপর চাপ পড়ে এমন খাবার জন্ডিস রোগিদের খাওয়া ঠিক নয়, এতে সমস্যা বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তাই জন্ডিস রোগিদের অবশ্যই সঠিক খাবার দিতে হবে। ভিটামিন, প্রোটিন এবং ফাইবারের ভারসাম্য প্রদান করে এমন খাবারগুলো জন্ডিস রোগির খাবার তালিকায় রাখতে হবে। জেনে নিন জন্ডিস হলো কি কি খাবারগুলো খেতে হয়-
প্রোটিন: জন্ডিস রোগির খাবার তালিকায় নিয়মিত মাছ, মাংস, ডাল এসব প্রোটিনজাতীয় খাবারগুলো পরিমিত রাখতে হবে।
গোটা শস্য: গোটা শস্য যেমন বাদামি চাল, রুটি, ওটস এসব খাবারে প্রচুর আঁশ এবং ভিটামিন থাকে যা জন্ডিস রোগিদের জন্য উপকারি।
তাজা শাকসবজি: তাজা শাকসবজি থেকে বিভিন্ন ধরনের পুষ্টি উপাদান পাওয়া যায়, যেগুলো লিভারের পক্ষে উপকারী। জন্ডিস রোগিরা তাজা শাকসবজির মধ্যে মিষ্টি আলু, টমেটো, কুমড়ো, গাজর, শালগম, ব্রকোলি, ফুলকপি, পালংশাক প্রভৃতি খাবেন।
বাদাম: বিভিন্ন প্রকারের বাদামে প্রচুর ফাইবার এবং স্বাস্থকর ফ্যাট রয়েছে। নিয়মিত যারা বাদাম খায় তাদের লিভারের কার্যকারিতা বৃদ্ধি পায়। তাই জন্ডিস রোগিদের এ খাবার খাওয়া স্বাস্থের জন্য উপকারী।
ফল: পেঁপে, বেরিস, তরমুজ, আনারস, কলা, কমলা, অ্যাভোকাডো এ ফলগুলো জন্ডিস রোগিদের প্রতিদিনের খাবার তালিকায় রাখা প্রয়োজন।
আঁখের রস: জন্ডিস নিরাময়ে আঁখের রস খুবই কার্যকারী একটি পানীয়। তাই জন্ডিস রোগিকে নিয়মিত এটি খাওয়াতে হবে।
উপরের বলা খাবারগুলো জন্ডিস রোগিদের প্রতিদিন পরিমিত খেতে হবে। এছারাও প্রতিদিন পর্যাপ্ত পরিমানে পানি পান করতে হবে।
জন্ডিস হলে কি খাওয়া যাবে না
জন্ডিস রোগিদের খাবারের মধ্য দিযে বিশেষ যত্নের প্রয়োজন। জন্ডিস রোগিদের জন্য এমন কিছু খাবার রয়েছে যেগুলো এড়িয়ে চলতে হবে। যে খাবারগুলো খাওয়ার ফলে লিভারের স্বাস্থে ক্ষতিকর প্রভাব পড়ে সে খাবারগুলো জন্ডিস রোগিদের এড়িয়ে চলার পরামর্শ দিয়ে থাকেন বিশেষজ্ঞরা। জেনে নিন জন্ডিস হলে কোন কোন খাবারগুলো খাওয়া যাবে না।
চর্বি ও তেলে ভাজা খাবার: চর্বি ও অতিরিক্ত তেলে ভাজা খাবাগুলো যেমন ফাস্ট ফুড, অতিরিক্ত ভাজা স্ন্যাকস, উচ্চ চর্বিযুক্ত দুগ্ধজাত পন্য জন্ডিস রোগিদের এড়িয়ে চলতে হবে।
অতিরিক্ত মসলাদার খাবার: অতিরিক্ত মসলাদার খাবারগুলো পাচনতন্ত্রকে বিরক্ত করে ফলে জন্ডিসের সমস্যা বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তাই জন্ডিস রোগিদের অতিরিক্ত মসলাদার খাবার খাওয়া ঠিক নয়।
চা-কফি: ক্যাফেইনযুক্ত খাবারগুলো জন্ডিস রোগিদের স্বাস্থের জন্য ক্ষতিকর। আর চা, কফি থেকে ক্যাফেইন পাওয়া যায়। তাই চা কপি জন্ডিস রোগিদের খাওয়া উচিত নয়।
অতিরিক্ত মিষ্টি জাতীয় খাবার: মিষ্টি জাতীয় খাবারগুলো লিভারে চর্বি জমায় এবং খাবার হজমে বাধা প্রদান করে। তাই জন্ডিস হলো মিষ্টিজাতীয় খাবার এড়িয়ে চলতে হবে।
জন্ডিসে আক্রান্ত ব্যক্তির উপরের খাবারগুলো খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। সঠিক খাবার লিভারের কার্যকারিতা বাড়ায় এবং ভুল খাবার লিভারের ক্ষতি করে। তাই স্বাস্থসম্মত পুষ্টিকর খাবারগুলো যেগুলো জন্ডিসে আক্রান্ত ব্যক্তির জন্য উপযোগি সে খাবারগুলো খেতে হবে।
লেখকের শেষ বক্তব্য
জন্ডিস এর লক্ষণ ও প্রতিকার – জন্ডিস হলে করনীয় সম্পর্কে আজকের এই ব্লগে সকল তথ্য তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। আশা করি জন্ডিস এর লক্ষণ ও প্রতিকার – জন্ডিস হলে করনীয় সম্পর্কে আপনি বিস্তারিত জানতে পেরেছেন।
এতক্ষণ আমাদের সঙ্গে থাকার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। যদি আপনি এই ধরনের প্রয়োজনীয় বিভিন্ন ব্লগ পোস্ট নিয়মিত পড়তে চান তাহলে আপনাকে প্রতিনিয়ত আমাদের এই ওয়েবসাইট ফলো করতে হবে।