সম্মানিত পাঠক আসসালামু আলাইকুম, আশা করছি আপনারা ভালো আছেন। আজকে আমরা একটি সরকারি তথ্য নিয়ে আলোচনা করেছি যাচ্ছি সেটা হচ্ছে ইনকাম ট্যাক্স রিটার্ন বা আয়কর রিটার্ন কি? আপনারা হয়তো অনেকেই জানেন যে, টিন (TIN) সার্টিফিকেটধারীদের আইকর রিটার্ন দাখিল করাটা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। আর কারও যদি টিন সাটিফিকেট থেকে থাকে, তাহলে তাকে অবশ্যই আয়কর রিটার্ন জমা দিতে হবে। তানাহলে তার বিরুদ্ধে আইন অনুয়ায়ী ব্যাবস্থা নেওয়া হবে।
আপনারা অনেকেই আছেন যারা ইনকাম ট্যাক্স রিটার্ন কি বা আয়কর রিটার্ন দাখিলের পদ্ধতি কিংবা আয়কর রিটার্ন না দিলে কত তাকা জরিমানা হতে পারে ইত্যাদি। মূলত এজন্যই আমরা আপনাদের সুবিধার কথা বিবেচনা করে এই পোষ্টে আয়কর রিটার্ন বিস্তারিত যাবতীয় তথ্য তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। তাই আমার মনে হয় অবহেলা না করে সম্পূর্ণ পোষ্টটি গুরুত্ব সহকাড়ে পড়ে জেনে নিন।
উপস্থাপনা
আপনি কি ইনকাম ট্যাক্স রিটার্ন সম্পর্কে জানতে চেয়ে আমাদের ওয়েবসাইটে ভিজিট করেছেন? তাহলে এখন আপনি সঠিক জায়গাইতেই আছেন। কেননা আপনি যদি এই পোষ্টটি অনুরোধক্রমে মনোযোগ দিয়ে পড়েন, তাহলে আয়কর রিটার্ন কি তা জেনে নিতে পারবেন।
এর পাশাপাশি আপনি করযোগ্য আয় কি, আয়কর রিটার্ন দাখিলের পদ্ধতি, আয়কর রিটার্ন জমা না দিলে জরিমানা এবং আয়কর রিটার্ন কত টাকা তা বিস্তারিতভাবে জানতে পারবেন। তাহলে আর বেশি কথা না বাড়িয়ে মূল আলোচনাতে ফিরে প্রথমে ইনকাম ট্যাক্স রিটার্ন সম্পর্কে জেনে নেই।
ইনকাম ট্যাক্স রিটার্ন
আমরা অনেকেই আয়কর নামক শব্দটি শুনেছি। আয়কর হচ্ছে মূলত সরকার কর্তৃক নির্ধারিত আয়ের উপর কর। অনেককেই দেখা যায় আয়কর এবং আয়কর রিটার্নকে একই মনে করেন। এটি ভুল একটি ধারণা। আপনার এক বছরের আয় ব্যায়, টাকা পয়সা এবং সব সম্পদের হিসাব প্রতি বছর নির্দিষ্ট ফর্মে আপনার সংশ্লিষ্ট উপ-কর কমিশনারের কার্যালয়ে দাখিল করতে হয়, যেটাকে বলে ইনকাম ট্যাক্স রিটার্ন।
আয়কর রিটার্ন কি
আয়কর রিটার্ন হচ্ছে বাৎসরিক আয়ের সংক্ষিপ্ত একটি বিবরণী। সরকার কর্তক নির্ধারিত একটি কাঠামোবদ্ধ ফরমে আয়-ব্যয়, সম্পদ ও দায়ের তথ্য উপস্থাপন করার নামই হচ্ছে আয়কর রিটার্ন। এই কাঠামোবদ্ধ ফরমটি আয়কর আইন অনুযায়ী জাতীয় রাজস্ব বোর্ড প্রস্তুত করে।
আয়কর আইন অনুযায়ী এই নির্ধারিত ফর্ম আয়কর রিটার্ন দাখিল করতে হয়। এই ফর্মটি মূলত নির্ধারিত আয়ের ব্যক্তি ও প্রাতিষ্ঠানকে করের আওতায় আনার জন্য তাদের করযোগ্য আয়ের হিসাব এবং মোট কর দায় বের করার জন্য ব্যবহার করা হয়। ব্যক্তি শ্রেণীর করদাতা ও প্রাতিষ্ঠানিক করদাতাদের জন্য পৃথক রিটার্ন রয়েছে।
মূলত আপনার বাৎসরিক আয়ের সংক্ষিপ্ত বিবরণ আয়কর কর্তৃপক্ষের নিকট উপস্থাপন করার মাধ্যম হচ্ছে আয়কর রিটার্ন। আয়কর রিটার্নের গঠনগুলি সরকারি আয়কর বিধি বা নীতিমালা দ্বারা নির্দিষ্ট করা আছে। আয়কর আইন মোতাবেক অনুযায়ী জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (National Board of Revenue) কর্তৃক নির্ধারিত ফরমে আয়কর রিটার্ন দাখিল করতে হয়।
আয়কর রিটার্ন দাখিলের পদ্ধতি
বর্তমান সময় রিটার্ন দাখিল করার জন্য মোট দু’টি পদ্ধতি প্রচলিত রয়েছে। যথাঃ প্রথমটি হচ্ছে সাধারণ পদ্ধতি এবং দ্বিতীয়টি সর্বজনীন পদ্ধতি।
সাধারণ পদ্ধতি
যদি রিটার্নে সর্বজনীন পদ্ধতি উল্লেখ করা না থাকে কিংবা উল্লেখ না থাকলে রিটার্নটি সাধারণ পদ্ধতি হিসেবে দাখিলকৃত বলে গণ্য করা হবে। এ ক্ষেত্রে রিটার্ন এর প্রদর্শিত আয় এর তথ্য না থেকে থাকলে, করদাতার শুনানিগুলো গ্রহণপূর্বক মামলা নিষ্পত্তির বিধান আছে।
সর্বজনীন পদ্ধতি
বিশ্বব্যাপী প্রচলিত নীতি হচ্ছে, করদাতা তার নিজের আয় নিজে পরিচালনা করে আয়কর পরিশোধ করবেন। এ পদ্ধতিতে করদাতার দাখিল করা রিটার্ন কোন প্রশ্ন ব্যতিত আয়কর কর্তৃপক্ষ হতে গৃহীত হয়। Return দাখিলের সমর্থনে প্রাপ্তি স্বীকার পত্রের ক্ষেত্রে কর আদেশ হিসেবে বিবেচিত হয়।
করদাতা যখন তার রিটার্ন ফর্ম পূরণ করবে ঠিক তখন সেই পৃষ্ঠায় ডানদিকে একটি সর্বজনীন পদ্ধতির ঘর দেয়া থাকবে সেখানে টিক প্রদান করার পরে যদি রিটার্নের উপরে সর্বজনীন পদ্ধতি উল্লেখ থাকে তাহলে তার দাখিলকৃত রিটার্নটি সর্বজনীন পদ্ধতির আওতায় অন্তর্ভুক্ত হবে। সর্বজনীন সহ নির্ধারিত পদ্ধতিতে দাখিলকৃত রিটার্ন করার সময় একটি ক্ষুদ্র অংশ জাতীয় রাজস্ব বোর্ড কর্তৃক (National Board of Revenue)নির্ধারিত criteria অনুযায়ী তা অডিট হয়ে থাকে।
৮২ বিবি ধারায় সর্বজনীন স্বনির্ধারণী পদ্ধতিতে দাখিলকৃত নতুন রিটার্নের ব্যবসা ও পেশা খাতে প্রদর্শিত আয়ের ৪ গুণ প্রারম্ভিক পুজি নেওয়া হবে। তবে পুঁজি পরবর্তী ৫ বছরের মধ্যে হস্তান্তর করা যাবে না। তা করলে যে বছর হস্তান্তর করা হবে সে বছরে হস্তান্তরকারীর আই হিসেবে বিবেচিত হবে। প্রাথমিক মূলধন প্রদর্শনের পরবর্তী ৫ বছরের মধ্যে আংশিকভাবে হস্তান্তর করা হলে তা হস্তান্তরকারীর আয় হিসেবে বিবেচিত হবে।
তবে পরবর্তী বছরের তুলনায় ২০% আয় বৃদ্ধি করে রিটার্ন দাখিল করা হলে তা বহির্ভূত থাকবে। নিচে কিছু শর্ত উল্লেখ করা হলোঃ
- কোন ধরনের করমুক্ত আয় থাকবে না
- আর্থিক প্রতিষ্ঠান হতে ভিন্ন অন্য কোনো অংশ থেকে ঋণ নেয়া থাকবে না
- সম্পদ পারিবারিক ব্যয়, আয় দ্বারা আবৃত হতে হবে।
উল্লেখ্য যে কোন ব্যক্তি যদি কোন রিটার্ন করার ক্ষেত্রে আয় গোপন করে থাকে, তাহলে অধ্যাদেশের ৯৩ ধারা মোতাবেক প্রয়োজনীয় আইন এর ব্যবস্থা নেয়া হবে।
আয়কর রিটার্ন জমা না দিলে জরিমানা
আমরা অনেকেই অনেকেই বিভিন্ন কাজের প্রয়োজনে টিন (TIN) খুলেন, কিন্তু কখনো ট্যাক্স রিটার্ন দাখিল করি না। আবার সঞ্চয়পত্র এর জন্য অনেকেই টিন সার্টিফিকেট খুলে বসে থাকেন কিন্তু জানেন না যে এর কাজ কি। তো এখন আপনি বলতে পারেন যে আমার তো কোন ইনকাম নেই, সঞ্চয়পত্রের জন্য টিন(TIN) খুলেছি, আমি তাহলে কেন আয়কর রিটার্ন দিব?
মূলত আপনি যদি টিন সার্টফিকেট চালু করেন তাহলে তাহলে আয় থাকুক বা না থাকুক আয়কর রিটার্ন আপনাকে দাখিল করতেই হবে। পর্যাপ্ত পরিমাণ আয় থাকলে আয়কর হিসেবে অর্থ/টাকা জমা দিবেন, আর যদি আপনার ইনকাম না থাকে তাহলে টাকা দেয়ার প্রয়োজন নেই।
কিন্তু পরিশেষে আপনাকে রিটার্ন দাখিল করতেই হবে। তবে আপনি যদি রিটার্ন দাখিল না করেন, তাহলে সর্বশেষ নিরূপিত আয়ের করের ১০ শতাংশ এবং পরবর্তীতে যতদিন না রিটার্ন দিবে তাকে আইন অনুযায়ী প্রতি দিনের জন্য মোট ৫০ টাকা হারে জরিমানা দিতে হবে।
আয়কর রিটার্ন কত টাকা
বাজেট প্রস্তাবনায় একজন স্বাভাবিক ব্যক্তি করদাতা পরিবারের করমুক্ত আয়ের সীমা অপরিবর্তিত রাখা হয়েছে। এর পাশাপাশি প্রথম আলোর এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে করদাতা, ফার্ম ও হিন্দু অবিভক্ত পরিবারের ক্ষেত্রে কর ধাপ এক সময়ে গিয়ে সমন্বয় করে বিদ্যমান সর্বোচ্চ করহার ২৫ শতাংশ থেকে ৩০ শতাংশে নির্ধারণ করা হবে। এ ছাড়া স্বনির্ধারণী ব্যবস্থায় এই বিধান চালু করা হবে।
নির্ধারিত বাজেট অনুযায়ী, ইনকামের ১ম সাড়ে তিন লাখ টাকার উপর কোনো কর বা ট্যাক্স দিতে হবে না। আগামী অর্থবছরেও সেই ব্যক্তির ইনকামের প্রথম সাড়ে তিন লাখ টাকা পর্যন্ত মোট আয় করমুক্ত থাকবে। তবে-
- পরবর্তী ১ লাখ টাকা ইনকামের উপর ৫ শতাংশ
- পরবর্তী ৪ লাখ টাকা ইনকামের উপর ১০ শতাংশ,
- পরবর্তী ৫ লাখ টাকা ইনকামের উপর ১৫ শতাংশ,
- পরবর্তী ৫ লাখ টাকা ইনকামের উপর ২০ শতাংশ,
- পরবর্তী ২০ লাখ মোট ইনকামের উপর ২৫ শতাংশ
তবে অন্যদিকে মহিলা ও ৬৫ বছরের বেশি বয়সের ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে আগে করদাতাদের করমুক্ত আয়সীমা আগে ছিল সাড়ে তিন লাখ টাকা কিন্তু একন তা বাড়িয়ে চার লাখ করার প্রস্তাব রাখা হয়েছে।
এ ছাড়া যারা প্রতিবন্ধী রয়েছেন তাদের ক্ষেত্রে আগে জন্য করমুক্ত আয়সীমা ছিল সাড়ে ৪ লাখ টাকা কিন্তু এখন তা বাড়িয়ে ৪ লাখ ৭৫ হাজার টাকা এবং একই প্রতিবন্ধীর পিতা-মাতারর ক্ষেত্রে প্রত্যেক সন্তান এর জন্য করমুক্ত আয়সীমা ৫০ হাজার টাকা করা হয়েছে।
ইনকাম ট্যাক্স রিটার্ন সম্পর্কে প্রশ্ন ও উত্তর
প্রশ্ন:বাংলাদেশে কর কত প্রকার?
উত্তর: বাংলাদেশে, প্রধান কর হল শুল্ক শুল্ক, মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট), সম্পূরক শুল্ক, আয়কর এবং কর্পোরেশন কর।
প্রশ্ন: মোবাইলের মাধ্যমে ই-রিটার্ন জমা দেয়া যাবে?
উত্তর: না, ই-রিটার্নকে সহজ ও user-friendly করার জন্য অনেক features দেয়া আছে, যার অনেকগুলো মোবাইল ডিভাইসে পাওয়া যাবে না। তাই ল্যাপটপ বা ডেস্কটপ কম্পিউটারে ই-রিটার্ন করুন।
প্রশ্ন: ই রিটার্নের ক্ষেত্রে কোন সাপোর্টিং কাগজপত্র সাবমিট করতে হবে?
উত্তর: অনলাইন রিটার্ন দাখিলে কোনো কাগজপত্র সাবমিট করতে হয় না। আপনি প্রয়োজনীয় কাগজপত্র থেকে নির্ভুলভাবে তথ্য এন্ট্রি দিন। অনলাইনে রিটার্ন submit করার সাথে সাথে সিস্টেমে আপনার অ্যাসেসমেন্ট হয়ে যাবে এবং আপনি প্রাপ্তি স্বীকারপত্র পেয়ে যাবেন।
প্রশ্ন: ই রিটার্ন সিস্টেমে রেজিস্ট্রেশন করতে কি লাগে?
উত্তর: ই-রিটার্ন সিস্টেমে রেজিস্ট্রেশন করতে টিআইএন এবং আপনার নিজের নামে নিবন্ধিত মোবাইল ফোন নম্বর লাগে। আপনার মোবাইল ফোন নম্বরটি ভেরিফাইড কি না তা আপনার ফোন থেকে *১৬০০১# নম্বরে ডায়াল করে জেনে নিতে পারেন।
ইনকাম ট্যাক্স রিটার্ন সম্পর্কে লেখকের মতামত
আমরা ইতিমধ্যে ইনকাম ট্যাক্স রিটার্ন সম্পর্কে বিভিন্ন যাবতীয় তথ্যাদি এই আর্টিকলে আলোচনা করেছি। আশা করছি এই বিষয়ে আপনার মনের সকল ধরণের প্রশ্নের উত্তর জানতে পেরেছেন। তবে এরপরেও যদি ইনকাম ট্যাক্স রিটার্ন সম্পর্কে আপনার কোন ধরণের প্রশ্ন কিংবা মতামত থেকে থাকে তাহলে এই পোষ্টের কমেন্ট বক্সে জানাতে পারেন।
আর আজকের পোষ্ট এই ছিল আমাদের ইনকাম ট্যাক্স রিটার্ন এর খুঁটিনাটি বিষয়াদি। আপনি যদি এই আর্টিকেলটি শুরু পড়েন তাহলে থাকলে আপনি হয়তো আয়কর রিটার্ন কি, আয়কর রিটার্ন দাখিলের পদ্ধতি, আয়কর রিটার্ন জমা না দিলে জরিমানা, আয়কর রিটার্ন কত টাকা ইত্যাদি জেনে গেছেন।