আমাদের দেশের সিংহভাগ মানুষ গ্রামে বসবাস করে। তথ্য অনুযায়ী বাংলাদেশের শতকরা প্রায় ৮৫ ভাগ মানুষ গ্রামে বসবাস করে। গ্রামে বাড়ি করার জন্য ব্যাংক লোন পদ্ধতি তে খুব সহজে হোম লোন নেওয়া যায়। অনেকের স্বপ্ন রয়েছে নিজস্ব একটি বাড়ি তৈরি করার কিন্তু অর্থের অভাবে সেটি হয়ে ওঠে না। আপনি চাইলেই নিয়ে আপনার বাড়ি তৈরির স্বপ্নটি পূরণ করতে পারেন। আপনি যদি জানতে চান কিভাবে গ্রামে বাড়ি করার জন্য ব্যাংক লোন নিতে হয় তাহলে আজকে আর্টিকেলটি আপনার জন্যই।
তো আপনি কি আপনার গ্রামে একটি বাড়ি করার স্বপ্ন দেখে গ্রামে বাড়ি করার জন্য ব্যাংক লোন সম্পর্কে জানতে চেয়ে আমাদের ওয়েবসাইট-এ এসেছেন। ধন্যবাদ, আপনি তাহলে এখন সঠিক স্থানেই এসেছেন, কেননা আমরা আজকের এই আর্টিকেলটিতে গ্রামে বাড়ি করার জন্য ব্যাংক লোন নেওয়ার সিস্টেম নিয়ে আলোচনা করার পাশাপাশি ব্র্যাক ব্যাংক হোম লোন, কৃষি ব্যাংক হোম লোন ,বাড়ির দলিল দিয়ে ব্যাংক লোন ,সোনালী ব্যাংক মর্টগেজ লোন ইত্যাদি এই সকল তথ্য পেয়ে যাবেন আমাদের এই পোস্ট-এ।
উপস্থাপনা
বর্তমানে গ্রামে বাড়ি করার জন্য বিভিন্ন ব্যাংক গুলো ব্যাংক লোন বা হোম লোন দিয়ে থাকেন। এর মধ্যে অনেক ব্যাংক রয়েছে যেগুলো বাড়ি করার জন্য একটু বেশি সুযোগ-সুবিধা দিয়ে থাকে। গ্রামে বাড়ি করার জন্য এখন বিভিন্ন ব্যাংক তাদের গ্রাহকদের সুবিধা প্রদান করে থাকে।
আপনি ইচ্ছে করলে গ্রামে বাড়ি করার জন্য বেশি সুযোগ সুবিধা দেয় এমন ব্যাংক থেকে হোম লোন নিতে পারেন। অনেকেই রয়েছে যারা স্বল্প বেতনের চাকরি করে থাকে এবং তাদের জন্য স্বপ্নের বাড়ি দেওয়া প্রায় অসম্ভব হয়ে যায়। কিন্তু বর্তমান সময়ে এই সমস্যার কথা চিন্তা করে বিভিন্ন ব্যাংকগুলো এই ব্যাংক লোনের সুবিধা চালু করেছে।
গ্রামেও বাড়ি করতে বর্তমান সময়ে অনেক টাকার প্রয়োজন হয়ে থাকে। যে টাকাগুলো একজন স্বল্প বেতনের চাকুরীজীবীর যোগান দেওয়া প্রায় অসম্ভব হয়ে যায়। তাই আপনি এখন ইচ্ছে করলেই বিভিন্ন ব্যাংক থেকে হোম লোনের মাধ্যমে বাড়ি করার জন্য আপনার প্রয়োজনীয় টাকা উত্তোলন করতে পারবেন বা লোন নিতে পারবেন। নিচে গ্রামে বাড়ি করার জন্য ব্যাংক লোন এর পদ্ধতি সম্পর্কে এই পোষ্টে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হলো।
গ্রামে বাড়ি করার জন্য ব্যাংক লোন
গ্রামের দরিদ্র পরিবারের সদস্যরা সুন্দর একটি বাড়ি নির্মাণের স্বপ্ন পূরণ করার জন্য বিভিন্ন ব্যাংক লোন দেয়। গ্রামে বাড়ি নির্মাণের জন্য ব্যাংক থেকে লোন নেয়ার পূর্ব শর্ত হচ্ছে আপনার আয়ের উৎস থাকাটা বাধ্যতামূলক। মোটকথা আপনি মাসিক কিস্তি চালাতে পারবেন এরূপ আয় এর উৎস দেখাতে হবে।
আরেকটি শর্ত হচ্ছে যেই ব্যক্তি লোন নিবেন তার নামে বাড়ির জমি থাকতে হবে। তানাহলে ব্যাংক লোন দিবে না। এক্ষেত্রে সর্বপ্রথম আপনি যেই ব্যাংকে লোন নিবেন সেই ব্যাংকে একাউন্ট চালু করে লোনের জন্য আবেদন করতে হবে। যিনি বাড়ি করবেন তার নামের জমির আসল কাগজপত্র দেখাতে হবে।
আপনার পরিবারের একজনকে অবশ্যই সাক্ষী হিসেবে থাকতে হবে। তবে মনে রাখাটা জরুরি যে আপনি যদি অন্য ব্যাংক থেকে লোন নিয়ে থাকেন তাহলে আপনি আরেকটি ব্যাংক থেকে লোন গ্রহন করতে পারবেন না। এটি মূলত প্রতিটা ব্যাংক এর নিয়ম বহির্ভূত।
গ্রামের মানুষরা যেহেতু দরিদ্র হয়ে থাকে, এজন্য তাদের লোনের উপর সুদের পরিমাণটা একটু কম হয়। মূলত গ্রামে বাড়ি করার উদ্দেশ্যে লোন নিলে সুদের পরিমাণ ৮% থেকে ৯% হয়ে থাকে। এখন বিভিন্ন ব্যাংক থেকে লোন নিতে পারবেন। যেমন: জনতা ব্যাংক, সোনালী ব্যাংক, সিটি ব্যাংক,ইত্যাদি।
বাড়ির দলিল দিয়ে ব্যাংক লোন
আপনি যদি বাড়ির দলিল দিয়ে ব্যাংক লোন নেওয়ার পদ্ধতি সম্পর্কে জানতে চান তবে এই পর্বটি আপনার জন্য। এই পর্বের মাধ্যমে আপনি জানতে পারবেন কিভাবে বাড়ির দলিল দিয়ে ব্যাংক লোন নিতে হয় বা নেওয়ার পদ্ধতি সম্পর্কে। তাহলে চলুন বাড়ির দলিল দিয়ে ব্যাংক লোন নেওয়ার পদ্ধতি বিস্তারিতভাবে জেনে নেওয়া যাক।।
বাড়ির দলিল দিয়ে ব্যাংকের লোন নেওয়ার ক্ষেত্রে আপনি আসলে কোন ব্যাংক থেকে লোন গ্রহন করতে চাচ্ছেন সেটা আগে সিলেক্ট করতে হবে। এবং এর পাশাপাশি যেই ব্যাংকে লোন নিবেন সেই ব্যাংকের মর্টগেজ বা বন্ধকী লোন সম্পর্কে জানতে হবে। বাড়ির দলিল দিয়ে ব্যাংক লোন নিতে হলে যেসব প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট লাগবে তা নিম্নরূপঃ
- প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট
- জাতীয় পরিচয় পত্র
- ইউলিটি বিলের কপি
- বাড়ির দলিল ও বায়া দলিল
- খারিজের কাগজ
- মৌজারিট
- ঋণের চুক্তি পত্র
- গত এক বছরের ট্যাক্স পরিশোধের রশিদ
- সিএস এর রেকর্ড/আরএস রেকর্ড ও বিএস রেকর্ড খতিয়ান
- জমি খারিজ করার সময় প্রদান কৃত রশিদ
বাড়ির দলিল দিয়ে বা জমির দলিল দিয়ে ব্যাংক লোন নেওয়ার জন্য উল্লেখিত ডকুমেন্টসগুলো প্রয়োজন হবে তাই পূর্ব থেকে এই কাগজপত্রগুলো সংগ্রহ করে রাখতে হবে। আর এক্ষেত্রে আপনি যেই ব্যাংক থেকে লোন গ্রহণ করবেন সেই ব্যাংকের ম্যানেজারের সাথে আলোচনা করে নিবেন।
সোনালী ব্যাংক মর্টগেজ লোন
প্রায় প্রতিটা আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে মর্টগেজ লোন নেওয়া যায়। মুলত বেশিরভাগ মানুষই কাজের জন্য এই মর্টগেজ লোন নিয়ে থাকেন। আর এই লোন নেওয়ার জণ্য সিকিউরিটি হিসেবে আপনার স্থায়ী যেকোন সম্পত্তি তাদের নিকট বন্ধক রাখতে হবে।
বর্তমানে অধিকাংশ আর্থিক প্রতিষ্ঠান গুলো স্থায়ী সম্পত্তি বন্ধক রেখে মর্টগেজ লোন প্রদান করে থাকেন। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য ব্যাংক হচ্ছে সোনালী ব্যাংক। তবে এই সোনালী ব্যাংক মর্টগেজ লোন পেতে হলে আপনার বেশ কয়েকটি প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস লাগবে। সোনালী ব্যাংক মর্টগেজ লোন পেতে যা যা থাকতে হবে তা নিম্নে উল্লেখ করা হলোঃ
যোগ্যতাসমূহ
- আবেদনকারীর জাতীয় পরিচয়পত্র
- গত ১ বছরের ট্যাক্স ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট
- বিদ্যুৎ বিলের কপি
- গত ১ বছরের ব্যাংক স্টেটমেন্ট
- জামিনদারের কাগজপত্র
- বন্ধকযোগ্য সম্পদের দলিলপত্র
- বেতনের সার্টিফিকেট
- যন্ত্রপাতি হলে মালিকানা সাপেক্ষে প্রমাণপত্র ইত্যাদি।
সোনালী ব্যাংক মর্টগেজ লোনের উপর সুদের হার রয়েছে। মূলত পার্সনাল লোন এর চেয়ে মর্টগেজ লোন এর সুদের হার অনেক কম থাকে। যারা মর্টগেজ লোন নিবেন তাদের মোট লোনের উপর ১২% থেকে ১৫% সুদের হার দিতে হবে। এজন্য অধিকাংশ গ্রাহকই সোনালী ব্যাংক মর্টগেজ লোন নিয়ে থাকেন।
মর্টগেজ লোন দেবার পূর্বে ব্যাংক যা খতিয়ে দেখে মর্টগেজ লোন বা বন্ধকী ঋণ দেবার পূর্বে ব্যাংক সাধারণত কিছু কাগজপত্র খতিয়ে দেখে। এই কাগজপত্র গুলো নিচে উল্লেখ করা হলো:
প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস
- আবেদনকারীর মাসিক বেতন বা আয়
- গত কয়েক বছরের প্রদত্ত ট্যাক্স রশিদ
- বর্তমান পেশা
- বর্তমান কর্মরত প্রতিষ্ঠান
- বন্ধকী সম্পত্তির মূল্য
- চলমান বা অপরিশোধিত কোনো লোন আছে কিনা
- কৃষি ব্যাংক হোম লোন
বর্তমান সময়ে কৃষকদের কথা চিন্তা করে বাংলাদেশ সরকারের উদ্যোগে কৃষি ব্যাংক কৃষকদের জন্য কৃষি ব্যাংক হোম লোন দিয়ে থাকে। একজন কৃষক চাইলে এখন কৃষি ব্যাংকের মাধ্যমে লোন নিয়ে তার স্বপ্নের বাড়ি তৈরি করতে পারবেন। দেশের উন্নয়নে যারা সব থেকে বেশি ভূমিকা পালন করে তাদের মধ্যে অধিকাংশই কৃষক।
বর্তমান সময়ে দেশের শতকরা ৮০% মানুষ কৃষিকাজে নিয়োজিত রয়েছে। সে কথা চিন্তা করে বাংলাদেশ সরকারের উদ্যোগে বি এইচ বি এফ সি কৃষকদের জন্য আবাসন লোন বা হোম লোন দেওয়ার পদ্ধতি চালু করেছে। বর্তমান সময়ে কৃষি ব্যাংক ও হোম লোন বা আবাসন নির্মাণের জন্য দুই ভাগে ঋণ দিয়ে থাকে।
তবে কৃষি ব্যাংক হোম লোন নিতে আপনার বেশ কয়েকটি যোগ্যতা থাকতে হবে। কৃষি ব্যাংক হোম লোন নিলে আপনার কি কি যোগ্যতা থাকতে হবে সেগুলো নিম্নে দেয়া হলঃ
- আবেদনকারীর বাড়ি করার জন্য তার নামে জমি থাকতে হবে।
- পৌরসভা কর্তৃক অনুমোদিত নকশা মোতাবেক বাড়ি তৈরি করতে হবে।
- ঋণ গ্রহিতাকে সুস্থ ও পূর্ণবয়স্ক হতে হবে যেমন চুক্তি করার ক্ষমতা থাকা।
- আবেদনকারীর বয়সসীমা ১৮ থেকে ৬০ বছর হতে হবে।
ব্র্যাক ব্যাংক হোম লোন
এখন আপনি খুব সহজেই ব্রাক ব্যাংক এর মাধ্যমে হোম লোন নিতে পারবেন। তাহলে চলুন জেনে নেওয়া যাক ব্রাক ব্যাংক হোম লোন নেওয়ার পদ্ধতি। ব্র্যাক ব্যাংকে হোম লোন এর ক্ষেত্রে যেসব যোগ্যতা লাগবে তা নিম্নে তুলে ধরা হলোঃ
যোগ্যতাসমূহ
- প্রাপ্তবয়স্ক হতে হবে (২৫ থেকে ৬৫ বছরের মধ্যে)
- নির্ভরযোগ্য ইনকাম সোর্স থাকতে হবে
- প্রতি মাসে আপনার আয় হতে হবে ৩০ হাজার
- অবশ্যই আপনার নিজের ব্র্যাক ব্যাংকের অ্যাকাউন্ট থাকতে হবে
- প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস
- ভোটার আইডি কার্ড/ড্রাইভিং লাইসেন্স অথবা পাসপোর্ট
- বিগত এক বছরের ব্যবসায়িক উপার্জনের স্টেটমেন্ট
- ট্যাক্স ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট
- হোম লোনের বরাদ্দ চুক্তি বা বাইনার দলিল
- হোম ক্রেডিট এর জন্য নিবন্ধিত মালিকানা দলিল
লেখকের শেষ কিছু কথা
আপনি হয়তো আপনার গ্রামের জমিতে বাড়ি করার জন্য ব্যাংক থেকে লোন নিতে চাচ্ছেন, লোন নিয়ে বাড়িও বানাবেন অথবা কারও বাড়ি কিনেও নিতে পারেন, কিন্তু আপনি জানেন কি একজন মুমিন ব্যক্তি কখনই সুদ গ্রহন নিতে প্রদান করতে পারে না। তবে হ্যাঁ আপনি হয়তো বলতে পারেন যে এসব কথা এই পোষ্টে বলার মানে কি? আমি জানি ভাই তবুও বলছি, কারণ আমরা সবাই জানি যে সুদ কত বড় গুনাহ।
আপনি একটা বাড়িতে হয়তো ৫০ থেকে ৬০ বছর বসবাস করবেন, কিন্তু এই সুদের টাকার বাড়িতে যতদিন থাকবেন ততদিন পাপ দেওয়া হবে। আপনার মৃত্যুর পর কবরে তার শাস্তি দেওয়া হবে। এজন্য আমার ব্যক্তিগত পরামর্শ থাকবে আপনি অবশ্যই হালাল টাকা দিয়ে একটা ছোট্ট কুড়েঘর বানিয়ে থাকুন।
আজকের এই পোষ্ট আমরা ইতিমধ্যে গ্রামে বাড়ি করার জন্য ব্যাংক লোন এর খুঁটিনাটি বিষয় আলোচনা করেছি। আপনি যদি এই আর্টিকেলটি শুরু পড়েন তাহলে থাকলে আপনি হয়তো এই বিষয়ে জেনে নেওয়ার পাশাপাশি সহজ বাড়ির দলিল দিয়ে ব্যাংক লোন, সোনালী ব্যাংক মর্টগেজ লোন, কৃষি ব্যাংক হোম লোন, ব্র্যাক ব্যাংক হোম লোন ইত্যাদি নিয়ে বিস্তারিত জেনে গেছেন।