দলিল সংশোধন করার নিয়ম - জমির দলিল অনুসন্ধান
আপনারা যদি দলিল সংশোধন করার নিয়ম জানতে চান তাহলে জানতে পারবেন। আজকে আপনাদের জন্য আমাদের এই সাইটে দলিল সংশোধন করার নিয়ম সম্পর্কে আলোচনা করব। আপনারা যদি এই বিষয়ে জানতে ইচ্ছুক হয়ে থাকেন তাহলে প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত পড়বেন।
এর মাধ্যমে আপনারা অনলাইনকে ব্যবহার করে জমি সংক্রান্ত বিভিন্ন ধরনের কাজ করতে পারবেন। তাহলে চলুন আমরা জেনে নেই অনলাইনে জমির দলিল চেক আসলে করা যায় কিনা এবং যদি যায় তাহলে অনলাইনে জমির দলিল চেক কিভাবে করতে হয় তার সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জেনে নেয়ার চেষ্টা করি।
দলিল সংশোধন করার নিয়ম
জমি রেজিষ্ট্রির পর দলিলে দাগ, খতিয়ান, মৌজা, চৌহদ্দি বা নামের বানানে কোনো প্রকার ভুল ধরা পড়লে সহজেই সংশোধন করা যায়। শুধু জমির দলিলে নয়। যেকোনো কারণে নাম পরিবর্তন বা নামের সংশোধন করার প্রয়োজন হতে পারে। কিংবা আপনি চাইছেন আপনি যে নামে কাগজে-কলমে এত দিন পরিচিত হয়ে আসছেন, ওই নামে আর পরিচিত হবেন না। নামটি পরিবর্তন করবেন।
এ জন্য আপনার যেটাই পরিবর্তন করতে চান না কেন এই কাজে যেটা সবচেয়ে জরুরি ও বাধ্যতামূলক তা হচ্ছে হলফনামা সম্পাদন করতে হবে। এক্ষেত্রে আপনাকে যা করতে হবে তা হল সরাসরি কোনো নোটারী পাবলিক আইনজীবীর সাহায্য নিয়ে যা যা করা লাগবে তা হচ্ছেঃ
- আপনার পূর্ণ নাম
- ঠিকানাসহ
- বাবা এবং মায়ের নাম
- জাতীয়তা
- বয়স
- পেশা
- ধর্ম ইত্যাদি উল্লেখ করে একটি হলফনামা সম্পাদন করতে হবে।
এছাড়াও হলফনামায় সুনির্দিষ্টভাবে উল্লেখ থাকতে হবে যে এর সাথে সঙ্গে কোন পাসপোর্ট বা জাতীয় পরিচয়পত্রে হলফনামা সম্পাদন করার পর কী নাম ব্যবহার করা হবে। নাম পরিবর্তনের ক্ষেত্রে অবশ্যই হলফনামা করার পর দৈনিক পত্রিকায় একটি বিজ্ঞপ্তি দিতে হবে।
আর মনে রাখতে হবে, অবশ্যই হলফকারীকে হলফনামার সঙ্গে পাসপোর্ট আকারের সত্যায়িত ছবি দিতে হবে। হলফনামায় স্বাক্ষর করতে হবে। ২০০ টাকার একটি নন জুডিশিয়াল স্ট্যাম্প নিয়ে সেখানেই মূলত হলফনামা সম্পাদন করতে হয়। হলফনামাটি হল আসলে আপনি যে সংশোধন করেছেন, সেটা পত্রিকা প্রকাশের মাধ্যমে ঘোষনা দেওয়া।
বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের স্বতন্ত্র কিছু নিয়মকানুন আছে। অনেক প্রতিষ্ঠানে হলফনামা দিয়ে নাম পরিবর্তন প্রযোজ্য হয় না। তবে আপনি সনদপত্র বা দলিলে নাম পরিবর্তন করতে চাইলে অবশ্যই সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান বা দপ্তরে আবেদন করতে হবে এবং আবেদনের সঙ্গে হলফনামার কপি সংযুক্ত করে দিতে হবে।
এখন আমাদের মূল আলোচনা বিষয় দলিল রেজিস্ট্রির পর তাতে দাগ, খতিয়ান বা নামের ছোট-খাটো কোন ভুল ধরা পড়লে এবং যে ভুল সংশোধন করলে দলিলের মূল কাঠামো বা স্বত্বের কোনো পরিবর্তন ঘটবে না সেরূপ ভুল সংশোধনের জন্য সংশ্লিষ্ট সাব-রেজিস্ট্রার বরাবরে আবেদন করা যাবে।
রেজিস্ট্রেশন বিধিমালার ৭৪ (১) অনুচ্ছেদ অনুসারে, ‘কোন রেজিস্ট্রিকৃত বা রেজিস্ট্রেশনের জন্য গৃহীত দলিলে ভুল-ত্রুটি থাকলে তা সংশোধন করার জন্য কোন দলিল রেজিস্ট্রেশনের জন্য, সেই ভুল প্রমানের জন্য মূল দলিল দাখিল করা হলে, তার মার্জিনে এইরূপ সংশোধনের বিষয়ে সাব-রেজিস্টার একটি টীকা লিখবেন যে, এই দলিলটি অমুক কার্যালয়ের এতো সনের এতো নং দলিল মূলে সংশোধন করা হইয়াছে।
আরো পড়ুন: অনলাইনে জাতীয় পরিচয় পত্র সংশোধন
জমির দলিল অনুসন্ধান
আমরা জানি, নানান ধরণের জমির দলিল হয়ে থাকে। বিক্রয় হওয়া দলিল থেকে শুরু করে ভূমি উন্নয়ন কর এর খতিয়ান এগুলো সবকিছুই দলিল হিসেবে পরিচিত।
প্রথমে সে বিষয়টি নিশ্চিত হয়ে নিতে হবে। আপনি কি ধরনের দলিল খুজছেন। তো আপনার প্রস্তাবিত জমির সর্বশেষ রেকর্ডে বিক্রয়কারীর নাম উল্লেখ রয়েছে কিনা এবং সিএস, আরএস এছাড়া আরো অন্যান্য খতিয়ানের ক্রয় মিলিয়ে দেখতে হবে। ব্যক্তির জন্য প্রস্তাবিত জমির বিক্রয় কারীর দখলে থাকার বিষয়ে নিশ্চিত হতে হবে। এক্ষেত্রে সরে জমিনে নকশার সাথে যমের বাস্তব অবস্থা মিলিয়ে দেখতে হবে।
প্রয়োজনে পার্শ্ববর্তী জমির মালিকদের কাছ থেকে দাগ নং এবং খতিয়ান নম্বর জেনে মিলিয়ে রাখতে হবে। জমির মালিক কো আমমোক্তার’ এটর্নি নিয়োগ করেছে কিনা সেটি জেনে নিন। জমি বিক্রেতা যদি আমমোক্তার নামার মাধ্যমে ক্ষমতা পায়। তবে তার বৈধতা যাচাই করতে হবে। প্রকৃত মালিকের সাথে যোগাযোগ করে দেখতে হবে প্রকৃত মালিক যথাযথ আছে কিনা এবং আমমোক্তার যথাযথ রয়েছে কিনা।
সর্বশেষ যে দলিল করা রয়েছে ক্রেতাকে প্রথমে দেখতে হবে। এর পাশাপাশি আগের দলিল গুলোর মিল রয়েছে কিনা। বিশেষত ভায়া দলিলের সাথে মিল আছে কিনা তা ভালোমতো যাচাই করতে হবে। তো বন্ধুরা আপনারা যারা জমির দলিল অনুসন্ধান করার নিয়ম জানতে চান? তারা চাইলে এই নিয়ম মোতাবেক অনলাইন থেকে জমির দলিল অনুসন্ধান করে নিতে পারবেন।
জমির খতিয়ান নিয়ম মূলত একটি জমির মূল দলিল হিসেবে কাজ করে। কারণ একটি খতিয়ানে জমির মালিকের বিস্তারিত বিবরণ। আশা করছি আপনারা এই অংশ থেকে জমির দলিল অনুসন্ধান সম্পর্কে একটি ক্লিয়ার ধারনা পেয়েছেন। এবার চলুন, অনলাইনে জমির দলিল চেক করা উপায় জেনে নেই।
অনলাইনে জমির দলিল চেক
আপনারা হয়তো ইতিমধ্যে জানেন যে, জমির দলিল বিভিন্ন প্রকারের হয়ে থাকে। বিক্রয়কৃত দলিল, ভূমি উন্নয়ন কর এর দলিল এবং আরও অন্যন্য দলিল।
প্রথমে সে বিষয়টি নিশ্চিত হয়ে নিতে হবে। আপনি কি ধরনের দলিল খুজছেন। তো আপনার প্রস্তাবিত জমির সর্বশেষ রেকর্ডে বিক্রয়কারীর নাম উল্লেখ রয়েছে কিনা এবং সিএস, আরএস এছাড়া আরো অন্যান্য খতিয়ানের ক্রয় মিলিয়ে দেখতে হবে।
ব্যক্তির জন্য প্রস্তাবিত জমির বিক্রয় কারীর দখলে থাকার বিষয়ে নিশ্চিত হতে হবে। এক্ষেত্রে সরে জমিনে নকশার সাথে যমের বাস্তব অবস্থা মিলিয়ে দেখতে হবে।
প্রয়োজনে পার্শ্ববর্তী জমির মালিকদের কাছ থেকে দাগ নং এবং খতিয়ান নম্বর জেনে মিলিয়ে রাখতে হবে। জমির মালিক কো আমমোক্তার’ এটর্নি নিয়োগ করেছে কিনা সেটি জেনে নিন। জমি বিক্রেতা যদি আমমোক্তার নামার মাধ্যমে ক্ষমতা পায়। তবে তার বৈধতা যাচাই করতে হবে। প্রকৃত মালিকের সাথে যোগাযোগ করে দেখতে হবে প্রকৃত মালিক যথাযথ আছে কিনা এবং আমমোক্তার যথাযথ রয়েছে কিনা।
যিনি জমি ক্রয় করবেন তাকে সর্বশেষ যে দলিল করা রয়েছে সেটি দেখতে হবে। তার সাথে আবার তাকে আগের দলিল মিল আছে কিনা সেটাও দেখতে হবে। বিশেষ করে ভায়া দলিলের সাথে যথাযথ মিল আছে কিনা সেটি যাচাই করতে হবে। জমির খতিয়ান নিয়ম মূলত একটি জমির মূল দলিল হিসেবে কাজ করে। কারণ একটি খতিয়ানে জমির মালিকের বিস্তারিত বিবরণ।
দলিল সংশোধন মামলার কোর্ট ফি
এখন জানার দরকার দলিল সংশোধন মামলার রেজিস্ট্রি খরচ কত হবে। রেজিস্ট্রেশন ফি বাবদ দিতে হবে মূলত মাত্র ১০০ টাকা, স্ট্যাম্প শুল্ক বাবদ আপনাকে দিতে হবে ৩০০ টাকা। সেই সাথে স্টাম্প হলফনামা বাবদ ২০০ টাকা খরচ করতে হবে। আর রয়েছে এন- ফি। বাংলায় প্রতি ৩০০ (তিন শত) শব্দ বিশিষ্ট এক পৃষ্ঠা বা তার অংশ বিশেষের জন্য ১৬ টাকা।
আর যদি ইংরেজি ভাষা নিতে চান তাহলে আপনাকে ২৪ টাকা খরচ করতে হবে। আবার স্ট্যাম্প শুল্ক মওকুফ যদি চাই তাহলে স্ট্যাম্প আইন, ১৮৯৯ এর ১৬ ধারা মোতাবেক আপনাকে তার জন্য ২০ টাকার কোর্টফি সহ আবেদন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা লাগবে। তাহলে দলিল সংশোধন হয়ে যাবে।
আরো পড়ুন: পাসপোর্ট করতে কি কি লাগে এবং কত টাকা লাগে
পুরাতন জমির দলিল ডাউনলোড বাংলাদেশ
পুরাতন জমির দলিল ডাউনলোড বাংলাদেশ থেকে ডাউনলোড করার জন্য আপনার নাম, মোবাইল নাম্বার, এলাকা, মৌজা, আপনার পিতার নামে বা আপনার দাদার নামে কতটুকু জমি রয়েছে এবং সে জমির দাগের নম্বর, খতিয়ান নম্বর কত সে সকল তথ্য জানতে পারবেন।
সে তথ্যগুলো থেকে আপনারা আরএস খতিয়ান। অন্যান্য খতিয়ান সংগ্রহ করে আপনাদের সেই দলিল পুনরুদ্ধার করা সহ যাবতীয় সকল কাজ সারতে পারবেন।এছাড়া, জমির দখল সংক্রান্ত সকল কাজ সম্পন্ন করার মাধ্যমে সে জমি ভোগ দখল করার সুযোগ পাবেন।
তাই আপনারা যদি শুধুমাত্র নাম দিয়ে পুরাতন জমির দলিল সংক্রান্ত বিভিন্ন যাবতীয় তথ্য জেনে নিতে চান, তাহলে আপনাকে প্রথমেই ভূমি মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে যেতে হবে। ভূমি মন্ত্রণালয়ের অফিসিয়াল ওয়েবসাইট আমরা লিংকিং করে দিয়েছি। আপনাকে কষ্ট করে গুগলে গিয়ে সন্ধান করা লাগবে না। এই লিংকে ক্লিক করলেই তাদের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে নিয়ে যাবে।
আপনারা জমির দলিল ডাউনলোড করতে চাইলে, উপরোক্ত ওয়েবসাইটে প্রবেশ করতে হবে। আর এটি হচ্ছে ভূমি মন্ত্রণালয়ের অফিশিয়াল ওয়েবসাইট। ভূমি সংক্রান্ত সকল সেবা এখানে গ্রহণ করতে পারবেন।
এই ওয়েবসাইটে প্রবেশ করার পর আপনারা যদি একটু নিচের দিকে যান। তাহলে ডিজিটাল ভূমি রেকর্ড নামে একটি অপশন দেখতে পারবেন। সেখান থেকে আপনাকে সরাসরি খতিয়ান অপশনে ক্লিক করতে হবে। সর্বপ্রথম খতিয়ান অপশনে ক্লিক করার মাধ্যমে আপনারা বিভিন্ন ধরনের খতিয়ান দেখতে পেলেও আপনার সামনে আরএস খতিয়ান প্রদর্শন করানো হবে। এতে পুরাতন জমির পরিমাণ কত তা জেনে নিতে পারবেন।
আর খতিয়ান তথ্য খুঁজে বের করতে হলে বিভাগের নাম জেলা, উপজেলা, খতিয়ানের ধরন, মৌজা নির্বাচন করতে হবে। তারপর আপনার যখন তথ্য প্রদান করা হয়ে যাবে। আপনি যখন সেই তথ্য অনুযায়ী আপনার এলাকার/ আপনার পিতার বা দাদার নামে জমি খুঁজে পেতে চান সেহেতু বলবো মালিকানার নাম সার্চ করলেই নাম দিয়ে এর তথ্য খুঁজে পাবেন।
তারপর সেখানে আপনার নির্দিষ্ট নাম দিয়ে জমির যখন সার্চ করবেন। তখন আপনার সামনে সেই ব্যক্তির এলাকায় কতটুকু জমি রয়েছে তার পরিমাণ দেখানো হবে।এবং জমির খতিয়ান নং কত, জমির পরিমাণ কত তার সবকিছুই আপনারা সেখানে পেয়ে যাবেন।
আরো পড়ুন: ড্রাইভিং লাইসেন্স অনলাইন আবেদন
দলিল সংশোধন সম্পর্কে লেখকের মতামত
আজকে এই ছিল মূলত দলিল সংশোধন করার নিয়ম - জমির দলিল অনুসন্ধান সম্পর্কে আমাদের সংক্ষিপ্ত একটি আলোচনা। আজকের পুরো আলোচনা আপনি যদি একটু মনোযোগ দিয়ে পড়ে থাকেন। তাহলে আশা করছি আপনি আপনার দলিল সংশোধন করার নিয়ম জেনে অনায়াসে দলিল সংশোধন করে নিতে পারবেন। এতক্ষণ ধরে আপনার মূল্যবান সময় নিয়ে আমাদের সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ।