নিম পাতা খাওয়ার উপকারিতা - নিম পাতার ব্যবহার

আপনি কি নিম পাতা খাওয়ার উপকারিতা ও নিম পাতার ব্যবহার সম্পর্কে জানতে চান? নিম পাতা খাওয়ার উপকারিতা এবং নিম পাতার ব্যবহার সম্পর্কে যদি আপনার সঠিক ধারনা না থাকে তাহলে আমাদের আজকের আর্টিকেলটি আপনার অনেক উপকারে আসবে। আপনি যদি নিম পাতা খাওয়ার উপকারিতা ও নিম পাতার ব্যবহার সম্পর্কে জানতে চান তাহলে আজকের আর্টিকেলটি আপনাকে পড়তে হবে।

নিম পাতা খাওয়ার উপকারিতা

আমরা নিম পাতা লোকমুখে শুনে অনেকেই খেয়ে থাকি, কিন্তু এটি খাওয়ার উপকারিতা ও ব্যবহারের নিয়ম সম্পর্কে সঠিকভাবে জানি না। তবে স্বাস্থ সুরক্ষায় যদি আপনি নিম পাতা খেতে চান, তাহলে অবশ্যই আপনাকে জানতে হবে নিম পাতা খাওয়ার উপকারিতা ও নিম পাতার ব্যবহার সম্পর্কে।

নিম পাতা খাওয়ার উপকারিতা

নিম পাতা খুবই উপকারি একটি উদ্ভিদ। নিম পাতার মধ্যে বিভিন্ন ঔষধিগুন রয়েছে। তাই আয়ুবের্দিক চিকিৎসাশাস্ত্রে নিম পাতার ব্যাপক ব্যবহার রয়েছে। প্রাচীনকাল থেকেই নিম পাতা শারীরিক সুস্থতার জন্য ব্যবহার হয়ে আসছে। স্বাস্থের জন্য খুবই উপকারি নিম পাতা। শুধু নিম গাছের পাতা স্বাস্থের জন্য উপকারি নয় এ গাছের ফুল, ডাল পাতা সবকিছুই উপকারি। শরীরের নানা রোগ প্রতিরোধ করতে নিম পাতার অনেক গুন রয়েছে। নিম পাতা থেকে প্রোটিন, ফাইবার, ক্যালোরি, আয়রন, ক্যালসিয়াম, সোডিয়াম, পটাশিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম, ফসফরাস এ পুষ্টি উপাদান গুলো পাওয়া যায়। তাই এমন অনেক জটিল রোগ আছে যেগুলোকে  দূরে রাখতেও নিমপাতা সাহায্য করে থাকে। চলুন জেনে নেওয়া যাক নিম পাতার মধ্যে কি কি উপকারিতা রয়েছে।

ডায়বেটিস নিয়ন্ত্রনে থাকে: ডায়বেটিস রোগিদের যদি নিম গাছের পাতা খুবই উপকারি। নিয়মিত যদি ডায়াবেটিস রোগিরা নিম পাতা সেবন করে, তাহলে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রনে থাকবে। 

রক্তে শর্করার মাত্রা কমে: নিয়মিত নিম গাছের পাতার রস সেবন করলে রক্তে শর্করার মাত্রা কমে এবং রক্তকে পরিষ্কার রাখে।

হজমের সমস্যার সমাধান হয়: প্রতিদিন সকালে খালিপেটে ২ থেকে ৩ টি নিমপাতা চিবিয়ে খেলে হজমের সমস্যার সমাধান হয়।

শরীরের ক্ষতিকর উপাদানগুলো বের হয়: আমাদের শরীরে অনেক সময় টক্সিন নামক ক্ষতিকর পদার্থগুলো বাসা বাধে। আর প্রতিদিন যদি নিম পাতা চিবিয়ে খাওয়া যায় তাহলে এসব ক্ষতিকর উপাদানগুলো শরীর থেকে বের হয়ে আসে।

বুকে জমা কফ দূর করে: ঠান্ডার সমস্যায় অনেক সময় আমাদের বুকে কফ জমে থাকে, বুকে ব্যাথা হয়। এ সমস্যা যদি আপনার হয়ে থাকে তাহলে এক চা চামচ মতো নিম পাতার রস এক কাপ কুসুম গরম পানির সাথে মিশিয়ে খাবেন ব্যাথা থেকে অনেকটাই উপশম পাবেন।

ওজন কমায়: যারা অতিরিক্ত ওজনের সমস্যায় ভুগছেন, তাদের জন্য নিম পাতা খুবই উপকারি। নিয়মিত নিম পাতার রসের সাথে লেবু মিশিয়ে খেলে ওজন অনেকটাই কমে আসে। 

উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রনে রাখে: মানবদেহে উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা প্রায় এখন হতে দেখা যাচ্ছে। এ রোগ প্রতিরোধ করতে এবং নিয়ন্ত্রনের রাখতে নিম পাতা সহায়ক ভূমিকা রাখে।

লিভার ভালো থাকে: শরীরের গুরুত্বপূর্ন একটি অংশ হলো লিভার। সে গুরুত্বপূর্ন অংশটি যদি আপনি ভালো রাখতে চান, তাহলে নিম পাতা খাওয়ার অভ্যাস আপনাকে করতে হবে।

আলসার প্রতিরোধে: আলসার পাকস্থলীর একটি সমস্যার নাম, আলসার হলে পাকস্থলীতে ক্ষতর সৃষ্টি হয়ে থাকে। নিয়মিত যদি নিম পাতার রস খাওয়া যায় তাহলে আলসার প্রতিরোধ করে এবং আলসারের ঘা শুকাতে সাহায্য করে।

ক্যান্সার প্রতিরোধ করে: ক্যান্সারের মতো মরণব্যাধি রোগের প্রতিরোধ হয় নিয়মিত নিম পাতা খেলে। 

জন্ডিস রোগের সমাধান হয়: শরীরে জন্ডিস রোগ বাসা বাধলে  নিম পাতার রস মধুর সাথে মিক্স করে সেবন করুন। জন্ডিস রোগ থেকে মুক্তি দিতে বিশেষভাবে ভূমিকা রাখে নিম পাতা।

উপরের বলা স্বাস্থ উপকারিতাগুলো যদি পেতে চান, তাহলে নিম পাতাকে বেছে নিন।

আরো পড়ুন: কালোজিরা খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা

নিম পাতা খাওয়ার নিয়ম

নিম পাতা খেতে তেতো হলেও এর মধ্যে অনেক গুন রয়েছে। স্বাস্থ সুরক্ষায় নিম পাতার ব্যপক গুনাগুন রয়েছে। আমাদের শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানো খুবই প্রয়োজন, আর সে কাজটি নিম পাতা করে থাকে। দেহের অভ্যান্তরিন ও বাহ্যিক সমস্যা সমাধানে নিম পাতা খুবই উপকারি। নিম পাতা যারা খেতে চান অনেকের মনে প্রশ্ন আসে, নিন পাতা খাওয়ার নিয়ম কি? নিম পাতা আপনি বিভিন্ন ভাবে খেতে পারেন। চলুন জেনে নিন নিম পাতা খাওয়ার নিয়মগুলো কি।

  • ২ থেকে ৩ গ্লাস পানির সাথে কয়েকটি নিমপাতা এবং তার সাথে আদা ও গোলমরিচ দিয়ে পানি ভালো করে ফুটিয়ে অর্ধেক করে নিন। এরপর এ পানির সাথে মধু ও লেবুর রস মিশিয়ে পান করুন। এ নিয়মে যদি আপনি নিম পাতা খান অতিরিক্ত ওজন অনেকটাই কমে আসবে।
  • কয়েকটি কচি নিম পাতা রস করে সকালে খালি পেটে খেলে ভালো ফল পাওয়া যায়। 
  • নিম পাতা তেতো হওয়ায় আপনি যদি শুধু নিম পাতা খেতে না পারেন, তাহলে নিম পাতা ব্লেন্ড করে মধু অথবা চিনির সাথে মিক্স করে খেতে পারেন। এ নিয়মে নিম পাতা খেলে জন্ডিস প্রতিরোধ হয়।
  • সকালে খালি পেটে ২ থেকে ৩ টি শুধু নিম পাতা নিয়ে চিবিয়ে খাবেন, স্বাস্থের নানা উপকার পাওয়া যাবে। তবে প্রতিদিন খেতে হবে।  
  • কড়াইয়ে নিম পাতা নিয়ে, তাপ দিয়ে সে পাতাগুলোকে শুকিয়ে, রসুন ও সরিষার তেল দিয়ে ভর্তা বানিয়ে ভাত দিয়ে খেতে পারেন।

উপরের বলা নিয়মগুলো ফলো করে নিম পাতা খাবেন। এভাবে নিম পাতা খেলে শরীর স্বাস্থ ভালো থাকবে।

আরো পড়ুন: কাঠবাদাম খাওয়ার নিয়ম - কাঠবাদাম এর উপকারিতা

ব্রনের জন্য নিম পাতার ব্যবহার

নারী পুরুষের বর্তমানে ত্বকের  একটি জটিল সমস্যা হয়ে দাড়িয়েছে ত্বকে ব্রন। বিভিন্ন কারণে এ সমস্যা হয়ে থাকে। সুন্দর ত্বকের সৌন্দর্য নিমিষেই শেষ করে ত্বকে বের হওয়া ছোট ছোট আকারের ব্রন। পরবর্তীতে সে ব্রন ত্বকে দাগের সৃষ্টি করে।  সে ব্রন থেকে সমাধান পেতে নিম পাতা খুবই কার্যকারী একটি উপাদান। নিম পাতা দিয়ে বিভিন্ন প্যাক বানিয়ে ত্বকে ব্যবহার করলে ব্রন থেকে সমাধান পাওয়া যায়। নিম পাতার মধ্যে থাকা অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল উপাদান ত্বকের সমস্যা থেকে সমাধান এনে দেয়। আপনি যদি ব্রনের সমস্যা নিয়ে চিন্তিত থাকেন, তাহলে নিমপাতা সমস্যা সমাধানে ব্যবহার করে দেখতে পারেন। ব্রনের জন্য নিম পাতার সঠিক ব্যবহার সম্পর্কে জেনে নিন।

  • কয়েকটি নিমপাতা নিয়ে সেগুলোকে ভালোভাবে ধুয়ে নিবেন। এরপর সেগুলো পেস্ট করে নিয়ে, তার সাথে অল্প পরিমাণে লেবুর রস ও গোলাপ জল মিশিয়ে মিশ্রন তৈরি করে নিন। এবার মিশ্রনটি আপনার ব্রনযুক্ত স্থানে ব্যবহার করুন, শুকিয়ে গেলে ধুয়ে ফেলুন। নিয়মিত নিম পাতা এ নিয়মে ব্যবহার করলে ব্রন অনেকটাই কমে যাবে। 
  • নিম পাতা ও কাঁচা হলুদ একসাথে ব্লেন্ড করে পেস্ট বানিয়ে নিন। এরপর পেস্ট করা নিম পাতা ও হলুদ আপনার ব্রনযুক্ত ত্বকে লাগিয়ে নিন। এরপর শুকিয়ে গেলে পরিষ্কার করে নিন।
  • ব্রনের সমস্যা থেকে সমাধান পেতে নিম পাতা ব্লেন্ড করে তার সাথে অ্যালোভেরার জেল মিশিয়ে ব্যবহার করুন, ব্রন থেকে অনেকটাই স্বস্তি পাবেন। 
  • নিম পাতা ও তুলসি পাতা একসাথে নিয়ে ব্লেন্ড করে মুখের ত্বকে লাগিয়ে নিন। শুকিয়ে গেলে মুখ পরিষ্কার করে নিন, ব্রন অনেকটাই কমে যাবে। নিম পাতা ও তুলসি পাতার মধ্যে থাকা অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল উপাদান ব্রন কমাতে ভূমিকা রাখে। 
  • নিম পাতা ব্লেন্ড করে তার সাথে মধু মিশিয়ে ব্রনযুক্ত স্থানে ব্যবহার করুন। শুকিয়ে গেলে ধুয়ে নিন, ব্রনের জন্য উপকার পাবেন। 
  • ব্রনযুক্ত স্থানে নিম পাতা ব্লেন্ড করে তার সাথে শসার রস মিশিয়ে ব্যবহার করুন। এটি ব্রন কমায় এবং ত্বককে উজ্জল ও মসৃন করে তোলে। 
  • নিম পাতা ব্লেন্ড করে তার সাথে মুলতানি মাটি ও গোলাপজল মিশিয়ে ব্রনযুক্ত স্থানে লাগিয়ে নিন। শুকিয়ে গেলে ধুয়ে নিবেন, ব্রন অনেকটাই কমে যাবে।

ব্রনের সমস্যা সমাধানের উপরের নিয়মগুলো ফলো করে নিম পাতা ব্যবহার করবেন। নিম পাতাতে থাকা অ্যান্টিএজিং বৈশিষ্ট্য ত্বকের সংক্রামন রোধ করে, দাগ হালকা করে, ব্রন কমায় এবং  ব্রন প্রতিরোধ করতে ভূমিকা রাখে।

চর্মোরোগে নিম পাতার ব্যবহার

ত্বকের এক ধরনের মারাত্মক রোগ হলো চর্মরোগ। তবে এ সমস্যার উপসর্গ দেখার সাথে সাথে যদি চিকিৎসা নেওয়া যায়, তাহলে রোগটি তাড়াতাড়ি সেরে যায়। ঘরোয় পদ্ধতিতে আপনি চর্মোরোগের চিকিৎসায় নিম পাতা ব্যবহার করতে পারেন। নিম পাতার মধ্যে বিভিন্ন ওষুধি গুন রয়েছে। নিম পাতার মধ্যে থাকা অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল ও অ্যান্টিফাঙ্গাল বৈশিষ্ট্য থাকায়, নিম পাতা ত্বকের বিভিন্ন সমস্যায় খুবই উপকারী। চর্মোরোগের জন্য নিম পাতা ব্যবহার করলে অনেক উপকার পাওয়া যায়।

চর্মরোগ দূর করতে প্রতিদিন গোসলের পানিতে নিম পাতা দিয়ে গোসল করবেন। এভাবে প্রতিদিন গোসল করলে চর্মরোগ থেকে অনেকটাই স্বস্তি পাওয়া যাবে এবং শরীর ঠান্ডা থাকবে।

চর্মরোগ দূর করতে নিম গাছের শুকনো ছাল, নিম বীজ ও নিম পাতা একসাথে এ উপাদানগুলো নিয়ে ভালোভাবে পেস্ট তৈরি করে, যেখানে দাদ বা চর্মরোগের ক্ষত রয়েছে সেখানে লাগিয়ে নিন। এভাবে নিয়মিত লাগান অনেকটাই উপকারে আসবে। এছারাও  চর্মরোগের জন্য নিম গাছের শুকনো ছাল তুলে পাউডার বানিয়ে নিবেন। তারপর ৩ গ্রাম মতো পাউডার জলের সাথে রাতে ভিজিয়ে রাখবেন  এবং সকালে সে পানির সাথে মধু মিশিয়ে খাবেন।  এভাবে পানি যদি পান করেন চর্মোরোগ থেকে অনেকটাই উপশম পাবেন।

চর্মোরোগকে আমাদের সমাজে অনেকেই সাধারন একটি সমস্যা মনে করে থাকেন। তবে চর্মরোগ সাধারন কোনো সমস্যা নয়, চিকিৎসকের মতে-চর্মরোগ একটি রোগ হলেও অনেক সময় শরীরে বাসা বেধে থাকা এমন কোনো জটিল রোগের লক্ষন হিসেবে চর্মরোগ দেখা দিতে পারে। তাই চর্মোরোগের উপসর্গ দেখা দিলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

আরো পড়ুন: মধু খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা - মধু খাওয়ার নিয়ম

এলার্জিতে নিম পাতার ব্যবহার

ত্বক মানুষের সৌন্দর্যের প্রধান অংশ। সে ত্বকে যদি সমস্যা দেখা যায় তাহলে মানুষ খুবই অস্বস্তি বোধ করে। বর্তমানের ত্বকের  সমস্যাগুলোর মধ্যে সচারচর যে সমস্যাগুলো দেখা যায় তার মধ্যে ত্বকে এলার্জি অন্যতম। ত্বকে এলার্জিতে আক্রান্ত এমন মানুষের সংখ্যা অনেক রয়েছে। বিভিন্ন কারনে এলার্জি হতে দেখা যায়। বায়ু দূষণ, চামড়ার ওপর ট্যাটু, আবহাওয়া পরিবর্তন, ময়ল ও ধুলাবালি এবং অপরিষ্কার ত্বকের জন্য এলার্জি হতে পারে। এলার্জির সমস্যাই ত্বক মারাত্মক ভাবে চুলকায়, এছারাও ত্বকে লাল দাগ হয়ে যায়, ফুসকুড়ি হয় এবং অনেক জ্বালাপোড়া করে। এলার্জি সম্পর্কে তো আমরা জানলাম। তবে এলার্জির সমস্যাগুলোতে নিম পাতার ব্যবহার খুবই উপকারি, সেটা আপনারা জানেন কি? না জেনে থাকলে জেনে নিন এলার্জিতে নিম পাতার ব্যবহার সম্পর্কে।

এলার্জি প্রতিকারের জন্য বেশ কয়েকটি ভেষজ উদ্ভিদ ব্যবহৃত হয়, তার মধ্যে একটি হলো নিম পাতা। এলার্জি নিষ্কাশনের জন্য নিম পাতা খুবই উপকারি। এলার্জিজনিত সমস্যা দূর করতে নিমের পাতা রাতে পানি দিয়ে ভিজিয়ে রাখুন। এরপর পরদিন সকালে ভিজিয়ে রাখা পাতাগুলো ব্লেন্ড করে এলার্জিজনিত জায়গায় লাগিয়ে নিন। এভাবে কয়েকদিন করে দেখুন আরাম পাবেন। আপনার এলার্জিজনিত সমস্যার কারনে যদি নাক দিয়ে পানি পড়ে অথবা হাঁচি হয়। তাহলে নিম পাতা ভালো করে রোদে শুকিয়ে গুড়ো করে নিবেন। এরপর অল্প পরিমানে (এক চা চামচের তিন ভাগের এক ভাগ)  নিম পাতা গুড়ো এবং এক চা চামচ ইসব গুলের ভুষি এক গ্লাস পানিতে আধা ঘন্টা মতো ভিজিয়ে রেখে সকালে খালি পেটে পান করুন। নিয়মিত করলে এলার্জি থেকে অনেকটাই স্বস্তি পাবেন।

ঘরোয়া উপায়ের মাধ্যমে যদি এলার্জি কমাতে না পারেন, তাহলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিবেন। চিকিৎসকেরা এলার্জি হওয়ার সঠিক কারণ খুঁজে বের করে সমাধান দিতে পারেবন। আর এলার্জির সমস্যা হলে ত্বক চুলকানো থেকে বিরত থাকবেন এবং আপনার যে বিষয় বা খাবারে এলার্জি হচ্ছে সে বিষয়গুলো খুঁজে বের করে এড়িয়ে চলুন।

চুলকানিতে নিম পাতার ব্যবহার

মানবদেহে ব্যাকটেরিয়ার সংক্রামনের কারনে চুলকানির সমস্যা হতে দেখা যায়। চুলকানি প্রতিরোধে বেশ কিছু ভেষজ উদ্ভিদ ব্যবহার করা হয়, যার মধ্যে কার্যকারী একটি ভেষজ উদ্ভিদ হলো নিম। প্রাচীনকাল থেকে চুলকানির ওষধ হিসেবে নিম গাছের পাতা ব্যবহৃত হয়ে আসছে। নিমপাতার মধ্যে থাকা অ্যান্টি ব্যকটেরিয়াল উপাদান ত্বকের চুলকানির সমস্যাই খুব ভালো কাজ করে। নিম পাতা চুলকানির সমস্যায় ব্যবহারের নিয়ম সম্পর্কে অনেকের জানা নেই। চলুন জেনে নিন চুলকানিতে নিম পাতার ব্যবহারের নিয়ম সম্পর্কে।

কয়েকটি নিম পাতা পরীষ্কার করে ধুয়ে ব্লেন্ড করে নিন। এরপর ব্লেন্ড করা নিম পাতা চুলকানির স্থানে লাগিয়ে রাখুন। কয়েকদিন করলে চুলকানির সমস্যা থেকে উপশম পাবেন। শরীরের চুলকানির সমস্যা দূর করতে এক মুঠো নিম পাতা গোসলের পানিতে দিয়ে, পানিটুকু ফুটিয়ে নিবেন। এরপর পানি ঠান্ডা হয়ে গেলে গোসলের জন্য সে পানি ব্যবহার করবেন। কয়েকদিন নিম পাতা এ নিয়মে ব্যবহার করলে চুলকানি থেকে অনেকটাই স্বস্তি পাবেন।

চুলকানি দুর করতে নিম পাতা ও নিমের ফুল বেটে চুলকানির স্থানেও লাগাতে পারেন। চুলকানির সমস্যা যদি আপনার চোখে হয়ে থাকে। তাহলে এক মুঠো নিম পাতা নিয়ে ১০ থেকে ১৫ মিনিট মতো পানির সাথে সিদ্ধ করে নিবেন। এরপর পানি ঠান্ডা হয়ে গেলে সে পানি ঝাপটার মতো করে চোখে দিবেন। এতে আপনার চোখের চুলকানি অনেকটাই কমে যাবে।

 আপনার চুলের ত্বকে যদি চুলকানির সমস্যা দেখা দেয় তাহলে নিম পাতার রস এবং তার সাথে ১ ফোটা মতো ট্রি ট্রি অয়েল যোগ করে চুলের ত্বকে ভালোভাবে ম্যাাসাজ করুন, অনেকটাই আরাম পাবেন। অনেক সময় চুলে খুশকির সমস্যা হলে চুলের ত্বকে চুলকানি হয়। সেজন্য খুশকির সমস্যার সমাধানে নারিকেল তেলের সাথে কয়েকটি নিম পাতা দিয়ে, তেলটুকু ভালোভাবে ফুটিয়ে নিবেন। তেল ঠান্ডা হলে তার সাথে কাস্টর অয়েল সামান্য পরিমাণে দিয়ে  চুল ও চুলের ত্বকে ব্যবহার করুন। সপ্তাহে দুইদিন এটি করুন, খুশকি দূর হবে তার সাথে চুলকানিও কমবে।

আরো পড়ুন: মুখের ব্রন দূর করার উপায় - ব্রন দূর করার ক্রিম

নিম পাতার ক্ষতিকর দিক

নিম গাছ বহুগুন সমৃদ্ধ একটি ঔষুধি গাছ। নিম গাছের সবকিছুই কোনো না কোনো রোগের ওষুধ হিসেবে ব্যবহার করা হয়। নিম পাতার মধ্যে হাজারো উপকারিতা রয়েছে সেটা আমরা ইতিমধ্যে জেনে গিয়েছি। তবে নিম পাতা সবার জন্য উপকারি নয়, অনেকের জন্য নিম পাতা ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। আবার অতিািরক্ত নিমপাতা খাওয়া শরীরের জন্য ক্ষতিকর। তাই নিম পাতা ব্যবহারে অবশ্যই আমাদের নিম পাতার ক্ষতিকর দিক গুলোর সম্পর্কে জেনে তারপর ব্যবহার করা উচিত। তো চলুন জেনে নেওয়া যাক নিম পাতার ক্ষতিকর দিকগুলোর সম্পর্কে।

  • অনেকের নিম পাতায় এলার্জি হতে পারে, তাই নিম পাতা ব্যবহার করে দেখবেন এলার্জিজনিত সমস্যা যদি বুঝতে পারেন। তাহলে নিম পাতা ব্যবহার থেকে দূরে থাকায় ভালো।
  • গর্ভবতী নারীদের জন্য নিম পাতা ব্যবহার অনেক সময় ক্ষতির কারন হয়ে দাঁড়ায়। এমনকি যে দম্পত্তিরা বাচ্চা নেওয়ার পরিকল্পনা করছেন তারাও নিম পাতা সেবন থেকে বিরত থাকবেন।
  • খালিপেটে বেশিদিন ধরে নিমপাতা খেলে তা শরীরের জন্য ক্ষতিকর হতে দেখা যায়।
  • অনেকের নিম পাতা সেবনের ফলে বমি বমি ভাব, ডায়রিয় ও মাথাব্যাথার সমস্যা হতে দেখা যায়। যাদের এ সমস্যাগুলো হয় , তারা নিম পাতা খাওয়া থেকে দূরে থাকুন।
  • কোনো অপারেশন যদি আপনি করতে চান তাহলে অপারেশনের দুই সপ্তাহ আগে থেকে নিম পাতা এড়িয়ে চলুন।
  • যদি আপনার নিম্নরক্ত চাপের সমস্যা হয়ে থাকে, তাহলে নিম পাতা খাওয়া থেকে বিরত থাকুন। 
  • অতিরিক্ত কোনো কিছু খাওয়া স্বাস্থের জন্য ভালো না, সেটা যতই উপকারি হোক না কেন। তেমনি বেশি পরিমাণে নিম পাতা খাওয়াও ঠিন নয়। বেশি পরিমানে নিম পাতা খেলে গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা হতে দেখা যায়।

নিম পাতার মধ্যে অসংখ্যা উপকারি গুন রয়েছে। তাই আমরা সুস্থ থাকতে এবং নিম পাতার সঠিক উপকার পেতে সঠিক নিয়মে ব্যবহার করবো। আর আপনার শরীরে যদি স্থায়ী কোনো রোগ থেকে থাকে তাহলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে নিম পাতা সেবন করবেন।

আরো পড়ুন: চোখের নিচের কালো দাগ দূর করার উপায়

লেখকের শেষ বক্তব্য

নিম পাতা খাওয়ার উপকারিতা - নিম পাতার ব্যবহার সম্পর্কে আজকের এই ব্লগে সকল তথ্য তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। আশা করি নিম পাতা খাওয়ার উপকারিতা - নিম পাতার ব্যবহার সম্পর্কে আপনি বিস্তারিত জানতে পেরেছেন।

এতক্ষণ আমাদের সঙ্গে থাকার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। যদি আপনি এই ধরনের প্রয়োজনীয় বিভিন্ন ব্লগ পোস্ট নিয়মিত পড়তে চান তাহলে আপনাকে প্রতিনিয়ত আমাদের এই ওয়েবসাইট ফলো করতে হবে।

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন
comment url