পান খাওয়ার রীতি বহুদিন থেকেই চলে আসছে। সাধারণত পান খেতে আমরা বয়স্কদের দেখতে পায়। তবে এখন প্রায় অনেকেই সখ করে পান খেয়ে থাকেন। কেন খায় পান, পান খেলে কি হয়, জানেন কি? জানা না থাকলে আমাদের আজকের আর্টিকেলটি পড়ে জেনে নিন।
আমাদের আজকের আর্টিকেলে পান খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে। আমাদের এ আর্টিকেলটি পড়ার মাধ্যমে জেনে যাবেন পান খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারতিা সম্পর্কে। এছারাও পুরো আর্টিকেলটি পড়ার মাধ্যমে পান খাওয়ার বিষয়ে গুরুত্বপূর্ন তথ্যগুলো জানতে পারবেন।
পান খাওয়ার নিয়ম
পান পাতার মধ্যে রয়েছে প্রচুর ওষুধিগুন। পান পাতা আমরা অনেকেই মজাদার খাবার হিসেবে খাই। তবে এ পাতা থেকে বিভিন্ন স্বাস্থ উপকারও পাওয়া যায়। পান পাতার স্বাস্থউপকারিতা পেতে বিভিন্নভাবে এটি খাওয়া যায়। জানেন কি? পান পাতা কোন কোন নিয়মে খাওয়া যায়। নিচের আলোচনা থেকে জেনে নিন পান পাতা খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে।
- পান পাতাকে ব্লেন্ড করে সারারাত পানিতে ভিজিয়ে রেখে, সকালে পানিটুকু ছেকে পান করুন। এ নিয়মে পান খেলে পেটের বিভিন্ন সমস্যা, কোষ্ঠকাঠিন্য, দাঁত হলুদ হওয়া, দাঁত ক্ষয় এসব সমস্যা দূর করা যায়।
- পান পাতার স্বাস্থ উপকারিতা পেতে পান পাতার রসের সাথে মধু মিশিয়ে খেতে পারেন। এ নিয়মে পান পাতা খেলে দেহের ক্লান্তি দূর হয়, হজমে সহায়তা করে, দেহের অতিরিক্ত মেদ কমাসহ বিভিন্ন স্বাস্থ উপকারীতা পাওয়া যায়।
- এক গ্লাস গরম পানির সাথে ৫ মিলিলিটার পান পাতার রস মিশিয়ে খাবেন। ঠান্ডা লাগা, গলাব্যাথা, গলার খুশখুশি কমাতে পান পাতা এ নিয়মে খাওয়া খুবই কার্যকারী।
- শুধু পান পাতাকে ভালোভাবে ধুয়ে তারপর চিবিয়ে খাবেন। এভাবে পান পাতা চিবিয়ে খেলে মুখের দুর্গন্ধ দূর হয়। এছারাও আরও বিভিন্ন স্বাস্থ উপকারীতা এ পদ্ধতিতে পান খাওয়ার ফলে পাওয়া যায়।
- বদহজমের সমস্যা দূর করতে পান পাতা ছোট ছোট করে কেটে এবং গোলমরিচ একসাথে পানিতে দিয়ে কিছুক্ষণ সেদ্ধ করে নিবেন। এরপর সেদ্ধ করা পানি ছেঁকে ঠান্ডা করে খাবেন, বদহজমের সমস্যা দূর হয়ে যাবে।
জর্দা পান খেলে কি হয়
দৈনন্দিন জীবনের সাথে, আমাদের গ্রাম বাংলার মানুষের পান খাওয়ার অভ্যাস রয়েছে। পান পাতা আমাদের স্বাস্থের জন্য ক্ষতিকর নয়, বরং এ পাতার মধ্যে রয়েছে অনেক ভেষজ গুন। তবে এ পাতার সাথে বিভিন্ন উপকরণ মিশিয়ে আমরা খেয়ে থাকি। যার মধ্যে একটি হলো জর্দা। জর্দা দিয়ে অনেকেই পান খেতে পচ্ছন্দ করেন। এখন প্রশ্ন হলো জর্দা পান খেলে কি হয়।
জর্দা হলো তামাকজাত দ্রব্য। পানের স্বাদ বাড়ানোর জন্য এটি অনেকেই খেয়ে থাকে। অনেকেই নিঃসন্দেহে জর্দা পান খেয়ে থাকে। তবে পানের সাথে জর্দা খাওয়া স্বাস্থের জন্য ব্যপক ক্ষতিকর। বিভিন্ন শারিরিক সমস্যার কারন হতে পারে জর্দা। জর্দা পানের সাথে নিয়মিত খেলে ক্যান্সারের মতো মরণব্যধি রোগের ঝুঁকি বাড়ে। এছারাও দেখা দিতে পারে আলসার, মুখের ভেতরে সাদা দাগ যা পরবর্তীতে ক্যান্সারের কারন হয়ে দাঁড়ায়।
সিগারেট মানবস্বাস্থের জন্য ক্ষতিকর, সেটা আমরা সবাই জানি। সিগারেটে নিকোটিন নামে যে ক্ষতিকর পদার্থ থাকে সে পদার্থ জর্দার মধ্যেও রয়েছে। বরং সিগারেটের চেয়ে জর্দায় এ পদার্থের পরিমাণ বেশি রয়েছে। গবেষনায় দেখা গেছে সিগারেটের চেয়ে জর্দায় নিকোটিন পদার্থের পরিমাণ প্রায় তিন চার গুন বেশি রয়েছে। বিশেষজ্ঞদের মতে ধূমপান মানেই বিষপান, আর ধোঁয়াযুক্ত তামাকের থেকেও জর্দায় নিকোটিন পদার্থের মাত্রা বেশি । সুতরাং বুঝতেই পারছেন জর্দার ক্ষতিকর দিক ঠিক কতটা।
তবে শুধু জর্দাই নয়, এছারাও পানের সাথে ব্যবহৃত মসলা যেমন চুন, সুপারি, খয়ের এসব পানের সাথে খাওয়া স্বাস্থের জন্য ঝুঁকিপূর্ন। স্বাস্থের উপকারিতা পেতে শুধু পান পাতাই পরিমিত খেতে পারেন।
পান খাওয়ার ক্ষতিকর দিক
পান আমাদের অতিপরিচিত একটি শব্দ। বাঙালির সাথে এ পাতার এক পুরোনো সম্পর্ক রয়েছে। পান পাতা খাওয়ার আড্ডা আমাদের বাঙালিদের দৈনন্দিন জীবনের একটি অংশ ছিল। এখনও অনেকেই পানের প্রতি আসক্ত। তবে আপনার যদি পান খাওয়ার অতিরিক্ত নেশা থাকে, তাহলে আপনাকে অবশ্যই জেনে নিতে হবে পান খাওয়া স্বাস্থের জন্য ক্ষতিকর কি না। শুধু পান নয়, যেকোনো খাবার খাওয়ার আগে আমাদের ভেবে খাওয়া উচিত।
পান পাতা আমাদের স্বাস্থের জন্য উপকারী, এ পাতার মধ্যে বিভিন্ন উপকারী গুন রয়েছে। তবে অতিরিক্ত সেবনের ফলে এবং সঠিক নিয়মে না খাওয়ার কারনে পান স্বাস্থের ক্ষতি করে। তাই পান অতিরিক্ত সেবনের আগে আমাদের জেনে নিতে হবে, পান খেলে কি কি ক্ষতি হয়। তো চলুন জেনে নেওয়া যাক পান খাওয়ার ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে।
- অতিরিক্ত পান খাওয়ার ফলে শরীরে অ্যালার্জিজনিত বিভিন্ন সমস্যা দেখা দিতে পারে। যেমন চুলকানি, ত্বকে লালচে ভাব ও ফুসকুড়ি হতে পারে।
- পান পাতা অতিরিক্ত সেবনের ফলে দাঁত ও মাড়ির বিভিন্ন সমস্যা দেখা দিতে পারে।
- গর্ভবতী মায়েদের জন্য পান খাওয়া একেবারেই ঠিক নয়। কারন পান পাতা খাওয়ার ফলে ভ্রুনের বিকাশের ক্ষতি হয় এবং স্বাস্থের অবনতি ঘটে।
- অনেকের চুন, সুপারি, জর্দা, খয়ের এসব বিভিন্ন মসলা দিয়ে পান খাওয়ার অভ্যাস রয়েছে। তবে এসব বিভিন্ন মসলা দিয়ে পান খাওয়া স্বাস্থের জন্য ঝুঁকিপূর্ন। এগুলো দিয়ে পান খেলে ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
- পান চুনের সাথে খেলে কিডনিতে পাথর হওয়ার ঝুঁকি বাড়ে।
অতিরিক্ত পান পাতা খাওয়ার ফলে ক্যান্সারসহ উপরের সমস্যাগুলো দেখা দিয়ে থাকে। তবে সঠিক নিয়মে এবং পরিমিত পান পাতা আপনি স্বাস্থ উপকারীতা পেতে খেতে পারবেন। আর যাদের নিয়মিত পান খাওয়ার অভ্যাস রয়েছে এবং পান খাওয়া কমাতে পারছেন না, সেক্ষেত্রে আপনি চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে পান খাবেন।
পান খেলে কি গ্যাস
পান পাতার মধ্যে অনেক উপকারী গুন রয়েছে। যা আমাদের বিভিন্ন রোগ থেকে মুক্তি দিতে সাহায্য করে থাকে। বিভিন্ন রোগ মুক্তি দিতে এ পাতার কিছু আশ্চর্য গুন রয়েছে। তবে যাদের গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা রয়েছে, তারা এ পাতা খেতে ভয় পান। গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা যাদের রয়েছে, তারা খাওয়া দাওয়ার বিষয় নিয়ে একটু বেশি চিন্তিত। তাই অনেকেই প্রশ্ন করে থাকেন পান খেলে গ্যাস হয় কি না। নিচের আলোচনা থেকে সঠিক উত্তর জেনে নিন, পান পাতা খেলে গ্যাস হয় কি না।
পান পাতায় গ্যাস বাড়ায় না, বরং গ্যাসের সমস্যায় এ পাতা খুবই উপকারী। পান পাতা লালাগন্থিকে সক্রিয় করে থাকে, যা মুখের মধ্যে যাওয়া খাবারগুলোকে ছোট আকারে ভাঙতে কাজ করে থাকে। যার ফলে গ্যাসের সমস্যার সমাধান হয়ে থাকে। গ্যাস ছাড়াও পেটের বিভিন্ন সমস্যা, কোষ্ঠকাঠিন্যর সমস্যা ও গ্যাস্ট্রিক আলসার সারিয়ে তুলতে পান পাতার ভূমিকা রয়েছে। সুতারাং পান পাতা খেলে গ্যাস হয় না।
গ্যাসের সমস্যার সমাধানে পান পাতা ভালোভাবে ধুয়ে চিবিয়ে খাবেন। এ নিয়মে পান পাতা খেলে পেটের গ্যাস দূর হয় এবং খাবার ভালোভাবে হজম হয়। তবে পান পাতা অবশ্যই পরিমিত খেতে হবে। অতিরিক্ত খাওয়ার ফলে পেটের বিভিন্ন সমস্যা দেখা দিতে পারে এবং গ্যাসের সমস্যাকে বাড়িয়ে দেয়।
মিষ্টি পান খাওয়ার উপকারিতা
পান পাতা খাওয়ার প্রচলন বহু যুগ ধরে রয়েছে। পান অনেকেই সখ করে খেয়ে থাকে। তবে এটি সখের ও মজাদার খাবার হলেও এ পাতার মধ্যে রয়েছে বিভিন্ন উপকারী গুন। বিভিন্ন উপকরনের সাহায্যে এ পান পাতা দিয়ে পান বানানো হয়, যার আলাদ আলাদা নামও রয়েছে। তার মধ্যে অন্যতম হলে মিষ্টি পান। এ পানের উপকারিতা নির্ভর করবে, কি কি মসলা দিয়ে মিষ্টি পান বানানো হয় তার ওপর।
পান বিভিন্ন ভাবে খাওয়া যায়, জর্দা, সুপারি, খয়ের এসব মিশিয়ে যদি আপনি মিষ্টি পান বানিয়ে নিয়মিত পান খান তাহলে স্বাস্থের জন্য সেটা উপকারের বদলে ক্ষতি বেশি হবে। তাই পানের সঠিক স্বাস্থ উপকারিতা পেতে এসব ক্ষতিকর উপাদান না মিশিয়ে আপনাকে পান পাতা খেতে হবে। পান পাতার রস থেকে বিভিন্ন স্বাস্থ উপকারিতা পাওয়া যায়। জেনে নিন পান পাতার উপকারিতগুলো কি কি।
কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে: পান পাতা কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে সহায়তা করে থাকে। পান পাতার মধ্যে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে, যা শরীরের ভারসাম্যকে রক্ষা করে কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে সহয়তা করে। কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা দূর করতে পান পাতা ব্লেন্ড করে ছেঁচে সে রস আপনাকে খেতে হবে।
মুখের ভিতরের স্বাস্থকে ভালো রাখে: পান পাতার মধ্যে অ্যান্টিসেপটিক গুন রয়েছে, যা মুখের ভেতরের জন্য উপকারী। মুখের দুর্গন্ধ দূর করতে এবং দাঁত ও মাড়ির স্বাস্থ ভালো রাখে নিয়মিত পান পাতা চিবিয়ে খেলে। তবে যাদের দাঁতের সমস্যা রয়েছে, তার পান এড়িয়ে চলায় ভালো।
স্ট্রেস দূর করে: স্ট্রেশ সমস্যায় ভুগছেন? তাহলে পান পাতা চিবিয়ে খান। পান পাতার মধ্য থেকে ফেনোলিক নামক যৌগ পাওয়া যায়, যা মন ও শরীরের স্ট্রেশ দূর করতে সাহায্য করে।
হজম শক্তি বাড়ায়: খাবার খাওয়ার পর পান পাতা চিবিয়ে খাবেন, হজম শক্তির উন্নতি ঘটবে। হজম শক্তি বাড়াসহ পেটের বিভিন্ন সমস্যা দূর হয়, পান পাত চিবিয়ে খেলে।
গলার খুসখুসি দূর করে: পান পাতা রস করে গরম পানির সাথে মিশিয়ে ধিরে ধিরে খাবেন। এ পদ্ধতিতে পান খেলে গলার খুশখুশি দূর হবে।
হৃদস্পন্দন নিয়ন্ত্রন করে: পান পাতা হৃদস্পন্দন নিয়ন্ত্রন রাখতে সাহায্য করে থাকে।
কাশি কমায়: পান পাতা কাশি কমাতে সহায়তা করে থাকে। কাশি কমাতে পান পাতা রস করে তার সাথে গোলমরিচ ও লবঙ্গ মিশিয়ে খাবেন।
এ ছিল পান পাতার স্বাস্থ উপকারিতা। এছারাও আরও বিভিন্ন উপকার পান পাতা খাওয়ার মাধ্যমে পাওয়া যাবে। তবে পান খেতে হবে সঠিক নিয়মে। খালি পেটে পান খাওয়া যাবে না, পানের সাথে অন্য কোনো উপকরণ যেমন, চুন, সুপারি, জর্দা, খয়ের মিশিয়ে খাওয়া যাবে না। এসব মিশিয়ে পান খেলে স্বাস্থের উপর তা ক্ষতিকর প্রভাব পড়তে পারে। সুতরাং সুস্বাস্থ রক্ষায় পানের সঠিক উপকার পেতে পান পাতার রস খাবেন।
লেখকের শেষ বক্তব্য
পান খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে আজকের এই ব্লগে সকল তথ্য তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। আশা করি পান খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে আপনি বিস্তারিত জানতে পেরেছেন।
এতক্ষণ আমাদের সঙ্গে থাকার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। যদি আপনি এই ধরনের প্রয়োজনীয় বিভিন্ন ব্লগ পোস্ট নিয়মিত পড়তে চান তাহলে আপনাকে প্রতিনিয়ত আমাদের এই ওয়েবসাইট ফলো করতে হবে।