বর্তমান চিকিৎসা বিজ্ঞানে প্যান্টোনিক্স ২০ মি.গ্রা একটি কার্যকরী ও বহুল ব্যবহৃত একটি ওষুধ। এটি বিশেষ করে পেটের এসিড-জনিত সমস্যার সমাধানের ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়।
এই পোষ্টে আমরা প্যানটোনিক্স এর কাজ কি, প্যানটোনিক্স ২০ এর দাম কত সহ এই ধরনের প্যানটোনিক্স সম্পর্কিত আরো অনেক বিষয় আলোচনা করবো। সুতরাং এই আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়তে থাকুন এবং জেনে নিন প্যানটোনিক্স ২০ কিসের ঔষধ।
pantonix 20 কিসের ঔষধ
প্যান্টোনিক্স ২০ হলো একটি প্রোটন পাম্প ইনহিবিটর (PPI) শ্রেণীর ঔষধ হিসেবে পরিচিত। যা পাকস্থলীতে অ্যাসিডের উৎপাদন বা পরিমাণ কমাতে সক্ষম। এটি নিম্নলিখিত অ্যাসিড-সম্পর্কিত রোগগুলোর চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়:
গ্যাস্ট্রোইসোফেজিয়াল রিফ্লাক্স ডিজিজ: এটি এমন একটি অবস্থা যেখানে পাকস্থলীর অ্যাসিড খাদ্যনালীতে ফিরে আসে, যার ফলে বুকজ্বালা, টক ঢেকুর, বুকে ব্যথা এবং খাদ্যনালীর প্রদাহ হয়। প্যান্টোনিক্স ২০ অ্যাসিড উৎপাদন কমিয়ে এই লক্ষণগুলো উপশম করে এবং খাদ্যনালীর ক্ষতি নিরাময়ে সাহায্য করে।
পেপটিক আলসার ডিজিজ (PUD) বা আলসার: পাকস্থলী বা ক্ষুদ্রান্ত্রের প্রথম অংশে যে ঘা বা আলসার হয়, তার চিকিৎসায় এটি ব্যবহৃত হয়। এটি অ্যাসিড উৎপাদন কমিয়ে আলসার নিরাময়ের পরিবেশ তৈরি করে।
হেলিকোব্যাক্টর পাইলোরি ব্যাকটেরিয়া: যদি আলসার এইচ. পাইলোরি নামক ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণের কারণে হয়, তবে প্যান্টোনিক্স ২০ অ্যান্টিবায়োটিকের সাথে সম্মিলিতভাবে (ট্রিপল থেরাপি) ব্যবহৃত হয়। এটি অ্যাসিড কমিয়ে অ্যান্টিবায়োটিকগুলোকে ব্যাকটেরিয়া নির্মূলে আরও কার্যকর হতে সাহায্য করে।
NSAID ঔষধের কারণে সৃষ্ট আলসারের চিকিৎসা: যারা এই ধরণের ওষুধনদ দীর্ঘমেয়াদী ব্যবহার করে তাদের পাকস্থলীতে আলসার হতে পারে। এই ধরনের আলসার প্রতিরোধ এবং চিকিৎসায় প্যান্টোনিক্স ২০ মেডিসিনটি ব্যবহৃত হয়।
এছাড়াও প্যানটোনিক্স জলিনজার-এলিসন সিনড্রোম, পেপ্টিক আলসার, ডিসপেপসিয়া ও ডিওডেনাল আলসার চিকিৎসাতেও ব্যবহৃত হয়। এছাড়াও সাধারণ পেট ব্যথা, পেট ফোলা, টক ঢেকুর, বুক জ্বালাপোড়া জাতীয় সমস্যায় এই ওষুধটি ব্যবহার করা হয়ে থাকে।
সহজ কথায়, প্যান্টোনিক্স ২০ মূলত গ্যাস্ট্রিক, বুকজ্বালা, আলসার এবং অ্যাসিড-সম্পর্কিত অন্যান্য হজমের সমস্যার চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়। প্যান্টোনিক্স ২০ একটি প্রেসক্রিপশন ড্রাগ। এটি চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া সেবন করা উচিত নয়।
pantonix 20 এর কাজ কি
এটি বিভিন্ন অ্যাসিড-সম্পর্কিত রোগের চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়। এর কাজগুলো নিচে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো:
জিইআরডি এমন একটি অবস্থা যেখানে পাকস্থলীর অ্যাসিড খাদ্যনালীতে ফিরে আসে, যার ফলে বুকজ্বালা, টক ঢেকুর, বুকে ব্যথা এবং খাদ্যনালীর প্রদাহ দেখা দেয়। প্যান্টোনিক্স ২০ পাকস্থলীতে অ্যাসিডের নিঃসরণ কমিয়ে এই লক্ষণগুলো উপশম করে এবং খাদ্যনালীর ক্ষয় নিরাময়ে সাহায্য করে।
পাকস্থলী বা ক্ষুদ্রান্ত্রের প্রথম অংশে যে ঘা বা আলসার হয়, তার চিকিৎসায় প্যান্টোনিক্স ২০ ব্যবহৃত হয়। এটি অ্যাসিড উৎপাদন কমিয়ে আলসার নিরাময়ের জন্য অনুকূল পরিবেশ তৈরি করে।
যদি আলসার এইচ. পাইলোরি নামক ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণের কারণে হয়, তবে প্যান্টোনিক্স ২০ অ্যান্টিবায়োটিকেরসাথে সম্মিলিতভাবেব্যবহৃত হয়। এটি অ্যাসিড কমিয়ে অ্যান্টিবায়োটিকগুলোর কার্যকারিতা বাড়ায়।
এটি একটি বিরল রোগ যেখানে টিউমারের কারণে পাকস্থলীতে অস্বাভাবিকভাবে অতিরিক্ত অ্যাসিড তৈরি হয়। প্যান্টোনিক্স ২০ এই অতিরিক্ত অ্যাসিড উৎপাদন কার্যকরভাবে নিয়ন্ত্রণ করে।
নন-স্টেরয়েডাল অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি ড্রাগস এর দীর্ঘমেয়াদী ব্যবহারের ফলে পাকস্থলীতে আলসার হতে পারে। প্যান্টোনিক্স ২০ এই ধরনের আলসার প্রতিরোধ এবং চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়, বিশেষ করে যাদের আলসারের ঝুঁকি বেশি।
pantonix 20 এর উপকারিতা
প্যান্টোনিক্স ২০ সেবনের মূল উপকারিতা হলো পাকস্থলীতে অতিরিক্ত অ্যাসিডের মাত্রা কমানো, যা নিম্নলিখিত স্বাস্থ্য সমস্যাগুলোর সমাধান করে:
- বুকজ্বালা উপশম করে
- ক্ষতিগ্রস্ত খাদ্যনালী নিরাময় করে
- পেপটিক আলসার (ঘা) নিরাময় করে
- এনএসএআইডি (NSAID) ঔষধের কারণে সৃষ্ট আলসার প্রতিরোধ করে
- পেটের অস্বস্তি ও বদহজম উপশম করে
প্যান্টোনিক্স ২০ সেবনের মূল উপকারিতা হলো পেটে অ্যাসিড উৎপাদন কমিয়ে গ্যাস্ট্রিক আলসার, রিফ্লাক্স ডিজিজ এবং অ্যাসিড-সম্পর্কিত অন্যান্য রোগের লক্ষণগুলো থেকে মুক্তি দেওয়া এবং আক্রান্ত স্থানের নিরাময়ে সহায়তা করা। প্যান্টোনিক্স ২০ একটি প্রেসক্রিপশন ড্রাগ। এটি চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া সেবন করা উচিত নয়, কারণ এর কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া এবং সতর্কতা রয়েছে।
pantonix 20 খাওয়ার নিয়ম
প্যান্টোনিক্স ২০ একটি প্রেসক্রিপশন ড্রাগ। তাই এটি অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী সেবন করতে হবে। আপনার বয়স, শারীরিক অবস্থা, রোগের তীব্রতা এবং অন্যান্য ঔষধ ব্যবহারের উপর নির্ভর করে চিকিৎসক সঠিক ডোজ এবং সেবনের সময়কাল নির্ধারণ করবেন। নিজে নিজে ঔষধ সেবন বা ডোজ পরিবর্তন করবেন না।
যারা সাধারণ গ্যাস্ট্রিকের সমস্যায় ভুগছেন তাদের এই ওষুধ দিনে ১ বার সকালে সেবন করতে হবে। আর এই ওষুধ টানা ১ মাস সেবন করতে হয়। যদি এর মধ্যে সমস্যার উন্নতি না হয় তাহলে ডাক্তারের সাথে কথা বলে সময় বাড়ানো যেতে পারে।
যাদের বিভিন্ন ক্রস ডিজিজের কারণে পেটের ভিতর ঘা সৃষ্টি হয় সেগুলোর ক্ষেত্রে এই ওষুধ দীর্ঘদিন ব্যবহার করতে হতে পারে। সেক্ষেত্রে প্যানটোনিক্স ২০ একটি করে প্রতিদিন সকালে সেবন করতে হবে যতদিন সমস্যার সমাধান না হয় ততদিন।
১. সেবনের সময়:
সাধারণত, প্যান্টোনিক্স ২০ দিনের প্রথম খাবারের আগে (সকালের নাস্তার ৩০ মিনিট থেকে ১ ঘণ্টা আগে) সেবন করার পরামর্শ দেওয়া হয়। খালি পেটে সেবন করলে ঔষধটি সবচেয়ে কার্যকরভাবে কাজ করে, কারণ প্রোটন পাম্পগুলো তখন সক্রিয় থাকে।
যদি দিনে দুইবার সেবনের প্রয়োজন হয়, তবে দ্বিতীয় ডোজটি সন্ধ্যার খাবারের আগে নেওয়া যেতে পারে।
২. খাওয়ার পদ্ধতি:
প্যান্টোনিক্স ২০ ট্যাবলেটটি পুরো গিলে ফেলুন, এটি ভাঙবেন না, চিবিয়ে খাবেন না বা গুঁড়ো করবেন না। কারণ, এটি একটি এন্টারিক-কোটেড ট্যাবলেট যা পাকস্থলীর অ্যাসিড থেকে ঔষধটিকে রক্ষা করে এবং ক্ষুদ্রান্ত্রে গিয়ে দ্রবীভূত হয়।
৩. ডোজ:
প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য সাধারণত ২০ মি.গ্রা. (একটি ট্যাবলেট) দিনে একবার সেবনের পরামর্শ দেওয়া হয়।
কিছু নির্দিষ্ট ক্ষেত্রে উচ্চ মাত্রার প্রয়োজন হতে পারে, যা চিকিৎসক নির্ধারণ করবেন।
মনে রাখবেন গ্যাস্ট্রিক বা অ্যাসিড-সম্পর্কিত সমস্যাগুলোর জন্য প্যান্টোনিক্স ২০ একটি কার্যকর ঔষধ হলেও, এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া এবং দীর্ঘমেয়াদী ব্যবহারের প্রভাব থাকতে পারে। তাই, যেকোনো পরিবর্তনের জন্য বা নতুন কোনো লক্ষণ দেখা দিলে আপনার চিকিৎসকের সাথে যোগাযোগ করুন।
pantonix 20 এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া
- মাথাব্যথা
- ডায়রিয়া
- পেটের ব্যথা
- গ্যাস বা ফ্ল্যাটুলেন্স
- ত্বকে র্যাশ
- ঘুমের সমস্যা
- উচ্চ রক্তশর্করা
- অ্যালার্জিক প্রতিক্রিয়া ইত্যাদি।
গর্ভাবস্থায় কি প্যানটোনিক্স খাওয়া যাবে?
বিশেষজ্ঞ ডাক্তারদের পরামর্শ অনুযায়ী প্যান্টোনিক্স গর্ভাবস্থায় ব্যবহার করা উচিত নয়। যদি কেউ ব্যবহার করতে চান তাহলে তাকে অবশ্যই বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করে নেওয়া উচিত। এছাড়াও যেহেতু প্যানটোপ্রাজল মায়ের স্তন্যদুগ্ধে নিঃসৃত হয় এজন্য স্তনদানকারী মায়ের এই ওষুধটি ব্যবহার করা উচিত নয়। ব্যবহার করলে এটি স্তন গ্রহণকারী শিশুর শরীরে বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে।
গর্ভাবস্থায় pantonix 20 এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া
গর্ভাবস্থায় যেকোনো ঔষধ সেবনের ক্ষেত্রেই অত্যন্ত সতর্ক থাকা জরুরি। প্যান্টোনিক্স ২০ (Pantonix 20), যার সক্রিয় উপাদান হলো প্যান্টোপ্রাজল (Pantoprazole), একটি প্রোটন পাম্প ইনহিবিটর (PPI)। এটি অ্যাসিড-সম্পর্কিত গ্যাস্ট্রিক সমস্যার জন্য ব্যবহৃত হলেও, গর্ভাবস্থায় এর ব্যবহার সম্পর্কে কিছু সতর্কতা রয়েছে।
গর্ভাবস্থায় প্যান্টোনিক্স ২০ ব্যবহার করলে সাধারণত যে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াগুলো দেখা যায়, সেগুলো গর্ভাবস্থা ছাড়াও অন্য রোগীদের ক্ষেত্রেও দেখা যেতে পারে। এগুলো সাধারণত হালকা হয় এবং এর মধ্যে রয়েছে:
- মাথাব্যথা করতে
- ডায়রিয়া বা কোষ্ঠকাঠিন্য হতে পারে
- বমি বমি ভাব বা বমি হতে পারে
- পেটে ব্যথা বা গ্যাস এর সমস্যা হতে পারে
- শুষ্ক মুখ দেখা দিতে পারে
গর্ভাবস্থায় প্যান্টোনিক্স ২০ সেবনের ক্ষেত্রে অত্যন্ত সতর্ক থাকা উচিত। এটি শুধুমাত্র চিকিৎসকের কঠোর তত্ত্বাবধানে এবং যখন এর উপকারিতা সম্ভাব্য ঝুঁকিকে ছাড়িয়ে যায়, তখনই ব্যবহার করা উচিত। আপনার যদি গর্ভাবস্থায় বুকজ্বালা বা গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা হয়, তাহলে প্রথমে জীবনযাত্রার পরিবর্তন এবং চিকিৎসকের পরামর্শে নিরাপদ অ্যান্টাসিড ব্যবহারের চেষ্টা করুন। প্রয়োজনে, আপনার চিকিৎসক আপনাকে নিরাপদ বিকল্প ঔষধের পরামর্শ দেবেন।
pantonix 20 দাম কত
বর্তমানে, pantonix 20 প্রতি পিচ ট্যাবলেটের দাম ৭ টাকা। আর এক পাতায় মোট ১৪টি ট্যাবলেট রয়েছে। আপনি যদি এক পাতা ক্রয় করেন তাহলে ৯৮ টাকা লাগবে।
তবে, বিভিন্ন ফার্মেসি বা অনলাইন ফার্মেসিতে কিছু ছাড় এর কারণে দাম কিছুটা কম হতে পারে। সেক্ষেত্রে প্রতি স্ট্রিপের দাম প্রায় ৮৮.২০ টাকা থেকে ৯৩.০০ টাকা পর্যন্ত হতে পারে। ঔষধের দাম যেকোনো সময় পরিবর্তিত হতে পারে। ঔষধ কেনার আগে অবশ্যই ফার্মেসিতে বর্তমান দাম যাচাই করে নেবেন। এটি একটি প্রেসক্রিপশন ড্রাগ, তাই চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া সেবন করা উচিত নয়।
লেখকের শেষ মতামত
এতক্ষণে আশা করছি বুঝতেই পারছেন যে pantonix 20 মূলত গ্যাস্ট্রিক ও এসিড সম্পর্কিত সমস্যার ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়। আপনার রোগের সঠিক কারণ নির্ণয় এবং ঔষধের সঠিক ডোজ নির্ধারণের জন্য একজন রেজিস্টার্ড চিকিৎসকের নির্দেশনা অপরিহার্য। তাই, এটি ব্যবহারের আগে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ গ্রহণ করা উচিত। এটি কার্যকর ফলাফল তখনই দিবে যখন আপনি সঠিক ডোজ এবং সঠিক পদ্ধতিতে ব্যবহার করবেন।