ফেনাডিন ১২০ কেন খায় – খাওয়ার নিয়ম ও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া জেনে নিন

আজকে আমরা ফেনাডিন ১২০ কেন খায় এবং ফেনাডিন ১২০ এর কাজ কি সেই সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব। আমাদের মাঝে এমন অনেকেই আছেন যাদের ডাক্তাররা ফেনাডিন ১২০ ঔষধ গ্রহণ করতে বলে বা প্রেস্ক্রাইব করে। এইজন্য তারা জানতে চাই যে এই ওষুধটি কেন খাওয়া হয়। এবং কোন রোগের ঔষধ হিসেবে কাজ করে।

ফেনাডিন ১২০ কেন খায়

তাই আপনি যদি ফেনাডিন ১২০ কেন খায় জানতে চান তাহলে এই পোস্ট আপনাকে অবশ্যই প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত বিস্তারিত পড়তে হবে। আর এর পাশাপাশি জানতে পারবেন এই ফেনাডিন ১২০ খাওয়ার নিয়ম, এই কাজ কি এবং এ ওষুধের দাম কত। এছাড়াও এই ওষুধ গ্রহণে কি কি উপকারিতা পাওয়া যায় ও কি কি পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া রয়েছে সেই সম্পর্কে জানতে শেষ পর্যন্ত বিস্তারিত দেখুন।

ফেনাডিন ১২০ কিসের ঔষধ

ফেনাডিন ১২০ মূলত অ্যালার্জির বিভিন্ন লক্ষণ উপশম করতে ব্যবহৃত হয়। এটি হিস্টামিন নামক একটি রাসায়নিক পদার্থের কার্যকারিতা বন্ধ করে কাজ করে, যা অ্যালার্জির প্রতিক্রিয়ার জন্য দায়ী। এটি সাধারণত নিম্নলিখিত ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়:

  • হাঁচি
  • নাক দিয়ে পানি পড়া (রাইনোরিয়া)
  • নাক, চোখ বা গলায় চুলকানি
  • চোখ লাল হওয়া ও জল পড়া
  • নাক বন্ধ থাকা বা সর্দি

ফেনাডিন ১২০ ট্যাবলেট কেন খায়

এই ঔষধটি শরীরের “হিস্টামিন” নামক একটি প্রাকৃতিক রাসায়নিক পদার্থের কার্যকারিতা বন্ধ করে কাজ করে। হিস্টামিনই অ্যালার্জির বিভিন্ন উপসর্গ সৃষ্টির জন্য দায়ী।

নিম্নলিখিত কারণে ফেনাডিন ১২০ ট্যাবলেট খাওয়া হয়:

  • ঘন ঘন হাঁচি দূর করতে
  • নাক দিয়ে পানি পড়া বন্ধ করতে
  • নাক বন্ধ থাকা বা সর্দি নিরাময় করার জন্য
  • নাক, চোখ, গলা বা তালুতে চুলকানি দূর করার জন্য
  • চোখ লাল হওয়া বা চোখ থেকে জল পড়া বন্ধ করতে

এটি মূলত ফেক্সোফেনাডি গ্রুপের একটি একটি ওষুধ মাত্র। এই গ্রুপের বিভিন্ন ওষুধ রয়েছে, যা বিভিন্ন  কার্যকারিতা নিয়ে তৈরি করে থাকে। ফেনাডিন অনেক গুরুত্বপূর্ণ একটি ওষুধ। বিশেষ করে যাদের শরীরে চুলকানি রয়েছে বা বিভিন্ন এলার্জির সমস্যা তাদের জন্য এই ফেনাডিন ১২০ অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ।

আপনার এলার্জি সমস্যা নিরাময় করার পাশাপাশি ঘন ঘন হাঁচি, এবং নাক ও চুলকানি ক্ষেত্রে বিশেষ নিরাময়ের জন্য এই ফেনাডিন ১২০ খাওয়া হয়। এছাড়াও যাদের বিভিন্ন জায়গা চুলকানির জন্য লাল ভাব দেখা দেয় ডাক্তাররা তাদেরকে এই ফেনাডিন ১২০ সেবন করতে বলেন।

ফেনাডিন ১২০ এর কাজ কি

ফেনাডিন ১২০ এর প্রধান কাজ হলো অ্যালার্জির বিভিন্ন লক্ষণ উপশম করা। এটি শরীরের হিস্টামিন নামক একটি রাসায়নিক পদার্থের কার্যকলাপকে বাধা দিয়ে কাজ করে, যা অ্যালার্জির প্রতিক্রিয়ার মূল কারণ। ফেনাডিন ১২০ সাধারণত নিম্নলিখিত ক্ষেত্রে কাজ করে:

  • ঘন ঘন হাঁচি কমানো।
  • নাক থেকে পানি ঝরা বন্ধ করা।
  • নাক, চোখ বা গলায় চুলকানি উপশম করা।
  • অ্যালার্জির কারণে চোখ লাল হওয়া এবং চোখ থেকে জল পড়া কমানো।
  • নাকের অস্বস্তি বা সর্দি থেকে মুক্তি দেওয়া।
আরো পড়ুনঃ-  টোফেন ট্যাবলেট এর কাজ কি - টোফেন সিরাপ কিসের ঔষুধ

কীভাবে কাজ করে:

আমাদের শরীরে অ্যালার্জেন প্রবেশ করলে শরীর হিস্টামিন নামক একটি রাসায়নিক পদার্থ নিঃসৃত করে। এই হিস্টামিনই হাঁচি, কাশি, চুলকানি, নাক দিয়ে পানি পড়া ইত্যাদি অ্যালার্জির উপসর্গ সৃষ্টি করে। ফেক্সোফেনাডিন হিস্টামিনের রিসেপ্টরগুলিকে ব্লক করে দেয়, ফলে হিস্টামিন তার কাজ করতে পারে না এবং অ্যালার্জির লক্ষণগুলো কমে আসে।

ফেনাডিন ১২০ এর একটি বিশেষ সুবিধা হলো এটি কম তন্দ্রাভাব সৃষ্টিকারী একটি অ্যান্টিহিস্টামিন। অর্থাৎ, এটি সেবনের পর সাধারণত ঘুম ঘুম ভাব হয় না বা খুবই কম হয়, যা দৈনন্দিন কাজকর্মে তেমন ব্যাঘাত ঘটায় না। এটি একটি প্রেসক্রিপশন ঔষধ। তাই যেকোনো ঔষধ সেবনের আগে অবশ্যই রেজিস্টার্ড চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

ফেনাডিন ট্যাবলেট এর উপকারিতা

এটি অ্যান্টিহিস্টামিন ঔষধ হওয়ার ফলে বিভিন্ন ধরনের অ্যালার্জির লক্ষণ উপশম করতে ব্যবহৃত হয়। এর মূল কাজ হলো শরীরের হিস্টামিন নামক একটি রাসায়নিক পদার্থের কার্যকারিতা বন্ধ করা, যা অ্যালার্জির প্রতিক্রিয়ার জন্য দায়ী।

ফেনাডিন ট্যাবলেটের মূল উপকারিতাগুলো নিচে উল্লেখ করা হলো:

এটি মৌসুমী বা বারোমাসি অ্যালার্জির কারণে সৃষ্ট বিভিন্ন অস্বস্তিকর উপসর্গ কমাতে অত্যন্ত কার্যকর। এর ফলে রোগী স্বস্তি অনুভব করেন। যে লক্ষণগুলো উপশম হয়। ফেনাডিন ট্যাবলেটের মূল উপকারিতাগুলো নিচে উল্লেখ করা হলো:

  • ঘন ঘন হাঁচি কমাতে সহায়তা করে থাকে।
  • নাক থেকে ক্রমাগত পানি ঝরা বন্ধ করতে সহায়তা করে।
  • নাকের অস্বস্তি বা সর্দি থেকে মুক্তি দেয়।
  • চোখ, নাক, গলা বা তালুতে চুলকানি কমাতে সহায়তা করে থাকে।
  • অ্যালার্জির কারণে চোখ লাল হওয়া এবং পানি ঝরা বন্ধ করতে সহায়তা করে।

এছাড়াও এটি এক ধরনের ত্বকের অ্যালার্জি, যেখানে ত্বকে চুলকানিযুক্ত লাল চাকা বা আমবাত দেখা যায়। ফেনাডিন এই ধরনের ত্বকের অ্যালার্জির লক্ষণগুলো কমাতে সহায়তা করে।

যদিও ফেনাডিন ট্যাবলেটের অনেক উপকারিতা রয়েছে, এটি একটি প্রেসক্রিপশন ঔষধ। তাই যেকোনো ঔষধ সেবনের আগে অবশ্যই রেজিস্টার্ড চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। চিকিৎসকের নির্দেশনা অনুযায়ী সঠিক মাত্রা ও সেবনের নিয়ম মেনে চলা জরুরি।

আরো পড়ুনঃ-  ফ্যাসিড ক্রিম এর কাজ কি - ব্যবহারের নিয়ম, দাম ও পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া জানুন

ফেনাডিন ১২০ খাওয়ার নিয়ম

এটি একটি প্রেসক্রিপশন ড্রাগ, তাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ নিয়ম হলো ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ঔষধ সেবন করা।

সঠিক ডোজ (মাত্রা):

  • যেসব বাচ্চাদের বয়স ১২ বছরের বেশি তারা ফেনাডিন ১২০ মিলিগ্রাম দিনে ১ বার অথবা ৬০ মিগ্রা দিনে ২ বার সেবন করবে। 
  • আবার বাচ্চাদের বয়স ৬ থেকে ১১ বছরের মধ্যে তারা ফেনাডিন ৩০ মিলিগ্রাম দিনে ১ বার অথবা ৬০ মিলিগ্রাম দিনে ১ বার সেবন করবে। 

সেবনের সময়:

এই ঔষধটি খাবারের আগে বা পরে খাওয়া যেতে পারে। তবে, কিছু গবেষণায় দেখা গেছে, খাবারের সাথে বা খাওয়ার কিছুক্ষণ আগে নিলে এর কার্যকারিতা কিছুটা কমতে পারে। তাই, খালি পেটে বা খাবারের ১-২ ঘণ্টা আগে/পরে খেলে ভালো ফল পাওয়া যায়।

অনেক চিকিৎসক সকালে একবার ঔষধটি খাওয়ার পরামর্শ দেন, কারণ এটি সাধারণত ঘুম ঘুম ভাব সৃষ্টি করে না, ফলে দিনের বেলায় কাজকর্মে কোনো ব্যাঘাত ঘটে না।

ফেনাডিন ১২০ এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া

যেকোনো ঔষধের মতোই এর কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া থাকতে পারে, যা সবার ক্ষেত্রে নাও দেখা যেতে পারে। ফেনাডিন ১২০ এর সাধারণ এবং গুরুতর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নিম্নে উল্লেখ করা হলঃ

এগুলো সাধারণত হালকা হয় এবং ঔষধ সেবন চালিয়ে গেলে বা কিছুদিন পর নিজে থেকেই চলে যায়:

  • মাথাব্যথা
  • তন্দ্রাভাব বা ঘুম ঘুম ভাব 
  • মাথা ঘোরা
  • বমি বমি ভাব 
  • পেট খারাপ বা ডায়রিয়া 
  • শুষ্ক মুখ
  • কাশি 
  • পিঠে ব্যথা 
  • হাত বা পায়ে ব্যথা 
  • ক্লান্তি বা দুর্বলতা ইত্যাদি

গুরুতর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া:

যদিও এগুলো খুব কম দেখা যায়, তবে এমন লক্ষণ দেখা দিলে দ্রুত ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত:

  • মারাত্মক অ্যালার্জিক প্রতিক্রিয়া যেমন – ফুসকুড়ি, চুলকানি, আমবাত, মুখ, ঠোঁট, জিহ্বা বা গলায় ফোলাভাব, বুকে আঁটসাঁট অনুভূতি বা শ্বাসকষ্ট।
  • হৃদপিণ্ডের গতি অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যায় বা বুকে ব্যথা অনুভব হওয়া।
  • কানে ব্যথা, শুনতে অসুবিধা, কান থেকে তরল নির্গত হওয়া।
  • অতিরিক্ত তন্দ্রাভাব বা দৃষ্টিশক্তির পরিবর্তন হওয়া।

কখন ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করবেন?

  • যদি উপরে উল্লিখিত কোনো সাধারণ পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দীর্ঘদিন ধরে থাকে বা অস্বস্তিকর হয়।
  • যদি কোনো গুরুতর বা অস্বাভাবিক পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা যায়।
  • যদি আপনি মনে করেন যে আপনি ঔষধের ওভারডোজ নিয়েছেন।

এটি সেবনের আগে অবশ্যই রেজিস্টার্ড চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। তিনিই আপনার স্বাস্থ্য অবস্থা বিবেচনা করে এই ঔষধটি আপনার জন্য উপযুক্ত কিনা এবং এর সম্ভাব্য পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াগুলো সম্পর্কে বিস্তারিত জানাতে পারবেন।

আরো পড়ুনঃ-  algin tablet কেন খায় - algin tablet কিসের জন্য

ফেনাডিন ১২০ এর দাম কত

প্রতি পিচ ফেনাডিন ১২০ ট্যাবলেট এর দাম হচ্ছে মাত্র ৯ টাকা। এবং আপনি যদি পুরো বক্স নেন তাহলে এর দাম পড়বে ৪৫০ টাকা। তবে, ওষুধের দাম বিভিন্ন ফার্মেসি বা অনলাইন প্ল্যাটফর্মে সামান্য ভিন্ন হতে পারে, এবং অফার বা ডিসকাউন্ট থাকলে দাম আরও কিছুটা কম হতে পারে। 

এই ওষুধ আপনার নিকটস্থ যেকোনো ফার্মেসি দোকান থেকে সংগ্রহ করতে পারবেন। মনে রাখবেন, এটি একটি প্রেসক্রিপশন ড্রাগ, তাই ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া সেবন করবেন না। 

ফেনাডিন ১২০ এর সতর্কতা ও পরামর্শ

ফলের রস না খাওয়া: আপেল, কমলা, বা আঙ্গুরের মতো ফলের রসের সাথে ফেনাডিন ট্যাবলেট সেবন করবেন না। এই ফলের রসগুলো ফেক্সোফেনাডিনের শোষণ কমিয়ে দিতে পারে, ফলে ঔষধের কার্যকারিতা কমে যেতে পারে। ঔষধটি শুধুমাত্র পানি দিয়ে সেবন করুন।

অ্যান্টাসিড পরিহার করা: অ্যালুমিনিয়াম বা ম্যাগনেসিয়ামযুক্ত অ্যান্টাসিড (যেমন ডাইজিন, এন্টাসিড প্লাস) ফেক্সোফেনাডিনের কার্যকারিতা কমাতে পারে। যদি অ্যান্টাসিড সেবনের প্রয়োজন হয়, তাহলে ফেনাডিন সেবনের অন্তত ২ ঘণ্টা আগে বা ৪ ঘণ্টা পরে অ্যান্টাসিড সেবন করুন।

চিকিৎসকের পরামর্শ: আপনার রোগের ধরন, তীব্রতা, বয়স এবং অন্যান্য স্বাস্থ্যগত অবস্থার ওপর নির্ভর করে চিকিৎসক ডোজ বা সেবনের নিয়মে পরিবর্তন আনতে পারেন। তাই, নিজে নিজে ডোজ পরিবর্তন করবেন না বা ঔষধ সেবন বন্ধ করবেন না।

গর্ভাবস্থা ও স্তন্যদান: গর্ভবতী বা স্তন্যদানকারী মায়েদের ক্ষেত্রে এই ঔষধ সেবনের আগে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

লেখকের শেষ মতামত

ফেনাডিন ১২০ একটি প্রেসক্রিপশন ড্রাগ। তাই এটি সেবনের আগে অবশ্যই রেজিস্টার্ড চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। তিনিই আপনার স্বাস্থ্য অবস্থা বিবেচনা করে এই ঔষধটি আপনার জন্য উপযুক্ত কিনা এবং এর সম্ভাব্য পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াগুলো সম্পর্কে আরও বিস্তারিত জানাতে পারবেন।

পরিশেষে যেটা না বললেই নয় নিজের রোগের চিকিৎসার ক্ষেত্রে কখনোই ডাক্তারের পরামর্শ ব্যতীত নিজে থেকে ওষুধ সেবন করবেন না। মনে রাখাটা জরুরি যে যেকোন ধরণের মেডিসিন সেবনের আগে আপনাকে একজন বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে, এরপরে তার দেওয়া পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ সেবন করতে হবে। তাহলেই ইনশাল্লাহ আপনার রোগের ক্ষেত্রে ভালো ফলাফল পাবেন।

আমি সহ আমার টিম প্রতিনিয়ত কাজ করি অনলাইন জগতে বিভিন্ন তথ্য প্রদানের মাধ্যমে সবার জ্ঞান ও দক্ষতা বৃদ্ধিতে। আমাদের সম্পর্কে আপনার কোন প্রশ্ন বা মতামত প্রদান করতে আমাদের যোগাযোগ পেইজ ব্যবহার করুন অথবা নিচে কমেন্ট করুন।

Leave a Comment