বর্তমানে নাকের পলিপাসের সমস্যা প্রায়শই চোখে পড়ে। এই বিষয়ে আমাদের মধ্যে অনেক ভুল ধারণা প্রচলিত আছে। আমাদের দুই নাকের ভেতরে হালকা গোলাপি রঙের যে দুটি ফোলা মাংসপিণ্ড দেখা যায়, এগুলোকে টারবিনেট বলে এগুলো কিন্তু পলিপাস নয়।

আজকের এই পোষ্টে আমরা নাকের পলিপাস কি, বিনা অপারেশনে নাকের পলিপাসের ঘরোয়া চিকিৎসা এবং এর থেকে প্রতিকারের উপায় বিস্তারিত জেনে নিব।
নাকের পলিপাস কি?
নাকের পলিপাস হলো এক ধরনের রোগ। আমাদের নাকের ভেতরে যে লাইনিং মিউকাস মেমব্রেন থাকে, অনেক সময় তার মধ্যে ইডেমা বা শোথ দেখা যায়। ইডেমা হলো এক ধরনের তরল জমে নাকের ভেতরের অংশে ফোলাভাব সৃষ্টি হওয়া।
এই ইডেমা যখন সৃষ্টি হয়ে ঝুলে পড়ে, তখন নাকের ভেতরে পলিপের মতো তৈরি হতে দেখা যায়। এটি দেখতে অনেক সময় নরম আঙুরের মতো হয় এবং এর ভেতরে তরল জাতীয় পদার্থ থাকে। এই পলিপাস যেকোনো বয়সেই হতে পারে।
সাধারণত অ্যালার্জি থেকেই নাকের পলিপাস হয়। যাদের ঘন ঘন ঠান্ডা লাগা, সর্দি এবং হাঁচি হয়, তাদের অ্যালার্জির প্রবণতা বেশি দেখা যায়। যেসব পরিবেশে ধুলোবালি বেশি থাকে বা পরিবেশ ঠান্ডা, সেই সব জায়গায় বসবাসকারী এবং যাদের নাকে সর্দি-হাঁচি বেশি হয়, তাদের নাকের পলিপাস হওয়ার ঝুঁকি বেশি থাকে।
মানুষের নাকে পলিপাস সাধারণত দুই ধরনের হয়। এর মধ্যে ‘এন্ট্রোকোয়ানাল পলিপাস’ শিশুদের মধ্যে বেশি দেখা যায়। অন্যদিকে, বয়স্ক বা যুবকদের ক্ষেত্রে ‘ইথময়েডাল পলিপাস’ বেশি হয়।
বিনা অপারেশনে নাকের পলিপাসের ঘরোয়া চিকিৎসা
নাকের পলিপাস নিয়ন্ত্রণে সহায়ক কিছু ঘরোয়া চিকিৎসা রয়েছে। তবে মনে রাখতে হবে, পলিপাসের সমস্যা গুরুতর হলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া আবশ্যক। নিচে পলিপাস নিয়ন্ত্রণের ৮টি ঘরোয়া প্রতিকার ও পদ্ধতির কথা উল্লেখ করা হলো। চলুন, এ সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক:
আরো পড়ুনঃ মাথায় আঘাত লেগে ফুলে গেলে প্রাথমিক চিকিৎসা কোনটি
১. লবন-পানির সলিউশন: এক কাপ হালকা গরম পানিতে আধা চা-চামচ লবণ মিশিয়ে নিন। এই মিশ্রণটি নাসারন্ধ্রের মাধ্যমে ধীরে ধীরে প্রবাহিত করুন।
আপনি এটি প্রতিদিন দুই থেকে তিনবার ব্যবহার করতে পারেন। লবণ-পানির এই মিশ্রণ দিয়ে নাক ধুয়ে দিলে নাকের পলিপাস থেকে সাময়িক আরাম পাওয়া যায়। এটি নাকের ভেতরের শ্লেষ্মা বা মিউকাস পরিষ্কার করে এবং শ্বাস-প্রশ্বাসের পথকে পরিষ্কার রাখতে সাহায্য করে।
২. নিশ্বাসের সাথে বাষ্প নেওয়া: এক বাটি গরম পানি নিন এবং মাথা তোয়ালে দিয়ে ঢেকে বাষ্প নিন। এতে জমে থাকা শ্লেষ্মা সহজে বেরিয়ে আসবে এবং শ্বাস নিতে স্বস্তি পাবেন।
এই পদ্ধতিটি দিনে দুইবার ব্যবহার করা যেতে পারে। বাষ্প নেওয়া বা স্টিম ইনহেলেশন নাকের পলিপাসের কারণে হওয়া শ্বাসকষ্ট দূর করতে সাহায্য করে। বাষ্পের প্রভাবে শ্লেষ্মা বা মিউকাস নরম হয়ে যায় এবং নাকের ভেতরে বাতাস চলাচল সহজ হয়।
৩. আদার চা: ২-৩ টুকরো আদা ফুটন্ত পানিতে দিয়ে ১০ মিনিট রেখে দিন। এরপর এতে পরিমাণমতো মধু মিশিয়ে পান করুন। দিনে দুইবার এই চা পান করলে প্রদাহ বা ইনফ্লামেশন কমাতে অনেক উপকার পাওয়া যায়। আদা প্রাকৃতিকভাবে প্রদাহনাশক হিসেবে কাজ করে। এটি প্রদাহ কমাতে এবং নাকের পলিপাসের কারণে সৃষ্ট বিভিন্ন সমস্যা দূর করতে সাহায্য করে।
৪. হলুদ: আপনার দৈনন্দিন খাদ্যে হলুদ ব্যবহার করতে পারেন। অন্যথায়, এক গ্লাস হালকা গরম দুধে এক চিমটি হলুদ মিশিয়ে পান করতে পারেন। হলুদ প্রাকৃতিক অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করে। এটি নাকের শ্লেষ্মা কমাতে সাহায্য করে এবং প্রদাহ দূর করে।
৫. অ্যাপল সিডার ভিনেগার: এক কাপ গরম পানিতে এক চা-চামচ অ্যাপল সিডার ভিনেগার এবং মধু মিশিয়ে দিনে দুবার পান করতে পারেন। অ্যাপল সিডার ভিনেগার নাকের শ্লেষ্মা পরিষ্কার করতে সাহায্য করে এবং পলিপাসের কারণে সৃষ্ট নাকের প্রদাহ কমাতে সহায়তা করে।
৬. ভিটামিন সি: ভিটামিন সি সমৃদ্ধ খাবার আপনার খাদ্যতালিকায় যোগ করতে পারেন। লেবু, কমলা, পেয়ারা এবং ব্রকলির পাশাপাশি বিটরুট ও মরিঙ্গা পাউডার ভিটামিন সি-এর ভালো উৎস। ভিটামিন সি শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে এবং প্রদাহ কমাতে সহায়ক। এই কারণে এটি নাকের পলিপাস কমানোর সম্ভাবনা বাড়াতে পারে।
৭. ইউক্যালিপটাস অয়েল: কয়েক ফোঁটা ইউক্যালিপটাস অয়েল দিয়ে নাকের পাশে আলতো করে মালিশ করুন। ইউক্যালিপটাস অয়েলে প্রাকৃতিক প্রদাহনাশক এবং অ্যান্টিসেপটিক গুণ রয়েছে। এটি শ্বাস-প্রশ্বাসকে সহজ করে এবং পলিপাসের কারণে সৃষ্ট বায়ু চলাচলের বাধা দূর করতে সহায়তা করে।
৮. গাঁজানো রসুন মধু: রসুনে থাকা অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি উপাদান পলিপাসের ব্যথা কমাতে সাহায্য করে। রসুনের অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল গুণাবলী নাকের সাইনাস ও পলিপাসের সমস্যা সমাধানে কার্যকর ভূমিকা রাখে। প্রতিদিন সকালে খালি পেটে এক চা চামচ গাঁজানো রসুন মধুর সাথে খান। এটি নিয়মিত সেবন করলে নাকের পলিপাস এবং অন্যান্য শ্বাসযন্ত্রের সমস্যা থেকে ঘরোয়া উপায়ে মুক্তি পেতে পারেন।
পরিশেষে, নাকের পলিপাসের জন্য ঘরোয়া প্রতিকারগুলো সাময়িক স্বস্তি দিতে পারে, কিন্তু এগুলি কোনো স্থায়ী সমাধান নয়। যদি আপনার উপসর্গগুলি দীর্ঘস্থায়ী হয় অথবা গুরুতর আকার ধারণ করে, তবে অবশ্যই একজন চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
মনে রাখবেন, পলিপাসের চিকিৎসা কিন্তু ঘরোয়া উপায়ে সব সময় পুরোপুরি হয় না। যদি দেখেন:
- নাক বন্ধ হওয়া বা শ্বাস নিতে খুব কষ্ট হচ্ছে।
- বারবার সাইনাসের সংক্রমণ হচ্ছে।
- তীব্র মাথাব্যথা বা মুখের উপর চাপ অনুভব হচ্ছে।
- দৃষ্টিশক্তির পরিবর্তন হচ্ছে।
তখন আর দেরি না করে দ্রুত একজন নাক-কান-গলা বিশেষজ্ঞের কাছে যান। কারণ ঘরোয়া চিকিৎসা ছোট বা প্রাথমিক পর্যায়ের পলিপাসের জন্য ভালো, কিন্তু বড় পলিপাস বা জটিলতার ক্ষেত্রে অনেক সময় স্টেরয়েড স্প্রে অথবা অপারেশন প্রয়োজন হতে পারে। ঘরোয়া পদ্ধতিগুলিকে চিকিৎসার সহায়ক হিসেবে দেখুন, মূল চিকিৎসা হিসেবে নয়।
নাকের পলিপাসের ঘরোয়া চিকিৎসা না করলে সম্ভাব্য ঝুঁকি
নাকের পলিপাসের চিকিৎসা না করালে কিছু দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব এবং ঝুঁকি দেখা দিতে পারে, যা স্বাস্থ্যের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। এই সমস্যা দীর্ঘদিন ধরে অবহেলা করলে তা অন্যান্য স্বাস্থ্য সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে।
১. শ্বাসপ্রশ্বাসের সমস্যা বৃদ্ধি: নাকের পলিপাসের কারণে নাসারন্ধ্রের ভেতরের শ্বাসের রাস্তা বন্ধ হয়ে যেতে পারে, যার ফলে শ্বাসপ্রশ্বাস নিতে অসুবিধা হয়। সময়ের সাথে সাথে শ্বাসকষ্টের এই সমস্যা এতটাই গুরুতর হতে পারে যে রোগী স্লিপ অ্যাপনিয়া বা ঘুমের মধ্যে শ্বাস বন্ধ হয়ে যাওয়ার মতো ঝুঁকিতে পড়তে পারে।
২. স্লিপ অ্যাপনিয়া: স্লিপ অ্যাপনিয়া একটি গুরুতর ঘুমের রোগ, যেখানে ঘুমের সময় কয়েক সেকেন্ড বা মিনিটের জন্য শ্বাস বন্ধ হয়ে যায়। এই অবস্থার কারণে উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগ এবং স্ট্রোকের ঝুঁকি বেড়ে যেতে পারে।
৩. ক্রনিক সাইনাসাইটিস: নাকের পলিপাসের সমস্যা থাকলে সাইনাস বন্ধ হয়ে যেতে পারে। এর ফলে দীর্ঘস্থায়ী সাইনাসাইটিস হতে পারে। সাইনাসাইটিসের কারণে মুখে, মাথায় ব্যথা হয়, নাক দিয়ে সর্দি পড়ে এবং নাকে চাপ অনুভূত হয়। যদি দীর্ঘমেয়াদি সাইনাসাইটিস হয়, তবে চিকিৎসা ছাড়া তা সহজে ভালো হতে চায় না।
৪. ঘ্রাণশক্তি কমে যাওয়া: নাকের পলিপাসের কারণে নাকের ভেতরে চাপ বাড়ে। এর ফলে ঘ্রাণশক্তি ধীরে ধীরে কমতে থাকে। যদি এই সমস্যার দ্রুত সমাধান না করা হয়, তবে দীর্ঘমেয়াদে ঘ্রাণশক্তি স্থায়ীভাবে হারানোর ঝুঁকি থাকে।
৫. স্বাস্থ্যহানি: নাসারন্ধ্রের ভেতরের দীর্ঘমেয়াদী প্রদাহ আমাদের শরীরের সামগ্রিক রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে কমিয়ে দেয়। এর ফলস্বরূপ, বিভিন্ন সংক্রমণ ও অন্যান্য রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বাড়ে। এছাড়া, শ্বাসকষ্ট ও ঘুমের সমস্যার কারণে শরীরের স্বাভাবিক কার্যকারিতা ব্যাহত হয়, যা আমাদের দৈনন্দিন জীবনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।
নাকের পলিপাসের অপারেশন ছাড়া বিকল্প চিকিৎসা
কে পলিপাসের সমস্যা ঘরোয়া পদ্ধতি বা ওষুধের মাধ্যমেও যদি নিয়ন্ত্রণে না আসে, তবে অস্ত্রোপচার ছাড়াও কিছু বিকল্প চিকিৎসার কথা ভাবা যেতে পারে। এই ধরনের পদ্ধতিগুলো পলিপাসের কারণে হওয়া উপসর্গগুলো কমাতে এবং প্রদাহ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করতে পারে।
আরো পড়ুনঃ দাউদের স্থায়ী চিকিৎসা সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন
১. কর্টিকোস্টেরয়েড স্প্রে: নাকের পলিপাসের প্রদাহ কমাতে কর্টিকোস্টেরয়েড স্প্রে দারুণ কাজ করে। এর কারণ হলো, এটি সরাসরি নাসারন্ধ্রের ভেতরে প্রয়োগ করা হয়। স্প্রেটি ভেতরে গিয়ে প্রদাহ দ্রুত কমিয়ে দেয় এবং এর ফলে পলিপাসের আকারও ছোট হয়ে আসে।
২. অ্যান্টি-অ্যালার্জিক ওষুধ: অ্যালার্জির জন্য যদি নাকের পলিপাস হয়, তাহলে অ্যান্টি-অ্যালার্জিক ওষুধ ব্যবহার করা যেতে পারে। এই ওষুধগুলো নাকের ভেতরের প্রদাহ কমানোর পাশাপাশি অ্যালার্জির কারণে হওয়া সর্দি নিয়ন্ত্রণেও বেশ কার্যকর।
৩. ইমিউন থেরাপি: ইমিউন থেরাপি হলো এমন একটি চিকিৎসা ব্যবস্থা, যেখানে শরীরের নিজস্ব প্রতিরোধ ক্ষমতাকে আরও শক্তিশালী করার জন্য ওষুধ প্রয়োগ করা হয়। নাকের পলিপাস যাতে বারবার না হয়, সেই পুনরাবৃত্তি রোধে এই থেরাপি বিশেষভাবে সহায়ক হতে পারে।
৪. বায়োপসি ও চিকিৎসকের পরামর্শ: নাকের পলিপাসের আকার খুব বড় হলে অথবা ওষুধ প্রয়োগের পরেও যদি এটি সারতে না চায়, তবে বায়োপসি করার প্রয়োজন হতে পারে।
বায়োপসি একটি প্রক্রিয়া, যার মাধ্যমে পলিপাসের কিছু কোষ পরীক্ষার জন্য সংগ্রহ করা হয়। এই পরীক্ষার মাধ্যমে পলিপাসের সঠিক প্রকৃতি জানা যায় এবং কোন ধরনের চিকিৎসা প্রয়োজন, তা নির্ধারণ করা সহজ হয়।
দীর্ঘমেয়াদী সমাধান: অপারেশন
নাকের পলিপাসের সমস্যা যখন গুরুতর হয়ে ওঠে এবং ঘরোয়া পদ্ধতি বা ওষুধ দিয়েও তা নিয়ন্ত্রণে আনা যায় না, তখন অপারেশন একটি কার্যকর সমাধান হতে পারে। নাকের পলিপাসের জন্য সবচেয়ে প্রচলিত অপারেশনের পদ্ধতি হলো এন্ডোস্কোপিক সাইনাস সার্জারি।
এই পদ্ধতিতে:
- এই অপারেশনে একটি ক্ষুদ্র এন্ডোস্কোপ নাকের ভেতরে ঢুকিয়ে পলিপাসটি অপসারণ করা হয়।
- অপারেশনের ফলে নাসারন্ধ্র পরিষ্কার হয়ে যায় এবং রোগী শ্বাস নিতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন।
ভবিষ্যতের জন্য সতর্কতা
নানাকের পলিপাস একটি দীর্ঘস্থায়ী সমস্যা হলেও সঠিক যত্ন, প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা এবং সময়মতো চিকিৎসার মাধ্যমে এটিকে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। নাকের পলিপাসের বারবার ফিরে আসা রোধ করতে দৈনন্দিন জীবনযাত্রায় কিছু সহজ পরিবর্তন আনা যেতে পারে।
যেমন:
- শ্বাসনালী পরিষ্কার রাখার জন্য প্রতিদিন নাসারন্ধ্র ধৌতকরণ করা জরুরি।
- সেই সাথে, বেশি ধুলাবালি, ধোঁয়া এবং অ্যালার্জি সৃষ্টিকারী পরিবেশ এড়িয়ে চলতে হবে।
- এছাড়া, শরীরকে সুস্থ রাখতে তাজা ও পুষ্টিকর খাদ্যাভ্যাস বজায় রাখা এবং পর্যাপ্ত পরিমাণে জল পান করে শরীরকে সঠিকভাবে হাইড্রেটেড রাখা আবশ্যক।
নাকের পলিপাসের প্রতিরোধের উপায়
নাকের পলিপাস থেকে মুক্তি পেতে ঘরোয়া চিকিৎসা, অন্যান্য চিকিৎসার পাশাপাশি প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা খুব জরুরি। এই প্রতিরোধমূলক পদক্ষেপগুলো দীর্ঘমেয়াদে নাকের পলিপাসের ফিরে আসা আটকাতে সাহায্য করে।
১. পরিবেশ নিয়ন্ত্রণে রাখা: পরিবেশের ধূলিকণা, ময়লা এবং অ্যালার্জি সৃষ্টিকারী উপাদানগুলো নাকের পলিপাসের অন্যতম প্রধান কারণ হতে পারে। তাই, ঘরের পরিবেশ পরিচ্ছন্ন রাখা এবং অ্যালার্জি সৃষ্টিকারী উপাদানগুলো থেকে দূরে থাকা জরুরি।
- ঘর-বাড়ির নিয়মিত পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা খুবই জরুরি।
- ধূলা ও পোলেন থেকে বাঁচতে, বিশেষ করে শীতকালে বা বসন্তকালে ঘরের জানালা-দরজা বন্ধ রাখা একটি ভালো উপায়।
- অ্যালার্জির সমস্যা থাকলে মাস্ক ব্যবহার করা একটি কার্যকর পদক্ষেপ হতে পারে।
২. অ্যালার্জির প্রতিরোধ করা: যদি আপনার অ্যালার্জির প্রবণতা থাকে, তবে তা নিয়ন্ত্রণ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ অ্যালার্জির কারণে নাকের প্রদাহ বাড়ে, যা পলিপাস সৃষ্টি করতে পারে।
- অ্যান্টি-অ্যালার্জিক ওষুধ প্রয়োগ করা যেতে পারে।
- অ্যালার্জি পরীক্ষার মাধ্যমে আপনার শরীরে কোন কোন উপাদানের প্রতি অ্যালার্জি আছে, তা জেনে সেই উপাদানগুলো থেকে নিজেকে দূরে রাখা উচিত।
৩. ধূমপান ও দূষণ এড়িয়ে চলা: ধূমপান এবং বায়ু দূষণ উভয়ই নাসারন্ধ্র ও ফুসফুসের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকারক। এগুলি প্রদাহ বাড়িয়ে নাকের পলিপাস সৃষ্টি করতে পারে। এর থেকে বাঁচতে আপনি নিম্নলিখিত দুটি বিষয় অনুসরণ করতে পারেন:
- ধূমপান সম্পূর্ণরূপে ত্যাগ করুন।
- যদি আপনি বেশি বায়ু দূষণযুক্ত এলাকায় থাকেন, তাহলে বায়ু পরিশোধক ব্যবহার করুন অথবা বাইরে বের হলে মাস্ক পরিধান করুন।
৪. পর্যাপ্ত পানি পান করা: প্রতিদিন যথেষ্ট পরিমাণে জল পান করলে নাসারন্ধ্র শুকিয়ে যাওয়া থেকে রক্ষা পায় এবং শরীরের ভেতরের প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে। এর ফলে নাকে শ্লেষ্মা বা সর্দি জমে যেতে পারে না এবং প্রদাহও কমে আসে।
- প্রতিদিন ৮-১০ গ্লাস পানি পান করুন।
- শুষ্ক আবহাওয়ায় আরো বেশি পানি পান করুন।
নাকের পলিপাস কিভাবে ভালো হয়?
কর্টিকোস্টেরয়েড-যুক্ত ন্যাসাল স্প্রে ব্যবহার করে পলিপাসের আকার কমানো হয় এবং প্রদাহ নিয়ন্ত্রণ করা হয়। তীব্র ক্ষেত্রে কিছুদিনের জন্য মুখে খাওয়ার স্টেরয়েড ব্যবহার করা হয়। গুরুতর বা বারবার ফিরে আসা পলিপাসের জন্য ইনজেকশনের মাধ্যমে এই চিকিৎসা দেওয়া হয়, যা প্রদাহ সৃষ্টিকারী কোষগুলিকে লক্ষ্য করে কাজ করে।
ওষুধে কাজ না হলে বা পলিপাস খুব বড় হলে এন্ডোস্কোপিক সাইনাস সার্জারি-র মাধ্যমে পলিপাসগুলো সরিয়ে ফেলা হয়। মনে রাখবেন চিকিৎসার পরেও পলিপাস আবার ফিরে আসতে পারে, তাই নিয়মিত ফলো-আপ এবং ডাক্তারের পরামর্শ মেনে চলা জরুরি।
এছাড়াও আমরা আজকের এই পোষ্টে বিনা অপারেশনে নাকের পলিপাসের ঘরোয়া চিকিৎসা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করেছি সেগুলো ভালোভাবে পড়ে নিন।
নাকের পলিপাস এর ড্রপ এর নাম
নাক বন্ধ হলে বা অন্য কোনো প্রাথমিক সমস্যার সম্মুখীন হলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে নিচের ড্রপগুলো ব্যবহার করতে পারেন:
আরো পড়ুনঃ দাদ চুলকানি দূর করার ক্রিম এর নাম দেখে নিন
- Oxynex Nasal Drop
- Budesonide
- Xylocon Nasal Drop
- Fluticasone
- Flona Spray
- Mometasone
- Fson Nasal Spray
নাকের পলিপাস এর ওষুধ
নাকের পলিপাসের চিকিৎসায় বিভিন্ন ধরনের ওষুধ ব্যবহার করা হয়। তবে, শুধুমাত্র অ্যান্টি-হিস্টামিন গোত্রের ওষুধগুলো চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়াই সেবন করা যেতে পারে। বাকি অন্য ওষুধ, বিশেষ করে স্টেরয়েড জাতীয় ওষুধ, চিকিৎসকের নির্দেশনা ছাড়া ব্যবহার করলে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা মারাত্মকভাবে ব্যাহত হতে পারে। অ্যান্টি-হিস্টামিন গোত্রের মধ্যে সবচেয়ে কার্যকরী ওষুধ হলো ফেক্সোফেনাডিন, যা সাধারণত ১২০ মিলিগ্রাম মাত্রায় দিনে একটি করে সেবন করতে হয়।
সাধারণ প্রশ্ন ও উত্তর (FAQs)
প্রশ্ন: নাকের পলিপাস কি অপারেশন ছাড়া নিরাময় করা যায়?
উত্তর: হ্যাঁ অবশ্যই। নাকের পলিপাস অপারেশন ছাড়াই নিরাময় করা সম্ভব। তবে, যদি আপনার অবস্থাটি জটিল হয়, তাহলে অপারেশনের প্রয়োজন হতে পারে।
প্রশ্ন: নাকের পলিপাস থেকে কি ক্যান্সার হয়?
উত্তর: নাকের পলিপাস থেকে সাধারণত ক্যান্সার হয় না। তবে, যদি আপনার পলিপাসে দীর্ঘ সময় ধরে সংক্রমণ থাকে এবং আপনি তার সঠিক চিকিৎসা না করান, তাহলে ক্যান্সারের মতো জটিলতা দেখা দিতে পারে।
প্রশ্ন: পলিপাসের জন্য কোন নাকের স্প্রে ভালো?
উত্তর: জনপ্রিয় ওভার-দ্য-কাউন্টার বিকল্পগুলির মধ্যে রয়েছে ফ্লোনেজ, রিনোকর্ট এবং নাসাকর্ট। নাকের স্প্রে সাধারণত নিরাপদ, তবে যেকোনও নতুন গ্রহণের আগে আপনার ডাক্তারের সাথে কথা উচিত।
প্রশ্ন: পলিপাস হলে কি মাথা ব্যাথা হয়?
উত্তর: পলিপগুলি শ্লেষ্মা আটকে রাখতে পারে, যা নাক দিয়ে জল বের হতে বাধা দেয়, যার ফলে ঘন ঘন সাইনাস সংক্রমণ হয়। পলিপগুলি নিজে নিজে ব্যথা করে না, তবে তারা সাইনাস এবং মাথাব্যথার ব্যথার কারণ হতে পারে ।
লেখকের শেষ মতামত
নাকের পলিপাস একটি সাধারণ, তবুও বেশ অস্বস্তিকর সমস্যা। এই সমস্যার সমাধানে অপারেশনের পথ থাকলেও, কিছু সহজ এবং কার্যকর ঘরোয়া পদ্ধতিও এর প্রদাহ কমাতে, শ্বাস-প্রশ্বাসের অস্বস্তি দূর করতে এবং দৈনন্দিন জীবনে স্বস্তি আনতে সাহায্য করে। যেমন, আপনি নাসারন্ধ্র ধৌতকরণ, ভেষজ বাষ্প গ্রহণ, হলুদ ও মধু সেবন, এবং আপেল সিডার ভিনেগার প্রয়োগের মাধ্যমে পলিপাসের লক্ষণগুলো উল্লেখযোগ্যভাবে নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারেন।
তবে, সমস্যাটি গুরুতর মনে হলে অবশ্যই একজন চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। জীবনযাত্রায় সামান্য কিছু পরিবর্তন এনে আপনি দীর্ঘস্থায়ী আরাম পেতে পারেন এবং পলিপাস বারবার ফিরে আসার প্রবণতাও কমাতে পারবেন।