সুগার লেভেল কত হলে ডায়াবেটিস – নরমাল ব্লাড সুগার লেভেল চার্ট

ডায়াবেটিস বা বহুমূত্র রোগ হলো একটি দীর্ঘস্থায়ী বিপাকীয় ব্যাধি যা ইনসুলিন উৎপাদন করতে ব্যর্থ হয়। আপনারা অনেকেই জানতে চান যে খালি পেটে ডায়াবেটিস কত হলে নরমাল।  রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ স্বাভাবিকের থেকে বেশি হলে আমাদের শরীরে ডায়াবেটিস বা বহুমূত্র রোগ দেখা দেয়। ছোট বড় প্রত্যেকটি মানুষেরই এ রোগ হতে পারে। তাই সুগার লেভেল কত হলে ডায়াবেটিস – নরমাল ব্লাড সুগার লেভেল চার্ট সম্পর্কিত বিভিন্ন ধরনের তথ্য নিচে আলোচনা করা হলো।

সুগার লেভেল কত হলে ডায়াবেটিস

ডায়াবেটিস বা বহুমূত্র রোগ হলো এমন একটি রোগ যেখানে এ রোগ নিয়ন্ত্রণে না থাকলে বিভিন্ন ধরনের জটিলতার সৃষ্টি হয়। এসব দীর্ঘমেয়াদী জটিলতার মধ্যে রয়েছে:হৃদরোগ,ডায়াবেটিস নেফ্রোপ্যাথি, ডায়াবেটিস জনিত পায়ের ক্ষত, স্ট্রোক, হার্ট অ্যাটাক,চিন্তাশক্তির লোপ, ইত্যাদি। এ সকল অবস্থা থেকে মুক্তি পেতে ডায়াবেটিস সম্পর্কিত বিভিন্ন ধরনের তথ্য সম্পর্কে জানা প্রয়োজন।

আজকাল ঘরে ঘরে ছেয়ে যাচ্ছে ডায়াবেটিস মতন একটি জটিল রোগ। একবার যদি ডায়াবেটিকস হয় তাহলে সারাজীবন তা পিছু ছাড়ে না এই রোগে মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। তবে এই রোগের কোন সহজ প্রতিকার খুঁজে পাওয়া যায়নি। আগে সময় দেখা যেত যে বয়স্ক মানুষরা বেশি ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হত কিন্তু এখন দেখা যায় শিশু থেকে প্রাপ্তবয়স্ক সবাই ডায়াবেটিস রোগে আক্রান্ত হয়। 

সুগার লেভেল কত হলে ডায়াবেটিস

ডায়াবেটিস হল একটি দীর্ঘস্থায়ী রোগ, যা রক্তে শর্করার মাত্রা অনিয়ন্ত্রিতভাবে বেড়ে যাওয়ার কারণে ঘটে। অনেক মানুষই জানেন না কখন তাদের রক্তের সুগার লেভেল ডায়াবেটিসের পর্যায়ে পৌঁছে যায়। এই অংশে আমরা সুগার লেভেল কত হলে ডায়াবেটিস বিস্তারিত জেনে নিব। 

সুগার লেভেল কত হলে ডায়াবেটিস হবে, এটা নিয়ে অনেকের মনেই একটা বড় প্রশ্ন থাকে। আমি আপনাকে খুব সহজ ভাষায় ব্যাপারটা বুঝিয়ে বলছি। ডায়াবেটিস ধরার জন্য সাধারণত কয়েকটা পরীক্ষার ওপর নির্ভর করা হয়। একেক পরীক্ষার জন্য স্বাভাবিক মাত্রা একেক রকম।

মূলত তিন ধরনের পরীক্ষা করার মাধ্যমে ডায়াবেটিস নির্ণয় হয়:

  • ফাস্টিং ব্লাড সুগার (খালি পেটে) টেষ্ট
  • পোস্ট প্রান্ডিয়াল (ভরা পেটে) টেষ্ট
  • HbA1c (গড় ৩ মাস) টেষ্ট

ফাস্টিং ব্লাড সুগার (খালি পেটে) টেষ্ট: এটা হলো সবচেয়ে সাধারণ পরীক্ষা। রাতে খাওয়ার পর অন্তত ৮ ঘণ্টা কিছু না খেয়ে সকালে খালি পেটে এই পরীক্ষা করা হয়। 

আরো পড়ুনঃ-  দ্রুত মাথা ব্যথা কমানোর উপায় - মাথা ব্যথার কারণ

100 mg/dL এর কম হলে স্বাভাবিক।

100 থেকে 125 mg/dL-এর মধ্যে হলে প্রি-ডায়াবেটিস।

26 mg/dL বা এর বেশি হলে ডায়াবেটিস।

পোস্ট প্রান্ডিয়াল (ভরা পেটে) টেষ্ট: ভাত বা রুটি খাওয়ার ঠিক ২ ঘণ্টা পর এই পরীক্ষা করা হয়।

  • 140 mg/dL-এর কম হলে স্বাভাবিক হবে।
  • 140 থেকে 199 mg/dL-এর মধ্যে হলে প্রি-ডায়াবেটিস ।
  • 200 mg/dL বা এর বেশি হলে ডায়াবেটিস।

HbA1c (গড় ৩ মাস) টেষ্ট: এই পরীক্ষাটা গত দুই-তিন মাসের সুগার লেভেলের একটা গড় হিসাব দেয়

  • 5.7% এর নিচে হলে আপনি সুস্থ।
  • 5.7% থেকে 6.4% এর মধ্যে থাকলে এটা প্রি-ডায়াবেটিস।
  • 6.5% বা তার বেশি হলে ডায়াবেটিস ধরা হবে।

নরমাল ব্লাড সুগার লেভেল চার্ট

নরমাল ব্লাড সুগার লেভেল বোঝার জন্য একটি সহজ চার্ট নিচে দেওয়া হলো। এই চার্টটি বিভিন্ন পরীক্ষার ভিত্তিতে তৈরি করা হয়েছে, যা প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য প্রযোজ্য। মূলত তিন ধরনের পরীক্ষা করার মাধ্যমে ডায়াবেটিস নির্ণয় হয়:

  • খালি পেটে (Fasting): এই পরীক্ষার জন্য অন্তত ৮ ঘণ্টা কিছু না খেয়ে থাকতে হয়।
  • ভরা পেটে (PPBS): এই পরীক্ষাটি খাবার খাওয়ার ঠিক ২ ঘণ্টা পর করা হয়।
  • HbA1c: এই পরীক্ষাটি গত ২-৩ মাসের গড় সুগার লেভেল দেখায়, যা ডায়াবেটিস নির্ণয়ের একটি নির্ভরযোগ্য পদ্ধতি।

সুগার লেভেলের স্বাভাবিক মাত্রাঃ

পরীক্ষা (Test)স্বাভাবিক (Normal)প্রি-ডায়াবেটিস (Prediabetes)ডায়াবেটিস (Diabetes)
ফাস্টিং ব্লাড সুগার (খালি পেটে)99 mg/dL বা তার কম100 – 125 mg/dL126 mg/dL বা তার বেশি
পোস্ট প্রান্ডিয়াল (ভরা পেটে)140 mg/dL বা তার কম140 – 199 mg/dL200 mg/dL বা তার বেশি
HbA1c (গড় ৩ মাস)5.7% এর নিচে5.7% – 6.4%6.5% বা তার বেশি

খালি পেটে ডায়াবেটিস কত হলে নরমাল

খালি পেটে ডায়াবেটিস কত হলে নরমাল, তা নিয়ে অনেকেরই একটা প্রশ্ন থাকে। আমি আপনাকে খুব সহজভাবে এই বিষয়টি বুঝিয়ে বলছি। খালি পেটে রক্তে সুগারের মাত্রা মাপার জন্য যে পরীক্ষা করা হয়, তার নাম ফাস্টিং ব্লাড সুগার টেষ্ট। এই পরীক্ষার জন্য আপনাকে রাতে কিছু না খেয়ে অন্তত ৮ ঘণ্টা থাকতে হবে। সকালে ঘুম থেকে উঠে খালি পেটে আপনার রক্ত পরীক্ষা করা হবে।

আরো পড়ুনঃ-  ঘুম থেকে উঠার পর শরীর ব্যাথা - কি খেলে শরীরের ব্যাথা কমে

আপনার সুগার লেভেল যদি 100 mg/dL-এর কম থাকে, তাহলে চিন্তার কিছু নেই। এটি একটি স্বাভাবিক মাত্রা। আর আপনার সুগার লেভেল যদি 100 mg/dL থেকে 125 mg/dL-এর মধ্যে থাকে, তাহলে এটাকে বলা হয় প্রি-ডায়াবেটিস। এর মানে হলো আপনার শরীরে সুগারের মাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে একটু বেশি, এবং ভবিষ্যতে ডায়াবেটিস হওয়ার ঝুঁকি আছে। 

ভরা পেটে ডায়াবেটিস কত হলে নরমাল

খালি পেটে ডায়াবেটিস কত হলে নরমাল তা আময়া ইতিমধ্যে উপরের অংশে জেনে নিয়েছি এবার আমরা জানব ভরা পেটে ডায়াবেটিস কত হলে নরমাল। ভরা পেটে সুগার মাপার অর্থ হলো, আপনি খাবার খাওয়ার ঠিক ২ ঘণ্টা পর রক্ত পরীক্ষা করবেন। এই পরীক্ষাটার নাম পোস্টপ্র্যান্ডিয়াল ব্লাড সুগার।

  • 140 mg/dL-এর কম স্বাভাবিক।
  • 140 থেকে 199 mg/dL হলে প্রি-ডায়াবেটিস। 
  • 200 mg/dL অথবা তার বেশি থাকলে ডায়াবেটিস। 

নবজাতকের ডায়াবেটিস কত হলে নরমাল 

নবজাতকের ক্ষেত্রে ডায়াবেটিস বা সুগারের মাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি হওয়াটা কিন্তু একটু আলাদা ব্যাপার। বড়দের মতো এখানে শুধু একটি সুনির্দিষ্ট মাপকাঠি নেই। সাধারণত, একজন সুস্থ নবজাতকের রক্তের গ্লুকোজ বা সুগারের মাত্রা 40 mg/dL থেকে 100 mg/dL-এর মধ্যে থাকে। 

তবে, এটি নির্ভর করে বাচ্চার ওজন, বয়স এবং অন্যান্য শারীরিক অবস্থার ওপর। জন্মের পর প্রথম কয়েক ঘণ্টায় এই মাত্রা একটু ওঠানামা করতে পারে, যা খুবই স্বাভাবিক। নবজাতকের যদি খুব বেশি সুগার লেভেল থাকে, তবে তাকে নিওনেটাল ডায়াবেটিস বলা হয়। এর কয়েকটি কারণ থাকতে পারে:

  • জেনেটিক কারণে
  • প্যানক্রিয়াসের সমস্যা থাকলে
  • মায়ের ডায়াবেটিস থাকলে

নবজাতকের ক্ষেত্রে ডায়াবেটিস নির্ণয় এবং চিকিৎসা দুটোই খুব সংবেদনশীল বিষয়। তাই, এই ধরনের কোনো সন্দেহ হলে দেরি না করে অবশ্যই একজন নবজাতক বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া উচিত। তারাই রক্তের সুগার পরীক্ষা করে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন।

গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিস কত হলে নরমাল

গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিস নির্ণয়ের ব্যাপারটা সাধারণ সময়ের চেয়ে একটু ভিন্ন। কারণ, এই সময়ে শরীরের হরমোনের পরিবর্তন হয়, যা সুগারের মাত্রার ওপর প্রভাব ফেলে। তাই গর্ভবতী নারীদের জন্য কিছু নির্দিষ্ট নিয়ম আছে। সাধারণত, গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিস আছে কি না, তা জানতে দুই ধরনের পরীক্ষা করা হয়:

আরো পড়ুনঃ-  কীভাবে লম্বা হওয়া যায় - লম্বা হওয়ার লক্ষন

গ্লুকোজ স্ক্রিনিং টেস্ট: এটা গর্ভাবস্থার ২৪ থেকে ২৮ সপ্তাহের মধ্যে করা হয়। এই পরীক্ষার জন্য আপনাকে একটি মিষ্টি পানীয় খেতে দেওয়া হয়। এর এক ঘণ্টা পর আপনার রক্ত পরীক্ষা করা হয়। মাত্রা 140 mg/dL-এর কম হলে স্বাভাবিক। 

ওরাল গ্লুকোজ টলারেন্স টেস্ট: এই পরীক্ষাটি আরও বিস্তারিত। এর জন্য আপনাকে প্রথমে খালি পেটে রক্ত দিতে হবে। এরপর আপনাকে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ গ্লুকোজ পানীয় পান করতে দেওয়া হবে। এরপর ১ ঘণ্টা, ২ ঘণ্টা এবং ৩ ঘণ্টা পর আবারও রক্ত পরীক্ষা করা হবে।

ডাক্তাররা সাধারণত এই পরীক্ষার ফলাফল দেখে গর্ভাবস্থার ডায়াবেটিস আছে কি না তা নিশ্চিত করেন। নিচে কিছু সাধারণ মান দেওয়া হলো:

  • খালি পেটে: 95 mg/dL বা তার কম।
  • ১ ঘণ্টা পর: 180 mg/dL বা তার কম।
  • ২ ঘণ্টা পর: 155 mg/dL বা তার কম।
  • ৩ ঘণ্টা পর: 140 mg/dL বা তার কম।

যদি উপরের যেকোনো একটি বা একাধিক মান বেশি হয়, তাহলে গর্ভকালীন ডায়াবেটিস ধরা হয়। তবে, গর্ভকালীন ডায়াবেটিস ধরা পড়লে ভয় পাওয়ার কিছু নেই। ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী চলাফেরা, খাদ্যাভ্যাস এবং প্রয়োজনে ইনসুলিন ইনজেকশন নিয়ে সহজেই এটি নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব। এতে মা ও শিশু দুজনেই সুস্থ থাকবে।

লেখকের শেষ মতামত

প্রিয় পাঠক আপনারা এত সময় জেনে গেছেন ব্লাড সুগার কত হলে ডায়াবেটিস হয় এছাড়া নরমাল ব্লাড সুগার লেভেল চার্ট, ভরা পেটে ও খালি পেটে ডায়াবেটিস কত হলে নরমাল বিভিন্ন ধরনের তথ্য সম্পর্কে আপনাদের জানা হয়ে গেছে। আপনি যদি আমাদের পুরো পোস্টটা পড়ে থাকেন তাহলে ডায়াবেটিক সম্পর্কে আপনি বিভিন্ন ধরনের তথ্য জানতে পারবেন এবং তা আপনার অনেক উপকারে লাগবে।

আমি সহ আমার টিম প্রতিনিয়ত কাজ করি অনলাইন জগতে বিভিন্ন তথ্য প্রদানের মাধ্যমে সবার জ্ঞান ও দক্ষতা বৃদ্ধিতে। আমাদের সম্পর্কে আপনার কোন প্রশ্ন বা মতামত প্রদান করতে আমাদের যোগাযোগ পেইজ ব্যবহার করুন অথবা নিচে কমেন্ট করুন।

Leave a Comment