প্রতিটা সন্তানের মা-বাবারা চাই যে তাদের সন্তান সুস্থ ও নিরাপদ থাকুক। আর বাচ্চা জন্ম নেওয়া পরে টিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের দেশের সরকার শিশুদের জন্য বিভিন্ন ধরনের টিকা প্রদান ব্যবস্থা গ্রহন করে থাকে। যা শিশুদের বিভিন্ন রোগ বালাই থেকে সুরক্ষা প্রদান করে। টিকা শিশুদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় এবং তাদের ভবিষ্যতের স্বাস্থ্য নিশ্চিত করে।
প্রতিটি অভিভাবকের জন্য বাচ্চাদের সরকারি টিকার তালিকা সম্পর্কে জানা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। জন্মের পর শিশুর বিসিজি (BCG), পোলিও (OPV) এবং হেপাটাইটিস বি নবজাতক জীবনের প্রথম কয়েকদিনের মধ্যেই দেওয়া হয় বলে একে নবজাতক শিশুর প্রথম টিকা বলা হয়।
এগুলো টিবি, পোলিও এবং হেপাটাইটিসের মত মারাত্মক রোগের বিরুদ্ধে প্রাথমিক সুরক্ষা দেয়।
এরপর নির্দিষ্ট সময় পরপর শিশুর বয়স অনুযায়ী ডিপথেরিয়া, হুপিং কাশি, টিটেনাস, হাম, রুবেলা, মেনিনজাইটিসসহ আরও বিভিন্ন রোগের টিকা দেওয়া হয়। প্রতিটি টিকার নির্দিষ্ট কার্যকারিতা এবং প্রয়োজনীয়তা রয়েছে, যা শিশুর বিভিন্ন বয়সে বিভিন্ন রোগের প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে তোলে।
টিকা কি ও কেন প্রয়োজন
টিকা হলো একটি প্রতিরোধক পদার্থ যা দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। বাচ্চাদের শরীরে বিভিন্ন জীবাণু, ভাইরাস, ও ব্যাকটেরিয়া আক্রমণ করতে পারে। টিকা সেই আক্রমণ থেকে বাচ্চাদের রক্ষা করতে সাহায্য করে। এটি বাচ্চাদের সুস্থ ও সুরক্ষিত রাখতে অপরিহার্য।
টিকা বাচ্চাদের স্বাস্থ্য রক্ষায় একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এটি বিভিন্ন গুরুতর রোগ প্রতিরোধ করে। বাচ্চাদের শরীরকে রোগের বিরুদ্ধে লড়াই করার ক্ষমতা দেয়।টিকা বাচ্চাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সহায়ক। এটি দেহকে জীবাণু ও ভাইরাস থেকে সুরক্ষিত রাখে। টিকা গ্রহণের মাধ্যমে বাচ্চাদের স্বাস্থ্য ভালো থাকে।
নবজাতকের টিকার তালিকা
নবজাতকের টিকা শিশুর রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে তুলতে সাহায্য করে এবং বিভিন্ন মারাত্মক সংক্রামক রোগ থেকে সুরক্ষা প্রদান করে। বাংলাদেশ সরকারের এক্সপ্যান্ডেড প্রোগ্রাম অন ইমিউনাইজেশন (EPI) অনুযায়ী, নবজাতক থেকে ১৫ মাস বয়স পর্যন্ত শিশুদের বিভিন্ন টিকা দেওয়া হয়।
- যক্ষ্মা (টিবি)
- ডিপথেরিয়া, হুপিংকাশি, ধনুষ্টংকার, হেপাটাইটিস-বি, হিমোফাইলাস ইনফ্লুয়েঞ্জা-বি
- নিউমোকক্কালজনিত নিউমোনিয়া
- পোলিওমাইলাইটিস (পোলিও)
- হাম ও রুবেলা
নিচে নবজাতকের টিকার তালিকা ও নির্ধারিত সময় অনুযায়ী টিকা গ্রহণের বিস্তারিত তথ্য দেওয়া হলো।
১. যক্ষ্মা (টিবি)
- টিকার নাম: বিসিজি (BCG)
- ডোজ: ০.০৫ এমএল
- ডোজের সংখ্যা: ১
- ডোজের মধ্যে বিরতি: নেই
- টিকা শুরুর সঠিক সময়: জন্মের পর থেকে
- টিকাদানের স্থান: বাম বাহুর উপরের অংশ
- প্রয়োগ পথ: চামড়ার মধ্যে
২. ডিপথেরিয়া, হুপিংকাশি, ধনুষ্টংকার, হেপাটাইটিস-বি, হিমোফাইলাস ইনফ্লুয়েঞ্জা-বি
- টিকার নাম: পেন্টাভ্যালেন্ট টিকা (ডিপিটি, হেপাটাইটিস-বি, হিব)
- ডোজ: ০.৫ এমএল
- ডোজের সংখ্যা: ৩
- ডোজের মধ্যে বিরতি: ৪ সপ্তাহ
- টিকা শুরুর সঠিক সময়: ৬ সপ্তাহ, ১০ সপ্তাহ, ১৪ সপ্তাহ
- টিকাদানের স্থান: বাম উরুর মধ্যভাগের বহিরাংশ
- প্রয়োগ পথ: মাংসপেশীতে
৩. নিউমোকক্কালজনিত নিউমোনিয়া
- টিকার নাম: পিসিভি (PCV)
- ডোজ: ০.৫ এমএল
- ডোজের সংখ্যা: ৩
- ডোজের মধ্যে বিরতি: ৪/৮ সপ্তাহ
- টিকা শুরুর সঠিক সময়: ৬ সপ্তাহ, ১০ সপ্তাহ, ১৪ সপ্তাহ
- টিকাদানের স্থান: ডান উরুর মধ্যভাগের বহিরাংশ
- প্রয়োগ পথ: মাংসপেশীতে
৪. পোলিওমাইলাইটিস (পোলিও)
ক. টিকার নাম: ওপিভি (OPV)
- ডোজ: ২ ফোঁটা
- ডোজের সংখ্যা: ৩
- ডোজের মধ্যে বিরতি: ৪ সপ্তাহ
- টিকা শুরুর সঠিক সময়: ৬ সপ্তাহ, ১০ সপ্তাহ, ১৪ সপ্তাহ
- টিকাদানের স্থান: মুখে
- প্রয়োগ পথ: মুখে
খ. টিকার নাম: আইপিভি (IPV)
- ডোজ: ০.৫ এমএল
- ডোজের সংখ্যা: ১
- ডোজের মধ্যে বিরতি: নেই
- টিকা শুরুর সঠিক সময়: ১৪ সপ্তাহ
- টিকাদানের স্থান: ডান উরুর মধ্যভাগের বহিরাংশ
- প্রয়োগ পথ: মাংসপেশীতে
৫. হাম ও রুবেলা
ক. টিকার নাম: এমআর টিকা
- ডোজ: ০.৫ এমএল
- ডোজের সংখ্যা: ১
- ডোজের মধ্যে বিরতি: নেই
- টিকা শুরুর সঠিক সময়: ৯ মাস বয়স পূর্ণ হলে
- টিকাদানের স্থান: ডান উরুর মধ্যভাগের বহিরাংশ
- প্রয়োগ পথ: চামড়ার নিচে
খ. টিকার নাম: হামের টিকা (২য় ডোজ)
- ডোজ: ০.৫ এমএল
- ডোজের সংখ্যা: ১
- ডোজের মধ্যে বিরতি: নেই
- টিকা শুরুর সঠিক সময়: ১৫ মাস বয়স পূর্ণ হলে
- টিকাদানের স্থান: বাম উরুর মধ্যভাগের বহিরাংশ
- প্রয়োগ পথ: চামড়ার নিচে
নিয়মিত টিকাদান কর্মসূচির মাধ্যমে শিশুদের মারাত্মক সংক্রামক রোগ থেকে সুরক্ষিত রাখা সম্ভব। প্রতিটি শিশুর যথাসময়ে টিকা গ্রহণ নিশ্চিত করা গুরুত্বপূর্ণ।
সরকারি টিকার তালিকা নিম্নে ছবিতে দেখে নিতে পারেন👇
সাধারণত বেসরকারিভাবেও কিন্তু টিকার তালিকা হয়ে থাকে। বেসরকারি টিকার তালিকা নিম্নে ছবিতে দেখে নিতে পারেন👇
বাচ্চাদের সরকারি টিকার তালিকা
বাচ্চাদের সঠিক স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য টিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সরকারি টিকা প্রোগ্রাম বাচ্চাদের জন্য বিভিন্ন ধরনের টিকা প্রদান করে। এই টিকাগুলি বাচ্চাদের বিভিন্ন রোগের বিরুদ্ধে সুরক্ষা প্রদান করে। নিচে বিভিন্ন টিকার নাম এবং কাজ সম্পর্কে বিস্তারিত তুলে ধরা হলঃ
বিভিন্ন টিকার নাম
- বিসিজি (BCG)
- পোলিও (Polio)
- ডিপিটি (DPT)
- হেপাটাইটিস বি (Hepatitis B)
- হিব (Hib)
- রোটা ভাইরাস (Rotavirus)
- এমএমআর (MMR)
প্রতি টিকার কাজ
- বিসিজি (BCG)- যক্ষ্মা রোগের বিরুদ্ধে সুরক্ষা প্রদান করে।
- পোলিও (Polio)- পোলিও ভাইরাসের বিরুদ্ধে সুরক্ষা প্রদান করে।
- ডিপিটি (DPT)- টিটেনাস, পার্টুসিস এবং ডিপথেরিয়া র বিরুদ্ধে সুরক্ষা প্রদান করে।
- হেপাটাইটিস বি – Hepatitis B ভাইরাসের প্রতিরোধ করে।
- হিব (Hib)- হিমোফিলাস ইনফ্লুয়েঞ্জা টাইপ বি রোগের বিরুদ্ধে সুরক্ষা প্রদান করে।
- রোটা ভাইরাস (Rotavirus)- রোটা ভাইরাসের কারণে ডায়রিয়ার বিরুদ্ধে সুরক্ষা প্রদান করে।
- এমএমআর (MMR)- রুবেলা, মাম্পস এবং মিজলস এর বিরুদ্ধে সুরক্ষা প্রদান করে।
নবজাতক শিশুর প্রথম টিকা
নবজাতকের টিকা তার স্বাস্থ্য সুরক্ষা ও রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। জন্মের পর থেকেই শিশুর শরীর বিভিন্ন সংক্রামক রোগের ঝুঁকিতে থাকে, যা প্রতিরোধের জন্য নির্ধারিত সময়ে টিকা নেওয়া প্রয়োজন।
বাংলাদেশ সরকার এক্সপ্যান্ডেড প্রোগ্রাম অন ইমিউনাইজেশন (EPI)-এর আওতায় নবজাতকদের জন্য প্রাথমিক পর্যায়ে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ টিকা প্রদান করে। নিচে নবজাতকের প্রথম টিকা সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য তালিকা আকারে তুলে ধরা হলো:
নবজাতকের এই টিকাগুলো শিশুর প্রাথমিক রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে তুলতে, সংক্রামক রোগ প্রতিরোধ করতে এবং শিশুমৃত্যুর হার কমাতে সাহায্য করে। তাই, নবজাতকের জন্মের পর যত দ্রুত সম্ভব নিকটস্থ স্বাস্থ্যকেন্দ্র বা হাসপাতালে গিয়ে প্রথম টিকা গ্রহণ নিশ্চিত করুন।
শিশুর টিকা দেওয়ার সময়সূচী
বাচ্চাদের টিকার সময়সূচী সঠিকভাবে মেনে চলা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এটি বাচ্চাদের বিভিন্ন রোগ থেকে সুরক্ষিত রাখে। জন্ম থেকে বিভিন্ন বয়সে, বাচ্চাদের নির্দিষ্ট সময়ে কিছু গুরুত্বপূর্ণ টিকা দেওয়া হয়। এখানে আমরা সেই সময়সূচীটি আলোচনা করব।
জন্ম থেকে ৬ মাস
বাচ্চা জন্মের পর প্রথম ৬ মাসে কিছু গুরুত্বপূর্ণ টিকা দেওয়া হয়।
বয়স | টিকার নাম |
জন্মের সময় | বিসিজি, ওপিভি-০, হেপাটাইটিস বি-১ |
৬ সপ্তাহ | ডিপিটি-১, ওপিভি-১, হেপাটাইটিস বি-২, হিব-১, রোটাভাইরাস-১ |
১০ সপ্তাহ | ডিপিটি-২, ওপিভি-২, হিব-২, রোটাভাইরাস-২ |
১৪ সপ্তাহ | ডিপিটি-৩, ওপিভি-৩, হিব-৩ |
৬ মাস থেকে ১ বছর
ছয় মাসের পর থেকে এক বছর বয়সে, বাচ্চাদের কিছু অতিরিক্ত টিকা দেওয়া হয়।
বয়স | টিকার নাম |
৬ মাস | হেপাটাইটিস বি-৩ |
৯ মাস | এমএমআর-১ |
১ বছর ও তার পর
এক বছর বয়সের পর, কিছু অতিরিক্ত টিকা দেওয়া হয়।
বয়স | টিকার নাম |
১৫ মাস | এমএমআর-২ |
১৮ মাস | ডিপিটি বুস্টার-১, ওপিভি বুস্টার-১ |
৫ বছর | ডিপিটি বুস্টার-২ |
১০ বছর | টিট-১ |
১৬ বছর | টিট-২ |
শিশু জন্মের কতদিন পর টিকা দিতে হয়
নবজাতকের টিকা তার সুস্থতা ও রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা গঠনের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সাধারণত, শিশুর জন্মের প্রথম ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই প্রথম টিকা দেওয়া হয়।
এরপর নির্দিষ্ট সময় অনুযায়ী অন্যান্য টিকা গ্রহণ করতে হয়। বাংলাদেশ সরকার এক্সপ্যান্ডেড প্রোগ্রাম অন ইমিউনাইজেশন (EPI)-এর মাধ্যমে নবজাতক থেকে শুরু করে ১৫ মাস পর্যন্ত নির্দিষ্ট সময়ে টিকা প্রদান করে।
জন্মের প্রথম ২৪ ঘণ্টার মধ্যে নবজাতককে বিসিজি (BCG), হেপাটাইটিস বি (Hepatitis B), এবং ওরাল পোলিও (OPV-0) টিকা দেওয়া হয়।
এরপর, ৬ সপ্তাহ, ১০ সপ্তাহ, ১৪ সপ্তাহ, এবং ৯ মাস বয়সে পর্যায়ক্রমে অন্যান্য টিকা প্রদান করা হয়। ৬, ১০, ও ১৪ সপ্তাহ বয়সে ডিপথেরিয়া, হুপিং কাশি, ধনুষ্টংকার (DTP), ইনঅ্যাকটিভেটেড পোলিও (IPV), হিব , এবং পেন্টাভ্যালেন্ট টিকা দেওয়া হয়।
এরপরে আপনার বাচ্চার পরবর্তী ডোজ ও টিকা সময়সূচি ভালোমতো মেনে চলা খুবই জরুরি। কেননা আপনি যদি আপনার শিশুকে সঠিক সময়ে টিকা না দেন তাহলে সংক্রামক রোগের ঝুঁকি বেড়ে যেতে পারে। তাই, আমরা যারা মা বাবা রয়েছি তাদের প্রত্যেকের উচিত শিশুর জন্মের পরপরই টিকা কার্ড সংগ্রহ করে নির্ধারিত সময় অনুযায়ী শিশুর সকল টিকা গ্রহণ নিশ্চিত করুন।
শিশুদের মোট কয়টি টিকা দিতে হয়
নবজাতক শিশুদের মূলত ৯টি মারাত্মক রোগের টিকা প্রদান করা হয়। অনেক অভিভাবকরা টিকা দিয়ে নেই কিন্তু তারা সঠিক নিয়মে টিকা না দেওয়ার কারণে বাচ্চাদের রোগ জীবাণু লেগেই থাকে।
শিশুদের মোট ৯টি টিকা প্রদান করতে হয় যথাঃ
- যক্ষ্মা
- পোলিও-মাইটিস
- ডিপথেরিয়া
- হুপিংকাশি
- ধনুষ্টংকার
- হিমোফাইলাস-বি
- ইনফ্লুয়েঞ্জা
- হেপাটাইটিস-বি
- নিউমোকক্কাল নিউমোনিয়া
- হাম ও রুবেলা
- ধনুষ্টংকার
টিকা দিতে ভুলে গেলে কী করবেন
নির্দিষ্ট সময় শিশুর টিকাদানের জন্য বেশিরভাগ অভিভাবকরা কঠিন মনে হতে পারে। অনেকে এতটাই ব্যস্ততার মধ্যে থাকেন যে তারা যদি যদি তাদের বাচ্চার কোনো টিকা দিতে ভুলে যায় তবে সেটা তাদের কাছে অস্বাভাবিক কিছু নয়। তাই হয়তো তারা জানতে চাই যে টিকা দিতে ভুলে গেলে করণীয় কি?
শিশুরোগ বিশেষজ্ঞের সাথে যোগাযোগ: প্রথমে আপনাকে একটি স্বাস্থ্যকেন্দ্রে যোগাযোগ করতে হবে এবং তাদেরকে টিকাদানের তারিখ জানিয়ে দিতে হবে। বিশেষজ্ঞরা আপনাকে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দিয়ে দিবেন যে আপনার শিশুকে কখন কোন টিকা দিয়ে হবে।
ক্যাচ-আপ ডোজ সম্পন্ন করুন: অনেক টিকার ক্ষেত্রে “ক্যাচ-আপ” ডোজ দেওয়ার সুযোগ থাকে, যা মিস হওয়া টিকার প্রতিস্থাপন হিসেবে কাজ করে। এই ক্যাচ-আপ ডোজগুলো নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যেই দেওয়া উচিত যাতে শিশুর প্রতিরোধ ক্ষমতা পুনরায় স্থাপিত হয়।
পরবর্তী টিকার সময়সূচী নির্ধারণ করুন: ভুলে যাওয়া টিকাগুলি দেয়ার জন্য পরবর্তী সময়সূচী নির্ধারণ করুন এবং তা একটি নোট বা স্মারক হিসেবে সংরক্ষণ করুন। এভাবে আপনি পরবর্তী ডোজগুলি সঠিক সময়ে দিতে পারবেন।
টিকার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া
টিকা দেওয়ার পর অনেক বাচ্চা কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া অনুভব করে। এটি সাধারণ এবং অস্থায়ী। তবে, কিছু ক্ষেত্রে গুরুতর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হতে পারে। এই ব্লগ পোস্টে আমরা টিকার সাধারণ ও গুরুতর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নিয়ে আলোচনা করব।
সাধারণ পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া
টিকা দেওয়ার পর বেশিরভাগ বাচ্চা সাধারণ পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া অনুভব করে। এগুলো সাধারণত নিজে থেকেই চলে যায়। এই পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার মধ্যে অন্তর্ভুক্ত:
- হালকা জ্বর
- ইনজেকশনের স্থানে ব্যথা বা লালচে ভাব
- হালকা ফোলা
- ক্লান্তি
- মাথাব্যথা
এই লক্ষণগুলি সাধারণত ২-৩ দিনের মধ্যে চলে যায়। বাচ্চাদের অতিরিক্ত বিশ্রাম এবং প্রচুর পানি পান করতে দিন।
গুরুতর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া
কিছু ক্ষেত্রে, টিকা দেওয়ার পর গুরুতর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে। এগুলো বিরল হলেও, এগুলিকে গুরুত্ব সহকারে নেওয়া উচিত। গুরুতর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার মধ্যে অন্তর্ভুক্ত:
- অতিরিক্ত জ্বর
- শ্বাসকষ্ট
- অনিয়মিত হার্টবিট
- অতিরিক্ত ফোলা বা তীব্র ব্যথা
- মূর্ছা যাওয়া
এই লক্ষণগুলি দেখা দিলে, অবিলম্বে ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করুন। দ্রুত চিকিৎসা বাচ্চার স্বাস্থ্যের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
টিকা দেওয়ার প্রস্তুতি
টিকা দেওয়ার প্রস্তুতি একটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ। এটি বাচ্চাদের সুস্থতা এবং সুরক্ষার জন্য অপরিহার্য। সঠিকভাবে প্রস্তুতি নেওয়া হলে, পুরো প্রক্রিয়াটি সহজ ও নির্বিঘ্ন হয়। এখানে কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে আলোচনা করব যা টিকা দেওয়ার প্রস্তুতির সময় মাথায় রাখা উচিত
প্রয়োজনীয় নথি
প্রথমে, প্রয়োজনীয় নথি প্রস্তুত রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। নিচের নথিগুলো একত্রিত করুন:
- বাচ্চার জন্ম সনদ
- স্বাস্থ্য কার্ড
- পূর্ববর্তী টিকার রেকর্ড
পরিবারের প্রস্তুতি
পরিবারের প্রস্তুতি নিশ্চিত করতে কিছু পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি। বাচ্চাকে টিকা দেওয়ার জন্য মানসিকভাবে প্রস্তুত করুন।
- বাচ্চাকে আরামদায়ক পোশাক পরানো
- পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিশ্চিত করা
- টিকার স্থান পরিষ্কার রাখতে হবে।
- প্রয়োজনে ডাক্তার দ্বারা নির্ধারিত ব্যথানাশক ওষুধ দিতে পারেন।
- জ্বর এলে ঠাণ্ডা পানির কাপড় দিয়ে শরীর মুছুন।
খাদ্য ও বিশ্রাম
বাচ্চাকে টিকা দেওয়ার পরে তার খাবার এবং বিশ্রামের দিকে যত্ন নেওয়া উচিত যেমন
খাদ্য | বিশ্রাম |
পুষ্টিকর খাবার প্রদান করুন। | যথেষ্ট ঘুম নিশ্চিত করুন। |
ফলের রস ও পানীয় দিন। | অতিরিক্ত শারীরিক পরিশ্রম এড়িয়ে চলুন। |
দুধ এবং দুধজাত খাবার দিন। | শান্তিপূর্ণ পরিবেশে বিশ্রাম দিন। |
টিকা দেওয়ার পর বাচ্চার যত্ন নেওয়ার জন্য এই বিষয়গুলো মেনে চলা উচিত। এতে তাদের সুস্থতা নিশ্চিত হবে এবং তারা দ্রুত সেরে উঠবে।
লেখকের শেষ মতামত
এই ছিল আজকের নবজাতকের টিকার তালিকা এবং বাচ্চাদের সরকারি টিকার তালিকায় সম্পর্কিত সকল তথ্য সংক্ষেপে বিস্তারিত জানাতে চেষ্টা করেছি। এর বাইরেও আপনার কোনো প্রশ্ন থাকলে তা কমেন্ট করে জানাবেন। আশা করি নবজাতকের টিকার তালিকা জানতে পেরেছেন।
এরপরও বুঝতে অসুবিধা হলে কমেন্ট করে জানাবেন। আর্টিকেলটি আপনার পরিচিতদের মাঝে শেয়ার করে দিতে পারেন। এতে করে তারাও নবজাতকের টিকার তালিকা সম্পর্কে জানতে পারবে।