ক্যান্সার একটি মারাত্মক রোগ যা প্রতি বছর হাজার হাজার মানুষের মৃত্যুর কারন হয়ে থাকে। আমরা সকলেই জানতে চাই যে ক্যান্সারের কারণ কী এবং কীভাবে এটি হওয়ার ঝুঁকি কমানো যায়। তাহলে চলুন শুরু করা যাক ক্যান্সার রোগীর মৃত্যুর লক্ষণ এবং ক্যান্সার হলে কতদিন বাঁচে।
ক্যান্সার হলো একটি মারাত্বক রোগ হিসেবে পরিচিত ব্যধি, যা আমাদের দেশে বর্তমানে অনেক বেড়ে গেছে। ফলে নানা বয়সের মানুশের মাঝে এই ক্যান্সার দেখা দিয়েছে। জানা যায় প্রায় ২০০ এর বেশি রকমের ক্যান্সার রয়েছে। এর মধ্যে আমরা সামান্য কিছু ক্যান্সার সম্পর্কে জানতে পারি।
আমাদের আজকের পোস্টের বিষয় হলো ক্যান্সার রোগীর মৃত্যুর লক্ষণ এবং ক্যান্সার হলে কতদিন বাঁচে। ক্যান্সার থেকে মুক্তির উপায় কি হতে পারে। আবার ক্যান্সার রোগীর খাবার তালকা কেমন হওয়া জরুরী ইত্যাদি বিষয়ে। তাহলে চলুন, আর বেশি কথা না বাড়িয়ে ক্যান্সার কেন হয় তা জেনে নেওয়া যাক।
ক্যান্সার কেন হয়
ক্যান্সার কেন হয় বা ক্যান্সার কিভাবে হয় এ বিষয়টি জানান জরুরী। আমি যদি জেনে রাখি ক্যান্সার কিভাবে হয় এবং ক্যান্সার কেন হয় তাহলে সেই সকল বিষয়গুলোর প্রতি আমরা নজর রাখতে পারব।
মানুষের শরীরে অনেক কষ দ্বারা গঠিত এবং এই কোষগুলো প্রতিনিয়ত বিভাজিত হতে থাকে। এবং এর ওপর মানব শরীর নিয়ন্ত্রণ রাখেন। কোন কারনে যদিও নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে যায় তখন বিশেষ কোন অঙ্গে অস্বাভাবিকভাবে কোষগুলো বৃদ্ধি পেতে থাকে তখন তাকে ক্যান্সার বলা হয়।
ক্যান্সার মূলত জিনের পরিবর্তনের ফলে হয়ে থাকে। জেনেটিক পরিবর্তন স্বাভাবিকভাবে হয় আবার অতিরিক্ত ধূমপান বা মাদকাসক্ত হাওয়া, অতি বেগুনি রশ্মি ইত্যাদি কারণে হতে পারে।
ক্যান্সার রোগের লক্ষণ
ক্যান্সার কিভাবে হয় বা ক্যান্সার কেন হয় এ বিষয়ে একটা প্রাথমিক ধারণা পেয়েছি। এবার জানা প্রয়োজন ক্যান্সার এর লক্ষণ বা ক্যান্সার রোগের লক্ষণ গুলো কি কি হতে পারে। নিম্নে এ বিষয়ে আলোচনা করা হলো।
- অনেক বেশি ক্লান্ত অনুভব করা
- স্বাভাবিকের চেয়ে ক্ষুধা কমে যাওয়া
- শরীরের কোন কোন জায়গায় দলা বা চাকা দেখা যাওয়া
- দীর্ঘ সময় ধরে কাশি বা গলা ব্যথা থাকলে
- স্বাভাবিকের চেয়ে মলত্যাগে পরিবর্তন আসলে
- জ্বর হওয়া কিংবা রাতে ঠান্ডা লাগা বা ঘেমে যাওয়া
- ত্বকে অনেক রকমের পরিবর্তন দেখা যাবে
- রক্তপাত অতিমাত্রায় বেড়ে যাওয়া
- হঠাৎ করে ওজন কমতে থাকা
- দীর্ঘদিন কোন জায়গায় ব্যথা থাকলে
এছাড়াও আরও অনেক কারণ রয়েছে যেগুলো ফলে বোঝা যায় ক্যান্সার হচ্ছে। এরমধ্যে পা ফুলে যাওয়া বা শরীরের আকৃতি হঠাৎ করে পরিবর্তন হয়ে যাওয়া। এছাড়াও আরও অনেক কারণ থাকে যেগুলো আসলে বোঝা যায় না। ক্যান্সার রোগের লক্ষণ অনেকক্ষেত্রেই বোঝা যায় না।
ক্যান্সার রোগীর মৃত্যুর লক্ষণ
ক্যান্সার রোগীরা প্রায়ই তাদের অসুস্থতার সাথে কঠিন লড়াই করেন, এবং দুর্ভাগ্যবশত, কেউ কেউ শেষ পর্যন্ত রোগের কাছে হার মানতে পারেন। ক্যান্সার রোগীর মৃত্যুর আগে লক্ষণগুলি চিনতে পারা প্রিয়জন এবং যত্নশীলদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। এতে শেষ সময়ে প্রয়োজনীয় সহায়তা প্রদান করা সম্ভব হয়।
ক্যান্সার রোগীর মৃত্যুর লক্ষণ হিসেবে যেসকল কারণগুলোকে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়। অর্থাৎ ক্যান্সারে আক্রান্ত একজন রোগীর ভিতর এই ধরনের উপসর্গ থাকলে বুঝে নিতে হয় তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়েছে। সেই লক্ষণগুলো নিম্নে উল্লেখ করা হলোঃ
- কথা বলার সময় মুখ জিহ্বার প্রতিক্রিয়া কমে যাবে।
- দৃষ্টিশক্তি কমে আসবে।
- মাথা সামনের দিকে নুয়ে আসে।
- কন্ঠনালী থেকে ঘরঘর আওয়াজ আসে।
- কণ্ঠনালীর মধ্য দিয়ে গরগর করে শব্দ হওয়া
- মাঝেমধ্যে চোখের পাতা বন্ধ করতে না পারা
- রোগীর মাথা সামনের দিকে কিছুটা নিয়ে আসা
- মানুষ হাঁসার সময় নাক থেকে ঠোঁটের দুই কোন পর্যন্ত যে দাগ পরে অনেক ভাজা পড়া
- কথা বলার সময় মুখ ও জিহবা সঠিকভাবে কাজ না করা
- আলোর কমবেশি তে চোখের পিউলির কোন ধরনের প্রতিক্রিয়া না করা
- রক্তক্ষরণ হওয়া
- শারীরিক শক্তি একেবারে হ্রাস পাওয়া
- মাত্রা অতিরিক্ত এবং দীর্ঘমেয়াদি জ্বর অনুভূত হওয়া
- রাতে অত্যাধিক ঘাম নির্গত হওয়া
- কথা বলার সশয় মুখ-জিহ্বার প্রতিক্রিয়া কমে যাওয়া।চোখের পাতা বন্ধ করতে না পারা ।
- ঘন ঘন জ্ঞান হারানো
ক্যান্সার রোগীদের জীবনপ্রবাহের শেষ পর্যায়ে শারীরিক শক্তি এবং কর্মক্ষমতা কমে যাওয়া একটি সাধারণ লক্ষণ। রোগীরা ধীরে ধীরে আরও ক্লান্ত হয়ে পড়তে পারেন এবং দৈনন্দিন কাজগুলি সম্পন্ন করতে কষ্ট অনুভব করেন। এ সময় ক্ষুধামন্দা দেখা দিতে পারে এবং ওজন কমে যেতে পারে, কারণ শরীর তখন পুষ্টি শোষণ করতে সক্ষম থাকে না।
ক্যান্সার রোগীর মৃত্যুর লক্ষণ বা ক্যান্সারে আক্রান্ত রোগীর অবস্থার অবনতি হচ্ছে কখন বুঝবেন। উপরে উল্লেখিত বিষয়গুলো যখন একজন রোগীর মধ্যে দেখতে পাবেন তখন বুঝে নেবেন রোগীর অবস্থা খুব বেশি ভালো নাই।
ক্যান্সার হলে কতদিন বাঁচে
ক্যান্সার রোগীর জীবনকাল নির্ভর করে বিভিন্ন ফ্যাক্টরের উপর। ক্যান্সারের প্রকার, এটি যে পর্যায়ে ধরা পড়েছে, রোগীর সামগ্রিক স্বাস্থ্য এবং বয়স, এবং চিকিৎসার ধরণ এসবই একটি বড় ভূমিকা পালন করে।
উদাহরণস্বরূপ, কিছু ধরণের ক্যান্সার যেমন ফুসফুসের ক্যান্সার বা প্যানক্রিয়াটিক ক্যান্সারের বেঁচে থাকার হার অন্যদের তুলনায় কম। একইভাবে, যখন ক্যান্সার দেরিতে ধরা পড়ে এবং শরীরের অন্যান্য অংশে ছড়িয়ে পড়ে, তখন এর চিকিৎসা কঠিন হয়ে যায় এবং বেঁচে থাকার হার কম হতে পারে।
এছাড়াও, রোগীর সামগ্রিক স্বাস্থ্য এবং বয়সও তার বেঁচে থাকার সম্ভাবনা নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তরুণ এবং সুস্থ ব্যক্তিদের ক্যান্সারের বিরুদ্ধে লড়াই করার সম্ভাবনা বেশি থাকে, যেখানে বয়স্ক এবং অন্য স্বাস্থ্য সমস্যাযুক্ত ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে ঝুঁকি বেশি।
বিভিন্ন প্রকারের ক্যান্সারের জন্য বেঁচে থাকার হার অনেকটাই ভিন্ন হতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, প্রস্টেট ক্যান্সারের জন্য ৫ বছরের বেঁচে থাকার হার প্রায় ১০০% এর কাছাকাছি, যেখানে প্যানক্রিয়াটিক ক্যান্সারের ৫ বছরের বেঁচে থাকার হার মাত্র ১০% এর মত।
তবে, মনে রাখতে হবে যে বেঁচে থাকার হার কেবল একটি আনুমানিক তথ্য এবং এটি ব্যক্তি বিশেষে ভিন্ন হতে পারে। রোগীর সামগ্রিক স্বাস্থ্য, বয়স এবং চিকিৎসার প্রতি প্রতিক্রিয়া এসবই জীবনকাল নির্ধারণে ভূমিকা পালন করে।
ক্যান্সারের চিকিৎসায় সাম্প্রতিক অগ্রগতি অনেক ধরণের ক্যান্সারের বেঁচে থাকার হারকে উল্লেখযোগ্যভাবে উন্নত করেছে। সার্জারি, কেমোথেরাপি, রেডিয়েশন থেরাপি, এবং টার্গেটেড থেরাপি হল ক্যান্সার রোগীদের জন্য বর্তমান চিকিৎসার কিছু বিকল্প।
ক্যান্সারের ধরণ এবং এর পর্যায়ের উপর ভিত্তি করে চিকিৎসা একজন রোগীর জীবন দীর্ঘায়িত করতে এবং জীবনের মান উন্নত করতে সহায়তা করতে পারে। রোগীদের জন্য এটি গুরুত্বপূর্ণ যে তারা তাদের স্বাস্থ্যসেবা দলের সাথে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করেন এবং সব ধরনের চিকিৎসা বিকল্পগুলি সম্পর্কে ভালভাবে জেনে সিদ্ধান্ত নেন।
সুতরাং, ক্যান্সার নির্ণয়ের পরে একজন মানুষ কতদিন বাঁচতে পারেন সেই প্রশ্নটি জটিল এবং চ্যালেঞ্জিং। যদিও বেঁচে থাকার হার এবং চিকিৎসা অপশন কিছু নির্দেশনা দিতে পারে, তবে মনে রাখতে হবে যে প্রত্যেকের ক্যান্সারের পথচলা আলাদা। সচেতন থাকা, রোগ সম্পর্কে তথ্য জোগাড় করা এবং স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারীদের সাথে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করে ক্যান্সার রোগীরা আত্মবিশ্বাস এবং স্থিতিশীলতার সাথে তাদের চিকিৎসা প্রক্রিয়া এগিয়ে নিয়ে যেতে পারেন।
ক্যান্সার কি ভাল হয়
এটি একটি অদ্ভুত প্রশ্ন মনে হতে পারে, তবে কিছু মানুষ মনে করেন যে ক্যান্সারের কিছু ইতিবাচক দিক রয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, কিছু গবেষণা সূচিত করে যে ক্যান্সার কোষগুলি চিকিৎসা গবেষণায় নতুন চিকিৎসা এবং থেরাপি তৈরি করতে ব্যবহার করা যেতে পারে। এছাড়াও, যারা ক্যান্সার থেকে বেঁচে ফিরে আসেন, তারা জীবনের জন্য একটি বৃহত্তর মূল্যায়ন এবং পুনর্নবীকৃত উদ্দেশ্যের অনুভূতি প্রকাশ করেন।
তবে, মনে রাখতে হবে যে ক্যান্সার একটি গুরুতর এবং প্রায়শই মারাত্মক রোগ। এটি আক্রান্ত ব্যক্তি এবং তাদের প্রিয়জনদের জন্য বিশাল শারীরিক এবং মানসিক যন্ত্রণা সৃষ্টি করতে পারে। সুতরাং, ক্যান্সার প্রতিরোধ এবং প্রাথমিক নির্ণয় সবসময় শ্রেয়।
যদি আপনার ক্যান্সার ধরা পড়ে, তবে রোগের ধরণ এবং পর্যায় অনুযায়ী বিভিন্ন চিকিৎসা বিকল্প পাওয়া যায়। এসবের মধ্যে সার্জারি, কেমোথেরাপি, রেডিয়েশন থেরাপি, ইমিউনোথেরাপি, টার্গেটেড থেরাপি এবং অন্যান্য চিকিৎসা অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে। এটি গুরুত্বপূর্ণ যে আপনি আপনার স্বাস্থ্যসেবা দলের সাথে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করে একটি ব্যক্তিগত চিকিৎসা পরিকল্পনা তৈরি করুন।
সুতরাং, ক্যান্সার একটি বিধ্বংসী রোগ যা সারা বিশ্বে বহু মানুষকে প্রভাবিত করে। যদিও ক্যান্সার গবেষণা এবং বেঁচে থাকার কিছু সম্ভাব্য ইতিবাচক দিক রয়েছে, তবে ক্যান্সার প্রতিরোধের পদক্ষেপ নেওয়া এবং যদি ক্যান্সার ধরা পড়ে তবে প্রাথমিক নির্ণয় ও চিকিৎসা করা অপরিহার্য। তথ্যগত এবং সক্রিয় থেকে, আমরা ব্যক্তিদের এবং সমাজের উপর ক্যান্সারের প্রভাব কমাতে কাজ করতে পারি।
ক্যান্সার রোগীর খাবার তালিকা
ক্যান্সারকে মরণব্যাধি বলা হলেও এখন এই রোগের চিকিৎসা হচ্ছে এবং সেরে উঠছেন অনেক রোগী। ক্যান্সার আক্রান্ত রোগকে যখন কেমোথেরাপি দেয়া হয়, তখন শরীরে বেশি করে মেডিসিন দেয়া হয়। ফলে বিভিন্ন প্রকারের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হয়, যেমন—চুল পড়ে যাওয়া, চোখের নিচে কালো দাগ ও খাবারে অরুচি।
ক্যান্সার রোগীরা যা খাবেন
ক্যান্সারকে একসময় মরণব্যাধি হিসেবে দেখা হলেও আজকাল চিকিৎসার উন্নতির কারণে অনেক রোগীই সুস্থ হয়ে উঠছেন। তবে ক্যান্সার চিকিৎসার সময় রোগীর শরীর অনেক চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হয়, যেমন চুল পড়া, চোখের নিচে কালো দাগ, এবং খাবারের প্রতি অরুচি। এই সময় সঠিক চিকিৎসা, মানসিক দৃঢ়তা, এবং সঠিক খাদ্য তালিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
১. উচ্চ প্রোটিনযুক্ত খাবার
- ডিম
- মুরগির মাংস
- মাছ
- দুগ্ধজাত খাবার (পনির, দুধ)
- মসুর ডাল
- মটরশুঁটি
- পনির
- দুধ
২. শাকসবজি এবং ফল
- পালং শাক, কচু শাক, মিষ্টি কুমড়ো
- গাজর, ব্রোকলি
- আপেল, কলা, পেয়ারা, কমলালেবু
৩. ফাইবারযুক্ত খাবার
- পূর্ণ শস্যজাতীয় খাবার (যেমন ব্রাউন রাইস, ওটস)
- লাউ, বেগুন
- ছোলা, শিম, রাজমা
৪. পর্যাপ্ত পানি এবং তরলজাতীয় খাবার
- বিশুদ্ধ পানি
- ডাবের পানি
- লেবুর শরবত
- পাতলা স্যুপ
ক্যান্সার রোগীর সঠিক ডায়েট প্ল্যান তার শরীরকে পুনর্গঠন করতে সাহায্য করে এবং চিকিৎসার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া কমায়। তাজা শাকসবজি, প্রোটিন এবং ফাইবারযুক্ত খাবার খাওয়া গুরুত্বপূর্ণ। অতিরিক্ত মশলাদার এবং ভাজাপোড়া খাবার এড়িয়ে স্বাস্থ্যকর খাবার বেছে নিতে হবে।
ক্যান্সার রোগীরা নরম ভাত খাওয়ার অভ্যাস করুন। কারণ কেমোথেরাপির সময় তা হজমে সমস্যা হয়। নরম ভাতের সঙ্গে ঠাণ্ডা তরকারি দিতে হবে। ঠাণ্ডা তরকারি বলতে তেল-মসলা কম দিয়ে খাবারটা দিতে হবে।
এ ছাড়া সবুজ শাকসবজি ও ফলমূল খাবেন। এ সময় শরীরে ভিটামিনস, মিনারেলস, আয়রন, হিমোগ্লোবিন—এগুলোর অভাব দেখা যায়। হিমোগ্লোবিন কমে গেলে বিট রুটের শরবত দেয়া যেতে পারে।
এ সময় খেতে পারেন প্রচুর হিমোগ্লোবিন ভরপর আনার। কচুশাক, লালশাক, ডাঁটাশাক; অবশ্যই ওটার সঙ্গে লেবুর রসটা মিশিয়ে খাওয়াতে হবে। কারণ ভিটামিন সি সাধারণত আয়রন অ্যাবজর্বসনে সহায়তা করে।
প্রতিদিন একটি করে রসুন খেতে পারেন। রসুন একপ্রকার অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। এটি শরীরের বিভিন্ন টক্সিন বের করে দিতে সাহায্য করে। এ ছাড়া কেমোথেরাপির সময় রোগীকে বেশি করে পানি পান করাতে হবে।
ক্যান্সার রোগীকে স্যুপ দেয়া যেতে পারে। টমেটো স্যুপে যে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে, তা ক্যান্সার প্রিভেন্ট করতে সাহায্য করে। এ ছাড়া সব ধরনের ফ্রেশ খাবার খান।
ক্যান্সার রোগীর চিকিৎসার পাশাপাশি খাবারের প্রতি যত্নশীল হতে হবে।
যেসব খাবার ক্যান্সার রোগীরা খাবেন না
- ক্যান্সার রোগীরা ফ্রিজে রাখা খাবার খাবেন না।
- খাদ্য সংরক্ষণে ফরমালিন নিষিদ্ধ হয়েছে অনেক আগে। তবে নানা রকম প্রিজারভেটিভের ব্যবহার চলছেই। প্রিজারভেটিভ দেয়া খাবার খাবেন না।
- সিঙাড়া, সমুচা ও অতিরিক্ত মসলাজাতীয় খাবার ক্ষতিকর।
- বারবিকিউ জাতীয় খাবার, অর্থাৎ যেসব খাবার সরাসরি আগুনে পুড়িয়ে তৈরি করা হয় যেসব খাবার খাবেন না।
বাংলাদেশে কেমোথেরাপি খরচ কত
বাংলাদেশে কেমোথেরাপির খরচ রোগের ধরন, চিকিৎসার মাত্রা, হাসপাতাল বা ক্লিনিকের ধরন, ওষুধের প্রকার এবং চিকিৎসার সময়কালের উপর নির্ভর করে ব্যাপকভাবে পরিবর্তিত হয়। নিচে কিছু সাধারণ তথ্য দেওয়া হল:
১. কেমোথেরাপির ধরন ও খরচ
- স্ট্যান্ডার্ড কেমোথেরাপি: প্রতি সাইকেলের খরচ সাধারণত ১০,০০০ থেকে ৫০,০০০ টাকার মধ্যে হতে পারে।
- টার্গেটেড থেরাপি বা ইমিউনোথেরাপি: এই ধরনের চিকিৎসা বেশি ব্যয়বহুল হতে পারে, প্রতি সাইকেলের খরচ ১,০০,০০০ টাকা থেকে ৫,০০,০০০ টাকা বা তার বেশি হতে পারে।
২. হাসপাতাল ও ক্লিনিকের ধরন
- সরকারি হাসপাতাল: সরকারি হাসপাতালে কেমোথেরাপির খরচ তুলনামূলকভাবে কম, সাধারণত ৫,০০০ থেকে ২০,০০০ টাকা প্রতি সাইকেল।
- প্রাইভেট হাসপাতাল বা ক্লিনিক: প্রাইভেট হাসপাতালে খরচ বেশি হতে পারে, সাধারণত ২০,০০০ থেকে ১,০০,০০০ টাকা বা তার বেশি প্রতি সাইকেল।
৩. ওষুধের প্রকার
কিছু ওষুধ আন্তর্জাতিক মানের এবং আমদানিকৃত, যা বেশি ব্যয়বহুল। স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত ওষুধ তুলনামূলকভাবে সস্তা।
৪. চিকিৎসার সময়কাল
কেমোথেরাপির কোর্স সাধারণত কয়েক সপ্তাহ থেকে কয়েক মাস পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে। মোট খরচ চিকিৎসার সময়কাল এবং সাইকেলের সংখ্যার উপর নির্ভর করে।
৫. অতিরিক্ত খরচ
রক্ত পরীক্ষা, স্ক্যান, ওষুধ, হাসপাতালে ভর্তি এবং অন্যান্য চিকিৎসা সেবার খরচ আলাদা হতে পারে।
৬. সুবিধা ও সহায়তা
কিছু সরকারি ও বেসরকারি সংস্থা ক্যান্সার রোগীদের আর্থিক সহায়তা প্রদান করে। যেমন, বাংলাদেশ ক্যান্সার সোসাইটি এবং বিভিন্ন এনজিও।
৭. উদাহরণ
- ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে কেমোথেরাপির খরচ তুলনামূলকভাবে কম।
- প্রাইভেট হাসপাতাল যেমন অ্যাপোলো হাসপাতাল, ইউনাইটেড হাসপাতাল ইত্যাদিতে খরচ বেশি।
৮. পরামর্শ
- চিকিৎসা শুরুর আগে হাসপাতাল বা ক্লিনিক থেকে খরচ সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেওয়া উচিত।
- আর্থিক সহায়তার জন্য সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলির সাথে যোগাযোগ করা যেতে পারে।
- কেমোথেরাপির খরচ সম্পর্কে সঠিক তথ্য পেতে সরাসরি সংশ্লিষ্ট হাসপাতাল বা চিকিৎসা কেন্দ্রে যোগাযোগ করা সবচেয়ে ভালো।
বাংলাদেশে কম খরচে ক্যান্সার চিকিৎসা
বাংলাদেশে কম খরচে ক্যান্সার চিকিৎসার জন্য সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এখানে কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দেওয়া হলো:
সরকারি হাসপাতাল ও প্রতিষ্ঠান
১।জাতীয় ক্যান্সার গবেষণা ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল (NICRH)
- অবস্থান: মোহাম্মদপুর, ঢাকা।
- সেবা: ক্যান্সারের ডায়াগনোসিস, কেমোথেরাপি, রেডিওথেরাপি, সার্জারি ইত্যাদি।
- খরচ: সরকারি হাসপাতাল হওয়ায় খরচ তুলনামূলকভাবে কম।
- যোগাযোগ: +8802-9112630, ওয়েবসাইট: http://www.nicrh.gov.bd/
২। বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (BMU)
- অবস্থান: শাহবাগ, ঢাকা।
- সেবা: ক্যান্সার চিকিৎসার আধুনিক সুযোগ-সুবিধা রয়েছে।
- খরচ: সরকারি হাসপাতাল হওয়ায় খরচ কম।
- যোগাযোগ: +8802-8616641,
৩। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল
- অবস্থান: ঢাকা।
- সেবা: ক্যান্সার চিকিৎসার প্রাথমিক ও কিছু বিশেষায়িত সেবা।
- খরচ: কম।
বেসরকারি প্রতিষ্ঠান
১। আর্মড ফোর্সেস ইনস্টিটিউট অব প্যাথলজি অ্যান্ড ট্রান্সফিউশন (AFIP):
- অবস্থান: ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট।
- সেবা: ক্যান্সার ডায়াগনোসিস ও চিকিৎসা।
- খরচ: তুলনামূলকভাবে কম।
- যোগাযোগ: +8802-8757070।
২। স্কয়ার হাসপাতাল
- অবস্থান: পান্থপথ, ঢাকা।
- সেবা: আধুনিক ক্যান্সার চিকিৎসা।
- খরচ: বেসরকারি হলেও কিছু প্রোগ্রামে কম খরচে সেবা দেওয়া হয়।
- যোগাযোগ: +8802-8144400, ওয়েবসাইট: https://www.squarehospital.com/
৩। আল-রাজী হাসপাতাল
- অবস্থান: পুরান ঢাকা।
- সেবা: ক্যান্সার চিকিৎসা।
- খরচ: তুলনামূলকভাবে কম।
- যোগাযোগ: +8802-9669480।
এনজিও ও স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠান
১। ক্যান্সার অ্যাওয়ারনেস অ্যান্ড রিসার্চ ফাউন্ডেশন (CARF)
- অবস্থান: ঢাকা।
- সেবা: ক্যান্সার সচেতনতা, স্ক্রিনিং ও চিকিৎসা সহায়তা।
- খরচ: বিনামূল্যে বা নামমাত্র খরচে সেবা প্রদান।
- যোগাযোগ: +8802-9898989।
২। বাংলাদেশ ক্যান্সার সোসাইটি
- অবস্থান: ঢাকা।
- সেবা: ক্যান্সার রোগীদের জন্য আর্থিক সহায়তা ও চিকিৎসা পরামর্শ।
- যোগাযোগ: +8802-9666401।
কম খরচে চিকিৎসার জন্য টিপস
- সরকারি হাসপাতালে যান: সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা খরচ তুলনামূলকভাবে কম।
- এনজিও বা স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠানের সহায়তা নিন: অনেক এনজিও বিনামূল্যে বা কম খরচে ক্যান্সার চিকিৎসা প্রদান করে।
- আর্থিক সহায়তা প্রোগ্রাম: কিছু হাসপাতাল ও প্রতিষ্ঠান আর্থিকভাবে অসচ্ছল রোগীদের জন্য বিশেষ প্রোগ্রাম পরিচালনা করে।
যোগাযোগ
- জাতীয় ক্যান্সার গবেষণা ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল (NICRH): +8802-9112630
- বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (BMU): +8802-8616641
- বাংলাদেশ ক্যান্সার সোসাইটি: +8802-9666401
এই প্রতিষ্ঠানগুলোতে যোগাযোগ করে কম খরচে ক্যান্সার চিকিৎসার ব্যবস্থা করা সম্ভব।
ক্যান্সার থেকে মুক্তির উপায়
ক্যান্সার থেকে মুক্তির উপায় খুঁজতে গিয়ে যে বিষয় গুলো পাওয়া যায় সেগুলো হলোঃ
- ধূমপান পরিহার করা। কারণ ধূমপান থেকেই প্রায় 90% ক্যান্সার রোগের সৃষ্টি হয়
- সূর্যের তাপের অতিবেগুনি রশ্মির কারণে স্কিন ক্যান্সার হতে পারে। সূর্যের তার থেকে নিজেকে বাঁচিয়ে রাখুন
- অনিয়মিত খাদ্যাভাস ক্যান্সারের কারণ হতে পারে। প্রচুর পরিমাণে সবুজ শাকসবজি এবং সিজনাল ফল খেতে পারেন
- অনিয়ন্ত্রিত ও অবাঞ্ছিত যৌন সম্পর্ক ক্যান্সার ছড়াতে সহায়ক হতে পারে। অনিয়ন্ত্রিত যৌন সম্পর্ক বজায় রাখুন।
- নিয়মিত ব্যায়াম করলে শরীরে ক্যান্সারের ঝুঁকি কমে যায়। তাই সময় করে অন্তত 30 মিনিট ব্যায়াম করুন।
- খাবার রান্নার ক্ষেত্রে কম আছে খাবার রান্না করুন। অতিরিক্ত ভাজাপোড়া খাবার ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকি বাড়ায়।
- পরিবারের পূর্বপুরুষদের কারো ক্যান্সার থাকলে নিজে সচেতন হোন সেই সাথে ডাক্তারের ফলোআপে থাকুন।
লেখকের শেষ মতামত
যদি আপনার ক্যান্সার ধরা পড়ে, তবে রোগের ধরণ এবং পর্যায় অনুযায়ী বিভিন্ন চিকিৎসা বিকল্প পাওয়া যায়। এসবের মধ্যে সার্জারি, কেমোথেরাপি, রেডিয়েশন থেরাপি, ইমিউনোথেরাপি, টার্গেটেড থেরাপি এবং অন্যান্য চিকিৎসা অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে। এটি গুরুত্বপূর্ণ যে আপনি আপনার স্বাস্থ্যসেবা দলের সাথে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করে একটি ব্যক্তিগত চিকিৎসা পরিকল্পনা তৈরি করুন।
সুতরাং, ক্যান্সার একটি বিধ্বংসী রোগ যা সারা বিশ্বে বহু মানুষকে প্রভাবিত করে। যদিও ক্যান্সার গবেষণা এবং বেঁচে থাকার কিছু সম্ভাব্য ইতিবাচক দিক রয়েছে, তবে ক্যান্সার প্রতিরোধের পদক্ষেপ নেওয়া এবং যদি ক্যান্সার ধরা পড়ে তবে প্রাথমিক নির্ণয় ও চিকিৎসা করা অপরিহার্য। তথ্যগত এবং সক্রিয় থেকে, আমরা ব্যক্তিদের এবং সমাজের উপর ক্যান্সারের প্রভাব কমাতে কাজ করতে পারি।
এই ছিল আজকের ক্যান্সার রোগীর মৃত্যুর লক্ষণ সম্পর্কিত সকল তথ্য সংক্ষেপে বিস্তারিত জানাতে চেষ্টা করেছি। এর বাইরেও আপনার কোনো প্রশ্ন থাকলে তা কমেন্ট করে জানাবেন। আশা করছি আপনি আমার এই পোস্টটি পড়ে ক্যান্সার রোগীর মৃত্যুর লক্ষণ জানতে পেরেছেন।
এরপরও বুঝতে অসুবিধা হলে কমেন্ট করে জানাবেন। আর্টিকেলটি আপনার পরিচিতদের মাঝে শেয়ার করে দিতে পারেন। এতে করে তারাও ক্যান্সার রোগীর মৃত্যুর লক্ষণ এবং ক্যান্সার হলে কতদিন বাঁচে সেই সম্পর্কে জানতে পারবে। ধন্যবাদ।