সম্মানিত পাঠক, আপনি কি শহীদ বুদ্ধিজীবী কারা এবং ৫ জন বুদ্ধিজীবীর নাম সম্পর্কে বিস্তারিত যাবতীয় তথ্য জানতে চাচ্ছেন? তাহলে এই নিয়ে সঠিক সন্ধান পেতে আপনি একদম ঠিক জায়গাতেই এসেছেন। আমরা আজকের এই ব্লগ পোষ্টে আপনাদের সুবিধার কথা ভেবেই শহীদ বুদ্ধিজীবী কারা ও ৫ জন বুদ্ধিজীবীর নাম নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করার চেষ্টা করেছি।
তো আপনি যদি আজকের সম্পন্ন ব্লগ পোষ্ট জুড়ে থাকেন, তাহলে শহীদ বুদ্ধিজীবী কারা তা নিয়ে জেনে নেওয়ার পাশাপাশি ৫ জন বুদ্ধিজীবীর নাম, শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস সম্পর্কে কথা, শহীদ বুদ্ধিজীবীদের হত্যার বিবরণ এবং শহীদ বুদ্ধিজীবীদের নিয়ে মামলা নিয়ে জানতে পারবেন। তো চলুন আর বেশি কথা না বাড়িয়ে আমরা প্রথমে শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস সম্পর্কে কিছু কথা জেনে নেই।
শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস সম্পর্কে কিছু কথা
১৪ই ডিসেম্বর বাংলাদেশের শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস। ১৯৭১ সালে পাকিস্তানী সেনাবাহিনী সারা বছরব্যাপী বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করে কিন্তু দশ ১০ ডিসেম্বর থেকে ১৪ই ডিসেম্বর এই সময়ের মধ্যে পাকিস্তানি বাহিনী বাংলাদেশের প্রথম শ্রেণীর লোক অর্থাৎ বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করে। আর পাকিস্তানী বাহিনীর হত্যাকাণ্ডে সহযোগিতা করেছিল বাংলাদেশের রাজাকার, আল বদর, আল শামস বাহিনী।
বাঙালি জাতিকে মেধাশূন্য করার জন্যই পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী তাদের এই বর্বরোচিত হত্যাকাণ্ড চালিয়েছিল। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীরা মূলত রাজাকার, আল শামস, আল বদর বাহিনীর সহায়তায় অর্থাৎ তাদের দেশীয় দোসর বাংলার শ্রেষ্ঠ সন্তানদের নিজ বাস ভবন থেকে তুলে নিয়ে।
এরপর নির্মমভাবে নির্যাতনের পর হত্যা করে এবং তারা পরিকল্পিতভাবে এই হত্যাকান্ড চালায় যার কারণে বাংলার ইতিহাসে এটি বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ড নামেই পরিচিত। যার কারণে মহান স্বাধীনতা পর অর্থাৎ ১৬ই ডিসেম্বরের পরে বুদ্ধিজীবীদের লাশ বিভিন্ন স্থানে ক্ষতবিক্ষত অবস্থায় পাওয়া যায়।
অনেকের লাশ খুজে পেলেও এখন অবদি অনেককে সনাক্ত করা যায়নি। আর ১৪ই ডিসেম্বর শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস হিসেবে পালন করা হয় মূলত ১৯৭১ সালের ১৪ই ডিসেম্বর বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করার স্মরণে। বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকায় বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধ নির্মাণ করা হয়েছে। এছাড়াও বুদ্ধিজীবীদের স্মরণে বাংলাদেশের ডাক বিভাগ বের করেছে একটি স্মারক ডাক টিকেট।
যারা বুদ্ধিভিত্তিক কর্মকান্ডের সঙ্গে জড়িত তাদেরকে হত্যা করে এবং ক্রীড়াবিদদের হত্যা করে। এবং ওই সময়ে যারা চিরতরে নিখোঁজ হয়েছেন তারা ও শহীদ বুদ্ধিজীবী। আর ১৪ই ডিসেম্বর সবচেয়ে বেশি সংখ্যক বুদ্ধিজীবীকে হত্যা করা হয়েছিল।যার কারণে বাংলাদেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমেদ ১৪ই ডিসেম্বর কে শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস হিসেবে ঘোষণা করেছিলেন।
বাংলাদেশের ১৬ই ডিসেম্বরের পরে অর্থাৎ মুক্তিযুদ্ধের চরম বিজয়ের পরে এই বুদ্ধিজীবীদের ক্ষতবিক্ষত মৃতদেহ রাজধানীর রায়ের বাজার ইটখোলা এবং ঢাকার মিরপুরের বদ্ধভূমি সহ দেশের বিভিন্ন স্থানে হাত-পা ও চোখ বাধা অবস্থায় পাওয়া গেছিল। আর এই জন্যই ১৪ই ডিসেম্বর শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস বলে ঘোষণা করা হয়।
তো আশা করছি আপনারা এই অংশ থেকে শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস সম্পর্কে কিছু কথা সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জানতে পেরেছেন। এবার চলুন, শহীদ বুদ্ধিজীবী কারা সেই সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক।
শহীদ বুদ্ধিজীবী কারা
শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস মূলত আমাদের বাংলাদেশে প্রতি বছর ডিসেম্বর মাসের ১৪ তারিখে পালন করা হয়। মুক্তিযুদ্ধে ষড়যন্ত্রের শিকার হয়ে বাঙালি জাতি মহান শ্রদ্ধা ভরে এই দেশের শ্রেষ্ঠ সন্তানদের মৃত্যু দিবসকে স্মরণ করে। আর সেদিন যারা হত্যার শিকার হয়েছিলেন তাদের বলা হয় বুদ্ধিজীবী।
পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী বুঝতে পেরেছিল যে, এই যুদ্ধে তারা জয়লাভ করতে পারবে না তাই তারা বাংলাকে মেধাশূন্য করতে চেয়েছিল যার কারণে এদেশীয় তাদের দোসরদের সাথে নিয়ে অর্থাৎ রাজাকারদের নিয়ে হত্যা করেছিল বাংলার আইনজীবী, সাংবাদিক, সরকারি কর্মকর্তা, প্রকৌশলী, শিক্ষক, চিকিৎসক, বিজ্ঞানী, সাহিত্যিক, শিল্পী এবং ক্রীড়াবিদদের এককথায় বুদ্ধিজীবি লোকদের নিয়ে।
তারা হত্যাযজ্ঞ চালালেও ১৯৭১ সালের শুরু থেকেই ১০ শে ডিসেম্বর থেকে হত্যাযজ্ঞ আগের চেয়ে তুলনামূলক আরও অনেক বাড়িয়ে দেয় এবং এর পাশাপাশি তারা পরিকল্পিতভাবে ডিসেম্বর মাসের ১৪ তারিখে সক্রিয় ভাবে বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করে। তো আশা করছি আপনারা এই অংশ থেকে শহীদ বুদ্ধিজীবী কারা সেই সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জানতে পেরেছেন। এবার চলুন, ৫ জন বুদ্ধিজীবীর নাম সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক।
৫ জন বুদ্ধিজীবীর নাম
আপনারা অনেকেই ৫ জন বুদ্ধিজীবীর নাম জানতে চেয়ে হয়ত আমাদের আজকেরে আর্টিকেলে প্রবেশ করেছেন। তাহলে চলুন, কথা না বাড়িয়ে আমরা নিচে অংশ থেকে ৫ জন বুদ্ধিজীবীর নাম জেনে নেই। ৫ জন বুদ্ধিজীবীর নাম নিচে উল্লেখ করা হলঃ
- মোফাজ্জল হায়দার চৌধুরী
- ড। আবুল খায়ের
- সেলিনা পারভীন
- মুনীর চৌধুরী
- জহির রায়হান
তো আশা করছি আপনারা এই অংশ থেকে ৫ জন বুদ্ধিজীবীর নাম সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জানতে পেরেছেন। এবার চলুন, শহীদ বুদ্ধিজীবীদের হত্যার বিবরণ সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক।
শহীদ বুদ্ধিজীবীদের হত্যার বিবরণ
১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকেই পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী এদেশের বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করতে শুরু করে। কিন্তু যখন তারা বুঝতে পারে যে তাদের পরাজয় নিশ্চিত তখন তারা বাংলাকে মেধাশূন্য করার জন্য বুদ্ধিজীবীদের হত্যা শুরু করে দেয়।
আর এর জন্য তারা ১৯৭১ সালের ৪ ডিসেম্বর ঢাকায় নতুন করে কারফিউজারি করে। বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করার জন্য প্রস্তুতি নেওয়া হয় ১০ ডিসেম্বর আর পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা হয় ১৪ই ডিসেম্বর। পাকিস্তানের সেনাবাহিনী ও তাদের দোসরা অধ্যাপক, কবি, লেখক, সাহিত্যিক, সাংবাদিক, প্রকৌশলী, আইনজীবী এবং যারা বুদ্ধি দিয়ে বাংলাকে সহযোগিতা করছিল তাদেরকে অপহরণ করে নিয়ে যায়।
আর ১৪ই ডিসেম্বর প্রায় ২০০ জনের মতো বুদ্ধিজীবীদের তাদের বাসা থেকে ধরে নিয়ে যায় এবং তাদের চোখ ও হাত পা বেঁধে ঢাকার রাজার বাগ, মিরপুর, মোহাম্মদপুর, নাখালপাড়াসহ অন্যান্য অনেক স্থানে তাদের দিয়ে যাওয়া হয় এবং তাদের হত্যার পরে মিরপুরের বদ্ধভূমিতে এবং রায়ের বাজারে ফেলে রাখা হয়। এমনকি পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী আত্মসমর্পণের পরে অর্থাৎ যুদ্ধের আনুষ্ঠানিক সমাপ্তির পরেও তারা অনেক গোলাগুলি চালায় বলে অভিযোগ পাওয়া যায়। আর এমনই এক ঘটনার বিরল সাক্ষী হলেন জহির রায়হান।
তো আশা করছি আপনারা এই অংশ থেকে শহীদ বুদ্ধিজীবীদের হত্যার বিবরণ সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জানতে পেরেছেন। এবার চলুন, শহীদ বুদ্ধিজীবীদের নিয়ে মামলা সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক।
শহীদ বুদ্ধিজীবীদের নিয়ে মামলা
১৯৭১ সালে ডিসেম্বর মাসের ১৪ তারিখে বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করা হয়। আর এই দিনেই শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস হিসেবে পালন করা করা বিশেষ করে শেষ করে দেওয়া হয় বাংলার মেরুদন্ডকে অথচ তাদের নিয়ে তখন কথা বলার কোন লোক ছিল না অর্থাৎ তাদের নিয়ে ওই সময় কোন মামলা করা হয়নি।
অবশেষে ১৯৭২ সালে সেপ্টেম্বর মাসের ২৪ তারিখে ঢাকা রমনা থানায় শহীদ বুদ্ধিজীবীদের নিয়ে প্রথম মামলা দায়ের করা হয়। আর সেই মামলার স্বারক নাম্বার হচ্ছে ১৫। এই মামলায় আসামি করে মামলা দায়ের করা হয় মূলত আল বদর বাহিনীর আসাদুজ্জামান ও মইনুদ্দিনকে। অধ্যাপক গিয়াস উদ্দিন এর বোন ফরিদা বানু এই মামলাটি দায়ের করেন।
শহীদ বুদ্ধিজীবী কারা সম্পর্কে লেখকের মতামত
সম্মানিত পাঠক আশা করছি আমার লেখা শহীদ বুদ্ধিজীবী কারা এই আর্টিকেলটি আপনাদের কাছে ভালো লেগেছে। এই আর্টিকেলটিতে শহীদ বুদ্ধিজীবী কারা আলোচনা করার পাশাপাশি ৫ জন বুদ্ধিজীবীর নাম, শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস সম্পর্কে কিছু কথা, শহীদ বুদ্ধিজীবীদের নিয়ে মামলা, শহীদ বুদ্ধিজীবীদের হত্যার বিবরণ ইত্যাদি সহ আরও প্রয়োজনীয় বিষয়ে সঠিক তথ্য তুলে ধরেছি।
আপনাদের যদি এই ব্লগ পোষ্টটি ভালো লেগে থাকে কিংবা আপনাদের মাঝে কোন মতামত থাকে, তাহলে অবশ্যই কমেন্ট করে জানাবেন এবং চাইলে শেয়ার করে অন্যদের জানানোর সুযোগ করে দিতে পারেন। আজকে আমরা আপনাদের মাঝে শহীদ বুদ্ধিজীবী কারা এবং ৫ জন বুদ্ধিজীবীর নামনিয়ে বিস্তারিত অনেক তথ্য আলোচনা করলাম। আশা করি আজকের এই আর্টিকেলটি পড়ে আপনাদের অনেক উপকারে আসবে। ধন্যবাদ।