আমাদের বাংলাদেশে এমন অনেক পরিবার রয়েছে যারা অর্থের অভাবে শিশুর মানসিক ও শারীরিক বিকাশ ব্যাহত হচ্ছে। শিশুর শারীরিক বিকাশ যেন ব্যাহত না হয় এজন্য সরকার গর্ভবতী নারীদের জন্য গর্ভবতী ভাতা প্রচলন করেছেন। কিন্তু এ বিষয়ে অনেকেরই ধারণা নেই। তো আপনি কি গর্ভবতী ভাতার আবেদন করার নিয়ম জানতে চাচ্ছেন? তাহলে আপনি এখন আপনি একেবারে সঠিক স্থানেই এসেছেন।
আপনি যদি আজকের এই ব্লগপোষ্টটি শুরু থেকে একেবারে শেষ অবদি পড়েন তাহলে গর্ভবতী ভাতার আবেদন করার নিয়ম সম্পর্কে জেনে নেওয়ার পাশাপাশি মাতৃত্বকালীন ভাতা নীতিমালা, মাতৃত্বকালীন ভাতা আবেদন ফরম, গর্ভবতী ভাতা পাওয়ার নিয়ম, গর্ভকালীন সেবা কার্ড ফরম, গর্ভকালীন সেবা কার্ড ডাউনলোড ইত্যাদি সম্পর্কে বিস্তারিত যাবতীয় তথ্যাদি জানতে পারবেন।
উপস্থাপনা – গর্ভবতী ভাতা
বাংলাদেশ সরকার সমাজসেবা অধিদপ্তর থেকে অসহায় ও দরিদ্র গর্ভবতী মায়েদের জন্য গর্ভবতী ভাতা চালু করেছেন। এই ভাটা ধনীদের জন্য এবং সরকারি চাকরিজীবীদের জন্য প্রযোজ্য নয়। এই ভাতা তারাই পাবে যাদের বসবাসের জন্য ঘর বাড়ি নেই এবং পর্যাপ্ত পরিমাণে টাকা নেই সেই সকল গর্ভবতী মায়েদের জন্য এই ভাতা প্রযোজ্য।
বর্তমান সময়ে এসে গর্ভবতী ভাতার জন্য আবেদন আপনি চাইলে ঘরে বসেই অনলাইনে খুব সহজেই করতে পারবেন। আপনি যদি একজন হতদরিদ্র গর্ভবতী নারী হয়ে থাকেন অথবা আপনার সন্তান, বোন অথবা পাড়া প্রতিবেশি কোন ব্যক্তি গর্ভবতী হয়ে থাকে তাহলে তার জন্য আপনি এই পোষ্টটি ভালোভাবে দেখে মাতৃকালীন ভাতার জন্য আবেদন করতে পারেন।
আমাদের মাঝে এমন অনেকেই আছেন যারা গর্ভবতী ভাতা পাওয়ার যোগ্যতা রয়েছে কিন্তু গর্ভবতী ভাতা পাওয়ার নিয়ম সঠিক ভাবে না জানার ফলে আবেদন করতে ব্যর্থ হয়। তাই আপনাদের সুবিধার কথা চিন্তা করে গর্ভবতী ভাতা পাবার জন্য আবেদন কিভাবে করতে হবে এই পোষ্টে বিস্তারিত শেয়ার করলাম। চলুন তাহলে কথা না বাড়িয়ে প্রথমেই গর্ভবতী ভাতার আবেদন করার নিয়ম জেনে নেই।
গর্ভবতী ভাতার আবেদন করার নিয়ম
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার বর্তমানে বয়স্ক ভাতা, বিধবা ভাতার পাশাপাশি গর্ভকালীন ভাতা দেওয়ার ব্যবস্থা করেছেন।অনেক মায়েরা গর্ভকালীন সময় তাদের নানান চিকিৎসা এবং ওষুধের প্রয়োজন হয়। এজন্য গর্ভবতী মায়েরা খুব সহজেই যেন গর্ভবতী ভাতা পান সেই উদ্যোগ নিয়েছেন বাংলাদেশ সরকার।কিন্তু অনেকেই গর্ভবতী ভাতা অনলাইন আবেদন না জানার কারণে এ ভাতা থেকে বঞ্চিত হয়।
তাই আজকের এই পোস্টটির মাধ্যমে খুব সহজেই আপনাদের জানিয়ে দেবো কিভাবে গর্ভবতী ভাতা অনলাইন আবেদন ২০২৪ করবেন।অথবা আপনার আশেপাশে যেকোনো কম্পিউটারের দোকানে গিয়ে আবেদন করতে পারবেন। কম্পিউটার দোকান থেকে আবেদন করলে আপনাকে ওই ব্যক্তির খরচ দিতে হবে।
আবেদন করার জন্য আপনাকে সবার প্রথমে ওয়েবসাইট এই লিংকে প্রবেশ করতে হবে। আবেদন করার জন্য আপনার কাছে যেসব তথ্য যাবে সেগুলো পূরণ করে পিডিএফ ফাইল ডাউনলোড করে নিন।
এরপর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান কিংবা পৌরসভা মেয়রের ছাড়পত্র নিয়ে শিশু ও মহিলা বিষয়ক মন্ত্রণালয় অফিসে জমা দিন।তাহলেই আপনার আবেদন করার কাজ শেষ।
মাতৃত্বকালীন ভাতা নীতিমালা
সমাজসেবা অধিদপ্তর থেকে আপনি যদি মাতৃকালীন ভাতা পেতে চান তাহলে অবশ্যই কিছু শর্তগুলি মেনে আবেদন করতে হবে।সেই শর্ত গুলোর মধ্যে যদি আপনি না হন তাহলে কখনোই মাতৃকালীন ভাতা পাবেন না। এজন্য মাতৃকালীন ভাতা আবেদন করার পূর্বে মাতৃকালীন ভাতা কিভাবে পাওয়া যায় এবং তার শর্তগুলোর সম্পর্কে আপনাকে জানতে হবে। শর্তগুলো নিজে উল্লেখ করা হলোঃ
- প্রথম অথবা দ্বিতীয় গর্ভকালীন সময়ে যেকোনো একবার।
- আপনার বয়স কমপক্ষে ২০ উপরে হতে হবে।
- আপনার মাসিক আয় ১৫০০ টাকার নিচে হতে হবে।
- প্রতিবন্ধী অথবা দরিদ্র মায়েরা বেশি অগ্রাধিকার পাবে।
- আবেদনকারী কে অবশ্যই গর্ভবতী হতে হবে।
- পরিবারের অথবা নিজের পুকুর ও জমি নেই।
- বসতবাড়ি রয়েছে অথবা অন্যের জায়গায় বাস করে এমন হতে হবে।
মাতৃত্বকালীন ভাতা আবেদন ফরম
অনলাইনে আবেদনের ক্ষেত্রে ওয়েবসাইটের আবেদন পদ্ধতির মাধ্যমে পূরণ হয়ে যায়। তবে অফলাইনে যারা আছে তাদেরকে হাতে লিখে প্রকাশ করতে হবে। নিম্ম হাতে লিখার জন্য যে ফরম সেটার লিংক দিচ্ছি। গর্ভবতী ভাতা অনলাইন আবেদন ফরম ডাউনলোড
মূলত আপনি মাতৃত্বকালীন ভাতা আবেদন ফরম উপরের দেওয়া এই লিংক থেকে সহজেই পেয়ে যাবেন। অন্য কোথাও বার বার হয়রানি হতে হবে না। তো আশা করছি আপনারা এই অংশ থেকে মাতৃত্বকালীন ভাতা আবেদন ফরম লিংক কিভাবে পাবেন তা জানতে পেরেছেন। এবার চলুন গর্ভবতী ভাতা পাওয়ার নিয়ম বিস্তারিত ভাবে জেনে নেই।
গর্ভবতী ভাতা পাওয়ার নিয়ম
আমরা ইতিমধ্যে উপরের অংশে গর্ভবতী ভাতার আবেদন করার নিয়ম ও নীতিমালা জেনে নিয়েছি এরপর আমরা গর্ভবতী ভাতা পাওয়ার নিয়ম জেনে নিব। তবে এক্ষেত্রে আপনাকে শিশু ও মহিলা বিষয়ক মন্ত্রণালয় এর অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে এই লিংকটিতে প্রবেশ করতে হবে।
ব্যক্তিগত তথ্যঃ গর্ভবতী ভাতা পাওয়ার জন্য আপনাকে আপনার জাতীয় পরিচয় পত্র, আপনার জন্ম তারিখ, আপনার নাম, আপনার পিতার নাম, আপনারমাতার নাম, আপনার স্বামীর নাম, আপনার জন্মস্থান, আপনার ধর্ম, আপনার মোবাইলনম্বর, আপনার শিক্ষাগত যোগ্যতা, আপনার রক্তের গ্রুপ এবং বৈবাহিক তথ্য দিয়ে খালিঘর গুলো পূরণ করতে হবে।
বর্তমান এবং স্থায়ী ঠিকানাঃ এখানে মূলত নিজের বর্তমান এবং স্থায়ী ঠিকানার তথ্য দেওয়া লাগবে। যেমন আপনার গ্রাম, আপনার রাস্তা, আপনার বিভাগ, আপনার জেলা, আপনার উপজেলা ইউনিয়ন, আপনার ওয়ার্ড নাম্বার ও পোস্ট কোড নম্বর। আপনার বর্তমান এবং স্থায়ী ঠিকানা যদি আলাদা হয় তাহলে আলাদা তথ্য দিন এবং যদি একও হয় তাহলে একই নামক অপশনে ঠিক চিহ্ন দিন।
অর্থ- সামাজিক তথ্যঃ এভাবে আপনাকে আপনার পরিবারের প্রথম গর্ভবতী নারীর মাসিক ইনকাম কত, তার বাসস্থান আছে কিনা, তিনি প্রতিবন্ধী কিনা, তার জমি/ পুকুর রয়েছে কিনা ইত্যাদি সম্পর্কিত সকল সঠিক তথ্য দিয়ে খালিঘর গুলো পূরণ করতে হবে।
পেমেন্ট তথ্যঃ এখানে মোবাইল ব্যাংকিং কিংবা ব্যাংকিং যেকোনো অপশন সিলেট করতে হবে।আপনি যদি ব্যাংকে পেমেন্ট নেওয়ায় জন্য ব্যাঙ্ক অপশন সিলেক্ট করেন তাহলে ব্যাংকের নাম,একাউন্ট ধারির নাম ও অ্যাকাউন্ট নাম্বার দিতে হবে।আর যদি মোবাইল ব্যাংকিংয়ে পেমেন্ট নিতে চান তাহলে মোবাইল ব্যাংকিং সিলেক্ট করুন। এরপর আপনার বিকাশ নগদ অথবা রকেট যেকোনো একটি সিলেক্ট করুন।
ছবি/ স্বাক্ষরঃ ছবির জন্য ৩০০ +৩০০ফাহিম এবং স্বাক্ষরের জন্য ৩০০+১৮০ সাইজ ব্যবহার করবেন। এবার ছবি এবং স্বাক্ষর দিয়ে সংরক্ষণ করুন এই অপশনে ক্লিক করবেন। তাহলে আপনার আবেদন করার কাজ শেষ। তো আশা করছি আপনারা এই অংশ থেকে গর্ভবতী ভাতা পাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে বিস্তারিত যাবতীয় তথ্য জেনে নিতে পেরেছেন। এবার চলুন, আমরা এখন গর্ভকালীন সেবা কার্ড ফরম সম্পর্কে বিস্তারিত ভাবে জেনে নিব।
গর্ভকালীন সেবা কার্ড ফরম
আমরা উপরের অংশে এতক্ষণে গর্ভবতী ভাতা পাওয়ার নিয়ম জানতে পারলাম। এখন আমরা জানবো কিভাবে হাতে লিখে বা অফলাইনে গর্ভকালীন সেবা কার্ড ফরম পাবার জন্য আবেদন করবেন। আপনি যদি গর্ভকালীন সেবা কার্ড ফরম বিনামূল্যে পেতে চান, তাহলে আপনাকে আপনার উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তার কাছ থেকে কালেক্ট করে নিতে হবে। আপনি গিয়ে চাইলেই আপনাকে দিতে বাধ্য। এতে কোন ধরণের সমস্যা হওয়ার কথা না।
সেই ফর্মে যেসব তথ্য আপনারা অনলাইনে আবেদন করেছেন সেই তথ্যগুলো ভালভাবে হুবহু হাতে লিখবেন এরপর আপনার পৌরসভার মেয়র অথবা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এর অনুমতি নিতে হবে। তারপর উপজেলা মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় এর নিকট এই ফরম জমা দিয়ে আসবেন। তাহলে আপনি অল্প কিছুদিনের মধ্যে গর্ভকালীন সেবা কার্ড হাতে পেয়ে যাবেন।
গর্ভকালীন সেবা কার্ড ডাউনলোড
দরিদ্র মা’র জন্য মাতৃত্বকাল ভাতা মঞ্জুরীর জন্য Application করা উপজেলা কমিটি বরাবর। Union পরিষদ চেয়ারম্যান, উপজেলা কমিটি সদস্য সচিব ও সভাপতি এ সংক্রান্ত আবেদনপত্র যাচাই বাছাই করে মঞ্জুরী আদেশ দেন।
গর্ভবতী ভাতার Application Form এখান থেকেই সংগ্রহ করতে পারেন। মাতৃত্বকালীন ভাতার আবেদন ফরম এই লিংক থেকে ডাউনলোড করে নিন।
মাতৃত্বকালীন ভাতা কত টাকা
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তর থেকে গর্ভবতী ভাতা প্রদান করা হয়।গ্রাম অথবা শহরে নিম্ন কর্মজীবী এবং দুগ্ধ দায়ী মা তাদের শিশু সামাজিক নিরাপত্তার মাধ্যমে সার্বিক জীবনের মাল উন্নয়ন করতে পারে এজন্য তাদেরকে গর্ভকালীন ভাতা দেওয়া হয়।
চলুন জেনে নেওয়া যাক মাতৃকালীন ভাতা কত টাকা করে পাওয়া যায়।দুই সন্তানের ক্ষেত্রে তিন বছরব্যাপী প্রতিমাসে ৮০০ টাকা করে ভাতা প্রদান করা হয়। তো আশা করছি আপনারা এই অংশ থেকে গর্ভবতী ভাতা পাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে বিস্তারিত যাবতীয় তথ্য জেনে নিতে পেরেছেন।
গর্ভবতী ভাতা সম্পর্কে লেখকের মতামত
গর্ভবতী ভাতা নিয়ে সর্বশেষ কথা হিসেবে বলব আপনি অথবা আপনার আশেপাশের কেউ যদি হতদরিদ্র পরিবারের গর্ভবতী থেকে থাকে তাহলে অবশ্যই তার এই গর্ভবতী ভাতা কার্ডের জন্য আবেদন করতে সহযোগিতা করা উচিত। বর্তমান সময়ে এসে বলতে গেলে প্রায় বেশিরভাগ নারীদেরই নরমালে আর বাচ্চা হয় না বেশিরভাগ ক্লিনিকে বা মেডিকেলে অর্থাৎ সিজারে বাচ্চা হয়।
এতে করে তাদের অনেক টাকা খরচ করতে হয়। আর বাংলাদেশের সরকার থেকে গর্ভবতী ভাতার ব্যবস্থা করা হয়েছে এই খরচের কিছুটা অংশ পুষিয়ে নেওয়ার জন্যই। আমাদের বাংলাদেশের গ্রাম অঞ্চল এর দিকে সবথেকে বেশি হতদরিদ্র গরিব পরিবার রয়েছে। আপনি যদি একজন দরিদ্র পরিবারের সদস্য হয়ে থাকেন, তাহলে এই পোষ্টটি পড়ে এতক্ষণে গর্ভবতী ভাতার আবেদন করার নিয়ম জানতে পেরেছেন।
আমরা ইতিমধ্যে গর্ভবতী ভাতার আবেদন করার নিয়ম নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছি। আপনি যদি পুরো পোস্টটি পড়ে থাকেন তাহলে আশা করছি আপনারা এতক্ষণে গর্ভবতী ভাতা সম্পর্কে সকল ধরণের প্রশ্নের উত্তর জানতে পেরেছেন। তবে এছাড়াও গর্ভবতী ভাতা সম্পর্কে আপনার কোন মতামত থাকলে তা এই পোষ্টের কমেন্ট বক্সে জানাতে ভুলবেন না। ধন্যবাদ।