কারি পাতা একটি উপকারি পাতা, যার মধ্যে উপকারী গুন রয়েছে। যার কারনে প্রাচীনকাল থেকে এ পাতার ব্যবহার চলে আসছে। তবে এ পাতার সঠিক উপকার সম্পর্কে অনেকের ধারনা নেয়। তাই কারি পাতার সঠিক উপকারিতা সম্পর্কে তথ্য দিতে আমাদের আজকের আর্টিকেল।
আমাদের আজকের আর্টিকেলের আলোচ্য বিষয় হচ্ছে কারি পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে। পুরো আর্টিকেলটি পড়ার মাধ্যমে জেনে যাবেন, কারি পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে। এছারাও কারি পাতা খাওয়ার নিয়ম, কারি পাতা চেনার উপায়, কারি পাতার ব্যবহার সহ বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ন তথ্য কারি পাতা সম্পর্কে জানতে পারবেন।
কারি পাতার উপকারিতা
কারি পাতার মধ্যে প্রচুর স্বাস্থ উপকারী গুন রয়েছে। যা আমাদের শরীরকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে থাকে। কারি পাতার মধ্য থেকে ভিটামিন এ,বি,ই,সি, ক্যালসিয়াম, আয়রন, ফসফরাস, ম্যাগনেনিসয়ামসহ আরও বেশ কিছু পুষ্টিউপাদান রয়েছে। এছারাও রয়েছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান। যার ফলে এ পাতা আমাদের স্বাস্থ সুরক্ষায় সহায়তা করে থাকে। জেনে নিন কারি পাতার উপকারিতা সম্পর্কে।
চোখের স্বাস্থ ভালো রাখে: কারি পাতার মধ্যে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এ’ পাওয়া যায়, যার কারনে এটি খেলে চোখের স্বাস্থকে ভালো রাখে।
স্ট্রেস দূর হয়: কারি পাতার মধ্যে থাকা ভিটামিন সি শরীর থেকে টক্সিন বের করতে সহায়ত করে, যার ফলে স্ট্রেস দূর হয়।
ত্বকের স্বাস্থ ভালো থাকে: কারি পাতার মধ্যে থাকা ভিটামিন ই’ ত্বকের ব্রন ও পিম্পল প্রতিরোধ করে এবং ত্বকের স্বাস্থ ভালো রাখে।
কোলেস্টেরল ঠিক রাখে: কারি পাতার মধ্যে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে, যা রক্তের খারাপ কোলেস্টেরল কমায় এবং ভালো কোলেস্টেরলকে বাড়ায়।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়: কারি পাতার মধ্যে রয়েছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সহায়তা করে এবং শরীরকে বিভিন্ন রোগ থেকে মুক্তি দেয়।
ক্ষতস্থানের ক্ষত সারায়: কারি পাতা অ্যান্টিসেপ্টিকের ন্যায় কাজ করে থাকে। তাই কোনো কাটা স্থানে কারি পাতা বেটে লাগালে ক্ষত স্থান দ্রুত সেরে উঠে।
ওজন কমায়: কারি পাতা অতিরিক্ত ওজন নিয়ন্ত্রনে আনে। কারি পাতা রস করে নিয়মিত খেলে অতিরিক্ত ওজনকে কমিয়ে ওজন নিয়ন্ত্রনে আনতে সহায়তা করে থাকে।
হার্টের স্বাস্থ ভালো রাখে: কারি পাতার মধ্যে থাকা উপাদান হার্টের স্বাস্থকে ভালো রাখে।
ক্যান্সারের ঝুঁকি কমে: কারি পাতার মধ্যে রয়েছে ফেনলস, যা ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতে সহায়তা করে।
শারিরিক সুস্থতায় কারি পাতা দারুন উপকারী। তাই উপরের রোগগুলো প্রতিরোধ করতে এবং বিভিন্ন রোগের ঝুঁকি কমাতে নিয়মিত খেতে পারেন কারি পাতার রস।
কারি পাতা খাওয়ার নিয়ম
কারি পাতা শরীরের জন্য উপকারি একটি ভেষজ উপাদান। এ পাতার রয়েছে একাধিক গুন। তাই চিকিৎসকেরা এটি খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন। তবে প্রশ্ন হলো কারি পাতার উপকার পেতে, এ পাতা খাওয়ার নিয়ম কি। কোন কোন নিয়মে কারি পাতা খাওয়া স্বাস্থের জন্য উপকারী অনেকেই জানতে চেয়ে থাকেন। তো চলুন নিচের আলোচনা থেকে জেনে নিন কারি পাতা খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে।
১. স্বাস্থ উপকারিতা পেতে কয়েকটি কচি কারি পাতা প্রতিদিন রাতে এক গ্লাস পানিতে ভিজিয়ে রাখুন। পরদিন সকালে শুধু পানিটুকু ছেঁকে পান করুন। এ নিয়মে কারি পাতা খেলে ইমিউনিটি বাড়বে, কোলেস্টেরল ঠিক থাকবে, পেটের সমস্যা কমবে, দুশ্চিন্তা কমবে এবং বিভিন্ন রোগ দূরে যাবে।
২. কারি পাতার উপকার পেতে ৩ থেকে ৪ টি কচি পাতা নিয়ে সকালে চিবিয়ে খাবেন। এ পদ্ধতিতে কারি পাতা খেলে রয়েছে বেশ কিছু উপকার। যেমন-ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রন করে, হজমে ভালো কাজ করে, কোষ্ঠকাঠিন্য দূর হয়, ওজন কমায়, দাঁতের ব্যাকটেরিয়া দূর করে ইত্যাদি।
৩. কারি পাতা পরিমানমতো জলের সাথে দিয়ে সেদ্ধ করে, ছেঁকে নিন। এরপর পানি ঠান্ডা হলে সে পানির সাথে লেবুর রস ও মধু মিশিয়ে খাবেন বিভিন্ন উপকার পাবেন।
৪. বিভিন্ন রান্নায় কারি পাতা ব্যবহার করতে পারেন। এ পাতা শুধু রান্নায় স্বাদ বাড়ায় না, বরং এ থেকে বেশ কিছু স্বাস্থ উপকারিতাও পাওয়া যায়। সেক্ষেত্রে এ পাতা শাকসবজি, ওটসের সাথে যোগ করে এবং সালাদ বানিয়ে খেতে পারেন।
যারা কারি পাতা খেতে চাইছেন, তারা স্বাস্থের সঠিক উপকার পেতে উপরের নিয়মগুলো ফলো করে কারি পাতা খাবেন। সঠিক নিয়মে কারি পাতা খান, আপনার শরীরে কারিপতার উপস্থিতি বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধ করবে বলে আশা করা যায়।
কারি পাতা চেনার উপায়
মানবস্বাস্থেও জন্য দারুন উপকারী কারি পাতা। খাবারের স্বাদ বাড়াতে ব্যপক ভাবে পরিচিত এ পাতা। ভারতীয় প্রায় সকল পরিবারের রান্নায় ব্যবহৃত অপরিহার্য একটি উপাদান। ভারতে এ পাতা খুবই পরিচিত হলেও বাংলাদেশে প্রায় অনেকের এ পাতার সম্পর্কে জানা নেই। তাই অনেকেই প্রশ্ন করে থাকেন কারি পাতা চেনার উপায় কি। তো চলুন নিচের আলোচনা থেকে জেনে নিন কারি পাতা চেনার উপায় সম্পর্কে।
কারি পাতা সাধারনত রান্নার রুচি বাড়াতে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। তবে এ পাতার অনেক স্বাস্থ উপকারী গুন থাকার কারনে অনেকেই এ পাতা খেতে চাই। অনেকেই নিম পাতাকে কারি পাতা ভাবে, তবে নিম পাতা এবং কারি পাতা একই নয়। তবে কারি পাতা অনেকটাই দেখতে নিম পাতার মতোই। কারি পাতা স্বাদে মিষ্টি ও এর ঝাঁঝালো গন্ধ রয়েছে। অন্যদিকে নিম পাতা স্বাদে তেতো।
কারি গাছের উচ্চতা মাঝারি, প্রায় পাঁচ থেকে ছয় মিটার উঁচু হয়ে থাকে। কারি পাতার আকার অনেকটাই নিম পাতার মতোই, তবে নিম পাতার থেকে কিছুটা ছোট এবং ঘন হয়ে থাকে এ পাতা। এ গাছের ফুল সাদা এবং ফল নিম ফলের মতোই দেখতে। তবে নিম ফল পরিপক্ক হলে এর রঙ সবুজ রয়ে যায়, অন্যদিকে কারি ফল পরিপক্ক হলে সবুজ থেকে লাল অথবা কালো হতে দেখায়।
চুলের যত্নে কারি পাতার ব্যবহার
শরীর স্বাস্থ ভালো রাখার জন্য আমাদের যেমন শরীরের যত্ন নিতে হয়, তেমনি চুল ভালো রাখতে চাইলে নিতে হবে চুলের সঠিক যত্ন। কিছু প্রাকৃতিক উপাদান রয়েছে যা, চুলের স্বাস্থকে ভালো রাখতে সাহায্য করে, তার মধ্যে একটি হলো কারি পাতা। কারি পাতার মধ্যে অ্যান্টিফাঙ্গাল এবং অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল উপাদান প্রচুর পরিমাণে রয়েছে যা চুল পড়া, চুলে খুশকি প্রতিরোধ ও চুলের বৃদ্ধি ঘটাতে সহায়তা করে। এছারাও চুলকে একাধিক সমস্যার হাত থেকে বাঁচায়।
- তাই চুলের সঠিক যত্ন নিতে ব্যবহার করতে পারেন কারি পাতা। চুলের যত্নে কারি পাতা খুবই কার্যকারী একটি পাতা। এ পাতা চুলের স্বাস্থ ভালো রাখতে গুরুত্বপূর্ন ভূমিকা পালন করে থাকে। কারি পাতা চুলের যত্নে কি কি উপকার করে এবং কিভাবে এ পাতা ব্যবহার করতে হয় অনেকের সঠিক নিয়ম জানা নেই। তো চলুন জেনে নিন চুলের যত্নে কারি পাতার ব্যবহার সম্পর্কে।মেথি, আমলকি ও কারি পাতা একসাথে তিনটি উপাদান পরিমাণমতো নিয়ে একসাথে মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করুন। এরপর মিশ্রনটি চুলে লাগিয়ে ৩০ মিনিট মতো অপেক্ষা করে শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে নিন।
- কারি পাতার সাথে টকদাই একসাথে মিশিয়ে মিশ্রন তৈরি করে নিন। এরপর মিশ্রনটি চুলের গোড়া থেকে আগা পর্যন্ত লাগিয়ে ৩০ মিনিট মতো রেখে ধুয়ে নিন। মাথার ত্বক পরিষ্কার হবে এবং চুল হবে ঝলমলে।
- কারি পাতা ভালো ভাবে ব্লেন্ড করে তা নারিকেলের তেলের সাথে মিশিয়ে চুলায় ফুটিয়ে, ঠান্ডা হয়ে গেলে তা চুলে ও স্ক্যাল্পে মালিশ করুন। এ পদ্ধতিতে নিয়মিত কারি পাতা ব্যবহার করলে চুল পড়া অনেকটাই কমে যাবে।
- কারি পাতা ও পেঁয়াজ দুটি উপাদান একসাথে ভালোভাবে ব্লেন্ড করে নিন। এরপর সেটা চুলে ও স্ক্যাল্পে ভালোভাবে লাগিয়ে ১ ঘন্টা মতো রেখে ধুয়ে নিন। চুল পড়া কমবে এবং চুলের বৃদ্ধি ঘটবে।
- কারি পাতা ব্লেন্ড করে তার সাথে অ্যালোভেরার জেল মিশিয়ে ভালোভাবে মিশ্রন তৈরি করে নিন। এরপর মিশ্রনটি ভালোভাবে চুলে লাগিয়ে ১ ঘন্টা মতো রেখে ধুয়ে ফেলুন। নতুন চুল গজাতে এ পদ্ধতি অনেক উপকারী।
- চুলের আগা ফাটা প্রতিরোধ করতে শুধু কারি পাতা ব্লেন্ড করে লাগাবেন উপকার পাবেন।
কারি পাতার মধ্যে থাকা গুনাগুন আপনার চুলের স্বাস্থকে ভালো রাখতে সহায়তা করবে। তাই চুলের যত্ন নিতে কারি পাতা উপরের নিয়মে ব্যবহার করতে পারেন। এছারাও চুলের স্বাস্থ ভালো রাখতে বেছে নিতে পারেন কারি পাতার তেল।
কারি পাতার অপকারিতা
স্বাস্থ সুরক্ষায় কারি পাতা খুবই উপকারি, তা আমরা জেনে গেছি। তবে এ পাতা খাওয়ার সঠিক নিয়ম রয়েছে। এ পাতা উপকারি বলে, যতটুকু ইচ্ছা এ পাতা খাওয়া ঠিক নয়। অতিরিক্ত এ পাতা খাওয়া স্বাস্থের জন্য ক্ষতিকর। জেনে নিন কারি পাতা অতিরিক্ত খেলে কি কি অপকারিতা দেখা দেয়।
এসিডিটি: পরিমিত কারি পাতা খাওয়া এসিডির সমস্যার সমাধান করে থাকে। তবে অতিরিক্ত এ পাতা খেলে এসিডিটির সমস্যা বেড়ে যায়।
পেটে ব্যাথা: অতিরিক্ত কারি পাতা খেলে পেটে ব্যাথা হতে পারে। কারি পাতার মধ্যে রয়েছে ফাইবার, যার ফলে অতিরিক্ত ফাইবার আমাদের শরীরের মধ্যে প্রবেশ করলে পেটে ব্যাথার সমস্যা হয়ে থাকে।
রক্ত জমাট বাধার সমস্যায়: আপনার যদি রক্ত জমাট বাধার সমস্যা হয়ে থাকে, তাহলে এ পাতা খাওয়া আপনার জন্য ক্ষতিকারক। কারি পাতায় থাকা কুমারিন এ সমস্যাকে বাড়িয়ে তোলে।
গর্ভাবস্থায়: গর্ভবতী মায়ের কারি পাতা খাওয়া স্বাস্থের জন্য ঝুঁকিপূর্ন। কারি পাতার মধ্যে এমন কিছু বৈশিষ্ট রয়েছে যা গর্ভবতী মায়ের গর্ভপাতের ও অকাল প্রসবের ঝুঁকিকে বাড়িয়ে দেয়।
উপরের আলোচনা থেকে বোঝা যায়, কারি পাতা স্বাস্থের জন্য উপকারি। তবে এ পাতা খেতে হবে পরিমিত। কারন অতিরিক্ত কারি পাতা বিভিন্ন রোগের ঝুঁকি বাড়ায়। তাই আপনার স্বাস্থ সুরক্ষায় কারি পাতা পরিমিত এবং সঠিক সময়, সঠিক নিয়মে খেতে হবে।
লেখকের শেষ বক্তব্য
কারি পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে আজকের এই ব্লগে সকল তথ্য তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। আশা করি কারি পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে আপনি বিস্তারিত জানতে পেরেছেন।
এতক্ষণ আমাদের সঙ্গে থাকার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। যদি আপনি এই ধরনের প্রয়োজনীয় বিভিন্ন ব্লগ পোস্ট নিয়মিত পড়তে চান তাহলে আপনাকে প্রতিনিয়ত আমাদের এই ওয়েবসাইট ফলো করতে হবে।