বিধবা ভাতা আবেদন করার নিয়ম

আপনি কি বিধবা ভাতা আবেদন করার নিয়ম জানতে চাচ্ছেন? তাহলে আপনি এখন এ বিষয়ে সঠিক তথ্য পেতে সঠিক জায়গাতে এসেছেন। আমাদের বাংলাদেশের সমাজে এমন অনেক অনেক মহিলা আছেন যারা মূলত খুব অল্প বয়সে স্বামী হারা বা বিধবাভয়ে যায়। আর একটি সংসারে স্বামী মারা গেলে সেই সংসার চালানোর মতো কোনো অর্থ বা উপায় থাকে না।

বিধবা ভাতা আবেদন করার নিয়ম

যিনি বিধবা হয়েছেন তার যদি কোন ছেলে-মেয়ে থেকে থাকে তাহলে তো একবেলা ভাত খাওয়া অনেক মহিলার ক্ষেত্রে কষ্টসাধ্য হয়ে যায়। যদি তার স্বামী তার নিজের জন্য কোন অর্থ রেখে যায় তাহলে দেখা যায় সন্তানদের নিয়ে এই দুনিয়ায় টিকে থাকার জন্য সংগ্রাম করতে হয় । আর সবচেয়ে বর কথা হচ্ছে এতে সব থেকে বেশি তার সন্তানদের কষ্ট হয়। 

উপস্থাপনা - বিধবা ভাতা

বিধবা ভাতা হলো বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক প্রদানকৃত একটি সামাজিক ভাতা যা সমাজের দুঃস্থ বিধবা মহিলাদের দেওয়া হয়। আর এই ভাতাকে বিধবা ও স্বামী নিগৃহীতা মহিলা ভাতা বলা হয়। এটি মূলত সমাজের দুর্বল নারী, অবলা নারীদের, স্বামী হারা নারীদের আর্থিকভাবে সাহায্য করার উদ্দেশ্যে দেওয়া হয়ে থাকে। ১৯৯৮-৯৯ অর্থবছরে সমাজসেবা অধিদফতররের মাধ্যমে বিধবা ও স্বামী নিগৃহীতা মহিলাদের জন্য ভাতা চালু করা হয়।

আপনি যদি আজকের এই ব্লগপোষ্টটি শুরু থেকে একেবারে শেষ অবদি পড়েন তাহলে  বিধবা ভাতা আবেদন করার নিয়ম সম্পর্কে জেনে নেওয়ার পাশাপাশি বিধবাভাতা আবেদনের শর্তাবলী , বিধবা ভাতা আবেদন যাচাই, বিধবা ভাতা কত টাকা, বিধবা ভাতা আবেদন ফরম pdf, বিধবা ভাতার লিষ্ট ইত্যাদি সম্পর্কে বিস্তারিত যাবতীয় তথ্য জেনে নিতে পারবেন।

আরো পড়ুন: বয়স্ক ভাতা আবেদন - বয়স্ক ভাতা মাসে কত টাকা

বিধবাভাতা আবেদনের শর্তাবলী 

বিধবাভাতা আবেদন করার জন্য আপনার বেশ কয়েকটি যোগ্যতা থাকতে হবে। বিধবাভাতা পেতে হলে আপনাকে যেসব শর্তগুলো মানতে হবে তা নিম্নে তুলে ধরা হলঃ

  • সংশ্লিষ্ট এলাকার স্থায়ী বাসিন্দা হতে হবে।
  • জন্ম নিবন্ধন/জাতীয় পরিচয়পত্র থাকতে হবে।
  • বয়ঃবৃদ্ধা অসহায় মহিলাকে অগ্রাধিকার প্রদান করা হবে।
  • যেই মহিলা বলতে গেলে প্রায় ভূমিহীন, অসহায়, বা স্বামী পরিত্যক্তা এবং এর পাশাপাশি যাদের যার ১৬ বছর বয়সের নীচে ২টি ছেলে মেয়ে আছে, সন্তন রয়েছে তারা অগ্রাধিকার পাবেন।
  • যারা স্বামী হারিয়েছেন তাদের মধ্যে কেউ যদি প্রতিবন্ধী ও অসুস্থ হয়ে থাকে তারা বিধবা ভাতার জন্য বেশি অগ্রাধিকার পাবেন।
  • প্রার্থীর বার্ষিক গড় আয় অনূর্ধ ১২,০০০ (বারো হাজার) টাকা হতে হবে।
  • বাছাই কমিটি কর্তৃক নির্বাচিত হতে হবে।

আপনাকে বিধবাভাতা আবেদন এর জন্য উপরের উল্লেখিত যোগ্যতা বা শর্তগুলো মানতে হবে। আশা করি এই পর্যন্ত পড়ে আপনারা বিধবা ভাতার আবেদন এর জন্য কি কি প্রয়োজন বা আবেদন এর নিয়ম সম্পর্কে জানতে পেরেছেন। চলুন বিধবাভাতা নিয়ে আরো কিছু তথ্য জেনে নেই। 

বিধবা ভাতা আবেদন করার নিয়ম

অনলাইনে বিধবা তার জন্য আবেদন করতে সমাজসেবা অধিদপ্তরের সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি বিষয়ক ওয়েবসাইটে বিধবা ভাতার জন্য আবেদন করতে হয়। আপনার মনে রাখতে হবে যে আবেদন সাবমিট করার পর তা পুনরায় সংশোধন করা যায়না।

তাই সটিকভাবে আবেদন করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ কারণ এই আবেদনের ভিত্তিতেই যোগ্য প্রার্থী বাচাই করা হয়। নিচে কয়েকটি ধাপ এ আবেদন এর নিয়ম গুলো বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।

ধাপ ১: বিধবাভাতা আবেদন করার জন্য যে কাজটি করতে হবে সেটি হচ্ছে আপনার মোবাইল বা ডেক্সটপ থেকে যেকোন ব্রাউসার থেকে আপনাকে প্রথমে সামাজসেবা অধিদপ্তরের সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি ওয়েবসাইট এ অতএব আপনাকে এই লিংকে প্রবেশ করতে হবে।

এখানে কার্যক্রম অপশনে ভাতার ধরন নির্বাচন করুন এবং সংরক্ষণ এ ক্লিক করুন। এবার আপনি বিস্তারিত একটি অনলাইন আবেদন ফরম দেখতে পাবেন।

ধাপ ২: এবার ব্যক্তিগত তথ্য যাচাই করুন। অনলাইনে আবেদন এর জন্য এবার আপনার জাতীয় পরিচয়পত্র ও জন্ম নিবন্ধন পত্র যাচাই করতে হবে।আপনার কাছে যে ডকুমেন্টস আছে তা যাচাই করুন জাতীয় পরিচয় পত্র থাকলে তার নাম্বার লিখুন।

তারপর জন্মতারিখ অপশনে গিয়ে জাতীয় পরিচয় পত্রে যে জন্মতারিখটি দেওয়া আছে সেটি সিলেক্ট করুন। এবার যাচাই করুন লেখায় ক্লিক করুন। খেয়াল রাখবেন ক্যালেন্ডার অপশন থেকে সঠিক জন্মতারিখ সিলেক্ট করবেন না হলে ভেরিফাই করতে পারবেন না।

ধাপ ৩: বিধবা স্বামী নিগৃহীতা মহিলার ভাতা অনুযায়ী বিস্তারিত তথ্য দিন। এই তথ্য গুলোর মাধ্যমে ভাতার জন্য আবেদন করা প্রার্থী অবস্থা তুলে ধরতে হবে। এই ধাপে প্রয়োজনীয় তথ্য গুলো হলো:

  • শিক্ষাগত যোগ্যতা ( আপনার শিক্ষাগত যোগ্যতা সিলেক্ট করুন)
  • বৈবাহিক অবস্থান (বিবাহিত, বিধবা,তালাক প্রাপ্ত) নির্বাচন করুন।
  • আপনার পরিবার বা খানার সদস্য সংখ্যা সিলেক্ট করুন।
  • আপনার পেশা কি নির্বাচন করুন।
  • বার্ষিক আয় এর পরিমাণ নির্বাচন করুন।
  • স্বাস্থ্য ও কর্মক্ষমতা সংক্রান্ত তথ্য দিন।
  • সরকারি বা বেসরকারি কোনো সুবিধা পেয়ে থাকলে সেটি উল্লেখ করুন।
  • বাসস্থানে ভূমির মালিকানা সম্পর্কে তথ্য দিন।

ধাপ ৪: আবেদনকারীর যোগাযোগের ঠিকানা সম্পর্কিত তথ্য দিতে হবে। এই ধাপে আপনাকে আপনাকে বা আবেদনকারির বর্তমান ঠিকানা সম্পর্কে তথ্য দিতে হবে যেমন –

  • বিভাগ,জেলা,উপজেলা সিলেক্ট করুন।
  • অবস্থান অপশনে আপনি যে এলাকা থাকেন (ইউনিয়ন পরিষদ, সিটি কর্পোরেশন, পৌরসভা) সিলেক্ট করুন।
  • পোষ্ট কোড লিখুন।
  • গ্রাম/ হোল্ডিং ঠিকানা দিন।
  • বর্তমান ঠিকানা স্থায়ী ঠিকানা একই হলে “একই ঠিকানা ” পার্শবর্তী অপশনটি তে ঠিক মার্ক দিন।
  • আপনার একটি ইমেইলে ঠিকানা লিখুন।
  • একটি সচল মোবাইল নাম্বার দিন এবং মোবাইলে এর মালিকানা নির্বাচন করুন।
  • এবার আপনার ধাপ ৪ কমপ্লিট হলো চলুন এখন ধাপ ৫ যাই।

ধাপ ৫: এবার আপনি এখানে বিধবা ভাতার জন্য যোগ্য কিনা সেই সম্পর্কে তথ্য গুলো পূরণ করুন। যেমন – বাসগৃহের তথ্য,খানা প্রধান এর তথ্য ও খানায় বিভিন্ন সুবিধা প্রাপ্তি তথ্য। গত এক বছরে আবেদনকারী বাসগৃহে বিদেশে অবস্থাকারী কারো নিকট থেকে অর্থ পেয়েছেন কি না। পরিবারের কোনো সদস্য গত ১ বছর সামাজিক নিরাপত্তাবেষ্টনী কর্মসূচির আওতায় কোনো সাহায্য পেয়েছেন কি না।

এবার আপনি আপনার সকল তথ্য সঠিকভাবে দিয়েছেন কি না তা ভালো করে পড়ে একবার যাচাই করে নিন। সকল তথ্য সঠিক হলে এবার আপনি নিচের সংরক্ষণ বাটনে ক্লিক করে অনলাইনে বিধবা ভাতার আবেদন ফরম জমা দিন।

ধাপ ৬: আবেদন কপি ডাউনলোড করতে হবে। অনলাইনে বিধবা ভাতার আবেদন সাবমিট করার পর, আপনার আবেদনটি সফলভাবে গৃহীত হয়েছে লেখা একটি পেজ দেখতে পাবেন। সেখান থেকে আপনি প্রিন্ট একটা অপশন পাবেন সেখানে ক্লিক করে আবেদন ফরমটি ডাউনলোড করে নিন বা প্রিন্ট করে নিন।পরবর্তীতে ফরমটি স্হায়ী চেয়ারম্যান বা পৌরসভার কাউন্সিলরের কাছ থেকে সাক্ষর নিয়ে আবেদন ফরমটি সংরক্ষণ করোন।

ধাপ ৭: জনপ্রশাসন কার্যালয়ে আবেদন জমা দিতে হবে। মূলত বিধবা ভাতা আবেদনের মূল কার্যক্রম উপজেলা সমাজসেবা অধিদপ্তরে পরিচালিত হয়। তাই সেখানে আপনি আপনার আবেদন ফরমটি জমা দিতে হব। আবেদন ফরম জমা দিতে যা প্রয়োজন –

  • আবেদনকারী জাতীয় পরিচয়পত্রের কপি
  • অনলাইনে আবেদন ফরমের প্রিন্ট কপি
  • পুণ্যবিবাহ না করার প্রত্যায়ন পত্র
  • আপনার নাগরিক সনদপত্র

সমাজসেবা অধিদপ্তরের কর্মকর্তার নিকট এসব কাগজ সহ ফরমটি জমা দিতে হবে। তারপর যাচাই-বাছাই করার পর আপনি যোগ্য মনে হলে আপনি ভাতার জন্য অনুমোদন পাবেন বা আপনার আবেদন ফরমটি গ্রহন হবে।

বিধবা ভাতা আবেদন যাচাই

বিধবা ভাতা আবেদন যাচাই

বিধবা ভাতা আবেদন যাচাই করতে হলে প্রথমে আপনাকে এই লিংকে ক্লিক করে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচী সমাজসেবা অধিদফতর এর ওয়েবসাইটে প্রবেশ করতে হবে। এরপর কার্যক্রম অপশন থেকে “বিধবা ও স্বামী নিগৃহীতা মহিলা ভাতা” সিলেক্ট করে নিতে হবে। এরপর “আইডি যাচাই [NID,BRIS] ” অপশন থেকে আপনার আবেদনের আইডি নাম্বারটি বসিয়ে দিতে হবে। তারপরে আপনার সঠিক ট্র্যাকিং নম্বর দিয়ে “ট্র্যাকিং আবেদনপত্র” ক্লিক করে দিলে আপনার বিধবা ভাতা আবেদন যাচাই করতে পারবেন।

বিধবা ভাতা কত টাকা

১ জুন বৃহস্পতিবার ২০২৩ তারিখে জাতীয় সংসদের স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপস্থিতিতে ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত বাজেটে অর্থমন্ত্রী আহম মুস্তফা কামাল জানান, বিধবা ও স্বামী নিগৃহীতা নারী ভাতাভোগী ২৪.৭৫ লাখ থেকে ২৫.৭৫ লাখ জনে বৃদ্ধি করা হয়েছে এবং মাসিক ভাতার হার ৫০০ টাকা হতে ৫৫০ টাকা বাড়ানো হয়েছে।

আরো পড়ুন: প্রতিবন্ধী ভাতা অনলাইন আবেদন করার নিয়ম

বিধবা ভাতা আবেদন ফরম pdf

আপনারা অনেকেই বিধবা ভাতা আবেদন ফরম কোথায় পাবেন বা কিভাবে সংগ্রহ করবেন সেটা বুঝে উঠতে পাররেন না। আবার অনেকেই প্রশ্ন করে থাকেন যে আমি অনলাইনে কোন ওয়েবসাইট থেকে  বিধবা ভাতার জন্য আবেদন করতে পারব? 

তাই আমরা আপনাদের সুবিধার কথা ভেবে পোষ্টের এই পাঠে  বিধবা ভাতা আবেদন ফরম pdf কোন সাইটে পাবেন তা উল্লেখ করেছি। মূলত বিধবা ভাতার Application Form এখান থেকেই সংগ্রহ করে নিতে পারবেন। বিধবা ও স্বামী পরিত্যাক্ত ভাতা আবেদন ফরম এই লিংক থেকে ডাউনলোড করে নিন।

বিধবা ভাতা লিস্ট

২০২৩-২৪ অর্থবছরে বিধবা ও স্বামী হারানো মহিলাদের ভাতা কর্মসূচির আওতায় ইউনিয়ন/পৌরসভার ওয়ার্ডভিত্তিক অতিরিক্ত বরাদ্দ বিভাজন প্রেরণ বা বিধবা ভাতা লিস্ট দেখতে হলে আপনাকে এই লিংকে প্রবেশ করতে হবে। এখানে প্রতিটা জেলা ভিত্তিক বিধবা ভাতা লিস্ট দিয়ে থাকে। 

এখান থেকে আপনাকে আপনার জেলা বাছাই করতে হবে তার পিডিএফ ফাইলে নিয়ে যাবে। সেখানে সার্চ একটা অপশন আছে ওখানে সঠিক নাম লিখে সার্চ করলে আপনার জেলার পুরো লিস্টটি দেখতে পাবেন। তারপর আপনি চাইলে ডাউনলোড করে নিয়ে রাখতে পারেন। 

বিধবা ভাতা সম্পর্কে লেখকের মতামত

সারাদেশে অগনিত অসহায়,তালাকপ্রাপ্ত,স্বামী নিগৃহীতা বা বিধবা নারী রয়েছেন বিধবা ভাতা বা স্বামী নিগৃহীতা ভাতা তাদের জন্য একটি বিশাল এক আশার আশ্রয়। আজকের এই আর্টিকেলটি সেই সব নারীদের তাদের আশ্রয় এর আশাকে পূরন করতে কিছুটা হলে ও সাহায্য করবে। 

সমাজের অসহায় নারীরা যদি এই ভাতার আওতায় আসেন তাহলে কিছুটা হলেও তারা অর্থিক ভাবে সাপোর্ট পাবেন এবং কিছুটা হলেও তাদের জীবনধারন সহজ হবে। আমরা ইতিমধ্যে বিধবা ভাতা আবেদন করার নিয়ম নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছি। 

আপনি যদি পুরো পোস্টটি পড়ে থাকেন তাহলে আশা করছি আপনারা এতক্ষণে বিধবা ভাতা সম্পর্কে সকল ধরণের প্রশ্নের উত্তর জানতে পেরেছেন। তবে এছাড়াও বিধবা ভাতা সম্পর্কে আপনার কোন মতামত থাকলে তা এই পোষ্টের কমেন্ট বক্সে জানাতে ভুলবেন না। ধন্যবাদ।

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন
comment url