আপনি বাংলাদেশের শীর্ষস্থানীয় এনজিওগুলো সম্পর্কে জানতে চেয়েছেন। বাংলাদেশে এনজিওগুলো শুধু লোন দিয়েই কাজ করে না, তারা শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কৃষি, জেন্ডার সমতা, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা, পরিবেশ রক্ষা ইত্যাদি এরকম নানা ধরনের উন্নয়নমূলক কাজ করে থাকে। এই সংস্থাগুলো দেশের দারিদ্র্য বিমোচন এবং সামাজিক পরিবর্তনে বিরাট ভূমিকা রাখে।
এই বেসরকারি সংস্থাগুলো শিক্ষা, স্বাস্থ্য, দারিদ্র্য বিমোচন, নারী ক্ষমতায়ন ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার মতো বিভিন্ন ক্ষেত্রে কাজ করে দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে অবদান রাখছে। এই পোস্টে আমরা বাংলাদেশের টপ ১০ এনজিও সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব।
যারা তাদের কার্যক্রমের মাধ্যমে দেশে ও বিশ্বে প্রশংসিত হয়েছে। এই তালিকা তৈরিতে আমরা শাখার সংখ্যা, প্রভাব ও সামাজিক অবদানের মতো বিষয়গুলো বিবেচনা করেছি। আসুন তাহলে আর বেশি কথা না বাড়িয়ে এনজিও সম্পর্কে জেনে নেওয়ার মাধ্যমে বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক।
এনজিও কি?
এনজিও হচ্ছে মূলত বেসরকারি সংস্থা। এটি সরাসরি সরকারের মালিকানাধীন নয়। এর মূল উদ্দেশ্য সমাজের পিছিয়ে পড়া, দরিদ্র, সুবিধাবঞ্চিত মানুষের জীবনমান উন্নয়ন, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, পরিবেশ রক্ষা, নারী ক্ষমতায়ন, দারিদ্র্য বিমোচন, মানবাধিকার রক্ষা ইত্যাদি এরকম নানা ধরনের সামাজিক ও মানবিক উদ্দেশ্য পূরণের জন্য কাজ করে।
এনজিও হলো একদল মানুষের গড়ে তোলা এমন একটি সংস্থা যারা নিজেরা উদ্যোগ নিয়ে সমাজের ভালোর জন্য, বিশেষ করে যারা সরকারি সুযোগ-সুবিধা সহজে পায় না, তাদের জন্য কাজ করে।
বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর, একটি বেসরকারি সংস্থা যাকে কেবল এনজিও বলা হয়। বাংলাদেশে একটি অপরিহার্য দায়িত্ব ও ভূমিকা পালন করে। দেশের দরিদ্র জনগোষ্ঠীর আর্থিক ও অর্থনৈতিক অবস্থার উন্নয়নের জন্য, অনেক এনজিও অনেক কার্যক্রম গ্রহণ করছে।
যেসব আর্থিক সংগঠন কোন জাতীয় স্তর, সরকার, সম্প্রদায় এবং আন্তর্জাতিক স্তরের স্বাধীনভাবে একটি অলাভজনক গোষ্ঠী হিসাবে তাদের কাজ প্রদান করে তাদের কেবল একটি অলাভজনক সংস্থা বলা হয়। একে সুশীল সমাজও বলা হয়।
বর্তমানে বাংলাদেশে অনেক এনজিও পাওয়া যাচ্ছে। তারা দরিদ্র গ্রামীণ ও শহুরে মানুষের জন্য একটি উন্নয়নমুখী কাজ প্রদানের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে এবং তাদের সচেতনতা প্রদান করছে এবং সেই দরিদ্র গ্রামীণ ও শহুরে মানুষকে সংগঠিত করেছে।
বাংলাদেশের টপ ১০ এনজিও
নিচে বাংলাদেশের টপ ১০ এনজিও এর তালিকা দেওয়া হয়েছে। যারা তাদের কার্যক্রমের মাধ্যমে দেশের উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে। তালিকায় থাকা এনজিও তালিকা আমরা সারিবদ্ধ ভাবে তালিকাভুক্ত করেছি। তালিকা নিম্নরূপ:
ব্র্যাক (BRAC): বাংলাদেশের টপ ১০ এনজিও তালিকায় প্রথম স্থানে রয়েছে ব্র্যাক। স্যার ফজলে হাসান আবেদ কর্তৃক ১৯৭২ সালে প্রতিষ্ঠিত এই সংস্থা বিশ্বের বৃহত্তম বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা হিসেবে পরিচিত। ব্র্যাক বাংলাদেশ ছাড়াও ১০টি দেশে কাজ করে চলেছে। যেখানে তারা শিক্ষা, স্বাস্থ্য, ক্ষুদ্রলোন ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার মতো ক্ষেত্রে অবদান রাখছে।
কেন সেরা: ব্র্যাক শুধু বাংলাদেশের নয়, এটি বিশ্বের বৃহত্তম বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা। দ্য ইকোনমিস্ট এটিকে “বিশ্বের বৃহত্তম, দ্রুত বর্ধনশীল বেসরকারি সংস্থা – এবং সবচেয়ে ব্যবসার মতো একটি” হিসাবে বর্ণনা করেছে। এর কর্মপরিধি এতটাই বিশাল যে, আপনি হয়তো ভাবতেও পারবেন না!
কার্যক্রম: ব্র্যাকের মূল লক্ষ্য দারিদ্র্য বিমোচন এবং মানুষের ক্ষমতায়ন। তারা মানুষের জীবনে পরিবর্তন আনতে বহুমুখী কাজ করে। এর মধ্যে আছে:
- ক্ষুদ্রলোন
- শিক্ষা
- স্বাস্থ্য
- কৃষি ও খাদ্য নিরাপত্তা
- নারী ও যুবকদের ক্ষমতায়ন
যে কারণে বিশেষ: ব্র্যাক শুধু সাহায্য দেয় না, বরং মানুষের মাঝে আত্মবিশ্বাস তৈরি করে তাদের স্বাবলম্বী হতে সাহায্য করে। তাদের কাজের ধরণ অত্যন্ত সুসংগঠিত এবং পেশাদার।
আশা (ASA): আশাকে বাংলাদেশের অন্যতম শীর্ষ ক্ষুদ্রলোন প্রতিষ্ঠান বলা হয়। ১৯৭৮ সালে মোঃ শফিকুল হক চৌধুরী আশা এনজিও প্রতিষ্ঠা করেন। বাংলাদেশের টপ ১০ এনজিও তালিকায় এটি দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে এটি বলা যায়।
কেন সেরা: ব্র্যাকের পর বাংলাদেশের ক্ষুদ্রলোন কর্মসূচিতে আশা অন্যতম প্রধান নাম। সারা দেশে এর বিশাল নেটওয়ার্ক আছে এবং কোটি কোটি মানুষ এর ক্ষুদ্রলোন সেবার মাধ্যমে উপকৃত হচ্ছে।
কার্যক্রম:
- ক্ষুদ্রলোন
- ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প (MSME) লোন
- শিক্ষা ও স্বাস্থ্য
যে কারণে বিশেষ: আশার লোন আদায়ের হার খুব ভালো এবং তারা নিজেদের মডেলের মাধ্যমে অন্যান্য দেশের এনজিওগুলোকেও প্রভাবিত করেছে।
টিএমএসএস (TMSS): ১৯৮০ সালে প্রতিষ্ঠিত টিএমএসএস বাংলাদেশের বৃহত্তম নারী সংগঠন হিসেবে পরিচিত। অধ্যাপক ড. হোসনে-আরা বেগম এই সংস্থার নির্বাহী পরিচালক।
কেন সেরা: টিএমএসএস শুধু ক্ষুদ্রলোন নয়, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কৃষি, কর্মসংস্থান সৃষ্টি – এরকম নানা ক্ষেত্রে ব্যাপক কাজ করে। এর কর্মপরিধি বেশ বিস্তৃত।
কার্যক্রম:
- ক্ষুদ্রলোন
- স্বাস্থ্য
- শিক্ষা
- কৃষি ও পরিবেশ
- শিল্প ও বাণিজ্য
যে কারণে বিশেষ: টিএমএসএস একটি স্থানীয় উদ্যোগ হিসেবে শুরু হয়ে এখন সারাদেশে ছড়িয়ে পড়েছে এবং নিজেদের আর্থিক সক্ষমতা তৈরির মাধ্যমে টেকসই উন্নয়নে অবদান রাখছে।
বুরো বাংলাদেশ (Buro Bangladesh): বুরো বাংলাদেশ ১৯৯০ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। প্রতিষ্ঠার পর থেকেই তারা বাংলাদেশের মানুষের সামাজিক, অর্থনৈতিক, মানবিক ও পরিবেশগত টেকসই উন্নয়নে একযোগে কাজ করে যাচ্ছে।
কেন সেরা: বুরো বাংলাদেশ ক্ষুদ্রলোন কার্যক্রমের পাশাপাশি জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলা, দুর্যোগ প্রস্তুতি এবং অন্যান্য সামাজিক উন্নয়নমূলক কাজেও সক্রিয়।
কার্যক্রম:
- ক্ষুদ্রলোন
- জলবায়ু পরিবর্তন ও পরিবেশ
- খাদ্য নিরাপত্তা
- শিক্ষা ও স্বাস্থ্য
যে কারণে বিশেষ: তারা পরিবেশগত ঝুঁকি এবং জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবেলায় জোর দেয়, যা বর্তমান সময়ের জন্য অত্যন্ত জরুরি।
শক্তি ফাউন্ডেশন (Shakti Foundation): ১৯৯২ সালে প্রতিষ্ঠিত শক্তি ফাউন্ডেশন নারীদের সামাজিক ও অর্থনৈতিক ক্ষমতায়নের জন্য কাজ করে। ড. হুমাইরা ইসলাম এই সংস্থার প্রতিষ্ঠাতা।
কেন সেরা: শক্তি ফাউন্ডেশন বিশেষভাবে নারীর ক্ষমতায়ন এবং অর্থনৈতিক মুক্তির জন্য কাজ করে। তারা শুধু লোন দিয়েই থেমে থাকে না, নারীদের জন্য প্রশিক্ষণ ও অন্যান্য সহায়তাও দেয়।
কার্যক্রম:
- নারীদের জন্য বিশেষভাবে ডিজাইন করা ক্ষুদ্রলোন কর্মসূচি, যা তাদের ছোট ব্যবসা শুরু করতে বা স্বাবলম্বী হতে সাহায্য করে।
- নারী ও শিশুদের স্বাস্থ্য সেবা, পুষ্টি কর্মসূচি।
- নারীদের শিক্ষা ও সচেতনতা বৃদ্ধি।
- নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধ, জেন্ডার সমতা প্রতিষ্ঠা।
যে কারণে বিশেষ: তারা নারীর সামগ্রিক উন্নয়নে ফোকাস করে, যা সমাজে নারীর অবস্থান পরিবর্তনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
জাগরণী চক্র ফাউন্ডেশন: সমাজকল্যাণ নির্দেশিকা অনুসারে, তারা 1977 সালে তাদের নিবন্ধন অর্জন করছে। এই বেসরকারি সংস্থার নির্বাহী পরিচালক হলেন মোঃ আজাদুল কবির আরজু। তারা একটি দরিদ্র পরিবারের শিশুদের জন্য একটি শিক্ষা কেন্দ্রও পরিচালনা করছে। তারা সাক্ষরতা কর্মসূচিসহ অন্যান্য সেবা প্রদান করছে।
কেন সেরা: এটি একটি প্রাচীন এনজিও, যা মূলত দারিদ্র্য বিমোচন এবং কমিউনিটি ক্ষমতায়নের ওপর জোর দেয়। তারা শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও জীবিকা নির্বাহের বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে গ্রামীণ পরিবারের জীবনে প্রভাব ফেলছে।
কার্যক্রম:
- ক্ষুদ্রলোন
- শিক্ষা
- স্বাস্থ্য সচেতনতা
- কৃষি ও জীবিকা
- পরিবেশ ও দুর্যোগ
যে কারণে বিশেষ: তারা সামগ্রিক গ্রাম উন্নয়নের দিকে নজর দেয়, যেখানে শুধু অর্থায়ন নয়, মানুষের জ্ঞান ও সচেতনতা বৃদ্ধিতেও কাজ করে।
কারিতাস বাংলাদেশ (Caritas Bangladesh): কারিতাস বাংলাদেশ ১৯৬৭ সালে প্রতিষ্ঠা লাভ করে। ১৯৭৬ সালে এটি কারিতাস নামে পরিচিতি লাভ করে। এই সংস্থাটি মানবাধিকার, সামাজিক ন্যায়বিচার ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার জন্য কাজ করে। বাংলাদেশের টপ ১০ এনজিও তালিকায় এটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে আছে।
কেন সেরা: কারিতাস বাংলাদেশ একটি বহুমুখী উন্নয়ন সংস্থা, যারা ক্ষুদ্রলোনের পাশাপাশি শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কৃষি, পরিবেশ এবং দক্ষতা উন্নয়নের মতো বিভিন্ন খাতে কাজ করে।
কার্যক্রম:
- ক্ষুদ্রলোন
- শিক্ষা কর্মসূচি।
- স্বাস্থ্য ও পুষ্টি সচেতনতা
- কৃষি ও মৎস্য
- দারিদ্র্য বিমোচন
যে কারণে বিশেষ: তারা স্থানীয় চাহিদা অনুযায়ী বিভিন্ন কর্মসূচি ডিজাইন করে এবং মানুষের সামগ্রিক উন্নয়নে অবদান রাখে।
উদ্দীপন (UDDIPAN): উদ্দীপন হলো বাংলাদেশের একটি জাতীয় পর্যায়ের বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা (NGO)। এটি সমাজের দরিদ্র ও প্রান্তিক মানুষের জীবনমান উন্নয়নে কাজ করে থাকে। এটি ১৯৮৪ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল এবং তখন থেকে এটি বাংলাদেশের গ্রামীণ ও শহুরে উভয় এলাকার মানুষের আর্থ-সামাজিক অবস্থার পরিবর্তনে কাজ করে যাচ্ছে।
কেন সেরা: উদ্দীপন একটি বৃহৎ এনজিও যারা তৃণমূল পর্যায়ে দারিদ্র্য বিমোচন এবং টেকসই উন্নয়নে কাজ করে। তাদের লক্ষ্য প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর আর্থ-সামাজিক অবস্থার উন্নয়ন।
কার্যক্রম:
- ক্ষুদ্রলোন
- শিক্ষা
- স্বাস্থ্য সচেতনতা।
- কৃষি ও পরিবেশ
- সামাজিক উন্নয়ন
যে কারণে বিশেষ: তারা স্থানীয় পর্যায়ে মানুষের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করে এবং টেকসই উন্নয়নের দিকে মনোযোগ দেয়।
পদক্ষেপ মানবিক উন্নয়ন কেন্দ্র: পদক্ষেপ মানবিক উন্নয়ন কেন্দ্রহলো বাংলাদেশের একটি জাতীয় পর্যায়ের বেসরকারি সংস্থা। ১৯৮৬ সালে বরিশাল জেলার একটি প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে এর যাত্রা শুরু হয়েছিল। সংস্থাটির মূল উদ্দেশ্য হলো সমন্বিত উন্নয়ন কৌশলের মাধ্যমে দেশের পিছিয়ে পড়া, সুবিধাবঞ্চিত এবং সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ মানুষের, বিশেষ করে নারী ও শিশুদের আর্থ-সামাজিক অবস্থার উন্নতি ঘটানো।
কেন সেরা: পদক্ষেপ মানবিক উন্নয়ন কেন্দ্র একটি উল্লেখযোগ্য এনজিও যারা ক্ষুদ্রলোন কর্মসূচির মাধ্যমে মানুষের অর্থনৈতিক মুক্তির পাশাপাশি মানব সম্পদ উন্নয়নে জোর দেয়।
কার্যক্রম:
- ক্ষুদ্রলোন
- শিক্ষা সহায়তা
- স্বাস্থ্য ও পুষ্টি সচেতনতা
- দক্ষতা উন্নয়ন
- কৃষি ও পশুসম্পদ
যে কারণে বিশেষ: তারা বিশ্বাস করে যে শুধু অর্থ দিলেই হবে না, মানুষকে দক্ষ করে তুলতে হবে যাতে তারা নিজেরাই নিজেদের ভাগ্য গড়তে পারে।
সাজেদা ফাউন্ডেশন (SAJIDA Foundation): সাজেদা ফাউন্ডেশন ১৯৮৭ সালে একটি ছোট গ্যারেজ স্কুল হিসেবে যাত্রা শুরু করেছিল, যেখানে সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের পড়াশোনার ব্যবস্থা করা হতো। এরপর ১৯৯৩ সালে এটি একটি আনুষ্ঠানিক বেসরকারি সংস্থায় পরিণত হয় এবং দরিদ্র নারীদের জন্য ক্ষুদ্রলোন কার্যক্রম শুরু করে।
সময়ের সাথে সাথে সাজেদা ফাউন্ডেশন তাদের কার্যক্রমের পরিধি অনেক বাড়িয়েছে এবং বর্তমানে এটি ক্ষুদ্রলোন, স্বাস্থ্যসেবা, মানসিক স্বাস্থ্য, দারিদ্র্য বিমোচন, জলবায়ু পরিবর্তন এবং অন্যান্য বহুমুখী উন্নয়ন কর্মসূচির মাধ্যমে সমাজের প্রান্তিক ও সুবিধাবঞ্চিত জনগোষ্ঠীর সেবা করে আসছে।
কেন সেরা: সাজেদা ফাউন্ডেশন একটি অনন্য এনজিও যা শুধু ক্ষুদ্রলোন নয়, স্বাস্থ্যসেবা, বিশেষ করে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা এবং মানুষের জীবনমান উন্নয়নে উদ্ভাবনী পদ্ধতি নিয়ে কাজ করে।
কার্যক্রম:
- স্বাস্থ্য সেবা
- ক্ষুদ্রলোন
- দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা
- শিক্ষা
- সামাজিক সুরক্ষা
যে কারণে বিশেষ: তাদের স্বাস্থ্য খাতে বিশেষ গুরুত্ব এবং উদ্ভাবনী মডেলের কারণে তারা অন্যান্য এনজিও থেকে আলাদা। বিশেষ করে দুর্যোগে তাদের তাৎক্ষণিক সাড়া প্রশংসনীয়।
এই এনজিওগুলো শুধু লোন দিয়েই বসে থাকে না। তাদের কাজের মূল উদ্দেশ্য হলো মানুষের ক্ষমতায়ন করা, যাতে তারা নিজেরাই নিজেদের ভাগ্য বদলাতে পারে। তারা শুধু মাছ দেওয়া শেখায় না, মাছ ধরা শেখায় – এই নীতিতেই তারা কাজ করে। এদের কাজের পরিধি বিশাল এবং বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে এদের ভূমিকা অনস্বীকার্য।
বাংলাদেশের প্রথম এনজিও কোনটি
বাংলাদেশের প্রথম এনজিও হলো “ব্র্যাক” (BRAC)। এটি ১৯৭২ সালে স্যার ফজলে হাসান আবেদ প্রতিষ্ঠা করেন। ব্র্যাক একটি আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা, যা বিশ্বের বৃহত্তম বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থাগুলির মধ্যে অন্যতম। ১৯৭২ সালে, স্বাধীনতার পর বাংলাদেশে ত্রাণ কার্যক্রম পরিচালনার জন্য এটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। বর্তমানে, ব্র্যাক আফ্রিকা ও এশিয়ার বিভিন্ন দেশে তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করছে।
এনজিও কেন গুরুত্বপূর্ণ
এনজিও বা বেসরকারি সংস্থাগুলো আমাদের দেশের জন্য, বিশেষ করে গরিব ও পিছিয়ে পড়া মানুষের জন্য, খুবই দরকারি। ওরা অনেকটা সরকারের সহকারীর মতো কাজ করে, যেখানে সরকারের হাত পৌঁছায় না বা যেখানে আরও বেশি সাহায্যের প্রয়োজন হয়, সেখানে ওরা এগিয়ে আসে।
- সবাইকে সেবার আওতায় আনা
- দারিদ্র্য দূর করা
- পড়াশোনার সুযোগ বাড়ানো
- স্বাস্থ্য ভালো রাখা
- নারীদের শক্তিশালী করা
- বিপদে পাশে দাঁড়ানো
- মানুষকে দক্ষ করে তোলা ইত্যাদি।
এনজিওগুলো হলো আমাদের সমাজের এমন একদল যোদ্ধা, যারা নীরবে কাজ করে দেশের দরিদ্র ও অসহায় মানুষের জীবনকে আরও সুন্দর আর সহজ করে তোলার চেষ্টা করে। ওরা না থাকলে সমাজের একটা বড় অংশের মানুষ হয়তো অনেক সুবিধা থেকে বঞ্চিত হতো।
এনজিওর ভূমিকা এবং প্রভাব
এনজিও বা বেসরকারি সংস্থাগুলো আমাদের সমাজে কী কাজ করে আর এর ফল কী হয়, সেটা সংক্ষেপে জেনে নেওয়া যাক। ওরা আসলে আমাদের দেশের জন্য এমন কিছু কাজ করে, যা ছাড়া সমাজের একটা বড় অংশের উন্নতি আটকে থাকত।
এনজিওগুলো মূলত সমাজের সেই সব মানুষের জন্য কাজ করে, যারা বিভিন্ন কারণে পিছিয়ে আছে বা সরকারের সব সুবিধা সহজে পায় না। ওদের প্রধান কিছু ভূমিকা হলো:
- সেবার অভাব পূরণ করে
- গরিবের হাতে টাকা পৌঁছানো
- শিক্ষার আলো ছড়ানো
- স্বাস্থ্য সচেতনতা বাড়ানো
- নারীদের ক্ষমতায়ন
- বিপদে ত্রাণ আর সাহায্য
- মানুষের দক্ষতা বাড়ানো
এনজিওদের এই ভূমিকাগুলোর কারণে সমাজে অনেক ইতিবাচক পরিবর্তন আসে, যার প্রভাব সুদূরপ্রসারী:
- দারিদ্র্য কমে
- শিক্ষার হার বাড়ে
- স্বাস্থ্য ভালো হয়
- নারীরা শক্তিশালী হয়
- দুর্যোগ মোকাবিলায় সক্ষমতা বাড়ে
- আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন
সহজ কথায়, এনজিওরা সরকারের পাশাপাশি থেকে সমাজের নিচু তলার মানুষদের জন্য একটা ভরসার জায়গা তৈরি করে। ওরা শুধু সাহায্যই দেয় না, বরং মানুষকে নিজেদের ভবিষ্যৎ গড়তে শেখায়, যা দেশের সামগ্রিক উন্নতিকে আরও এগিয়ে নিয়ে যায়।
লেখকের শেষ মতামত
বাংলাদেশের টপ ১০ এনজিও তাদের নিরলস প্রচেষ্টার মাধ্যমে দেশের দরিদ্র ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নত করছে। ব্র্যাক, আশা,কোডেক ,কারিতাস, এবং অন্যান্য সংস্থাগুলো তাদের কার্যক্রমের মাধ্যমে বাংলাদেশকে একটি সমৃদ্ধ ও ন্যায়বিচারভিত্তিক সমাজ গঠনে সহায়তা করছে।
এই এনজিওগুলোর অবদান বাংলাদেশের উন্নয়নের ইতিহাসে একটি উজ্জ্বল অধ্যায়। আশা করছি আজকের এই আর্টিকেলের মাধ্যমে আজ আমরা আপনাকে “বাংলাদেশের সেরা ১০টি এনজিও” সম্পর্কে জানাতে পেরেছি। এইগুলো এনজিও সম্পর্কে মতামত জানাতে কমেন্ট করুন।