জমি বন্ধক রেখে লোন বলতে বোঝায় ব্যাংক বা অন্য কোনো আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কাছে আপনার সম্পত্তি জামানত বা বন্ধক রেখে লোন গ্রহণ করা। এটি একটি সুরক্ষিত লোন কারণ লোনের বিপরীতে একটি মূল্যবান সম্পদ জামানত হিসেবে থাকে। এই লোনের মূল ভিত্তি হলো আপনার মালিকানাধীন একটি জমি বা স্থাবর সম্পত্তি, যা লোন পরিশোধ না হওয়া পর্যন্ত ব্যাংকের কাছে জামানত হিসেবে বন্ধক রাখা হয়।
জমি বন্ধক রাখা মানে কিন্তু জমির মালিকানা হস্তান্তর করা নয়। আপনিই জমির মালিক থাকেন, শুধুমাত্র ব্যাংককে লোনের সুরক্ষাস্বরূপ জমির ওপর একটি আইনি অধিকার দেওয়া হয়। এই ধরনের লোনের মাধ্যমে বাড়ি তৈরি বা কেনা, ব্যবসা সম্প্রসারণ, সন্তানের উচ্চশিক্ষা, চিকিৎসা ব্যয় নির্বাহ বা অন্য কোনো বড় আর্থিক প্রয়োজন মেটানো সম্ভব হয়।
জমি বন্ধক রেখে কী ধরনের লোন নেওয়া যায়?
জমি বন্ধক রেখে সাধারণত যে ধরনের লোন নেওয়া যায় তা নিম্নে উল্লেখ করা হল:
- গৃহ নির্মাণ লোন: বাড়ি তৈরি বা ফ্ল্যাট কেনার জন্য এই লোন নেওয়া হয়। এক্ষেত্রে নির্মাণাধীন বা কেনা সম্পত্তিই জামানত হিসেবে বন্ধক রাখা হয়।
- ব্যবসায়িক লোন: ব্যবসা সম্প্রসারণ, নতুন ব্যবসা শুরু বা চলতি মূলধনের জন্য জমি বন্ধক রেখে লোন নেওয়া যায়।
- ব্যক্তিগত লোন: ব্যক্তিগত বিভিন্ন প্রয়োজন মেটাতে, যেমন – সন্তানের শিক্ষা, চিকিৎসা, বিবাহ ইত্যাদি ক্ষেত্রে জমি বন্ধক রেখে বড় অঙ্কের ব্যক্তিগত লোন নেওয়া যেতে পারে।
- কৃষি লোন: কৃষিকাজ, মৎস্য চাষ, পশুপালন ইত্যাদির জন্য বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক এবং অন্যান্য বাণিজ্যিক ব্যাংক জমি বন্ধক রেখে লোন দেয়।
- ওভারড্রাফট সুবিধা: কিছু ব্যাংক ব্যবসার জন্য জমির বিপরীতে ওভারড্রাফট সুবিধা প্রদান করে, যেখানে গ্রাহক প্রয়োজনে নির্দিষ্ট সীমা পর্যন্ত টাকা উত্তোলন করতে পারেন এবং সুদ শুধুমাত্র ব্যবহৃত অর্থের ওপর প্রযোজ্য হয়।
জমি বন্ধক রেখে লোন দেয় কোন ব্যাংক
বাংলাদেশে জমি বা যেকোনো স্থাবর সম্পত্তি বন্ধক রেখে প্রায় সব বাণিজ্যিক ব্যাংক এবং কিছু বিশেষায়িত আর্থিক প্রতিষ্ঠান লোন দিয়ে থাকে। এই ধরনের লোনকে সাধারণত মর্টগেজ লোন বা বন্ধকী লোন বলা হয়। এটি একটি সুরক্ষিত লোন, যেখানে লোনের বিপরীতে আপনার মূল্যবান সম্পত্তি জামানত হিসেবে রাখা হয়। বাংলাদেশে জমি বন্ধক রেখে লোন দেয় এমন ব্যাংকের নাম নিচে উল্লেখ করা হল:
সরকারি ব্যাংক
- বাংলাদেশ হাউস বিল্ডিং ফাইনান্স কর্পোরেশন
- সোনালী ব্যাংক পিএলসি
- জনতা ব্যাংক পিএলসি
- অগ্রণী ব্যাংক পিএলসি
- রূপালী ব্যাংক পিএলসি
- বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক
বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংক
- ব্র্যাক ব্যাংক পিএলসি
- ডাচ বাংলা ব্যাংক পিএলসি
- ইস্টার্ন ব্যাংক পিএলসি
- সিটি ব্যাংক পিএলসি
- প্রাইম ব্যাংক পিএলসি
- ইউনিয়ন ব্যাংক পিএলসি
- ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ পিএলসি
- পূবালী ব্যাংক পিএলসি
- মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক পিএলসি
- এবি ব্যাংক পিএলসি
- গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক লিমিটেড
- এবং অন্যান্য প্রায় সকল বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংক।
আপনি যদি এই ব্যাংকগুলোর যেকোনো একটি থেকে জমি বন্ধক রেখে লোন নিতে আগ্রহী হন, তবে সরাসরি তাদের নিকটস্থ শাখায় যোগাযোগ করে নির্দিষ্ট লোন, বর্তমান সুদের হার, প্রয়োজনীয় কাগজপত্র এবং অন্যান্য শর্তাবলী সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিতে পারেন। যদিও আমরা এগুলো বিষয়ে নিচে বিস্তারিত আলোচনা করেছি।
জমি বন্ধক রেখে লোন পাওয়ার যোগ্যতা
জমি বন্ধক রেখে লোন পাওয়ার যোগ্যতা বিভিন্ন ব্যাংক এবং লোনের ধরনের ওপর নির্ভর করে ভিন্ন হয়। তবে, কিছু যোগ্যতা ও শর্তাবলী আছে যা নিচে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো:
- আবেদনকারীকে অবশ্যই বাংলাদেশের নাগরিক হতে হবে।
- আবেদনকারীর বয়স ২১-২৫ বছর হতে হবে এবং লোন পরিশোধের সময় সর্বোচ্চ ৬৫-৭০ বছর হতে পারে।
- আবেদনকারীর পূর্বে কোনো ব্যাংকে খেলাপি লোনের রেকর্ড থাকা যাবে না।
- আবেদনকারী যে ব্যাংক থেকে লোন নিবেন, সেই ব্যাংকে তার একটি সচল ব্যাংক হিসাব থাকতে হবে।
- আবেদনকারীর জমির কোনো প্রকার বিরোধ, মামলা-মোকদ্দমা বা পূর্ববর্তী দায়বদ্ধতা থাকা চলবে না।
- জমি যদি যৌথ মালিকানাধীন হয়, তবে সকল সহ-মালিকের সম্মতি এবং স্বাক্ষর দিতে হবে।
- জমির সকল দলিলপত্র অবশ্যই আপ-টু-ডেট এবং নির্ভুল থাকতে হবে।
তবে কিছু ক্ষেত্রে, ব্যাংক এক বা একাধিক জামিনদার চাইতে পারে। জামিনদারকে আর্থিকভাবে সচ্ছল ব্যক্তি হতে হবে। তাকেও লোনের শর্তাবলী মেনে নিতে হবে এবং প্রয়োজনবোধে লোন পরিশোধের দায়ভার নিতে প্রস্তুত থাকতে হবে।
আপনি যদি জমি বন্ধক রেখে লোন নিতে চান তাহলে আপনার উল্লিখিত যোগ্যতা থাকতে হবে। তবে কিছু কিছু ব্যাংকে আরও শর্তাবলী থাকতে পারে তাই আপনার পছন্দের ব্যাংকের সাথে সরাসরি যোগাযোগ করে বিস্তারিত তথ্য এবং সর্বশেষ শর্তাবলী জেনে নেওয়া সবচেয়ে ভালো।
জমি বন্ধক রেখে লোনের জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র
জমি বন্ধক রেখে লোন নিতে হলে আপনার যেসকল কাগজপত্র দরকার হবে সেগুলো নিচে উল্লেখ করা হলঃ
আবেদনকারীর ব্যক্তিগত কাগজপত্র:
- আবেদনকারী এবং জামিনদারের জাতীয় পরিচয়পত্রের সত্যায়িত ফটোকপি।
- আবেদনকারী এবং জামিনদারের সাম্প্রতিক তোলা পাসপোর্ট সাইজের ২ কপি ছবি।
- ঠিকানার প্রমাণপত্র হিসেবে ইউটিলিটি বিলের ফটোকপি।
- আবেদনকারীর ব্যক্তিগত ব্যাংক হিসাবের গত ৬-১২ মাসের স্টেটমেন্ট।
- গত এক বছরের বা আরও বেশি সময়ের ট্যাক্স ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট।
- বেতনভোগীদের ক্ষেত্রে বেতন সনদ, ব্যাংক গত ৬-১২ মাসের ব্যাংক স্টেটমেন্ট এবং প্রয়োজনে আয়কর প্রত্যয়নপত্র
- ব্যবসায়ীর ক্ষেত্রে গত ৩ বছরের ট্রেড লাইসেন্সের সত্যায়িত ফটোকপি, ব্যবসার ব্যাংক স্টেটমেন্ট
বন্ধকী জমির কাগজপত্র:
- মূল মালিকানা দলিলের মূল কপি এবং সত্যায়িত ফটোকপি।
- খাজনা ও ভূমি উন্নয়ন কর পরিশোধের প্রমাণপত্র।
- জমির নকশা (প্রযোজ্য ক্ষেত্রে)।
- সি.এস, এস.এ, আর.এস এবং বি.এস খতিয়ানের সার্টিফাইড কপি।
- নামজারী খতিয়ানের সার্টিফাইড কপি।
- নামজারী খতিয়ানের সাথে ডিসিআর এর কপি ইত্যাদি।
অন্যান্য কাগজপত্র:
- ব্যাংক কর্তৃক নির্ধারিত ফরম।
- লোনের আবেদন ফি এবং প্রসেসিং ফি জমা দেওয়ার রসিদ।
- লোনের শর্তাবলী উল্লেখ করে ব্যাংক এবং আবেদনকারীর মধ্যে সম্পাদিত চুক্তিপত্র।
- লোন পরিশোধের পর দলিলপত্র ফেরত পাওয়ার জন্য নমিনী নিয়োগের ফরম।
উল্লিখিত কাগজপত্র ছাড়াও ব্যাংকের প্রয়োজনে আরও অন্যান্য কাগজপত্র লাগতে পারে। কারণ একেক ব্যাংকের শর্তাবলী একেক রকম হয়ে থাকে। তাই সঠিক ও আপডেট তথ্য পাওয়ার জন্য আপনি যেই ব্যাংক থেকে জমি বন্ধক রেখে লোন নিতে চাচ্ছেন, সেই ব্যাংকে গিয়ে বিস্তারিত জেনে নেওয়া উত্তম।
জমি বন্ধক রেখে লোনের আবেদন প্রক্রিয়া
জমি বন্ধক রেখে লোনের আবেদন প্রক্রিয়া ব্যাংক ভেদে কিছুটা ভিন্ন হতে পারে, তবে সাধারণত এর কিছু সাধারণ ধাপ রয়েছে যা নিচে বিস্তারিত তুলে ধরা হলো:
প্রাথমিক প্রস্তুতি: প্রথমে বিভিন্ন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের জমি বন্ধকী লোনের সুদের হার, লোনের পরিমাণ, পরিশোধের মেয়াদ, প্রসেসিং ফি এবং অন্যান্য শর্তাবলী যাচাই করুন। এরপরে আপনার আয়, ক্রেডিট স্কোর, এবং লোনের পরিমাণ পরিশোধের সক্ষমতা বিবেচনা করে আপনি লোনের জন্য যোগ্য কিনা, তা প্রাথমিক পর্যায়ে জেনে নিন।
আবেদনপত্র জমা দেওয়া: নির্বাচিত ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের লোনের আবেদনপত্র সংগ্রহ করে সঠিক ও নির্ভুল তথ্য দিয়ে পূরণ করুন। এরপরে আপনার, জামিনদারে এবং আপনার জমির প্রয়োজনীয় কাগজপত্র হিসেবে আমরা উপরে যেগুলো উল্লেখ করেছি সেগুলো সংগ্রহ করে পূরণকৃত আবেদনপত্রের সাথে জমা দিন।
ব্যাংক কর্তৃক যাচাই-বাছাই: এরপরের ধাপে ব্যাংক আপনার ক্রেডিট স্কোর, আয় এবং আপনার লোন পরিশোধের সক্ষমতা যাচাই করার জন্য অন্যান্য আর্থিক তথ্য পর্যালোচনা করবে। ব্যাংক তাদের নিজস্ব আইনজীবী দ্বারা জমির মালিকানা, দলিলপত্রের বৈধতা এবং কোনো প্রকার আইনি জটিলতা আছে কিনা তা যাচাই করবে। এটি নিশ্চিত করবে যে জমিটি বন্ধক রাখার জন্য উপযুক্ত কিনা তা নিশ্চিত করবে।
লোনের অনুমোদন ও অফার লেটার: সকল যাচাই-বাছাই প্রক্রিয়া সফলভাবে সম্পন্ন হলে ব্যাংক আপনার লোনের আবেদন অনুমোদন করবে। এরপরে ব্যাংক আপনাকে একটি অফার লেটার দেবে, যেখানে লোনের পরিমাণ, সুদের হার, পরিশোধের মেয়াদ, মাসিক কিস্তি, প্রসেসিং ফিসহ অন্যান্য শর্তাবলী বিস্তারিত উল্লেখ থাকবে।
বন্ধকী চুক্তি ও রেজিস্ট্রেশন: অফার লেটারে সম্মত হলে, ব্যাংক এবং আপনার মধ্যে একটি বন্ধকী দলিল দেয়া হবে সেখানে লোনের সকল শর্ত, জামানত হিসেবে রাখা জমির বিবরণ এবং লোন পরিশোধের বাধ্যবাধকতা উল্লেখ থাকবে। এরপরে বন্ধকী দলিলটি সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে রেজিস্ট্রেশন করতে হবে। কেননা রেজিস্ট্রেশনের মাধ্যমে জমিটি আইনগতভাবে ব্যাংকের কাছে বন্ধক রাখা হবে।
লোন বিতরণ: বন্ধকী দলিল রেজিস্ট্রেশন এবং সকল আইনগত প্রক্রিয়া সম্পন্ন হওয়ার পর ব্যাংক আপনার অ্যাকাউন্টে লোনের অর্থ বিতরণ করবে। এটি একবারে বা কিস্তিতে হতে পারে, যেটা লোনের উদ্দেশ্য এবং শর্তের ওপর নির্ভর করবে।
লোন পরিশোধ: লোনের শর্ত অনুযায়ী আপনাকে নির্ধারিত মাসিক কিস্তি (EMI) পরিশোধ করতে হবে। সময়মতো কিস্তি পরিশোধ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, অন্যথায় আপনার ক্রেডিট স্কোর ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে এবং আপনার জমিটি বাজেয়াপ্ত হওয়ার ঝুঁকি থাকে।
উল্লিখিত প্রক্রিয়াটি বেশ সময়সাপেক্ষ হতে পারে, তাই ধৈর্য ধরে সকল ধাপ অনুসরণ করা এবং প্রয়োজনে ব্যাংকের কর্মকর্তাদের সাথে যোগাযোগ রাখা জরুরি।
জমি বন্ধক রেখে লোন সুদের হার ও মেয়াদ
জমি বন্ধকী লোনের সুদের হার সাধারণত ৯% থেকে ১৫% বা তার বেশি হতে পারে, যা ব্যাংক, লোনের ধরন এবং বাজার পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করে। আর পরিশোধের মেয়াদ লোনের ধরনের ওপর নির্ভরশীল। গৃহলোনের মেয়াদ সাধারণত ১০-২৫ বছর হয়, আর ব্যক্তিগত বা ব্যবসায়িক লোনের মেয়াদ তুলনামূলক ১-১০ বছর হতে পারে।
জমি বন্ধক রেখে লোন নেওয়ার সুবিধা ও অসুবিধা
জমি বন্ধক রেখে লোন নেওয়া একটি গুরুত্বপূর্ণ আর্থিক সিদ্ধান্ত, যার যেমন কিছু সুবিধা আছে, তেমনি কিছু অসুবিধাও রয়েছে। নিচে এর বিস্তারিত আলোচনা করা হলো:
সুবিধা
- সহজে লোন পাওয়া যায়: যাদের অন্য কোনো জামানত নেই, তারা জমি বন্ধক রেখে লোন নিতে পারেন। এটি দ্রুত লোন পাওয়ার একটি উপায়।
- বড় অঙ্কের লোন পাওয়া যায়: জমি বা স্থাবর সম্পত্তি একটি মূল্যবান সম্পদ হওয়ায়, এর বিপরীতে ব্যাংক সাধারণত বেশি অঙ্কের লোন প্রদান করে। এটি বাড়ি নির্মাণ, বড় ব্যবসা শুরু বা অন্য কোনো বড় আর্থিক প্রয়োজনে সহায়ক হয়।
- কম সুদের হার: যেহেতু জমি বা সম্পত্তি জামানত হিসেবে থাকে, তাই এটি ব্যাংকের জন্য ঝুঁকি কমায়। ফলস্বরূপ, ব্যাংক সাধারণত কম সুদের হারে লোন দিতে ইচ্ছুক হয়, যা অনিরাপদ লোনের চেয়ে সাশ্রয়ী।
- দীর্ঘমেয়াদী পরিশোধের সুযোগ পাওয়া যায়: জমি বন্ধকী লোন, বিশেষ করে গৃহলোন, সাধারণত দীর্ঘমেয়াদী (১০ থেকে ২৫ বছর) পরিশোধের সুযোগ দেয়। এতে মাসিক কিস্তির বোঝা কমে এবং লোন পরিশোধ করা সহজ হয়।
- ব্যক্তিগত প্রয়োজনে ব্যবহার করা যায়: এই লোন ব্যবহার করে ব্যবসা সম্প্রসারণ, নতুন ব্যবসা শুরু করা, বাড়ি তৈরি করা বা অন্য কোনো ব্যক্তিগত প্রয়োজন মেটানো যেতে পারে।
- সম্পত্তি বিক্রি না করে লোন পাওয়া যায়: জমি বন্ধক রেখে লোন নিলে, জমির মালিকানা আপনার কাছেই থাকে, যা এটিকে একটি সুবিধাজনক বিকল্প করে তোলে।
অসুবিধা
- জামানত হারানোর ঝুঁকি থাকে: এটি সবচেয়ে বড় অসুবিধা। যদি কোনো কারণে লোনগ্রহীতা লোনের কিস্তি পরিশোধে ব্যর্থ হন, তাহলে ব্যাংক বন্ধক রাখা জমি বা সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করে বিক্রি করে দিতে পারে তাদের লোন আদায়ের জন্য।
- দীর্ঘ এবং জটিল প্রক্রিয়া: জমি বন্ধকী লোনের আবেদন প্রক্রিয়া তুলনামূলকভাবে দীর্ঘ এবং জটিল হয়। জমির মালিকানা যাচাই, আইনগত কাগজপত্র পরীক্ষা, এবং সম্পত্তি মূল্যায়নে সময় লাগে। এতে অতিরিক্ত প্রশাসনিক কাজ এবং খরচ জড়িত থাকে।
- আইনগত খরচ ও ফি বেশি: লোনের জন্য আবেদন করতে এবং জমি বন্ধক রাখতে বিভিন্ন ধরনের আইনগত খরচ ও ফি জড়িত থাকে। যেমন – প্রসেসিং ফি, আইনগত যাচাই ফি, মূল্যায়ন ফি, রেজিস্ট্রেশন ফি, স্ট্যাম্প ডিউটি ইত্যাদি, যা লোনের মোট খরচ বাড়িয়ে দেয়।
- জমির কাগজপত্র নিয়ে জটিলতা থাকে: জমির মালিকানা সংক্রান্ত কোনো জটিলতা বা ত্রুটি থাকলে লোন পাওয়া কঠিন বা অসম্ভব হয়ে পড়ে। নিষ্কণ্টক দলিলপত্র না থাকলে ব্যাংক লোন দিতে আগ্রহী হয় না।
- সীমিত ব্যবহার: কৃষিজমি বন্ধক রেখে সাধারণত শুধুমাত্র কৃষি লোনই পাওয়া যায়। কৃষি বহির্ভূত অন্য কোনো প্রয়োজনে সেই জমি জামানত হিসেবে ব্যবহার নাও হতে পারে।
জমি বন্ধক রেখে লোন নেওয়ার ক্ষেত্রে কিছু বিষয় বিবেচনা করা উচিত:
- জমির মালিকানা সংক্রান্ত কাগজপত্র এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় দলিলপত্রাদি প্রস্তুত রাখতে হবে।
- বন্ধকী লোনের সুদের হার, পরিশোধের সময়সীমা এবং অন্যান্য শর্তাবলী ভালোভাবে জেনে নিতে হবে।
- লোন পরিশোধে ব্যর্থ হলে, বন্ধক রাখা জমিটি লোনদাতা কর্তৃক নিলামে বিক্রি হয়ে যেতে পারে।
- জমির বাজার মূল্য এবং লোন পাওয়ার পরিমাণ সম্পর্কে বিস্তারিত ধারণা রাখা প্রয়োজন।
সুতরাং, জমি বন্ধক রেখে লোন নেওয়ার আগে আপনার আর্থিক সক্ষমতা, লোনের উদ্দেশ্য এবং লোনের শর্তাবলী খুব ভালোভাবে যাচাই করে নেওয়া উচিত। নিশ্চিত করুন যে আপনি মাসিক কিস্তি পরিশোধে সক্ষম এবং লোনের সাথে জড়িত সকল ঝুঁকি সম্পর্কে অবগত।
লেখকের শেষ মতামত
পরিশেষে বলব, জমি বন্ধক রেখে লোন নেওয়ার আগে একাধিক ব্যাংকের সাথে যোগাযোগ করে তাদের সুদের হার, শর্তাবলী, প্রক্রিয়াকরণ ফি এবং অন্যান্য চার্জ সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেওয়া উচিত। কেননা জমির মালিকানা এবং কাগজপত্র শতভাগ নির্ভুল না থাকলে লোন পেতে জটিলতা সৃষ্টি হতে পারে।