সিজারের পর ইনফেকশনের লক্ষণ – সিজারের পর ব্যথা কতদিন থাকে

সন্তান জন্মদানের দুটি পদ্ধতির মধ্যে সিজারিয়ান সেকশন বর্তমানে অত্যন্ত জনপ্রিয় এবং চিকিৎসকদের মতে এটি নিরাপদও বটে। তবে, যাঁরা গর্ভধারণ করেন, তাঁদের প্রত্যেকের সিজার সম্পর্কিত বিস্তারিত তথ্য জেনে রাখা জরুরি। বিশেষ করে সিজারের পর ইনফেকশনের লক্ষণগুলো সম্পর্কে অবগত থাকা উচিত।

সিজারের পর ইনফেকশনের লক্ষণ

তাই আপনারা অবশ্যই সিজারের পর ইনফেকশনের লক্ষণগুলো কী কী, সিজারের পর ব্যথা কতদিন থাকে হয় এবং সিজারের সেলাইয়ের স্থানে ব্যথা হলে করণীয় কী সেই বিষয়ে ভালোভাবে জানতে হবে। 

সিজারের পর ইনফেকশনের লক্ষণ

সিজারের পর অপারেশন স্থানে সংক্রমণ একটি গুরুতর সমস্যা হতে পারে এবং এটি দ্রুত শনাক্ত করা প্রয়োজন। সিজারিয়ান সেকশন একটি বড় অস্ত্রোপচার, তাই এই অংশে ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণ হওয়ার ঝুঁকি থাকে। সংক্রমণ সঠিক সময়ে চিহ্নিত করা গেলে দ্রুত চিকিৎসা নেওয়া সম্ভব হয় এবং এর ফলে বড় ধরনের জটিলতা এড়ানো যায়। দুঃখজনক হলেও সত্য যে, আমাদের দেশের অনেক মা অপারেশনের মাত্র ২-৩ দিন পরেই যেকোনো ধরনের কাজে বা ভারী শ্রমে লিপ্ত হয়ে পড়েন, যা এই ঝুঁকির মাত্রা আরও বাড়িয়ে দেয়। 

আরো পড়ুনঃ সিজারের কতদিন পর সেলাই শুকায় জেনে নিন

সিজারের পর অনেকেই আছেন যারা দুই থেকে তিন দিন পরেই আর বেড রেস্ট করেন না এবং বাড়ির দিকে অগ্রসর হন। এই সময়কার যাত্রাপথে যে ধকল যায়, ঠিক এই কারণেই সিজারের পর ইনফেকশনের অনেক ধরনের লক্ষণ দেখা দিতে পারে।

সাধারণত সিজারের পর মায়েদের কমপক্ষে দুই সপ্তাহ বেড রেস্ট করার পরামর্শ দেওয়া হয়। তবে সবার শরীরের অবস্থা যেহেতু একরকম হয় না, তাই নিজেকে বুঝে নিতে হবে কতদিন পর্যন্ত বেড রেস্ট প্রয়োজন। বেড রেস্ট না করে অনেক মায়েরাই নানা ধরনের কাজ শুরু করে দেন, যার ফলে তাদের অপারেশনের ঘা শুকাতে অনেক সময় লাগে। 

আসুন, সিজারের পর ইনফেকশনের লক্ষণগুলো জেনে নেওয়া যাক।

  • অস্ত্রোপচারের স্থানটি যদি ফুলে যায়, লাল হয়ে যায় এবং তীব্র ব্যথা হয়, তবে এটি হতে পারে প্রথম লক্ষণ।
  • সাধারণত সিজারের পর সময়ের সাথে সাথে ব্যথা কমতে থাকে। এর ব্যতিক্রম হলে অর্থাৎ ব্যথা না কমে উল্টো বেড়ে চললে, তা ইনফেকশনের দ্বিতীয় লক্ষণ হতে পারে।
  • সিজারের স্থান থেকে পুঁজ বা জলীয় পদার্থ নিঃসৃত হলে সেটিও ইনফেকশনের লক্ষণ।
  • অস্ত্রোপচারের পর মায়ের যদি জ্বর আসে এবং জ্বর বাড়তে থাকে, তবে এটি ইনফেকশনের ইঙ্গিত দিতে পারে।
  • প্রস্রাবের সময় জ্বালাপোড়া অনুভব করা ইনফেকশনের একটি লক্ষণ হতে পারে।
  • প্রস্রাবের সময় যদি দুর্গন্ধ অনুধাবন করা যায়, তবে সেটিও ইনফেকশনের লক্ষণ হিসেবে গণ্য হতে পারে।

এছাড়াও সিজারের সময় যেভাবে আপনার শরীর থেকে রক্ত বের হয়েছে। ঠিক তেমনি ভাবে যদি সিজারের পরে বের হয় এবং কিছুক্ষণ পরপর আপনাকে প্যাড চেঞ্জ করতে হচ্ছে। আর রক্ত বড় বড় জমাট আকারে বের হচ্ছে ইনফেকশনের লক্ষণ হতে পারে।

আবার সাধারণত সিজারের পর আস্তে আস্তে পা ফোলা কমে যায়। যদি বুঝতে পারেন পা ফোলা কমছে না বেড়েই চলেছে এবং পায়ের আশেপাশে লাল আর ব্যথা করছে তাহলে বুঝবেন এটি ইনফেকশনের লক্ষণ হতে পারে।

সর্বশেষ কথা হলো, এই লক্ষণগুলো দেখা দিলেই ধরে নেবেন না যে আপনার ইনফেকশন হয়েছে। সঠিক কারণ নির্ণয় ও নিশ্চিত হওয়ার জন্য আপনার বর্তমান শারীরিক অবস্থার সবকিছু পরিষ্কারভাবে আপনার চিকিৎসককে খুলে বলুন এবং দ্রুত তার পরামর্শ গ্রহণ করুন।

সিজারের পর ইনফেকশন কেন হয়

বর্তমানে বাংলাদেশে নরমাল প্রসবের তুলনায় সিজারিয়ান ডেলিভারির সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। এই বৃদ্ধির সাথে সাথে সিজারের পর ইনফেকশনে আক্রান্ত হওয়ার ঘটনাও কিন্তু কম নয়। সিজারিয়ান ডেলিভারির পরে কী কী কারণে সংক্রমণ বা ইনফেকশন হতে পারে, চলুন তা জেনে নেওয়া যাক: 

সিজারের পর ইনফেকশন হওয়ার প্রধান কারণগুলির মধ্যে রয়েছে:

  • পোশাক-আশাকের অপরিষ্কারতা: রোগীর ব্যবহৃত পোশাক-আশাক বা ব্যক্তিগত পরিচ্ছন্নতার অভাব।
  • জীবাণুমুক্তকরণের ত্রুটি: অস্ত্রোপচারের সময় ব্যবহৃত সরঞ্জামাদি বা জিনিসপত্র সঠিকভাবে জীবাণুমুক্ত না করা।
  • হাসপাতালের পরিবেশ: চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান বা হাসপাতালের পরিবেশ যদি অস্বাস্থ্যকর হয়।
  • অপারেশন থিয়েটারের পরিচ্ছন্নতা: সিজার করার ঘর বা অপারেশন থিয়েটার ভালোভাবে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন না রাখা।
  • বহিরাগতদের মাধ্যমে সংক্রমণ: রোগীকে ঘরে স্থানান্তরের পর অতিরিক্ত আত্মীয়-স্বজন বা দর্শনার্থীর আনাগোনা ও সংস্পর্শ।
  • জীবাণুমুক্ত পানির ব্যবহার: সিজারের সময় জীবাণুমুক্ত (Sterile) জল ব্যবহার না করা।
  • অস্ত্রোপচারের অভ্যন্তরে কিছু থেকে যাওয়া: সিজারের পর অসাবধানতাবশত কোনো জিনিস শরীরের ভিতরে থেকে যাওয়া।
  • রোগীর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা: রোগীর শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা স্বাভাবিকের তুলনায় কম থাকা।
  • রক্তনালী সঠিকভাবে বন্ধ না করা: সেলাই করার সময় রক্তনালী বা ব্লাড ভেসেলস সঠিকভাবে বন্ধ না করার কারণে।
  • সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়া: হাসপাতালে এক বেড থেকে অন্য বেডের দূরত্ব কম থাকার ফলে হাঁচি-কাশির মাধ্যমে সংক্রমণ দ্রুত ছড়িয়ে যেতে পারে।

উপরে উল্লেখিত কারণগুলোর জন্যই সিজারের পর ইনফেকশন হতে পারে। তাই এই বিষয়ে সকল মহিলার ইনফেকশন হওয়ার আগেই সচেতন থাকা অত্যন্ত জরুরি। আশা করা যায়, এর মাধ্যমে সিজারের পর ইনফেকশন কেন হয় সে সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা পাওয়া গেল।

সিজারের পর ইনফেকশন হলে করণীয়

সিজারের পরে যদি কোনো সংক্রমণ বা ইনফেকশন হয়, তবে তা দ্রুত শনাক্ত করা এবং চিকিৎসকের পরামর্শ অনুসারে পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি। যদিও সিজারের পর সংক্রমণ শরীরের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে, তবুও সঠিক সময়ে ব্যবস্থা নিলে এটি সহজেই নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। সংক্রমণ হলে আপনার কী করা উচিত, তা নিচে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো:

আরো পড়ুনঃ সিজারের পর কাটা স্থানের যত্ন যেভাবে নিবেন

প্রথমত, সিজারের ক্ষতস্থানে যদি ব্যথা, লালভাব, ফোলাভাব, পুঁজ বা রক্তপাত দেখা দেয়, তবে দ্রুত চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে। যদি শরীরের তাপমাত্রা ১০০.৪°F (38°C) বা তার বেশি হয়ে যায়, বা যদি শরীরের অন্য কোন অস্বাভাবিক লক্ষণ দেখা দেয়, তবে তা দ্রুত চিকিৎসকের নজরে আনা উচিত। 

এছাড়াও, সিজারের ক্ষতস্থান থেকে যদি অস্বাভাবিক গন্ধ আসে বা অতিরিক্ত শুষ্ক হয়ে যায়, তবে তাও সংক্রমণের একটি লক্ষণ হতে পারে। চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী, সাধারণত ব্যথানাশক ওষুধ এবং অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহারের মাধ্যমে এই সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। তবে যদি সংক্রমণ গুরুতর হয়, তবে ক্ষেত্রবিশেষে অপারেশনের স্থানটি পরিষ্কার করার বা অতিরিক্ত চিকিৎসার প্রয়োজন হতে পারে।

সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো কখনোই নিজের সিদ্ধান্তে কোনো ধরনের ওষুধ বা চিকিৎসা শুরু করবেন না। সবসময় চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে চলুন। সিজারের পর সংক্রমণ থেকে মুক্ত থাকতে এবং দ্রুত সুস্থ হতে পর্যাপ্ত বিশ্রাম নেওয়া জরুরি। সেই সাথে খেয়াল রাখতে হবে যেন অপারেশনের স্থানটি সব সময় পরিষ্কার ও শুকনো থাকে।

আক্রান্ত স্থানের পরিচ্ছন্নতার পাশাপাশি, প্রতিদিন ক্ষতস্থান পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে এবং অতিরিক্ত চাপ কাজ থেকে বিরত থাকতে হবে। নিয়মিতভাবে চিকিৎসকের কাছে ‘ফলো-আপ চেকআপ’ নিশ্চিত করা খুব জরুরি, যাতে কোনো সমস্যা দেখা দিলে তা দ্রুত শনাক্ত করা যায়।

একই সাথে, সঠিক খাদ্যাভ্যাস বজায় রাখা এবং পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করাও গুরুত্বপূর্ণ। পুষ্টিকর খাবার শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় এবং দ্রুত সুস্থ হতে সাহায্য করে। সবশেষে বলা যায়, সিজারের পর ইনফেকশন সংক্রান্ত কোনো লক্ষণ দেখা গেলেই দেরি না করে দ্রুত চিকিৎসকের কাছে যান এবং তার পরামর্শ অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিন।

সিজারের পর ব্যথা কতদিন থাকে

সিজারিয়ান সেকশন (সিজার) অস্ত্রোপচারের পর ব্যথা সাধারণত কয়েক দিন থেকে কয়েক সপ্তাহ পর্যন্ত থাকতে পারে। তবে ব্যথার এই তীব্রতা ও স্থায়িত্ব নির্ভর করে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির স্বাস্থ্য এবং সিজারের পরবর্তী যত্নের ওপর।

প্রথম কয়েক দিন সিজারের ক্ষতস্থানে তীব্র ব্যথা অনুভূত হতে পারে, যা কমাতে চিকিৎসকরা সাধারণত ব্যথানাশক ওষুধ দেন। প্রথম সপ্তাহে, হাঁটাচলা বা দৈনন্দিন কাজ করার সময় আপনি কিছুটা ব্যথা অনুভব করতে পারেন। এই ব্যথা খুব তীব্র না হলেও কিছুটা অস্বস্তি থাকতে পারে।

২ থেকে ৬ সপ্তাহের মধ্যে সিজারের ক্ষতস্থান সাধারণত ধীরে ধীরে সেরে ওঠে এবং ব্যথাও কমতে শুরু করে। তবে এই সময়ের মধ্যে অতিরিক্ত শরীরচর্চা বা ভারী কাজ করলে ব্যথা আবার দেখা দিতে পারে।

অধিকাংশ নারীই ৬ সপ্তাহের মধ্যে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসেন। তবে কিছু ক্ষেত্রে, বিশেষ করে যদি কোনো সংক্রমণ বা জটিলতা দেখা দেয়, তবে ব্যথা আরও দীর্ঘমেয়াদী হতে পারে।

যদি সিজারের পর ৬ সপ্তাহের বেশি সময় ধরে তীব্র ব্যথা থাকে, ক্ষতস্থান থেকে পুঁজ বা রক্তপাত হয়, তবে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া অপরিহার্য। সাধারণত, সঠিক বিশ্রাম, চিকিৎসকের নির্দেশিত ব্যথানাশক ওষুধ গ্রহণ এবং নিয়মিত যত্নের মাধ্যমে সিজারের পরবর্তী ব্যথা সহজেই সামাল দেওয়া যায়।

সিজারের পর তলপেটে ব্যথা হলে করণীয়

সিজারের পর তলপেটে ব্যথা হওয়া একটি সাধারণ সমস্যা। অনেকেই হয়তো জানেন না এর পেছনে ঠিক কী কী কারণ থাকতে পারে। চলুন, সিজারের পর তলপেটে ব্যথার সম্ভাব্য কারণগুলো এবং সে ক্ষেত্রে কী করণীয়, তা জেনে নেওয়া যাক।

তলপেটে ব্যথার কারণসমূহ:

  • সিজারের পর কোনো ভারী কাজ বা জিনিসপত্র বহন করলে তলপেটে ব্যথা হতে পারে। 
  • ঘুমানোর সময় সঠিকভাবে না শোয়ার কারণেও তলপেটে ব্যথা অনুভব হতে সিজারের পর দ্রুত সহবাস শুরু করলে তলপেটে ব্যথা হতে পারে।

করণীয় বা সতর্কতা:

  • ভারী জিনিসপত্র বহন করা থেকে বিরত থাকতে হবে।
  • সঠিক পদ্ধতিতে ঘুমাতে হবে। এ ক্ষেত্রে সাধারণত চিত হয়ে ঘুমানো সবচেয়ে উত্তম। শারীরিক সম্পর্ক অস্ত্রোপচারের পর সুস্থ না হওয়া পর্যন্ত স্বামী-স্ত্রীর সহবাস আপাতত সময়ের জন্য বন্ধ রাখা উচিত। 
  • যদি ইনফেকশনের কারণে ব্যথা হয়, তবে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।

সিজারের পর তলপেটে ব্যথা হলে এই কারণগুলো থেকে সতর্ক হওয়া এবং প্রয়োজনীয় সতর্কতা অবলম্বন করা ছাড়া সুস্থ হওয়ার অন্য কোনো বিকল্প নেই। দ্রুত সুস্থতার জন্য রোগীকে অবশ্যই সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে এবং চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে চলতে হবে।

সিজারের পর সেলাই ফুলে যায় কেন

সিজারের পর সেলাই খুলে যাওয়ার কারণ আপনারা জানতে চেয়েছেন। এর প্রধান কারণ হতে পারে অসচেতনতা এবং অবহেলা। নিচে এমন কিছু কারণ তুলে ধরা হলো, যার জন্য সেলাইয়ে সমস্যা দেখা দিতে পারে বা তা ফুলে যেতে পারে:

আরো পড়ুনঃ সিজারের কতদিন পর মিষ্টি খাওয়া যায়

  • অ্যালার্জি হয় এমন খাবার খাওয়ার ফলে সেলাইয়ের স্থানটি ফুলে যেতে পারে।
  • সেলাইয়ের জায়গায় বেশি চুলকানোর কারণেও ফুলে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
  • ইনফেকশন বা সংক্রমণের কারণে সেলাই ফুলে যেতে পারে।
  • সেলাই করা স্থানে কোনো ধরনের আঘাত লাগলে তা খুলে যেতে পারে বা সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে।
  • সেলাইয়ের জায়গায় ময়লা বা অপরিচ্ছন্নতা জমে থাকার কারণে তা ফুলে উঠতে পারে।

তাই, সেলাইয়ের স্থানে কোনো সমস্যা বা ফোলা দেখা দিলে ঘাবড়ানোর কিছু নেই। দ্রুত একজন চিকিৎসকের পরামর্শ নিন এবং তিনি যেমন চিকিৎসা দেন, তা সঠিকভাবে গ্রহণ করুন।

সিজারের পর কি কি সমস্যা হতে পারে

সিজারের পর কিছু সাধারণ সমস্যা দেখা দিতে পারে, যা মূলত শরীরের সেরে ওঠার প্রক্রিয়া এবং সঠিক যত্নের ওপর নির্ভর করে ভিন্ন হতে পারে। সিজারের পর কী কী সমস্যা হতে পারে, তা জানা খুব জরুরি। কারণ যথাযথ যত্ন না নেওয়া হলে এই সমস্যাগুলি আরও জটিল আকার ধারণ করতে পারে।

প্রথম এবং সাধারণ সমস্যাটি হলো ব্যথা। অপারেশন স্থানে সেলাই বা স্ট্যাপলস থাকার কারণে প্রথম কয়েকদিন ব্যথা অনুভূত হয়, যা সাধারণত ব্যথানাশক ওষুধের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ করা যায়। তবে কখনো কখনো যদি কোনো সংক্রমণ বা জটিলতা সৃষ্টি হয়, সেক্ষেত্রে দীর্ঘ সময় ধরে তীব্র ব্যথাও থাকতে পারে।

আরেকটি সমস্যা হলো সংক্রমণ, যা সিজারের ক্ষতস্থানে দেখা দিতে পারে। অপারেশন স্থানটি যদি পরিষ্কার না রাখা হয় অথবা সেখানে ব্যাকটেরিয়ার প্রবেশ ঘটে, তবে ক্ষতস্থানে লালচে ভাব, ফোলা বা পুঁজ জমতে পারে। এই ধরনের সমস্যা দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

এছাড়াও, সিজারের পর কিছু মহিলার শ্বাসকষ্ট বা শ্বাসনালীতে সমস্যা দেখা দিতে পারে, যা অপারেশনের কারণে প্রভাবিত হতে পারে। সাধারণত এই সমস্যা কিছুদিন পর নিজে থেকেই সেরে যায়, তবে ক্ষেত্রবিশেষে চিকিৎসার প্রয়োজন হতে পারে।

তাছাড়া, ‘ব্লাড ক্লট’ বা রক্ত জমাট বাঁধা একটি গুরুতর সমস্যা হতে পারে। সিজারের পর যদি পর্যাপ্ত হাঁটাচলা না করা হয় বা সঠিক যত্ন নেওয়া না হয়, তবে পা বা ফুসফুসে রক্ত জমাট বাঁধার সম্ভাবনা থাকে। এর ফলে শ্বাসকষ্ট বা তীব্র ব্যথা সৃষ্টি হতে পারে।

এছাড়াও, মূত্রথলি সম্পর্কিত সমস্যা, যেমন প্রস্রাবের তীব্রতা কমে যাওয়া বা মূত্রথলির সংক্রমণও সাধারণত সিজারের পর দেখা দিতে পারে। তবে এটি সাধারণত চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী দ্রুত সেরে যায়। মানসিক অবস্থারও পরিবর্তন হতে পারে।  হরমোনের পরিবর্তন এবং শারীরিক চাপের কারণে বিষণ্নতা বা উদ্বেগ অনুভূত হতে পারে। 

এছাড়া, সিজারের পর কিছু মহিলার গ্যাস বা বদহজমের সমস্যাও দেখা দিতে পারে, যা সাধারণত কিছুদিন পর স্বাভাবিক হয়ে যায়। সুতরাং, সিজারের পর কী কী সমস্যা হতে পারে, সেই বিষয়ে জানা থাকলে আপনি সঠিকভাবে নিজেকে প্রস্তুত করতে পারবেন এবং যে কোনো সমস্যা দ্রুত চিহ্নিত করে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে পারবেন।

সাধারণ প্রশ্ন ও উত্তর (FAQs)

প্রশ্ন: সিজারের পর থেকে সুস্থ হতে কতদিন লাগে?

উত্তর: সিজারের পর থেকে সম্পূর্ণ সুস্থ হতে সাধারণত ৬ থেকে ৮ সপ্তাহ সময় লাগে। 

প্রশ্ন: সিজারের কতদিন পর মাসিক হয়?

উত্তর: সিজারের দুই মাস পর থেকে মাসিক শুরু হতে পারে। তবে সাধারণত দুই মাস পর থেকে মাসিক শুরু হয়।

প্রশ্ন: সিজারের কতদিন পর দুধ খাওয়া যায়?

উত্তর: সিজারের পর গরুর দুধ খেতে কোন বাধা নেই। আপনার যখন ইচ্ছা খেতে পারেন।

প্রশ্ন: সিজারের কতদিন পর সেলাই মেশিন চালানো যায়?

উত্তর:  সিজারের প্রায় ৬০ দিন পর সেলাই মেশিন চালানো যেতে পারে। যদি আপনার সেলাইয়ের ঘাশুকিয়ে যায়। কারণ ঘা শুকিয়ে সেলাই মেশিন চালালে ইনফেকশনের সম্ভাবনা থাকে।

প্রশ্ন: সিজারের কতদিন পর গোসল করা যায়?

উত্তর: সিজারের পাঁচ থেকে ছয় দিন পর গোসল করা যায়।

প্রশ্ন: সিজারের কতদিন পর ভারী কাজ করা যায়?

উত্তর: সিজারের প্রায় ৬০ দিন পর ভারী কাজ করা যেতে পারে

লেখকের শেষ মতামত

পরিশেষে বলা যায় যে, প্রত্যেক সিজারের রোগীর সচেতনভাবে চলাফেরা করা উচিত। একই সাথে, তার আশেপাশে যারা রয়েছেন তাদের উচিত রোগীর যথাযথ যত্ন নেওয়া, যাতে সিজারের পর ইনফেকশনের কোনো লক্ষণ ধরা না পড়ে। 

প্রতিটি মায়ের দ্রুত সুস্থতা কামনা করছি, যাতে করে সিজারের পর তারা তাড়াতাড়ি স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারেন। আশা করা যায়, সিজারের ইনফেকশন-সংক্রান্ত এই বিষয়গুলো জেনে আপনি উপকৃত হয়েছেন। অতএব, সব সময়ই সিজারের রোগীর বিশেষ খেয়াল রাখতে হবে।

আমি সহ আমার টিম প্রতিনিয়ত কাজ করি অনলাইন জগতে বিভিন্ন তথ্য প্রদানের মাধ্যমে সবার জ্ঞান ও দক্ষতা বৃদ্ধিতে। আমাদের সম্পর্কে আপনার কোন প্রশ্ন বা মতামত প্রদান করতে আমাদের যোগাযোগ পেইজ ব্যবহার করুন অথবা নিচে কমেন্ট করুন।

Leave a Comment