সন্তান পৃথিবীতে আসার ঠিক আগে, অর্থাৎ গর্ভাবস্থার ৩৮ থেকে ৪১ সপ্তাহের মধ্যে, গর্ভের শিশু হাত-পা নাড়াতে থাকে। এই সময় তার নড়াচড়ার কারণে অনেক সময় পানির থলেটি ছিঁড়ে যায় এবং মায়ের যোনিপথ দিয়ে পানি আসতে থাকে। এই ঘটনাকেই আমরা গর্ভাবস্থায় পানি ভাঙা বলি। পানি ভাঙা শুরু হলে বুঝতে হবে প্রসবের আর বেশি দেরি নেই।
গর্ভাবস্থায় পানি ভাঙার কারণ, লক্ষণ এবং এটি কিভাবে বুঝবেন, তা নিয়ে নিচে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। এছাড়াও গর্ভাবস্থায় অনেক মা-ই সাদা স্রাব এবং পানি ভাঙা নিয়ে চিন্তায় থাকেন। সাদা স্রাব এবং পানি ভাঙা আসলে কীভাবে আলাদা করা যায়, সে সম্পর্কে নিচে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।
গর্ভাবস্থায় সাদা স্রাব ও পানি ভাঙ্গার পার্থক্য
গর্ভাবস্থায় সাদা স্রাব ও পানি ভাঙা দুটি ভিন্ন বিষয়। দুটিই যোনিপথ দিয়ে বের হয় বলে অনেক সময় অনেকেই এদের মধ্যে পার্থক্য বুঝতে পারেন না। তবে এই দুটির মধ্যে কিছু সুস্পষ্ট পার্থক্য রয়েছে, যা বোঝা খুবই জরুরি। চলুন তাহল গর্ভাবস্থায় সাদা স্রাব ও পানি ভাঙ্গার পার্থক্যটা জেনে নেই।
১। সাদা স্রাব: গর্ভাবস্থায় সাদা স্রাব একটি খুবই স্বাভাবিক এবং সাধারণ বিষয়। এটি সাধারণত গর্ভধারণের প্রথম মাস থেকেই শুরু হতে পারে এবং প্রসবের আগ পর্যন্ত থাকে।
সাদা স্রাবের বৈশিষ্ট্য:
- রঙ ও ঘনত্ব: এটি সাধারণত দুধের মতো সাদা, পাতলা বা কখনও কখনও কিছুটা ঘন হতে পারে। এর কোনো নির্দিষ্ট গন্ধ থাকে না বা হালকা গন্ধ থাকতে পারে।
- পরিমাণ: এর পরিমাণ কম থাকে। সাধারণত এটি ধীরে ধীরে বের হয় এবং প্যান্টিতে হালকা দাগ লাগে।
- কারণ: গর্ভাবস্থায় হরমোনের পরিবর্তন এবং যোনিপথের দিকে রক্ত চলাচল বেড়ে যাওয়ার কারণে এটি হয়। এটি যোনিপথের টিস্যুগুলোকে নরম রাখতে এবং সংক্রমণ প্রতিরোধে সাহায্য করে।
২। পানি ভাঙা: পানি ভাঙা হলো অ্যামনিওটিক স্যাক বা পানির থলি ফেটে যাওয়া। এই থলিটি গর্ভের শিশুকে ঘিরে রাখে এবং এর ভেতরে অ্যামনিওটিক ফ্লুইড থাকে। পানি ভাঙা মানে এই তরলটি বেরিয়ে আসা। এটি সাধারণত প্রসব শুরুর একটি গুরুত্বপূর্ণ লক্ষণ।
পানি ভাঙার বৈশিষ্ট্য:
- রঙ ও ঘনত্ব: এর রঙ সাধারণত স্বচ্ছ বা হালকা হলুদ হতে পারে। অনেক সময় এটি প্রস্রাবের মতো মনে হতে পারে। তবে এর কোনো গন্ধ থাকে না, বা মিষ্টি গন্ধ থাকতে পারে।
- পরিমাণ: পানি ভাঙলে এর পরিমাণ অনেক বেশি হতে পারে। এটি হঠাৎ করে স্রোতের মতো বেরিয়ে আসতে পারে বা ফোঁটা ফোঁটা করে দীর্ঘ সময় ধরে পড়তে পারে। আপনি যদি হঠাৎ করে ভেজা অনুভব করেন এবং মনে হয় প্রস্রাব চেপে রাখতে পারছেন না, তাহলে সম্ভবত পানি ভেঙেছে।
- কারণ: পানি ভাঙার প্রধান কারণ হলো প্রসবের চাপ। যখন জরায়ুর সংকোচন বাড়ে, তখন পানির থলির ওপর চাপ পড়ে এবং তা ফেটে যায়।
সাদা স্রাব ও পানি ভাঙার মধ্যে মূল পার্থক্য নিচে উল্লেখ করা হলঃ
বৈশিষ্ট্য | সাদা স্রাব | পানি ভাঙা |
রঙ | দুধের মতো সাদা বা ঘোলাটে | স্বচ্ছ বা হালকা হলুদ (অনেকটা প্রস্রাবের মতো) |
গন্ধ | সাধারণত কোনো গন্ধ থাকে না বা হালকা গন্ধ থাকে | কোনো গন্ধ থাকে না বা মিষ্টি গন্ধ থাকতে পারে |
ঘনত্ব | পাতলা বা হালকা ঘন | অনেকটা পানির মতো পাতলা ও তরল |
পরিমাণ | অল্প এবং ধীরে ধীরে বের হয় | হঠাৎ করে বেশি পরিমাণে বা ফোঁটা ফোঁটা করে বের হতে পারে |
উপস্থিতি | গর্ভাবস্থার শুরু থেকেই দেখা যায় | সাধারণত প্রসবের সময় বা তার কাছাকাছি সময়ে হয় |
কারণ | হরমোনের পরিবর্তন ও সংক্রমণ প্রতিরোধ | প্রসব বেদনা বা থলির ওপর অতিরিক্ত চাপ |
আপনার যদি মনে হয় যে পানি ভেঙেছে, তাহলে দেরি না করে দ্রুত চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ করা উচিত। বিশেষ করে যদি দেখেন পানির রঙ সবুজ বা অন্য কোনো অস্বাভাবিক রঙ, তাহলে এটি শিশুর জন্য বিপদের লক্ষণ হতে পারে।
গর্ভাবস্থায় পানি ভাঙার কারণ
গর্ভাবস্থায় পানি ভাঙা বা অ্যামনিওটিক স্যাক ফেটে যাওয়া প্রসবের একটি গুরুত্বপূর্ণ লক্ষণ। ডাক্তারি ভাষায় একে রুপচার অফ মেমব্রেনসবলা হয়। এটি সাধারণত প্রসবের শুরুতে বা প্রসবের ব্যথা শুরু হওয়ার পর ঘটে থাকে। তবে কিছু ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট সময়ের আগেই পানি ভাঙতে পারে।
গর্ভাবস্থায় পানি ভাঙার অনেকগুলো কারণ থাকতে পারে। এর মধ্যে কিছু কারণ স্বাভাবিক, আবার কিছু ক্ষেত্রে এটি বিশেষ সমস্যার লক্ষণ হতে পারে।
১। স্বাভাবিক প্রসবের সময়: গর্ভাবস্থায় পানি ভাঙার সবচেয়ে সাধারণ কারণ হলো প্রসবের স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। যখন প্রসব বেদনা শুরু হয়, তখন জরায়ুর সংকোচন বাড়তে থাকে। এই সংকোচন এবং চাপ বেড়ে গেলে অ্যামনিওটিক স্যাকের ওপর চাপ পড়ে এবং একপর্যায়ে তা ফেটে যায়। ফলে ভেতরের তরল বা পানি বেরিয়ে আসে। এটি সাধারণত গর্ভাবস্থার ৩৭ থেকে ৪০ সপ্তাহের মধ্যে ঘটে।
২। সময়ের আগে পানি ভাঙা: যখন গর্ভাবস্থার ৩৭ সপ্তাহ পূর্ণ হওয়ার আগেই পানি ভেঙে যায়, তখন তাকে সময়ের আগে পানি ভাঙা বলা হয়। এর পেছনে কিছু বিশেষ কারণ থাকে, যেমন:
- জরায়ু, যোনিপথ বা মূত্রনালীর কোনো সংক্রমণ হলে তা অ্যামনিওটিক স্যাককে দুর্বল করে দিতে পারে, যার ফলে এটি সময়ের আগেই ফেটে যায়।
- অ্যামনিওটিক স্যাকের ভেতরে যদি স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি তরল থাকে, তাহলে অতিরিক্ত চাপের কারণে এটি ভেঙে যেতে পারে। ডাক্তারি ভাষায় একে পলিহাইড্র্যামনিওস বলা হয়।
- যদি গর্ভে যমজ বা তার বেশি সন্তান থাকে, তাহলে জরায়ুর ওপর অতিরিক্ত চাপ পড়ে, যা পানি ভাঙার কারণ হতে পারে।
- যদি কোনো নারীর আগের গর্ভাবস্থায় সময়ের আগে পানি ভেঙে থাকে, তাহলে এবারও একই ঘটনা ঘটার ঝুঁকি থাকে।
- গর্ভাবস্থায় ধূমপান বা মাদক সেবন করলে সময়ের আগে পানি ভাঙার ঝুঁকি বাড়ে।
৩। শারীরিক কারণ: যদি জরায়ু বা জরায়ুমুখের কোনো জন্মগত ত্রুটি থাকে, তাহলে স্যাকের ওপর চাপ পড়তে পারে। আবার পেটে কোনো ধরনের আঘাত লাগলে পানি ভেঙে যেতে পারে। এছাড়াও গর্ভবতী মায়ের শরীরে ভিটামিন সি বা অন্যান্য প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদানের অভাব থাকলে স্যাকের ঝিল্লি দুর্বল হয়ে যেতে পারে।
পানি ভাঙা গর্ভাবস্থার একটি স্বাভাবিক অংশ হতে পারে, কিন্তু অনেক ক্ষেত্রে এটি গুরুতর সমস্যার লক্ষণও হতে পারে। তাই পানি ভাঙার সঙ্গে সঙ্গে সঠিক পদক্ষেপ নেওয়া মা ও শিশু উভয়ের জন্যই জরুরি।
বিঃদ্রঃ অ্যামনিওটিক স্যাক হলো একটি পাতলা, স্বচ্ছ এবং পানিপূর্ণ থলি, যা গর্ভের শিশুকে ঘিরে রাখে। এটি জরায়ুর ভেতরে থাকে এবং এর মধ্যে যে তরল পদার্থ থাকে, তাকে অ্যামনিওটিক ফ্লুইড বা গর্ভজল বলা হয়। এই তরলটি ভ্রূণকে রক্ষা করে, এর বৃদ্ধি ও বিকাশে সহায়তা করে এবং পুষ্টি ও জলের আদান প্রদানে ভূমিকা রাখে।
গর্ভাবস্থায় পানি ভাঙ্গার লক্ষণ
গর্ভাবস্থায় পানি ভাঙা একটি গুরুত্বপূর্ণ লক্ষণ, যা সাধারণত প্রসবের সময় ঘটে থাকে। এটিকে ডাক্তারি ভাষায় রুপচার অফ মেমব্রেনস বলা হয়। তবে অনেক সময় ভুল করে এটিকে সাদা স্রাব বা প্রস্রাব মনে হতে পারে। তাই পানি ভাঙার লক্ষণগুলো ভালোভাবে চেনা জরুরি। পানি ভাঙার সবচেয়ে সাধারণ লক্ষণ হলো যোনিপথ দিয়ে হঠাৎ করে তরল বেরিয়ে আসা। এটি বিভিন্নভাবে ঘটতে পারে:
১। হঠাৎ করে স্রোতের মতো পানি আসা: এটি পানি ভাঙার সবচেয়ে সুস্পষ্ট লক্ষণ। হঠাৎ করেই আপনার মনে হবে যেন খুব বেশি পরিমাণে পানি বেরিয়ে আসছে এবং আপনি তা নিয়ন্ত্রণ করতে পারছেন না, অনেকটা প্রস্রাবের মতো। এমন ঘটনা ঘটলে বুঝতে হবে আপনার পানি ভেঙেছে।
২। ফোঁটা ফোঁটা করে পানি আসা: অনেক সময় পানি একবারে অনেক বেশি পরিমাণে না এসে ফোঁটা ফোঁটা করে দীর্ঘ সময় ধরে পড়তে পারে। এই অবস্থায় অনেকেই মনে করতে পারেন এটি হয়তো প্রস্রাব বা অতিরিক্ত সাদা স্রাব। তবে এর ঘনত্ব ও পরিমাণ প্রস্রাব বা সাদা স্রাবের থেকে আলাদা হবে।
আপনার যদি শরীর থেকে কোনো তরল বেরিয়ে আসে, তবে তা পানি ভাঙা কিনা তা বোঝার জন্য নিচের বিষয়গুলো খেয়াল করতে পারেন:
- পানি ভাঙার সবচেয়ে সুস্পষ্ট লক্ষণ হলো হঠাৎ করে যোনিপথ দিয়ে অনেকটা তরল বেরিয়ে আসা, যা আপনি নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন না। এটি এমনভাবে আসতে পারে যেন আপনার পোশাক ভিজে যাচ্ছে।
- অনেক সময় পানি একবারে অনেক বেশি পরিমাণে না এসে ফোঁটা ফোঁটা করে দীর্ঘ সময় ধরে পড়তে পারে। এই অবস্থায় অনেকে এটিকে প্রস্রাব বা সাদা স্রাব মনে করে ভুল করতে পারেন।
- অ্যামনিওটিক ফ্লুইড সাধারণত স্বচ্ছ বা হালকা হলুদ রঙের হয় এবং এর কোনো গন্ধ থাকে না। তবে যদি পানির রঙ সবুজ, বাদামি বা অন্য কোনো অস্বাভাবিক রঙ হয়, তাহলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে, কারণ এটি শিশুর জন্য বিপদের লক্ষণ হতে পারে।
- অ্যামনিওটিক ফ্লুইডের কোনো গন্ধ থাকে না বা কিছুটা মিষ্টি গন্ধ থাকতে পারে। এটি প্রস্রাবের মতো বাজে গন্ধযুক্ত নয়।
আপনার যদি মনে হয় পানি ভেঙেছে, তবে যত দ্রুত সম্ভব চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ করুন। কারণ পানি ভাঙার পর শিশুর সংক্রমণের ঝুঁকি বেড়ে যায়। তাই দেরি না করে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী দ্রুত হাসপাতালে যাওয়া উচিত।
গর্ভাবস্থায় পানি ভাঙলে করণীয়
গর্ভাবস্থায় যদি পানি ভেঙে যায়, তাহলে দ্রুত কিছু পদক্ষেপ নেওয়া খুব জরুরি। এই পরিস্থিতিতে calm থাকা এবং সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়া মা ও শিশু দুজনের জন্যই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। নিচে এই পরিস্থিতিতে আপনার যা করণীয়, তা বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হলো:
১। দ্রুত চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ করা: আপনার প্রথম এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ হলো যত দ্রুত সম্ভব আপনার চিকিৎসককে জানানো। তিনি আপনাকে পরবর্তী পদক্ষেপগুলো সম্পর্কে পরামর্শ দেবেন।
২। সময়ের হিসাব রাখা: ডাক্তারকে জানানোর জন্য কিছু তথ্য প্রস্তুত রাখুন:
- পানি ভাঙার সঠিক সময়টা মনে রাখুন।
- পানি কি একবারে বেশি পরিমাণে এসেছে, নাকি ফোঁটা ফোঁটা করে আসছে?
- পানি স্বচ্ছ, হালকা হলুদ, নাকি সবুজ বা বাদামি? কোনো অস্বাভাবিক বা বাজে গন্ধ আছে কিনা তাও খেয়াল করুন। সবুজ বা দুর্গন্ধযুক্ত পানি শিশুর জন্য বিপদের লক্ষণ হতে পারে।
৩। হাসপাতালে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত হওয়া: যদি আপনার চিকিৎসক দ্রুত হাসপাতালে যেতে বলেন, তাহলে দেরি করবেন না। সঙ্গে সঙ্গে হাসপাতালে যাওয়ার জন্য তৈরি হন। পানি ভাঙার পর যত দ্রুত সম্ভব চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে থাকা জরুরি, কারণ সংক্রমণের ঝুঁকি বেড়ে যায়।
৪। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা: যতক্ষণ না আপনি হাসপাতালে যাচ্ছেন, ততক্ষণ পরিষ্কার প্যাড বা কাপড় ব্যবহার করুন। ঘন ঘন প্যাড পরিবর্তন করুন। কোনোভাবেই যোনিপথে কোনো কিছু প্রবেশ করাবেন না, যেমন ট্যাম্পন, কারণ এতে সংক্রমণের ঝুঁকি থাকে।
৫। আতঙ্কিত না হওয়া: এই পরিস্থিতিতে আতঙ্কিত হওয়া স্বাভাবিক, তবে শান্ত থাকার চেষ্টা করুন। পানি ভাঙা মানেই সঙ্গে সঙ্গে প্রসব হয়ে যাবে এমনটা নয়। অনেক সময় এর পরেও প্রসব শুরু হতে কয়েক ঘণ্টা বা দিনও লাগতে পারে।
পানি ভাঙার পর যদি আপনার হালকা জ্বর, তলপেটে ব্যথা বা অন্য কোনো অস্বস্তি বোধ হয়, তাহলে এটি সংক্রমণের লক্ষণ হতে পারে। এমন পরিস্থিতিতে দেরি না করে দ্রুত হাসপাতালে যান।
গর্ভাবস্থায় সাদা স্রাব এর সাথে পানি আসলে কি হয়?
গর্ভাবস্থায় সাদা স্রাবের সাথে যদি পানির মতো তরল আসে, তবে দুটি ভিন্ন কারণ থাকতে পারে। গর্ভাবস্থায় হরমোনের পরিবর্তনের কারণে সাদা স্রাব আরও বেশি পাতলা এবং পানির মতো মনে হতে পারে। এটি খুবই স্বাভাবিক এবং যোনিপথ পরিষ্কার রাখার জন্য শরীরের একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া।
আর যদি হঠাৎ করে প্রচুর পরিমাণে পানির মতো তরল বের হতে থাকে এবং আপনি তা নিয়ন্ত্রণ করতে না পারেন, তবে এটি সাদা স্রাব নয়, বরং পানি ভাঙা হতে পারে। পানি ভাঙা হলো প্রসবের একটি লক্ষণ, যা হতে পারে প্রসবের ব্যথা শুরু হওয়ার আগে বা পরে।
এমন পরিস্থিতিতে দেরি না করে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি। যদি তরলটি দুর্গন্ধযুক্ত, হলুদ, সবুজ বা অন্য কোনো অস্বাভাবিক রঙের হয়, তাহলে এটি সংক্রমণের লক্ষণ হতে পারে এবং সেক্ষেত্রেও ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া প্রয়োজন।
লেখকের শেষ মতামত
আশা করছি আপনারা এতক্ষণে গর্ভাবস্থায় সাদা স্রাব ও পানি ভাঙ্গার পার্থক্য জানতে ও বুঝতে পেরেছেন। গর্ভাবস্থায় পানি ভাঙা একটি সাধারণ ঘটনা, এবং এই সময় ধৈর্য ধরে সঠিক পদক্ষেপ নেওয়া খুবই জরুরি। বাংলাদেশের মায়েদের জন্য পানি ভাঙার লক্ষণগুলো বোঝা এবং কীভাবে এই পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে, সে সম্পর্কে এই আলোচনা আপনাদের উপকারে আসবে।
পানি ভাঙার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সাধারণত প্রসব ব্যথা শুরু হয়। যদি তা না হয়, তাহলে বুঝতে হবে আপনার গর্ভাবস্থায় কোনো সমস্যা থাকতে পারে। পানি ভাঙা শুরু হয়েছে কিনা, তা বোঝার লক্ষণগুলো আমরা আগেই আলোচনা করেছি। তাই, সবসময় ডাক্তারের পরামর্শ মেনে চলুন এবং পরিবারের সাহায্য নিন।