৫০ হাজার টাকা লোন নিতে চান? কোন চিন্তা নেই, আমি আজকে আপনাকে চারটি উপায় বলে দেব যা আপনার সকল আর্থিক সমস্যার সমাধান করে দেবে। শুধু আজকে আপনি আমার এই লেখাটি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত মনোযোগ সহকারে পড়ুন।
সহজ কথায় বলতে গেলে, এটা হলো একটা ছোট্ট অংকের লোন যা সাধারণত আমাদের হঠাৎ করে আসা কিছু দরকার মেটানোর জন্য নেওয়া হয়। ধরুন, আপনার বাড়িতে হঠাৎ একটা জরুরি মেরামত দরকার, বা চিকিৎসার জন্য কিছু টাকা লাগছে, কিংবা ছোট্ট একটা ব্যবসা শুরু করতে চাইছেন – এই ধরনের প্রয়োজনেই ৫০ হাজার টাকার লোন কাজে আসে।
৫০ হাজার টাকা লোন
অনেকেই আছেন যারা জরুরি প্রয়োজনে ৫০ হাজার টাকা লোন পায়না, আবার সমবায় থেকেও লোন নেয় না।, কারণ সেখানে অনেক বেশি সুদ দিতে হয়। আমাদের সমাজে যারা নিম্ন আয়ের পেশাজীবী, কৃষক এবং প্রান্তিক বা ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা ও ব্যবসায়ী রয়েছেন তাদের জন্য এটি আরো জটিল ব্যাপার।
আর এসব শ্রেণী, পেশাজীবী মানুষের কথা চিন্তা করে বেশ কিছু আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও ব্যাংক এর সমাধানের ব্যাপারে এগিয়ে এসেছে। আমি এমনই চারটি ব্যাংকের তথ্য আপনাদের সামনে তুলে ধরব। বাংলাদেশের কয়েকটি পরিচিত ব্যাংক থেকে কীভাবে আপনি ৫০ হাজার টাকা লোন পেতে পারেন, আসুন আমরা সেই বিষয়ে সহজ করে জেনে নিই:
- বাংলাদেশ ব্যাংক
- মিউচিয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক পিএলসি
- আইএফআইসি ব্যাংক পিএলসি
- এ বি ব্যাংক পিএলসি
বাংলাদেশ ব্যাংক – ৫০ হাজার টাকা লোন
বাংলাদেশ ব্যাংক এই উদ্যোগের নাম দিয়েছে ‘ডিজিটাল ক্ষুদ্র লোন’ । ডিজিটাল ক্ষুদ্র লোন বিতরণকারী সব তফসিলী ব্যাংক বাংলাদেশ ব্যাংকের ফিনান্সিয়াল ইনক্লুশন ডিপার্টমেন্ট এর সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয়ে এই লোন বিতরণ করতে পারবে। মোবাইল অ্যাপ, ইন্টারনেট ব্যাংকিং, মোবাইল ফিনান্সিয়াল সার্ভিস, ই- ওয়ালেটের মাধ্যমে এই লোন বিতরণ করা হবে। বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃপক্ষ বলেছে, ডিজিটাল ক্ষুদ্র লোন স্কিম থেকে প্রথমে ৫০ কোটি টাকা বিতরণ করা হবে। প্রথম পর্যায়ের বিতরণ করা লোনের সুষ্ঠু ব্যবহার নিশ্চিত হওয়া সাপেক্ষে দ্বিতীয় পর্যায়ে আরো ৫০ কোটি টাকার লোন পুনঃ অর্থায়ন করা হবো।
বাংলাদেশ ব্যাংক কি সরাসরি লোন দেয়? না, বাংলাদেশ ব্যাংক সরাসরি কোনো সাধারণ মানুষকে ৫০ হাজার টাকা লোন দেয় না। ভাবুন তো, বাংলাদেশ ব্যাংক হলো আমাদের দেশের সব ব্যাংকের অভিভাবক, বা সহজ ভাষায় ‘ব্যাংকগুলোর ব্যাংক’। ওদের কাজ হলো দেশের অর্থনীতিটা ঠিকঠাক চলছে কিনা, মূল্যবৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণে থাকছে কিনা, ব্যাংকগুলো নিয়ম মেনে চলছে কিনা এসব দেখা।
তবে, বাংলাদেশ ব্যাংক কিন্তু ইন্ডারেক্টলি সাহায্য করে। তারা বিভিন্ন বাণিজ্যিক ব্যাংক আর ছোট লোনদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে এমন কিছু নিয়মকানুন আর তহবিল তৈরি করে দেয়, যাতে তারা সাধারণ মানুষ আর ছোট ব্যবসায়ীদের কাছে সহজে লোন পৌঁছে দিতে পারে। তাই ৫০ হাজার টাকার লোনের জন্য আপনাকে সরাসরি বাংলাদেশ ব্যাংকে না গিয়ে, বাণিজ্যিক ব্যাংক বা ছোট লোনদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছেই যেতে হবে।
মিউচিয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক – ৫০ হাজার টাকা লোন
মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক পিএলসি একটি বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংক এবং তারা ৫০,০০০ টাকার মতো ছোট ব্যক্তিগত লোন বা ক্ষুদ্র উদ্যোগ লোন প্রদান করে থাকে। তাদের পার্সোনাল লোনের প্যাকেজের আওতায় এই পরিমাণ টাকা পাওয়া সম্ভব। ৫০ হাজার টাকা তাদের সর্বনিম্ন সীমা হয়ে থাকে।
কাদের জন্য এই লোন?
- আপনি যদি চাকরিজীবী, ব্যবসায়ী বা কোনো পেশাজীবী হন।
- আপনার বয়স যদি ২১ থেকে ৬২ বছরের মধ্যে হয়।
- আপনার মাসিক আয় যদি মোটামুটি একটা নির্দিষ্ট অঙ্কের হয় (সাধারণত ১৫,০০০-২৫,০০০ টাকার মতো, তবে আপনার লোনের পরিমাণের ওপর নির্ভর করে এটা কিছুটা বাড়তে পারে)।
- আগে কোনো লোন নিয়ে থাকলে, সেটার কিস্তি ঠিকঠাক পরিশোধ করেছেন – এমন একটা ভালো রেকর্ড থাকা জরুরি।
কী কী কাগজপত্র লাগবে?
- জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি
- সাম্প্রতিক পাসপোর্ট সাইজের ২/৩ কপি ছবি।
- ঠিকানার প্রমাণপত্র হিসেবে ইউটিলিটি বিল।
- বেতনভুক্ত হলে বেতন সনদ, পে স্লিপ, ব্যাংক স্টেটমেন্ট (৬-১২ মাস)।
- ব্যবসায়ী/পেশাজীবী হলে ট্রেড লাইসেন্স, পেশাগত সনদ, ব্যাংক স্টেটমেন্ট।
- ই-টিআইএন সার্টিফিকেট।
কীভাবে আবেদন করবেন? MTB-এর যেকোনো শাখায় গিয়ে লোনের ফরম নিয়ে পূরণ করতে হবে। তারপর প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা দিলে ব্যাংক আপনার তথ্য যাচাই করবে। সব ঠিক থাকলে, ওরা আপনার লোন অনুমোদন করে দেবে। এটা সাধারণত কয়েকদিনের মধ্যেই হয়ে যায়। মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক পার্সোনাল লোনের সর্বনিম্ন সীমা হিসেবে ৫০ হাজার টাকা লোন প্রদান করে থাকে তাই সরাসরি MTB শাখায় যোগাযোগ করে তাদের বর্তমান নীতিমালা জেনে নেওয়া উচিত।
আইএফআইসি ব্যাংক – ৫০ হাজার টাকা লোন
আইএফআইসি ব্যাংকও ৫০ হাজার টাকার মতো লোন দিতে পারে, বিশেষ করে তাদের ‘এক ব্যাংক’ উদ্যোগের কারণে। আইএফআইসি ব্যাংক এখন দেশের অনেক প্রত্যন্ত অঞ্চলেও তাদের শাখা আর উপ-শাখা খুলেছে, যাতে মানুষ সহজে ব্যাংকিং সেবা পায়। এই ‘এক ব্যাংক’ মডেলের কারণে ছোট অংকের লোনের সুযোগটা কিছুটা সহজ হয়েছে।
কাদের জন্য এই লোন?
- চাকরিজীবী, ব্যবসায়ী, পেশাজীবী বা অন্য যেকোনো বৈধ আয়ের মানুষ।
- আপনার মাসিক আয় নির্দিষ্ট অঙ্কের হতে হবে (এটা ব্যাংকভেদে ভিন্ন হয়)।
- আপনার বয়স যদি ২১ থেকে ৬৫ বছরের মধ্যে হয়।
- আপনার কাজের বা ব্যবসার অভিজ্ঞতা ১-২ বছরের হতে হবে।
- ব্যাংকের কাছে আপনার ক্রেডিট রেকর্ড ভালো থাকতে হবে।
কী কী কাগজপত্র লাগবে? অন্যান্য ব্যাংকের মতো আইএফআইসি ব্যাংকেও একই কাগজপত্র দরকার পড়বে যেমনঃ
- জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি
- সাম্প্রতিক পাসপোর্ট সাইজের ২/৩ কপি ছবি।
- ঠিকানার প্রমাণপত্র হিসেবে ইউটিলিটি বিল।
- বেতনভুক্ত হলে বেতন সনদ, পে স্লিপ, ব্যাংক স্টেটমেন্ট (৬-১২ মাস)।
- ব্যবসায়ী/পেশাজীবী হলে ট্রেড লাইসেন্স, পেশাগত সনদ, ব্যাংক স্টেটমেন্ট।
- ই-টিআইএন সার্টিফিকেট।
কীভাবে আবেদন করবেন? আইএফআইসি ব্যাংকের যেকোনো ‘এক ব্যাংক’ শাখা বা উপ-শাখায় গিয়ে আবেদন করতে পারেন। ওরা আপনার কাগজপত্র আর তথ্য যাচাই করবে। যেহেতু তাদের উদ্দেশ্য হলো মানুষের কাছে সহজে সেবা পৌঁছে দেওয়া, তাই প্রক্রিয়াটা বেশ সহজ হওয়ার কথা।
আইএফআইসি ব্যাংক গ্রামীণ ও আধা-শহুরে এলাকায় তাদের ব্যাপ্তি বাড়াচ্ছে, তাই ক্ষুদ্র লোনের ক্ষেত্রে তারা কিছুটা নমনীয় হতে পারে। সরাসরি তাদের শাখায় যোগাযোগ করা সবচেয়ে ভালো।
এ বি ব্যাংক – ৫০ হাজার টাকা লোন
এবি ব্যাংক পিএলসি বাংলাদেশের প্রথম বেসরকারি ব্যাংক। তারাও বিভিন্ন ধরনের ব্যক্তিগত ও ব্যবসায়িক লোন প্রদান করে, যার মধ্যে ৫০,০০০ টাকার মতো ছোট অঙ্কের লোন পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
কাদের জন্য এই লোন?
- চাকরিজীবী, ব্যবসায়ী বা পেশাজীবী – সবাই আবেদন করতে পারবেন।
- আপনার মাসিক আয় ব্যাংক নির্ধারিত সীমার মধ্যে থাকতে হবে (সাধারণত ২০ – ৩০ হাজার টাকা বা তার বেশি)।
- আপনার বয়স যদি ২১ থেকে ৬৫ বছরের মধ্যে হয়।
- কাজের বা ব্যবসার অভিজ্ঞতা অন্তত ১-২ বছরের হতে হবে।
- আগে লোন নিয়ে থাকলে, সেটা সময় মতো পরিশোধ করার রেকর্ড থাকা জরুরি।
কী কী কাগজপত্র লাগবে?
- অন্যান্য ব্যাংকের মতো এ বি ব্যাংকেও একই কাগজপত্র দরকার পড়বে যেমনঃ
- জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি
- সাম্প্রতিক পাসপোর্ট সাইজের ২/৩ কপি ছবি।
- ঠিকানার প্রমাণপত্র হিসেবে ইউটিলিটি বিল।
- বেতনভুক্ত হলে বেতন সনদ, পে স্লিপ, ব্যাংক স্টেটমেন্ট (৬-১২ মাস)।
- ব্যবসায়ী/পেশাজীবী হলে ট্রেড লাইসেন্স, পেশাগত সনদ, ব্যাংক স্টেটমেন্ট।
- ই-টিআইএন সার্টিফিকেট।
কীভাবে আবেদন করবেন? এবি ব্যাংকের যেকোনো শাখায় গিয়ে পার্সোনাল লোনের জন্য আবেদন করতে পারেন। ব্যাংক আপনার আবেদন যাচাই করবে এবং সব ঠিক থাকলে লোন অনুমোদন করবে।
৫০ হাজার টাকা লোন এর সুদের হার কত
৫০ হাজার টাকার মতো ছোট ব্যক্তিগত লোনের সুদের হার সাধারণত ১০% থেকে ১৫% বা তার বেশি হতে পারে। এটা ব্যাংকভেদে আর আপনার লোনের মেয়াদের ওপর নির্ভর করে।
যদি ব্যাংক থেকে ৫০ হাজার টাকা লোন পেতে অসুবিধা হয়, তাহলে আপনি ক্ষুদ্রলোন প্রতিষ্ঠানগুলোর যেমন ব্র্যাক, আশা, শক্তি ফাউন্ডেশন, কর্মসংস্থান ব্যাংক ইত্যাদি কাছেও যোগাযোগ করতে পারেন। তারা ছোট অঙ্কের লোন আরও সহজ শর্তে দিয়ে থাকে।
লেখকের শেষ মতামত
৫০,০০০ টাকা লোন সাধারণত ক্ষুদ্র লোন বা ব্যক্তিগত লোনের একটি ছোট অংশ হিসেবে বিবেচিত হয়। যেহেতু লোনের পরিমাণ কম, এটি মূলত জরুরি প্রয়োজন মেটাতে, ছোট ব্যবসা শুরু করতে বা দৈনন্দিন খরচ সামলাতে ব্যবহৃত হয়।
তবে লোন নেওয়ার আগে, আপনি যে ব্যাংক থেকেই লোন নিন না কেন, তাদের সঙ্গে সরাসরি কথা বলে বর্তমান সুদের হার, কী কী চার্জ আছে, আর কত দিনে লোন পরিশোধ করতে হবে – এই সব বিষয় বিস্তারিত জেনে নিন। এতে আপনার জন্য সিদ্ধান্ত নেওয়া সহজ হবে