জমি কেনার জন্য লোন দেয় কোন ব্যাংক (আপডেট তথ্য)

আসসালামু আলাইকুম! জমি কেনার মতো একটা গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিতে যখন আপনি ভাবছেন, তখন ব্যাংক থেকে লোন নেওয়াটা একটা বড় সহায় হতে পারে। বাংলাদেশে এমন কিছু ব্যাংক আর আর্থিক প্রতিষ্ঠান আছে যারা আপনাকে এই স্বপ্ন পূরণে সাহায্য করতে পারে। 

জমি কেনার জন্য লোন দেয় কোন ব্যাংক

তবে মজার ব্যাপার হলো, আমাদের দেশে ‘জমি কেনার জন্য লোন’ বলে আলাদা কোনো নাম দিয়ে হয়তো সব ব্যাংক সরাসরি লোন দেয় না। বেশিরভাগ সময় তারা এটাকে বাড়ি তৈরির জন্য লোন বা অথবা ফ্ল্যাট কেনার লোন এইরকম বিভিন্ন নামে পরিচিত করায়, যার মধ্যে জমি কেনার সুযোগটা থাকে। 

আবার কিছু ক্ষেত্রে, আপনার যদি অন্য কোনো সম্পত্তি থাকে যেটা বন্ধক রাখতে পারেন, সেটার বিপরীতেও লোন নিয়ে আপনি জমি কিনতে পারেন। আজকে আমরা জমি কেনার জন্য লোন দেয় কোন ব্যাংক এবং জমি কেনার জন্য লোন পেতে হলে আপনার যেসব যোগ্যতা থাকতে হবে, কি কি লাগবে, কিভাবে আবেদন করবেন এসকল বিষয়ে জেনে নিব।

জমি কেনার জন্য লোন কি?

জমি কেনার জন্য লোন বলতে সহজ কথায় বোঝায়, ব্যাংক বা অন্য কোনো আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে টাকা ধার করা, যা দিয়ে আপনি একটা জমি কিনতে পারবেন। এই লোনটা পরে আপনাকে কিস্তি আকারে সুদসহ শোধ করতে হয়।

এক কথায়, জমি কেনার লোন হলো আপনার স্বপ্নের একটা ঠিকানা গড়ার জন্য ব্যাংক থেকে নেওয়া একটা আর্থিক সাহায্য, যা আপনাকে ধাপে ধাপে নিজের জমি কেনার সুযোগ করে দেয়।

জমি কেনার লোনের ধরন

প্লট পারচেজ লোন: কিছু ব্যাংক সরাসরি প্লট বা জমি কেনার জন্য লোন দেয়, তবে এর শর্ত তুলনামূলকভাবে কঠোর হতে পারে। সাধারণত, এই জমিতে একটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে বাড়ি নির্মাণ শুরু করার শর্ত থাকে।

হোম লোন/হাউজিং লোন: বেশিরভাগ ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান তাদের হোম লোনের আওতায় জমি কেনার জন্য লোন দেয়, তবে শর্ত থাকে যে ওই জমিতে আপনাকে বাড়ি তৈরি করতে হবে। এক্ষেত্রে ‘জমি কেনা এবং বাড়ি নির্মাণ’ – এই দুইয়ের জন্য একত্রিত লোন দেওয়া হয়।

মর্টগেজ লোন: আপনার যদি ইতিমধ্যেই অন্য কোনো সম্পত্তি থাকে যা আপনি বন্ধক রাখতে পারেন, তাহলে তার বিপরীতে মর্টগেজ লোন নিয়ে সেই টাকা দিয়ে জমি কিনতে পারবেন।

জমি কেনার জন্য লোন দেয় কোন ব্যাংক

বাংলাদেশে জমি কেনার জন্য সরাসরি ‘জমি লোন’ নামে খুব বেশি ব্যাংক পণ্য না থাকলেও, বেশ কিছু ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান আপনাকে জমি কিনতে সাহায্য করতে পারে। তারা সাধারণত গৃহলোন আবাসন লোন, বা মর্টগেজ লোন এর আওতায় এই সুবিধা দেয়। কিছু প্রতিষ্ঠান সরাসরি প্লট বা জমি কেনার জন্যও লোন দিয়ে থাকে, বিশেষ করে যদি সেখানে ভবিষ্যতে বাড়ি তৈরির পরিকল্পনা থাকে।

কিছু আর্থিক প্রতিষ্ঠান আছে, যাদের মূল কাজই হলো আবাসন খাতের জন্য লোন দেওয়া। এদের কাছে জমি কেনার জন্য লোন পাওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে।

বাংলাদেশে জমি কেনার জন্য লোন দেয় এমন কিছু উল্লেখযোগ্য ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান হলো:

বাংলাদেশ হাউস বিল্ডিং ফাইন্যান্স কর্পোরেশন: এটি একটি সরকারি প্রতিষ্ঠান যা আবাসন খাতে লোন বিতরণে বিশেষায়িত। তারা জমি কিনে বাড়ি নির্মাণের জন্য লোন দিয়ে থাকে। এদের সুদের হার সাধারণত বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর চেয়ে কম হয়।

লংকাবাংলা ফাইন্যান্স পিএলসি: তাদের স্বপ্ন লোনের আওতায় সরকার অনুমোদিত আবাসিক বা বাণিজ্যিক প্লট, জমি বা ফ্রিহোল্ড সম্পত্তি কেনার জন্য লোন প্রদান করে।

আইডিএলসি ফাইন্যান্স পিএলসি: আইডিএলসি হোম লোনের আওতায় জমি কেনার জন্যও অর্থায়ন করতে পারে, বিশেষ করে যদি সেখানে বাড়ি তৈরির পরিকল্পনা থাকে। তাদের স্বপ্ন নিবাস বা ‘জমিসহ বাড়ি নির্মাণ লোন প্রকল্প রয়েছে। 

আরো পড়ুনঃ-  ডাচ বাংলা ব্যাংক লোন আবেদন - যোগ্যতা ও সুদের হার

ব্র্যাক ব্যাংক পিএলসি: ব্র্যাক ব্যাংক হোম লোনের আওতায় ফ্ল্যাট কেনা, নিজের জায়গায় বাড়ি নির্মাণ এবং সেমি-পাকা বাড়ি নির্মাণের জন্য লোন দেয়। সরাসরি জমি কেনার জন্য পৃথক লোন না থাকলেও, কিছু শর্তে মর্টগেজ লোনের আওতায় জমি জামানত রেখে লোন নিতে পারবেন।

সিটি ব্যাংক পিএলসি: সিটি ব্যাংকের বিভিন্ন হোম লোন ব্যবস্থা বা সুবিধা আছে, যা প্লট ক্রয়, বাড়ি নির্মাণ বা ফ্ল্যাট কেনার জন্য ব্যবহার হয়ে থাকে।

ইস্টার্ন ব্যাংক পিএলসি: ইবিএল-ও আবাসন লোন দেয়, যার আওতায় প্লট কেনা বা বাড়ি নির্মাণের জন্য লোন পেতে পারেন। 

মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক পিএলসি: এমটিবি তাদের পার্সোনাল লোন বা মর্টগেজ লোনের মাধ্যমে জমি কেনার জন্য লোন সুবিধা দিয়ে থাকে। 

অন্যান্য বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংক

  • ডাচ-বাংলা ব্যাংক, 
  • স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক, 
  • ব্যাংক এশিয়া, 
  • ঢাকা ব্যাংক, 
  • গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক, 
  • ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড ,  
  • জনতা ব্যাংক লিমিটেড এবং

এবি ব্যাংক সহ প্রায় সব বড় বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকই আবাসন খাতের আওতায় বা মর্টগেজ লোন হিসেবে জমি কেনার জন্য লোন দিয়ে থাকে।

জমি কেনার জন্য লোন পাওয়ার যোগ্যতা

নজমি কেনার জন্য লোন পাওয়ার যোগ্যতা আসলে ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটা বিষয়। ওরা দেখে যে আপনি লোনটা সময়মতো ফেরত দিতে পারবেন কিনা, আর আপনি যে জমিটা কিনছেন, সেটার কাগজপত্র সব ঠিক আছে কিনা। সহজ কথায়, ওরা আপনার আর্থিক অবস্থা আর আপনি কতটা নির্ভরযোগ্য, সেটাই যাচাই করে।

জমি কেনার জন্য লোন পেতে হলে আপনার যেসব যোগ্যতা থাকতে হবে তা নিচে উল্লেখ করা হলঃ 

  • আপনাকে অবশ্যই বাংলাদেশের নাগরিক হতে হবে।
  • বয়স অন্তত ২৫ বছর হতে হবে এবং সর্বোচ্চ ৬৫ বছর অথবা অবসরপ্রাপ্ত (যেটি আগে হয়)।
  • চাকরিজীবীর ক্ষেত্রে আপনার মাসিক আয় কমপক্ষে ৪০,০০০ টাকা হতে হবে ।
  • সরকারি ক্ষেত্রে আপনার মাসিক আয় কমপক্ষে ২৫,০০০ টাকা হতে হবে ।
  • ব্যবসায়ী্র ক্ষেত্রে আপনার মাসিক আয় ৫০,০০০ টাকা হতে হবে।
  • আপনার যদি বাড়ি ভাড়া থেকে নিয়মিত আয় আসে, তাহলেও লোন পাওয়ার সুযোগ আছে। এক্ষেত্রে মাসিক আয় ৪০,০০০ টাকা বা তার বেশি হলে ভালো।
  • চাকরিজীবীর অভিজ্ঞতা বর্তমান কর্মস্থলে কমপক্ষে ৬ মাস এবং মোট কর্মজীবনের অভিজ্ঞতা ১ বছর হতে হবে।
  • ব্যবসায়ীর ক্ষেত্রে কমপক্ষে ১-২ বছরের অভিজ্ঞতা থাকা উচিত।
  • আপনার ভালো ক্রেডিট হিস্টরি থাকতে হবে
  • আপনি যে জমিটি কিনতে বা বানাতে চাচ্ছেন, সেটি অবশ্যই ব্যাংকের অনুমোদিত এলাকার মধ্যে হতে হবে
  • সম্পত্তিটি আইনিভাবে ঝামেলামুক্ত হতে হবে। অর্থাৎ, সেটার ওপর কোনো মামলা-মোকদ্দমা বা অন্য কোনো ব্যাংকের বন্ধক থাকা চলবে না। 

ব্যাংক সাধারণত আপনার মাসিক আয়ের একটি নির্দিষ্ট অংশ (যেমন ৪০%-৫০%) এর বেশি মাসিক কিস্তি হিসেবে নির্ধারণ করে না। তাই আপনার আয় যত বেশি হবে, তত বেশি লোন পাওয়ার সম্ভাবনা থাকবে।প্রতিটি ব্যাংকের নিজস্ব নীতিমালা থাকে, তাই এই যোগ্যতাগুলো কিছুটা পরিবর্তন হতে পারে।

তাই সবচেয়ে ভালো হয়, আপনি যে ব্যাংক থেকে লোন নিতে আগ্রহী, তাদের নিকটস্থ শাখায় সরাসরি গিয়ে কথা বলা। তাদের কর্মকর্তারা আপনার ব্যক্তিগত পরিস্থিতি অনুযায়ী সবচেয়ে সঠিক তথ্য দিতে পারবেন।

জমি কেনার জন্য লোন পেতে কি কি লাগবে?

জমি কেনার জন্য লোন পেতে গেলে আপনাকে ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কাছে আপনার ব্যক্তিগত তথ্য, আর্থিক সক্ষমতার প্রমাণ এবং যে জমিটি কিনতে চাচ্ছেন সেটির আইনি বৈধতা সংক্রান্ত বিভিন্ন কাগজপত্র জমা দিতে হবে। ব্যাংকগুলো এই কাগজপত্রগুলো যাচাই-বাছাই করে নিশ্চিত হয় যে আপনি লোন পাওয়ার যোগ্য এবং জমিটি বন্ধক রাখার জন্য উপযুক্ত।

আরো পড়ুনঃ-  প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক লোন অনলাইন আবেদন

জমি কেনার জন্য লোন পেতে যেসব কাগজপত্র প্রয়োজন হয় তা নিচে উল্লেখ করা হল; 

আবেদনকারীর ব্যক্তিগত কাগজপত্র

  • পাসপোর্ট সাইজের সত্যায়িত ২-৩ কপি ছবি
  • জাতীয় পরিচয়পত্রের (NID) ফটোকপি।
  • ইউটিলিটি বিলের কপি (বিদ্যুৎ বিল, গ্যাস বিল, পানির বিলের কপি)।
  • টিন (TIN) সার্টিফিকেট।
  • আপনার ব্যক্তিগত ব্যাংক অ্যাকাউন্টের  গত ৬-১২ মাসের স্টেটমেন্ট।
  • যদি কোনো সহ-আবেদনকারী থাকেন, তাহলে তারও একই কাগজপত্র।

আয়ের উৎস সম্পর্কিত কাগজপত্র

  • চাকরিজীবীদের ক্ষেত্রে বেতন সনদ, পে স্লিপ, নিয়োগপত্র, ব্যাংক স্টেটমেন্ট প্রদান করতে হবে।
  • ব্যবসায়ীদের ক্ষেত্রে ট্রেড লাইসেন্স, ব্যবসার ব্যাংক স্টেটমেন্ট, আয়কর রিটার্ন, অংশীদারিত্বের চুক্তিপত্র (যদি থাকে) প্রদান করতে হবে।
  • পেশাজীবীদের ক্ষেত্রে পেশাগত সনদ, চেম্বারের ঠিকানা, আয়কর রিটার্ন প্রদান করতে হবে।
  • বাড়ি ভাড়া থেকে আয় হলে ভাড়ার চুক্তিপত্র, ভাড়া আদায়ের রশিদ প্রদান করতে হবে।

জমির কাগজপত্র

  • জমির মূল মালিকানা দলিল (সাফ কবলা, দানপত্র, বন্টননামা) এবং সব বায়া দলিল।
  • সি.এস, এস.এ, আর.এস, বি.এস খতিয়ানের সার্টিফাইড কপি।
  • নামজারি খতিয়ান, ডিসিআর এবং হালনাগাদ খাজনার রশিদ।
  • জমির নকশা (যদি থাকে)।
  • যদি জমি সরকারের কাছ থেকে বরাদ্দকৃত হয়, তাহলে বরাদ্দপত্র এবং দখল হস্তান্তরপত্র।
  • ১২ বছরের তল্লাশি রিপোর্ট, যা সাব-রেজিস্ট্রার অফিস থেকে সংগ্রহ করতে হয়।
  • জমির বিক্রেতার পরিচয়পত্র ও ছবি।

অন্যান্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র:

  • ব্যাংকের নির্ধারিত পূরণকৃত আবেদন ফরম
  • যদি আপনার অন্য কোনো চলমান লোন থাকে, তার বিবরণ ও পরিশোধের প্রমাণ।
  • ব্যাংক একজন গ্যারান্টার চাইতে পারে, সেক্ষেত্রে গ্যারান্টারের ব্যক্তিগত ও আর্থিক কাগজপত্র প্রয়োজন হবে।

প্রতিটি ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব নীতিমালা অনুযায়ী অতিরিক্ত কাগজপত্র চাইতে পারে। কাগজপত্র জমা দেওয়ার আগে প্রতিটি মূল কাগজপত্রের ফটোকপি করে রাখবেন এবং প্রয়োজনে সত্যায়িত করে নেবেন।

জমির কাগজপত্রগুলো অত্যন্ত সংবেদনশীল, তাই একজন অভিজ্ঞ আইনজীবীর মাধ্যমে সেগুলো ভালোভাবে যাচাই করে নেওয়া বুদ্ধিমানের কাজ। ব্যাংকও তাদের নিজস্ব আইনজীবী দিয়ে যাচাই করবে, তবে আপনার নিজেরও নিশ্চিত হওয়া উচিত।

জমি কেনার জন্য লোন নেওয়ার আবেদন প্রক্রিয়া

জমি কেনার জন্য লোন নেওয়াটা একটা গুরুত্বপূর্ণ ধাপ, আর এর আবেদন প্রক্রিয়াটা সঠিকভাবে জানা থাকলে অনেকটাই সহজ হয়ে যায়। ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো মূলত আপনার পরিচয়, আয়-ব্যয়, এবং যে জমিটা কিনতে চাচ্ছেন তার কাগজপত্র ঠিকঠাক আছে কিনা, সেটা যাচাই করে দেখে।

চলুন, জমি কেনার লোনের আবেদন প্রক্রিয়াটা ধাপে ধাপে সহজভাবে জেনে নিই।

প্রথম প্রস্তুতি

  • প্রথমে আপনার কত টাকা দরকার, কত দিনে শোধ করতে পারবেন, আর মাসিক আয় কত এই হিসাবগুলো আগে ঠিক করে ফেলুন।
  • এরপরে ২-৩টা ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান (যেমন BHBFC, আইডিএলসি, লংকাবাংলা, ব্র্যাক ব্যাংক ইত্যাদি) ঘুরে তাদের আবাসন লোন নিয়ে খোঁজ নিন। সুদের হার, লোনের পরিমাণ আর শর্তগুলো তুলনা করুন।
  • তারপরে আপনার বয়স, আয়, পেশা ইত্যাদি এগুলো ব্যাংক বা প্রতিষ্ঠানের শর্ত পূরণ করছে কিনা, তা নিশ্চিত হন।

আবেদন ও প্রাথমিক কাগজপত্র জমা

  • আপনার পছন্দের ব্যাংকের শাখায় গিয়ে একজন কর্মকর্তার সাথে কথা বলুন।
  • ব্যাংক যে লোনের ফরম দেবে, সেটা নির্ভুলভাবে পূরণ করুন।
  • আপনার পরিচয়পত্র, ছবি, ইউটিলিটি বিলের কপি আর আয়ের প্রাথমিক কাগজপত্র জমা দিন।

কাগজপত্র ও জমির যাচাই-বাছাই

  • ব্যাংক আপনার দেওয়া সব তথ্য যেমন আয়, পেশা, আগের লোনের রেকর্ড বা CIB রিপোর্ট ভালোভাবে পরীক্ষা করবে।
  • এরপরে ওরা আপনার কেনা জমির সব দলিলপত্র যেমন মূল দলিল, খতিয়ান, নামজারি, খাজনার রশিদ ইত্যাদি নিজেদের আইনজীবীদের দিয়ে পরীক্ষা করাবে, যাতে জমির মালিকানা আর আইনগত কোনো ঝামেলা না থাকে।
  • তারপরে ব্যাংকের লোক জমি দেখতে যাবে আর সেটার বাজার মূল্য কত, সেটা নির্ধারণ করবে।
আরো পড়ুনঃ-  আইএফআইসি ব্যাংক লোন সমূহ ২০২৫ (আপডেট তথ্য)

লোন অনুমোদন ও টাকা পাওয়া

  • এরপরে সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে, ব্যাংক আপনার লোন অনুমোদন করে দেবে।
  • তারপরে আপনাকে ব্যাংকের সাথে একটি চুক্তিপত্রে স্বাক্ষর করতে হবে, যেখানে লোনের সব শর্ত লেখা থাকবে।
  • জমির বন্ধক (রেজিস্ট্রি) প্রক্রিয়া সম্পন্ন হওয়ার পর, লোনের টাকা ব্যাংক সরাসরি বিক্রেতার কাছে বা আপনার অ্যাকাউন্টে দিয়ে দেবে

লোন পরিশোধ

  • লোন পাওয়ার পর, চুক্তি অনুযায়ী আপনাকে প্রতি মাসে নির্ধারিত তারিখে কিস্তি পরিশোধ করতে হবে। সময়মতো কিস্তি দিলে আপনার আর্থিক সুনাম ভালো থাকবে।

মনে রাখবেন, লোন নেওয়ার আগে সবকিছু ভালো করে বুঝে নেবেন। কোনো লুকানো চার্জ আছে কিনা, জিজ্ঞাসা করতে ভুলবেন না।

জমি কেনার জন্য কত টাকা লোন পাওয়া যায়?

কত টাকা লোন পাবেন? ব্যাংক সাধারণত জমির মোট মূল্যের ৫০% থেকে ৭০% পর্যন্ত লোন দেয়। বাকি টাকা আপনাকে নিজের পকেট থেকে দিতে হবে। মানে, আপনি যদি ৫০ লাখ টাকার জমি কিনতে চান, তাহলে ২৫ থেকে ৩৫ লাখ টাকা পর্যন্ত লোন পেতে পারেন।

জমি কেনার জন্য সুদের হার ও পরিশোধের মেয়াদ

জমি কেনার লোনের সুদের হার সাধারণত আবাসন ঋণের মতোই হয়। বর্তমানে এটা ৯% থেকে ১৪% বা তার বেশি হতে পারে। এটা ব্যাংক, বাজারের পরিস্থিতি আর আপনার প্রোফাইলের ওপর নির্ভর করে। সরকারি প্রতিষ্ঠান যেমন BHBFC-এর সুদের হার কিছুটা কম হতে পারে। সুদের হার ফিক্সড বা পরিবর্তনশীল হতে পারে। আপনি লোনটা কত দিনে শোধ করবেন, সেটা ব্যাংক নির্ধারণ করে। সাধারণত, ৫ বছর থেকে ২৫ বছর পর্যন্ত মেয়াদ হতে পারে। আপনার বয়স, আয় আর লোনের পরিমাণের ওপর এটা নির্ভর করে

গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ: জমি কেনাটা জীবনের একটা বড় সিদ্ধান্ত। তাই, লোনের জন্য আবেদন করার আগে তাড়াহুড়ো না করে অন্তত ২-৩টা ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সাথে সরাসরি কথা বলুন। তাদের বর্তমান অফারগুলো কী, কোনটায় আপনার জন্য সবচেয়ে বেশি সুবিধা – এটা বুঝে নিন। আপনি যে জমিটা কিনতে চাচ্ছেন, সেটার কাগজপত্র একজন ভালো আইনজীবীকে দিয়ে ভালোভাবে যাচাই করিয়ে নিন।

ব্যাংকও যাচাই করবে, তবে আপনার নিজেরও নিশ্চিত হওয়া উচিত। লোন নেওয়ার আগে নিজের আয়-ব্যয়ের হিসাব কষে নিশ্চিত হন যে, আপনি প্রতি মাসে লোনের কিস্তি সময়মতো পরিশোধ করতে পারবেন। অতিরিক্ত ঋণের বোঝা আপনার জীবনে চাপ সৃষ্টি করতে পারে। জমি কেনা একটি বড় বিনিয়োগ। তাই, লোনের প্রতিটি দিক সম্পর্কে ভালোভাবে বুঝে তারপর সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত।

লেখকের শেষ মতামত

পরিশেষে বলব, জমি কেনার জন্য লোন পেতে গেলে আপনাকে ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কাছে আপনার ব্যক্তিগত তথ্য, যোগ্যতা, আর্থিক সক্ষমতার প্রমাণ এবং যে জমিটি কিনতে চাচ্ছেন সেটির আইনি বৈধতা সংক্রান্ত বিভিন্ন কাগজপত্র জমা দিতে হবে। ব্যাংকগুলো এই কাগজপত্রগুলো যাচাই বাছাই করে নিশ্চিত হয় যে আপনি লোন পাওয়ার যোগ্য এবং জমিটি বন্ধক রাখার জন্য উপযুক্ত।

লোন আবেদন প্রক্রিয়াটি কিছুটা সময়সাপেক্ষ হতে পারে, তাই ধৈর্য ধরে সব কাগজপত্র সঠিকভাবে প্রস্তুত করুন। আপনার জমি কেনার স্বপ্ন সফল হোক!

আমি সহ আমার টিম প্রতিনিয়ত কাজ করি অনলাইন জগতে বিভিন্ন তথ্য প্রদানের মাধ্যমে সবার জ্ঞান ও দক্ষতা বৃদ্ধিতে। আমাদের সম্পর্কে আপনার কোন প্রশ্ন বা মতামত প্রদান করতে আমাদের যোগাযোগ পেইজ ব্যবহার করুন অথবা নিচে কমেন্ট করুন।

Leave a Comment