আমাদের বাংলাদেশ একটি কৃষি প্রধান এবং কৃষি নির্ভর দেশ যে দেশে প্রায় অধিকাংশ মানুষই কৃষির উপর নির্ভরশীল জীবিকা নির্বাহের জন্য। তবে মাঝে মাঝে কৃষকদের বিভিন্ন প্রকারের ঋণের প্রয়োজন হয়ে থাকে যার জন্য কৃষি লোন কিভাবে পাওয়া যায় সে সম্পর্কে তাদের জানা প্রয়োজন।
আমাদের আজকের এই সংক্ষিপ্ত আলোচনায় আপনি কৃষি লোন কিভাবে পেতে পারেন সেই বিষয়টি সম্পর্কে আমরা একটি বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরব। আর্টিকেলটি শেষ পর্যন্ত পড়তে থাকুন যাতে সহজে আপনি একটি কৃষি লোন পেতে পারেন আমাদের এই আর্টিকেল পড়ার পরে।
কৃষি লোন কি
কৃষি লোন বলতে বোঝায়, কৃষিকাজ, পশুপালন, মৎস্য চাষ বা কৃষি-সংশ্লিষ্ট যেকোনো কাজের জন্য ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে টাকা ধার নেওয়া। এই লোনের মূল উদ্দেশ্য হলো কৃষকদের হাতে প্রয়োজনীয় পুঁজি তুলে দেওয়া, যাতে তারা তাদের উৎপাদন বাড়াতে পারে, আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করতে পারে, অথবা কৃষিভিত্তিক নতুন কোনো উদ্যোগ শুরু করতে পারে।
সরকার এবং বাংলাদেশ ব্যাংক সবসময়ই কৃষি খাতে লোনের সহজলভ্যতা নিশ্চিত করতে চায়, কারণ আমাদের দেশের অর্থনীতিতে কৃষির অবদান অনেক বড়।
কৃষি লোন কেন দেওয়া হয়?
কৃষি লোন দেওয়ার প্রধান কারণগুলো হলো:
- উৎপাদন বৃদ্ধি: কৃষকরা যেন উন্নত বীজ, সার, কীটনাশক বা সেচ সুবিধা ব্যবহার করে বেশি ফসল ফলাতে পারে।
- আধুনিকীকরণ: আধুনিক কৃষি যন্ত্রপাতি কেনা বা নতুন চাষ পদ্ধতি চালু করার জন্য।
- কর্মসংস্থান সৃষ্টি: কৃষিভিত্তিক ছোট বা মাঝারি উদ্যোগ তৈরি ও সম্প্রসারণের মাধ্যমে গ্রামীণ কর্মসংস্থান বাড়ানো।
- খাদ্য নিরাপত্তা: দেশের খাদ্য উৎপাদন বাড়িয়ে সবার জন্য খাদ্যের জোগান নিশ্চিত করা।
- গ্রামীণ অর্থনীতিকে চাঙ্গা করা: কৃষকদের আয় বাড়িয়ে গ্রামীণ অর্থনীতিকে শক্তিশালী করা।
কৃষি লোন কিভাবে পাওয়া যায়
কৃষি লোন কিভাবে পাওয়া যায় সে বিষয়টি আপনাদের অবশ্যই জানতে হবে তা না হলে আপনি কখনোই কৃষি লোন পাবেন না। সাধারণত একজন কৃষকই শুধুমাত্র কৃষি লোন পেতে পারে তবে তার আগেও তাকে আরও বেশ কিছু ধাপ অতিক্রম করতে হবে তবেই একমাত্র সে কৃষি লোন পাওয়ার যোগ্য হবে।
সেই সকল ধাপগুলো সঠিকভাবে উত্তীর্ণ করার জন্য অবশ্যই তাকে বেশ কিছু নিয়ম অবলম্বন করতে হবে। যার মধ্যে অন্যতম যে ধাপটি রয়েছে সেটি হচ্ছে অবশ্যই তার একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ জমি থাকতে হবে যার উপর ভিত্তি করে সে ব্যাংকে সেই জমিটি বন্ধক বা জমা রেখে লোন পাবে। একজন কৃষক মূলত লোন গ্রহণ করে থাকে সেচ করার কাজে কিংবা জমির বিভিন্ন ধরনের ফসল বা বিজ কেনার কাজে।
কারণ কৃষকদের মাঝে মাঝে এমন কিছু সময় চলে আসে যে সময় কৃষকের কাছে নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ থাকে না যার মাধ্যমে সে বীজ কিনে তার জমিতে রোপণ করে আবার ফসল ফলাবে। আপনি কৃষি লোন কিভাবে পাওয়া যায়, তা বিস্তারিত জানতে চেয়েছেন।
কৃষি লোন পাওয়াটা এখন আগের চেয়ে অনেক সহজ হয়েছে, কারণ সরকার এবং বাংলাদেশ ব্যাংক চায় কৃষকরা যেন সহজে টাকা পেয়ে তাদের উৎপাদন বাড়াতে পারে। এটা শুধু শস্য চাষ নয়, মাছ চাষ, পশুপালন, এমনকি কৃষি যন্ত্রপাতি কেনার জন্যও পাওয়া যায়। চলুন আর কথা না বাড়িয়ে কিভাবে কৃষি লোন পাওয়া যায় তা নিচে ধাপে ধাপে জেনে নেওয়া যাক।
আপনার প্রয়োজন আর যোগ্যতা বুঝুন: প্রথমেই আপনাকে বুঝতে হবে, আপনি কী ধরনের কৃষি কাজ করছেন বা করতে চান, এবং কত টাকা দরকার।
লোনের ধরন
- শস্য লোন: ধান, গম, ভুট্টা, ডাল, তৈলবীজ, সবজি, মসলা, ফল ইত্যাদি চাষের জন্য।
- মৎস্য লোন: মাছ চাষ, চিংড়ি চাষ, হ্যাচারি স্থাপনের জন্য।
- প্রাণিসম্পদ লোন: গরু মোটাতাজাকরণ, দুগ্ধ খামার, ছাগল, ভেড়া, হাঁস-মুরগি পালনের জন্য।
- কৃষি যন্ত্রপাতি লোন: পাওয়ার টিলার, ট্রাক্টর, হারভেস্টার, সেচ পাম্প ইত্যাদি কেনার জন্য।
- অন্যান্য লোন: নার্সারি, উদ্যান উন্নয়ন, লবণ চাষ, রেশম চাষ, এমনকি বায়োগ্যাস প্ল্যান্টের জন্যও লোন পাওয়া যায়।
কারা পাবে?
- যারা সরাসরি কৃষিকাজের সাথে জড়িত, অর্থাৎ যাদের জমি আছে (নিজের বা বর্গা নেওয়া)।
- যাদের জমির পরিমাণ কম।
- অন্যের জমি লিজ নিয়ে যারা চাষ করেন।
- যারা মাছের খামার, পশুপালনের খামার, কৃষি প্রক্রিয়াজাতকরণ ব্যবসা করেন।
- আপনার কৃষি কাজ থেকে আয় করার একটা স্পষ্ট পরিকল্পনা থাকতে হবে, যাতে ব্যাংক নিশ্চিত হয় যে আপনি লোন শোধ করতে পারবেন।
কোন ব্যাংকে যাবেন: বাংলাদেশে অনেক ব্যাংক কৃষি লোন দেয়। আপনার জন্য সবচেয়ে ভালো হবে নিচের ব্যাংকগুলোতে যোগাযোগ করা:
- বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক: এদের প্রধান কাজই হলো কৃষি লোন দেওয়া। সারা দেশে এদের শাখা আছে এবং কৃষকদের জন্য বিভিন্ন বিশেষ স্কিম থাকে।
- রাষ্ট্রায়ত্ত বাণিজ্যিক ব্যাংকসমূহ: সোনালী ব্যাংক, জনতা ব্যাংক, অগ্রণী ব্যাংক, রূপালী ব্যাংক ইত্যাদি এরাও প্রচুর কৃষি লোন দেয়। এদেরও গ্রামে অনেক শাখা আছে।
- বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকসমূহ: ব্র্যাক ব্যাংক, ডাচ-বাংলা ব্যাংক, সিটি ব্যাংক, মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক, ইস্টার্ন ব্যাংক-এর মতো কিছু বেসরকারি ব্যাংকও কৃষিভিত্তিক এসএমই বা উদ্যোক্তা লোন দেয়।
- পল্লী সঞ্চয় ব্যাংক: যারা ‘একটি বাড়ি একটি খামার’ প্রকল্পের অধীনে আছেন, তারা এখান থেকে ক্ষুদ্র কৃষিভিত্তিক লোন পেতে পারেন।
প্রয়োজনীয় কাগজপত্র গুছিয়ে নিন: লোন পাওয়ার জন্য কৃষকের অবশ্যই বেশ কিছু ডকুমেন্টের প্রয়োজন হবে তাহলে যে কোন ব্যাংক কৃষককে লোন দিবে। আমরা নিচে সেই সকল ডকুমেন্টগুলোর কথা উল্লেখ করে দিলাম।
- জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি।
- সদ্য তোলা পাসপোর্ট সাইজের ২-৩ কপি রঙিন ছবি।
- টিন সার্টিফিকেটের ফটোকপি (যদি থাকে)।
- বিদ্যুৎ বিল, গ্যাস বিল বা পানির বিলের ফটোকপি (সর্বশেষ ২-৩ মাসের)।
- স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান বা ওয়ার্ড কাউন্সিলরের নাগরিকত্ব সনদের ফটোকপি।
- আপনার জমির মূল দলিল বা ফটোকপি (নিজের জমি হলে)।
- খতিয়ানের ফটোকপি (সিএস, এসএ, আরএস, বিএস)।
- হাল সনের সর্বশেষ খাজনা পরিশোধের রসিদ।
- যদি বর্গা জমি হয়, তাহলে জমির মালিকের সাথে করা চুক্তিপত্র।
- জমির নকশা (যদি থাকে)।
- আপনার যদি কোনো ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থাকে, তাহলে সেই অ্যাকাউন্টের গত ৬ মাসের স্টেটমেন্ট।
- যদি আগে কোনো লোন নিয়ে থাকেন, তার পরিশোধের স্টেটমেন্ট।
আপনি যে কৃষি কাজের জন্য লোন নিচ্ছেন, তার একটা বিস্তারিত পরিকল্পনা । ব্যাংক এই পরিকল্পনা দেখে আপনার লোন পরিশোধের সক্ষমতা যাচাই করবে। যদি আগে থেকেই কোনো কৃষি ব্যবসা থাকে, তাহলে তার ছোটখাটো হিসাব বা সংশ্লিষ্ট কাগজপত্র।
ব্যাংকে গিয়ে আবেদন করুন: আপনার নির্বাচিত ব্যাংকের শাখায় গিয়ে কৃষি লোন কর্মকর্তার সাথে যোগাযোগ করুন। এরপরে ব্যাংক থেকে কৃষি লোনের আবেদন ফরম নিয়েখুব সাবধানে, নির্ভুলভাবে পূরণ করুন। কোনো কিছু বুঝতে না পারলে কর্মকর্তার সাহায্য নিন। এরপরে পূরণ করা ফরমের সাথে সব প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা দিন। লোনের সুদের হার, কিস্তি পরিশোধের মেয়াদ, কোনো প্রসেসিং ফি আছে কিনা, বা অন্য কোনো শর্ত আছে কিনা সবকিছু পরিষ্কারভাবে জেনে নিন। বাংলাদেশ ব্যাংক নির্দেশ দিয়েছে যে কৃষি লোনের জন্য নির্ধারিত সুদ ব্যতীত অন্য কোনো প্রকার চার্জ, প্রসেসিং ফি নেওয়া যাবে না।
যাচাই-বাছাই ও লোন অনুমোদন: কাগজপত্র জমা দেওয়ার পর ব্যাংক আপনার তথ্যগুলো যাচাই করবে। অনেক সময় ব্যাংক কর্মকর্তা আপনার জমিতে বা খামারে সরেজমিনে গিয়ে পরিদর্শন করতে পারেন, আপনার কৃষি প্রকল্পের সম্ভাব্যতা যাচাই করার জন্য। এরপরে ব্যাংক বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে আপনার পূর্ববর্তী লোনের রেকর্ড যাচাই করবে, যাকে সিআইবি রিপোর্ট বলা হয়। আপনার যদি আগে কোনো লোনে খেলাপি হওয়ার রেকর্ড না থাকে, তাহলে লোন পাওয়া সহজ হবে। সবকিছু ঠিক থাকলে ব্যাংক আপনার লোন অনুমোদন করবে। আপনাকে একটি অনুমোদনপত্র দেওয়া হবে, যেখানে লোনের সব শর্ত বিস্তারিত লেখা থাকবে।
টাকা বিতরণ ও কিস্তি পরিশোধ: লোন অনুমোদিত হওয়ার পর, ব্যাংক লোনের টাকা আপনার ব্যাংক অ্যাকাউন্টে জমা করে দেবে। অনেক সময়, বিশেষ করে শস্য লোনের ক্ষেত্রে, ইউনিয়ন পর্যায়ে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও কৃষি কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে প্রকাশ্যে লোন বিতরণ কর্মসূচিও আয়োজন করা হয়। লোন পাওয়ার পর, আপনাকে চুক্তি অনুযায়ী নিয়মিত কিস্তি পরিশোধ করতে হবে। কৃষি লোনের কিস্তি সাধারণত শস্য তোলার পর বা ফসলের মৌসুম শেষে একবারে পরিশোধ করা যায়, অথবা ছোট ছোট মাসিক কিস্তিতেও হতে পারে, যা আপনার প্রকল্পের প্রকৃতির ওপর নির্ভর করে।
ব্যাংক কর্মকর্তাদের সাথে আপনার প্রয়োজন ও সক্ষমতা নিয়ে খোলামেলা কথা বলুন। একটি ভালো ও বাস্তবসম্মত কৃষি প্রকল্পের পরিকল্পনা থাকলে লোন পেতে সুবিধা হয়। সময়মতো কিস্তি পরিশোধ করা খুবই জরুরি। এতে আপনার সুনাম বজায় থাকে এবং ভবিষ্যতে আবারও লোন পাওয়ার পথ খোলা থাকে। কৃষি লোন আপনার কৃষি কাজকে আরও বড় করতে এবং আপনার আয় বাড়াতে অনেক সাহায্য করতে পারে। তাই, ভয় না পেয়ে আপনার নিকটস্থ ব্যাংকের সাথে যোগাযোগ করুন।
কৃষি লোন সুদের হার কত
সাধারণত কৃষি লোন গুলো বিভিন্ন ধরনের বা প্রকারের হয়ে থাকে। কারণ প্রতিটি কৃষক আলাদা আলাদা ফসল উৎপাদন করে কিংবা বিভিন্ন কৃষক রয়েছেন যারা বিভিন্ন ধরনের মৎস্য কিংবা পোল্ট্রি ফার্ম কিংবা গরু পালন করার জন্য কৃষি লোন গ্রহণ করে। বাংলাদেশের প্রায় অধিকাংশ ব্যাংকেই কৃষি লোনের সুদের হার ৮%। তবে ধরণভেদে কৃষি লোনের সুদের হার আলাদা আলাদা হয়ে থাকে।
কৃষি লোন কত টাকা দেয়
কৃষি লোনের পরিমাণ নির্দিষ্ট করে বলা কঠিন, কারণ এটি কয়েকটি বিষয়ের উপর নির্ভর করে:
লোনের ধরন: আপনি কী ধরনের কৃষি কাজের জন্য লোন নিচ্ছেন তার উপর নির্ভর করে লোনের পরিমাণ ভিন্ন হয়।
- শস্য লোন: সাধারণত প্রতি একর জমির জন্য নির্ধারিত একটি হার থাকে। যেমন, ধান, গম, ভুট্টা বা অন্যান্য ফসলের জন্য প্রতি বিঘা বা একরে কত টাকা লোন দেওয়া হবে, তা ব্যাংকগুলো ঠিক করে দেয়।
- মৎস্য বা প্রাণিসম্পদ লোন: পুকুরের আকার, মাছের ধরন, পশুর সংখ্যা বা খামারের ধারণক্ষমতা অনুযায়ী লোনের পরিমাণ নির্ধারিত হয়।
- কৃষি যন্ত্রপাতি বা সেচ যন্ত্রপাতি লোন: যন্ত্রপাতির দাম অনুযায়ী লোনের পরিমাণ নির্ধারিত হয়।
ব্যাংকের নীতিমালা: প্রতিটি ব্যাংকের নিজস্ব নীতিমালা এবং লোনের সীমা থাকে। বাংলাদেশ ব্যাংক একটি সাধারণ কাঠামো দিলেও, ব্যাংকগুলো তাদের নিজস্ব ঝুঁকি বিশ্লেষণ এবং গ্রাহকের চাহিদা অনুযায়ী লোনের পরিমাণ নির্ধারণ করে।
ফসলের ধরন ও উৎপাদন খরচ: যে ফসল চাষ করা হচ্ছে তার উৎপাদন খরচ এবং বাজার মূল্য বিবেচনা করে লোনের পরিমাণ ঠিক করা হয়।
কৃষকের চাহিদা ও সক্ষমতা: কৃষকের প্রকৃত চাহিদা, তার জমির পরিমাণ, পূর্ববর্তী লোনের ইতিহাস এবং পরিশোধের সক্ষমতাও লোনের পরিমাণ নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
লোনের সঠিক পরিমাণ জানতে হলে আপনার নিকটস্থ বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক বা অন্য যেকোনো রাষ্ট্রায়ত্ত বাণিজ্যিক ব্যাংক -এর শাখায় গিয়ে কৃষি লোন কর্মকর্তার সাথে সরাসরি কথা বলা সবচেয়ে ভালো। তারা আপনার নির্দিষ্ট কৃষি কাজের ধরন, জমির পরিমাণ এবং অন্যান্য তথ্যের ভিত্তিতে আপনাকে সঠিক লোনের পরিমাণ সম্পর্কে জানাতে পারবেন।
কৃষি লোনের সুবিধা ও অসুবিধা
কৃষি লোন কৃষকদের জন্য খুবই দরকারি একটা সুবিধা, যা তাদের উৎপাদন বাড়াতে আর জীবনমান উন্নত করতে সাহায্য করে। তবে যেকোনো সুবিধারই কিছু ভালো দিক আর কিছু সীমাবদ্ধতা থাকে। কৃষি লোনের ক্ষেত্রেও এমন কিছু দিক আছে। চলুন, মানুষের মতো করে এর সুবিধা আর অসুবিধাগুলো জেনে নিই।
সুবিধা: কৃষকদের জন্য সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ যে বিষয়টি সেটি হচ্ছে সঠিক সময়ে টাকা। সঠিক সময়ে টাকা না থাকলে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন ফসল উৎপাদন করা হয়ে ওঠে না যার ফলে কৃষকদের বিভিন্ন সময় দরকারের টাকা প্রয়োজন হয়। আর সে সময় কৃষকদের লোন নেওয়ার প্রয়োজন হয় যা কিনা অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। এছাড়া কৃষকদের সুবিধার্থে কৃষি লোন খুবই কম সুদের মাধ্যমে প্রদান করা হয়ে থাকে।
কোন ধরনের বিশেষ শর্ত ছাড়াই শুধুমাত্র জমির কাগজপত্র কিংবা দলিল দিলেই কৃষকরা লোন পেয়ে যায়। আর কৃষকরা লোন নেওয়ার মাধ্যমে সহজেই ফসলের উৎপাদন বাড়াতে পারে। এর কাছে যদি পরিমাণ এর চেয়ে কম টাকা থাকে তারা চাইলে লোন গ্রহণ করে তার থেকে বেশি পরিমাণ তারা ফসল উৎপাদন করতে পারবে আধুনিক জিনিসপত্র এবং বিষ ব্যবহার করে। ফসলের মানব বৃদ্ধি পাবে যদি তারা কৃষি লোন গ্রহণ করে। আর কৃষি লোনের মাধ্যমে একজন কৃষক সহজেই লাভবান হতে পারবে, যদি সঠিকভাবে সেই টাকা সে ব্যবহার করতে পারে।
অসুবিধা: অনেক কিছু বিবেচনা করলে কৃষি লোন আপনার কাছে সঠিক মনে হলেও বেশ কিছু দিক বিবেচনা করলে আবার আপনার কাছেই মনে হবে কৃষি লোন হয়তো বা কৃষকদের জন্য একটি অভিশাপের মত। সরকারিভাবে কৃষি লোন গ্রহণ করলে আপনাকে বাংলাদেশ সরকার কোন সুদের হার দিলেও বিভিন্ন ক্ষেত্রে বেসরকারি বিভিন্ন ব্যাংক আপনাকে বেশি সুদ দাবি করবে।
যার ফলে বিভিন্ন সময় ফসল থেকে বেশি লাভ না হলে সুদ দেওয়া কিংবা মূল টাকাটা দেওয়া কষ্টকর হয়ে ওঠে। আর এই সময় ব্যাংকরা কৃষকের উপর অনেক বেশি পরিমাণ চাপ প্রদান করে। কৃষকদের মধ্যে মাঝে মাঝে কিস্তি পরিষদের ক্ষেত্রে বিশেষ ধরনের চাপের সৃষ্টি হয়ে যায় যার ফলে তাদের মানসিকতা অনেক বেশি খারাপ থাকে। আর অনেক ক্ষেত্রেই কৃষি লোন একটি বোঝা হতে পারে কৃষকদের জন্য।
সেই জন্য অবশ্যই আপনাদেরকে এই কথাটি মাথায় রাখতে হবে যে যদি আপনি একটি কৃষি লোন গ্রহণ করেন সেক্ষেত্রে আপনাকে সঠিক সময় কিস্তি প্রদান করতে হবে। এছাড়া কিছু কিছু ব্যাংক কৃষি লোন প্রদান করার ক্ষেত্রে কিছু কঠিন সর্ত দিতে পারে, যাকি শব্দের জন্য হয়ে উঠতে পারে একটি অভিশাপ। এছাড়া সঠিক সময়ে অর্থ প্রদান না করতে পারলে সম্পত্তি নিলামি করা হতে পারে। এ ধরনের বেশ কিছু অসুবিধা রয়েছে কৃষি লোন।
লেখকের শেষ মতামত
কৃষি লোন কৃষকদের জন্য একটা বড় আশীর্বাদ। এর মাধ্যমে তারা নিজেদের উৎপাদন বাড়িয়ে স্বাবলম্বী হতে পারেন এবং দেশের অর্থনীতিতে অবদান রাখতে পারেন। তবে, এই লোন নেওয়ার আগে সুবিধা ও অসুবিধাগুলো ভালোভাবে জেনে বুঝে এবং নিজের সক্ষমতা বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত। আর দুর্যোগের ঝুঁকি কমানোর জন্য শস্য বীমার মতো ব্যবস্থার প্রসার ঘটানোও জরুরি।
আশা করছি আমাদের আজকের এই আর্টিকেলটি পড়ার পরে আপনি খুব সহজেই একটি কৃষি লোন পেয়ে যাবেন, যদি আপনি প্রসেসগুলো সঠিকভাবে ফলো করতে পারেন। যদি কোন জায়গাতে আপনার সমস্যা মনে হয় সেক্ষেত্রে অবশ্যই আমাদের কমেন্ট সেকশনটি আপনাদের জন্য উন্মুক্ত।