এডোভাস সিরাপ মূলত স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস কোম্পানির একটি হারবাল কাশি ও ঠান্ডা-সর্দির ওষুধ। এটি বিভিন্ন প্রাকৃতিক উপাদান যেমন বাসক, যষ্টিমধু, পিপুল, আদা, তুলসী ইত্যাদির নির্যাস দিয়ে তৈরি করা হয়। শরীরের ঠান্ডাজনিত সমস্যা নিরাময় করতে এডোভাস সিরাপ অত্যন্ত কার্যকরী।
এডোভাস সিরাপে থাকা উপাদান শরীরের যেকোনো ধরনের কাশি এবং সর্দি-কাশির সমস্যা কমাতে সাহায্য করে। এডোভাস সিরাপ এর কাজ কি, খাওয়ার নিয়ম, পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া, সতর্কতা এবং এর দাম কত জানতে পুরো আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন।
এডোভাস সিরাপ কেন খায়?
এডোভাস সিরাপ খাওয়ার মূল কারণ হলো যেকোনো ধরনের কাশি এবং সর্দি-কাশির সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া। এটি একটি ভেষজ ওষুধ হওয়ায় এটি প্রাকৃতিক উপাদানের গুণাগুণ দিয়ে তৈরি করা হয় এবং এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া খুব কম। এই সিরাপ যে কারণে খাওয়া হয় তা নিচে উল্লেখ করা হলঃ
- শুষ্ক কাশি হলে
- কফযুক্ত কাশি হলে
- গলার অস্বস্তি ভাব দেখা দিলে
- ঠান্ডা-সর্দি লাগলে
- অ্যালার্জিজনিত কাশি হলে
এডোভাস সিরাপের সবচেয়ে ভালো দিক হলো, এটি সেবনের পর সাধারণত ঝিমুনি আসে না। তাই এটি খাওয়ার পরও আপনি স্বাভাবিক কাজকর্ম করতে পারবেন। তবে, যেকোনো ওষুধ সেবনের আগে একজন ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
এডোভাস সিরাপ এর কাজ কি
এডোভাস সিরাপ হলো একটি হারবাল কাশির ওষুধ, যা বিভিন্ন প্রাকৃতিক উপাদান থেকে তৈরি করা হয়েছে। এর মূল কাজ হলো সব ধরনের কাশি এবং সর্দি-কাশির উপসর্গগুলো উপশম করা। সহজ ভাষায় বলতে গেলে, এটি আপনার শ্বাসতন্ত্রের জন্য একটি প্রাকৃতিক রক্ষাকবচ হিসেবে কাজ করে। এডোভাস সিরাপের প্রধান কাজগুলো নিচে বিস্তারিতভাবে তুলে ধরা হলো:
কফ পাতলা করে বের করে আনা: এটি বুকে জমে থাকা ঘন কফ বা শ্লেষ্মাকে তরল করে দেয়। ফলে কফ সহজে কাশির মাধ্যমে বেরিয়ে আসতে পারে। এটি ফুসফুসের কার্যকারিতা স্বাভাবিক রাখতে সাহায্য করে এবং শ্বাস-প্রশ্বাসকে আরামদায়ক করে তোলে।
গলাকে আরাম দেওয়া: ঠান্ডা-কাশি বা অ্যালার্জির কারণে অনেক সময় গলা খুসখুস করে বা গলায় জ্বালাভাব হয়। এডোভাস সিরাপের মধ্যে থাকা উপাদানগুলো (যেমন যষ্টিমধু) গলাকে প্রশান্তি দেয় এবং অস্বস্তিবোধ কমায়। এটি গলা ভাঙা বা স্বরভঙ্গ উপশম করতেও সাহায্য করে।
সব ধরনের কাশির উপশম: এটি শুধু এক ধরনের কাশি নয়, বরং বিভিন্ন ধরনের কাশির জন্যই কার্যকর যেমনঃ
- শুষ্ক কাশি: যখন কাশি হয় কিন্তু কফ বের হয় না, তখন এটি গলার শুষ্কতা দূর করে কাশি কমাতে সাহায্য করে।
- কফযুক্ত কাশি: বুকে জমাট বাঁধা কফ বের করে শ্বাসতন্ত্রকে পরিষ্কার করে।
- অ্যালার্জিজনিত কাশি: ধুলোবালি বা অন্য কোনো অ্যালার্জির কারণে যে কাশি হয়, তা কমাতেও এটি সাহায্য করে।
- ধূমপায়ীদের কাশি: ধূমপানের কারণে দীর্ঘদিনের যে কাশি হয়, তার চিকিৎসায়ও এটি উপকারী।
পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া কম থাকা: যেহেতু এটি একটি ভেষজ ওষুধ, তাই সাধারণত এর কোনো বড় ধরনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হয় না। প্রচলিত অনেক কফ সিরাপ সেবনে ঝিমুনি আসে, কিন্তু এডোভাস সিরাপে সেই সমস্যা নেই। এছাড়াও এটি কোষ্ঠকাঠিন্য বা মুখের শুষ্কতা সৃষ্টি করে না। এটি অ্যালকোহল ও চিনিমুক্ত হওয়ায় ডায়াবেটিক রোগীদের জন্যও উপযোগী।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি: এতে ব্যবহৃত কিছু ভেষজ উপাদান, যেমন আদা, তুলসী ইত্যাদি, শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে। ফলে এটি শুধু রোগের লক্ষণ কমাতেই নয়, বরং রোগ প্রতিরোধেও কিছুটা ভূমিকা রাখে।
এডোভাস সিরাপের মূল কাজ হলো কাশি, সর্দি এবং গলা ব্যথার মতো সমস্যাগুলো থেকে দ্রুত ও কার্যকরভাবে মুক্তি দেওয়া। তবে যেকোনো ওষুধ সেবনের আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি, বিশেষ করে যদি আপনার কোনো দীর্ঘমেয়াদী স্বাস্থ্য সমস্যা থাকে।
এডোভাস সিরাপ খাওয়ার নিয়ম
এডোভাস সিরাপ একটি ভেষজ ওষুধ, তাই এর সেবনের নিয়মগুলো সহজ। তবে সঠিক ফল পাওয়ার জন্য নিয়ম মেনে চলা জরুরি। নিচে বিস্তারিতভাবে এডোভাস সিরাপ খাওয়ার নিয়ম দেওয়া হলো:
প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য (১২ বছর বা তার বেশি)
- পরিমাণ: সাধারণত, এক চামচ (১০ মিলি) করে দিনে তিনবার খেতে হয়।
- সময়: সকাল, দুপুর এবং রাতে ভরা পেটে বা খাবারের পর এটি খেতে পারেন। এতে হজমের কোনো সমস্যা হবে না।
- বিশেষ ক্ষেত্রে: যদি কাশি খুব বেশি হয়, তাহলে ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী দিনে চারবারও খাওয়া যেতে পারে।
শিশুদের জন্য (১ থেকে ১২ বছর)
- পরিমাণ: শিশুদের জন্য পরিমাণ কম হয়। সাধারণত, হাফ চামচ (৫ মিলি) করে দিনে তিনবার খেতে দেওয়া হয়।
- সময়: প্রাপ্তবয়স্কদের মতো সকাল, দুপুর এবং রাতে খাবারের পর দেওয়া যেতে পারে।
- সতর্কতা: শিশুদের কোনো ওষুধ দেওয়ার আগে অবশ্যই একজন শিশু বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া উচিত। কারণ শিশুর বয়স, ওজন এবং রোগের তীব্রতা অনুযায়ী ওষুধের মাত্রা ভিন্ন হতে পারে।
তবে অবশ্যই যেকোনো ওষুধ সেবনের আগে একজন ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত। এই সিরাপ খাওয়ার আগে বোতলটি ভালোভাবে ঝাঁকিয়ে নিতে হবে। এতে সিরাপের সব উপাদান সঠিকভাবে মিশে যায়। সিরাপ খাওয়ার পর বা দিনে পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করলে জমে থাকা কফ নরম হতে সাহায্য করে এবং দ্রুত রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। কাশির লক্ষণগুলো সেরে গেলেও, ডাক্তার যদি কোনো নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত ওষুধ চালিয়ে যেতে বলেন, তবে সেই পরামর্শ মেনে চলা উচিত।
সাধারণত ২-৩ দিন খেলেই ভালো ফল পাওয়া যায়, তবে পুরোপুরি সুস্থ হওয়ার জন্য পুরো কোর্স সম্পন্ন করা ভালো। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, এটি একটি নিরাপদ ভেষজ ওষুধ হলেও যেকোনো নতুন ওষুধ শুরু করার আগে একজন চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। বিশেষ করে যদি আপনার কোনো দীর্ঘমেয়াদি রোগ বা অ্যালার্জি থাকে।
এডোভাস সিরাপ এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া
এডোভাস সিরাপ একটি ভেষজ বা হারবাল ওষুধ হওয়ায় সাধারণত এর কোনো গুরুতর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা যায় না। এটি তুলনামূলকভাবে বেশ নিরাপদ। তবে, কিছু কিছু ক্ষেত্রে সামান্য কিছু সমস্যা হতে পারে, যা সবার ক্ষেত্রে নাও দেখা দিতে পারে। নিচে এডোভাস সিরাপের সম্ভাব্য কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া উল্লেখ করা হল;
অতিরিক্ত পরিমাণে খেলে বমি বা পাতলা পায়খানা হতে পারে। আবার অনেকের পেটে সামান্য অস্বস্তি, যেমন হালকা পেট ফাঁপা বা বদহজম হতে পারে। যেকোনো ওষুধের মতো, এডোভাস সিরাপের কোনো একটি উপাদানে যদি আপনার অ্যালার্জি থাকে, তাহলে আপনার শরীরে অ্যালার্জির প্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে। যেমন—
- ত্বকে ফুসকুড়ি বা চুলকানি।
- মুখ, ঠোঁট বা জিহ্বা ফুলে যাওয়া।
- শ্বাস নিতে কষ্ট হওয়া।
এমন কোনো লক্ষণ দেখা দিলে অবিলম্বে ওষুধ সেবন বন্ধ করে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত। মনে রাখতে হবে, যেকোনো ভেষজ ওষুধ হলেও ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া দীর্ঘ সময় ধরে বা মাত্রাতিরিক্ত সেবন করা উচিত নয়। যদি আপনি অন্য কোনো দীর্ঘমেয়াদি রোগের জন্য ওষুধ সেবন করেন, তাহলে এডোভাস সিরাপ শুরু করার আগে অবশ্যই ডাক্তারের সঙ্গে কথা বলুন।
এডোভাস সিরাপের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া খুবই সামান্য এবং সাধারণত নিরাপদ। তবে যেকোনো অস্বাভাবিক লক্ষণ দেখা দিলে সতর্ক থাকা এবং চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।
এডোভাস সিরাপ সেবনের সতর্কতা
এডোভাস সিরাপ একটি নিরাপদ ভেষজ ওষুধ হলেও, এটি সেবনের আগে কিছু সতর্কতা মেনে চলা জরুরি। এতে করে আপনি নিরাপদ থাকতে পারবেন এবং ওষুধটির সর্বোচ্চ কার্যকারিতা নিশ্চিত হবে।
ডাক্তারের পরামর্শ নিন: যেকোনো ওষুধ সেবনের আগে অবশ্যই একজন ডাক্তারের সাথে কথা বলা উচিত, বিশেষ করে যদি আপনার কোনো দীর্ঘমেয়াদি স্বাস্থ্য সমস্যা, যেমন ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ বা কিডনির রোগ থাকে। ডাক্তার আপনার রোগের ধরন, বয়স এবং শারীরিক অবস্থা অনুযায়ী ওষুধের সঠিক মাত্রা নির্ধারণ করে দেবেন। নিজের ইচ্ছেমতো মাত্রা বাড়িয়ে বা কমিয়ে সেবন করা ঠিক নয়।
অ্যালার্জির ব্যাপারে সচেতন থাকুন: আপনার যদি এডোভাস সিরাপে থাকা কোনো উপাদানের (যেমন- বাসক, তুলসী, যষ্টিমধু) প্রতি অ্যালার্জি থাকে, তাহলে এই সিরাপ সেবন থেকে বিরত থাকুন। আর যদি ওষুধ সেবনের পর শরীরে ফুসকুড়ি, চুলকানি, শ্বাসকষ্ট বা মুখ ফুলে যাওয়ার মতো লক্ষণ দেখা দেয়, তাহলে দ্রুত ওষুধ সেবন করা বন্ধ করে ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করুন।
গর্ভবতী ও স্তন্যদানকারী মায়েদের জন্য: গর্ভবতী নারী এবং যারা শিশুকে বুকের দুধ খাওয়ান, তাদের জন্য যেকোনো ওষুধ সেবনের আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া আবশ্যক। যদিও এটি একটি ভেষজ ওষুধ, তবুও গর্ভকালীন সময়ে এর প্রভাব সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া প্রয়োজন।
শিশুদের ক্ষেত্রে: শিশুদের ওষুধ দেওয়ার আগে অবশ্যই একজন শিশু বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন। শিশুর বয়স এবং ওজন অনুযায়ী সঠিক মাত্রা নির্ধারণ করা জরুরি। শিশুদের ক্ষেত্রে অতিরিক্ত মাত্রা বা ভুল ওষুধ গুরুতর সমস্যা তৈরি করতে পারে।
অন্যান্য ওষুধের সাথে প্রতিক্রিয়া: আপনি যদি একই সময়ে অন্য কোনো ওষুধ সেবন করে থাকেন, তবে এডোভাস সিরাপ শুরু করার আগে ডাক্তারের সাথে কথা বলুন। কারণ কিছু কিছু ওষুধের সাথে এর প্রতিক্রিয়া হতে পারে, যা আপনার স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।
সেবনের নিয়ম মেনে চলা: প্রতিবার খাওয়ার আগে বোতলটি ভালোভাবে ঝাঁকিয়ে নিন, যাতে ভেতরের সব উপাদান সমানভাবে মিশে যায়। ওষুধের সাথে দেওয়া পরিমাপের চামচ বা কাপ ব্যবহার করুন। রান্নার চামচ বা অন্য কোনো পাত্র দিয়ে পরিমাণ ঠিক রাখা কঠিন। কাশির লক্ষণ কমে গেলেও ডাক্তার যদি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত ওষুধ চালিয়ে যেতে বলেন, তবে সেই পরামর্শ মেনে চলুন।
এডোভাস সিরাপ একটি নিরাপদ এবং কার্যকর ভেষজ ওষুধ। তবে, এর সর্বোচ্চ সুবিধা পেতে এবং যেকোনো ধরনের ঝুঁকি এড়াতে ওপরের সতর্কতাগুলো মেনে চলা খুবই জরুরি।
এডোভাস সিরাপ এর দাম কত
এডোভাস সিরাপের দাম, এর বোতলের আকারের ওপর নির্ভর করে। এটি সাধারণত দুটি ভিন্ন আকারের বোতলে পাওয়া যায়:
- ১০০ মিলি বোতল এর দাম সাধারণত ৭০ টাকা হয়ে থাকে।
- ২০০ মিলি বোতল এর দাম সাধারণত ১১০ টাকা হয়ে থাকে।
তবে এই দাম কিছুটা কম-বেশি হতে পারে, কারণ ওষুধের দোকান বা অনলাইন ফার্মেসিতে মাঝে মাঝে ছাড় দেওয়া হয়। তাই কেনার আগে দাম যাচাই করে নেওয়া ভালো।
লেখকের শেষ মতামত
এডোভাস সিরাপ সাধারণ কাশি, সর্দি ও গলার অস্বস্তির জন্য একটি নির্ভরযোগ্য এবং নিরাপদ ওষুধ। এটি কার্যকরী এবং এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া কম হওয়ায় এটি সহজেই ব্যবহার করা যায়। আপনি যদি ঠান্ডাজনিত সমস্যায় ভোগেন তাহলে নিয়ম অনুযায়ী এই সিরাপ সেবন করতে পারেন। তবে যেকোনো ওষুধ সেবনের আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া এবং সঠিক মাত্রা মেনে চলা সবচেয়ে বুদ্ধিমানের কাজ।