স্মার্টফোনের বিভিন্ন অ্যাপ্লিকেশন (অ্যাপস) তৈরি করার জন্য বিভিন্ন প্রোগ্রামিং ভাষা, ফ্রেমওয়ার্ক এবং ডেভেলপমেন্ট টুলস ব্যবহার করা হয়। আর আপনার হয়তো কোডিং জানা নেই বিধায় কিভাবে ফ্রিতে একটি এপস তৈরি করতে হয় তা জানা নেই। এই মুহূর্তে এই আর্টিকেলটি পড়ে থাকেন তবে আমি বলব আপনি একদম ঠিক জায়গাতেই এসেছেন।
কারণ আমরা এই আর্টিকেলে জানবো কিসের মাধ্যমে স্মার্টফোনের বিভিন্ন অ্যাপস তৈরি হয়ে থাকে এবং কোনো কোডিং ছাড়াই কিভাবে ওয়েবসাইটের মাধ্যমে একটি অ্যান্ড্রয়েড অ্যাপ বানানো যায় সেই সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে তাই অবহেলা না করে শেষ অবদি থাকুন।
স্মার্টফোনের বিভিন্ন এপস কিসের মাধ্যমে তৈরি করা হয়
স্মার্টফোনের অ্যাপস তৈরি করা একটি মাল্টি-ডিসিপ্লিনারি প্রক্রিয়া যেখানে বিভিন্ন প্রোগ্রামিং ভাষা, ফ্রেমওয়ার্ক, টুলস এবং পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়। আপনার দেওয়া প্রতিটি টপিক অনুযায়ী নিচে বিস্তারিত তথ্য দেওয়া হলো:
১। অ্যান্ড্রয়েড অ্যাপ ডেভেলপমেন্ট
অ্যান্ড্রয়েড বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় মোবাইল অপারেটিং সিস্টেম, তাই অ্যান্ড্রয়েড অ্যাপ ডেভেলপমেন্ট একটি বিশাল ক্ষেত্র।
প্রোগ্রামিং ভাষা:
- জাভা (Java): এটি দীর্ঘদিন ধরে অ্যান্ড্রয়েড অ্যাপ ডেভেলপমেন্টের প্রধান ভাষা। জাভা একটি শক্তিশালী, অবজেক্ট-ওরিয়েন্টেড ভাষা যা প্রচুর লাইব্রেরি এবং কমিউনিটি সাপোর্ট সহ আসে।
- কোটলিন (Kotlin): গুগল ২০১৬ সালে কোটলিনকে অ্যান্ড্রয়েডের জন্য প্রথম-শ্রেণীর ভাষা হিসেবে ঘোষণা করে। এটি জাভার চেয়ে আধুনিক, সংক্ষিপ্ত এবং নিরাপদ। বর্তমানে অনেক ডেভেলপার কোটলিনকেই অ্যান্ড্রয়েডের জন্য পছন্দ করেন।
- সি++ (C++): উচ্চ-পারফরম্যান্স অ্যাপ্লিকেশন, যেমন গেম বা গ্রাফিক্স-ইনটেনসিভ অ্যাপ তৈরির জন্য অ্যান্ড্রয়েড নেটিভ ডেভেলপমেন্ট কিট এর মাধ্যমে সি++ ব্যবহার করা হয়।
ফ্রেমওয়ার্ক ও টুলস:
- অ্যান্ড্রয়েড এসডিকে: এটি অ্যান্ড্রয়েড অ্যাপ তৈরির জন্য প্রয়োজনীয় লাইব্রেরি, এপিআই, এবং টুলসের একটি সেট।
- অ্যান্ড্রয়েড স্টুডিও: গুগলের অফিসিয়াল ইন্টিগ্রেটেড ডেভেলপমেন্ট এনভায়রনমেন্ট (IDE) এটি। কোড লেখা, ডিবাগিং, UI ডিজাইন, এবং এমুলেটরে অ্যাপ পরীক্ষা করার জন্য এটি একটি সম্পূর্ণ প্ল্যাটফর্ম।
- ডিপ্লয়মেন্ট: তৈরি করা অ্যাপগুলো .apk বা .aab ফাইল ফরম্যাটে গুগল প্লে স্টোর-এ আপলোড করা হয়।
২। আইওএস অ্যাপ ডেভেলপমেন্ট
অ্যাপলের আইওএস প্ল্যাটফর্মের জন্য অ্যাপ তৈরি করা হয়, যা আইফোন এবং আইপ্যাডে চলে।
প্রোগ্রামিং ভাষা:
- সুইফট: অ্যাপল কর্তৃক তৈরি এই ভাষাটি আইওএস ডেভেলপমেন্টের জন্য আদর্শ। এটি আধুনিক, নিরাপদ, দ্রুত এবং কোড লিখতে সহজ।
- অবজেক্টিভ-সি: সুইফটের আগে এটিই ছিল আইওএস ডেভেলপমেন্টের প্রধান ভাষা।
যদিও নতুন অ্যাপের জন্য সুইফট বেশি ব্যবহৃত হয়, অনেক পুরনো অ্যাপ এখনও অবজেক্টিভ-সিতে লেখা আছে।
ফ্রেমওয়ার্ক ও টুলস:
- আইওএস এসডিকে: অ্যাপলের আইওএস অ্যাপ তৈরির জন্য প্রয়োজনীয় লাইব্রেরি এবং টুলসের সংগ্রহ।
- এক্সকোড: আইওএস ডেভেলপমেন্টের জন্য অ্যাপলের অফিসিয়াল IDE। এটি সুইফট এবং অবজেক্টিভ-সি কোড লেখা, ইউজার ইন্টারফেস (UI) ডিজাইন, ডিবাগিং এবং অ্যাপ টেস্টিংয়ের জন্য ব্যবহৃত হয়।
- ডিপ্লয়মেন্ট: আইওএস অ্যাপগুলো .ipa ফাইল ফরম্যাটে অ্যাপল অ্যাপ স্টোর-এ আপলোড করা হয়। অ্যাপল তাদের অ্যাপগুলোকে খুব কঠোরভাবে রিভিউ করে।
৩। ক্রস-প্ল্যাটফর্ম অ্যাপ ডেভেলপমেন্ট
ক্রস-প্ল্যাটফর্ম ডেভেলপমেন্টের মাধ্যমে একটি একক কোডবেস (একই কোড) ব্যবহার করে একই অ্যাপ অ্যান্ড্রয়েড এবং আইওএস উভয় প্ল্যাটফর্মে তৈরি করা যায়। এর ফলে ডেভেলপমেন্ট সময় ও খরচ সাশ্রয় হয়।
জনপ্রিয় ফ্রেমওয়ার্ক ও ভাষা:
- ফ্লাটার: ফ্লাটার হলো গুগল কর্তৃক তৈরি একটি ওপেন-সোর্স ইউআই (UI) সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্ট কিট। এটি ডেভেলপারদেরকে একটি একক কোডবেস ব্যবহার করে ওয়েব, ডেস্কটপ, এবং মোবাইল প্ল্যাটফর্মের জন্য সুন্দর, দ্রুত এবং নেটিভ-সদৃশ অ্যাপ্লিকেশন তৈরি করতে সহায়তা করে। ফ্লাটার ডার্ট প্রোগ্রামিং ভাষা ব্যবহার করে।
- রিয়্যাক্ট নেটিভ: ফেসবুক কর্তৃক তৈরি এই ফ্রেমওয়ার্কটি জাভাস্ক্রিপ্ট ব্যবহার করে। এটি ওয়েব ডেভেলপারদের জন্য মোবাইল অ্যাপ ডেভেলপমেন্টে প্রবেশ করা সহজ করে তোলে।
- এক্সামেরিন: মাইক্রোসফ্ট কর্তৃক তৈরি একটি ফ্রেমওয়ার্ক যা সি শার্প (C#) ভাষা ব্যবহার করে। এটি .NET ডেভেলপারদের জন্য উপযুক্ত।
- আইওনিক: এটি একটি ওপেন-সোর্স ফ্রেমওয়ার্ক যা ওয়েব প্রযুক্তি ব্যবহার করে হাইব্রিড মোবাইল অ্যাপ তৈরি করতে দেয়।
কম সময়ে উভয় প্ল্যাটফর্মের জন্য অ্যাপ তৈরি, রক্ষণাবেক্ষণ সহজ, খরচ কম। তবে কিছু ক্ষেত্রে নেটিভ অ্যাপের তুলনায় পারফরম্যান্স বা নির্দিষ্ট হার্ডওয়্যার ফিচার অ্যাক্সেসে সীমাবদ্ধতা থাকতে পারে।
৪। গেম অ্যাপ ডেভেলপমেন্ট
মোবাইল গেম অ্যাপ ডেভেলপমেন্ট একটি বিশেষায়িত ক্ষেত্র, যা সাধারণ অ্যাপ ডেভেলপমেন্ট থেকে কিছুটা ভিন্ন।
প্রোগ্রামিং ভাষা ও ইঞ্জিন:
- ইউটিটি: এটি বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় গেম ইঞ্জিনগুলোর মধ্যে অন্যতম। ইউটিটি সি শার্প (C#) ব্যবহার করে এবং এর মাধ্যমে অ্যান্ড্রয়েড, আইওএস, পিসি, কনসোলসহ প্রায় সব প্ল্যাটফর্মের জন্য গেম তৈরি করা যায়।
- আনরিয়েল ইঞ্জিন: এটি একটি শক্তিশালী এবং গ্রাফিক্স-ইনটেনসিভ গেম ইঞ্জিন যা সি++ ব্যবহার করে। এটি উচ্চ-মানের 3D গেম তৈরির জন্য পরিচিত।
- কোকোস২ডি-এক্স: এটি C++, জাভাস্ক্রিপ্ট এবং লুয়া ব্যবহার করে 2D গেম তৈরির জন্য একটি ওপেন-সোর্স ফ্রেমওয়ার্ক।
- নেটিভ ডেভেলপমেন্ট: কিছু গেম জাভা/কোটলিন (অ্যান্ড্রয়েডের জন্য) বা সুইফট/অবজেক্টিভ-সি (আইওএস-এর জন্য) ব্যবহার করে সরাসরি ডেভেলপ করা হয়, বিশেষত যখন খুবই নির্দিষ্ট প্ল্যাটফর্ম-ভিত্তিক অপটিমাইজেশন প্রয়োজন হয়।
গেম ডেভেলপমেন্টে গ্রাফিক্স ডিজাইন, অ্যানিমেশন, ফিজিক্স ইঞ্জিন, সাউন্ড ডিজাইন এবং পারফরম্যান্স অপটিমাইজেশনের উপর বিশেষ জোর দেওয়া হয়।
৫। মোবাইল অ্যাপ ডেভেলপমেন্টে ব্যবহৃত প্রযুক্তি
মোবাইল অ্যাপ তৈরির জন্য প্রোগ্রামিং ভাষা এবং ফ্রেমওয়ার্কের বাইরেও আরও অনেক প্রযুক্তি ও টুলস ব্যবহার করা হয় যেমন:
- ক্লাউড কম্পিউটিং
- কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI)
- ইন্টারনেট অফ থিংস (IoT)
- ব্লকচেইন
অ্যামাজন ওয়েব সার্ভিসেস: অ্যামাজন ওয়েব সার্ভিসেস হলো অ্যামাজন দ্বারা পরিচালিত একটি ব্যাপক ক্লাউড কম্পিউটিং প্ল্যাটফর্ম। এটি ব্যক্তি, কোম্পানি এবং সরকারগুলোকে অন-ডিমান্ড ভিত্তিতে বিভিন্ন ক্লাউড এবং এপিআই (API) সরবরাহ করে, যা “পে-অ্যাজ-ইউ-গো” মডেলের ওপর ভিত্তি করে চলে
ডেটাবেস: এসকিউলাইট স্থানীয় ডেটা সংরক্ষণের জন্য প্রায়শই মোবাইল অ্যাপে ব্যবহৃত হয়। এবংন আরইএলএম, কোর ডেটা, রুম এইগুলো মোবাইল অ্যাপের জন্য বিশেষায়িত ডেটাবেস সমাধান।
ভার্সন কন্ট্রোল সিস্টেম: ভার্সন কন্ট্রোল সিস্টেম হলো একটি সফটওয়্যার টুল যা সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্টে কোড এবং অন্যান্য ফাইলগুলির পরিবর্তন ট্র্যাক (track) করতে সাহায্য করে।
ডিজাইন টুলস: অ্যাপের কার্যকারিতা, পারফরম্যান্স এবং নিরাপত্তা পরীক্ষা করার জন্য বিভিন্ন টেস্টিং ফ্রেমওয়ার্ক ও টুলস ব্যবহার করা হয়।
৬। মোবাইল অ্যাপ ডেভেলপমেন্টের প্রক্রিয়া
একটি মোবাইল অ্যাপ তৈরির প্রক্রিয়া সাধারণত একটি সুসংজ্ঞায়িত ধাপের মধ্য দিয়ে যায়:
ধাপ-১ঃ অ্যাপের মূল ধারণা, উদ্দেশ্য, লক্ষ্য ব্যবহারকারী এবং মূল বৈশিষ্ট্যগুলি চিহ্নিত করা, মার্কেট রিসার্চ এবং প্রতিযোগীদের বিশ্লেষণ করা। একটি বিশদ রোডম্যাপ এবং ফিচার সেট তৈরি করা।
ধাপ-২ঃ ব্যবহারকারীর প্রবাহ (user flow), ওয়্যারফ্রেম (wireframes) এবং প্রোটোটাইপ (prototypes) তৈরি করে অ্যাপটি কতটা ব্যবহারবান্ধব হবে তা নির্ধারণ করা।অ্যাপের ভিজ্যুয়াল উপাদান, যেমন লেআউট, রং, ফন্ট, আইকন এবং গ্রাফিক্স ডিজাইন করা। এটি অ্যাপের লুক অ্যান্ড ফিল তৈরি করে।
ধাপ-৩ঃ প্রোগ্রামিং ভাষা এবং নির্বাচিত ফ্রেমওয়ার্ক ব্যবহার করে অ্যাপের কোড লেখা। ফ্রন্টএন্ড (ব্যবহারকারী যা দেখে) এবং ব্যাকএন্ড (সার্ভার-সাইড লজিক ও ডেটাবেস) তৈরি করা। প্রয়োজনীয় এপিআই ইন্টিগ্রেশন এবং ডেটাবেস সেটআপ করা এবং ক্লিন কোড লেখা এবং ভার্সন কন্ট্রোল (যেমন Git) ব্যবহার করা।
ধাপ-৪ঃ অ্যাপের প্রতিটি ফিচার ঠিকমতো কাজ করছে কিনা তা পরীক্ষা করা (ফাংশনাল টেস্টিং)। পারফরম্যান্স, নিরাপত্তা এবং স্কেলেবিলিটি পরীক্ষা করা। বিভিন্ন ডিভাইস এবং অপারেটিং সিস্টেম সংস্করণে অ্যাপটি ঠিকমতো কাজ করছে কিনা তা নিশ্চিত করা। ব্যবহারকারীদের দিয়ে বিটা টেস্টিং করানো।
ধাপ-৫ঃ অ্যাপটিকে গুগল প্লে স্টোর বা অ্যাপল অ্যাপ স্টোরে প্রকাশের জন্য প্রস্তুত করা। প্রয়োজনীয় মেটাডেটা (অ্যাপের নাম, বর্ণনা, স্ক্রিনশট, ভিডিও) প্রস্তুত করা। স্টোর পলিসি এবং নির্দেশিকা মেনে চলা। অ্যাপটি স্টোরে আপলোড করা এবং রিভিউ প্রক্রিয়ার জন্য অপেক্ষা করা।
ধাপ-৬ঃ ব্যবহারকারীদের প্রতিক্রিয়ার উপর ভিত্তি করে নিয়মিত বাগ ফিক্স এবং পারফরম্যান্স অপটিমাইজেশন করা। এরপরে নতুন ফিচার যোগ করে অ্যাপটিকে উন্নত করা এবং প্রাসঙ্গিক রাখা। আর অপারেটিং সিস্টেমের আপডেটগুলোর সাথে সামঞ্জস্য বজায় রাখতে অ্যাপ আপডেট করা।
ব্যবহারকারীর সমর্থন এবং কমিউনিকেশন। এই প্রক্রিয়াটি একটি পুনরাবৃত্তিমূলক হতে পারে, যেখানে প্রতিটি ধাপের ফিডব্যাক পরবর্তী ধাপে উন্নতি করতে সাহায্য করে।
এপস তৈরি করে কিভাবে
বন্ধুরা! মোটামুটি আমাদের প্রায় সকলের একটি কমন ধারণা রয়েছে যে একটি অ্যাপ তৈরি করতে গেলে অবশ্যই প্রোগ্রামিং নলেজ থাকতে হয়। কম করে হলেও JAVA সম্পর্কে ভালো ধারণা রাখতে হবে। নতুবা একটি অ্যাপ তৈরি করা সম্ভব হবে না।
কিন্তু যদি এরকম হয় আপনি কোডিং কিংবা প্রোগ্রামিং ভাষা সম্বন্ধে কিছুই জানেন না বা এ সম্পর্কে আপনার কোনো ধারণাই নেই, তবুও আপনি একটি অ্যাপ বানাতে চান। তাহলে সেটা কি করে সম্ভব? হ্যাঁ, এটা অবশ্যই সম্ভব। আপনার যদি কোডিং সম্পর্কে কোনো ধারনা নাও থাকে তবুও আপনি একটি অ্যাপ নিজে নিজে বানিয়ে নিতে পারবেন এবং তাও সম্পূর্ণ ফ্রিতে।
তবে এই অ্যাপ্স তৈরি করার জন্য আপনার অবশ্যই ইন্টারনেট কানেকশন থাকতে হবে। এরপর আপনার একটি জিমেইল আইডির প্রয়োজন হবে। আপনার জিমেইল আইডির মাধ্যমে আপনি একটি নির্দিষ্ট ওয়েবসাইটে প্রবেশ করে যেকোনো মোবাইল app তৈরি করতে পারবেন।
বর্তমানে ইন্টারনেটে এরূপ অসংখ্য ওয়েবসাইট রয়েছে যেগুলো দিয়ে কোডিং ছাড়াই ফ্রিতে app বানানো যায়। তবে কার্যকারিতার দিক থেকে সবগুলো একরকম নয়। আজকের এই আর্টিকেলটিতে আমি সেসব ওয়েবসাইটগুলোর মধ্য থেকে বেস্ট তিনটি ওয়েবসাইট নিয়ে আলোচনা করব।
তাহলে চলুন দেখে নেয়া যাক ওয়েবসাইট তিনটি কি কি এবং এগুলো দিয়ে কিভাবে অ্যাপ বানানো যায়।
১। Mobincube– create your apps for free
আপনারা খুব সহজে এই মবিনকিউব ওয়েবসাইটের মাধ্যমে app বানাতে পারবেন। এজন্য আপনার প্রথম কাজ হবে এই ওয়েবসাইটে প্রবেশ করে sign up করে নেওয়া।
তারপর আপনি যে কোনো ক্যাটাগরির অ্যাপ তৈরি করে সেগুলো পাবলিশ করতে পারবেন। এখানে এন্ড্রয়েড, আইফোন, উইন্ডোজ সহ আরো বিভিন্ন ধরনের অপারেটিং সিস্টেমের app তৈরি করতে পারবেন।
এছাড়া আপনি চাইলে গুগল প্লে স্টোরে এই অ্যাপগুলি আপলোড করে Google Admob এর মাধ্যমে ইনকাম করতে পারবেন। অর্থাৎ আপনি এই Mobincube ওয়েবসাইটের মাধ্যমে অ্যাপ ফ্রিতে বানিয়ে আয় করতে পারবেন।
২। Appsgeyser– make your own applications
আপনি যদি একটিমাত্র ওয়েবসাইট থেকে একাধিক সুবিধা পেতে চান তবে Appsgeyser ওয়েবসাইটটি আপনার জন্য।
এখানে আপনি যেকোন ওয়েবসাইটকে অ্যাপে ট্রান্সফার করতে পারবেন এর পাশাপাশি আরও কিছু ভিন্ন ধরনের অ্যাপ তৈরি করার সুবিধা পাবেন। যেমন-
- ফটো এডিটিং app,
- ভিডিও ডাউনলোডার app,
- ম্যাসেঞ্জার app,
- গেমিং app,
- ওয়েব ব্রাউজার app,
- টিউটোরিয়াল app ইত্যাদি।
বর্তমানে ইন্টারনেটে এই ধরনের অ্যাপ গুলোর ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। যে কারণে এই অ্যাপ গুলো তৈরি করে ইনকাম করাটা খুবই সহজ ও ফলপ্রসূ। তাই আর দেরি না করে এখনি Appsgeyser থেকে নিজের পছন্দের যেকোনো অ্যাপ বানিয়ে নিন এবং আর্নিং শুরু করে দিন।
৩। App. Yet– convert any website to app
Appyet.Yet এই ওয়েবসাইটের মাধ্যমে আপনার যেকোনো ওয়েবসাইট খুব সহজেই একটি android app এ কনভার্ট করতে পারবেন। বিশেষ করে এই ওয়েবসাইট একটি ব্লগ বা ওয়েবসাইটকে অ্যাপে কনভার্ট করার জন্যই ব্যবহার হয়ে থাকে।
এই সাইটে একেবারে ফ্রিতে ২ থেকে ৫ মিনিটের ভেতরে নিজের app বানিয়ে নিতে পারবেন কোনো কোডিং নলেজ ছাড়াই এবং গুগল প্লে স্টোরে নিজের app আপলোড করতে পারবেন।
প্রফেশনাল এপস তৈরি করতে কেমন খরচ হবে?
একটি প্রফেশনাল এপ্স তৈরি করতে খরচ অনেক হবে এটাই স্বাভাবিক। এই ধরনের এপ্স তৈরি করতে একজন ভালো দক্ষ এপ ডেভেলপার প্রয়োজন। এক্ষেত্রে ৫,০০০ থেকে শুরু করে কয়েক লক্ষ টাকা খরচ হতে পারে।
প্রফেশনাল মোবাইল এপস তৈরিতে সতর্কতা
বর্তমানে যেসকল এপ্স ডেভেলপার আছেন তারা শুধু সোর্স কোড ব্যবহার করবে। একটা সাধারন এপ্স তৈরি করে অনেক বেশি পেমেন্ট চেয়ে থাকেন। তাই কাউকে দিয়ে এপ্স তৈরি করার পূর্বে অবশ্যই সচেতনতা অবলম্বন করতে হবে। বেশীর ভাগ সোর্স কোড গুগল সার্চ করলে পাওয়া যায় আর গিটহাব তো আছেই। এছাড়া, CodeCanyon থেকে অনেকে সোর্স কোড কিনে সেটা বিভিন্ন দামে বিক্রি করে।
তাই, অ্যাপ তৈরির আগে অবশ্যই জেনে নিবেন, তারা কি একদম স্কেচ থেকে অ্যাপ তৈরি করে দিবে নাকি সোর্স কোড ডাউনলোড করে কাস্টমাইজ করে দিবে। কাস্টমাইজ করে দিলে খরচ কম হবে তবে নিশ্চিত হয়ে নিবেন, সোর্স কোড সে কোথা থেকে সংগ্রহ করেছে। যদি CodeCanyon হয় তাহলে ভাল।
লেখকের শেষ মতামত
পরিশেষে, স্মার্টফোনের বিভিন্ন অ্যাপস তৈরি করা একটি বহু-স্তরীয় এবং গতিশীল প্রক্রিয়া, যা নির্ভর করে অ্যাপের উদ্দেশ্য, প্ল্যাটফর্মের চাহিদা এবং ডেভেলপারদের দক্ষতার ওপর। এক কথায় বলতে গেলে, অ্যাপগুলো মূলত প্রোগ্রামিং ভাষা, ফ্রেমওয়ার্ক এবং ডেভেলপমেন্ট টুলসের সমন্বয়ে তৈরি হয়।
স্মার্টফোনের অ্যাপস তৈরি একটি চলমান উদ্ভাবনের ক্ষেত্র। প্রতিনিয়ত নতুন ভাষা, ফ্রেমওয়ার্ক এবং টুলস আসছে যা ডেভেলপমেন্ট প্রক্রিয়াকে আরও সহজ এবং কার্যকর করে তুলছে। আপনি যদি অ্যাপ ডেভেলপমেন্টে আগ্রহী হন, তবে আপনার প্রয়োজন অনুযায়ী সঠিক প্ল্যাটফর্ম এবং প্রযুক্তি নির্বাচন করে শুরু করাটা গুরুত্বপূর্ণ।