আজকের এই পোষ্টে আলোচনা করা হবে বিকোজিন খেলে কি মোটা হয় কিনা এবং বিকোজিন ট্যাবলেট খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য সমুহ। আমরা হয়তো অনেকেই জানি না যে বিকোজিন খেলে কি মোটা হয় কিনা? আবার এই ট্যাবলেট সেবনের সঠিক নিয়মও জানি।
বিকোজিন মূলত আমাদের দেহের হৃদপিন্ড ভালো রাখতে অনেক সাহায্য করে থাকে। এছাড়া বিকোজিন ট্যাবলেট টি হ্রদরোগ, স্ট্রোক, ঘুম না আসা সহ নানা রোগ থেকে মুক্তি দিতে সাহায্য করে থাকে । মূলত আপনাদের সুবিধার কথা ভেবেই আজকের এই পোষ্টে বিকোজিন খেলে কি মোটা হয় কিনা এবং খাওয়ার নিয়ম নিয়ে আলোচনা করা হবে। তাই আমাদের শেষ অবদি থেকে জেনে নিন।
বিকোজিন ট্যাবলেট এর কাজ কি
বিকোজিন ট্যাবলেট এর কাজ কি কি তা জেনে উল্লেখ করা হলঃ
- ভিটামিন বি এবং জিঙ্কের ঘাটতি পূরণ করে
- শক্তি উৎপাদন ও বিপাক ক্রিয়া উন্নত করা
- স্নায়ুতন্ত্রের সুস্থতা ও মস্তিষ্কের কার্যকারিতা বাড়ায়
- রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে
- শারীরিক বৃদ্ধি ও বিকাশ করে
- নখ, ত্বক, চুলের স্বাস্থ্য উন্নত করে
- মানসিক স্বাস্থ্য ও মেজাজ স্থিতিশীল রাখে
- রুচি বৃদ্ধি ও হজম প্রক্রিয়ায় সহায়তা করে
বিকোজিন খেলে কি মোটা হয়
আপনি যদি কোন ফার্মেসিতে মুখের রুচি বৃদ্ধি করার ঔষধ দেওয়ার কথা বলেন তাহলে দেখবেন বিকোজিন ট্যাবলেট দিতে পারে। আমরা অনেকেই এ ধরণের ট্যাবলেটের কার্যকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত না জেনেই ঔষধ ক্রয় করে সেবন করা শুরু করি মোটা হওয়ার জন্য।
ঠিক একই ভাবে আপনার প্রতিবেশী কিংবা পরিচিত যদি মোটা হওয়ার ওষুধ সম্পর্কে খুঁজতে থাকে তাহলে আপনিও তাকে ট্যাবলেট খেতে বলবেন এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু মূলত আপনি নিজেও জানেন না ট্যাবলেটের আসল কার্যকারিতা কি কিংবা কি উদ্দেশ্যে এটি প্রস্তুত করা হয়েছিল। এজন্য যেকোনো ওষুধ সেবনের পূর্বে অবশ্যই ওই ঔষধ সম্পর্কে জেনে নিবেন।
আপনারা ইতিমধ্যে আপনাদের অতি অপেক্ষিত এবং বহুল জিজ্ঞাসিত অংশে প্রবেশ করেছেন। যেহেতু আপনারা এতক্ষণ বিকোজিন ট্যাবলেট এর কাজ কি সম্পর্কে জেনেছেন তাহলে আশা করা যায় আপনি এই ট্যাবলেটের উপাদান সম্পর্কেও পূর্ণাঙ্গ ধারণা পেয়েছেন। কোন ঔষধের মধ্যে যদি মোটা হওয়ার উপাদান থাকে তাহলে ওই ওষুধ খেলে অবশ্যই মোটা হবেন।
আমরা হয়তো বেশিরভাগ মানুষই মনে করি যে এই ট্যাবলেট সেবন করলে মোটা হওয়া যায়। আসলে আমাদের এই ধারনা টা ভুল। তবে আসলেই এই ট্যাবলেট সেবনে মোটা হওয়া যায় কিন্তু সেটা পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া হিসেবে। এছাড়া মোটা হওয়ার কোনো ট্যাবলেট আমাদের শরীরকে স্থায়ীভাবে মোটা করে না তাই সবার উচিত এই সব ট্যাবলেট থেকে দূরে থাকা । বিকোজিন ট্যাবলেট টি যদি আপনি খেতে চান তাহলে তার আগে অব্যশয় ডাক্তারের পরামর্শ নিবেন ।
মোটকথা এই ট্যাবলেটটি খেলে সরাসরি কোন ওজন বৃদ্ধি হয় না বা শরীর মোটা হয় না। ট্যাবলেটটি শুধুমাত্র শরীরে পুষ্টিকর উপাদানের চাহিদা মেটাতে ব্যবহার করা হয়ে থাকে। এজন্য পরিশেষে বলতে চাই বিকোজিন ট্যাবলেট সেবনে মোটা হয় না।
বিকোজিন ট্যাবলেট খাওয়ার নিয়ম
- প্রাপ্তবয়স্কদের ক্ষেত্রে প্রতিদিন দুই থেকে তিনবার ১/২টি করে ট্যাবলেট সেবন করতে পারবে।
- এবং ৩০ কেজি ওজনের উপরে বাচ্চাদের ১/২ করে দিনে ২ বার সেবন ক্রতে পারবে।
কিন্তু মনে রাখবেন অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে এই ওষুধ সেবন করতে হবে। ডাক্তারের পরামর্শ ব্যতিত কখনোই খাবেন না। আর শিশুদেরও খাওয়াবেন না।
বিকোজিন সিরাপ খাওয়ার নিয়ম
বিকোজিন সিরাপ সাধারণত ভিটামিন বি কমপ্লেক্স এবং জিঙ্কের অভাব পূরণের জন্য ব্যবহৃত হয়। এটি কীভাবে সেবন করতে হবে তা বয়স, শারীরিক অবস্থা এবং চিকিৎসকের পরামর্শের উপর নির্ভর করে। তবে, সাধারণ নির্দেশিকা নিচে দেওয়া হলো:
বিকোজিন সিরাপের বোতলে সাধারণত একটি পরিমাপক ক্যাপ বা চামচ থাকে, যা দিয়ে সঠিক মাত্রায় ঔষধ নেওয়া সহজ হয়।
শিশুদের জন্য (সাধারণত ১-৬ বছর): সাধারণত, ৫ মিলি (১ চামচ) দিনে একবার সেবনের পরামর্শ দেওয়া হয়। তবে, বয়স এবং শিশুর পুষ্টিগত চাহিদার উপর নির্ভর করে মাত্রা ভিন্ন হতে পারে।
৬ বছরের উপরে এবং প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য: সাধারণত, ১০ মিলি (২ চামচ) দিনে একবার সেবনের পরামর্শ দেওয়া হয়। কিছু ক্ষেত্রে এটি দিনে দুবারও সেবন করা যেতে পারে, তবে তা অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী হতে হবে।
গর্ভবতী এবং স্তন্যদানকারী মায়েদের জন্য:
এক্ষেত্রেও মাত্রা সাধারণত ১০ মিলি (২ চামচ) দিনে একবার হয়। তবে, গর্ভাবস্থা এবং স্তন্যদানের সময় অতিরিক্ত পুষ্টির প্রয়োজন হওয়ায় চিকিৎসকের সাথে পরামর্শ করে সঠিক মাত্রা জেনে নেওয়া অত্যাবশ্যক।
বিকোজিন ট্যাবলেট এর উপকারিতা
বিকোজিন ট্যাবলেট হলো একটি ভিটামিন বি কমপ্লেক্স এবং জিঙ্ক (Zinc) এর সমন্বয়ে গঠিত সাপ্লিমেন্ট। এটি শরীরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ কাজ সঠিকভাবে সম্পাদনে সহায়তা করে এবং নির্দিষ্ট পুষ্টি উপাদানের ঘাটতি পূরণ করে।
বিকোজিন ট্যাবলেট খেলে যে প্রধান কাজগুলো হয়, তা নিচে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো:
১. ভিটামিন বি এবং জিঙ্কের ঘাটতি পূরণ করে
বিকোজিন ট্যাবলেটের মূল কাজ হলো শরীরে ভিটামিন বি কমপ্লেক্স (যেমন: থায়ামিন – B1, রিবোফ্লাভিন – B2, পাইরিডক্সিন – B6, নিকোটিনামাইড – B3) এবং জিঙ্ক এর অভাব পূরণ করা। যখন সুষম খাদ্যের মাধ্যমে পর্যাপ্ত পরিমাণে এই পুষ্টি উপাদানগুলো শরীর পায় না, তখন বিকোজিন এই ঘাটতি পূরণ করে।
২. শক্তি উৎপাদন ও বিপাক ক্রিয়া উন্নত করা
বিকোজিনের মধ্যে থাকা ভিটামিন বি কমপ্লেক্স, বিশেষ করে থায়ামিন (B1), রিবোফ্লাভিন (B2) এবং নিকোটিনামাইড (B3), খাদ্যকে শক্তিতে রূপান্তরে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এটি শরীরের বিপাক ক্রিয়া (metabolism) উন্নত করে, যার ফলে শরীর সতেজ থাকে এবং দৈনন্দিন কাজের জন্য প্রয়োজনীয় শক্তি পায়। এর ফলে ক্লান্তি বা অবসাদ কমে আসে।
৩. স্নায়ুতন্ত্রের সুস্থতা ও মস্তিষ্কের কার্যকারিতা বাড়ায়
ভিটামিন বি ভিটামিনসমূহ, বিশেষ করে পাইরিডক্সিন (B6), মস্তিষ্ক ও স্নায়ুর সঠিক কার্যকারিতা বজায় রাখতে অত্যন্ত জরুরি। বিকোজিন খেলে স্নায়ুতন্ত্রের স্বাস্থ্য ভালো থাকে এবং ভিটামিন বি-এর অভাবে সৃষ্ট বিভিন্ন স্নায়বিক সমস্যা যেমন: দুর্বলতা, ভারসাম্যহীনতা, দ্বিধাগ্রস্ততা, বিরক্তিভাব, স্মৃতিভ্রম এবং হাত-পায়ে জ্বালাপোড়ার মতো লক্ষণগুলো কমে আসতে পারে। এটি মানসিক স্বাস্থ্য স্থিতিশীল রাখতেও সাহায্য করে।
৪. রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে
জিঙ্ক একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ খনিজ উপাদান, যা শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে অপরিহার্য। এটি শ্বেত রক্তকণিকার উৎপাদন ও কার্যকারিতা বাড়িয়ে শরীরকে বিভিন্ন সংক্রমণ (যেমন ফ্লু, সর্দি-কাশি) থেকে রক্ষা করে। জিঙ্কের অভাবে ঘন ঘন অসুস্থ হওয়ার প্রবণতা দেখা যেতে পারে। বিকোজিন ট্যাবলেট জিঙ্কের এই প্রয়োজনীয়তা পূরণ করে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে শক্তিশালী করে তোলে।
৫. শারীরিক বৃদ্ধি ও বিকাশ করে
শিশুদের সুস্থ ও স্বাভাবিক বৃদ্ধি এবং বিকাশের জন্য জিঙ্ক অপরিহার্য। বিকোজিন শিশুদের শারীরিক বৃদ্ধি এবং বয়ঃসন্ধিকালীন সঠিক বিকাশে সহায়তা করে। প্রাপ্তবয়স্কদের ক্ষেত্রেও এটি পেশীর সঠিক গঠন ও বিকাশে সাহায্য করে। গর্ভাবস্থায় এবং স্তন্যদানকালে মায়ের জন্য জিঙ্ক ও বি-ভিটামিন খুবই দরকারি, যা গর্ভস্থ শিশু ও নবজাতকের সুস্থ বিকাশে অবদান রাখে।
৭. নখ, ত্বক, চুলের স্বাস্থ্য উন্নত করে
জিঙ্ক এবং বি ভিটামিনগুলো ত্বক, চুল ও নখের স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত উপকারী। জিঙ্কের অভাবে ত্বকের মলিনতা, নখে সাদা দাগ এবং ক্ষত দেরিতে শুকানোর মতো সমস্যা দেখা দিতে পারে। বিকোজিন এই সমস্যাগুলো কমাতে সাহায্য করে এবং ত্বক, চুল ও নখের সুস্থতা বজায় রাখতে ভূমিকা রাখে।
৮. মানসিক স্বাস্থ্য ও মেজাজ স্থিতিশীল রাখে
অনেক সময় ভিটামিন বি-এর অভাবে বিষণ্ণতা, মানসিক অবসাদ এবং ঘুমের সমস্যা দেখা যায়। বিকোজিনের উপাদানগুলো স্নায়ুতন্ত্রকে শান্ত রেখে মানসিক চাপ কমাতে এবং মেজাজ স্থিতিশীল রাখতে সহায়তা করে, যা সামগ্রিক মানসিক সুস্থতার জন্য উপকারী।
৯. রুচি বৃদ্ধি ও হজম প্রক্রিয়ায় সহায়তা করে
কিছু ক্ষেত্রে জিঙ্ক ও বি ভিটামিনের অভাবে ক্ষুধামন্দা বা খাবার হজমে সমস্যা হতে পারে। বিকোজিন ট্যাবলেট এই ধরনের সমস্যা কমাতে এবং রুচি বৃদ্ধিতে সহায়ক। এটি পরিপাক ক্রিয়াকে স্বাভাবিক রাখতেও সাহায্য করে।
আশা করছি আপনারা বিকোজিন সিরাপ খেলে কি হয় এ সম্পর্কে জানতে পেরেছেন। মূলত একই ধরনের উপকারিতা গুলো প্রদান করে থাকে।
বিকোজিন ট্যাবলেট এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া
বিকোজিন ট্যাবলেট সাধারণত সুসহনীয়। তবে, কিছু কিছু ক্ষেত্রে সামান্য পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে, যেমন:
- বমি বমি ভাব
- বমি
- ডায়রিয়া
- কোষ্ঠকাঠিন্য
- পাকস্থলীর অস্বস্তি ইত্যাদি।
সাধারণত, নির্দেশিত মাত্রায় সেবন করলে এ ধরনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া খুব বেশি দেখা যায় না। যদি কোনো গুরুতর বা অস্বস্তিকর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দেয়, তাহলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। তবে কিছু ক্ষেত্রে অতিরিক্ত পরিমাণে এই ট্যাবলেট খাওয়ার ফলে ডায়রিয়া ও পাকস্থলী জনিত সমস্যা দেখা দিতে পারে। এজন্য নিয়ম মেনে খেতে হবে।
এছাড়াও যাদের অ্যালার্জিজনিত সমস্যায় রয়েছে তাদের ক্ষেত্রে এই ট্যাবলেট খেলে অনেক সময় এলার্জির প্রতিক্রিয়া বেড়ে যেতে পারে। যেসব ব্যক্তিদের কেবল অপারেশন হয়েছে তাদের এই ট্যাবলেট খাওয়া যাবে না। তাছাড়াও গর্ভকালীন মায়েদের ক্ষেত্রে এ ওষুধ গ্রহণ করা উচিত নয়। এছাড়া আর তেমন ধরনের কোন সমস্যা বা পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করা যায়নি।
বিকোজিন ট্যাবলেট এর দাম কত
বিকোজিন ট্যাবলেট মূলত স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস পিএলসি বাজারজাত করেন যার প্রতি পিচ এর দাম ৩ টাকা। আর একটি কোটাতে মোট ৩০ টি ট্যাবলেট থাকে যার দাম ৯০ টাকা।
বিকোজিন সিরাপ এর দাম কত
বিকোজিন সিরাপ মূলত স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস পিএলসি বাজারজাত করেন। প্রতি ১০০ মিলি সিরাপের দাম হচ্ছে ৬০ টাকা। এবং প্রতি ২০০ মিলি সিরাপের দাম ১১০ টাকা।
লেখকের শেষ মতামত
সাধারণত, যারা দুর্বলতা, অপুষ্টি, ভিটামিন বি বা জিঙ্কের অভাবে ভুগছেন, তাদের জন্য বিকোজিন উপকারী। এই ঘাটতিগুলো পূরণ হলে শরীর স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসে। যদি আপনার স্বাস্থ্যকর ওজন না থাকে এবং রুচি কম থাকে, তাহলে বিকোজিন আপনার স্বাভাবিক ওজন ফিরে পেতে সাহায্য করতে পারে।
মনে রাখবেন, যেকোনো সাপ্লিমেন্ট গ্রহণের আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি। চিকিৎসক আপনার শারীরিক অবস্থা বিবেচনা করে বিকোজিন সেবনের সঠিক প্রয়োজনীয়তা এবং মাত্রা নির্ধারণ করবেন।
বিকোজিন একটি ঔষধ, তাই এটি অবশ্যই রেজিস্টার্ড চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী সেবন করা উচিত। আপনার শারীরিক অবস্থা এবং পুষ্টিগত চাহিদার ওপর নির্ভর করে চিকিৎসক ডোজ এবং সেবনের সময়কাল নির্ধারণ করবেন। নিজে নিজে ঔষধ সেবন করা বা ডোজ পরিবর্তন করা থেকে বিরত থাকুন।