আইএফআইসি ব্যাংক পিএলসি বাংলাদেশের একটি পরিচিত বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংক। তারা মানুষের স্বপ্নের বাড়ি বা ফ্ল্যাট কেনার জন্য যে লোন সুবিধা দেয়, সেটাই আইএফআইসি ব্যাংক হোম লোন নামে পরিচিত। আই এফ আই সি ব্যাংক “নিজের বাড়ির ইচ্ছে পূরণে” নামে হোম লোন প্রদান করছে যা কেবলমাত্র শহরে সীমাবদ্ধ নয় বরং গ্রামে পাকা বাড়ি,সেমি পাকা বাড়ি নির্মাণ বা ক্রয়ের জন্য লোন ইত্যাদি ক্ষেত্রে অর্থ লোন সুবিধার প্রদান করছে।
আই এফ আই সি ব্যাংকের দ্রুততম লোন প্রসেসিং সুবিধা ও কোন লুকানো চার্জ না থাকার কারণে স্বল্প সময়ের মধ্যে ব্যাংকটি ব্যাপকভাবে জনপ্রিয়তা লাভ করেছে। হোম লোন প্রদানের ক্ষেত্রে আই এফ আই সি ব্যাংক বাংলাদেশের স্বনামধন্য একটি ব্যাংক। আজকে আমরা আই এফ আই সি ব্যাংক হোম লোন সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জানবো যেমন আই এফ আই সি ব্যাংক হোম লোন পেতে হলে আপনার যেসব যোগ্যতা থাকতে হবে, কি কি লাগবে, কিভাবে আবেদন করবেন এসকল বিষয়ে জেনে নিব।
আই এফ আই সি ব্যাংক হোম লোন কি?
আইএফআইসি ব্যাংক হোম লোন হলো আইএফআইসি ব্যাংক থেকে নেওয়া এমন এক ধরনের লোন, যা দিয়ে আপনি নিজের ফ্ল্যাট কিনতে পারবেন, নতুন বাড়ি বানাতে পারবেন, অথবা আপনার পুরোনো বাড়িটা মেরামত বা বড় করতে পারবেন।
আইএফআইসি ব্যাংক বিশেষ করে তাদের ‘এক ব্যাংক’ উদ্যোগের মাধ্যমে দেশের প্রতিটি বাড়ি এবং প্রত্যন্ত অঞ্চলে ব্যাংকিং সেবা পৌঁছে দেওয়ার চেষ্টা করছে। এর ফলে, শহরের পাশাপাশি গ্রাম বা ছোট শহরের মানুষরাও যাতে সহজে হোম লোন সুবিধা পেতে পারে, সেই দিকে তাদের বিশেষ নজর থাকে।
আই এফ আই সি ব্যাংক হোম লোন যারা পাবে
আই এফ আইসি ব্যাংক থেকে যেসকল গ্রাহকরা হোম লোন নিতে পারবেন তা নিম্নে উল্লেখ করা হলঃ
- চাকরিজীবী।
- ব্যবসায়ী।
- পেশাদার কাজের সাথে যুক্ত আছেন এমন ব্যক্তি।
- বাড়িওয়ালা বা জমির মালিক।
আই এফ আই সি ব্যাংক হোম লোন পাওয়ার যোগ্যতা
আইএফআইসি ব্যাংক থেকে হোম লোন নিতে চাইলে কিছু যোগ্যতা থাকতে হয়, যাতে ব্যাংক নিশ্চিত হতে পারে যে আপনি লোনটা সময়মতো পরিশোধ করতে পারবেন। সহজ করে বললে, ওরা আপনার আর্থিক অবস্থা আর নির্ভরযোগ্যতা দেখে। তাহলে চলুন আর কথা না বাড়িয়ে আইএফআইসি ব্যাংক হোম লোন পাওয়ার জন্য আপনার কী কী যোগ্যতা লাগবে তা জেনে নেওয়া যাক।
- আপনাকে অবশ্যই বাংলাদেশের নাগরিক হতে হবে।
- আবেদনকারীর বয়স অন্তত ২৫ বছর হতে হবে এবং সর্বোচ্চ ৬৫ বছর অথবা অবসরপ্রাপ্ত (যেটি আগে হয়)।
- চাকরিজীবীর ক্ষেত্রে আপনার মাসিক আয় কমপক্ষে ৪০,০০০ টাকা হতে হবে ।
- সরকারি ক্ষেত্রে আপনার মাসিক আয় কমপক্ষে ২৫,০০০ টাকা হতে হবে ।
- ব্যবসায়ী্র ক্ষেত্রে আপনার মাসিক আয় ৫০,০০০ টাকা হতে হবে।
- আপনার যদি বাড়ি ভাড়া থেকে নিয়মিত আয় আসে, তাহলেও লোন পাওয়ার সুযোগ আছে। এক্ষেত্রে মাসিক আয় ৪০,০০০ টাকা বা তার বেশি হলে ভালো।
- চাকরিজীবীর অভিজ্ঞতা বর্তমান কর্মস্থলে কমপক্ষে ৬ মাস এবং মোট কর্মজীবনের অভিজ্ঞতা ১ বছর হতে হবে।
- ব্যবসায়ীর ক্ষেত্রে কমপক্ষে ১-২ বছরের অভিজ্ঞতা থাকা উচিত।
- আপনার ভালো ক্রেডিট হিস্টরি থাকতে হবে
- আপনি যে বাড়ি বা ফ্ল্যাট কিনছেন, সেটা অবশ্যই আইএফআইসি ব্যাংকের অনুমোদিত এলাকার মধ্যে হতে হবে।
- সম্পত্তিটি আইনিভাবে ঝামেলামুক্ত হতে হবে। অর্থাৎ, সেটার ওপর কোনো মামলা বা অন্য কোনো ব্যাংকের বন্ধক থাকা চলবে না।
আই এফ আই সি এই যোগ্যতাগুলো দেখে নিশ্চিত হয় যে, তারা আপনাকে লোন দিয়ে ঝুঁকি নিচ্ছে না এবং আপনিও সহজে লোনটা পরিশোধ করতে পারবেন। সবচেয়ে ভালো হয়, -এর কাছের কোনো শাখায় সরাসরি গিয়ে কথা বলা। ওরা আপনার পরিস্থিতি অনুযায়ী সব সঠিক তথ্য দিতে পারবে।
আই এফ আই সি ব্যাংক হোম লোনের জন্য কি কি লাগবে
আই এফ আই সি ব্যাংক গ্রাহকের স্বপ্নের বাড়ি বাস্তবায়নে রয়েছে গ্রাহকের পাশে রয়েছে সর্বদা। আর এই স্বপ্ন পূরণের জন্য বেশ কিছু প্রয়োজনীয় কাগজপত্র অবশ্যই গ্রাহককে আই এফ আই সি ব্যাংকে দায়িত্বরত কর্মকর্তার নিকট প্রদান করতে হবে। এ সকল প্রয়োজনীয় কাগজপত্রের মধ্যে রয়েছে:
- আবেদনকারীকে অবশ্যই দুই কপি পাসপোর্ট সাইজের রঙিন ছবি হতে হবে।
- আবেদনকারীর জাতীয় পরিচয়পত্রের সত্যায়িত ফটোকপি প্রদান করতে হবে।
- জামিনদারের জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি এবং পাসপোর্ট সাইজের ১ কপি সদ্য তোলার রঙিন ছবি প্রদান করতে হবে।
- আপনি যে ঠিকানায় থাকেন, তার প্রমাণ হিসেবে বাসার বিদ্যুৎ বিল, গ্যাস বিল বা পানির বিলের একটা কপি শেষ ১-৩ মাসের দিতে পারেন।
- সর্বশেষ প্রদানকৃত ট্যাক্স সার্টিফিকেট বা ই-টিআইএন।
- আবেদনকারীর ব্যাংক অ্যাকাউন্টের বিগত ১২ মাসের ব্যাংক স্টেটমেন্ট প্রদান করতে হবে।
- আবেদনকারী যে বাড়ি বা ফ্ল্যাটটা কিনছেন, তার মালিকানার সব দলিলপত্রের ফটোকপি যেমন: মূল দলিল, বায়া দলিল, খতিয়ান এবং নামজারির কাগজ এই কাগজগুলো অবশ্যই নির্ভুল আর ঝামেলামুক্ত হতে হবে।
- চাকরিজীবীদের জন্য অফিস থেকে একটা বেতন সনদপত্র বা শেষ ৩-৬ মাসের বেতনের স্লিপ লাগবে। এবং ব্যবসায়ীদের ক্ষেত্রে ট্রেড লাইসেন্স প্রদান করতে হবে।
- আবেদনকারী যদি বাড়ির মালিক হয়ে থাকেন সেক্ষেত্রে বাড়ি ভাড়ার চুক্তিপত্রের কপি এবং যে অ্যাকাউন্টে ভাড়া আসে, তার ব্যাংক স্টেটমেন্ট।
- আই এফ আই সি থেকে দেওয়া লোনের আবেদন ফরমটা খুব সাবধানে পূরণ করে আপনার স্বাক্ষর করতে হবে।
- আপনার অতীত লোনের রেকর্ড যাচাই করার জন্য একটা সম্মতিপত্র দিতে হবে।
কাগজপত্র জমা দেওয়ার পর আই এফ আই সি আপনার দেওয়া তথ্যগুলো ভালোভাবে যাচাই করে। ওরা আপনার কর্মস্থল বা ব্যবসা প্রতিষ্ঠানেও খোঁজ নিতে পারে।
আই এফ আই সি-এর যেকোনো শাখায় সরাসরি গিয়ে কথা বলা সবচেয়ে ভালো। ওদের কর্মীরা আপনাকে আপনার প্রয়োজন অনুযায়ী ঠিক কোন কোন কাগজ লাগবে, তা পরিষ্কারভাবে জানিয়ে দিতে পারবে। কারণ মাঝেমধ্যে নিয়মে ছোটখাটো পরিবর্তন আসে।
আই এফ আই সি ব্যাংক হোম লোন আবেদন প্রক্রিয়া
আই এফ আই সি হোম লোনের জন্য যেভাবে আবেদন করবেন তা নিচে ধাপে ধাপে উল্লেখ করা হলঃ
নিকটস্থ শাখায় যোগাযোগ করা: আপনার নিকটস্থ আই এফ আই সি ফাইন্যান্সের শাখায় সরাসরি চলে যান। সেখানে একজন কর্মকর্তা আপনাকে সাহায্য করবেন। অথবা, যদি আই এফ আই সি-এর ওয়েবসাইটে অনলাইনে আবেদন করার সুযোগ থাকে, তাহলে সেখান থেকেও প্রাথমিক আবেদন করতে পারেন।
আবেদনপত্র পূরণ করা: আবেদন ফরম পূরণ করুন: ওরা আপনাকে একটা লোনের ফরম দেবে। সেই ফরমটা মনোযোগ দিয়ে পূরণ করুন। আপনার ব্যক্তিগত তথ্য, যোগাযোগের ঠিকানা, আয়ের উৎস, আর আপনি যে লোনটা নিচ্ছেন সেটার উদ্দেশ্য – সবকিছু পরিষ্কারভাবে লিখুন। কোনো কিছু বুঝতে সমস্যা হলে, সেখানকার কর্মকর্তার সাহায্য নিন।
কাগজপত্র জমা দেওয়া: প্রাথমিক কাগজপত্র জমা দিন: ফরম পূরণের পর, আপনার পরিচয়পত্র, ছবি, ঠিকানার প্রমাণ, আর আয়ের প্রাথমিক কাগজপত্রগুলো জমা দিন।
কাগজপত্র যাচাই আর সম্পত্তির মূল্যায়ন: আপনি কাগজপত্র জমা দেওয়ার পর আই এফ আই সি সেগুলো ভালোভাবে যাচাই করবে। আপনার আয়ের উৎস ঠিক আছে কিনা, আপনি আগে কোনো লোন নিয়ে থাকলে সেটা সময়মতো পরিশোধ করেছেন কিনা – এসব ওরা দেখবে। আপনি যে বাড়ি বা ফ্ল্যাটটা কিনছেন, সেটার কাগজপত্র (যেমন দলিল, নকশা ইত্যাদি) আই এফ আই সি-এর আইনজীবীরা ভালোভাবে পরীক্ষা করে দেখবেন, যাতে পরে কোনো আইনি ঝামেলা না হয়।
লোন অনুমোদন ও বিতরণ: কাগজপত্র যাচাই এবং মূল্যায়ন সব ঠিক থাকলে, আই এফ আই সি আপনার লোনের আবেদন অনুমোদন করে দেবে। এটা আপনার জন্য সবচেয়ে খুশির খবর! লোন অনুমোদনের পর আপনাকে আই এফ আই সি-এর সাথে একটা লোনের চুক্তিপত্রে স্বাক্ষর করতে হবে। এই চুক্তিতে লোনের পরিমাণ, সুদের হার, পরিশোধের মেয়াদ, মাসিক কিস্তি এবং অন্যান্য শর্তাবলী বিস্তারিত লেখা থাকবে। চুক্তি স্বাক্ষর হয়ে গেলে, আই এফ আই সির পক্ষ থেকে আপনার লোনের টাকা সরাসরি বিক্রেতার অ্যাকাউন্টে অথবা আপনার নিজের অ্যাকাউন্টে জমা দিয়ে দেওয়া হবে। অনেক সময় চেক বা পে-অর্ডারের মাধ্যমেও বিতরণ করা হয়।
লোন পরিশোধ: লোন পাওয়ার পর, চুক্তি অনুযায়ী আপনাকে প্রতি মাসে নির্ধারিত তারিখে মাসিক কিস্তি পরিশোধ করতে হবে। আপনি যদি সময়মতো কিস্তি পরিশোধ করেন, তাহলে আপনার ক্রেডিট স্কোর ভালো থাকবে এবং ভবিষ্যতে অন্য কোনো লোন পেতে সুবিধা হবে। আবেদন করার আগে আই এফ আই সি এর কর্মকর্তাদের কাছে লোনের সব শর্ত, সুদের হার, এবং কোনো অতিরিক্ত চার্জ আছে কিনা এসব বিষয় পরিষ্কারভাবে জেনে নিন। কোনো লুকানো খরচ আছে কিনা, তা জিজ্ঞেস করতে দ্বিধা করবেন না। আবেদন ফরমে এবং কাগজপত্র জমা দেওয়ার সময় সব তথ্য সঠিক এবং সত্য দিন। মিথ্যা তথ্য দিলে আপনার আবেদন বাতিল হতে পারে বা পরবর্তীতে সমস্যা হতে পারে।
আবেদন করার পর আই এফ আই সি এর সাথে নিয়মিত যোগাযোগ রাখুন। যদি কোনো বাড়তি কাগজ বা তথ্যের প্রয়োজন হয়, তাহলে দ্রুত তা সরবরাহ করুন। এই প্রক্রিয়াগুলো অনুসরণ করলে আই এফ আই সিথেকে হোম লোন পাওয়া আপনার জন্য বেশ সহজ হবে।
আই এফ আই সি ব্যাংক হোম লোনের সুবিধা
আইএফআইসি ব্যাংক তাদের গ্রাহকদের জন্য যে হোম লোন বা গৃহলোন দেয়, সেটার কিছু বিশেষ সুবিধা আর বৈশিষ্ট্য আছে। সহজ কথায়, ওরা এমন কিছু সুবিধা দিতে চায়, যাতে আপনার নিজের একটা বাড়ি বা ফ্ল্যাটের স্বপ্নটা পূরণ করা আরও সহজ হয়।
আইএফআইসি ব্যাংক হোম লোনের প্রধান সুবিধাগুলো নিচে উল্লেখ করা হলঃ
- দ্রুত লোন প্রক্রিয়াকরণ ও বিতরণ
- সর্বোচ্চ লোনের পরিমাণ ও লম্বা মেয়াদ
- হিডেন চার্জ বা অতিরিক্ত ফি নেই
- প্রতিযোগিতামূলক সুদের হার
- সহজ শর্তাবলী ও কম কাগজপত্র লাগে
লেখকের শেষ মতামত
আই এফ আই সি ব্যাংক হোম লোন অর্থাৎ আমার বাড়ি লোন এর জন্য সর্বাধিক পরিচিত। আই এফ আই সি ব্যাংক থেকে হোম লোন পেতে হলে আপনার নিকটস্থ ব্যাংকের শাখায় গিয়ে আলোচনা করুন ও প্রয়োজনীয় তথ্য প্রদান করে হোম লোন গ্রহন করুন।
আইএফআইসি ব্যাংক হোম লোন আপনার নিজের বাড়ি বা ফ্ল্যাটের স্বপ্ন পূরণের জন্য একটি সহজ, দ্রুত এবং ঝামেলামুক্ত সমাধান দিতে চায়।