বর্তমান সময়ে পরিচিত একটি রোগের নাম হলো এপেন্ডিসাইটিস। এ রোগ বর্তমানে অনেকের মধ্যে হতে দেখা যাচ্ছে। তাই এ রোগ সম্পর্কে আমাদের সচেতন থাকা জরুরি। আমাদের আজকের আর্টিকেলের আলোচ্য বিষয় হচ্ছে এপেন্ডিসাইটিস এর লক্ষণ কি-এপেন্ডিসাইটিস হলে করণীয় কি।
আমাদের আজকের আর্টিকেলটি সম্পূর্ন পড়ুন আর জেনে নিন এপেন্ডিসাইটিস কেন হয়, এপেন্ডিসাইটিস এর লক্ষণ কি, এপেন্ডিসাইটিস কোন পাশে হয়, এপেন্ডিসাইটিস হলে করণীয়, এপেন্ডিসাইটিস অপারেশন খরচ সম্পর্কে বিস্তারিত।
এপেন্ডিসাইটিস কেন হয়
এপেন্ডিকস মানবশরীরের একটি অঙ্গ। এটি দেখতে কিছুটা কৃমির মতো। এটি থাকে আমাদের শরীরের খাদ্যনালীর বর্ধিত অংশে। এ অঙ্গটি মানবশরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সহযোগিতা করে থাকে। আর যখন এ অঙ্গটিতে ইনফেকশন হয় তখন ডাক্তারি ভাষায় এটাকে এপেন্ডিসাইটিস রোগ বলা হয়। এপেন্ডিসাইটিস কেন হয় চলুন জেনে নেওয়া যাক।
কেন হয় এপেন্ডিসাইটিস এ সম্পর্কে নিশ্চিত কোনো তথ্য পাওয়া যায় নি। কোনো কারণে যদি এপেন্ডিকস এর প্রবেশ মুখটি বন্ধ হয়ে যায় তাহলে এপেন্ডিসাইটিস হয়ে থাকে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকেরা। চিকিৎসকেরা ধারনা করেছেন এপেন্ডিসাইটিসের সবথেকে কমন কারণ হলো মল। শক্ত মল দ্বারা এপিন্ডিকস এর মুখটি বন্ধ হয়ে গেলে, ভেতরে এর নিঃসরনগুলো জমা হয়ে যায় এবং শরীরে পুষ্টি ও রক্তের ঘাটতি হয়। এর ফলে সেখানে ব্যাকটেরিয়ার সংক্রামন ছড়িয়ে পড়ে। যার কারনে এপিন্ডকস হয়ে থাকে। তবে শুধু মল দ্বারা এপিন্ডকস এর পথ বন্ধ হয়ে যায় না। এছারাও খাবার, ময়লা কিংবা শক্ত কোনো কিছু দ্বারা মুখটি বন্ধ হয়ে থাকে।
এপিন্ডকস সাধারন কোনো সমস্যা নয়। এ সমস্যা প্রাথমিক পর্যায়ে ধরা না পড়লে রোগির প্রাণনাশের আশঙ্কার সৃষ্টি হয়। এপিন্ডকস অঙ্গটিতে যখন ব্যাকটেরিয়া প্রবেশ করে তখন এক পর্যায়ে ব্যাকটেরিয়াগুলো ক্রমস বৃদ্ধি পেতে থাকে। এর ফলে এপেন্ডিকস ফেটে গিয়ে ব্যাকটেরিয়াগুলো মানবদেহের পুরো শরীরে ছড়িয়ে যায়। যার কারনে রোগির মৃত্যও হয়ে থাকে।
এপেন্ডিসাইটিস এর লক্ষণ কি
এপেন্ডিকস ছোট কোনো সমস্যা নয়। তাই এ সমস্যা মোটেও হেলাফেলা করা যাবে না। এ রোগের সঠিক সময়ে সঠিক চিকিৎসা পেতে জেনে নিতে হবে কিভাবে এ রোগ নিশ্চিত করা যায়। তাই চলুন জেনে নিন এপেন্ডিসাইটিস এর লক্ষণগুলো সম্পর্কে।
- এপেন্ডিসাইটিস রোগটির সবথেকে সাধারন লক্ষণ হলো পেটে ব্যাথা। এ ব্যাথা পেটের মাঝ থেকে শুরু হয়, নাভির গোড়া থেকে এবং পরবর্তীতে তা তলপেটের ডানদিকে স্থানান্তরিত হয়।
- হজমে সমস্যা হয়।
- ক্ষুদামান্দ্য
- বমি বমি ভাব বা বমি হওয়া।
- পেট ফুলে যাওয়া।
- ডায়রিয়া
- কোষ্ঠকাঠিন্য
- জ্বর
- দুর্বলতা
উপরিক্ত লক্ষণগুলো হলো এপেন্ডিসাইটিসের লক্ষণ। তবে এ লক্ষণগুলো দেখা মাত্রই নিশ্চিত হওয়া যাবে না যে এপেন্ডিকস হয়েছে। কারণ এসব লক্ষণগুলো অন্য কোনো সাধারন সমস্যার কারনেও অনেকের হয়ে থাকে। তবে এ লক্ষণগুলো যদি স্থায়ী হয় তাহলে দেরি না করে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।
এপেন্ডিসাইটিস কোন পাশে হয়
বর্তমান সময়ে অতি পরিচিত একটি সমস্যা হলে এপেন্ডিসাইটিস। এ সমস্যা থেকে আমাদের প্রত্যেকের সাবধানতা অবলম্বন করা জরুরি। কারণ একটু সতর্ক হলেই এ রোগ থেকে তাড়াতাড়ি মুক্তি পাওয়া সম্ভব। এজন্য অনেকেই প্রশ্ন করে থাকেন এপেন্ডিসাইটিস কোন পাশে হয়। জেনে নিন এপেন্ডিসাইটিস কোন পাশে হয়।
এপেন্ডিকস অঙ্গটি একটি পাতলা থলির মতো দেখতে এবং এটির অবস্থান মানবশরীরে পেটের নীচের ডানদিকে। এপেন্ডিকস এর প্রধান লক্ষণ হলো পেটের নিচের ডানদিকে তীব্র ব্যাথা। এপেন্ডিকস পেটের নিচের ডানদিকে থাকে বলে এখানেই তীব্র ব্যাথা হয়ে থাকে। আর এপেন্ডিকস পেটের নিচের ডানদিকেই হয়ে থাকে। কারন এপেন্ডিকস অঙ্গটি পেটের নিচের ডানদিকে থাকে।
এপেন্ডিসাইটিস হলে করণীয়
আমাদের প্রত্যেকের শরীরের অভ্যন্তরে পেটের নিচের ডানদিকে পাকস্থলীর পাশে তিন ইঞ্চি লম্বা একটি অঙ্গ রয়েছে আর এটি এপেন্ডিকস নামে পরিচিত। এ অঙ্গটির সম্পর্কে বিস্তারিত কোনো তথ্য চিকিৎসকেরা দিতে পারেনি। তবে এ অঙ্গটি যদি জীবানু দ্বারা সংক্রামিত হয় তাহলে এপেন্ডিসাইটিস রোগটি মানবশরীরে হয়ে থাকে। এ রোগের সঠিক ব্যবস্থা না নিলে রোগি মৃত্যর দিকে এগিয়ে যায় এমনকি মৃত্যুও হয়ে থাকে। তাই এপেন্ডিসাইটিস হলে কি করতে হবে আমাদের প্রত্যেকের সে বিষয়ে জানা জরুরি। তো চলুন জেনে নেওয়া যাক এপেন্ডিসাইটিস হলে করণীয় কি।
এপেন্ডিসাইটিস হলে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব এটি কেটে ফেলা জরুরি। প্রাথমিক পর্যায়ে এটি কেটে ফেললে রোগি মারাত্মক ঝুঁকির হাত থেকে রক্ষা পায়। কারণ এটি দেরিতে কাটার সিধান্ত নিলে অনেক সময় দেখা যায়, এপেন্ডিকস অঙ্গটি ফুলতে ফুলতে ফেটে যায় এবং রোগির মৃত্যু পর্যন্ত হয়ে থাকে। তাই ঝুঁকি না নিয়ে এটি কেটে ফেলে দেওয়ায় ভালো উপায়।
এপেন্ডিক্স এর অপারেশন দুই পদ্ধতিতে করা হয়-
- ল্যাপারোস্কোপি বা কি হোল সার্জারি
- ওপেন সার্জারি।
ল্যাপারোস্কোপি পদ্ধতি: বর্তমান সময়ে এপেন্ডিসাইটিকস অপারেশনের সবচেয়ে ঝুঁকিমুক্ত পদ্ধতি হলো ল্যাপারোস্কোপি। ল্যাপারোস্কোপিক পদ্ধতিতে অপারেশনে পুরো পেট না কেটে, পেটে ছোট ছিদ্র করে করানো হয় এবং এটি একটি ব্যাথামুক্ত পদ্ধতি। এ পদ্ধতিতে অপারেশনে রক্তপাত কম হয় এবং রোগি তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে উঠে। এছারাও এ পদ্ধতিতে অপারেশনের খরচ কম।
ওপেন সার্জাারি: কোনো কোনো এপেন্ডিসাইটিসের ক্ষেত্রে ল্যাপারোস্কোপি পদ্ধতিতে অপারেশন করা যায় না। তখন ওপেন সার্জারি পদ্ধতিতে এপেন্ডিসাইটিস এর অপারেশন করা হয়। এ অপারেশন পদ্ধতিতে পুরো পেট কেটে অপারেশন করা হয়ে থাকে। ফলে এ পদ্ধতিতে অপারেশন করা হলে রোগির সুস্থ হতে বেশ কিছু দিন সময় লেগে যায়।
অপারেশন শেষ হওয়ার পর করণীয়: অপারেশন পদ্ধতি শেষ হওয়ার পর অনেকসময় কাটা স্থানে ইনফেকশন দেখা দিতে পারে। সেক্ষেত্রে রোগিকে ভালোভাবে লক্ষ্য রাখতে হবে, রোগির অপারেশন স্থানে ব্যাথা, বমি হওয়া, জ¦র আসা, কাটা স্থানে পানি বা পুঁজ জাতীয় কোনো তরল কিছু বের হচ্ছে কিনা। এসব লক্ষণ যদি দেখা যায় তাহলে যত দ্রুত সম্ভব চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। এছারাও হাসপাতাল থেকে বাড়ি এনে রোগির সঠিকভাবে যতœ নিতে হবে এবং পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিতে হবে। খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন আনতে হবে। বেশি বেশি আঁশযুক্ত খাবার যেমন- শাকসবজি, ফলমূল খেতে হবে এবং ক্ষতিকর খাবারগুলো যেমন-অতিরিক্ত তেলমসলা যুক্ত খাবার, অ্যালকোহল, বাইরের খাবার এড়িয়ে চলতে হবে। এক্ষেত্রে রোগি তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে উঠবে।
এপেন্ডিসাইটিস অপারেশন খরচ
এপেন্ডিসাইটিস রোগের চিকিৎসা অপারেশন পদ্ধতির মাধ্যমে করানো হয়ে থাকে। আমাদের মধ্যে কারও এপেন্ডিকস ধরা পড়লেই প্রথমে একটি প্রশ্ন মাথায় আসে, সেটি হলো এপেন্ডিসাইটিস অপারেশন খরচ কত। তো চলুন তাহলে জেনে নিন এপেন্ডিসাইটিস অপারেশন খরচ কত।
এপেন্ডিসাইটিস অপারেশন খরচ কত হবে তা কয়েকটি কারনের উপর নির্ভর করবে। যেমন-
- হাসপাতালের ধরন
- অস্ত্রোপচারের ধরন
- অ্যানেস্থেসিয়া চার্জ
- সার্জনের ফি
- ডায়াগনস্টিক পরীক্ষা
ঢাকায় অপারেশন যদি আপনি করাতে চান তাহলে সেক্ষেত্রে খরচ হতে পারে আনুমানিক ১৫,০০০ থেকে শুরু করে ৫০,০০০ পর্যন্ত কিংবা তারও বেশি। এটি একটি আনুমানিক খরচ। আপনার অবস্থান, আপনি কোন হাসপাতালে, কোন চিকিৎসকের কাছে অপারেশন করাতে চান তার উপর নির্ভর করে খরচ কম বেশি হয়ে থাকে। তাই খরচ সম্পর্কে সঠিক ধারনা পেতে যে ক্লিনিক বা হাসপাতালে অপারেশন করবেন সেখানে যোগাযোগ করুন।
এছারাও বাংলাদেশের বাইরে অনান্য দেশগুলোতে যেমন-ভারত। আন্তর্জাতিক রোগির ক্ষেত্রে ভারতে এপেন্ডিসাইটিস খরচ হয় USD 1350 থেকে USD 1650। আরও বিভিন্ন দেশ থাইল্যান্ডে এপেন্ডিসাইটিস এর অপারেশন আধুনিক প্রযুক্তি দ্বারা করানো হয়ে থাকে। সেক্ষেত্রে যদি আপনি সে দেশগুলোতে অপারেশন করাতে চান তাহলে খরচ ভিন্ন হবে। সুতরাং এপেন্ডিকস এর অপারেশন আপনি কোন দেশে এবং কোন ক্লিনিকে করাবেন সেখানে যোগাযোগ করলে সঠিক তথ্য পেয়ে যাবেন।
পরিশেষে বলতে চাই, এপেন্ডিকস মাবশরীরের এই অঙ্গটি শরীরে তেমন কোনো গুরুত্ব বহন করে না। তবে এ অঙ্গটিতে বিভিন্ন জীবানুর সংস্পর্শে যখন এপেন্ডিসাইটিস রোগটি হয় তখন রোগির মৃত্যু পর্যন্ত হয়ে থাকে। গবেষনা থেকে প্রমানিত বিশ্বের ৫ শতাংশ মানুষ এ রোগটিতে আক্রান্ত হয়ে মারা যাচ্ছে। তাই এপেন্ডিসাইটিস থেকে সচেতন হন এবং ঝুঁকিমুক্ত থাকুন।