আমরা মানুষ, এবংমানুষ কর্মমুখী জীব,দৈনন্দিন জীবন পরিচালনা করার জন্য আমাদের নানা কাজ করতে হয়। সেই কাজগুলো করার সময় আমরা নানাভাবে দুর্ঘটনার শিকার হয়। তার মধ্যে একটি সাধারণ বিষয় হচ্ছে মাথায় আঘাত লাগা। অনেক সময় আমাদের মাথায় আঘাত লেগে ফুলে যায়। সেটা বড় ছোট বৃদ্ধ সবার ক্ষেত্রেই হয়ে থাকে।কিছু ক্ষেত্রে দেখা যায় মাথায় আঘাত লেগে মাথা অনেকটা ফুলে গিয়ে মারাত্মক অবস্থা সৃষ্টি হয়।
সাধারনত মাথাই লাগার সময় আমরা অনেক ভয় পেয়ে যাই অর্থাৎ আতঙ্কে পড়ে যায়।যেটা করা একদমই ঠিক নয়,এই সময়গুলোতে যতটা সম্ভব শান্ত থাকা উচিত এবং ঠান্ডা মাথায় প্রতিটা পদক্ষেপ গ্রহণ করা উচিত।মাথায় আঘাত লেগে ফুলে গেলে কিছু প্রাথমিক চিকিৎসা আছে এখানে সে সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হল-
মাথার আঘাত জনিত লক্ষণ
সাধারণত মাথাই আঘাত লাগলে কিছু লক্ষণ দেখা দেয়।লক্ষন গুলো নির্ভর করে পুরোটাই আঘাতের উপরে। অল্প আঘাতের লক্ষণগুলো এক রকম এবং গুরুতর আঘাতের লক্ষণগুলো আরেকরকম। মাথায় অল্প আঘাত লেগে ফুলে গেলে যদি ক্ষতির পরিমাণ অল্প হয় তাহলে যে লক্ষণগুলো দেখা দিবে সেগুলো হল-
- মাথা ব্যথা করা।
- মাথা ঘোরাবে বা মাথার ভিতরে চক্কর দেওয়া।
- অনেক সময় বমি বমি ভাব হবে, বমিও হয়ে থা।
- ক্লান্ত বোধ হওয়া
- কানে বিভিন্ন ধরনের গুঞ্জন শোনা যেতে পারা।
এছাড়াও মাথায় গুরুতর আঘাতের ক্ষেত্রে যে লক্ষণ গুলো দেখা দিতে পারে সে গুলো হলো-
- রোগী একটু পর পর জ্ঞান হারাবে।
- রোগী দীর্ঘ সময় অজ্ঞান থাকবে।
- একটু পর পর বমি করতে বমি করতে থাকা।
- দেহের এক পাশ অবশ হয়ে যাওয়া।
- আচরণে অস্বাভাবিক পরিবর্তন ঘটা।
মাথায় আঘাত লেগে ফুলে গেলে প্রাথমিক চিকিৎসা কোনটি
মাথায় আঘাত লেগে ফুলে গেলে ডাক্তারের কাছে যাওয়ার পূর্বে কিছু প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া প্রয়োজন যেগুলো নিলে ক্ষতস্থান একটু হলেও ভালো থাকবে। পরবর্তীতে রোগীকে ডাক্তারের কাছে গিয়ে পরামর্শ নিতে হবে তার আগে দেখে নেই মাথায় আঘাত লেগে ফুলে গেলে প্রাথমিক চিকিৎসা গুলো-
প্রথমত বরফ কিংবা ঠান্ডা পানি দিয়ে ক্ষতস্থানে অর্থাৎ ফুলে যাওয়া স্থানে 15 থেকে 20 মিনিট সেক দেওয়া। এবং তা আলতো করে দেওয়া ফুলে যাওয়া স্থানে জোরে করে চাপ দেওয়া যাবে না এবং অবশ্যই সরাসরি বরফ ত্বকের সাথে লাগানো যাবে না বরফকে কোন কাপড় বা আইস ব্যাগ এর মাধ্যমে মুড়িয়ে দিয়ে তা দি ফুলে যাওয়া স্থানে সেক দেওয়া। সেক দেওয়ার সময় অবশ্যই মনে রাখতে হবে ক্ষতস্থান জোরে চেপে দিলে রোগীর অবস্থা আরো খারাপ হতে পারে। তাই কোনভাবেই ক্ষতস্থানে কোন ধরনের অহেতুক চাপ প্রদান করা যাবে না।
ক্ষতস্থান থেকে রক্তক্ষরণ হলে তা পরিষ্কার কাপড় দিয়ে চেপে ধরে রাখতে হবে। এবং রোগীকে যথেষ্ট পরিমাণে বিশ্রাম নিতে দেওয়া।পর্যাপ্ত পরিমাণ বিশ্রাম নিলে রোগী অনেকটা সুস্থ বোধ করবে। এরপর রোগীকে চিকিৎসকের কাছে নিয়ে গিয়ে পরামর্শ গ্রহণ করা।
মাথায় আঘাত পেয়ে ফুলে গেলে করণীয়
মাথায় আঘাত পেয়ে ফুলে গেলে আমাদের কিছু করণীয় থাকে যেগুলো করলে আমরা তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে উঠতে পারি। সর্বপ্রথম আমরা যা করতে পারি তা হল রোগীকে বিশ্রাম নিতে দিব অর্থাৎ বিছানায় শুয়ে দিব মাথার দিকটা উঁচু করে যাতে করে রক্ত চলাচল আবহমান থাকে।
ফুলে যাওয়া স্থানে বরফ দিয়ে সেক দিব। কিন্তু খেয়াল রাখতে হবে যাতে বরফ সরাসরি মাথার ত্বকে না ছোঁয়ায় বরফকে কোন পরিষ্কার কাপড় দিয়ে মুড়িয়ে পনেরো থেকে বিশ মিনিটের জন্য সেক দিতে থাকব।এবং অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে ফুলে যাওয়ার স্থানে বেশি চাপ দেওয়া যাবে না। বেশি চাপ দিলে ক্ষতির পরিমাণ আরো বাড়তে পারে।
এই কাজগুলো করার পরেও যদি ব্যথা না কমে কিংবা সুস্থতা অনুভব না হয় তাহলে দ্রুত চিকিৎসকের কাছে যাব এবং সঠিক পরামর্শ গ্রহণ করব।
মাথায় আঘাত লাগলে বমি হয় কেন
আমরা মাথায় কোন ভাবে আঘাত পেলে অনেক সময় বমি বমি ভাব হয় অথবা বমি হয়ে যায়। অস্বস্তি অনুভব হয়। এটার কারণ হলো আঘাত লাগার কারণে মস্তিষ্কে খারাপ প্রভাব পড়া।এটা সাধারণত হয়ে থাকে মস্তিষ্কের কম্পন এর কারণে অর্থাৎ মস্তিষ্ক আঘাত লাগার কারণে নড়ে উঠলে বমি বমি ভাব হয়।
এছাড়াও কিছু কারণ থাকতে পারে যেমন মাথায় আঘাত লাগার ফলে মস্তিষ্কের বমি নিয়ন্ত্রণকারী অঙ্গের উপর খারাপ প্রভাব পড়ে বার বার উত্তেজিত হয়ে যাওয়া যার ফলে মাথা আঘাত লাগলে বমি হয়। অথবা দেখা যায় মাথায় আঘাত লাগার কারণে আমাদের দেহের প্রত্যেকটি অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের একে অপরের সাথে সমতার ব্যাঘাত ঘটে যার ফলে মস্তিষ্ক সঠিকভাবে কাজ করতে পারেনা ফলে ঘন ঘন বমি হয় কিংবা বমি বমি ভাব হয়।
মাথার পিছনে আঘাত লাগলে কি হয়
মাথার পিছনে আঘাত লাগলে মানুষ গুরুতরভাবে আহত হতে পারে কেননা আমাদের মাথার পিছনে আঘাত লাগলে চোখের উপর খারাপ প্রভাব পড়তে পারে কেননা মস্তিষ্কের পেছনের অংশে দৃষ্টিশক্তি নিয়ন্ত্রণকারী অঙ্গ থাকে মাথার পেছনে আঘাত লেগে এই অঙ্গের বেশি ক্ষতি হয়ে গেলে মানুষ অন্ধ হয়ে যেতে পারে।
এছাড়াও ঘন ঘন বমি হতে পারে। প্রচন্ড রকমের মাথাব্যথা শুরু হতে পারে এবং মাথা ঘোরাতে পারে। চোখ আমাদের দেহের একটি সংবেদনশীল অঙ্গ এবং অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালনকারী অঙ্গ বলা যায়। চোখের কোন ক্ষতি হয়ে গেলে আমাদের সারা জীবন অন্ধ হয়ে কাটাতে হবে তাই আমাদের সবাইকে সাবধানে চলাফেরা করতে হবে।
মাথায় আঘাত লাগলে কি কি সমস্যা হয়
মাথায় আঘাত লাগলে একেক সময় একেক রকম সমস্যা হতে পারে তা পুরোটা নির্ভর করে আঘাত কত জোরে লেগেছে বা ক্ষতের পরিমাণ কতটা তার উপরে। সাধারণত মাথায় অল্প পরিমানে ব্যথা লাগলে বা আঘাত লাগলে সচরাচর হালকা মাথা ব্যথা করে এবং বমি বমি ভাব হয় অনেক সময় ক্লান্তি অনুভব হয় এবং ঘুম পায়।
আঘাতের পরিমাণ মাঝারি হলে জোরালো মাথা ব্যথা হতে পারে এবং টানা বমি হতে পারে অনেক সময় কথা বলাতে অস্পষ্ট টা দেখা দিতে পারে এবং ঘাড় ব্যথা করতে পারে।
মাথায় আঘাত অনেক জোরে পেলে অর্থাৎ আঘাত জোরালো হলে সমস্যাগুলো অনেক বেশি এবং কঠিন হতে পারে। জোরালো আঘাতের ফলে রোগী বারবার জ্ঞান হারাতে পারে। বরাবর বমি হতে থাকবে। শরীরের সমতা হারিয়ে যাবে অঙ্গ প্রত্যঙ্গ ঠিকভাবে কাজ করবে না। আঘাত জোরালো হলে অনেক সময় স্মৃতিশক্তি হারিয়েও যেতে পারে।
বাচ্চাদের মাথায় আঘাত লাগলে করণীয়
বড়দের মাথায় আঘাত লাগলে আমরা বলতে পারি আমাদের কোথায় আঘাত লেগেছে, এবং তার সঠিক চিকিৎসা নিতে পারি। কিন্তু ছোট বাচ্চাদের মাথায় আঘাত লাগলে তারা বলতে পারেনা কোথায় লেগেছে এছাড়াও তাদের মাথা বড়দের চাইতে অনেক সংবেদনশীল এবং নরম। তাই শিশুদের মাথায় আঘাত লাগার ক্ষেত্রে আমাদের সব সময় সচেতন থাকতে হবে। বাচ্চাদের মাথায় আঘাত লেগে গেলে কিছু করণীয় আছে সেগুলো হল-
প্রথমত বাচ্চাকে শান্ত করতে হবে, যদি কান্না করে তবে চুপাতে হবে। যদি আঘাত লেগে ফুলে যায় ফোলা স্থানে বরফ দিয়ে সেক দিতে হবে। অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে বরফ কোন পরিষ্কার কাপড়ে মুড়িয়ে সেক দিতে হবে।
বাচ্চার আচার: আচরণে অস্বাভাবিক কিছু দেখা দিলে দ্রুত ডাক্তারের কাছে নিয়ে যেতে হবে।
মাথায় আঘাত লাগার পরেও বাচ্চার আচরণ যদি স্বাভাবিক থাকে তাহলে ২৪ ঘন্টা পর্যবেক্ষণ করে দেখতে হবে। বাচ্চার খাওয়া-দাওয়া খেলা ধুলা কিংবা ঘুমে অস্বাভাবিক পরিবর্তন হলে পরবর্তীতে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যেতে হবে।
লেখকের শেষ মতামত
আশা করি এই পুরো পোষ্টটিতে আমরা সম্পূর্ণরূপে বুঝতে পেরেছি যে মাথায় আঘাত লেগে ফুলে গেলে এর প্রাথমিক চিকিৎসা কি এবং মাথায় আঘাত জনিত কারনে যে সকল সমস্যাগুলো হতে পারে তা সম্পর্কে একটি নির্ভুল ধারণা লাভ করতে পেরেছি। মাথা বা মস্তিষ্ক আমাদের দেহের পরিচালক। এবং এটি একটি সংবেদনশীল অঙ্গ। যার একটু তেই অনেক বড় ক্ষতি হয়ে যেতে পারে তাই আমাদের করণীয় হবে সব সময় সাবধান ভাবে চলাফেরা করব। কারণ স্বাস্থ্যই সম্পদ। এ সম্পদ একবার হারিয়ে গেলে আর ফিরে পাওয়া যাবে না।