এন্ড্রোয়েড ফোনে বিরক্তিকর এড বন্ধ করুন – বিরক্তিকর এড কিভাবে বন্ধ করব

আমরা প্রায় সকলেই অ্যান্ড্রয়েড মোবাইল ফোন ব্যবহার করি। আবার ফোনে বিভিন্ন রকম অ্যাপ ইনস্টল করে রাখি। আমরা যখন ডাটা কানেকশন চালু করে বিভিন্ন অ্যাপ বা ওয়েবসাইটে ভিজিট করি তখন আমাদের ফোনে ভালো খারাপ মিলেই নানা রকম এড আসতে থাকে। 

এন্ড্রোয়েড ফোনে বিরক্তিকর এড বন্ধ করুন

অনেকের ফোনের ডিফল্ট অ্যাপগুলো থেকে এড আসে যেগুলো আসলেই বিরক্তিকর। আমাদের মনে হয়তো প্রশ্ন জাগে যে এই অ্যাডসগুলো কিভাবে বন্ধ করা যায়? আজকে আমরা সেই বিষয়েই আলোচনা করব। তবে আপনি কি জানেন এন্ড্রোয়েড ফোনে বিরক্তিকর এডগুলো বন্ধ করা সম্ভব। 

হ্যাঁ আমি বলছি আপনারা যদি একটু ট্রিকস খাটান বা কয়েকটি ধাপ অবলম্বন করেন তাহলে আপনার এন্ড্রোয়েড ফোনে আসা বিরক্তিকর অ্যাডসগুলো বন্ধ করতে পারবেন। তো বন্ধুরা চলুন আপনি কিভাবে আপনার এন্ড্রোয়েড ফোনে বিরক্তিকর অ্যাড বন্ধ করবেন সেই বিষয়ে আলোচনা শুরু করা যাক।

এন্ড্রোয়েড ফোনে বিরক্তিকর এড বন্ধ করুন

১. প্রথমে আপনার এন্ড্রোয়েড ফোনের সেটিং অপশনটি খুঁজে বের করুন।

এন্ড্রোয়েড ফোনে বিরক্তিকর এড বন্ধ করুন

২. এবার আপনারা আপনাদের সেটিং অপশনে প্রবেশ করুন আর সেটিং সার্চ অপশনে ক্লিক করুন।

এন্ড্রোয়েড ফোনে বিরক্তিকর এড বন্ধ করুন

৩. এবার Private DNS লিখে Search করে ফেলুন।

এন্ড্রোয়েড ফোনে বিরক্তিকর এড বন্ধ করুন

৪. Search করার পরে Private DNS HostName-এ ক্লিক করুন। 

এন্ড্রোয়েড ফোনে বিরক্তিকর এড বন্ধ করুন

৫. পরিশেষে সেখানে dns.adguard.com এইটা লিখে সেভ করতে হবে ব্যাস তাহলেই কাজ শেষ। 

এন্ড্রোয়েড ফোনে বিরক্তিকর এড বন্ধ করুন

এই সেটিং টি করার পর ইন্টারনেট কানেকশন থাকার পরেও আপনাদের ফোনে আর এড শো করবে না। তবে এক্ষেত্রে যে-সব ওয়েবসাইটে এন্টি এড ব্লকার আছে সেসব ওয়েবসাইটে এই ফাংশন টি কাজ করবে না যেমন-

  • ইউটিউব এর অ্যাডস আসা বন্ধ হবে না।
  • ফেসবুকের অ্যাডস আসা বন্ধ হবে না।

এছাড়া আপনার ফোনের প্রায় সকল ধরনের অ্যাডসগুলো আসা বন্ধ হয়ে যাবে। তবে এই প্রাইভেট DNS অপশন ব্যবহার করার কিছু সুবিধা অসুবিধাও আছে। আপনারা এই প্রাইভেট DNS অপশন টি ব্যবহার করার আগে অবশ্যই এর সুবিধা অসুবিধা বা প্রাইভেট DNS এর ভালো বা খারাপ দিকগুলোও জেনে নিবেন।

বিরক্তিকর এড কিভাবে বন্ধ করব

মোবাইলে বিরক্তিকর বিজ্ঞাপন বন্ধ করা সত্যিই সম্ভব, তবে এর জন্য কিছু কৌশল অবলম্বন করতে হবে। যেহেতু বিজ্ঞাপনগুলো বিভিন্ন উৎস থেকে আসে (যেমন অ্যাপ, ব্রাউজার, সিস্টেম), তাই সব ধরনের বিজ্ঞাপন বন্ধ করতে কয়েকটি ভিন্ন পদ্ধতি ব্যবহার করতে হবে।

এখানে ধাপে ধাপে বিভিন্ন উপায়ে বিজ্ঞাপন বন্ধ করার পদ্ধতিগুলো আলোচনা করা হলো:

১. ফোনের সেটিংস পরিবর্তন করে বিজ্ঞাপন কমানো

আপনার ফোনের অপারেটিং সিস্টেম (অ্যান্ড্রয়েড বা আইওএস) কিছু বিজ্ঞাপন সেটিংস নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে।

➡️➡️অ্যান্ড্রয়েড ফোনের জন্য:

➡️বিজ্ঞাপন ব্যক্তিগতকরণ বন্ধ করুন:

  • আপনার ফোনের Settings (সেটিংস)-এ যান।
  • এরপরে “Google” অপশনটি খুঁজুন এবং ক্লিক করুন।
  • এরপরে”Ads” (বিজ্ঞাপন) অপশনে যান।
  • এরপরে “Delete Advertising ID” অপশনে ট্যাপ কুরন। 
  • এটি আপনার বিজ্ঞাপন আইডি রিসেট করে দেবে, ফলে বিজ্ঞাপনদাতারা আপনার পূর্ববর্তী কার্যকলাপের উপর ভিত্তি করে টার্গেটেড বিজ্ঞাপন দেখাতে পারবে না।
  • এছাড়াও, “Opt out of Ads Personalization” অথবা “Disable Ads Personalization” অপশনটি চালু করে দিন।

➡️অজানা সোর্স থেকে অ্যাপ ইনস্টল বন্ধ করুন:

অনেক সময় অজানা সোর্স থেকে ইনস্টল করা অ্যাপের মাধ্যমে অবাঞ্ছিত বিজ্ঞাপন আসে।

এজন্য👇

  • Settings > 👇
  • Apps & notifications (অথবা Apps) > 👇
  • Special app access >👇
  • Install unknown apps-এ যান।

এখানে প্রতিটি অ্যাপের জন্য এই অপশনটি বন্ধ করে দিন, যদি না আপনি নিশ্চিত হন যে অ্যাপটি নির্ভরযোগ্য।

➡️বিজ্ঞাপন দেখানো অ্যাপ খুঁজে বের করুন:

অনেক সময় কিছু অ্যাপের মাধ্যমে পপ-আপ বিজ্ঞাপন আসে যা পুরো স্ক্রিন জুড়ে দেখা যায়। যখন একটি পপ-আপ বিজ্ঞাপন আসে, তখন দ্রুত আপনার ফোনের Recent Apps বা Overview বাটনে ক্লিক করুন। যে অ্যাপটি বিজ্ঞাপন দেখাচ্ছে, সেটির আইকন বা নাম সেখানে দেখা যাবে। 

যদি অ্যাপটি চিহ্নিত করতে পারেন, তাহলে সেই অ্যাপটিকে আনইনস্টল করে দিন অথবা তার নোটিফিকেশন বন্ধ করুন। কিছু অ্যাপ থাকে যেগুলো এই ধরনের পপ-আপ বিজ্ঞাপন দেখায়। 

আরো পড়ুনঃ-  মেমোরি কার্ড রিকভারি সফটওয়্যার - মেমোরি কার্ড সাপোর্ট করে না

➡️➡️আইফোন (iOS) এর জন্য:

➡️অ্যাপল বিজ্ঞাপন বন্ধ করুন:

  • Settings (সেটিংস) > Privacy & Security > Apple Advertising -এ যান।
  • “Personalized Ads” নামক অপশনটি বন্ধ করতে হবে। 

এটি অ্যাপলকে আপনার তথ্যের ভিত্তিতে বিজ্ঞাপন দেখানো থেকে বিরত রাখবে।

➡️অ্যাপ ট্র্যাকিং বন্ধ করুন:

  • Settings > 
  • Privacy & Security > 
  • Tracking-এ যান।
  • এরপরে “Allow Apps to Request to Track” অপশনটি বন্ধ করতে হবে। 

এটি অ্যাপগুলোকে অন্যান্য অ্যাপ এবং ওয়েবসাইটে আপনার কার্যকলাপ ট্র্যাক করার অনুমতি চাইবে না, যা টার্গেটেড বিজ্ঞাপন কমাতে সাহায্য করবে।

➡️বিজ্ঞাপন আইডি রিসেট করুন:

  • এজন্য👇
  • Settings >👇 
  • Privacy & Security > 👇
  • Apple Advertising-এ যান।

এরপরে “Reset Advertising Identifier”-এ ক্লিক করুন।

২. ব্রাউজার সেটিংস পরিবর্তন করে বিজ্ঞাপন বন্ধ করা

আপনার ফোনে ব্যবহৃত ওয়েব ব্রাউজারেও বিজ্ঞাপন বন্ধ করার সুবিধা থাকে।

➡️➡️Google Chrome ব্রাউজারের জন্য:

➡️পপ-আপ এবং রিডাইরেক্ট বন্ধ করুন:

  • প্রথমে Chrome ব্রাউজার খুলুন।
  • এরপরে উপরের ডান কোণায় থাকা তিনটি ডট মেনুতে ক্লিক করুন।
  • এরপরে Settings (সেটিংস)-এ যান।
  • এরপরে “Site Settings” (সাইট সেটিংস)-এ ক্লিক করুন।
  • এবার “Pop-ups and redirects” এ ট্যাপ করুন। 

➡️বিজ্ঞাপন ব্লক করুন :

  • আবার Chrome Settings-এর “Site Settings”-এ ফিরে যান।
  • এরপরে “Ads” (বিজ্ঞাপন) অপশনে ক্লিক করুন এবং এটি বন্ধ (Blocked) করে দিন। 
  • এটি আগ্রাসী এবং বিভ্রান্তিকর বিজ্ঞাপন ব্লক করবে।

➡️কুকিজ নিয়ন্ত্রণ করুন:

  • আগে Chrome Settings-এর “Site Settings”-এ যান।
  • এরপরে “Cookies” অপশনে ক্লিক করে একটি অপশন দেখতে পাবেন সেতা হল “Block third-party cookies” এটি চালু করুন। 
  • এটি বিভিন্ন ওয়েবসাইটকে আপনার ডেটা ট্র্যাক করা থেকে বিরত রাখবে।

➡️মাই অ্যাকটিভিটি থেকে ডেটা মুছে ফেলুন:

  • Google Chrome ব্রাউজার থেকে myactivity.google.com এই ঠিকানায় যান।
  • আপনার Google অ্যাকাউন্টে লগইন করুন।

এখানে আপনি আপনার অনলাইন কার্যকলাপ দেখতে পাবেন। আপনি চাইলে নির্দিষ্ট কার্যকলাপ ডিলিট করতে পারেন অথবা স্বয়ংক্রিয়ভাবে ডিলিট করার অপশন সেট করতে পারেন। এটি আপনার প্রোফাইল থেকে বিজ্ঞাপনের ডেটা কমাতে সাহায্য করবে।

৩. ডিএনএস পরিবর্তন করে বিজ্ঞাপন বন্ধ করা

ডিএনএস পরিবর্তন করা একটি কার্যকর উপায় যা আপনার পুরো ফোনের জন্য বিজ্ঞাপন ব্লক করতে পারে, শুধুমাত্র ব্রাউজার বা অ্যাপের জন্য নয়।

➡️অ্যান্ড্রয়েড ফোনের জন্য (Private DNS):

  • আপনার ফোনের Settings -এ যান।
  • এরপরে “Network & Internet” অপশনে ক্লিক করুন। 
  • এরপরে “Private DNS” অপশনে ক্লিক করুন।
  • এরপরে আপনি “Private DNS provider hostname”-এ ট্যাপ করুন। 
  • এরপর এখানে dns.adguard.com লিখে Save (সেভ) করুন।
  • এটি AdGuard-এর ডিএনএস সার্ভার ব্যবহার করবে, যা পরিচিত বিজ্ঞাপন সার্ভারগুলোকে ব্লক করে দেয়।

➡️আইফোন (iOS) এর জন্য:

আইফোনে সরাসরি Private DNS সেটিংস থাকে না। তবে, আপনি থার্ড-পার্টি অ্যাপ যেমন AdGuard DNS অ্যাপ অথবা ডিএনএস প্রোফাইল ইনস্টল করে একই সুবিধা পেতে পারেন।

৪. বিজ্ঞাপন ব্লকিং অ্যাপ বা ভিপিএন ব্যবহার করা

কিছু অ্যাপ এবং ভিপিএন সার্ভিস রয়েছে যা বিশেষভাবে বিজ্ঞাপন ব্লক করার জন্য ডিজাইন করা হয়েছে।

Ad Blocker Apps: Google Play Store বা Apple App Store-এ অনেক অ্যাড ব্লকার অ্যাপ পাওয়া যায় (যেমন AdGuard, Blockada)। এই অ্যাপগুলো আপনার ডিভাইসের জন্য সিস্টেম-ওয়াইড অ্যাড ব্লকিং সুবিধা দিতে পারে।

৫. বিরক্তিকর অ্যাপ আনইনস্টল করা

অনেক সময় নতুন ইনস্টল করা কোনো ফ্রি অ্যাপ বা গেমের কারণে অযাচিত পপ-আপ বা ফুল-স্ক্রিন বিজ্ঞাপন আসতে পারে। সম্প্রতি ইনস্টল করা অ্যাপ: যদি সম্প্রতি কোনো অ্যাপ ইনস্টল করার পর থেকে বিজ্ঞাপন আসা শুরু করে, তাহলে সেই অ্যাপটি আনইনস্টল করার চেষ্টা করুন।

অ্যাপের রিভিউ দেখুন: কোনো অ্যাপ ইনস্টল করার আগে তার রিভিউগুলো দেখে নিন। যদি অ্যাপটি প্রচুর বিজ্ঞাপন দেখায়, তাহলে রিভিউতে সে সম্পর্কে উল্লেখ থাকতে পারে।

৬. অ্যাপের পারমিশন চেক করা

কিছু অ্যাপ আপনার ফোনের ডেটা অ্যাক্সেস করার অনুমতি চায় যা তারা বিজ্ঞাপনের উদ্দেশ্যে ব্যবহার করতে পারে।

  • আপনার ফোনের Settings-এ যেতে হবে
  • এরপরে Apps-এ যেতে হবে 
  • এরপরে নির্দিষ্ট অ্যাপ সিলেক্ট করতে হবে
  • এরপরে Permissions-এ গিয়ে অপ্রয়োজনীয় অনুমতিগুলো বন্ধ করে দিন। 
আরো পড়ুনঃ-  কোন এপস দিয়ে বিদেশিদের সাথে কথা বলা যায় - বিদেশিদের সাথে কথা বলার অ্যাপস

উদাহরণস্বরূপ, যদি একটি সাধারণ ক্যালকুলেটর অ্যাপ আপনার লোকেশন বা কন্ট্যাক্টস অ্যাক্সেস করার অনুমতি চায়, তাহলে সেটি বন্ধ করে দিতে পারেন।

৭. ফোনের সিস্টেম আপডেট রাখা

অনেক সময় ফোনের অপারেটিং সিস্টেম আপডেটে বাগ ফিক্স এবং নিরাপত্তা প্যাচ থাকে যা অপ্রত্যাশিত বিজ্ঞাপনের উৎসগুলো বন্ধ করতে পারে। তাই, আপনার ফোন সবসময় আপডেটেড রাখুন। এই পদ্ধতিগুলো ব্যবহার করে আপনি আপনার মোবাইলে বিরক্তিকর বিজ্ঞাপনের মাত্রা উল্লেখযোগ্যভাবে কমাতে পারবেন। 

মনে রাখবেন, ১০০% বিজ্ঞাপন ব্লক করা কঠিন হতে পারে, কারণ বিজ্ঞাপনদাতারা সব সময় নতুন নতুন পদ্ধতি নিয়ে আসে, তবে এই পদক্ষেপগুলো আপনার অভিজ্ঞতাকে অনেক ভালো করে তুলবে।

মোবাইলে এড বা বিজ্ঞাপন কেন আসে ?

মোবাইলে বিজ্ঞাপন আসা খুবই সাধারণ একটি ব্যাপার, আর এর পেছনে বেশ কিছু কারণ রয়েছে। মূলত, এই বিজ্ঞাপনগুলো আপনার কাছে নির্দিষ্ট পণ্য বা সেবা পৌঁছে দেওয়ার একটি মাধ্যম, যার মাধ্যমে অ্যাপ ডেভেলপার, ওয়েবসাইট বা বিজ্ঞাপনদাতারা আয় করে থাকে। মোবাইলে বিজ্ঞাপন আসার কয়েকটি প্রধান কারণ নিচে দেওয়া হলো:

১. ফ্রি অ্যাপ এবং গেমের আয়ের উৎস

আপনি যে অসংখ্য ফ্রি অ্যাপ এবং গেম ব্যবহার করেন, সেগুলোর বেশিরভাগই তাদের আয়ের জন্য বিজ্ঞাপনের ওপর নির্ভরশীল। ডেভেলপাররা অ্যাপ তৈরি ও রক্ষণাবেক্ষণে প্রচুর সময় এবং অর্থ ব্যয় করেন। বিনামূল্যে অ্যাপ সরবরাহ করার বিনিময়ে, তারা বিজ্ঞাপনদাতাদের থেকে টাকা পায় যখন আপনি তাদের অ্যাপের মধ্যে বিজ্ঞাপন দেখেন।

উদাহরণ: একটি ফ্রি গেমে খেলার মাঝখানে ভিডিও বিজ্ঞাপন আসা, অথবা একটি ফ্রি ছবি এডিটিং অ্যাপে ফিচার আনলক করতে বিজ্ঞাপন দেখা।

২. ডেটা ট্র্যাকিং এবং টার্গেটেড বিজ্ঞাপন

এটি বিজ্ঞাপনের সবচেয়ে বড় এবং কার্যকর কারণ। বিজ্ঞাপনদাতারা আপনার সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করে আপনাকে প্রাসঙ্গিক বিজ্ঞাপন দেখানোর চেষ্টা করে। এই তথ্যগুলো বিভিন্ন উৎস থেকে আসে:

আপনার অনলাইন কার্যকলাপ: আপনি কোন ওয়েবসাইট ভিজিট করেন, কোন অ্যাপ ব্যবহার করেন, কী সার্চ করেন, কোন ভিডিও দেখেন—এই সব ডেটা সংগ্রহ করা হয়।

আপনার ডিভাইসের তথ্য: আপনার ডিভাইসের মডেল, অপারেটিং সিস্টেম, অবস্থান (যদি অনুমতি দেন), এমনকি আপনার ডেমোগ্রাফিক তথ্য (যেমন বয়স, লিঙ্গ) ব্যবহার করা হতে পারে।

কুকিজ এবং ট্র্যাকার: ওয়েবসাইট এবং অ্যাপগুলো কুকিজ (ছোট ডেটা ফাইল) এবং অন্যান্য ট্র্যাকিং প্রযুক্তি ব্যবহার করে আপনার অনলাইন অভ্যাস সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করে।

এই ডেটা বিশ্লেষণ করে বিজ্ঞাপনদাতারা আপনার আগ্রহ এবং পছন্দের জিনিসগুলো অনুমান করে। যেমন, আপনি যদি সম্প্রতি স্মার্টফোন নিয়ে সার্চ করে থাকেন, তাহলে আপনার ফোনে স্মার্টফোনের বিজ্ঞাপন বেশি আসবে।

৩. বিজ্ঞাপনের নেটওয়ার্ক এবং এসডিকে

SDK একবার অ্যাপে যুক্ত হলে, এটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে বিজ্ঞাপন লোড করে এবং ব্যবহারকারীদের কাছে প্রদর্শন করে। বিজ্ঞাপন নেটওয়ার্কের বিশাল ডেটাবেস থেকে ব্যবহারকারীর প্রোফাইল অনুযায়ী বিজ্ঞাপন বেছে নেওয়া হয়।

৪. ব্রাউজার এবং ওয়েবসাইট থেকে বিজ্ঞাপন

আপনি যখন মোবাইলে ওয়েব ব্রাউজ করেন, তখন ওয়েবসাইটগুলো তাদের আয়ের জন্য বিজ্ঞাপন প্রদর্শন করে। এই বিজ্ঞাপনগুলো ব্রাউজারের মাধ্যমে আপনার কাছে আসে। কিছু ওয়েবসাইট অতিরিক্ত পপ-আপ বিজ্ঞাপন বা নতুন ট্যাবে বিজ্ঞাপন খুলতে পারে, যা ব্যবহারকারীর অভিজ্ঞতা নষ্ট করে।

৫. সিস্টেম-লেভেল বিজ্ঞাপন 

কিছু ফোন নির্মাতা, বিশেষ করে বাজেট-ফ্রেন্ডলি স্মার্টফোন ব্র্যান্ডগুলো, তাদের অপারেটিং সিস্টেমের (UI) মধ্যে বিজ্ঞাপন দেখায়। এই বিজ্ঞাপনগুলো প্রায়শই নোটিফিকেশন আকারে আসে বা ডিভাইসের বিল্ট-ইন অ্যাপগুলোতে দেখা যায়। এটি ফোনের মূল্য কম রাখতে সাহায্য করে, কারণ তারা বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে অতিরিক্ত আয় করে।

বিজ্ঞাপন কমানোর বা ব্লক করার উপায়

যদি আপনি মোবাইলে বিজ্ঞাপনের মাত্রা কমাতে চান, তাহলে কিছু পদক্ষেপ নিতে পারেন: 

  • পেইড অ্যাপ ব্যবহার করুন: অনেক অ্যাপের একটি পেইড সংস্করণ থাকে যেখানে কোনো বিজ্ঞাপন থাকে না।
  • বিজ্ঞাপন ব্লকার (Ad Blocker): ব্রাউজারে বা কিছু অ্যাপে বিজ্ঞাপন ব্লকার ব্যবহার করতে পারেন।
  • ডিএনএস-ভিত্তিক ব্লকার: AdGuard DNS-এর মতো পরিষেবা ব্যবহার করে সিস্টেম-ওয়াইড বিজ্ঞাপন ব্লক করা যায়।
  • অ্যাপ পারমিশন চেক করুন: অনেক অ্যাপ অযাচিত পারমিশন চায়, যা তাদের ডেটা সংগ্রহে সাহায্য করে। পারমিশনগুলো পর্যালোচনা করুন।
  • প্রাইভেসি সেটিংস পরিবর্তন করুন: আপনার ফোনের সেটিংস-এ গিয়ে বিজ্ঞাপন পার্সোনালাইজেশন বন্ধ করতে পারেন।
আরো পড়ুনঃ-  মোবাইলে ভাইরাস কাটার সফটওয়্যার ডাউনলোড করুন

বিজ্ঞাপন মোবাইলের ইকোসিস্টেমের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে উঠেছে। এটি অ্যাপ ডেভেলপার এবং কন্টেন্ট নির্মাতাদের জন্য আয়ের প্রধান উৎস, যা আমাদের বিনামূল্যে অনেক পরিষেবা ব্যবহারের সুযোগ করে দেয়।

Privet DNS সুবিধা ও অসুবিধা সমূহ 

আসুন, প্রাইভেট ডিএনএস-এর সুবিধা ও অসুবিধাগুলো বিস্তারিত আলোচনা করি:

প্রাইভেট ডিএনএস-এর সুবিধা 

১. উন্নত গোপনীয়তা :

ডিএনএস কোয়েরি এনক্রিপশন: প্রাইভেট ডিএনএস আপনার ডিএনএস কোয়েরিগুলোকে এনক্রিপ্ট করে। এর ফলে আপনার আইএসপি (ISP) বা নেটওয়ার্কের অন্য কেউ (যেমন পাবলিক ওয়াই-ফাইয়ের অ্যাডমিন) আপনার ব্রাউজিং ইতিহাস সরাসরি দেখতে পারে না।

ট্র্যাকিং হ্রাস: যেহেতু আপনার ডিএনএস কোয়েরিগুলো আইএসপি-এর কাছে গোপন থাকে, তাই তারা আপনার ব্রাউজিং অভ্যাস ট্র্যাক করে আপনার প্রোফাইল তৈরি করতে পারে না, যা বিজ্ঞাপনদাতাদের কাছে বিক্রি হতে পারে। এর ফলে টার্গেটেড বিজ্ঞাপনের সংখ্যা কমে।

২. বর্ধিত নিরাপত্তা:

ডিএনএস স্পুফিং/ম্যান-ইন-দ্য-মিডল আক্রমণ থেকে সুরক্ষা: ডিএনএস স্পুফিং হলো এমন এক ধরনের সাইবার আক্রমণ যেখানে হ্যাকাররা ডিএনএস রেকর্ড ম্যানিপুলেট করে ব্যবহারকারীদেরকে ক্ষতিকারক বা নকল ওয়েবসাইটে রিডাইরেক্ট করে। প্রাইভেট ডিএনএস আপনার কোয়েরি এনক্রিপ্ট করার মাধ্যমে এই ধরনের আক্রমণ প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে, কারণ এনক্রিপ্টেড কোয়েরি হ্যাকারদের জন্য পরিবর্তন করা কঠিন।

৩. কন্টেন্ট ফিল্টারিং:

কিছু প্রাইভেট ডিএনএস প্রোভাইডার প্যারেন্টাল কন্ট্রোল বা কন্টেন্ট ফিল্টারিং সুবিধা দেয়। এর মাধ্যমে আপনি প্রাপ্তবয়স্কদের কন্টেন্ট বা নির্দিষ্ট ক্যাটাগরির ওয়েবসাইটগুলো ব্লক করতে পারেন, যা শিশুদের জন্য নিরাপদ ইন্টারনেট ব্যবহারের সুযোগ করে দেয়।

প্রাইভেট ডিএনএস-এর অসুবিধা

১. সম্পূর্ণ গোপনীয়তা প্রদান করে না:

আইপি ঠিকানা গোপন করে না: প্রাইভেট ডিএনএস শুধুমাত্র আপনার ডিএনএস কোয়েরি এনক্রিপ্ট করে, কিন্তু আপনার আসল আইপি ঠিকানা গোপন করে না। আপনার আইএসপি এবং ওয়েবসাইটগুলো এখনও আপনার আইপি ঠিকানা দেখতে পাবে। যদি আপনি সম্পূর্ণ পরিচয় গোপন রাখতে চান এবং আপনার আইপি ঠিকানা লুকোতে চান, তাহলে আপনার একটি ভিপিএন (VPN) ব্যবহার করা দরকার।

অন্যান্য ট্র্যাকিং পদ্ধতি: ওয়েবসাইটগুলো কুকিজ, ব্রাউজার ফিঙ্গারপ্রিন্টিং এবং অন্যান্য ট্র্যাকিং পদ্ধতি ব্যবহার করে আপনাকে চিহ্নিত করতে পারে। প্রাইভেট ডিএনএস এই ধরনের ট্র্যাকিং থেকে সুরক্ষা দেয় না।

২. গতিতে সামান্য প্রভাব:

যদিও কিছু প্রাইভেট ডিএনএস সার্ভিস দ্রুত গতি দেয়, এনক্রিপশন প্রক্রিয়ার কারণে কিছু ক্ষেত্রে (বিশেষ করে দূরবর্তী সার্ভারের ক্ষেত্রে) ডিএনএস রেজোলিউশনের গতিতে সামান্য বিলম্ব হতে পারে। তবে এটি সাধারণত খুবই নগণ্য এবং বেশিরভাগ ব্যবহারকারীর জন্য লক্ষণীয় নয়।

৩. ডিএনএস প্রোভাইডারের উপর নির্ভরতা:

আপনি যে প্রাইভেট ডিএনএস প্রোভাইডার বেছে নিচ্ছেন, তার উপর আপনাকে বিশ্বাস রাখতে হবে যে তারা আপনার ডিএনএস কোয়েরিগুলোর লগ রাখবে না বা আপনার ডেটা অন্য কোথাও বিক্রি করবে না। তাই, একটি বিশ্বস্ত প্রোভাইডার বেছে নেওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

৪. সম্পূর্ণ অ্যাড ব্লকিং:

প্রাইভেট ডিএনএস অনেক বিজ্ঞাপন ব্লক করতে পারলেও, এটি সব ধরনের বিজ্ঞাপন ব্লক করতে পারে না। কিছু অ্যাপ বা ওয়েবসাইট তাদের বিজ্ঞাপন সার্ভার পরিবর্তন করে বা এমনভাবে বিজ্ঞাপন পরিবেশন করে যা ডিএনএস লেভেলে ব্লক করা কঠিন।

প্রাইভেট ডিএনএস বনাম ভিপিএন

প্রাইভেট ডিএনএস আপনার গোপনীয়তা এবং নিরাপত্তা বাড়ালেও, এটি ভিপিএন-এর মতো ব্যাপক সুরক্ষা প্রদান করে না।

প্রাইভেট ডিএনএস: শুধুমাত্র আপনার ডিএনএস কোয়েরি এনক্রিপ্ট করে এবং আপনার আসল আইপি ঠিকানা গোপন করে না। এটি আইএসপি-কে আপনার ব্রাউজিং ইতিহাস দেখতে বাধা দেয় কিন্তু ডেটা প্রবাহ দেখতে পারে।

ভিপিএন: আপনার সমস্ত ইন্টারনেট ট্র্যাফিক (শুধুমাত্র ডিএনএস কোয়েরি নয়) এনক্রিপ্ট করে এবং আপনার আসল আইপি ঠিকানা সম্পূর্ণরূপে গোপন করে। আইএসপি শুধুমাত্র আপনার ভিপিএন সার্ভারের সাথে সংযোগ দেখতে পায়, আপনি কোন ওয়েবসাইট ভিজিট করছেন তা তারা জানতে পারে না।

লেখকের শেষ মতামত

প্রাইভেট ডিএনএস আপনার অনলাইন গোপনীয়তা এবং নিরাপত্তা বাড়ানোর জন্য একটি চমৎকার এবং তুলনামূলকভাবে সহজলভ্য টুল। এটি বিশেষ করে বিজ্ঞাপন এবং ট্র্যাকিং কমানোর জন্য খুবই কার্যকর। 

তবে, যদি আপনি সম্পূর্ণ অনলাইন পরিচয় গোপন রাখতে চান এবং আপনার সমস্ত ইন্টারনেট কার্যকলাপ এনক্রিপ্ট করতে চান, তাহলে একটি নির্ভরযোগ্য ভিপিএন ব্যবহার করাই শ্রেয়। প্রাইভেট ডিএনএসকে ভিপিএন-এর একটি হালকা সংস্করণ হিসাবে দেখা যেতে পারে, যা সাধারণ ব্যবহারকারীদের জন্য যথেষ্ট সুবিধা প্রদান করে।

আমি সহ আমার টিম প্রতিনিয়ত কাজ করি অনলাইন জগতে বিভিন্ন তথ্য প্রদানের মাধ্যমে সবার জ্ঞান ও দক্ষতা বৃদ্ধিতে। আমাদের সম্পর্কে আপনার কোন প্রশ্ন বা মতামত প্রদান করতে আমাদের যোগাযোগ পেইজ ব্যবহার করুন অথবা নিচে কমেন্ট করুন।

Leave a Comment