নামাজের ভিতরে বাহিরে ১৩ ফরজ কি কি ব্যাপারগুলো খুব গুরুত্বপূর্ণ ও সেনসিটিভ। একজন মুসলিম হিসেবে সালাতের ১৩ ফরজ না জানলে নামাজ নষ্ট হয়ে যেতে পারে, তাই এটি জানতেই হবে। এই ১৩ ফরজের একটি ফরজ যদি পালন করা না হয়। তবে নামাজ আদায় হবে না।
নতুন করে আবারও পুনরায় নামাজ আদায় করতে হবে। যদি নতুন করেও আবারও নামাজ আদায় করা না হয়। তবে আমরা সাওয়াব থেকে বঞ্চিত হবো এবং গুনাহ এর ভাগীদার হবো। তাই নামাজ আদায় শুরুর আগে এবং নামাজ আদায়কালীন সময় আমাদের নামাজের ১৩ ফরজ কি কি তা জানতে হবে।
আজকে আমরা নামাজের ফরজ কয়টি ও কি কি সেগুলো নিয়েই আলোচনা করবো। নামাজের মধ্যে এমনকিছু অংশ বা কার্যাবলী রয়েছে যে অংশটুকু বাদ পড়লে পুরো নামাজটাই বাতিল হয়ে যায়। তাই আমাদের প্রত্যক মুসলমানদের নামাজের ফরজ কয়টি এবং নামাজের ভিতরে বাহিরে ১৩ ফরজ কি কি তা জেনে নিয়ে সেই অনুযায়ী নামাজ আদায় করতে হবে।
নামাজের ফরজ কয়টি
নামাজের ফরজ কাজ মোট ১৩টি। এর মধ্যে ৭টি নামাজের বাইরের ফরজ (আহকাম) এবং ৬টি নামাজের ভেতরের ফরজ (আরকান)।
এখানে নামাজের ফরজগুলো তুলে ধরা হলো:
➡️আহকাম তথা নামাজের বাইরের ফরজ ৭ টি
- শরীর পবিত্র হতে হবে। (সুরা মায়িদা, আয়াত: ৬)
- কাপড় পবিত্র হতে হবে। (সুরা মুদ্দাসসির, আয়াত: ৪)
- যে স্থানে নামাজ পড়বেন সে স্থানটি পবিত্র হতে হবে। (সুরা বাকারা, আয়াত: ১২৫)
- সতর ঢাকতে হবে। (সুরা নূর, আয়াত: ৩১)
- কিবলা মুখী হতে হবে। (সুরা বাকারা, আয়াত: ১৪৪)
- ওয়াক্ত অনুযায়ী নামাজ আদায় করতে হবে। (সুরা নিসা, আয়াত: ১০৩)
- নামাজের নিয়ত করা। (বুখারি ১/২, হাদিস: ১)
সতরের পরিমান: নামাজের সময় পুরুষদের সতর হচ্ছে নাভি হতে হাঁটু পর্যন্ত। অন্যদিকে নারীদের সতর হচ্ছে উভয় হাতের কব্জি, উভয় পায়ের পাতা ও মুখমণ্ডল ব্যতীত পুরো দেহ।
➡️আরকান তথা নামাজের ভিতরের ফরজ
নামাজের ভিতরের ফরজ বা আরকান হচ্ছে ৬ টি। উক্ত ৬ টি ফরজ হচ্ছে:
- তাকবিরে তাহরিমা (আল্লাহু আকবার) বলে নামাজ শুরু করা। (সুরা মুদ্দাসসির, আয়াত: ৩)
- ফরজ ও ওয়াজিব নামাজ দাড়িয়ে শুরু করতে হবে। (সুরা বাকারা, আয়াত: ২৩৮)
- কিরাত পড়া অর্থাৎ সূরা ফাতিহা এর পরে নামাজের ছোট সূরা সমূহ পড়তে হবে। (সুরা মুজ্জাম্মিল, আয়াত: ২০)
- রুকু করতে হবে। (সুরা হজ, আয়াত: ৭৭)
- দুই সিজদাহ করতে হবে। (সুরা হজ, আয়াত: ৭৭)
- শেষ বৈঠকে বসা।
নামাজের ফরজ কয়টি ও কি কি তার সবটাই আপনাদের জানানো হলো। নামাজ পড়া শুরুর আগে নামাজের আহকামগুলো ঠিক করে নিতে হবে। নামাজ পড়ার সময় নামাজের আরকানগুলোর ভালোভাবে খেয়াল রাখতে হবে।
নামাজের ভিতরে বাহিরে ১৩ ফরজ কি কি
নামাজ পড়া যেমন ফরজ নামাজের ১৩টি ফরজের সাথে নামাজ পড়া তেমন ফরজ। এগুলোর একটি ছুটে গেলে আমাদের নামাজ নষ্ট হয়ে যাবে।
তাই শুরুতেই ভূমিকাতেই আমরা বলেছি যে বিষয়টি খুব সেনসিটিভ ও ইম্পোর্ট্যান্ট। কিন্ত আমরা কয়জন মুসলিম নামাজের ১৩টা ফরজ বা অবশ্য পালনীয় কর্তব্যগুলো জানি? তো চলুন জেনে নিতে সচেষ্ট হই ইনশাআল্লাহ। (আল্লাহ বুঝে মানার তৌফিক্ব দান করুন!)। প্রথমত বলব যে নামাজের ভিতরের বিষয়গুলোকে আরকান বা স্তম্ভ এবং ফরজ ও বলা হয়।
আর নামাজের বাহিরের বিষয়গুলোকে আহকাম, শর্ত, ওয়াজিব ও বলা হয়। আর ওয়াজিব এবং ফরজ যেহেতু প্রায় কাছাকাছি তাই এক সাথে দোনোটাকে ফরজ বা আবশ্যকীয় বিষয় বলা হয়। নামাজের ভিতরে রয়েছে ৬টি ফরজ আর নামাজের বাহিরে রয়েছে ৭টি ফরজ।
➡️নামাজের ভিতরের ৬ ফরজ হলো যথাক্রমে
- তাকবীরে তাহরীমা বলা
- ক্বিয়াম করা
- সূরা ফাতিহা পড়া
- রুকু’ করা
- সিজদা বা সাজদাহ করা এবং
- শেষ বৈঠকে বসা।
নামাজের মধ্যে ছয়টি ফরজ বা অপরিহার্য রুকন (ركن) রয়েছে, যেগুলো না থাকলে নামাজ শুদ্ধ হয় না। ইসলামী শরীয়তে এগুলোকে “আরকানুস্ সালাহ” (أركان الصلاة) বলা হয়। এগুলোর প্রত্যেকটিই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং প্রতিটি নামাজে সঠিকভাবে আদায় করা আবশ্যক। নিচে প্রতিটি ফরজ আরকান বিস্তারিতভাবে তুলে ধরা হলো:
১. তাকবীরুতুল ইহরাম (تَكْبِيرَةُ الإِحْرَام
➡️অর্থ: নামাজ শুরু করার জন্য “আল্লাহু আকবার” বলা।
➡️ব্যাখ্যা: এটি নামাজের প্রথম ফরজ। এই তাকবীরের মাধ্যমে নামাজ শুরু হয় এবং দুনিয়ার কাজ থেকে মনোযোগ সরিয়ে নামাজের জন্য একাগ্রতা স্থাপন করা হয়। “আল্লাহু আকবার” ছাড়া অন্য কোনো বাক্য দ্বারা নামাজ শুরু করলে তা শুদ্ধ হবে না। তাকবীর বলতে হবে কানে শোনার মতো আওয়াজে (যদি একা নামাজ পড়া হয়)।
২. কিয়াম (قِيَام)
➡️অর্থ: দাঁড়িয়ে নামাজ পড়া (যদি সক্ষম হন)।
➡️ব্যাখ্যা: ফরজ ও ওয়াজিব নামাজে কিয়াম ফরজ। দাঁড়িয়ে থেকে কুরআন তেলাওয়াত করতে না পারলে, শরীয়ত তাকে বসে নামাজ পড়ার অনুমতি দেয়। তবে অকারণে বসে পড়লে নামাজ শুদ্ধ হবে না। সুস্থ ব্যক্তি যদি দাঁড়িয়ে নামাজ না পড়ে, তাহলে তার নামাজ বাতিল হয়ে যাবে। তাহাজ্জুদ বা নফল নামাজ বসে পড়া গেলেও তাতে অর্ধেক সওয়াব হয়।
৩. কিরাআত (قِرَاءَة)
➡️অর্থ: কুরআন থেকে তিলাওয়াত করা।
➡️ব্যাখ্যা: কিয়ামের অবস্থায় কমপক্ষে তিনটি ছোট আয়াত অথবা একটি আয়াত যেটা তিন আয়াতের সমান, তেলাওয়াত করতে হয়। ফাতিহা শরীফ (সূরা ফাতিহা) পড়া ও তারপর অন্য একটি সূরা বা আয়াত মিলানো সুন্নত, কিন্তু শুধু ফাতিহা না পড়ে নামাজ পড়লে তা শুদ্ধ হবে না।
ইমাম হলে তাকেও পাঠ করতে হবে, তবে মুকতাদীর (যে ইমামের পেছনে নামাজ পড়ে) জন্য জোরে পড়ার সালাতে (যেমন মাগরিব, এশা, ফজর) কিরাআত করা জরুরি নয়। যোহর ও আসরের নামাজে, কিংবা কোনো চুপচাপ পড়ার নামাজে একা পড়লে অবশ্যই নিজে পড়তে হবে।
৪. রুকু (رُكُوع)
➡️অর্থ: কুরআন তেলাওয়াত শেষে কোমর বাঁকিয়ে হাত হাঁটুতে রেখে রুকুতে যাওয়া।
➡️ব্যাখ্যা: রুকুতে যেতে হয় কিয়ামের পরে। রুকুতে “سُبْحَانَ رَبِّيَ الْعَظِيمِ” বলা সুন্নত। রুকু ছাড়া নামাজ হবে না। কেউ যদি রুকু বাদ দিয়ে সেজদায় চলে যায়, তার নামাজ বাতিল হবে। রুকুতে শরীর এমনভাবে বাঁকানো উচিত যাতে হাত সহজে হাঁটুতে পৌঁছে এবং পিঠ সমান থাকে।
৫. সিজদা (سُجُود)
➡️অর্থ: সেজদা বা মাটিতে ললাট ও নাকসহ সাত অঙ্গ স্পর্শ করানো।
➡️ব্যাখ্যা: একটি রাকাআতে দু’টি সেজদা ফরজ। সেজদার সময় সাতটি অঙ্গ মাটিতে লাগানো ফরজ বা আবশ্যকীয়:
- কপাল
- নাক
- দুই হাত
- দুই হাঁটু
- দুই পায়ের আঙুলের আগা
“سُبْحَانَ رَبِّيَ الأَعْلَى” বলা সুন্নত।
কেউ যদি সঠিকভাবে সেজদা না করে, যেমন কপাল না লাগায় বা নাক না লাগায়, তবে তার নামাজ বাতিল হবে।
৬. কায়দায়ে আখিরা বা শেষ বৈঠক (القَعْدَةُ الأَخِيرَة)
➡️অর্থ: নামাজের শেষ বৈঠকে বসা।
➡️ব্যাখ্যা: দুই রাকাআতের নামাজে দ্বিতীয় রাকাআতে বসা, তিন বা চার রাকাআতের নামাজে তৃতীয় ও শেষ রাকাআতে বসে “আত্তাহিয়্যাতু” পড়া। শেষ বৈঠকে বসে আত্তাহিয়াত, দরুদ শরীফ, এবং দুয়া মাশহুরা পড়ে সালাম ফিরাতে হয়।
এই ফরজ গুলো ছাড়া নামাজ কখনই শুদ্ধ হয় না। এগুলো বাদ পড়লে, নামাজ পুনরায় আদায় করতে হয়। এই ফরজগুলোর পাশাপাশি নামাজে আরো কিছু ওয়াজিব, সুন্নত ও আদব রয়েছে, যেগুলো নিয়েও সচেতন হওয়া জরুরি।
➡️আহকাম তথা নামাজের বাহিরে ৭ ফরজ
এখন নামাজে বাহিরে ৭ ফরজ নিয়ে আলোচনা করব। এই ৭ ফরজ কে ওয়াজিব, শর্ত ও বলা হয়। কারণ নামাজের বাইরের এই ৭টি শর্ত সাপেক্ষেই নামাজ বিশুদ্ধ হবে নচেৎ হবে না। তাই এগুলোকে শর্ত বা আশরাত্ব বলা হয়। ৭টি শর্ত বা ফরজ হচ্ছে যথাক্রমে
- শরীর পবিত্র হওয়া
- কাপড় পবিত্র হওয়া
- নামাজের জায়গা পবিত্র হওয়া
- সতর ঢাঁকা
- কিবলামুখী হওয়া
- ওয়াক্তমত নামাজ পড় এবং
- নামাজের নিয়্যাত করা।
নামাজের বাহিরে সাতটি ফরজ বা বাধ্যতামূলক কাজ আছে, যেগুলোকে ইসলামি পরিভাষায় আহকামে সালাত (أحكام الصلاة) বলা হয়। এগুলো ছাড়া নামাজ শুরুই করা যায় না। অর্থাৎ, এই ফরজসমূহ নামাজ শুরু করার পূর্বশর্ত বা শর্তে নামাজ (شروط الصلاة)। যদি এর কোনটি বাদ পড়ে, তাহলে নামাজ শুদ্ধ হবে না।
নিচে নামাজের বাহিরে সাত ফরজ (৭টি শর্ত) বিস্তারিতভাবে তুলে ধরা হলো:
১. তাহারাত (الطهارة) – পবিত্রতা
➡️অর্থ: শরীর, কাপড় ও নামাজের স্থান নাপাকী থেকে পরিষ্কার রাখা।
➡️ব্যাখ্যা: নামাজের জন্য শারীরিক পবিত্রতা আবশ্যক। ওজু (বা প্রয়োজনে গোসল) ছাড়া নামাজ আদায় করা জায়েয নয়। কাপড়ে, শরীরে বা নামাজের স্থানে কোনো নাপাক বস্তু থাকলে নামাজ শুদ্ধ হবে না।
যেমন: রক্ত, পায়খানা, মূত্র ইত্যাদি যদি কাপড়ে/শরীরে থাকে, তাহলে আগে তা পরিষ্কার করে নামাজ পড়তে হবে।
২. পবিত্র পোশাক পরা (ستر العورة) – সতর ঢেকে রাখা
➡️অর্থ: শরীরের নির্দিষ্ট অংশ ঢেকে রাখা।
➡️ব্যাখ্যা: পুরুষদের জন্য নাভির নিচ থেকে হাঁটু পর্যন্ত অংশ ঢেকে রাখা ফরজ। আর নারীদের জন্য সমস্ত শরীর ঢেকে রাখা ফরজ, শুধু মুখ, হাতের কবজি ও পায়ের পাতা ছাড়া। নামাজের সময় যদি কারো সতর প্রকাশ পায় এবং তা ঢাকার মতো সময় না থাকে, তাহলে নামাজ বাতিল হবে।
৩. কিবলার দিকে মুখ করা (استقبال القبلة)
➡️অর্থ: নামাজে কেবলার দিকে মুখ ঘুরিয়ে দাঁড়ানো।
➡️ব্যাখ্যা: কিবলা হলো কা‘বা শরীফ, মক্কা শরীফে অবস্থিত। কেউ যদি জেনে শুনে কিবলা ছাড়া অন্যদিকে মুখ করে নামাজ পড়ে, তা বাতিল হবে। তবে ভুলক্রমে যদি সামান্য তফাতে হয়, এবং তা দিকভ্রান্তি নয়, তাহলে শুদ্ধ হতে পারে। জাহাজ, ট্রেন বা বিমানে হলে, কিবলার দিকে নামাজের চেষ্টা করতে হবে। না পারলে যেদিকে সম্ভব সেদিকেই পড়া যাবে।
৪. নামাজের সময় প্রবেশ (دخول الوقت)
➡️অর্থ: নির্ধারিত সময় আসার পর নামাজ শুরু করা।
➡️ব্যাখ্যা: প্রতিটি নামাজের একটি নির্দিষ্ট সময়সীমা আছে। ফরজ নামাজ অবশ্যই তার নির্ধারিত সময়ের ভেতরে পড়তে হবে। সময় হওয়ার আগে নামাজ আদায় করলে তা শুদ্ধ হবে না।
উদাহরণস্বরূপ: যোহরের নামাজ ফজরের সময়ে পড়লে তা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য হবে না।
৫. নিয়ত (النية)
অর্থ: মনে মনে নির্দিষ্ট নামাজের উদ্দেশ্যে স্থির সংকল্প করা।
ব্যাখ্যা: নিয়ত মানে ইচ্ছা করা – যে নামাজ পড়ব তা নির্ধারণ করা (যেমন: ফজরের ফরজ, যোহরের ফরজ ইত্যাদি)। মুখে নিয়ত উচ্চারণ করা সুন্নত, তবে অন্তরে থাকা আবশ্যক। ইমাম বা মুকতাদী (অনুসরণকারী) হওয়ার নিয়ত থাকলেও ভালো।
উদাহরণ: “আমি এখন আল্লাহর জন্য দুই রাকাআত ফজরের ফরজ নামাজ পড়ছি।”
৬. নাজাসত থেকে মুক্ত থাকা (إزالة النجاسة)
➡️অর্থ: শরীর, কাপড় এবং নামাজের জায়গা নাপাকি মুক্ত রাখা।
➡️ব্যাখ্যা: এটা পবিত্রতারই অংশ, তবে আলাদা ফরজ হিসেবেও বিবেচিত হয়। নামাজের স্থান, পোশাক বা শরীরে যদি নাপাক বস্তু থাকে, তাহলে তা আগে পরিষ্কার করতে হবে। যেমন: কাপড়ে রক্ত, প্রস্রাব, বাচ্চার পায়খানা ইত্যাদি থাকলে তা দূর করতে হবে। নাপাক অবস্থায় নামাজ পড়লে তা বাতিল হবে।
৭. পর্দা নিশ্চিত করা (مكان آمن و مستور)
➡️অর্থ: এমন জায়গায় নামাজ পড়া, যেখানে শরীরের পর্দা বজায় রাখা যায় ও মনোযোগ বিঘ্নিত না হয়।
➡️ব্যাখ্যা: পুরুষ বা নারীর জন্য এমন স্থানে নামাজ পড়া উচিত যেখানে অন্যদের দৃষ্টি থেকে পর্দা বজায় থাকে। উদাহরণস্বরূপ: জনসম্মুখে বা এমন জায়গায় নামাজ পড়া অনুচিত, যেখানে গোপন অঙ্গ প্রকাশ পাওয়ার আশঙ্কা থাকে।
কেউ যদি খোলা মাঠে এমনভাবে নামাজ পড়ে যে পর্দা রক্ষা হয় না, তাহলে নামাজ বাতিল হতে পারে। যদিও এই শর্তটি অন্য শর্তগুলোর তুলনায় কিছুটা বিতর্কিত, তবে অধিকাংশ ফিকহবিদ এটিকে নামাজের শর্ত হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করেছেন।
এই সাতটি শর্ত মানা ব্যতীত নামাজ শুরু করলে নামাজ বাতিল হবে। এগুলোকে “নামাজের বাহিরের ফরজ” বলা হয়, কারণ এগুলো নামাজের রুকনের (ভিতরের ফরজ) অন্তর্ভুক্ত নয়। এই শর্তগুলো প্রতিটি মুসলমানের জানাও ও মানাও ফরজ।
নামাযে কোন কারণে ফরয ভুলে বাদ পড়ে গেলে আবার নতুন করে নামায আদায় করতে হবে। অর্থাৎ আপনি যদি ভুলবশত নামাজের কোন ফরজ আদায় করতে ভুলে যান। তাহলে আপনাকে আবারও নামাজ শুরু থেকে আদায় করতে হবে। নামাজের বাহিরের সাত ফরজ কিংবা নামাজের ভিতরের ছয় ফরজের থেকে যেকোন ফরজ ছুটে গেলে নতুন করে নামাজ আদায় করতে হবে। না হলে ক্বাযা নামাজ আদায় করতে হবে। ক্বাযা নামাজ আদায় করা না হলে গুনাহগার হতে হবে।
তাই অবশ্যই নামাজের ১৩ ফরজের মাঝে কোন ফরজ ছুটে গেলে আবারও নামাজ আদায় করতেই হবে। কোন ফরজ যদি একের অধিকবার আদায় করা হয় তবে তা সাহু সিজদা দিলে শুদ্ধ হয়ে যাবে।
সুন্নত বাদ পড়লে বা সুন্নত একাধিকবার পড়লে তখন আর সাহু সিজদা দিতে হবে না। ওয়াজিব এর ক্ষেত্রেও একই নিয়ম প্রযোজ্য। তবে মনে রাখবেন নামাজের কোন ওয়াজিব একাধিকবার পড়লে বা ছুটে গেলে সাহু সিজদা দিতে হবে। সাহু সিজদা দেয়ার জন্য শেষ বৈঠকে তাশাহুদ, দরুদ শরিফ, দোয়া মাসুরা পড়ার পর তাকবির দিয়ে পর পর দুইবার সিজদা করতে হবে।
এরপর সালাম ফিরিয়ে নামাজ আদায় সম্পন্ন করতে হবে। তাই অবশ্যই আমাদের নামাজের ১৩ ফরজ কি কি জানতে হবে এবং মানতে হবে।
নামাজের ১৩ ফরজ কি কি
- শরীর পাক
- কাপড় পাক
- নামাজের জায়গা পাক
- সতর ঢাঁকা
- কিবলামুখী হওয়া
- ওয়াক্তমত নামাজ পড়া
- নামাজের নিয়্যাত করা
- তাকবীরে তাহরীমা বলা
- ক্বিয়াম করা
- সূরা ফাতিহা পড়া
- রুকু’ করা
- সিজদা করা
- উভয় বৈঠকে বসা।
নামাজের ভিতরে ফরজ কয়টি ও কি কি
নামাজের ভিতরে ফরজ কয়টি ও কি কি ইতিমধ্যেই আলোচনার দ্বারা প্রকাশ পেয়েছে। তবে এখানে পয়েন্ট আকারে পর্যায়ক্রমে আবারো স্বরণার্থে লিখছি। নামাজের ভিতরে ফরজ হলো ৬টি যা নিম্নরুপ।
শুরুতে আল্লাহু আকবর বলে নামাজ শুরু করা
- দাঁড়িয়ে নামাজ পড়া
- সূরা ফাতিহা পড়া
- রুকু করা
- সাজদা করা
- শেষ বৈঠকে বসা
➡️নামাজের বাহিরে ৭ ফরজ কি কি
নামাজের ভিতরে বাহিরে ১৩ ফরজ কি কি বিষয়টির দ্বারাতো নামাজের ভিতরে ৬ ফরজ সুষ্টপষ্ট হয়ে গেছে। নামাজের বাহিরে কয় ফরজ ও কি কি এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ও বিধান। নিম্নে আবারো সহজ করে লিখছি। নামাজের বাহিরে ৭ ফরজ যেগুলো নিম্নে প্রকাশ করছি।
- শরীর পূত পবিত্র করা।
- যে কাপড়ে নামাজ পড়বেন তা পবিত্র করা।
- যে স্থানে নামাজ পড়ছেন তা পবিত্র ও পরিচ্ছন্ন হওয়া।
- পুরুষ ও মহিলার যে সতর তা আবৃত বা ঢেঁকে নামাজ পড়া।
- যে সময়ে নামাজ পড়বেন তা যথাযথ সময়ে হওয়া।
- যে দিকে মুখ করে নামাজ পড়বেন তা হতে হবে কিবলার দিকে হওয়া।
- যে নামাজ টা পড়বেন তার জন্য মনে মনে সংকল্প বা ইরাদাহ করা।
নামাজের সুন্নত কয়টি
নামাজের মধ্যে সুন্নতে মুয়াক্কাদা 12 টি যথাঃ
- দুই হাত উঠানো
- দুই হাত বাধা
- সানা পড়া
- আউযুবিল্লা পড়া
- বিসমিল্লাহ পড়া
- বলা সূরা ফাতিহার পর আমিন বলা
- প্রত্যেক উঠাবসায় আল্লাহু আকবার বলা
- রুকুর তাসবিহ বলা
- রাব্বানা লাকাল হামদ বলা
- সেজদার তাসবীহ বলা আছে।
- দরুদ শরীফ পড়া
- দোয়ায়ে মাসুরা পড়া
নামাজের ওয়াজিব ১৪টি কি কি
নামাজের ওয়াজিব ১৪টি কি কি আমরা একবার উপরে আলোচনা করেছি। আবারো এখানে ক্রমান্বয়ে লিখছি।
- সূরা ফাতিহা পড়া।
- সূরায়ে ফাতিহার সঙ্গে একটি সূরা মেলানো
- কুরআন থেকে যতটুকু সহজ হয় ততটুকু ক্বিরাত নির্ধারণ করা।
- সূরা বা ক্বেরাত পড়া এবং রুকু ও সাজদার ব্যাপারগুলোতে ধারাবাহিকতা বজায় রাখা।
- রুকু’ থেকে স্ট্রেইট দাঁড়ানো।
- দুই সাজদার মাঝে স্থির ও সোজা হয়ে উপবেশন করা।
- রুকু ও সাজদাহ ও দাঁড়ানো বিষয়গুলোতে ৩ তাসবীহ সমপরিমাণ বা মিনিমাম ১ তাসবীহ পরিমাণ স্থির হওয়া।
- মধ্যবর্তী বৈঠক করা
- ১ম ও লাস্ট বসায় আত্বাহিয়্যাতু পড়া।
- জোহর, আসর ফরয নামাজে ক্বিরাত আস্তে পড়া এবং মাগরিব, ইশা এবং ফজরে ক্বিরাত জোরে পড়া।
- বিতরের নামাজ দোয়া কুনূত পড়া।
- ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহায় তাকবীরে তাহরীমা ছাড়া বাড়তি ৬/১২ তাকবীর বলা।
- প্রত্যেক রাকা’য়াতের তরতীব বা সিরিয়াল ঠিক রাখা।
- এবং নামাজ সালাম দিয়ে শেষ করা।
লেখকের শেষ মতামত
নামাজের ফরজ কয়টি এবং নামাজের ভিতরে বাহিরে ১৩ ফরজ কি কি এখানে বিস্তারিত ও সুষ্পষ্ট করে লিখতে সচেষ্ট হয়েছি। আশা করছি আপনারা এখন থেকে অবশ্যই নামাজের ভিতরে বাহিরে ১৩ ফরজ সালাত আদায় করবেন। ফরজ নামাজের এই ১৩টি শর্ত মানা ব্যতীত নামাজ শুরু করলে নামাজ বাতিল হবে। এই শর্তগুলো প্রতিটি মুসলমানের জানাও ও মানাও ফরজ।
নামাযে কোন কারণে ফরয ভুলে বাদ পড়ে গেলে আবার নতুন করে নামায আদায় করতে হবে। অর্থাৎ আপনি যদি ভুলবশত নামাজের কোন ফরজ আদায় করতে ভুলে যান। তাহলে আপনাকে আবারও নামাজ শুরু থেকে আদায় করতে হবে। নামাজের বাহিরের সাত ফরজ কিংবা নামাজের ভিতরের ছয় ফরজের থেকে যেকোন ফরজ ছুটে গেলে নতুন করে নামাজ আদায় করতে হবে।