নাকের মাংস বৃদ্ধি হলে কি কি সমস্যা হয়

নাকের ভিতরে একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলো নাকের টনসিল বা অ্যাডিনয়েড (adenoids) অনেক সময় এই টিস্যুগুলোর অতিরিক্ত বৃদ্ধি পায়, যাকে আমরা সাধারণ ভাষায়নাকের মাংস বৃদ্ধিবলে থাকি। এটি শিশুদের মধ্যে বেশি দেখা যায়, তবে প্রাপ্তবয়স্করাও এই সমস্যায় ভুগতে পারেন। নাকের মাংস বৃদ্ধি পেলে বিভিন্ন শারীরিক জটিলতা দেখা দেয়।

নাকের মাংস বৃদ্ধি হলে কি কি সমস্যা হয়

এই ব্লগে আমরা বিস্তারিতভাবে আলোচনা করব নাকের মাংস বৃদ্ধি হলে কি ধরনের সমস্যা হতে পারে, কিভাবে এটি শনাক্ত করবেন এবং কখন ডাক্তার দেখানো প্রয়োজন।

নাকের মাংস বৃদ্ধির সাধারণ লক্ষণসমূহ

নাকের মাংস (adenoids বা nasal polyps) বৃদ্ধি পেলে যে লক্ষণগুলো দেখা যায়, সেগুলো নিম্নরূপ:

. নাক বন্ধ হয়ে যাওয়া

নাকের ভিতরে টিস্যু বড় হয়ে গেলে শ্বাসপ্রশ্বাসে বাধা সৃষ্টি করে। এতে নাক বন্ধ অনুভব হয় এবং মুখ দিয়ে শ্বাস নিতে হয়।

. ঘুমের সময় খিঁচ খিঁচ শব্দ বা ঘুমের ব্যাঘাত

নাক দিয়ে ভালোভাবে শ্বাস না নিতে পারার কারণে অনেক সময় শিশুদের ঘুমের সময় ঘোর ঘোর শব্দ হয় বা ঘুম বারবার ভেঙে যায়।

. নিঃশ্বাসে ঘ্রাণের সমস্যা

নাক বন্ধ থাকায় অনেক সময় ঘ্রাণ কমে যায় বা সম্পূর্ণভাবে চলে যেতে পারে।

. কান গলার সমস্যা

নাকের মাংস বৃদ্ধি কানের সাথে সংযুক্ত ইউস্টেশিয়ান টিউবে প্রভাব ফেলতে পারে, যার ফলে কানে চাপ বা সংক্রমণ হতে পারে। গলায় ঘন ঘন ইনফেকশন বা গলার খুসখুস ভাবও হতে পারে।

. মাথাব্যথা দমবন্ধ ভাব

নাক দিয়ে পর্যাপ্ত বাতাস চলাচল না করলে অক্সিজেন সরবরাহ কমে যায়, ফলে মাথাব্যথা, দমবন্ধ লাগা ক্লান্তি অনুভব হতে পারে।

আরো পড়ুনঃ-  কলা খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা - কাঁচা কলার পুষ্টিগুণ

কোন কোন কারণে নাকের মাংস বৃদ্ধি পায়?

নাকের মাংস বৃদ্ধির পিছনে একাধিক কারণ থাকতে পারে:

  • দীর্ঘমেয়াদী অ্যালার্জি
  • বারবার সাইনাস ইনফেকশন
  • বংশগত সমস্যা
  • নাকের ভেতরে সংক্রমণ
  • বাতাসে ধুলা বা দূষিত কণা

নাকের মাংস বৃদ্ধির জটিলতা

নাকের মাংস যদি দীর্ঘদিন ধরে চিকিৎসা অবস্থায় থাকে, তাহলে এটি নানা ধরনের জটিলতার সৃষ্টি করতে পারে:

  • ঘন ঘন সাইনাস ইনফেকশন
  • শ্রবণশক্তি কমে যাওয়া
  • ক্রনিক গলা ব্যথা
  • বাচ্চাদের ক্ষেত্রে মুখের গঠন পরিবর্তন (adenoid face)
  • ঘুমের সমস্যা ঘুমের মধ্যে দম বন্ধ হয়ে যাওয়া (Sleep Apnea)

কখন চিকিৎসকের পরামর্শ নেবেন?

যদি উপরের লক্ষণগুলো কয়েক সপ্তাহের বেশি সময় ধরে থাকে, তাহলে অবহেলা না করে একজন অভিজ্ঞ নাক কান গলা বিশেষজ্ঞ ডাক্তার এর পরামর্শ নেওয়া উচিত। তিনি প্রয়োজনীয় শারীরিক পরীক্ষা প্রয়োজনে নাকের এন্ডোস্কপি বা সিটি স্ক্যানের মাধ্যমে সমস্যা নির্ধারণ করে উপযুক্ত চিকিৎসা পরামর্শ দিতে পারবেন।

চিকিৎসা পদ্ধতি

নাকের মাংস বৃদ্ধি পেলে রোগীর শারীরিক অবস্থার ওপর ভিত্তি করে চিকিৎসা নির্ধারিত হয়। সাধারণত নিচের ধাপগুলো অনুসরণ করা হয়:

. ওষুধ

প্রাথমিক পর্যায়ে অ্যান্টিহিস্টামিন, নাকের স্প্রে, স্টেরয়েড, অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার করা হয়।

. অস্ত্রোপচার (Surgery)

যদি ওষুধে কাজ না হয় বা যদি মাংস অনেক বেশি বড় হয়, তাহলে নাকের মাংস কেটে ফেলা হয়, যাকে বলা হয় adenoidectomy বা nasal polyp removal surgery

প্রতিরোধ সতর্কতা

  • নিয়মিত নাক পরিষ্কার রাখা
  • ধুলাবালি থেকে দূরে থাকা
  • ঠান্ডাজনিত সমস্যা হলে দ্রুত চিকিৎসা নেওয়া
  • অ্যালার্জির কারণ এড়িয়ে চলা

উপসংহার

নাকের মাংস বৃদ্ধি একটি সাধারণ সমস্যা হলেও এটি দীর্ঘমেয়াদে বড় জটিলতার সৃষ্টি করতে পারে। তাই সময়মতো সমস্যাটিকে গুরুত্ব দিয়ে উপযুক্ত চিকিৎসা নেওয়া জরুরি। বিশেষ করে শিশুর ক্ষেত্রে এটি অবহেলা করা উচিত নয়, কারণ এটি তাদের শ্বাসপ্রশ্বাস, ঘুম, শ্রবণ মুখের গঠনে প্রভাব ফেলতে পারে।

Leave a Comment