গর্ভধারণের সঠিক সর্বোত্তম ১০টি উপায় – কনসিভ করার উপযুক্ত সময়

দ্রুত গর্ভধারন করা একটা মেয়ের জন্য পরম আরাধ্য স্বপ্ন। যদি কোন মেয়ে সন্তানের মুখ না দেখতে পারে তবে বেশির ভাগ সময় মনে হয় নারী জীবনই বৃথা। সারা জীবনে কোন নারী সব কিছুই পেয়েছেন কিন্তু মাতৃত্বের স্বাদ থেকে বঞ্চিত, তার জীবনের অনেক কিছুর মধ্যেও শান্তি খুজে পাওয়া দুঃসাধ্য বিষয় হয়ে দাড়াবে। মাতৃত্বের স্বাদ পেতে হলে আপনাকে গর্ভবতী হতে হবে। 

গর্ভধারণের সঠিক সর্বোত্তম ১০টি উপায়

কিন্তু অনেক সময়ই বন্ধ্যাত্ব বা অন্য কোন কারনে বিয়ের পরেও একজন নারী গর্ভবতী হতে পারে না। বার বার চেষ্টা করেও যখন ব্যার্থ হন তখন তাকে বন্ধ্যা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়ে থাকে। অনেকেরই আশা থাকে ঝুকিতে না যেয়ে বরং দ্রুত গর্ভবতী হওয়া। দ্রুত গর্ভধারনের মাধ্যমে মা ডাক শোনার আকাংখা কাজ করে।

যদিও আমাদের জানা থাকা উচিৎ যে গর্ভধারন একটি নিয়মতান্ত্রিক পক্রিয়া। আপনাকে নিয়ম মেনে সহবাসে মনোনিবেশ করতে হবে। একমাত্র সহবাসের মাধ্যমেই সাধারনত একজন নারী প্রাকৃতিক ভাবে গর্ভধারন করতে সক্ষম হয়ে তাকে। এজন্য গর্ভধারন বা দ্রুত গর্ভবতী হতে হলে সহবাসের বিকল্প নেই। তবে সেই সাথে আরো কিছু গুরুত্বপুর্ন বিষয় রয়েছে যা আপনাকে দ্রুত গর্ভবতী হতে সাহায্য করবে।

গর্ভধারণের সঠিক সর্বোত্তম ১০টি উপায়

গর্ভধারণের সঠিক সর্বোত্তম ১০টি উপায় নিম্নে উল্লেখ করা হলঃ

১। গর্ভধারণের পূর্বে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন

বাচ্চার জন্মদানের আগেই একজন স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিৎ। অর্থাৎ গর্ভধারণ এর পরিকল্পনা করার প্রায় তিন থেকে চার মাস আগে একজন স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ বা পারিবারিক চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উত্তম। 

এই চিকিৎসক আপনার ব্যক্তিগত ও পারিবারিক রোগব্যাধির ইতিহাস, আপনার স্বাস্থ্যগত অবস্থা, কোন ঔষধ খাচ্ছেন, কি খাচ্ছেন এসব বিষয় খতিয়ে দেখবেন। এছাড়া শরিরের ওজন, রক্তের পরিমান সঠিক আছে কিনা সেবিষয়েও যাচাই করবেন। 

২। গর্ভধারণে ফলিক এসিড ও ভিটামিন ‘এ’ এর গুরুত্ব

গর্ভধারণের সময় একটি বিষয় সর্বদা মনে রাখতে হবে গর্ভের সন্তানের পুষ্টি, গঠন ও সুস্বাস্থ্য মায়ের খাবারের উপর পুরোপুরি নির্ভর করে। এজন্য মাকে বেশি বেশি পুষ্টিকর খাবার, ফলমূল, ভিটামিন যুক্ত খারাব প্রভৃতি খাওয়া একান্ত প্রয়োজন। তবে এসময় অনেকের খাবারের প্রতি আগ্রহ কমে যায়। 

এই সমস্যার জন্য মা নিজে দিনে পাঁচ থেকে ছয় বার (পরিমানে কম কিন্তু বারে বেশি) পর্যপ্ত পরিমান খাবার খেয়ে দেখতে পারেন। 

৩। গর্ভধারণের জন্য ধুমপান, মদ্যপান ও নেশাদ্রব্যসমূহের ক্ষতিকর প্রভাব

ধূমপান, মদ্যপান ও নেশাদ্রব্য জাতীয় খাবার সবগুলোই স্বাস্থের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর এবং এর ক্ষতিকর প্রভাব প্রত্যেকের শরিরে (যারা সেবন করে বা যারা সেবন করে না উভয়ের) পরে এমনকি গর্ভের শিশুও এর থেকে প্রভাবমুক্ত নয়। 

বিভিন্ন গবেষণায় দেখা যায়, ধূমপান, মদ্যপান ও নেশাদ্রব্য জাতীয় খাবার সেবনের অভ্যাস গুলোর মধ্যে একটি অভ্যাসও যদি থাকে তাহলে গর্ভজাত শিশুর সময়ের আগে জন্ম নেওয়া, মিস ক্যারেজ হওয়া ইত্যাদি সমস্যা হতে পারে। 

৪। গর্ভধারণে স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়ার প্রয়োজনীতা

নিজের ‍সুস্বাস্থ্যের পাশাপাশি গর্ভের সন্তানের সুস্বাস্থ্য গঠনের জন্য প্রচুর পরিমাণ খাবার খাওয়া জরুরি। পর্যাপ্ত পরিমাণ স্বাস্থ্যকর খাবার খেতে হবে যাতে গর্ভধারণের আগেই আপনার শরীরে প্রয়োজনীয় পরিমাণ পুষ্টি উপাদান জমা হয়ে যায়। 

গর্ভাধারণের পরিকল্পনা করার সাথে সাথে প্রতিদিন প্রচুর পরিমান (প্রায় দুই বাটি) ফল, আড়াই কাপ বা বাটি নানা রকম সবজি, হোল গ্রেইন বা শাকসবজি খাবার, উচ্চ মাধ্যমিক ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ খাবার (যেমন দুধ, কমলার রস, টক দই) ইত্যাদি খেতে শুরু করুন। 

৫। গর্ভধারণের পূর্বে আপনার ওজন ঠিকঠাক আছে কিনা

গর্ভধারণের জন্য সঠিক সর্বোত্তম উপায়গুলোর মধ্যে ওজন নিয়ন্ত্রণ করা অন্যতম। আপনার ওজন বয়স ও উচ্চতা অনুযায়ী ঠিকঠাক রাখা অতীব জরুরি। গর্ভধারণের জন্য কম ওজন যেমন গর্ভধারণের সম্ভাবনা কমায় তেমনই বেশি ওজন আবার গর্ভধারণের জন্য ক্ষতিকর। 

ওজন অতিরিক্ত পরিমাণ বৃদ্ধি পেলে শরিরে মেদ-ভূড়ি বা চর্বি বৃদ্ধি পায়, যার জন্য গর্ভধারণ ও সন্তান জন্ম দেওয়া উভয় ক্ষেত্রে জটিলতা দেখা দেয়। 

৬। গর্ভধারণের পূর্বে নিয়মিত ব্যায়াম করা

সুস্বাস্থ্যের জন্য ব্যায়াম বা কায়িক শ্রম অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, শুধু তাই নয় শরীরকে রোগ মুক্ত রাখতেও ব্যায়াম করা খুবই প্রয়োজন। কিছু বিষয় আছে যা আপনা-আপনি হয়ে ওঠে না, প্রতিদিনের চর্চার মাধ্যমে অভাসে পরিনত হয়। তেমনই একটি বিষয় হলো ব্যায়াম। 

বিশেষ করে উচ্চরক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে, ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে, শরীরের ফিটনেস ঠিক রাখতে প্রভৃতি প্রয়োজনে ব্যায়ম করা অত্যন্ত দরকারি। 

৭। গর্ভধারণের পূর্বে সংক্রমণ এড়িয়ে চলুন 

সংক্রামণ রোগ-ব্যাধি সহজেই সবার মাঝে ছড়িয়ে পড়ে। মায়ের শরীরে কোন সংক্রমণ রোগ থাকলে তা গর্ভস্থ শিশুর শরীরেও ছড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি  থাকে। তাই এ সংক্রামণ রোগ সম্পর্কে আগে থেকে সচেতন হওয়া উচিত। বাইরের খোলা দূষিত খাবারে বিভিন্ন রোগ জীবাণু ব্যাকটেরিয়া বা ভাইরাস থাকার কারণে ভুলেও খাওয়া উচিত নয়।

এগুলো খাবার খাওয়া আপনার নিজের ও গর্ভের শিশুর জন্য বিপদজনক হতে পারে। এছাড়াও এলার্জি জাতীয় বা যে খাবার খেলে সংক্রমিত রোগের প্রভাব বৃদ্ধি পায় সেগুলো খাবার এড়িয়ে চলা উত্তম।

৮। আপনার মাসিক চক্র বুঝুন 

আপনার পিরিয়ড ট্র্যাক করা এবং মাসিক চক্র বোঝা এতে করেআপনি কখন সবচেয়ে উর্বর থাকেন তা নির্ধারণ করতে সাহায্য করবে। 

৯। যৌন মিলনের পর বিছানায় শুয়ে থাকুন 

যৌন মিলনের পরে অন্তত ১৫ থেকে ২০ মিনিট বিছানায় শুয়েই থাকুন। এতে করে গর্ভবতী হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যাবে কেননা এই অপেক্ষার সময় শুক্রাণুকে জরায়ুমুখে যেতে এবং সেখানে থাকতে দেয়। 

১০।  একটি সুস্থ জীবন যাপন 

প্রতিদিন পর্যাপ্ত ব্যায়াম করা, পুষ্টিকর খাবার খাওয়া এবং হাইড্রেটেড থাকার জন্য প্রচুর পানি পান করার দিকে মনোযোগ দেওয়া। 

কনসিভ করার উপযুক্ত সময়

গর্ভবতী হওয়ার সবচেয়ে ভালো সময় হল ডিম্বস্ফোটনের সময়কালে, যে সময়কালে ডিম্বাশয় থেকে একটি পরিপক্ক ডিম মুক্ত হয়ে যায়। যদিও শুক্রাণু যৌনতার পর 48 থেকে 72 ঘন্টা পর্যন্ত বেঁচে থাকতে পারে, পরিপক্ক ডিম্বাণু ডিম্বস্ফোটনের পর মাত্র 12 থেকে 24 ঘন্টার জন্যই বাঁচতে পারে। এর মানে হল যে মহিলা ডিম্বাণুটি মুক্তি পাওয়ার পর মাত্র 12-24 ঘণ্টার মধ্যেই নিষিক্ত হতে পারে। 

আরো পড়ুনঃ-  গর্ভাবস্থায় হিমোগ্লোবিন কত হলে রক্ত দিতে হয় বিস্তারিত জানুন

অতএব, আপনার গর্ভধারণের সম্ভাবনা বাড়ানোর জন্য, ডিম্বস্ফোটনের মোটামুটি 2-3 দিন আগে যৌন সঙ্গম করা ভাল। এটি নিশ্চিত করে যে, ডিমটি অবশেষে যখন মুক্ত হয় তখন সেটিকে নিষিক্ত করার জন্য ফ্যালোপিয়ান টিউবে যথেষ্ট পরিমাণে শুক্রাণু থাকে।

আপনার ডিম্বস্ফোটন কখন ঘটবে তার পূর্বাভাস পেলে, আপনার শিশু গর্ভে ধারণ করাতে অত্যন্ত সাহায্য হতে পারে। কোনও মহিলার গড় ২৮ দিনের মাসিক চক্রের মধ্যে থাকলে, ডিম্বস্ফোটন মাত্র একবার ঘটে।

যাইহোক, ২৮ দিনের মাসিক চক্রের মহিলারা সংখ্যালঘুদের মধ্যে পড়েন, কারণ বেশিরভাগ মহিলাদের ২৪ থেকে ৩৫ দিনের মধ্যে মাসিক চক্র থাকে। যেহেতু চক্রের শেষ দিনের বা যে দিন আপনার পিরিয়ড হয় তার ১৪ দিন আগে ডিম্বস্ফোটন ঘটে, এর মানে হল যে ২৪ দিনের মাসিক চক্রের মহিলার জন্য ১০ তম দিনে বা ৩৫ দিনের মাসিক চক্রের কোন মহিলার ২১ তম দিনে এটি হতে পারে।

নিয়মিত মাসিক চক্র যুক্ত মহিলারা প্রতি মাসে ডিম্বস্ফোটনের সময়ের পূর্বাভাস পেতে, ডিম্বস্ফোটন ক্যালকুলেটরের মতো ডিভাইস ব্যবহার করতে পারেন। উপরন্তু, আপনার ঋতু পর্যায় জুড়ে আপনার হরমোন মাত্রা পরীক্ষা করে যে ডিম্বস্ফোটন পূর্বাভাস কিট, সেটি আপনার কোন দিন ডিম্বস্ফোটন হবে তা নির্ধারণ করতে সক্ষম হবে।

অনিয়মিত পিরিয়ড যুক্ত নারীদের ক্ষেত্রে, কখন ডিম্বস্ফোটন ঘটবে তার পূর্বাভাস পাওয়া একটু কঠিন হতে পারে। আপনার মাসিক চক্রটি যদি অনিয়মিত হয়, তবে আপনি নিম্নলিখিত লক্ষণগুলি সন্ধান করতে পারেন যা ডিম্বস্ফোটন ঘটছে তা নির্দেশ করতে পারে:

শরীরের তাপমাত্রার কোন বৃদ্ধি হচ্ছে কিনা খেয়াল করা 

আপনার শরীরের মৌলিক তাপমাত্রা হল বিশ্রামের সময় আপনার শরীরের তাপমাত্রা। এই তাপমাত্রা ডিম্বস্ফোটন প্রক্রিয়ার সময় সামান্য বৃদ্ধি পায়। আপনি আপনার বিছানা থেকে ওঠার আগে প্রতিদিন সকালে একটি থার্মোমিটার ব্যবহার করে আপনার শরীরের তাপমাত্রা পরিমাপ করুন। আপনি আপনার রেকর্ডিং থেকে আপনার তাপমাত্রার ধরণগুলি সনাক্ত করতে পারেন। তাপমাত্রা বৃদ্ধির 2-3 দিন আগে ফার্টিলিটি সর্বোচ্চ থাকবে।

যোনি স্রোতে কোন পরিবর্তন হচ্ছে কিনা খেয়াল করা

ভিজা এবং চটচটে যোনি স্রোত বৃদ্ধি পেলে লক্ষ্য রাখুন, যা ডিম্বস্ফোটনের ঠিক আগে ঘটে। ডিম্বস্ফোটনের পরে, সার্ভিকাল মিউকাস কমে যায় এবং ঘন ও থকথকে দেখতে লাগে।

সেফ পিরিয়ড ক্যালকুলেটর

একজন নারীর দেহকে সন্তান প্রজননের উপযুক্ত করে তোলার জন্য যেসব অঙ্গ ও প্রক্রিয়া রয়েছে, তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে নারীর মাসিক ঋতুস্রাব (Menstruation)। ঋতুস্রাবের সাথে সম্পর্কিত হচ্ছে ডিম্বস্ফোটন বা অভুলেশন (Ovulation) । নারীর অভুলেশনের পর ডিম্বাণুর সাথে পুরুষের শুক্রাণু মিলিত হয়ে জরায়ুতে নিষিক্ত হয় এবং গর্ভধারণের প্রক্রিয়া শুরু হয়। 

তার মানে, নারীর অভুলেশনের সময়টুকু বাদ দিয়ে বাকি সময় অরক্ষিত শারীরিক সম্পর্কের জন্য নিরাপদ। এ সময় কোনোরকম জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি ব্যাবহার না করেও শারীরিক সম্পর্ক করা যায় এবং এতে গর্ভধারণের সম্ভাবনা থাকে না বললেই চলে। এক্ষেত্রে গর্ভধারণের সম্ভাবনামুক্ত যে সময়টি পাওয়া যাচ্ছে শারীরিক সম্পর্ক করার জন্য, এটিকেই বলা হয় “ সেফ পিরিয়ড” যাকে প্রাকৃতিক পরিবার পরিকল্পনা/ ন্যাচারাল বার্থকন্ট্রোল / রিদম মেথডও বলা হয়।

যাঁরা এখনই সন্তান নিতে চাইছেন না, আবার নিয়মিত কোনো জন্মনিয়ন্ত্রণব্যবস্থা (যেমন পিল বা কনডম) ব্যবহারেও অনীহা, তাঁদের জন্য ন্যাচারাল মেথড একটি উপায় হতে পারে। এটা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা কর্তৃক স্বীকৃত একটি পদ্ধতি। এ পদ্ধতিতে ওভুলেশন বা ডিম্বাণু স্ফুরণের সময়টি হিসাব করে ওই সময়ে সহবাস বন্ধ রেখে বা স্বল্প সময়ের জন্য কোনো জন্মনিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে।

কীভাবে গণনা করতে হবে

যে নারীরা প্রাকৃতিক বা ন্যাচারাল পদ্ধতি ব্যবহার করতে চান, তাঁদের পূর্ববর্তী ছয় মাসের মাসিকের হিসাব রাখতে হবে। একবার মাসিক শুরু হওয়া থেকে পরবর্তী মাসিক শুরু হওয়া পর্যন্ত কত দিনের ব্যবধান থাকে, তা লিখে রাখতে পারলেই ভালো। তারপর সবচেয়ে সংক্ষিপ্ত ব্যবধানের মাসিকচক্র থেকে ১৮ দিন বিয়োগ করতে হবে আর সবচেয়ে দীর্ঘ মাসিক চক্র থেকে ১১ দিন বিয়োগ করতে হবে।

যেমন কারও মাসিকচক্রের হিসাব যদি এমন হয় যে ২৫ থেকে ৩০ দিন, তাহলে হিসাবটা হবে:

২৫-১৮ = ৭ ৩০-১১ = ১৯

তাহলে তার ওভুলেশনের সম্ভাবনা মাসিকের ৭ম থেকে ১৯তম দিন পর্যন্ত। এ সময়টাকে ডেঞ্জার পিরিয়ড বা ফার্টাইল পিরিয়ড বলে। এ সময় সহবাস বন্ধ রাখা বা স্বামী কনডম ব্যবহার করলে গর্ভধারণের ঝুঁকি কমে যায়।

১। ক্যালেন্ডার পদ্ধতি (Calendar Method)

এক মাসিক থেকে আরেক মাসিকের দূরত্ব, মাসিক চলার সময়কাল ইত্যাদি নিয়মিত হতে হবে। এটি বুঝার জন্য বিগত ৬ মাসের মাসিকের হিসাবটি খেয়াল রাখতে হবে।

হিসাবের সুবিধার্থে ক্যালেন্ডারে দাগ দিয়ে রাখতে পারেন। যাদের ঋতুচক্র একদম নিয়মিত অথবা যাদের শেষ ৬ মাসের ঋতুচক্রের গড় দৈর্ঘ্য ২৬ থেকে ৩২ দিনের মধ্যে এবং সর্বনিম্ন ও দীর্ঘতম ঋতু চক্রের মধ্যে পার্থক্য ৭ দিন বা তার কম সময়ের, তারাই নিরাপদে এ পদ্ধতি ব্যবহার করতে পারবেন। সবচেয়ে কম যত দিন পর মাসিক হয়, তা থেকে ১৮ দিন বাদ দিতে হবে। 

পিরিয়ড শুরুর প্রথম দিন থেকে এ দিনটিই হলো প্রথম অনিরাপদ দিন। আবার সবচেয়ে বেশি যতদিন পর পিরিয়ড হয়, তা থেকে ১১ দিন বাদ দিলে মাসিক শুরুর প্রথম দিন থেকে এ দিনটিই হলো শেষ অনিরাপদ দিন।  

মনে করুন আপনার ২৬ থেকে ৩০ দিন অন্তর অন্তর মাসিক হয়। তাহলে ২৬ কে ১৮ দিয়ে বিয়োগ করলে ৮ আসে, অর্থাৎ পিরিয়ড শুরুর পর থেকে প্রায় ৮ দিন আপনার জন্য নিরাপদ, মাসিক ভালো হওয়ার প্রে এ দিনগুলোতে কোনও পদ্ধতি ব্যবহার না করেও সহবাস অনায়াসেই করা সম্ভব। ৯ম দিন থেকে অনিরাপদ দিন শুরু। তাই এ দিন থেকে সহবাসে সংযত হতে হবে। ৩০ দিন হল দীর্ঘতম মাসিকচক্র। 

তাই ৩০-১১=১৯, অর্থাৎ ১৯তম দিনটিই হল শেষ অনিরাপদ দিন। ২০তম দিন থেকে আবার অবাধে সহবাস করা যেতে পারে। এতে গর্ভধারণের সম্ভাবনা নেই।  অর্থাৎ প্রতি মাসিকের শুরু থেকে প্রথম ৮ দিন ( মাসিক চলাকালীন সহবাস নিষেধ) এবং পরের মাসিক শুরুর আগের ১১ দিন আপনার জন্য নিরাপদ। অন্যদিকে ৯ম থেকে ১৯তম দিনের মধ্যে অবাধ সহবাসের ফলে গর্ভধারণ হতে পারে।

আরো পড়ুনঃ-  এক্টোপিক প্রেগন্যান্সির পর বাচ্চা নেওয়ার নিয়ম - এক্টোপিক প্রেগন্যান্সির লক্ষণ

২।  শরীরের তাপমাত্রা পদ্ধতি

ওভ্যুলেশনের সময় শারীরিক তাপমাত্রা বৃদ্ধি পায়। কয়েক মাস প্রতিদিন তাপমাত্রা পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে এটি বুঝা যায়। মাসিক শুরুর প্রথম দিন থেকে প্রতিদিন একই সময়ে তাপমাত্রা মাপতে হবে। ঘুম থেকে উঠবার পরই মাপাটা ভাল। 

অভুলেশনের আগে শরীরের তাপমাত্রা সাধারণত ৯৭ থেকে ৯৭.৫ ডিগ্রী ফারেনহাইট থাকে। অভুলেশনের পর প্রজেসটেরণ হরমোনের কারনে তাপমাত্রা ০.৫ ডিগ্রী বেড়ে যায়। সাধারণত ডিম্ব স্ফুরণের ১-২ দিন পর তাপমাত্রার এই পরিবর্তন ধরা পড়ে। সাবধানতার জন্য তাপমাত্রা বাড়ার পরবর্তী ৩ দিন পর্যন্ত সহবাসে সংযত হতে হবে।

দ্রুত গর্ভবতী হওয়ার উপায়

কিভাবে দ্রুত গর্ভবতী হওয়া যায় এবং প্রাকৃতিক উপায়ে স্বাস্থ্যবান শিশুর গর্ভধারণ করার জন্য কয়েকটি দরকারী কৌশল এবং পরামর্শের সাথে আপনি একটি শিশুকে গর্ভে ধারণের জন্য ব্যবহার করতে পারেন এমন পদ্ধতিগুলি নিয়ে আলোচনা করব। দ্রুত গর্ভধারণ করার উপায় নিম্নে উল্লেখ করা হলঃ

১। সঠিক নিয়মে সহবাস

গর্ভধারনের শর্তই হলো সহবাসের মাধ্যমে পুরুষের বীর্যের শুক্রানু নারীর জরায়ুতে প্রবেশের মাধ্যমে ডিম্বানুর সাথে নিষেক হওয়া। সঠিক নিয়মে সহবাসের ক্ষেত্রে কিছু জিনিস অবশ্যই আপনার খেয়াল রাখতে হবে।

২। পজিশন

সহবাসের ক্ষেত্রে সেক্স পজিসন সবচেয়ে গুরুত্বপুর্ন বিষয়গুলির একটি। ধরুন আপনি ফ্যান্টাসি থেকে হার্ডকোর বা উগ্র ধরনের এমন কোন পজিসনে সেক্স করলেন যার দ্বারা আপনার শুক্রানু স্ত্রীর ডিম্বানু অব্দি পৌছানোর সম্ভাবনা নেই। সেক্ষেত্রে এই সহবাসে সন্তান লাভ করা সম্ভবপর হবেনা। 

এজন্য সাধারনত মিশনারি পজিশনকে গবেষকেরা সবসময় প্রাধান্য দেন। কারন মিশনারি পজিশনে স্ত্রীর উপরে স্বামী থাকে এর কারনে লিঙ্গ যোনীর অনেকটা ভেতর অব্দি যায় যার ফলে সহজেই পুরুষের শুক্রানু নারীর জরায়ুতে অবস্থান করে। এছাড়াও কিছু পজিশন রয়েছে যার মাধ্যমে সহজে সঙ্গমের পরিপুর্নতা অর্জনের সাথে দ্রুত গর্ভধারনেও তা সাহায্য করে। সহবাসের সঠিক পজিশন নিয়ে এখানে আলোচনা করা হয়েছিল। সম্ভব হলে চোখ বুলিয়ে নিতে পারেন।

৩। নারীর অর্গাজম 

পুরুষের অর্গাজম বলতে তেমন কিছু নেই। বীর্য বাহির হওয়ার মাধ্যমেই পুরুষের সহবাসের তৃপ্তি আসে। কিন্তু নারীর ক্ষেত্রে প্রকৃত অর্গাজম না হলে সে যেমন সন্তুষ্ট হতে পারেনা ঠিক তেমনি তা নারীর সন্তান ধারনেও প্রভাব ফেলে। তাই পুরুষের উচিৎ নিজের তৃপ্তির পাশাপাশি নারীর অর্গাজমের প্রতি মনোযোগ দেওয়া।

৩। সহবাস পরবর্তি নারীর শুয়ে থাকা

সহবাসের পর পরই নারী যেন উঠে না যায়। কিছু সময় শুয়ে থাকার মাধ্যমে পুরুষের শুক্রানু নারীর জরায়ুতে সহজে প্রবেশ করতে পারে। নারী সহবাসের পর পরই উঠে হাটাহাটি করলে শুক্রানু বের হয়ে যাওয়ার বা ডিম্বানু পর্যন্ত পৌছাতে বাধা প্রাপ্ত হওয়ার সমুহ সম্ভাবনা থাকে।

৪। অধিক সহবাস

আপনি যদি দ্রুত গর্ভবতী হতে চান, তাহলে আপনাকে বেশি বেশি সহবাস করতে হবে। সঠিক নিয়ম মেনে বেশি বেশি সহবাস করলে দ্রুত গর্ভবতী হওয়ার সম্ভাবনা ততটাই বাড়বে।

৫। সঠিক সময়ে সহবাস

সহবাসের ক্ষেত্রে সময়ের দিকে খেয়াল রাখা গুরুত্বপুর্ন। এর জন্য যে বিষয়গুলি আপনার বিবেচনায় আনতে হবে তা হলো-

মাসিক চক্রঃ মাসিকের যে চক্র থাকে নারীদের এর সাথে মিল রেখে সহবাস গুরুত্বপর্ন কেননা ধরুন আপনি মাসিকের ১-২ দিন পুর্বে প্রচুর সহবাস করলেন কিন্তু জেনে রাখুন এর থেকে ফলাফল পাওয়ার সম্ভবনা কম। এজন্য মাসিক চক্র খেয়াল করা গরুত্বপুর্ন।

সঠিক খাদ্যাভাসঃ সহবাসে আপনার শরীরে প্রচুর ধকল যায়। এটা খুবই স্বাভাবিক। পুরুষ এবং মহিলার উভয়ের জন্য সহবাস করার পাশাপাশি ভাল মানের আদর্শ খাবার গ্রহন দ্রুত গর্ভধারনকে পুর্নতা দিতে সহায়ক হয়। সঠিক খাদ্যাভাসের মধ্যে মিল খুজতে হবে-

পুষ্টিকর খাদ্য গ্রহনঃ পুষ্টিকর খাবারের কোন বিকল্প নেই। নারী বা পুরুষ উভয়েরই সঠিক মাত্রায় পুষ্টিকর খাবার গ্রহন করতে হবে। যার ফলে আপনি দ্রুততর সময়ে গর্ভধারনের মতো কাঙ্খিত লক্ষ্যে পৌছাতে পারেন।

শুক্রানু বৃদ্ধি ও ডিম্বানু বৃদ্ধির খাবারঃ যে সকল খাবারে সাধারনত পুরুষের শুক্রানু বৃদ্ধি পায় সেই ধরনের খাবার খাওয়া উচিৎ। অনুরুপ ভাবে নারীদের জন্যও যে খাবারে ডিম্বানুর পরিমান বাড়ে সেই ধরনের পুষ্টি গুন সম্পন্ন খাবার খাওয়া দরকার। শুক্রাণু বৃদ্ধির উপায়: যে খাবারে পুরুষের শুক্রাণুর সংখ্যা বাড়ে লিখাটি পড়তে পারেন। আশা করছি শুক্রানু বৃদ্ধিতে ভুমিকা রাখবে এই নিবন্ধটি।

ক্ষতিকর খাবার বর্জনঃ ধুমপান, মদ্যপান ও অতিরিক্ত ক্যাফেইন জাতিয় খাবার স্বাস্থ্যের জন্য যেমন ক্ষতিকর তেমনি এসব খাবারে আপনার বন্ধ্যাত্বের আশংকা বেড়ে যেতে পারে। তাই পর্যাপ্ত পরিমানে ভাল খাবার গ্রহন করুন এবং ক্ষতিকারক খাবার থেকে যতটুকু সম্ভব বিরত থাকুন।

হরমোনের আকারে পাওয়া যায় এমন কিছু জন্ম নিয়ন্ত্রকগুলি ব্যবহার বন্ধ করার পরেও আপনার ফার্টিলিটি কমাতে পারে। জন্মনিয়ন্ত্রক বড়ির ক্ষেত্রে, তার হরমোন প্রভাব দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে না এবং আপনি এই বড়িগুলি ব্যবহারের পূর্বেকার আপনার নিয়মিত মাসিক চক্রগুলিতে ফিরে যেতে সক্ষম হবেন। আপনি যদি ইন্ট্রাইউটেরিন ডিভাইস (আইইউডি) ব্যবহার করেন।

বাচ্চা কনসিভ হওয়ার লক্ষণ

আপনি কি গর্ভবতী? কিছু লক্ষন বা উপসর্গের উপস্থিতির উপর ভিত্তি করে এটা নির্ণয় করা যেতে পারে। সাধারণত মাসিক/পিরিয়ড মিস হওয়ার ১ বা ২ সপ্তাহ মাঝে কিছু লক্ষণ দৃশ্যমান হয়ে উঠতে পারে। এসব লক্ষণ প্রতি ১০ জনের ৭ জনের ক্ষেত্রেই গর্ভধারণের ৬ সপ্তাহ বা কমবেশি ৪৫ দিনের মাঝে দেখা যায়।

১. খাবারে অনীহা

এসময় বমি ভাব বা খাদ্যে অনীহার কোন স্পষ্ট ব্যাখ্যা নেই। তবে খুব সম্ভবত আপনার শরীরে ক্রমবর্ধমান ইস্ট্রোজেন হরমোনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া এটা। এসময় আপনার খুব পছন্দের কোন খাবার খেতে বিস্বাদ লাগলেও আশ্চর্য হবেন না। বরং এরকমই হয়ে থাকে!

২. মন মেজাজের উঠানামা

এসময় মন মেজাজের কোন ঠিক ঠিকানা না থাকাই স্বাভাবিক। এমন মুড সুইংয়ের কারণ বেশ কয়েকটা। সম্ভবা মায়ের শরীরে এসময় হরমোন বদলের কারণে ব্রেনের অভ্যন্তরে মেসেজ বহনকারী নিউরোট্রান্সমিটারের পরিমানে পরিবর্তন আসে। এই পরিবতৃন বিভিন্ন জনে বিভিন্নরকম হয়ে থাকে। সম্ভবা মা এসময় বেশ আবেগী অনুভব করেন, আবার অনেকে এসময় বিষন্নতা/দুশ্চিন্তায় ভোগেন।

আরো পড়ুনঃ-  গর্ভাবস্থায় কি কি ফল ও সবজি খাওয়া যাবে না

৩. বমি বমি ভাব ও বমি হওয়া

প্রায় অর্ধেকের মতো গর্ভবতী মহিলা তাদের দ্বিতীয় ট্রিমেস্টারের শুরুতে বমিভাব থেকে মুক্তি পায়, আর বাকিদের ক্ষেত্রে এই সমস্যা আর মাসখানেক দীর্ঘায়িত হতে পারে। তবে কখনোই এই বমিভাব একেবারে নিরাময় হয় না। খুব কম সংখ্যক ভাগ্যবতী মা এ থেকে মুক্তি পেয়ে থাকেন।

এই উপসর্গগুলি সাধারণত গর্ভধারণের ছয় থেকে বারো সপ্তাহের মধ্যে শুরু হয় এবং শরীরে হরমোনের মাত্রা বৃদ্ধি, বিশেষ করে এইচসিজি (hCG) এবং প্রোজেস্টেরন হরমোনের পরিবর্তনের কারণে ঘটে। বেশিরভাগ মহিলার ক্ষেত্রে এই লক্ষণগুলি দ্বিতীয় ত্রৈমাসিকের দিকে কমে যায়, তবে কিছু ক্ষেত্রে গর্ভাবস্থার পুরো সময় জুড়েই থাকতে পারে ।

৪. স্তনে পরিবর্তন 

গর্ভবতী হওয়ার শুরুর দিকেই স্তনে কিছু উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন দেখা দিতে পারে, যা গর্ভাবস্থার একটি সাধারণ লক্ষণ হিসেবে বিবেচিত হয়। গর্ভধারণের পরে হরমোনের পরিবর্তনের কারণে স্তনগুলি আরও কোমল এবং সংবেদনশীল হয়ে ওঠে। প্রোজেস্টেরন এবং এস্ট্রোজেন হরমোনের মাত্রা বৃদ্ধির ফলে স্তনের আকার বৃদ্ধি পায়, এবং কখনও কখনও স্তনে ব্যথাও অনুভূত হতে পারে। 

এছাড়াও, স্তনের বোটার চারপাশের অংশ, যাকে অ্যারিওলা বলা হয়, তা গাঢ় হয়ে যেতে পারে এবং সেখানে ছোট ছোট গোটা দেখা দিতে পারে। এই পরিবর্তনগুলো শরীরের প্রস্তুতির একটি অংশ, যা ভবিষ্যতে শিশুকে দুধ পান করানোর জন্য স্তনকে প্রস্তুত করে।

৫. ক্লান্তি 

গর্ভবতী হওয়ার প্রথম দিকে ক্লান্তি বা অবসাদ অনুভব করা একটি খুবই সাধারণ লক্ষণ। গর্ভধারণের পরে শরীরে প্রোজেস্টেরন হরমোনের মাত্রা উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পায়, যা শরীরকে শিথিল করতে এবং গর্ভাবস্থার জন্য প্রস্তুত করতে সাহায্য করে। তবে এই হরমোনের বৃদ্ধি শরীরের শক্তি হ্রাস করে, ফলে অতিরিক্ত ক্লান্তি এবং ঘুমঘুম ভাব দেখা দেয়। 

পাশাপাশি, শরীরে আরও রক্ত তৈরি হওয়ার প্রয়োজন হয়, যা হৃদপিণ্ডের কাজের পরিমাণ বাড়িয়ে দেয় এবং এটি ক্লান্তির কারণ হতে পারে। গর্ভাবস্থার শুরুর দিকের এই ক্লান্তি সাধারণত দ্বিতীয় ত্রৈমাসিকে কমে আসে, তবে কিছু মায়েদের জন্য এটি গর্ভাবস্থার পুরো সময় জুড়েই স্থায়ী হতে পারে। পর্যাপ্ত বিশ্রাম, পুষ্টিকর খাদ্য গ্রহণ, এবং পর্যাপ্ত পানি পান ক্লান্তি মোকাবিলায় সহায়তা করে।

৬. প্রস্রাবের পরিমাণ বেড়ে যাওয়া 

গর্ভবতী হওয়ার শুরু থেকেই প্রস্রাবের পরিমাণ বেড়ে যাওয়াও একটি সাধারণ লক্ষণ হিসেবে দেখা যায়। গর্ভধারণের পরে শরীরে হরমোনের পরিবর্তন এবং রক্তের পরিমাণ বৃদ্ধি পায়, যা কিডনির মাধ্যমে অতিরিক্ত তরল প্রস্রাবের আকারে নির্গত হতে শুরু করে।

এছাড়াও, প্রস্রাবের পরিমাণ বাড়ার আরেকটি কারণ হলো গর্ভাশয় (uterus) বড় হতে শুরু করে, যা মূত্রথলি বা ব্লাডারের ওপর চাপ সৃষ্টি করে। এর ফলে প্রস্রাবের পরিমাণ বৃদ্ধি পায় এবং ঘন ঘন প্রস্রাবের প্রয়োজন হয়। গর্ভাবস্থার সময় অতিবাহিত হওয়ার সাথে সাথে এই লক্ষণটি আরও প্রকট হতে পারে, বিশেষ করে রাতে ঘুমের মধ্যে বারবার প্রস্রাবের তাগিদ অনুভূত হতে পারে। 

এই পরিস্থিতে অবহেলাস্বরূপ পানি কম পান করা যাবে না বরং বার বার প্রস্রাবের বেগ হলেও পর্যাপ্ত পানি করা উচিৎ

৭. মেজাজ পরিবর্তন

গর্ভবতী হওয়ার শুরুর দিকে মেজাজ পরিবর্তন যাওয়া একটি সাধারণ লক্ষণ, যা অনেক মহিলার ক্ষেত্রে দেখা যায়। গর্ভধারণের পরে শরীরে হরমোনের উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন ঘটে, বিশেষ করে প্রোজেস্টেরন ও এস্ট্রোজেনের মাত্রা বৃদ্ধি পায়, যা মস্তিষ্কের বিভিন্ন নিউরোট্রান্সমিটারকে প্রভাবিত করে। 

এর ফলে মেজাজের ওঠানামা, উদ্বেগ, অথবা অস্থিরতা দেখা দিতে পারে। কিছু ক্ষেত্রে গর্ভবতী মায়েরা অল্প কারণেই আবেগপ্রবণ হয়ে পড়তে পারেন, যেমন হঠাৎ কান্না পেয়ে যাওয়া বা অতিরিক্ত খুশি বা বিষণ্ণতা অনুভব করা।

এছাড়াও, শারীরিক পরিবর্তন, ক্লান্তি, এবং অনাগত সন্তানের চিন্তা মেজাজের ওপর প্রভাব ফেলতে পারে। এই মেজাজের পরিবর্তন সাধারণত গর্ভাবস্থার প্রথম ত্রৈমাসিকে বেশি লক্ষ্য করা যায়, তবে কিছু মায়েদের ক্ষেত্রে এটি পুরো গর্ভাবস্থায়ও থাকতে পারে। পারিবারিক সহযোগিতা, পর্যাপ্ত বিশ্রাম  এই সময়ে মানসিক চাপ কমাতে সহায়তা করে।

 ৮. অবসন্নবোধ

মাঝেমাঝেই আচমকা ক্লান্ত বোধ করছেন? কিংবা ক্লান্তিতে ভেঙ্গে পড়ছেন? আসলে কেউই এখন পর্যন্ত ব্যাখ্যা করতে পারেনি সন্তান সম্ভবা মা’র প্রথম দিকের ক্লান্তির কারণ কী। সম্ভবত প্রোজেস্ট্রেরন হরমোনের ক্রমবর্ধমান প্রবাহ আপনাকে এই ঘুম ঘুম অনুভুতি দিচ্ছে। এছাড়াও মর্নিং সিকনেস ও বার বার প্রস্রাব করাও আপনার ক্লান্তিবোধ বাড়াতে কাজ করছে।

৯. পেট ফোলা 

গর্ভবতী অনেক মায়েদের ক্ষেত্রে গর্ভাবস্থার প্রাথমিক পর্যায়ে পেট ফুলে বা ফেপে থাকে। এটি মূলত প্রোজেস্টেরন হরমোনের মাত্রা বৃদ্ধি এবং শরীরের বিভিন্ন পেশী ও লিগামেন্টের শিথিল হওয়ার কারণে ঘটে। এই হরমোনটি গর্ভাশয়ের পেশীগুলিকে শিথিল করতে সহায়তা করে, কিন্তু এটি হজম ব্যবস্থার ওপরও প্রভাব ফেলে, ফলে হজম ধীরগতিতে হয় এবং পেটে গ্যাস বা ফোলাভাব তৈরি হয়। 

অনেক মহিলার ক্ষেত্রেই পেটের এই ফোলাভাব গর্ভধারণের প্রথম দিকে খুবই স্বাভাবিক, যা প্রায় মাসিক পূর্ববর্তী ফোলাভাবের মতো অনুভূত হতে পারে।

১০. হালকা রক্তপাত বা স্পটিং

গর্ভবতী হওয়ার শুরুর দিকে হালকা রক্তপাত বা স্পটিং দেখা দিতে পারে। এই রক্তপাত সাধারণত ইমপ্ল্যান্টেশন ব্লিডিং নামে পরিচিত, যা তখন ঘটে যখন নিষিক্ত ডিম্বাণুটি জরায়ুর দেয়ালে নিজেকে সংযুক্ত করে। এটি সাধারণত গর্ভধারণের ৬ থেকে ১২ দিনের মধ্যে ঘটে এবং মাসিকের রক্তপাতের তুলনায় অনেক হালকা হয়। রক্তের রঙ সাধারণত হালকা গোলাপী বা বাদামী হতে পারে এবং এটি কয়েক ঘণ্টা থেকে কয়েক দিন পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে 

লেখকের শেষ মতামত

এই ছিল আজকের গর্ভধারণের সঠিক সর্বোত্তম ১০টি উপায় এবং কনসিভ করার উপযুক্ত সময় সম্পর্কিত সকল তথ্য এখানে সংক্ষেপে বিস্তারিত জানাতে চেষ্টা করেছি। এর বাইরেও আপনার কোনো প্রশ্ন থাকলে তা কমেন্ট করে জানাবেন।

তো বন্ধু আশা করছি আপনি আমার এই পোস্টটি পড়ে গর্ভধারণের সঠিক সর্বোত্তম ১০টি উপায় কি তা জানতে পেরেছেন। এরপরও বুঝতে অসুবিধা হলে কমেন্ট করে জানাবেন। আর্টিকেলটি আপনার পরিচিতদের মাঝে শেয়ার করে দিতে পারেন। এতে করে তারাও গর্ভধারণের সঠিক সর্বোত্তম ১০টি উপায় সম্পর্কে জানতে পারবে। ধন্যবাদ।

আমি সহ আমার টিম প্রতিনিয়ত কাজ করি অনলাইন জগতে বিভিন্ন তথ্য প্রদানের মাধ্যমে সবার জ্ঞান ও দক্ষতা বৃদ্ধিতে। আমাদের সম্পর্কে আপনার কোন প্রশ্ন বা মতামত প্রদান করতে আমাদের যোগাযোগ পেইজ ব্যবহার করুন অথবা নিচে কমেন্ট করুন।

Leave a Comment