আমাদের এই পৃথিবীতে কেউ কেউ দু’মুঠো ভাত পায়না আবার কারো কারো সামনে হাজার খাবার থাকলেও তার খেতে ইচ্ছে করেনা। অর্থাৎ খাবার সামনে থাকলে তার খাবার রুচি থাকে না। এজন্য আমরা অনেকেই রুচির সিরাপ কোনটা ভালো এবং রুচি হওয়ার ওষুধ সম্পর্কে খোঁজাখুঁজি করে থাকি।
এর কারণে শরীরের ওজন কমতে থাকে এবং নানা রকম শারিরীক সমস্যা দেখা দেয়। পেটে খিদে মুখে রুচি নেই তাহলে আপনি এই সমস্যার জন্য কিছু রুচির ট্যাবলেট খেতে পারেন। রুচির ট্যাবলেট আপনার মুখের রুচি ফিরিয়ে আনতে সাহায্য করবে। তবে চলুন জেনে নেওয়া যাক মুখে রুচি হওয়ার ট্যাবলেট এবং মুখে রুচি না থাকার কারণ কি এই সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য।
রুচির সিরাপের প্রকারভেদ
বাজারে বিভিন্ন ধরনের রুচির সিরাপ পাওয়া যায়। এদের মধ্যে কয়েকটি প্রধান প্রকারভেদ নিচে উল্লেখ করা হলো:
- এনজাইমযুক্ত সিরাপ: এই সিরাপ সেবন করলে খাবার হজম হয় কেননা এতে বিভিন্ন হজমকারী এনজাইম থাকে।
- ভিটামিন ও মিনারেলযুক্ত সিরাপ: এই সিরাপে ভিটামিন বি কমপ্লেক্স, ভিটামিন সি, জিঙ্ক-এর মতো উপাদান থাকে, যা শরীরের পুষ্টির চাহিদা পূরণ করে এবং রুচি বাড়াতে সাহায্য করে।
- আয়ুর্বেদিক সিরাপ: এই সিরাপে সাধারনত নানান প্রকারের ভেষজ উপাদান পাওয়া যায় এইজন্য এটি সেবনের ফলে আমাদের দেহের হজমক্ষমতা বাড়াতে সহায়তা করে।
সেরা রুচির সিরাপ: একটি বিশ্লেষণ
বাজারে অনেক রুচির সিরাপ পাওয়া গেলেও, কয়েকটি সিরাপ বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। নিচে তাদের কার্যকারিতা, উপাদান এবং পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নিয়ে আলোচনা করা হলো:
১। এনজাইমযুক্ত সিরাপ
ডায়াজাইম (Diazime)
ডায়াজাইম একটি জনপ্রিয় এনজাইমযুক্ত সিরাপ।
- কার্যকারিতা: এটি হজমক্ষমতা বাড়াতে খুবই উপযোগী। পেটে গ্যাস, অম্বল এবং বদহজম কমাতে সাহায্য করে।
- উপাদান: আলফা অ্যামাইলেজ এবং পেপসিন এনজাইম
- পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া: সাধারণত তেমন কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই, তবে অতিরিক্ত সেবনে বমি বমি ভাব হতে পারে।
২। পেপটাইন (Peptine)
পেপটাইন সিরাপও বেশ পরিচিত।
- কার্যকারিতা: এটি পেটের অস্বস্তি কমায় এবং প্রোটিন হজমে সাহায্য করে।
- উপাদান: পেপটাইনে পেপসিন এবং ডায়াস্টেজ নামক এনজাইম থাকে।
- পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া: অতি মাত্রায় গ্রহনে ডায়রিয়া বা পেটে ব্যথা হতে পারে।
৩। ভিটামিন ও মিনারেলযুক্ত সিরাপ
অ্যাপেটাইট গোল্ড (Appetite Gold)
অ্যাপেটাইট গোল্ড একটি ভিটামিন ও মিনারেলযুক্ত সিরাপ।
- কার্যকারিতা: এটি আমাদের রুচি বাড়াতে সাহায্য করে।
- উপাদান: জিঙ্ক এর প্রধান উপাদান, ভিটামিন বি কমপ্লেক্স এবং ভিটামিন সি।
- পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া: সাধারণত তেমন কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই, তবে কিছু ক্ষেত্রে অ্যালার্জি হতে পারে।
বি-ফিট (B-Fit)
ভিটামিন বি কমপ্লেক্সের বি-ফিট সিরাপ একটি ভালো উৎস।
- কার্যকারিতা: এটি আমাদের দেহের শক্তি এবং রুচি বাড়াতে সাহায্য করে।
- উপাদান: ভিটামিন বি১, বি২, বি৬ এবং নিয়াসিন এর প্রধান উপাদান।
- পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া: অতিরিক্ত সেবনে বমি বমি ভাব বা পেটে অস্বস্তি হতে পারে।
৩। আয়ুর্বেদিক সিরাপ
লিভার কেয়ার (Liver Care)
লিভার কেয়ার একটি জনপ্রিয় আয়ুর্বেদিক সিরাপ।
- কার্যকারিতা: এটি লিভারের কার্যকারিতা বাড়াতে এবং হজমক্ষমতা উন্নত করতে সাহায্য করে।
- উপাদান: ভূমি আমলকি, কালমেঘ এবং অন্যান্য ভেষজ উপাদান থাকে।
- পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া: সাধারণত তেমন কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই, তবে কিছু ক্ষেত্রে পেটে গ্যাস হতে পারে।
রোগান জোশিন্দা (Rogan Joshinda)
রোগান জোশিন্দা ইউনানী ঔষধ হিসেবে পরিচিত।
- কার্যকারিতা: এটি রুচি বাড়াতে এবং হজমশক্তি বৃদ্ধি করতে সহায়তা করে।
- উপাদান: বহেড়া এবং হরীতকী থাকে।
- পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া: অতি মাত্রায় গ্রহনে ডায়রিয়া বা পেটে ব্যথা হতে পারে।
রুচির সিরাপ কোনটা ভালো
খাওয়া রুচি বাড়ানোর ক্ষেত্রে আমরা অনেকেই ভাইটালজিন সিরাপ সেবন করে থাকি কেননা এই সিরাপটি অনেক দ্রুত রুচি বাড়াতে বেশ ভালো উপকারে আসে।
তবে কোন রুচির সিরাপটি আপনার জন্য ভালো, সেটা আপনার শারীরিক অবস্থা এবং সমস্যার ওপর নির্ভর করে। আমরা নিচের একটি টিবেল তুলনামূলক তালিকা দিলাম যেখানে আপনি সঠিক সিরাপটি বেছে নিতে পারবেন।:
সিরাপের নাম | প্রধান উপাদান | কার্যকারিতা | পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া |
পেপটাইন | পেপসিন, ডায়াস্টেজ | প্রোটিন হজমে সাহায্য করে, পেটের অস্বস্তি কমায় | পেটে ব্যথা, ডায়রিয়া |
ডায়াজাইম | আলফা অ্যামাইলেজ, পেপসিন | হজমক্ষমতা বৃদ্ধি, গ্যাস ও বদহজম কমায় | বমি বমি ভাব |
অ্যাপেটাইট গোল্ড | ভিটামিন বি কমপ্লেক্স, ভিটামিন সি, জিঙ্ক | রুচি বৃদ্ধি, শরীরের দুর্বলতা কমায় | অ্যালার্জি |
বি-ফিট | ভিটামিন বি১, বি২, বি৬, নিয়াসিন | শরীরের শক্তি বাড়ায়, রুচি ফেরায় | বমি বমি ভাব, পেটে অস্বস্তি |
লিভার কেয়ার | ভূমি আমলকি, কালমেঘ | লিভারের কার্যকারিতা বাড়ায়, হজমক্ষমতা উন্নত করে | পেটে গ্যাস |
রোগান জোশিন্দা | বহেড়া, হরীতকী | হজমশক্তি বৃদ্ধি করে, রুচি বাড়ায় | পেটে ব্যথা, ডায়রিয়া |
ভাইটালজিন সিরাপ | মাল্টিভিটামিন ও মাল্টিমিনারেল | শারীরিক দুর্বলতা ও ক্লান্তি দূর করা | সাধারণ মাত্রায় সহনীয়। |
রুচির সিরাপ এর নাম
যারা মুখের রুচি ফেরাতে চান কিন্তু কোন ধরনের ট্যাবলেট খেতে চান না তারা চাইলে রুচির সিরাপ খেতে পারেন। এই সিরাপ গুলো খাওয়ার মাধ্যমে আপনাদের রুচি ফিরে আসবে এবং অনেক বেশি খেতে ইচ্ছে করবে।
হামদর্দ কোম্পানির সিনকারা সিরাপ মুখের রুচি বাড়ানোর জন্য খুবই কার্যকরী সিরাপ। হামদর্দ কোম্পানির রুচির সিরাপ বা এই সিরাপটি খাওয়ার কিছু দিনের মধ্যে আপনার মুখের রুচি আবার আগের অবস্থায় ফিরে আসবে।
তাছাড়া আপনারা আলফা-ইউ সিরাপ সেবন করতে পারেন একজন হোমিও চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী। এই সিরাপটি সাধারণত রুচির চিকিৎসায় ব্যবহার হয়ে থাকে।
মুখে রুচি হওয়ার ট্যাবলেট
আজকে কয়েকটি মুখে রুচি হওয়ার ট্যাবলেট এর নাম আপনাদের জনাব, যে ট্যাবলেটটি খেলে আপনার খাওয়ার রুচি বৃদ্ধি হবে না ক্ষুধা বৃদ্ধি হবে এবং খাওয়ার রুচি প্রচুর পরিমাণে বেড়ে যাবে। এছাড়াও এগুলো সেবন করলে হজমশক্তি বৃদ্ধি পাবে, খাবারের প্রতি অনীহা কেটে যাবে এবং এর পাশাপাশি আপনার শারিরীক ও মানসিক শক্তি আগের তুলনায় বেরে যাবে।
তবে চলুন জেনে নেওয়া যাক মুখে রুচি হওয়ার ট্যাবলেট গুলো সর্ম্পকে।
- Xinc B
- Bicozin
- Aritone Z
- Pep Plus
- Imuzin-B
- Opsovit Z
- Zipol B
- Temzinc Plus
- Revital 32
- Sina Gold
- Zovia Gold
- Multivit Plus
- Bextram Gold
- ATOZ Premium
- Filwel Gold
- Santogen
- Vidalin Gold
- Nipro Gold
- Vita AZ Gold
- Allion Gold
- Sina Gold
- Revam Gold
- Biovit Gold
- Goldpac
ই ট্যাবলেট গুলো একটি জিঙ্ক, ভিটামিন বি(১২) সমৃদ্ধ এবং মাল্টিভিটামিন সমৃদ্ধ রুচির ট্যাবলেট। খাবারে অরুচি হলে করণীয় হিসেবে আপনি এই ট্যাবলেট গুলো রুচির সিরাপ এর পরিবর্তে খেতে পারেন। তবে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী খাওয়ার চেষ্টা করবেন।
অনেক সময় বাচ্চাদের মুখে রুচি ফিরিয়ে আনতে ওষুধের প্রয়োজন পড়ে। বাচ্চাদের মুখের রুচির জন্য ফার্মেসি গুলোতে বিভিন্ন ধরনের সিরাপ পাওয়া যায়।
রুচির ট্যাবলেট এর দাম
রুচির ট্যাবলেট এর জন্য বর্তমানে ডেকাসন ট্যাবলেট টি ব্যবহার করা হয়ে থাকে। তাছাড়া মুখের রুচি বাড়ানোর জন্য আরও অনেক কোম্পানির অনেক ধরনের ট্যাবলেট রয়েছে যে ট্যাবলেটগুলো সেবন করা যেতে পারে। এই ট্যাবলেট গুলোর দাম সাধারণত ৮ টাকা থেকে ১০ টাকার মধ্যে হয়ে থাকে।
মুখের রুচি বাড়ানোর ঔষধ
যাদের খাবার খাওয়ার প্রতি রুচি থাকে না শুধুমাত্র তারাই জানেন এই সমস্যাটা কতটা ভয়াবহ। তারা অনেক কিছু খেতে চা কিন্তু অচিরেই সমস্যার কারণে খেতে পারেন না।
আবার অনেকের ক্ষেত্রে দেখা যায় যে কিছু খাওয়ার সময় বমি বমি ভাব লাগে এবং খাবারে অনীহা চলে আসে তাই এক্ষেত্রে Flwel gold স্কয়ার কোম্পানির এই মাল্টিভিটামিন ট্যাবলেট গ্রহণ করতে পারেন।
এই ট্যাবলেট নিয়মিত সেবন করার মাধ্যমে আপনার অরুচির সমস্যা অনেকটাই চলে যাবে এবং আপনার খিদে হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যাবে। তাছাড়া যাদের মুখের রুচি একেবারেই নেই তারা জিংক বি ট্যাবলেট সেবন করতে পারেন।
আবার মুখের রুচি পাবার ক্ষেত্রে জিংক বি ট্যাবলেট টি বেশ ভাল উপকারি ভূমিকা রাখে। তাছাড়া অনেকেই খাবারে রুচি ফিরে পাওয়ার জন্য ডপপিরডন গ্রুপের অমিডন ঔষধ সেবন ক্রএ থাকে। বিশেষত যাদের বেশি বেশি বমি বমি ভাব থাকে কিংবা খাবারের প্রতি খুব একটা ইচ্ছা জাগে না তারা এই ঔষধটি সেবন করতে পারেন।
রুচি বৃদ্ধির হোমিও ঔষধ
খাবারে রুচি বৃদ্ধি করার জন্য হোমিও ঔষধ অনেক সময় বেশ ভালো ভূমিকা রাখে। আপনি যদি আপনার মুখের রুচি ফিরেয়ে আনতে চান তাহলে হোমিও ঔষধো সেবন করতে পারেন।
রুচি বৃদ্ধির হোমিও ঔষধ হিসেবে R95 Alfalfa Tonic সেবন করা যায়। এটি মূলত জার্মানির একটি জনপ্রিয় ঔষধ। যা সেবনে আমাদের স্বাস্থ্য ভালো রাখে, দেহের ওজন ও শক্তি বৃদ্ধি করবে।
এছাড়াও আপনি মোটা এবং লম্বা হতে পারবেন। এই আলফালফা হোমিও ঔষধ টি আপনি নিয়ম মেনে খেলে ভালো ফলাফল পাবেন। আর একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে এই ঔষুধের কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই। তাই আপনি মুখে রুচি হওয়ার জন্য খেতে পারেন।
রুচির ট্যাবলেট এর নাম স্কয়ার
আপনারা অনেকেই স্কয়ার কোম্পানির রুচির ট্যাবলেট এর নাম জানতে চেয়ে থাকেন। তাই আমরা পোষ্ট এর অংশে স্কয়ার কোম্পানির রুচির সিরাপ এর নাম তুলে ধরব। স্কয়ার কোম্পানির রুচির ট্যাবলেট হিসেবে ব্যবহার করা হয় এমন ২টি ট্যাবলেট রয়েছে – Bicozin এবং Multivit Plus।
তার মধ্যে Bicozin হচ্ছে ভিটামিন বি(১২) এবং জিঙ্ক রয়েছে। যেটা সেবনে আমাদের মুখের রুচি ফিরিয়ে আনতে সহায়তা করে।
আর অন্যটি হচ্ছে Multivit Plus এটি মূলত মাল্টিভিটামিন ও মাল্টিমিনারেল সমৃদ্ধ ট্যাবলেট। যেটা সেবন করলে আমাদের হজম শক্তি বৃদ্ধি পায় এর পাশাপাশি খাওয়ার রুচি ফিরিয়ে আনে। তবে এইগুলো রুচির ট্যাবলেট গ্রহণের নিবন্ধিত চিকিৎকের পরামর্শ নিতে হবে।
ছোট বাচ্চাদের খাওয়ার রুচির সিরাপ ঔষধ
১) জিংক বি সিরাপ
একদম ছোট্ট শিশুদের এক চা চামচ করে প্রতিদিন দুইবার খাওয়াতে হবে। আর বাচ্চা শিশুদের প্রতিদিন দুই চামচ করে এক থেকে তিনবার খাওয়াতে হবে। অথবা একজন চিকিৎসকের পরামর্শ মত। খাওয়ার ৩০ মিনিট পরে খাওয়াতে পারেন।
২) পোগো সিরাপ
যেসব বাচ্চাদের বয়স ১ থেকে ১২ মাস তাদের ক্ষেত্রে ডাক্তারের পরামর্শ প্রয়োজন। আবার যাদের বয়স ১ থেকে ৪ বছর তাদেরকে ১ চা চামচ করে প্রতিদিন একবার খাওয়াতে হবে। ৪ বয়সের ঊর্ধ্বে যে কোন বাচ্চাদের দেড় (১.৫) চা চামচ করে প্রতিদিন একবার খাওয়াতে হবে। এটি খাওয়ানোর সাথে আপনি আপনার বাচ্চাকে পানি কিংবা দুধ খাওয়াতে পারেন। তাহলে আশা করি ভালো ফল পাবেন।
এছাড়া ছোট বাচ্চাদের আরো কিছু রুচির সিরাপের নাম উল্লেখ করা হলো:
- Seas Plus Syrup
- Zinc Syrup
- Bextram Kids Syrup
- Filwel Kids Syrup
- Wellkid Syrup
- Dorakid Syrup
- Mixavit Syrup
মুখে রুচি না থাকার কারণ কি
আপনি যদি মানসিক টেনশন নিয়ে সারাক্ষণ থাকেন তাহলে আপনার রুচি হারিয়ে যাবে। কারণ মানসিক টেনশন করলে রাতে ঠিকমতো ঘুম হবেনা যার ফলে আপনি কোন কিছু খাওয়ার সময় বিরক্তবোধ অনুভব করবে। কিছু কিছু সময়ে ভিটামিনের অভাবে আমাদের মুখের রচি হারিয়ে যেতে পারে।
এতে করে আপনার দেহের পুষ্টির চাহিদা কমে যাবে যার ফলে আপনার শরীরে ভিটামিনের অভাব দেখা দিবে। এ ধরনের সমস্যার সম্মক্ষীন হলে সরাসরি ডাক্তারের পরামর্শ নিবেন।
খাওয়ার রুচি বৃদ্ধির উপায়
সিরাপের পাশাপাশি কিছু ঘরোয়া উপায় অবলম্বন করেও রুচি বাড়ানো সম্ভব। নিচে কয়েকটি উপায় আলোচনা করা হলো:
- আদা হজমক্ষমতা বাড়াতে খুবই উপযোগী। তাই প্রতিদিন সকালে আদা চা পান করতে পারেন।
- লেবুতে ভিটামিন সি থাকে, যা রুচি বাড়াতে সাহায্য করে। খাবারের আগে লেবুর রস পান করতে পারেন।
- জিরা হজম ক্ষমতা বাড়াতে এবং পেটের গ্যাস কমাতে সাহায্য করে। তাই রান্নায় জিরা ব্যবহার করুন।
- পুদিনা পাতা পেটের অস্বস্তি কমায় এবং রুচি বাড়াতে সাহায্য করে। পুদিনা পাতার চাটনি বা শরবত খেতে পারেন।
- রাতে পর্যাপ্ত পরিমানে ঘুমান
- সকালে খুব ভুরে ঘুম থেকে উঠেন
- নিয়মিত সকাল সন্ধায় ব্যায়াম করুন। বিশেষ করে ঘুমাতে যাবার আগে এবং সকালে ঘুম থেকে উঠে।
- প্রতিদিন সকালে কিসমিস খান পানিতে রাতে ভিজিয়ে
- প্রতিদিন সকালে ছোলা বোট খেতে পারেন।
- প্রতিদিন সঠিক সময়ে ঘুমাবেন সঠিক টাইমে ঘুম থেকে জাগবেন।
- বিশেষ করে কোনো প্রকার নেশা করবেন না। ধুমপানের নেশা থাকলে আজকেই তা পরিত্যাগ করুন।
- কোনো প্রকার টেনশন মানসিক চাপ নিবেন না। প্রাতিদিন সকালে লেবু গরম পানিতে মিশিয়ে পান করুন।
- প্রতিদিন সকালে, রাতে বা প্রতি বেলা খাবার খাওয়ার পূর্বে কাচাঁ আদা চিবিয়ে খাবেন।
খাবার তালিকায় পরিবর্তন
রুচি বাড়াতে খাবার তালিকায় কিছু পরিবর্তন আনা জরুরি। যেমন:
- সহজপাচ্য খাবার: সহজে হজম হয় এমন খাবার খান, যেমন – খিচুড়ি, সবজির স্যুপ ইত্যাদি।
- প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার: মাংস, ডাল, ডিম, মাছ ইত্যাদি খাদ্য তালিকায় যোগ করুন।
- ফল ও সবজি: প্রচুর পরিমাণে ফল ও সবজি খান, যা ভিটামিন ও মিনারেলের চাহিদা পূরণ করবে।
কি খেলে মুখে রুচি আসে
১) আদাকুচি বা আদার রস গরম পানি বা চায়ের সঙ্গে, পুদিনাপাতা, এলাচিগুঁড়া বা চিনি দিয়ে খেতে পারেন।
২) ডিম, দুধ, পনির, রেডমিট, অরগ্যানমিট, মাশরুম, বাদাম, সিড, পালংশাক ইত্যাদি খাবার খেতে পারেন কেননা এগুলো মূলত জিংকযুক্ত খাবার যা মুখের রুচি বাড়াতে সাহায্য করে।
৩) খাবার আগে সামান্য আদা চিবিয়ে খেলেও মুখে রুচি বাড়ে। খাওয়ার আগে, মাঝ খানে পানি না খেয়ে খাওয়ার কিছুক্ষণ পর পানি খেতে হবে। বিভিন্ন সুস্বাদু মসলা যোগ করে খাবারের স্বাদ বাড়াতে হবে। খাবারের সঙ্গে সামান্য আচার খেলেও রুচি বাড়ে। পুদিনার রসও খেতে পারেন অথবা সালাদ বা তরকারিতে পুদিনা পাতা ব্যবহার করতে পারেন।
৪) আপনার যদি গ্যাসের সমস্যা না থাকে তাহলে আপনি চাইলে গোলমরিচ, এলাচি, আদা, রসুন, ভিনেগার, লেবুর রস ইত্যাদি মসলাযুক্ত খাবার আচার দিয়ে খাবার খেতে পারেন।
৫) ফাস্টফুড, কোমল পানীয়, চিপস জাতীয় খাবার এড়িয়ে চলুন। এগুলো রুচি কমিয়ে দেয় ও অনেকক্ষণ পর্যন্ত পেট ভরিয়ে রাখে।
৬) খাবার তালিকায় অবশ্যই পুষ্টিসমৃদ্ধ এবং উচ্চ ক্যালরিযুক্ত খাবার যেমন মাখন, ঘি, মিল্কশেক, ব্যানানাশেক, অ্যামন্ডমিল্ক রাখতে হবে। যাতে অল্প খাবার খেলেও ওজন না কমে এবং অপুষ্টি দেখা না দেয়।
উপরে দেওয়ার খাবার অনুযায়ী আপনি যদি প্রতিদিন নিয়মিত খেয়ে একটু পর পর পানি খান তাহলে আপনার মুখের রুচে বাড়তে থাকবে।
শিশুর মুখে রুচি আনার উপায়
অনেক মা বাবার একটা অভিযোগ থাকে বাচ্চারা ঠিক মতন খাবার খায় না। এটা নিয়ে দুশ্চিন্তার কোন শেষ থাকেনা যে শিশু কেন খেতে চায় না, তার কারণ খুঁজে বের করেন না অনেকেই। পুষ্টিকর খাবারের চেয়ে অস্বাস্থ্যকর খাবার খেয়েই শিশু তার পেট ভরিয়ে রাখতে পছন্দ করে। এ অবস্থায় মা-বাবার করণীয় কী? চলুন, তা জেনে নেয়া যাক।
শিশুর খাবারে আগ্রহ বাড়িয়ে তুলতে খাওয়াতে পারেন বিশেষ কিছু খাবার। খাবারগুলো হলো–
১) কুমড়ার বীজ ফেলে না দিয়ে তা শুকিয়ে সসপ্যানে ভেজে সন্তানকে খাওয়াতে পারেন। এ বীজ কোনো কিছু খাওয়ার প্রবল ইচ্ছা তৈরি করতে পারে। এ ছাড়া এ বীজ হজমপ্রক্রিয়াকে প্রভাবিত করে।
২) রান্নার কাজে ব্যবহৃত হলেও এ মসলা শিশুদের খিদে বাড়িয়ে তুলতে পারে। দারুচিনি পিষে এক গ্লাস দুধের সঙ্গে মিশিয়ে পান করতে দিন বাচ্চাকে। এতে দুধের স্বাদ ও শিশুর খিদে দুই-ই বাড়বে।
৩) লেবু দ্রুত খোদা বাড়াতে সাহায্য করতে পারে। তাই আপনি আপনার সন্তানের জন্য লেবুর রস তৈরি করতে পারেন এবং খাওয়াতে পারেন। এ রস পান করার পর শিগগিরই বাচ্চার পাচক সিস্টেম সক্রিয় হওয়া শুরু হতে থাকবে এবং সে খাবার ও চাইবে।
৪) পাঁচক তন্ত্র কে ভালো করে তোলে এবং সাথে সাথে আমাদের আরো উদ্দীপক করে তোলে দই। সেই জন্য আপনি যদি পারেন আপনার শিশুর খাবারে নিয়মিত দই রাখতে পারেন। এই দই আপনার শিশুর ক্ষুধা বাড়িয়ে তোলার সাথে সাথে ভিটামিন এর ও ঘাটতি পূরণ করে।
৫) এটি একধরনের অক্টা হার্বাল আয়ুর্বেদীয় গুঁড়ো, যা বেশ জনপ্রিয়। শিশুর ক্ষুধা বাড়িয়ে তুলতে ভাত ও ঘি দিয়ে এই গুঁড়ো মিশিয়ে শিশুকে খাওয়ানোর অভ্যাস করাতে পারেন।
৬) এছাড়া প্রতিদিন নতুন ও ভিন্ন স্বাদের খাবার দেওয়ার চেষ্টা করতে হবে। পরিবারের সবাই মিলে একসঙ্গে খেতে বসতে হবে। এভাবেও শিশুর মধ্যে খাওয়ার আগ্রহ তৈরি হবে। শিশুকে কাউন্সেলিং করতে হবে। খাবার কেন খেতে হবে, খেলে কী হবে এসব বিষয়ে শিশুর সঙ্গে মজা করে আলোচনা করতে হবে। এভাবে শিশুকে খাবারের প্রতি আগ্রহী করে তুলতে হবে।
খাওয়ার রুচি বৃদ্ধির দোয়া
আপনার যদি অতিরিক্ত খাবার খাওয়ার রুচি কমে যায় তাহলে এই দোয়াটি পড়বেন প্রতিদিন ২১ বার করে এবং অবশ্যই বিসমিল্লাহ বলে খাওয়ার খাওয়া শুরু করবেন।
وَلَوْلَا فَضْلُ اللَّهِ عَلَيْكُمْ وَرَحْمَتُهُ وَأَنَّ اللَّهَ رَءُوفٌ رَّحِيم
উচ্চারণ: ওয়া লাও লা ফাদলুল্লাহি আলাইকুম ওয়া রাহমাতুহু; ওয়া ইন্নাল্লাহা তাওয়্যাবুন হাকিম।’
অর্থ: তোমাদের প্রতি আল্লাহর অনুগ্রহ ও দয়া না থাকলে (তোমরা ধ্বংস হয়ে যেতে); আল্লাহ তাওবা গ্রহণকারী ও বড়ই প্রজ্ঞাময়। (সুরা নুর : আয়াত ১০)
লেখকের শেষ মতামত
এই ছিল আজকের রুচির সিরাপ কোনটা ভালো এবং রুচির সিরাপ এর নাম সম্পর্কিত সকল তথ্য সংক্ষেপে বিস্তারিত জানাতে চেষ্টা করেছি। এর বাইরেও আপনার কোনো প্রশ্ন থাকলে তা কমেন্ট করে জানাবেন। আশা করছি রুচির সিরাপ কোনটা ভালো তা জানতে পেরেছেন।
এরপরও বুঝতে অসুবিধা হলে কমেন্ট করে জানাবেন। আর্টিকেলটি আপনার পরিচিতদের মাঝে শেয়ার করে দিতে পারেন। এতে করে তারাও রুচির সিরাপ কোনটা ভালো সেই সম্পর্কে জানতে পারবে।