বাচ্চা নেওয়ার আগে পুরুষের করনীয় – বাচ্চা নেওয়ার আগের প্রস্তুতি

কথায় আছে শিক্ষার কোনো বয়স নেই, বাচ্চা নেওয়ার আগে পুরুষের করনীয় ও প্রস্তুতি সম্পর্কে আজকের পোস্ট থেকে জানতে পারবেন। সন্তান নেওয়ার পরিকল্পনা করলে কয়েক মাস আগে থেকেই কিছু প্রস্তুতি নেওয়া প্রয়োজন। এতে করে মা ও শিশুর সুস্থ থাকার সম্ভাবনা বাড়ে। চলুন তাহলে বাচ্চা নেওয়ার আগে পুরুষের করনীয় কি তা জেনে নেই।

বাচ্চা নেওয়ার আগে পুরুষের করনীয়

আমরা যারা বাচ্চা নেওয়ার চিন্তা ভাবনা করছি তাদের ক্ষেত্রে বাচ্চা নেওয়ার আগে কিছু করণীয় রয়েছে। যেগুলো হয়তো আমরা অনেকেই জানি না। মূলত এজন্যই আমরা আপনাদের সুবিধার কথা ভেবে এই ব্লগে বাচ্চা নেওয়ার আগে পুরুষের করনীয় এবং বাচ্চা নেওয়ার আগের প্রস্তুতি নিয়ে আলোচনা করব।

বাচ্চা নেওয়ার আগে পুরুষের করনীয়

সন্তান নেওয়ার সিদ্ধান্ত একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ, যা স্বামী-স্ত্রীর জীবনে বড় ধরনের পরিবর্তন নিয়ে আসে। সন্তান ধারণের আগে পুরুষের কিছু বিশেষ দায়িত্ব রয়েছে, যা তাদের শারীরিক ও মানসিক প্রস্তুতি নিশ্চিত করার পাশাপাশি স্ত্রীকে সমর্থন করতেও সহায়ক। এই ব্লগে আমরা পুরুষদের জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি, করণীয় এবং এর গুরুত্ব বিস্তারিতভাবে আলোচনা করব।

শারীরিক স্বাস্থ্য পরীক্ষা

  • বাচ্চা নেওয়ার আগে পুরুষের জন্য শারীরিক স্বাস্থ্য পরীক্ষা অত্যন্ত জরুরি।
  • সন্তান ধারণে পুরুষের স্পার্মের গুণমান একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। 
  • স্পার্ম কাউন্ট, মটিলিটি এবং আকৃতি পরীক্ষা করা উচিত। 

সাধারণ স্বাস্থ্য পরীক্ষা

  • ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ বা অন্যান্য রোগ নিয়ন্ত্রণে রাখা।
  • রক্তের গ্রুপ এবং সংক্রমণজনিত রোগ পরীক্ষা করা।
  • হরমোনের ভারসাম্য পরীক্ষা: টেস্টোস্টেরন হরমোনের মাত্রা ঠিক আছে কিনা তা নিশ্চিত করা।

খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন

  • সঠিক খাদ্যাভ্যাস শুধুমাত্র শরীরের জন্য নয়, স্পার্মের গুণমান বাড়াতেও সহায়ক।
  • ফল, সবজি, পূর্ণ শস্য, প্রোটিন এবং স্বাস্থ্যকর চর্বি গ্রহণ করুন।
  • ভিটামিন সি, ভিটামিন ই এবং জিঙ্ক যুক্ত খাবার বেশি খান।

অস্বাস্থ্যকর খাদ্য এড়িয়ে চলুন

  • প্রসেসড ফুড, অতিরিক্ত চিনি এবং অ্যালকোহল এড়িয়ে চলা উচিত।
  • ধূমপান ও মাদকদ্রব্য পরিহার করুন।
  • প্রতিদিন পর্যাপ্ত পানি পান শরীরকে ডিটক্সিফাই করতে সাহায্য করে।

মানসিক প্রস্তুতি

  • সন্তান ধারণ এবং তার পরবর্তী সময়ে দায়িত্ব পালনের জন্য মানসিকভাবে প্রস্তুত থাকা জরুরি।
  • গর্ভাবস্থার সময় স্ত্রীকে মানসিকভাবে সমর্থন করুন।
  • ধ্যান, যোগব্যায়াম এবং অন্যান্য রিল্যাক্সেশন পদ্ধতি অনুসরণ করে মানসিক চাপ দূর করুন।
  • স্ত্রী এবং পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সন্তানের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা করুন।

জীবনযাত্রার পরিবর্তন

  • নিয়মিত শারীরিক ব্যায়াম এবং জীবনধারায় ইতিবাচক পরিবর্তন আনা জরুরি।
  • দৈনিক ৩০-৪০ মিনিট ব্যায়াম করুন। এটি শারীরিক ফিটনেস এবং হরমোনের ভারসাম্য বজায় রাখতে সহায়ক।
  • প্রতিরাতে ৭-৮ ঘণ্টা ঘুম নিশ্চিত করুন। ঘুমের অভাব টেস্টোস্টেরনের মাত্রা কমিয়ে দিতে পারে।
  • এগুলো স্পার্মের গুণমান এবং সংখ্যার ওপর ক্ষতিকারক প্রভাব ফেলে।

চিকিৎসা পরামর্শ

  • যদি কোনো স্বাস্থ্য সমস্যা থাকে, তাহলে দ্রুত চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ করুন।
  • পরিবারের কোনো জেনেটিক রোগ আছে কিনা তা জানার জন্য চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
  • বাচ্চার ভবিষ্যৎ সুরক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় ভ্যাকসিন নিতে পারেন।
  • স্ত্রী এবং পরিবারের সঙ্গে মিলিত হয়ে প্রসবকালীন পরিকল্পনা তৈরি করুন।

সম্পর্ক মজবুত করা

  • সন্তান ধারণের আগে স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক মজবুত করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
  • স্ত্রী এবং পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে খোলামেলা আলোচনা করুন।
  • ব্যস্ত সময়সূচির মধ্যেও স্ত্রীকে পর্যাপ্ত সময় দিন।
  • গর্ভাবস্থার সময় এবং সন্তান জন্মের পরে দায়িত্ব ভাগাভাগি করার পরিকল্পনা করুন।

আর্থিক পরিকল্পনা

  • সন্তান ধারণের আগে আর্থিক পরিকল্পনা অত্যন্ত জরুরি।
  • গর্ভধারণ এবং প্রসবকালীন খরচের জন্য স্বাস্থ্য বীমা পরিকল্পনা করুন।
  • সন্তানের ভবিষ্যতের জন্য সঞ্চয় শুরু করুন।
  • গর্ভাবস্থার সময় এবং সন্তানের জন্মের পর প্রয়োজনীয় ব্যয় পরিকল্পনা করুন।

এছাড়াও পুরুষের বন্ধ্যাত্বের চিকিৎসা আছে। কিন্তু গুরুতর এজোস্পার্মিয়া যদি হয় সুনির্দিষ্ট কোনো ওষুধ নেই। তবে জীবনযাপনে পরিবর্তন এনে শুক্রাণুর পরিমাণ বাড়ানো যেতে পারে। যেমন-

১। যদি কোনো পুরুষের শরীরে হরমোনের ঘাটতি থাকে তাহলে তাকে হরমোন চিকিৎসা দিলে স্পার্মাটোজেনেসিস বা শুক্রাণু তৈরি হতে পারে। হরমোনের ঘাটতি না থাকলে অন্য কোনো কারণের জন্য হরমোন চিকিৎসা দেওয়ার সুযোগ নেই।

২। একজন পুরুষ যদি দীর্ঘ সময়ে খুব গরমে কাজ করেন তাহলে কিছু সময়ের জন্য ঠাণ্ডায় অবস্থান করা উচিত। সুবিধা অনুযায়ী ঝুঁকিপূর্ণ পেশা পরিবর্তন করতে হবে।

৩। রাসায়নিক ও কীটনাশক ব্যবহারের কারণে কৃষকদের এজোস্পার্মিয়া বেশি হয়। সেজন্য এগুলো যতটা সম্ভব পরিহার করা উচিত।

৪। কীটনাশকযুক্ত খাবার পরিহার করে অর্গানিক খাবার খাওয়া, ধূমপান ও অ্যালকোহল পরিহার করতে হবে।

৫। কোনো ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া বন্ধ্যাত্বজনিত সমস্যা তৈরি করলে চিকিৎসকের পরামর্শে প্রয়োজনে তা বন্ধ রাখতে হবে।

৬। ক্যানসারের চিকিৎসা, কেমোথেরাপি নেওয়ার আগে শুক্রাণু সংরক্ষণ করে রাখা যেতে পারে।

আরো পড়ুনঃ-  গর্ভাবস্থায় কলা খাওয়ার উপকারিতা - কলা খেলে কি হয়

৭। প্রয়োজনে আইইউআই বা আইভিএফ চিকিৎসার সহায়তা নেওয়া যেতে পারে। আইইউআই চিকিৎসার জন্য শুক্রাণুর সংখ্যা কমপক্ষে ১০ মিলিয়ন হতে হবে। শুক্রাণুর সংখ্যা ১০ মিলিয়নের নিচে হলে টেস্টটিউব পদ্ধতি অনুসরণ করা যেতে পারে।

৮। টেস্টটিউব চিকিৎসার আবার দুটি ভাগ, যেমন- শুক্রাণু ৫ মিলিয়নের বেশি হলে আইভিএফ এবং ৫ মিলিয়নের কম হলে ইকসি পদ্ধতি অনুসরণ করা যেতে পারে। বিশেষ ক্ষেত্রে শুক্রাণু সংগ্রহ করে ইকসি বা টেস্টটিউব চিকিৎসা করা যাবে।

৯। শুক্রাণু তৈরি হচ্ছে কিন্তু বীর্যে আসতে পারছে না বা শুক্রাণু বের হওয়ার নালী বন্ধ থাকলে সার্জারি করা যেতে পারে।

১০। তবে বীর্যে একেবারেই যদি শুক্রাণু পাওয়া না যায় তাহলে তাদের জন্য কোনো চিকিৎসা নেই। বাচ্চা নেওয়ার আগে পুরুষের শারীরিক, মানসিক এবং আর্থিক প্রস্তুতি নেওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সঠিক পরিকল্পনা এবং পদক্ষেপ গ্রহণ করলে গর্ভধারণের সময়কাল সহজ ও আনন্দময় হয়ে উঠতে পারে। স্ত্রী এবং পরিবারের প্রতি দায়িত্বশীল হয়ে সন্তানকে একটি নিরাপদ এবং সুখী ভবিষ্যৎ দিতে পারবেন।

বাচ্চা নেওয়ার আগের প্রস্তুতি

সুস্থ মা ও সুস্থ শিশু আমাদের সবার কাম্য। তাই প্রতিটি গর্ভধারণ হওয়া উচিত সুপরিকল্পিত ও একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে। এক দম্পতি যখন সন্তান নেওয়ার পরিকল্পনা করেন, তখন থেকেই কিছু বিষয় তাঁদের গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করতে হবে—

১. সন্তান নেওয়ার সময়ের পরিকল্পনা: আজকাল ক্যারিয়ার ভাবনা ও অন্যান্য কারণে সন্তান নিতে দেরি হয়ে যায়। তবে গবেষণায় দেখা যায়, ৩০ বছরের পর মেয়েদের সন্তান ধারণের ক্ষমতা দ্রুতই কমতে থাকে এবং ৩৫ বছরের পর তা বেশ কমে যায়। আবার মা–বাবার বয়স বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে জন্মগত ত্রুটি নিয়ে শিশু জন্মের আশঙ্কা বেড়ে যায়। তাই ক্যারিয়ার, লেখাপড়া সবকিছু সমন্বয় করে স্বামী-স্ত্রী দুজনের সম্মতিতে সঠিক সময়ে সন্তান গ্রহণের সিদ্ধান্ত নিতে হবে।

২. খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন: বিশেষ করে হবু মায়ের খাদ্যতালিকায় ফলিক অ্যাসিড, আয়রন, ভিটামিন, আমিষসমৃদ্ধ খাবার রাখতে হবে। যেমন বিভিন্ন ধরনের শস্য, বাদাম, সবুজ ও রঙিন শাকসবজি, ডিম, দুধ, মাছ, মাংস, কলিজা ও বিভিন্ন মৌসুমি ফল।

৩. ওজন নিয়ন্ত্রণ: অতিরিক্ত ওজন অথবা খুবই কম ওজন—দুটিই গর্ভকালীন জটিলতা তৈরি করতে পারে। তাই হবু মায়ের ওজন বেশি হলে কমাতে হবে, কম থাকলে উচ্চতা অনুযায়ী বাড়াতে হবে।

৪. জরুরি পরীক্ষা ও চিকিৎসা: গর্ভধারণের আগেই একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা করাতে হবে। যেমন রক্তশূন্যতা, ডায়াবেটিস, থাইরয়েড, জন্ডিস প্রভৃতি নির্ণয়ের পরীক্ষা। এসব পরীক্ষায় কোনো রোগ নির্ণয় হলে গর্ভধারণের আগেই সেগুলোর চিকিৎসা করাতে হবে।

৫. ফলিক অ্যাসিড গ্রহণ: ফলিক অ্যাসিডের অভাবে বাচ্চার মস্তিষ্ক ও মেরুদণ্ডে জন্মগত ত্রুটি হতে পারে। তাই বাচ্চা নেওয়ার এক মাস আগ থেকে এবং যাঁদের আগের বাচ্চার জন্মগত ত্রুটি ছিল, সেসব মায়ের তিন মাস আগে থেকে ফলিক অ্যাসিড ওষুধটি খেতে হবে।

৬. ওষুধ পরিবর্তন বা বর্জন: মায়েদের কিছু ওষুধ বাচ্চার জন্মগত ত্রুটি ঘটাতে পারে। যেমন ডায়াবেটিসের মুখে খাওয়ার ওষুধ, মৃগীরোগ ও ক্যানসারের ওষুধ। এসব রোগের ওষুধ চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করে পরিবর্তন বা বর্জন করতে হবে।

৭. টিকা: যাঁরা রুবেলা ও হেপাটাইটিস বির টিকা নেননি, তাঁদের গর্ভধারণের আগেই টিকাগুলো নিতে হবে। রুবেলার টিকা নেওয়ার এক মাসের মধ্যে গর্ভধারণ করা নিষেধ।

৮. অর্থনৈতিক প্রস্তুতি: সবকিছুর জন্যই প্রয়োজন অর্থের। তাই সন্তান নেওয়ার আগে আর্থিক প্রস্তুতিও একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।

আমরা সকলেই আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে সুস্থ ও স্বাভাবিক দেখতে চাই, এজন্য আমাদের নারীদের অবশ্যই গর্ভধারণ–পূর্ববর্তী সেবা নিশ্চিত করাটা জরুরি। 

বাচ্চা নেওয়ার জন্য কি খাবার খাওয়া উচিত

একটা সুস্থ সন্তান জন্ম দিতে ‘গর্ভধারণের পূর্বপ্রস্তুতি’ বিষয়টা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সেই প্রস্তুতিতে যে বিষয়গুলো সন্তান ধারণকারীর দেখা প্রয়োজন—

ওজন স্বাভাবিক অবস্থায় রাখা। বেশি থাকলে কমিয়ে আনা আর কম থাকলে বাড়িয়ে নেওয়া। কোনো ধরনের অসুস্থতা আছে কি না; যেমন ডায়াবেটিস বা প্রেশার বেশি আছে কি না, অন্য কোনো শারীরিক সমস্যা থাকলে তার চিকিৎসা বা যথাযথ ব্যবস্থা নিয়ে অবস্থা স্বাভাবিক করে নিতে হবে। 

কারণ, অন্তঃসত্ত্বার ডায়াবেটিস বা প্রেশার বেশি থাকলে গর্ভের সন্তানের অনেক ধরনের ত্রুটি দেখা দেওয়ার ঝুঁকি থেকে যায়। সন্তান ধারণে ইচ্ছুক নারীর পুষ্টিগত অবস্থা দেখে নেওয়া জরুরি। বিশেষ করে অ্যানিমিয়া/রক্তস্বল্পতাসহ অন্য কোনো পুষ্টিহীনতা থাকলে গর্ভের সন্তানেরও পুষ্টিহীন হয়ে জন্ম নেওয়ার ঝুঁকি থাকে। পাশাপাশি আগে থেকে যদি কোনো রোগ থাকে, তার সঠিক চিকিৎসা করে পরিকল্পিতভাবে সন্তান ধারণ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

গর্ভধারণ করার আগে আপনার খাবারে যেসকল পুষ্টি উপাদান থাকতে হবে, যে পুষ্টি উপাদানগুলো বেশি গুরুত্বপূর্ণ, তা নিম্নে বিস্তারিত উল্লেখ করা হলো:

  • এ সময়ে বেশি বেশি ফলিক অ্যাসিডসমৃদ্ধ খাবার খেতে; যার মধ্যে রয়েছে সব ধরনের ডাল, সবজি, বিটরুট, সাইট্রাস ফল, পেপে, বিচি, বাদাম, ডিম, সবুজ শাক, কলা ইত্যাদি।
  • ক্যালসিয়াম–সমৃদ্ধ খাবার। দুধ, দুধের তৈরি খাবার, সয়াবিন, বাদাম, দুধ, ক্যালসিয়াম ফরটিফাইড খাবার ইত্যাদি।
  • আয়রন লেভেল ঠিক রাখতে ভিটামিন সি, বি ১২, ভিটামিন ডি তৈরিতে সহায়ক খাবার খেতে হবে।
  • স্বাস্থ্যকর উদ্ভিজ্জ তেল (ওমেগা ৩, ৬–সমৃদ্ধ)
  • শরীরের চাহিদা অনুযায়ী শক্তি পেতে শর্করা খেতে হবে।
আরো পড়ুনঃ-  গর্ভাবস্থায় বাচ্চা পেটের কোন পাশে থাকে - বাচ্চা পেটের ভিতর কিভাবে থাকে

বাচ্চা নেওয়ার সঠিক সময়

গর্ভবতী হওয়ার সবচেয়ে ভালো সময় হল ডিম্বস্ফোটনের সময়কালে, যে সময়কালে ডিম্বাশয় থেকে একটি পরিপক্ক ডিম মুক্ত হয়ে যায়। যদিও শুক্রাণু যৌনতার পর 48 থেকে 72 ঘন্টা পর্যন্ত বেঁচে থাকতে পারে, পরিপক্ক ডিম্বাণু ডিম্বস্ফোটনের পর মাত্র 12 থেকে 24 ঘন্টার জন্যই বাঁচতে পারে। এর মানে হল যে মহিলা ডিম্বাণুটি মুক্তি পাওয়ার পর মাত্র 12-24 ঘণ্টার মধ্যেই নিষিক্ত হতে পারে। 

অতএব, আপনার গর্ভধারণের সম্ভাবনা বাড়ানোর জন্য, ডিম্বস্ফোটনের মোটামুটি 2-3 দিন আগে যৌন সঙ্গম করা ভাল। এটি নিশ্চিত করে যে, ডিমটি অবশেষে যখন মুক্ত হয় তখন সেটিকে নিষিক্ত করার জন্য ফ্যালোপিয়ান টিউবে যথেষ্ট পরিমাণে শুক্রাণু থাকে।

আপনার ডিম্বস্ফোটন কখন ঘটবে তার পূর্বাভাস পেলে, আপনার শিশু গর্ভে ধারণ করাতে অত্যন্ত সাহায্য হতে পারে। কোনও মহিলার গড় ২৮ দিনের মাসিক চক্রের মধ্যে থাকলে, ডিম্বস্ফোটন শুধুমাত্র একবার ঘটে। 

যাইহোক, ২৮ দিনের মাসিক চক্রের মহিলারা সংখ্যালঘুদের মধ্যে পড়েন, কারণ বেশিরভাগ মহিলাদের ২৪ থেকে ৩৫ দিনের মধ্যে মাসিক চক্র থাকে। যেহেতু চক্রের শেষ দিনের বা যে দিন আপনার পিরিয়ড হয় তার ১৪ দিন আগে ডিম্বস্ফোটন ঘটে, এর মানে হল যে ২৪ দিনের মাসিক চক্রের মহিলার জন্য ১০ তম দিনে বা ৩৫ দিনের মাসিক চক্রের কোন মহিলার ২১ তম দিনে এটি হতে পারে।

নিয়মিত মাসিক চক্র যুক্ত মহিলারা প্রতি মাসে ডিম্বস্ফোটনের সময়ের পূর্বাভাস পেতে, ডিম্বস্ফোটন ক্যালকুলেটরের মতো ডিভাইস ব্যবহার করতে পারেন। উপরন্তু, আপনার ঋতু পর্যায় জুড়ে আপনার হরমোন মাত্রা পরীক্ষা করে যে ডিম্বস্ফোটন পূর্বাভাস কিট, সেটি আপনার কোন দিন ডিম্বস্ফোটন হবে তা নির্ধারণ করতে সক্ষম হবে।

অনিয়মিত পিরিয়ড যুক্ত নারীদের ক্ষেত্রে, কখন ডিম্বস্ফোটন ঘটবে তার পূর্বাভাস পাওয়া একটু কঠিন হতে পারে। আপনার মাসিক চক্রটি যদি অনিয়মিত হয়, তবে আপনি নিম্নলিখিত লক্ষণগুলি সন্ধান করতে পারেন যা ডিম্বস্ফোটন ঘটছে তা নির্দেশ করতে পারে:

শরীরের তাপমাত্রা বৃদ্ধি ঘটছে কিনা নোট করুন।

আপনার শরীরের মৌলিক তাপমাত্রা হল বিশ্রামের সময় আপনার শরীরের তাপমাত্রা। এই তাপমাত্রা ডিম্বস্ফোটন প্রক্রিয়ার সময় সামান্য বৃদ্ধি পায়। আপনি আপনার বিছানা থেকে ওঠার আগে প্রতিদিন সকালে একটি থার্মোমিটার ব্যবহার করে আপনার শরীরের তাপমাত্রা পরিমাপ করুন। 

আপনি আপনার রেকর্ডিং থেকে আপনার তাপমাত্রার ধরণগুলি সনাক্ত করতে পারেন। তাপমাত্রা বৃদ্ধির 2-3 দিন আগে ফার্টিলিটি সর্বোচ্চ থাকবে।

যোনি স্রোতে কোন পরিবর্তন হলে নোট করুন।

ভিজা এবং চটচটে যোনি স্রোত বৃদ্ধি পেলে লক্ষ্য রাখুন, যা ডিম্বস্ফোটনের ঠিক আগে ঘটে। ডিম্বস্ফোটনের পরে, সার্ভিকাল মিউকাস কমে যায় এবং ঘন ও থকথকে দেখতে লাগে।

বাচ্চা নেওয়ার সঠিক বয়স

যে দম্পতি ১টি সন্তান চান, তারা যদি ৩২ বছর বয়সে বাচ্চা নেওয়ার চেষ্টা  শুরু করেন, তাহলে তাদের সফলতার সম্ভাবনা থাকে ৯০ শতাংশ। এর পর থেকে সেই সম্ভাবনা আস্তে আস্তে কমে যাবে। ৩৭ বছর বয়সে গর্ভধারণের সম্ভাবনা নেমে আসে ৭৫ শতাংশে। আর ৪১ বছর বয়সে তা ৫০ শতাংশে নেমে যায়।

২টি সন্তান নিতে চাইলে, ২৭ বছর বয়সে চেষ্টা শুরু করলে সফলতার সম্ভাবনা থাকে ৯০ শতাংশ। ৩৪ বছর বয়সে সেই সম্ভাবনা কমে ৭৫ শতাংশে চলে যায়। আর বয়স যদি ৩৮ বছর হয়ে যায়, তবে বাচ্চা হওয়ার সম্ভাবনা নেমে আসে ৫০ শতাংশে।

৩টি সন্তান নিতে চাইলে, ২৩ বছর বয়সে চেষ্টা করতে শুরু করলে সফলতার সম্ভাবনা থাকে ৯০ শতাংশ। ৩১ বছর বয়সে বাচ্চা নেওয়ার চেষ্টা শুরু করলে সেই সম্ভাবনা কমে ৭৫ শতাংশে আসে। আর ৩৫ বছর বয়সে গিয়ে সম্ভাবনা থাকে ৫০ শতাংশ।

সন্তান গ্রহণের ক্ষেত্রে ৯০ শতাংশ সফলতার সম্ভাবনা চাইবেন, নাকি ৭৫ বা ৫০ শতাংশ – এটা একান্তই একটি দম্পতির নিজস্ব সিদ্ধান্ত। কিছু কিছু দম্পতির কাছে সন্তান নেওয়াই সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ, এজন্য তারা সব ধরনের চেষ্টা করতে রাজি থাকেন। 

তারা হয়তো ৯০ শতাংশ সম্ভাবনা থাকার সময়টাকে বেছে নেবেন। আবার কেউ কেউ জীবনের বিভিন্ন অবস্থা বিবেচনা করে ৭৫ শতাংশ সম্ভাবনা থাকার সময়টাকে বেছে নেন। সব দিক বিবেচনা করে বাস্তবসম্মত ধারণা নিয়ে আপনাকে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করাই আর্টিকেলটির উদ্দেশ্য।

সন্তান ধারণে সমস্যা হওয়ার সম্ভাবনা থাকলে লক্ষণগুলো সম্পর্কে সচেতন হয়ে আগে থেকে ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। এই লক্ষণগুলো নিচে তুলে ধরা হলো যাতে আপনার অবস্থার সাথে মিলিয়ে নিতে পারেন।

বাচ্চা নেওয়ার আগে কি কি টেস্ট করতে হয়

সন্তান নেওয়া একটা সুখের সময়। কিন্তু কতগুলি দম্পতি সন্তান নিতে সমস্যায় পড়ে। বাচ্চা নেওয়ার আগে কি কি টেস্ট করা উচিত এবং গর্ভাবস্থার জটিলতা এড়াতে সাহায্য করে। এসব সমস্যা ওজনাধিক্য, জেনেটিক পরীক্ষা, ইনফারটিলিটি পরীক্ষা দ্বারা হয়ে থাকে।

আরো পড়ুনঃ-  মেয়েদের অতিরিক্ত সাদা স্রাব হলে কি ক্ষতি হয়

সন্তান ধারণ করার আগে কিছু বিশেষ পরীক্ষা করা দরকার। এই পরীক্ষাগুলি মায়ের এবং ভবিষ্যৎ সন্তানের স্বাস্থ্য নিশ্চিত করবে।

১। থাইরয়েড পরীক্ষা

থাইরয়েড গ্রন্থি থেকে উৎপন্ন হরমোনের স্তর পরীক্ষা করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এই হরমোনের স্তর যদি সঠিক না হয়, তাহলে গর্ভপাত এবং নবজাতকের মস্তিষ্কের বিকাশে ক্ষতি হতে পারে। তাই সন্তান ধারণের আগে থাইরয়েড পরীক্ষা করা উচিত।

২। রক্ত পরীক্ষা

রক্ত পরীক্ষায় সিফিলিস, এইচআইভি, হেপাটাইটিস বি এর অবস্থা নির্ণয় করা হয়। এছাড়া রক্তের সিবিসি পরীক্ষায় মায়ের স্বাস্থ্যের অন্যান্য দিক পর্যালোচনা করা হয়।

৩। প্রিনাটাল স্ক্রিনিং পরীক্ষা

গর্ভধারণের সময় মা এবং তার অনাগত শিশুর স্বাস্থ্য নিশ্চিত করতে প্রিনাটাল স্ক্রিনিং পরীক্ষাগুলি খুব গুরুত্বপূর্ণ। এসব পরীক্ষা মাতৃ রক্ত, ডায়াবেটিস, সংক্রামক রোগ এবং ভ্রূণের বিকাশ সম্পর্কে তথ্য দেয়। এগুলি সম্ভাব্য স্বাস্থ্য সমস্যা শনাক্ত করে আগাম পদক্ষেপ নেওয়ার সুযোগ দেয়।

এই পরীক্ষাগুলির মধ্যে রয়েছে:

  • বাছাই টেস্ট: ডাউন সিনড্রোম (ট্রিসোমি 21), এডওয়ার্ডস সিনড্রোম (ট্রিসোমি 18) এবং পাটাউ সিনড্রোম (ট্রিসোমি 13) সংক্রান্ত বাছাই টেস্ট।
  • জেন্ডার বাছাই: এক্স, ওয়াই ক্রোমোসোম বাছাই পরীক্ষা যা অনাগত শিশুর লিঙ্গ নির্ণয় করে।
  • নন-ইনভেসিভ প্রিনাটাল পরীক্ষণ (NIPT): মাতৃ রক্ত থেকে ভ্রূণের জিনগত বিশ্লেষণ, যা ক্রোমোসোমাল বিকৃতির সম্ভাবনা নির্ণয় করে।
  • তালাসিমিয়া পরীক্ষা: প্রসবপূর্ব গর্ভবতী মায়ের রক্ত পরীক্ষা করে তালাসিমিয়ার মূলরাগী বা প্রভাবিত হিসাবে শনাক্ত করা।

এসব প্রিনাটাল স্ক্রিনিং পরীক্ষার ফলাফল গর্ভবতী মা এবং অনাগত শিশুর স্বাস্থ্য নিশ্চিত করতে গুরুত্বপূর্ণ। এগুলি সম্ভাব্য সমস্যাগুলি শনাক্ত করে সঠিক ব্যবস্থা নেওয়ার সুযোগ দেয়। “প্রিনাটাল স্ক্রিনিং পরীক্ষাগুলি গর্ভাবস্থায় মাতা এবং শিশুর স্বাস্থ্য সুরক্ষায় একটি কুলুঙ্গর ভূমিকা পালন করে।“

বাচ্চা নেওয়ার আগে জেনেটিক পরীক্ষা

অনেক জুট রয়েছেন যারা নিজেদের অজান্তে কোনও জেনেটিক ডিসঅর্ডারের বাহক। এই অবস্থায় বাচ্চা নেওয়ার আগে আপনার ডাক্তারের পরামর্শমতো জেনেটিক পরীক্ষা করে নিতে হবে। এছাড়া ভ্রূণের বিকৃতি যাচাই করার জন্য ভ্রূণ পর্যবেক্ষণ পরীক্ষাগুলি বেশ গুরুত্বপূর্ণ।

১। জিনগত রোগের যাচাই

প্রতিদিন গড়ে বাংলাদেশে 15 জন ডাউন সিন্ড্রোমযুক্ত শিশুর জন্ম হয়। উন্নত দেশগুলোতে প্রতিটি মায়েরই গর্ভধারণের প্রথম তিন মাসের মধ্যে ডাউন সিন্ড্রোম সহ যেকোন ভ্রূণ বিকৃতির জন্য পরীক্ষা করানো অবশ্যই পরামর্শ দেওয়া হয়।

২। ভ্রূণের বিকৃতি নির্ণয়

যদি আগের সন্তানে ডাউন সিন্ড্রোম থাকে, এবং মা ৩০ বছরের বেশি বয়সী হন, তাহলে পরবর্তী গর্ভাবস্থায় ডাউন সিন্ড্রোম হওয়ার ঝুঁকি বেশি থাকে। চিহ্নিতকরণ এই ঝুঁকি আন্দাজ করে ভ্রূণকে পর্যবেক্ষণ এবং পরীক্ষার জন্য পরামর্শ দেয়।

যদি তিন বিশেষজ্ঞ একমত হন যে গুরুতর কোন বিকৃতি রয়েছে, তাহলে বিষ্টিশ পিনাল কোড ১৯৫৮ অনুযায়ী গর্ভপাত করার অনুমতি দেওয়া হতে পারে।

অন্যদিকে, যদি কেউ গরভ্পাত অবৈধভাবে করে, নিজেই করে অথবা গর্ভপাতের ঔষধ বিক্রি করে, তাহলে তাকে বাংলাদেশের বর্তমান আইনে পাঁচ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড দেওয়া হতে পারে।

৩। ইনফারটিলিটি এবং সংক্রামক রোগ পরীক্ষা

সন্তান নেওয়ার আগে ইনফারটিলিটি পরীক্ষা খুব গুরুত্বপূর্ণ। এটা সন্তান ধারণে সক্ষমতা নিশ্চিত করে। ঊর্বরতা পরীক্ষা এবং সংক্রামক রোগ পরীক্ষা দুটি অত্যন্ত জরুরি।

৪। ঊর্বরতা পরীক্ষা

ঊর্বরতা পরীক্ষা পুরুষদের জন্য খুব প্রয়োজনীয়। এটা শুক্রাণুর গণনা এবং অন্যান্য গুণাবলী নির্ধারণ করে। ধূমপান এবং মদ্যপান শুক্রাণুর গুণাবলীকে প্রভাবিত করতে পারে।

৫। এসটিআই/এইচআইভি পরীক্ষা

সন্তান ধারণের আগে দম্পতির এসটিআই/এইচআইভি পরীক্ষা করা খুব জরুরি। এসব রোগ সন্তান ধারণে সক্ষমতাকে প্রভাবিত করতে পারে। তাই এসব রোগের জন্য প্রাথমিক পরীক্ষা করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ইনফারটিলিটি এবং সংক্রামক রোগ সম্পর্কিত পরীক্ষা করানো খুব গুরুত্বপূর্ণ। এই পরীক্ষাগুলি সন্তান ধারণের সক্ষমতা নির্ধারণে সাহায্য করে। এবং সম্ভাব্য সমস্যাগুলি সনাক্ত করতে সাহায্য করে।

বাচ্চা নেওয়ার আগে স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন এবং ওজন নিয়ন্ত্রণ নিশ্চিত করুন। ডায়াবেটিস, অ্যানিমিয়া, জিনগত ডিসঅর্ডার এবং অন্যান্য সংক্রামক রোগ নিয়ে ডাক্তারের সাথে আলাপ করুন। প্রস্রাবের পরীক্ষা, ব্লাড গ্রুপ, ক্যান্সার স্ক্রিনিং এবং মানসিক স্বাস্থ্য পরীক্ষা গুরুত্বপূর্ণ।

“বাচ্চা নেওয়ার আগে সর্বোচ্চ প্রস্তুতি গ্রহণ করুন। এটা আপনার প্রজনন স্বাস্থ্যকে মজবুত করবে। আপনি নিশ্চিন্ত হতে পারেন যে আপনার শিশু সুস্থ হবে।” এই পরীক্ষাগুলি আপনাকে এবং আপনার ডাক্তারকে আপডেট করবে। এগুলি আপনাকে নিশ্চিত করবে যে আপনি সুস্থ এবং সুরক্ষিত গর্ভধারণের জন্য প্রস্তুত।

লেখকের শেষ মতামত

এই ছিল আজকের বাচ্চা নেওয়ার আগে পুরুষের করনীয় এবং বাচ্চা নেওয়ার আগের প্রস্তুতি সম্পর্কিত সকল তথ্য এখানে সংক্ষেপে বিস্তারিত জানাতে চেষ্টা করেছি। এর বাইরেও আপনার কোনো প্রশ্ন থাকলে তা কমেন্ট করে জানাবেন।

তো বন্ধু আশা করছি আপনি আমার এই পোস্টটি পড়ে বাচ্চা নেওয়ার আগে পুরুষের করনীয় কি তা জানতে পেরেছেন। এরপরও বুঝতে অসুবিধা হলে কমেন্ট করে জানাবেন। আর্টিকেলটি আপনার পরিচিতদের মাঝে শেয়ার করে দিতে পারেন। এতে করে তারাও বাচ্চা নেওয়ার আগে পুরুষের করনীয় সম্পর্কে জানতে পারবে। ধন্যবাদ।

Leave a Comment