একটা ভাল চাকরি অনেকের কাছে যেমন সোনার হরিণ পাওয়ার মত ঠিক তেমনি এমন কিছু চাকরি রয়েছে এদেশে যেখানে বেতন প্রতি মাসে কয়েক লক্ষ টাকার উপর। এদেশে স্বাস্থ্যসেবা এবং প্রকৌশলের ক্ষেত্রের চাকরিগুলোতে অনেক বেশি উপার্জন করার সুযোগ থাকায় পেশা হিসেবে ডাক্তার এবং ইঞ্জিনিয়ারদের কদর সব সময়ই অনেক বেশি হয়ে আসছে। এর পাশাপাশি রয়েছে ব্যাংকিং সেক্টর।
বেসরকারি বেশি ভাগ ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) এদের বেতন কয়েক লক্ষ টাকা। এর পরে রয়েছে প্রযুক্তিখাতের চাকরি। আধুনিক পৃথিবীতে বেশি বেতনের চাকরি মানেই প্রযুক্তিখাতের কদর। গত দশকে এই ধরনের চাকরির ক্ষেত্র যেমন বেড়েছে, তেমনি বেড়েছে প্রত্যাশীদের আগ্রহ। বর্তমানে আরও কিছু সেক্টর রয়েছে ভবিষ্যতে যার চাহিদা দিন দিন বাড়বে।
আজাকের এই আর্টিকেলে আমরা বাংলাদেশের সেরা ১০ পেশা এবং জানব করতে পারবেন এ সময়ের সেরা ১০ ক্যারিয়ার নিয়ে বিস্তারিত যাবতীয় তথ্য।
বাংলাদেশের সেরা ১০ পেশা
বর্তমানে তরুণদের জন্য বাংলাদেশের সেরা ১০ পেশা নিম্নে বিস্তারিত উল্লেখ করা হলঃ
১। ব্যাংকিং অ্যান্ড ফিন্যান্স
বর্তমানে আমাদের বাংলাদেশে ব্যাংকিং খাতে চাকরির চাহিদা অনেক বেশি। এখানে চাকরির নিরাপত্তা আছে এবং পেনশনের ব্যবস্থা আছে। আমাদের দেশে সরকারি ব্যাংকের পাশাপাশি এখন অনেক বেসরকারি ব্যাংক সেবা দিয়ে যাচ্ছে। তাদের সেবার মান সরকারি ব্যাংকের তুলনায় ভালো বলে গ্রাহকসংখ্যাও দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। তাই চাহিদার সঙ্গে তাল মেলাতে বাড়ছে বেসরকারি ব্যাংকের নতুন শাখা। সেই সঙ্গে সেবার মান উন্নত করতে হলে অধিক কর্মী প্রয়োজন।
বর্তমানে চাকরির বাজারে ভালো অবস্থানে রয়েছে ব্যাংকিং সেক্টর। এখানে বিভিন্ন পোস্টের জন্য ভিন্ন ভিন্ন যোগ্যতা চাওয়া হয়। তবে এমবিএ, এমবিএম, পোস্ট গ্র্যাজুয়েট, সিএ ডিগ্রিসহ বিভিন্ন অভিজ্ঞতা চাওয়া হয়।
২। টেলিকমিউনিকেশন
বর্তমানে আমাদের দেশে টেলিকমিউনিকেশনে ক্যারিয়ার গড়ার একটা ধুম পড়ে গেছে। এখানে চাকরি করার কারণে একজন কর্মী অনেক সুযোগ-সুবিধা পেয়ে থাকেন। সাপ্তাহিক ছুটি সরকারি ছুটির সঙ্গে মিল রেখে ধরা হয়। বেতন ও কাজের পরিবেশও ভালো।
তাই শিক্ষিত বেকারদের পছন্দের প্রথম সারিতে পড়ে এ সেক্টরের চাকরি এবং এখানে কাজ করার সুযোগও অনেক বেশি। আপনি যদি টেলিকমিউনিকেশনে ক্যারিয়ার গড়তে চান তাহলে পত্রিকার মাধ্যমে বিজ্ঞপ্তি দেখে সিভি জমা দিয়ে লিখিত পরীক্ষার পর ভাইবা বোর্ডের সম্মুখীন হতে হবে। সেখানে উত্তীর্ণ হলে আপনার কাঙ্ক্ষীত চাকরিটি পেয়ে যেতে পারেন।
বাংলাদেশে যে কয়েকটি সম্ভাবনাময় শিল্প আছে তার মধ্যে টেলকো কোম্পানিগুলো অন্যতম। এ সেক্টরে ক্যারিয়ার গড়তে হলে গ্র্যাজুয়েটসহ নেটওয়ার্কিং ইলেকট্রিক্যাল মেকানিক্যাল, কম্পিউটার ও টেলিকমিউনিকেশন জানা থাকলে ভালো।
৩। সেলস অ্যান্ড মার্কেটিং
এ পেশাটি খুব চ্যালেঞ্জিং অথচ সম্ভাবনাময়। যারা নতুন নতুন চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করতে পছন্দ করেন তাদের জন্য এ সেলস অ্যান্ড মার্কেটিং সেক্টর উপযুক্ত স্থান। আমাদের দেশে প্রচুর সেলস অ্যান্ড মার্কেটিং কর্মীর প্রয়োজন হচ্ছে নতুন প্রতিষ্ঠান চালু হচ্ছে এবং তাদের পণ্য বাজারজাত করতে।
তাই এসব ডিপার্টমেন্টে প্রচুর দক্ষ লোকবল প্রয়োজন হচ্ছে। এ সেক্টরে চাকরির জন্য সাধারণত বিবিএ, এমবিএ, মার্কেটিং, ফিন্যান্স ও হিসাববিজ্ঞানে গ্র্যাজুয়েট চাওয়া হয়। বর্তমান সময়ের সেরা ক্যারিয়ারগুলোর মধ্যে সেলস অ্যান্ড মার্কেটিং অন্যতম।
৪। মেডিকেল অ্যান্ড ফার্মাসিউটিক্যালস
বর্তমানে আমাদের তৈরি ওষুধ দেশের চাহিদা পূরণ করে বিদেশেও রফতানি করা হচ্ছে। তাই এ সেক্টরে প্রতিনিয়ত দক্ষ লোকবলের প্রয়োজন হচ্ছে। এ সেক্টরে বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র-ছাত্রীদের গুরুত্ব দেয়া হয়। এ ছাড়া এমএসসি, এমবিএ, এম ফার্ম, বি ফার্ম ইত্যাদি শিক্ষাগত যোগ্যতা চাওয়া হয়।
মেডিকেল অ্যান্ড ফার্মাসিউটিক্যালস সেক্টরে কাজের সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো মাসিক নির্দিষ্ট বেতনের পাশাপাশি টার্গেট পূরণের ওপর অতিরিক্ত টাকা দেয়া হয়। বর্তমানে অনেকেই ডিগ্রি পাস করে এ সেক্টরে ক্যারিয়ার গড়ে তুলছে। কাজের ক্ষেত্র অনেক বড় হওয়ায় এ সেক্টরে চাকরি পেতে তেমন কষ্ট পোহাতে হয় না। সেলসম্যান থেকে শুরু করে রিজিওন্যাল ম্যানেজার পর্যন্ত খুব সহজেই পাড়ি দেয়া যায়।
৫। ক্রিয়েটিভ মিডিয়া
আধুনিক প্রযুক্তির উন্নয়নের ফলে কর্মসংস্থানের দিকও পরিবর্তন হয়েছে। তারই ধারাবাহিকতায় বর্তমান সময়ের সেরা ক্যারিয়ারের মধ্যে মিডিয়া সাইড উঠে এসেছে। মিডিয়া সাইডের মধ্যে রয়েছে প্রিন্ট ও ইলেকট্রিক মিডিয়া। প্রিন্ট মিডিয়ার মধ্যে রয়েছে-সাংবাদিকতা, গ্রাফিক্স ডিজাইনার, ফটোগ্রাফার, আইটি প্রভৃতি এবং ইলেকট্রিক মিডিয়ায়ও সাংবাদিকতা, ক্যামেরাম্যান, প্রোগ্রাম তৈরি করা অর্থাৎ ডিরেক্টর, অভিনয়, উপস্থাপনাসহ অনেক সাইড।
বর্তমানে এ সেক্টরের সঙ্গে হাজার হাজার মানুষ জড়িত রয়েছে এবং দিন দিন কর্মসংস্থানের আরও সুযোগ সৃষ্টিতে এ সেক্টরের চাহিদা বৃদ্ধি পাচ্ছে। চাহিদা থাকার কারণে বর্তমানে অনেক প্রতিষ্ঠান বিভিন্ন কোর্সের ব্যবস্থা করছে এবং কিছু বেসরকারি ইউনিভার্সিটি স্বল্পমেয়াদি কোর্স চালু করছে।
এ সেক্টরের চাকরির জন্য সাংবাদিকতা বিষয়ে গ্র্যাজুয়েট এবং অনার্স, মাস্টার্স ডিগ্রিসহ বিভিন্ন যোগ্যতা চাওয়া হয়। তাই এখানে ক্যারিয়ার গড়তে চাইলে নির্দিষ্ট লক্ষ্য নিয়ে এগিয়ে যান। ওপরের প্রতিটি সেক্টরই বর্তমানে ক্যারিয়ার গড়ার উপযুক্ত স্থান।
৬। ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড আর্কিটেক্ট
বিশ্বের চাহিদার ধারাবাহিকতায় আমাদের দেশেও এ সেক্টরের প্রতি নতুনদের চাহিদা বৃদ্ধি পাচ্ছে। তরুণরা ঝুঁকছে এখন এ পেশায়। সরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি অনেক বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে ইঞ্জিনিয়ারিং ও আর্কিটেক্টের ওপর বিভিন্ন কোর্স রয়েছে। একটা সময় হাতেগোনা কিছু প্রতিষ্ঠানের ওপর নির্ভর করতে হতো। দিন পাল্টেছে। লেগেছে বদলের ছোঁয়া। দেশে এখন অনেক প্রতিষ্ঠান রয়েছে যেখান থেকে যে কেউ ইঞ্জিনিয়ার ও আর্কিটেকচার হিসেবে ভবিষ্যৎ গড়তে পারেন।
এ সেক্টরে চাকরি করতে হলে বিএসসি ইন সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং, বিএসসি ইন ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং, সিস্টেম ইঞ্জিনিয়ারিং, নেটওয়ার্ক ইঞ্জিনিয়ার, এমবিএ, মাস্টার্সসহ বিভিন্ন ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের যোগ্যতা চাওয়া হয়। আর বেতন-ভাতা ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধার ক্ষেত্রে অন্য সেক্টর থেকে এখানে ক্যারিয়ার গড়তে পারেন নিশ্চিন্তে। শুধু প্রয়োজন নির্দিষ্ট এ যোগ্যতা ও কিছু কারিগরি অভিজ্ঞতা।
৭। হিউম্যান রিসোর্স
কর্মকর্তা-কর্মচারীদের চাহিদা এবং এরা যাতে ঠিকভাবে কাজ করে সেদিকেও নজরদারি করে এ বিভাগ। চাকরিটি পেতে হলে আপনাকে অবশ্যই মাস্টার্স, এমবিএ মেজর-ইন-এইচআরএস ডিগ্রিধারী হতে হবে। তাহলে চাকরির ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার পাবেন। কিছু কাজের আগে অভিজ্ঞতা থাকলে আরও ভালো হয়।
৮। টিচিং অ্যান্ড রিসার্চ
আমাদের দেশে সরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি অনেক বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে এবং দিন দিন এ সেক্টরে কাজের সুযোগ সৃষ্টি হচ্ছে। বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষকের পাশাপাশি আরও অনেক ধরনের লোকবল প্রয়োজন হচ্ছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ছাড়াও বর্তমানে অনেক কোম্পানি রিসার্চ সেন্টার চালু করছে সেখানেও কাজের অনেক সুযোগ রয়েছে।
টিচিং অ্যান্ড রিসার্চে ক্যারিয়ার গড়তে হলে নিষ্ঠাবান হওয়া বঞ্চনীয়। শিক্ষাগত যোগ্যতা- প্রয়োজন স্নাতকোত্তর এমবিএ, পিএইচডি, সিএসই, ইইউ ইত্যাদি।
৯। গার্মেন্ট অ্যান্ড ম্যানুফ্যাকচারিং
বর্তমানে আমাদের দেশের প্রধান রফতানি খাতই হল গার্মেন্ট অ্যান্ড ম্যানুফ্যাকচারিং। দেশের মোট রফতানি আয়ের অধিকাংশই এ খাত থেকে আসছে। বিশাল এ সেক্টরে প্রচুর দক্ষ লোকবল প্রয়োজন পড়ছে। সেই তুলনায় কোম্পানির মালিকরা লোকবল পাচ্ছেন না। এ সেক্টরে যেমন প্রয়োজন হচ্ছে সাধারণ শ্রমিক, তেমনি প্রয়োজন দক্ষ ও শিক্ষিত লোকবল- যারা প্রতিষ্ঠানের উচ্চপর্যায়ে কাজ করবেন।
গার্মেন্ট প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি দেশে অনেক বায়িং প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে, যারা বিদেশ থেকে অর্ডার সংগ্রহ করে দেশীয় গার্মেন্টে কাজ পরিচালনা করে থাকে। এখানেও দক্ষ লোকবলের সংকট।
১০। এনজিও
আমাদের দেশে চাকরির ক্ষেত্র তৈরিতে এনজিও এক অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছে। প্রধান কারণ হচ্ছে মূলত বেতন অনেক বেশি দেয়া হয়। যদিও ভালোই পরিশ্রম করতে হয় এ সেক্টরে, তার পরও ভালো সুযোগ-সুবিধা পাওয়া যায়। এ সেক্টরে চাকরির জন্য মাস্টার্স ডিগ্রি, সিএ, এমবিএ ইত্যাদি শিক্ষাগত যোগ্যতা চাওয়া হয়। ইংরেজিতে লেখা ও বলা এখানে খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
এ সময়ের সেরা ১০ ক্যারিয়ার
এ সময়ের সেরা ১০টি পেশা সম্পর্কে অবশ্যই জানা উচিত, বিশেষ করে তরুণ ছেলে মেয়েদেরকে। কারণ ভালো একটা পেশাই পুরো জীবন বদলায় দিতে পারবে ও সুখী রাখতে পারবে। এইজন্য বিস্তারিত জানা উচিত। জীবনের জন্য সেরা একটি পেশা নির্বাচন করা কিন্ত সহজ কথা নয়। অপরদিকে ভালো একটি পেশাই আপনাকে অনেক বড় সাফল্য এনে দিবে।
তাই ক্যারিয়ারকে ভালো ভাবে প্রতিষ্ঠা করার জন্য অবশ্যই আপনাকে সেরা পেশা গুলো সম্পর্কে জানা উচিত এবং খুব সহজেই সেখান থেকে আপনার পছন্দ পেশাটাকে সিলেক্ট করে নিতে পারবেন। তাহলে জেনে নেওয়া যাক এ সময়ের সেরা ১০টি পেশা।
০১। ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড আর্কিটেক্ট
এ সময়ের সেরা পেশা গুলোর মধ্যে ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড আর্কিটেক্ট অন্যতম। কারণ ইঞ্জিনিয়ারদের চাহিদা সবসময় ছিল এখনও আছে। দীর্ঘ দিন ধরেই ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে আগ্রহী মানুষের পরিমাণ বেড়েই চলেছে। সারা বিশ্বে এই পেশার ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। বর্তমানে বিভিন্ন ধরনের ইঞ্জিনিয়ার রয়েছে।
যেমনঃ
- সিভিল ইঞ্জিনিয়ার,
- কম্পিটার ইঞ্জিনিয়ার,
- ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার,
- সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার,
- হার্ডওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিং,
- মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং,
- টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং,
- বৈমানিক প্রকৌশলী,
- কৃষি প্রকৌশলী,
- মোটর ইঞ্জিনিয়ার,
- জৈব চিকিৎসা প্রকৌশল,
- রাসায়নিক প্রকৌশলী,
- পরিবেশ প্রকৌশলী,
- মেরিন ইঞ্জিনিয়ার,
- মেকানিকাল ইঞ্জিনিয়ার।
ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের পাশাপাশি বর্তমানে স্থাপত্য বা আর্কিটেক্টও তরুণদের পছন্দের তালিকার শুরুর দিকেই স্থান করে নিয়েছে।
০২। মেডিকেল অ্যান্ড ফার্মাসিউটিক্যালস
ইঞ্জিনিয়ারিং এর মতোই মেডিকেল অ্যান্ড ফার্মাসিউটিক্যালস এর ভ্যালু রয়েছে। এবং বাংলাদেশের কথা বললে বর্তমানে সেরা পেশা হচ্ছে মেডিকেল অ্যান্ড ফার্মাসিউটিক্যালস। চিকিৎসাসংক্রান্ত পেশা সারা বিশ্বেই খুবই গুরুত্বপূর্ণ ও সম্মানজনক পেশা এবং এর ও রয়েছে অনেক জনপ্রিয়তা।
একজন ডাক্তারদের প্রফেশনাল ডাক্তারদের বেতন অনেক উচ্চ মানের। চিকিৎসা খাতের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ পদের নাম ফার্মাসিস্ট। বিভিন্ন রোগীর রোগ অনুপাতে ওষুধ নির্ধারণ এবং রোগ নিরাময়ের ক্ষেত্রে ফার্মাসিস্টরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। উন্নত বিশ্বের পাশাপাশি উন্নয়নশীল দেশেও এ পেশার গুরুত্ব বাড়ছে। তাই আপনি চাইলে এই পেশাটিও গ্রহন করতে পারে।
০৩। ডিজিটাল মার্কেটিং
বর্তমানে সবচেয়ে আলোচিত ও গুরুত্বপূর্ণ পেশা হচ্ছে ডিজিটাল মার্কেটিং। এর চাহিদা রয়েছে অনেক এবং দিন দিন সারা বিশ্বে আরও ব্যাপক ভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে। ডিজিটাল মার্কেটিং অনেক বড় একটা ডিপার্টমেন্ট। বলা হচ্ছে ২০২৬ সালে ডিজিটাল মার্কেটিং পেশা টপে চলে আসবে।
ডিজিটাল মার্কেটিং বলতে যেমনঃ
- সার্চ ইঞ্জিন অপ্টিমাইজেশান (এসইও),
- সার্চ ইঞ্জিন মার্কেটিং (এসইএম),
- সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং (এসএমএম),
- সোশ্যাল মিডিয়া অপ্টিমাইজেশান,
- ই-মেইল মার্কেটিং,
- কনটেন্ট মার্কেটিং,
- এফিলিয়েট মার্কেটিং,
- ই-কমার্স মার্কেটিং,
- ডিসপ্লে এ্যাডভারটাইজিং,
- টিভি এ্যাডভারটিজিং,
- মোবাইল এসএমএস
- এমএমএস, কলব্যাক, এবং
- ইলেক্ট্রনিক্স বিলবোর্ড।
০৪। সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্ট
বর্তমান পৃথিবী তথ্য প্রযুক্তির যুগ। ইন্টারনেট ছাড়া প্রায় সবকিছুই অচল। ইন্টারনেটের এই যুগে ওয়েবসাইট খুবই গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ। প্রায় সব ধরনের প্রতিষ্ঠানেরই বর্তমানে ওয়েবসাইট রয়েছে। এবং প্রতিনিয়ত এটি বাড়ছে। ওয়েবসাইট তৈরির কাজটি করে থাকেন একজন ওয়েব ডেভেলপার বা সফটওয়্যার ডেভেলপার। সময়ের সাথে পাল্লা দিয়ে এই কাজের চাহিদা প্রতিনিয়তই বাড়ছে।
০৫। গ্রাফিক্স ডিজাইন
গ্রাফিক্স ডিজাইন এর চাহিদা অনেক আগে থেকে ছিল, আছে ও ভবিষ্যতেও এর চাহিদা থাকবে। এ কাজটি একই সাথে আনন্দদায়ক এবং সৃজনশীল। যদি আপনার মাঝে ক্রিয়েটিভিটি থাকে আর স্বাধীনভাবে কাজ করতে চান তাহলে ফ্রিল্যান্সার হিসেবে গ্রাফিক ডিজাইনে নিজেকে গড়ে তুলতে পারেন। গ্রাফিক্স ডিজাইনার ক্যাটাগরি গুলো হচ্ছে –
- লোগো ডিজাইন,
- কোন কোম্পানির জন্য ব্রান্ডিং ডিজাইন করা,
- বিজনেস বা ভিজিটিং কার্ড,
- ফ্লাইয়ার ও ব্রোশিয়ার ডিজাইন,
- বুক কভার,
- ম্যাগাজিন ডিজাইন করা এবং
- ফেইসবুকের কভার ডিজাইনসহ রয়েছে নানান ডিজাইন। এইজন্য এর চাহিদা রয়েছে ব্যাপক।
০৬। ব্যাংকিং অ্যান্ড ফিন্যান্স ম্যানেজার
আদিকাল থেকে ব্যাংকের প্রচলন রয়েছে। এবং বর্তমানে সারা বিশ্বে শত শত ব্যাংক রয়েছে। আর প্রতিটা ব্যাংকেই বিভিন্ন বিভাগে রয়েছে হাজার হাজার কর্মী। বর্তমানে বাংলাদেশে চাকরির বাজারে ভালো অবস্থানে রয়েছে ব্যাংকিং সেক্টর। বাংলাদেশের ছেলে মেয়েদের চাকরির জন্য প্রথম ক্ষেত্রে রয়েছে ব্যাংকিং অ্যান্ড ফিন্যান্স ম্যানেজার।
অনেকে রিস্ক মুক্ত চাকরি হিসেবে অভিহিত করে ব্যাংকিং অ্যান্ড ফিন্যান্স ম্যানেজারকে। ব্যাংকিং খাতের সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো এই খাতে ক্যারিয়ারকে অনেক বেশি নিরাপদ মনে করা হয়। ব্যাংকিং সেক্টরে অনেক প্রাইভেট ব্যাংক প্রতিষ্ঠিত হওয়ায় এই পেশায় তরুণদের সুযোগ অনেক বাড়ছে।
০৭। অ্যাকাউন্ট্যান্ট ও অডিটর
কোন কোম্পানির লাভ ক্ষতি হিসাব নির্ণয় করার জন্য অ্যাকাউন্ট্যান্ট ও অডিটরের প্রয়োজন হয়ে থাকে। আর বর্তমানে হাজার হাজার কোম্পানির রয়েছে এবং প্রতিনিয়ত নতুন তৈরি হচ্ছে। তার জন্য দক্ষ লোকবল নিয়োগ দিচ্ছে কোম্পানির কর্তৃপক্ষরা।
প্রতিষ্ঠান যে ধরনেরই হোক না কেন, আর্থিক বিষয়াদি সেখানে থাকবেই। আর অর্থ লেনদেনসংক্রান্ত হিসাব-নিকাশ করার জন্য প্রয়োজন একজন অ্যাকাউন্ট্যান্ট বা অডিটর। ক্যারিয়ার বিল্ডার্সের তথ্যানুসারে, প্রতি মাসে প্রায় ২৮ হাজার অ্যাকাউন্ট্যান্টের পদ ফাঁকা থাকে যোগ্য কর্মীর অভাবে। তাই আপনার পছন্দের তালিকায় এই পেশাটিও রাখতে পারেন।
০৮। এপস ডেভেলপমেন্ট
বর্তমানে মোবাইল ব্যবহার করে না, এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া দুস্কর। দিন দিন ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। বাংলাদেশে প্রায় ইন্টারনেট ব্যবহারকারী প্রায় ৮ কোটি ছাড়িয়ে যাচ্ছে। আর এন্ড্রয়েড ফোন মানেই হল এপস।
এন্ড্রয়েড মোবাইল আরও সহজ ভাবে ব্যবহার করার জন্য ও বিভিন্ন ধরনের গুরুত্বপূর্ণ কার্যকরী ইনফরমেশন গুলো জানতে অনেক ধরনের এপস গুগল প্লে স্টোরে পাওয়া যায়। এবং প্রতিনিয়ত নিত্য নতুন এপস ডেভেলপ ও তৈরি হচ্ছে । এইজন্য এরও অনেক চাহিদা রয়েছে।
০৯। ফটোগ্রাফি
ফটোগ্রাফি বর্তমান সময়ে একটি জনপ্রিয় পেশা। প্রায় অনেকেই শখের বসে ফটোগ্রাফার হয়ে থাকেন। কিন্ত বর্তমানে এটি অনেক জনপ্রিয় পেশা হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিভিন্ন অনুষ্ঠানে কিংবা বিয়েতে এখন ফটোগ্রাফি ছাড়া যেন চলেই না। সুন্দর ও আকর্ষণীয় ছবি কেই বা না চাই এবং তার জন্য একজন ফটোগ্রাফার প্রয়োজন।
১০। ভিডিও এডিটিং
ইউটিউব হচ্ছে ভিডিও শেয়ারিং সবচেয়ে বড় প্লাটফর্ম এবং বর্তমানে ফেইসবুকে ও প্রচুর ভিডিও আপলোড হচ্ছে। ভিডিও আকর্ষণীয় করে তুলার জন্য প্রয়োজন প্রফেশনাল ভিডিও এডিটর। এই পেশাতেও রয়েছে অনেক ইনকাম।
এ পেশায় ক্যারিয়ারে খ্যাতি, সুনাম, পরিচিতির পাশাপাশি রয়েছে উজ্জ্বল ভবিষ্যতের হাতছানি। বিশ্বব্যাপিতো বটেই, বাংলাদেশেই রয়েছে এ পেশায় ক্যারিয়ার গড়ার বিশাল ক্ষেত্র। তাই আপনি চাইলে এই পেশাটিকেও বাচাই করে নিতে পারেন।
আশা করি, এ সময়ের সেরা ১০টি পেশা সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পেরেছেন। এছাড়াও রয়েছে আরও অনেক পেশা, তবে তথ্য প্রযুক্তির যোগ হিসেবে এই পেশাগুলোর অনেক জনপ্রিয়তা রয়েছে এবং ভবিষ্যতেও থাকবে।
কোন পেশা সবচেয়ে ভালো
এই সময়ের তরুণ-তরুণীদের পছন্দের পেশা, কাজের পরিবেশ ও বাস্তবতা নিয়ে ক্যারিয়ার এখন তরুণরা চায় নিজেদের মেধা খাটানোর জায়গার পাশাপাশি যে কাজটি করবে সেটি যেন নিজের সাথে মানিয়ে নিতে পারে। সহজ কথায় প্রতিদিনের কাজটিকে সে উপভোগও করতে চায়। সবেমাত্র পড়াশোনা শেষ করে যারা কর্মক্ষেত্রে প্রবেশ করছে, তাদের প্রতিযোগিতাটা এখন অনেক বেশি।
আর এই প্রতিযোগিতায় সবচেয়ে বেশি এগিয়ে থাকে যারা নতুন নতুন আইডিয়া তৈরির পাশাপাশি প্রাকটিক্যাল কাজে দক্ষ। বর্তমানে তরুণরা একদিকে যেমন প্রচলিত পেশার দিকে ঝুঁকছে, তেমনি বিভিন্ন সৃজনশীল ও চ্যালেঞ্জিং পেশাও বেছে নিচ্ছে।
আবার অনেকে সুবিধাজনক পেশা বেছে নিয়েই থাকছে চিন্তামুক্ত। নিজেদের স্বকীয়তা ঠিক রেখে মেধা ও মননের সমন্বয় ঘটিয়ে পেশাজীবন শুরু করতেও ইচ্ছুক বেশির ভাগ তরুণ। নিজের ক্যারিয়ার কেমন হবে? সেটা অনেকটাই নির্ভর করে নিজের ধরনের ওপর। আপনি মানুষটা কোন ধরনের? তার ওপর ভিত্তি করে যদি ক্যারিয়ারের যাত্রা শুরু করেন, তাহলে সাফল্য আসবে নিশ্চিত।
নিজে যদি বুঝতে না পারা যায় কোন্ রাস্তাটা ভালো তাহলে মা-বাবার সাথে, বন্ধুদের সাথে এবং ক্লাসের শিক্ষকদের সাথে একটু আলোচনা করে নিলেই হয়। তবে পরামর্শ নেবেন অন্যদের কিন্তু নিজের সিদ্ধান্ত নিজে নেয়ার চেষ্টা এবং সাহস থাকতে হবে।
০১. ইঞ্জিনিয়ারিং
আমাদের দেশে সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে রয়েছে ইঞ্জিনিয়ারিং এবং আর্কিটেকচার পড়ার সুযোগ। ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের বেশকিছু ভাগ রয়েছে। এর মধ্যে সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং, ইলেকট্রিক্যাল ও ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং, সিস্টেম ইঞ্জিনিয়ারিং, নেটওয়ার্ক ইঞ্জিনিয়ারিং, পাওয়ার ইঞ্জিনিয়ারিং, মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং উল্লেখযোগ্য।
আর আর্কিটেকচারের মূল বিষয় একটি হলেও এই বিষয়ে পেশা গড়ারও বিভিন্ন খাত রয়েছে। কেউ কেবল বিল্ডিং ডিজাইনে, কেউ বিভিন্ন ধরনের স্থাপনা ডিজাইনে, কেউ ইন্টেরিয়র ডিজাইনে নিজেদের ক্যারিয়ার গড়তে পারেন। উভয় ক্ষেত্রেই ক্যারিয়ার গড়তে চাইলে এসব বিষয়ে স্নাতক ডিগ্রির পাশাপাশি দরকারমতো এমবিএ, মাস্টার্স, পোস্ট গ্র্যাজুয়েট ডিপ্লোমা করার সুযোগও আছে।
এখনকার তরুণদের কাছেও ইঞ্জিনিয়ারিং বা প্রকৌশল একই রকম আকর্ষণীয় পেশা। ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের পাশাপাশি বর্তমানে স্থাপত্য বা আর্কিটেক্টও তরুণদের পছন্দের তালিকার শুরুর দিকেই স্থান করে নিয়েছে। ইঞ্জিনিয়ার এবং স্থপতিদের ক্যারিয়ারের স্থিতিশীলতা যেমন অন্য অনেক পেশা থেকে বেশি, তেমনি এসব পেশায় সামাজিক মান-মর্যাদাও ঈর্ষণীয়।
০২. ব্যাংকিং
বর্তমানে চাকরির বাজারে ভালো অবস্থানে রয়েছে ব্যাংকিং সেক্টর। সদ্য শিক্ষাজীবন শেষ করা তরুণ-তরুণীদের পছন্দের প্রথম কাতারে রয়েছে এই পেশা। কারণ এই পেশাটিকে সবাই চিন্তামুক্ত একটি পেশা হিসেবেই মনে করেন।
ব্যাংকিং সেক্টরে প্রাইভেট ব্যাংকগুলো প্রবেশ করায় এই পেশায় তরুণদের সুযোগ দিনে দিনে বাড়ছে। প্রাইভেট ব্যাংকগুলোর সেবার মান সরকারি ব্যাংকের তুলনায় ভালো বলে গ্রাহকসংখ্যাও দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। তাই চাহিদার সাথে তাল মেলাতে বাড়ছে বেসরকারি ব্যাংকের নতুন শাখা।
০৩. টেলিকম
আপনি টেলিকমিউনিকেশনে ক্যারিয়ার গড়তে চাইলে গ্র্যাজুয়েটসহ নেটওয়ার্কিং, ইলেকট্রিক্যাল, মেকানিক্যাল, কম্পিউটার ও টেলিকমিউনিকেশন বিষয়ে ব্যাকগ্রাউন্ড থাকতে হবে।
পাশাপাশি এ সেক্টরের জন্য নিজেকে গড়তে হবে স্মার্ট ও রুচিশীলভাবে। হতে হবে দক্ষ ও প্রগতিশীল। থাকতে হবে সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষমতা। এখানে পুঁথিগত বিদ্যা আর নিজের ব্যক্তিগত দক্ষতার সমন্বয়ে যে কেউ গড়তে পারেন নিজের উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ। বেতন ও কাজের পরিবেশও ভালো।
০৪. মার্কেটিং
চ্যালেঞ্জিং অথচ সম্ভাবনাময় একটি খাত হলো সেলস অ্যান্ড মার্কেটিং। এ সেক্টরে চাকরি পাওয়ার জন্য সাধারণত বিবিএ, এমবিএ কিংবা মার্কেটিং, ফিন্যান্স ও হিসাববিজ্ঞানে স্নাতক হতে হয়। যারা নতুন নতুন চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করতে পছন্দ করেন তাদের জন্য সেলস অ্যান্ড মার্কেটিং উপযুক্ত স্থান। পণ্য বাজারজাত করতে প্রচুর সেলস অ্যান্ড মার্কেটিং কর্মীর প্রয়োজন।
যদিও একসময় সেলস অ্যান্ড মার্কেটিং একই ডিপার্টমেন্ট ছিল কিন্তু বর্তমানে সেলস ও মার্কেটিং আলাদা আলাদা ডিপার্টমেন্ট ধরা হয়। দেশীয় কোম্পানির পাশাপাশি বিদেশি অনেক কোম্পানিও বাংলাদেশে তাদের পণ্য বাজারজাত করছে। ফলে বাড়ছে এ ক্ষেত্রে কর্মসংস্থান। তাই এসব বিভাগে প্রচুর দক্ষ লোকবল প্রয়োজন হচ্ছে।
০৫. মিডিয়ায় ক্যারিয়ার
ক্যারিয়ার হিসেবে ইলেকট্রনিক মিডিয়া অনেকের কাছেই আকর্ষণীয় ও পছন্দের কাজ। বর্তমানে অনেক তরুণ-তরণীই ধাবিত হচ্ছে বিভিন্ন গ্ল্যামারস পেশার দিকে। এ ধরনের পেশার তালিকায় বর্তমানে যে ক্ষেত্রটি উঠে আসছে তা হলো গণমাধ্যম বা মিডিয়া।
আর ছোট পর্দার মোহনীয় আকর্ষণের কারণে ইলেকট্রনিক মিডিয়া রয়েছে পছন্দের প্রথমে। এখানকার ক্যারিয়ারে খ্যাতি, সুনাম, সুপরিচিতির পাশাপাশি রয়েছে উজ্জ্বল জীবনের হাতছানি। বিশ্বব্যাপী তো বটেই, বাংলাদেশেই রয়েছে এ পেশায় ক্যারিয়ার গড়ার বিশাল ক্ষেত্র।
বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি বেতনের চাকরি কোনটি
১) হিউম্যান রিসোর্স ম্যানেজার
এক সময় এইচআর নিয়ে দেশি উদ্যোক্তাদের তেমন আগ্রহ ছিল না। তবে এর কার্যকারিতা এবং প্রয়োজনীয়তা প্রমাণিত হওয়ার সাথে সাথে বেড়েছে এর চাহিদা। প্রতিটি প্রতিষ্ঠানের প্রয়োজনীয় সব কর্মকর্তা অথবা কর্মচারী নিয়োগ দেয়া এবং তাদের কাজের তদারকি করা এইচআরডি’র কাজ।
একটি প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন ডিপার্টমেন্টের চাহিদা অনুযায়ী এইচআরডি কোম্পানির প্রয়োজনীয় লোকবল নিয়োগ দিয়ে থাকে এবং কর্মীদের বেতন কাঠামো, প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণও দিয়ে থাকে এইচআরডি। কর্মকর্তা-কর্মচারীদের চাহিদা এবং এরা যাতে ঠিকভাবে কাজ করে সেদিকেও নজরদারি করে এ বিভাগ।
এখানে ক্যারিয়ার গড়তে চাইলে অবশ্যই মাস্টার্স/এমবিএ মেজর-ইন-এইচআর ডিগ্রিধারী হতে হবে। তাহলে চাকরির ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার পাওয়া যাবে। কিছু কাজের আগে অভিজ্ঞতা থাকলে আরো ভালো হয়। বাংলাদেশি টাকায় বেতন সম্ভাব্য লক্ষমাত্রা: ১৬৫,৬২৯ টাকা। তবে এই এটা কোম্পানি অনুযায়ী কম বেশিও হতে পারে।
২) আইটি ব্যবস্থাপক
আইটি ম্যানেজার হতে আপনাকে অনেক বেশি সময় দিতে হবে। বাংলাদেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে তথ্যপ্রযুক্তির উপর আন্ডারগ্র্যাজুয়েট ও পোস্টগ্রাজুয়েট ডিগ্রি অর্জনের সুযোগ রয়েছে। সাধারণত আইটি ম্যানেজার পদে কাজ করার জন্য ইনফরমেশন টেকনোলজি, কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং কিংবা কমিউনিকেশন ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে স্নাতক ডিগ্রি থাকা লাগে।
একজন আইটি ম্যানেজারেরকে সব সময় একটিভ থাকতে হয়। বাংলাদেশি টাকায় বেতন সম্ভাব্য লক্ষমাত্রা: ১০৫,৩৬৬ টাকা । তবে এই এটা কোম্পানি অনুযায়ী কম বেশিও হতে পারে।
৩) একাউন্ট ম্যানেজার
বাংলাদেশি টাকায় একাউন্ট ম্যানেজার পদে মাসিক বেতন 94,479। অ্যাকাউন্ট ম্যানেজার কোনও সংস্থায় গ্রাহক পরিষেবা এবং বিক্রয় দলের মধ্যে ইন্টারফেস হিসাবে কাজ করে। অ্যাকাউন্ট ম্যানেজার গ্রাহকের চাহিদা বুঝে, এই চাহিদাগুলি কীভাবে পূরণ করবেন তা পরিকল্পনা করে এবং কোম্পানির জন্য বিক্রয় বাড়ায়।
৪) মার্কেটিং ম্যানেজার
মার্কেটিং ম্যানেজারের প্রাথমিক দায়িত্ব বাজার গবেষণা, মূল্য গবেষণা, পণ্য বিপণন, বিপণন যোগাযোগ, বিজ্ঞাপন এবং জনসংযোগ ব্যবহার করে, সমগ্র প্রতিষ্ঠানের জন্য সফল বিপণনের মাধ্যমে বিক্রয় বৃদ্ধি করা।
বাংলাদেশি টাকায় বেতন সম্ভাব্য লক্ষমাত্রা: ২৪০,৯২০ টাকা। তবে এই এটা কোম্পানি অনুযায়ী কম বেশিও হতে পারে।
৫) ম্যানেজার
আমাদের বাংলাদেশে চাকরি জগতে লোভনীয় একটি পদ হচ্ছে ম্যানেজার বা ব্যবস্থাপক। একজন ব্যবস্থাপকের উপর একটি প্রতিষ্ঠান উপযুক্ত লক্ষ্যে পৌঁছানোর প্রক্রিয়ার ৬৫ থেকে ৭০% নির্ভর করে।
দলের সকলের সাথে সদ্ভাব বজায় রাখা অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। দলের সকলে সঠিকভাবে কাজ করছে কিনা, এ বিষয়ে দৈনিক ফলো-আপ করা বাঞ্ছনীয়। দলীয় যেকোনো বিষয়ে ম্যানেজারের সিদ্ধান্তই থাকে চূড়ান্ত। সময় উপযোগী সঠিক সিদ্ধান্ত দিয়ে একজন ম্যানাজার একটি কোম্পানিকে অনেক উচ্চ পর্যায়ে নিয়ে যেতে পারেন।
বাংলাদেশি টাকায় বেতন সম্ভাব্য লক্ষমাত্রা: ৬৫,৯৫০ টাকা। তবে এই এটা কোম্পানি অনুযায়ী কম বেশিও হতে পারে।
৬) সফটওয়্যার ডেভেলপার
একটা সময় ছিল যখন কিছু কিছু প্রতিষ্ঠানগুলোয় তথ্য নির্দিষ্ট জায়গায় জমা রাখার ব্যবস্থা তেমন ছিল না। বর্তমানে সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্টের প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য।
ব্যাংকিং সহ আরও বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানগুলোতে এখন কাজের সুবিধার জন্য নিজস্ব সফটওয়্যার ব্যবহার করা হয়। এর এই সফটওয়্যার তৈরির কাজ সফটওয়্যার ডেভেলপার করে থাকেন। কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং অথবা আইটি বিষয়ের স্নাতকরা সফটওয়্যার ডেভেলপার অথবা সফটওয়্যার ডেভেলপার হিসেবে কাজ করে থাকে।
বাংলাদেশি টাকায় বেতন সম্ভাব্য লক্ষমাত্রা: ৮৫,৮৯৯ টাকা। তবে এই এটা কোম্পানি অনুযায়ী কম বেশিও হতে পারে।
৭) মোবাইল অ্যাপ ডেভেলপার
বর্তমানে অনেক প্রতিষ্ঠান তাদের মোবাইল অ্যাপ চালু করেছে। যেখান থেকে তাদের সকল সেবা কাস্টমার ঘরে বসে পেয়ে থাকে। মোবাইল ও স্মার্টফোন প্রযুক্তির উত্তরোত্তর বিকাশের কারনে মোবাইল অ্যাপ ডেভেলপাররা তাঁদের টেকনিক্যাল ডিজাইনের দক্ষতা কাজে লাগানোর অনেক সুযোগ পাচ্ছেন।
এক্ষেত্রে চাইলে একটি অ্যাপ অথবা একাদিক অ্যাপ নিয়ে কাজ করা যায়। মোবাইল অ্যাপ ডেভেলপার এর চাহিদা দিন দিন বেড়ে চলেছে। প্রযুক্তি যত উন্নতি হবে এর প্রয়োজনীয়তা তত বাড়বে। বাংলাদেশি টাকায় বেতন সম্ভাব্য লক্ষমাত্রা: ১২০,০০০ টাকা। তবে এই এটা কোম্পানি অনুযায়ী কম বেশিও হতে পারে।
৮) অনলাইন মার্কেটিং চাকরি
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মার্কেটিং, ইন্টারনেট ও সাধারণ মার্কেটিং-এর একটি উপসেট। ব্যবসা আজকাল তার ভোক্তাদের কাছে পৌঁছানোর জন্য ইতোমধ্যেই অনলাইনে চলে এসেছে যেখানে ভোক্তারা আগে থেকেই রয়েছেন।
আপনার যদি অনলাইন মার্কেট সম্পর্কে ধারনা থাকে। একাদিক ভাষা সম্পর্কে ধারনা থাকে তাহলে এই সেক্টরে ভাল করতে পারা যায় খুব সহজে। বাংলাদেশি টাকায় বেতন সম্ভাব্য লক্ষমাত্রা: ৫০,০০০ টাকা। তবে এই এটা কোম্পানি অনুযায়ী কম বেশিও হতে পারে।
৯) ব্লগার/ আর্টিকেল রাইটার
আপনি যদি সৃজনশীল না হন বা আপনার যদি সুযোগের অভাব থাকে তবে আপনি ভিন্নধর্মী কিছু করতে পারেন এবং নিজস্ব একটি ব্লগ খুলতে পারেন। হাজার হাজার ইন্টারনেট ব্যবহারকারী ইতোমধ্যেই সেটি করেছেন। আপনি নিজস্ব ওয়েবসাইট চালালে অনেক স্বাধীনতা পাবেন।
আপনি বিজ্ঞাপন দিয়ে, বিক্রির জন্য বিজ্ঞাপনের জায়গা রেখে, স্পন্সরড পোস্ট লিখে, এবং আপনাকে পি পি সি রাজস্বের একটি অংশ দেবে এমন সব ওয়েবসাইটের লিঙ্ক দিয়ে উপার্জন করতে পারেন। চাইলে অ্যাফিলিয়েট লিঙ্ক ব্যবহার করে ইনকাম করতে পারবেন।
তার জন্য আপনার ভাল একটি ওয়েবসাইট থাকতে হবে এবং ব্লগ বা কন্টেন্ট লেখার মত দক্ষতা থাকতে হবে। আপনি চাইলে এটি একা করতে পারেন অথবা চাইলে একাদিক মানুষ নিয়ে করতে পারেন। যে যেই বিষয়ে দক্ষ সে বিষয়ে ব্লগ লিখে পাবলিশ করবে।
বাংলাদেশি টাকায় বেতন সম্ভাব্য লক্ষমাত্রা: ৫০,০০ টাকা। তবে এই এটা কোম্পানি অনুযায়ী কম বেশিও হতে পারে।
১০) এসইও কনসালটেন্ট
সব প্রতিষ্ঠান চাই তার কোম্পানি ওয়েবসাইট গুগল রাঙ্কিং সবার আগে আসুক। আর এই কাজটা মূলত করতে হয় সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন সংক্ষেপে যাকে বলে SEO এর মাধ্যমে। এসইও দক্ষতা আরও বেশী প্রযুক্তিনির্ভর কিন্তু আপনার যদি কোডিং, প্রোগ্রামিং বা ওয়েব ডেভেলপমেন্টের জ্ঞান থাকে তবে আপনি এই ক্ষেত্রটিতে ভালো করবেন। অনলাইন মার্কেটিং এর একটি গুরুত্বপূর্ণ পার্ট এসইও।
বাংলাদেশের সবচেয়ে আরামের চাকরি
বাংলাদেশে “সবচেয়ে আরামের চাকরি” বলতে সাধারণত এমন চাকরিকে বোঝায় যেখানে কাজের চাপ কম, বেতন-ভাতা ও সুযোগ-সুবিধা ভালো, চাকরির স্থিতিশীলতা রয়েছে এবং কাজের পরিবেশ অনুকূল। তবে “আরামের” ধারণাটি ব্যক্তিভেদে ভিন্ন হতে পারে। কিছু মানুষের জন্য কম কাজের চাপই প্রধান, আবার কেউ বেতন বা সামাজিক মর্যাদাকে প্রাধান্য দেন।
বাংলাদেশে সাধারণভাবে আরামদায়ক বলে বিবেচিত কিছু চাকরি:
১. সরকারি চাকরি
- সুবিধা: স্থায়িত্ব, নিশ্চিত বেতন, ছুটির সুবিধা, পেনশন, কম কাজের চাপ (কিছু বিভাগে)।
উদাহরণ:
- বিসিএস (প্রশাসন, শিক্ষা, পররাষ্ট্র ক্যাডার)।
- ব্যাংক কর্মকর্তা (সোনালী, জনতা, অগ্রণী ইত্যাদি)।
- সরকারি স্কুল-কলেজের শিক্ষক।
- সরকারি হাসপাতালের ডাক্তার (বিশেষায়িত হাসপাতালগুলোতে চাপ বেশি)।
২. বেসরকারি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান
- সুবিধা: আকর্ষণীয় বেতন, বোনাস, কম শারীরিক পরিশ্রম।
- চ্যালেঞ্জ: টার্গেট ও চাপ থাকতে পারে (বিশেষ করে মার্কেটিং বিভাগে)।
৩. বহুজাতিক কোম্পানি (MNC)
- সুবিধা: উচ্চ বেতন, আন্তর্জাতিক পরিবেশ, সুযোগ-সুবিধা।
- চ্যালেঞ্জ: প্রতিযোগিতা এবং পারফরম্যান্স চাপ।
৪. বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক (প্রাইভেট/পাবলিক)
- সুবিধা: মর্যাদা, গবেষণার সুযোগ, কম রুটিন কাজ।
- চ্যালেঞ্জ: প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর কিছু ক্ষেত্রে চাপ বেশি।
৫. এনজিও বা উন্নয়ন সংস্থা
- সুবিধা: ফিল্ড ও অফিস কাজের সমন্বয়, সামাজিক প্রভাব।
- চ্যালেঞ্জ: প্রকল্পভিত্তিক চাকরির অনিশ্চয়তা।
৬. রেমোট/ফ্রিল্যান্সিং (আউটসোর্সিং)
- সুবিধা: ঘরে বসে কাজ, সময়ের স্বাধীনতা।
- চ্যালেঞ্জ: আয়的不স্থিরতা, দক্ষতার প্রয়োজন।
কোনটি সবচেয়ে আরামদায়ক?
- স্থিতিশীলতা চাইলে সরকারি চাকরি (বিশেষ করে অফিস ভিত্তিক)।
- বেতন ও সুযোগ চাইলে MNC বা ব্যাংক।
- সময়ের নমনীয়তা চাইলে ফ্রিল্যান্সিং বা শিক্ষকতা।
“আরামদায়ক” চাকরি বলতে আলস্য নয়, বরং সুস্থ কাজের পরিবেশ বোঝায়। অনেক সরকারি চাকরিতেও রাজনৈতিক চাপ বা দীর্ঘসূত্রতা থাকে। আবার ব্যাংক বা MNC-তে প্রোমোশনের চাপ থাকতে পারে। তাই আপনার দক্ষতা ও পছন্দ অনুযায়ী ক্যারিয়ার প্ল্যান করা গুরুত্বপূর্ণ।
লেখকের শেষ মতামত
এই ছিল আজকের বাংলাদেশের সেরা ১০ পেশা এবং এ সময়ের সেরা ১০ ক্যারিয়ার সম্পর্কিত সকল তথ্য এখানে সংক্ষেপে বিস্তারিত জানাতে চেষ্টা করেছি। এর বাইরেও আপনার কোনো প্রশ্ন থাকলে তা কমেন্ট করে জানাবেন।
তো বন্ধু আশা করছি আপনি আমার এই পোস্টটি পড়ে বাংলাদেশের সেরা ১০ পেশা জানতে পেরেছেন। এরপরও বুঝতে অসুবিধা হলে কমেন্ট করে জানাবেন। আর্টিকেলটি আপনার পরিচিতদের মাঝে শেয়ার করে দিতে পারেন। এতে করে তারাও বাংলাদেশের সেরা ১০ পেশা সম্পর্কে জানতে পারবে। ধন্যবাদ।