আমাদের দেশে বেশিরভাগ মেয়েই তাদের যোনিতে চুলকানি হলে তা লজ্জায় চেপে রাখে ফলে সৃষ্টি হয় অস্বস্তিকর এবং কষ্টদায়ক এক পরিস্থিতি। সংক্রমণ, অ্যালার্জি বা হরমোনের পরিবর্তনের মতো নানা বিধ কারণে এটি হতে পারে। কিন্তু জানেন কি খুব সহজেই যোনিতে চুলকানি হলে ঘরোয়া উপায় আছে।
মাত্রারিক্ত পরিমাণে যোনিতে চুলকানি হলে যোনিতে চুলকানি দূর করার ক্রিম ও যোনিতে চুলকানি হলে ঔষধ প্রয়োগ জরুরী। এই সকল বিষয়ে সমাধান দিতে ও বিস্তারিত তথ্য জানাতে আজ এই ব্লগটি লিখছি, আশা করছি পুরো ব্লগটি পড়ে খুব সহজেই যোনি চুলকানি থেকে রেহায় পাবেন।
যোনিতে চুলকানি হওয়ার কারণ
যোনিতে চুলকানি হলে ঘরোয়া উপায়গুলো প্রয়োগের পূর্বে চুলকানির কারণ জানা প্রয়োজন। এখানে, যোনিতে চুলকানির সম্ভাব্য ট্রিগারগুলির সম্বন্ধে জানবো এবং এটি ব্যবস্থাপনা ও প্রতিরোধের উপায়গুলোর প্রতি দৃষ্টিপাত করব। বিভিন্ন কারণে যোনিতে চুলকানি হয়ে থাকে।
আর যোনিতে চুলকানি হলে এটা অনেক অস্বস্তিকর লাগে। বিভিন্ন রকম সংক্রমণের কারণে যোনিতে চুলকানি হতে পারে। অনেকেই জানতে চেয়ে থাকেন যোনিতে চুলকানি হয় কেন। চলুন জেনে নেওয়া যাক যোনিতে চুলকানি হওয়ার কারণ গুলো কি কি? যোনিতে চুলকানি হওয়ার বেশ কিছু কারণ রয়েছে সেগুলো বিস্তারিত নিচে তুলে ধরা হলঃ
ইস্ট সংক্রমণ: ইস্ট ইনফেকশন হয় মূলত ক্যান্ডিডা ইস্টের অত্যধিক বৃদ্ধির ফলে। যদিও এটি একটি যোনি চুলকানির একটি সাধারণ কারণ। চুলকানির সাথে আরও কিছু লক্ষণ দেখা যায় যেমন কুটির পনিরের মতো ঘন সাদা স্রাব হওয়া, হরমোনের পরিবর্তন এবং দুর্বল ইমিউন সিস্টেম খামির সংক্রমণে অবদান রাখতে পারে।
ব্যাকটেরিয়াল ভ্যাজিনোসিস: যোনিতে ব্যাকটেরিয়ার ভারসাম্যহীনতা ব্যাকটেরিয়াল ভ্যাজিনোসিস (BV) হতে পারে। লক্ষণগুলির মধ্যে রয়েছে চুলকানি, সাথে মাছের গন্ধ এবং ধূসর স্রাব। ডাচিং, নতুন যৌন সঙ্গী, এবং যোনি স্বাস্থ্যবিধি পণ্য যোনি ভারসাম্য ব্যাহত করতে পারে এবং BV ট্রিগার করতে পারে।
যোগাযোগের ডার্মাটাইটিস: সুগন্ধযুক্ত সাবান, ডিটারজেন্ট বা মেয়েলি স্বাস্থ্যবিধি পণ্যগুলির মতো পণ্যগুলি থেকে জ্বালা চুলকানির কারণ হতে পারে। কন্টাক্ট ডার্মাটাইটিস নামে পরিচিত এই অবস্থাটি ল্যাটেক্স কনডম বা কাপড়ে অ্যালার্জির প্রতিক্রিয়ার কারণেও হতে পারে।
সেক্সুয়ালি ট্রান্সমিটেড ইনফেকশন (STIs): কিছু STI, যেমন ক্ল্যামাইডিয়া, গনোরিয়া এবং জেনিটাল হারপিস, যোনিপথে চুলকানির কারণ হতে পারে। এই সংক্রমণগুলি প্রায়শই ব্যথা, অস্বাভাবিক স্রাব বা ঘাগুলির মতো অতিরিক্ত লক্ষণগুলির সাথে আসে।
স্ট্রেস এবং হাইজিন: আপনার দেহের স্ট্রেস রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে প্রভাবিত করে চুলকানি হতে পারে। যার ফলে দুর্বল যোনি স্বাস্থ্যবিধি্র কারনে প্রাকৃতিক ভারসাম্য ব্যাহত করে অস্বস্তি সৃষ্টি করতে পারে।
উল্লিখিত কারণ ছাড়াও যোনিতে চুলকানি হওয়ার বেশ কিছু কারণ রয়েছে সেগুলো হলোঃ
- হরমোনের পরিবর্তন
- অতিরিক্ত মানসিক চাপ
- পিউবিক উকুন বা স্ক্যাবিস
- যৌন সংক্রমণ
- মেনোপজ
- শুষ্ক ত্বক বা ত্বকের অবস্থা
- সে*ক্সুয়ালি ইনফেকশন
সংক্ষেপে, সংক্রমণ থেকে স্বাস্থ্যবিধি অনুশীলন পর্যন্ত বিভিন্ন কারণে যোনিতে চুলকানি হতে পারে। আপনার শরীরের সংকেতের সাথে মিলিত হওয়া এবং ভাল যোনি যত্ন বজায় রাখা চুলকানি অস্বস্তি প্রতিরোধ এবং পরিচালনার মূল চাবিকাঠি। তার পরও যদি চুলকানি হয় তবে যোনিতে চুলকানি হলে ঘরোয়া উপায় এ প্রতিকারের উদ্যোগ নিতে পারেন।
যোনিতে চুলকানি দূর করার ক্রিমের নাম
অনেক মেয়ে রয়েছে যাদের যোনিতে চুলকানি হলে কাউকে বলতে পারেনা। এবং ডাক্তারের কাছে গিয়ে বলতে লজ্জাবোধ করে। তাই তাদের জন্য এখন আমরা যোনিতে চুলকানি দূর করার ক্রিমের নাম বলবো। যোনি চুলকানি দূর করার বেশ কিছু ক্রিম রয়েছে সেগুলো হলো।
- Hydrocortisone Cream: এই ক্রিমটি ডার্মাটাইটিস, চুলকানি, এলার্জি ভালো করার জন্য বেশ কার্যকরি। তবে এই ক্রিম ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া ব্যবহার করা উচিত নয়। এই ক্রিম ব্যবহার করার আগে ভালো করে হাত ধুয়ে এবং চুলকানির স্থান ধুয়ে পরিষ্কার করে চুলকানির স্থানে ব্যবহার করবেন। ভালো ফলাফল পেতে দিনে ৩ থেকে ৪ বার ব্যবহার করবেন।
- Clobetasol Cream: এই ক্রিম চুলকানি, জ্বালাপোড়া, ফোলাভাব নিরাময় করতে বেশ করতে কার্যকরি। এটা ক্রিম হিসেবে ডাক্তারের দোকানে পেয়ে যাবেন। তবে এই ক্রিম ব্যবহারের আগে অবশ্যই চিকিৎসক এর পরামর্শ নিবেন। ভালো ফলাফল পেতে দিনে ২ থেকে ৩ বার চুলকানির জায়গায় লাগাবেন।
- Pevisone Cream: ছত্রাকের আক্রমণের কারণে যোনি চুলকানি হয়ে থাকে। আর এই ক্রিম ছত্রাক ধ্বংস করে বেশ কার্যকরী। তাই এলার্জি জনির কারণে চুলকানি ত্বকের ফোলা ভাব সহ বিভিন্ন কারণে হওয়া চুলকানি ভালো করে। চুলকানি ভালো করতে পেভিসন ক্রিমটি দিনে দুইবার ব্যবহার করবেন। অথবা চিকিৎসক এর পরামর্শ অনুযায়ী ব্যবহার করবেন।
- Metronidazole Vaginal Gel: যোনি চুলকানি দূর করার জন্য Metronidazole Vaginal Gel বেশ কার্যকরি। এটা শুধুমাত্র যোনিতে ব্যবহারের জন্য তাই ত্বকের অন্য কোথাও ব্যবহার করবেন না। এই জেল ব্যবহার করার আগে ভালো করে হাত পরিষ্কার করে নিয়ে হালকা পরিমাণ জেল আঙ্গুলে নিয়ে যোনিতে লাগাতে হবে। অথবা চিকিৎসক এর পরামর্শ অনুযায়ী ব্যবহার করবেন।
- Steroid Cream
- Lidocaine Cream
উপরোক্ত ক্রিম গুলো যোনিতে চুলকানি হলে ব্যবহার করা পরামর্শ দিয়ে থাকে। তবে যোনিতে অতিরিক্ত পরিমাণে চুলকানি হলে ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া এই ক্রিমগুলো ব্যবহার করবেন না। কারণ যৌনাঙ্গ হল একটি কোমলময় জায়গা। অনেক সময় অনেক ধরনের ছত্রাক বা অ্যালার্জি বা অন্য কোন প্রদাহের কারণে যোনিতে চুলকানি হয়ে থাকে।
এই ক্রিমগুলিতে অ্যান্টিফাঙ্গাল এজেন্ট রয়েছে যা খামিরের মতো ছত্রাকের সংক্রমণকে লক্ষ্য করে। তারা এই ধরনের সংক্রমণের সাথে যুক্ত চুলকানি এবং অস্বস্তি থেকে মুক্তি দিতে পারে। তবে চুলকানি গুলো কি ধরনের এবং কোন কারণে চুলকানি হচ্ছে এগুলো চিকিৎসগণ বিভিন্ন পরীক্ষা নিরীক্ষার মাধ্যমে চিকিৎসা দিয়ে থাকে। অর্থাৎ চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ক্রিম গুলো সেবন করুন।
যোনিতে চুলকানি হলে ঔষধ এর নাম কি
যোনিতে চুলকানি নারীদের সবচেয়ে বেশি কষ্ট দিয়ে থাকে। কারণ এটা একটি সেনসিটিভ জায়গা। তবে যোনিতে চুলকানি হলে ঔষধ রয়েছে সেই ঔষধ গুলো সেবন করলে যোনি চুলকানি ভালো হতে পারে। যোনিতে চুলকানি হলে যেসব ঔষধ সেবন করবেন সেগুলোর নাম হলোঃ
- Loratadine
- Fexofenadine Hydrochloride
- Ketoconazole
- Fluconazole
- Miconazole
- Tioconazole
- Clotrimazole
এই ঔষধ গুলো ছত্রাকের আক্রমণ এবং এন্টিফাংগাল প্রতিরোধ করে যোনি চুলকানি ভালো করে। তাই ভালো ফলাফল পেতে এই ঔষধ গুলো ৩ থেকে ৫ দিন খাবেন। অথবা চিকিৎসক এর পরামর্শ অনুযায়ী সেবন করবেন। যোনিতে চুলকানি হলে যে ধরণের ঔষধ সেবন করতে হয় সেগুলো তুলে ধরা হলঃ
অ্যান্টিবায়োটিক: যোনিতে ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণের ক্ষেত্রে, ডাক্তারগণ সংক্রমণ পরিষ্কার করতে এবং চুলকানি উপশম করতে অ্যান্টিবায়োটিকগুলি লিখে দিয়ে থাকেন। যোনিতে চুলকানি হলে যে সকল অ্যান্টিবায়োটিক ঔষধ ব্যবহার করা হয় তার মধ্যে আছেঃ মেট্রোনিডাজল, ক্লিন্ডামাইসিন এবং অ্যাজিথ্রোমাইসিন।
অ্যান্টিফাঙ্গাল ওষুধ: যদি ছত্রাক সংক্রমণের কারণ হয়, তাহলে ক্রিম, ট্যাবলেট বা সাপোজিটরির আকারে শক্তিশালী অ্যান্টিফাঙ্গাল ওষুধগুলি নির্ধারিত হতে পারে। যেমন- ফ্লুকোনাজোল, ক্লোট্রিমাজোল, মাইকোনাজোল, টারবিনাফাইন।
টপিকাল স্টেরয়েড: গুরুতর চুলকানি এবং প্রদাহের জন্য, আপনার স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারী তাদের তত্ত্বাবধানে স্বল্পমেয়াদী ব্যবহারের জন্য শক্তিশালী টপিকাল স্টেরয়েডের সুপারিশ করতে পারে। যেমন- হাইড্রোকোর্টিসোন, বেটামেথাসোন, ক্লোবেটাসল, Triamcinolone.
যোনিতে চুলকানি দূর করার ঘরোয়া উপায়
যোনিতে চুলকানি এড়িয়ে চলতে প্রতিরোধ মূলক ব্যবস্থা গ্রহণের পরও যদি আক্রান্ত হন তবে ঘাবড়ানোর কিছু নাই। কারণ যোনিতে চুলকানি হলে ঘরোয়া উপায় আছে তা দূর করার জন্য। এই ঘরোয়া প্রতিকারগুলো প্রয়োগ করে খুব সহজে যোনি চুলকানি থেকে মুক্তি লাভ সম্ভব।
১। টক দই: ছোট আকারের একটি পট্টি তৈরি করে নিবেন এবং সেটা দইয়ের মধ্যে কিছুক্ষণ ডুবিয়ে রাখবেন ডুবিয়ে রাখার পরে সেটা তুলে নিয়ে সেই পট্টিটা যোনিতে লাগাবেন। ১৫ থেকে ২০ মিনিট রাখার পরে তুলে ফেলবেন এবং পরিষ্কার পানি দিয়ে ধুয়ে নিবেন। এটা যোনি চুলকানি ভালো করার জন্য অনেক কার্যকরী একটি উপায়।
২। আপেল সিডার ভিনেগার: একটি ছোট পাত্রের মধ্যে হালকা পরিমাণ পানি নিয়ে সেগুলো কুসুম গরম করে নিবেন এবং তারপরে সেই পানির মধ্যে ২ চামচ পরিমাণ আপেল সিডার ভিনেগার ভালোভাবে মিশিয়ে নিবেন। অতঃপর সেই পানিগুলো দিয়ে ভালোভাবে যোনি পরিষ্কার করে ধুয়ে ফেলবেন তাহলে যোনি চুলকানি দূর হয়ে যাবে।
৩। অ্যালোভেরা: যাদের বাড়ির আশেপাশে বা বাড়িতে এলোভেরা গাছ রয়েছে তারা প্রথমে এলোভেরা গাছের থেকে এলোভেরা কেটে আনবেন তারপরে সেখান থেকে অ্যালোভেরার সাদা অংশ গুলো বের করে নিবেন নেওয়ার পরে সেগুলো হালকা পরিমাণ করে যোনিতে লাগাবেন। তাহলে দেখবেন যোনি চুলকানি অনেকটা কমে গেছে।
৪। বরফ বা ঠান্ডা পানি: যোনি চুলকানি দূর করার জন্য বরফ অথবা বরফ গলানো ঠান্ডা পানির সেক নিতে পারেন। এটা তৎক্ষণাৎ যোনি চুলকানি দূর করার জন্য অনেক বেশি কার্যকরী হয়ে থাকে।
৫। চা গাছের তেল ব্যবহার: টি ট্রি অয়েল ব্যবহার করার ফলে অ্যান্টিব্যাকটেরিয়া ও অ্যান্টিফাঙ্গাল প্রশমিত হয়ে চুলকানি দূর করে। তাই যোনি চুলকানি দূর করতে টি ট্রি অয়েল অর্থ্যাৎ চা গাছের তেল ব্যবহার করতে পারেন। তবে বেশি পরিমাণ ব্যবহার করবেন না তাহলে যোনিতে জ্বালা করতে পারে।
৬। নিরাপদ যৌন স্বাস্থ্য: অনেক সময় অনিরাপদ যৌন মিলনের কারণে যোনিতে ইনফেকশন তৈরি হয়ে যোনি চুলকানি হয়ে থাকে তাই সবসময় নিরাপদ যৌন মিলন করতে হবে।
৭। মধু ও টক দই: দই বার্নিং ও ইচিং দূর করতে বেশ কার্যকরি। আর মধু ও দই একসাথে মিশিয়ে যোনিতে ব্যবহার করলে এটা যোনি চুলকানি দূর করতে ভালো কাজ করবে। কারণ দই ও মধুর মধ্যে ইনফ্লেমাটরি রয়েছে। দিনে এই উপাদান একবার ব্যবহার করলে যোনি চুলকানি দূর হবে। দিনে দুইবার ব্যবহার করলে আরো তাড়াতাড়ি যোনি চুলকানি থেকে মুক্তি মিলবে।
৮। বেকিং সোডার ব্যবহার: গোসলের পানিতে হালকা পরিমাণ বেকিং সোডা মিশিয়ে সেই পানির মধ্যে যোনি ১০ -১৫ মিনিট ভিজিয়ে রাখুন। তাহলে এটা যোনি চুলকানি প্রশমিত করবে।
৯। হাইড্রেটেড থাকা: অনেক সময় শরীরে শুষ্কতা দেখা দেয় আর শরীর শুষ্কতার কারণে যোনি চুলকানি হয়ে থাকে। তাই বেশি বেশি পানি পান করুন শুষ্কতা কমে গেলে যোনি চুলকানি কমে যাবে।
১০। লবণ জলের ব্যবহার: গোসলের পানির মধ্যে হালকা পরিমাণ লবণ মেশাবেন সেই লবণ পানির মধ্যে ২০ মিনিট যোনি ভিজিয়ে রাখবেন। এতে করে যোনিতে আক্রমণ করা ব্যাকটেরিয়া মারা যাবে এবং যোনি চুলকানি ভালো হয়ে যাবে।
১১। স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা: যোনিতে চুলকানি হলে দূর করার ১১ টি ঘরোয়া উপায় এর মধ্যে সর্বশেষ উপায়টি হলো স্বাস্থ্য বিধি মেনে চলাফেরা করা যেমন অতিরিক্ত টাইট পোশাক না পরা। সূতির ঢিলেঢালা পোশাক পরা, বিভিন্ন রকম সুগন্ধি যুক্ত পণ্য যোনিতে ব্যবহার না করা।
১২। নারকেল তেল: নারকেল তেলে অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি এবং অ্যান্টিফাঙ্গাল বৈশিষ্ট্য রয়েছে। উপশমের জন্য চুলকানির জায়গায় অল্প পরিমাণে জৈব, কুমারী নারকেল তেল লাগান। তাই যোনিতে চুলকানি হলে ঘরোয়া উপায় হিসেবে নারকেল তেল ব্যবহার বেশ সহজলোভ্য ও কার্যকর।
১৩। ওটমিল এর ব্যবহার: একটি ওটমিল স্নান বিরক্তিকর ত্বকের জন্য প্রশান্তিদায়ক হতে পারে। ওটসকে একটি সূক্ষ্ম গুঁড়ো করে নিন এবং আপনার স্নানে যোগ করুন।
মনে রাখবেন, যোনিতে চুলকানি হলে ঘরোয়া উপায়গুলো প্রয়োগের পরও যদি চুলকানি অব্যাহত থাকে বা খারাপ হয়, তাহলে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া গুরুত্বপূর্ণ। এই ঘরোয়া প্রতিকারগুলি চুলকানি থেকে মুক্তি প্রদান করতে পারে, তবে এগুলি পেশাদার রোগ নির্ণয় এবং চিকিত্সার বিকল্প নয়।
সবসময় যোনি পরিষ্কার রাখা। আশা করা যায় এগুলো স্বাস্থ্যবিধি মেনে চললে যোনি চুলকানি হবেনা বা থাকবেনা। এগুলো উপায় ব্যবহার করার পরে যদি কাজ না হয় তাহলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিবেন।
গর্ভাবস্থায় যোনিতে চুলকানি হলে করণীয়
গর্ভাবস্থায় যোনিতে চুলকানি একটি সাধারণ সমস্যা, যা অনেক গর্ভবতী মহিলা অনুভব করেন। এটি বিভিন্ন কারণে হতে পারে, যেমন হরমোনের পরিবর্তন, সংক্রমণ, অ্যালার্জি বা ত্বকের সংবেদনশীলতা বৃদ্ধি। এই সমস্যা সাধারণত গুরুতর নয়, তবে এটি অস্বস্তিকর এবং চিকিৎসার প্রয়োজন হতে পারে। গর্ভাবস্থায় যোনিতে চুলকানি হলে করণীয় বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো:
১. কারণ নির্ণয় করা
গর্ভাবস্থায় যোনিতে চুলকানির প্রধান কারণগুলি নিম্নরূপ:
ইস্ট ইনফেকশন (ক্যান্ডিডিয়াসিস): গর্ভাবস্থায় ইস্ট ইনফেকশন খুব সাধারণ। হরমোনের পরিবর্তনের কারণে যোনির pH মাত্রা পরিবর্তিত হয়, যা ইস্টের বৃদ্ধিকে উৎসাহিত করে। এর লক্ষণগুলির মধ্যে রয়েছে চুলকানি, সাদা স্রাব, জ্বালাপোড়া এবং লালভাব।
ব্যাকটেরিয়াল ভ্যাজিনোসিস (BV): এটি একটি ব্যাকটেরিয়াল সংক্রমণ, যা যোনির স্বাভাবিক ব্যাকটেরিয়ার ভারসাম্যহীনতার কারণে হয়। এর লক্ষণগুলির মধ্যে রয়েছে চুলকানি, ধূসর বা সাদা স্রাব এবং একটি মাছের মতো গন্ধ।
ট্রাইকোমোনিয়াসিস: এটি একটি পরজীবী সংক্রমণ, যা যৌন সংক্রমণের মাধ্যমে ছড়ায়। এর লক্ষণগুলির মধ্যে রয়েছে চুলকানি, হলুদ বা সবুজ স্রাব, এবং প্রস্রাব করার সময় জ্বালাপোড়া।
অ্যালার্জি বা জ্বালাতন: কিছু মহিলা সাবান, ডিটারজেন্ট, ফ্যাব্রিক সফটনার, বা স্যানিটারি প্যাডের প্রতি সংবেদনশীল হতে পারেন, যা যোনিতে চুলকানি সৃষ্টি করতে পারে।
হরমোনাল পরিবর্তন: গর্ভাবস্থায় হরমোনের মাত্রা পরিবর্তনের কারণে যোনির ত্বক শুষ্ক এবং সংবেদনশীল হয়ে উঠতে পারে, যা চুলকানির কারণ হতে পারে।
২. চিকিৎসা
গর্ভাবস্থায় যোনিতে চুলকানির চিকিৎসা কারণের উপর নির্ভর করে। নিম্নলিখিত চিকিৎসা পদ্ধতিগুলি বিবেচনা করা যেতে পারে:
ইস্ট ইনফেকশনের চিকিৎসা: ইস্ট ইনফেকশনের জন্য সাধারণত অ্যান্টিফাঙ্গাল ক্রিম, মলম বা সাপোজিটরি ব্যবহার করা হয়। গর্ভাবস্থায় ওরাল অ্যান্টিফাঙ্গাল ওষুধ সাধারণত এড়ানো হয়, তবে ডাক্তারের পরামর্শে এটি ব্যবহার করা যেতে পারে।
ব্যাকটেরিয়াল ভ্যাজিনোসিসের চিকিৎসা: BV এর জন্য সাধারণত অ্যান্টিবায়োটিক ক্রিম বা ওরাল অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার করা হয়। গর্ভাবস্থায় নিরাপদ অ্যান্টিবায়োটিকগুলি ডাক্তারের পরামর্শে ব্যবহার করা উচিত।
ট্রাইকোমোনিয়াসিসের চিকিৎসা: এই সংক্রমণের জন্য সাধারণত মেট্রোনিডাজল বা টিনিডাজল জাতীয় ওষুধ ব্যবহার করা হয়। গর্ভাবস্থায় এই ওষুধগুলি নিরাপদ কিনা তা ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করা উচিত।
অ্যালার্জি বা জ্বালাতনের চিকিৎসা: যদি চুলকানি অ্যালার্জি বা জ্বালাতনের কারণে হয়, তবে জ্বালাতনকারী পণ্যগুলি এড়ানো উচিত। হাইপোঅ্যালার্জেনিক সাবান এবং ডিটারজেন্ট ব্যবহার করা যেতে পারে।
৩. ঘরোয়া প্রতিকার
গর্ভাবস্থায় যোনিতে চুলকানি কমাতে কিছু ঘরোয়া প্রতিকার ব্যবহার করা যেতে পারে:
দই: দইয়ে প্রোবায়োটিক রয়েছে, যা যোনির স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সাহায্য করে। দই খাওয়া বা যোনিতে প্রয়োগ করা যেতে পারে।
কোকোনাট অয়েল: নারকেল তেলের অ্যান্টিফাঙ্গাল এবং ময়েশ্চারাইজিং বৈশিষ্ট্য রয়েছে। এটি যোনিতে প্রয়োগ করা যেতে পারে চুলকানি কমাতে।
বেকিং সোডা: বেকিং সোডা যোনির pH মাত্রা ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করে। বেকিং সোডা মিশ্রিত পানিতে বসে থাকা যেতে পারে।
ঠান্ডা কমপ্রেস: ঠান্ডা কমপ্রেস চুলকানি এবং জ্বালাপোড়া কমাতে সাহায্য করে।
৪. প্রতিরোধের উপায়
গর্ভাবস্থায় যোনিতে চুলকানি প্রতিরোধের জন্য নিম্নলিখিত পদক্ষেপগুলি অনুসরণ করা যেতে পারে:
ব্যক্তিগত স্বাস্থ্যবিধি: যোনি পরিষ্কার এবং শুষ্ক রাখা গুরুত্বপূর্ণ। মৃদু সাবান এবং গরম পানি ব্যবহার করে যোনি পরিষ্কার করা উচিত।
সঠিক আন্ডারওয়্যার: সুতি আন্ডারওয়্যার ব্যবহার করা উচিত, যা শোষণ ক্ষমতা ভালো এবং যোনি শুষ্ক রাখে।
জ্বালাতনকারী পণ্য এড়ানো: সুগন্ধিযুক্ত সাবান, ডিটারজেন্ট, এবং স্যানিটারি প্যাড এড়ানো উচিত।
প্রোবায়োটিক: প্রোবায়োটিক সমৃদ্ধ খাবার, যেমন দই, খাওয়া যেতে পারে, যা যোনির স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সাহায্য করে।
৫. ডাক্তারের সাথে পরামর্শ নেওয়া
গর্ভাবস্থায় যোনিতে চুলকানি হলে ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করা গুরুত্বপূর্ণ। ডাক্তার প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে সঠিক কারণ নির্ণয় করতে পারবেন এবং উপযুক্ত চিকিৎসা পরামর্শ দেবেন। গর্ভাবস্থায় স্ব-চিকিৎসা এড়ানো উচিত, কারণ কিছু ওষুধ গর্ভাবস্থায় নিরাপদ নয়।
৬. মানসিক স্বাস্থ্যের যত্ন নেওয়া
গর্ভাবস্থায় যোনিতে চুলকানি মানসিক চাপ এবং উদ্বেগ সৃষ্টি করতে পারে। এই সময়ে মানসিক স্বাস্থ্যের যত্ন নেওয়া গুরুত্বপূর্ণ। ধ্যান, যোগব্যায়াম, এবং পর্যাপ্ত বিশ্রাম মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করতে পারে।
৭. পুষ্টিকর খাবার
গর্ভাবস্থায় পুষ্টিকর খাবার খাওয়া যোনির স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সাহায্য করে। ভিটামিন সি, জিঙ্ক, এবং প্রোবায়োটিক সমৃদ্ধ খাবার যোনির সংক্রমণ প্রতিরোধে সাহায্য করে।
৮. পর্যাপ্ত পানি পান
পর্যাপ্ত পানি পান করা শরীরের টক্সিন দূর করতে এবং যোনির স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সাহায্য করে।
৯. নিয়মিত চেক-আপ
গর্ভাবস্থায় নিয়মিত চেক-আপ করা গুরুত্বপূর্ণ। ডাক্তারের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ রাখলে যোনির স্বাস্থ্য সম্পর্কে সঠিক তথ্য পাওয়া যায় এবং প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সময়মতো নেওয়া যায়।
১০. পরিশেষে
গর্ভাবস্থায় যোনিতে চুলকানি একটি সাধারণ সমস্যা, তবে এটি উপেক্ষা করা উচিত নয়। সঠিক কারণ নির্ণয় করে উপযুক্ত চিকিৎসা নিলে এই সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। গর্ভাবস্থায় স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা, পুষ্টিকর খাবার খাওয়া, এবং ডাক্তারের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ রাখা যোনির স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সাহায্য করে।
লেখকের শেষ মতামত
যোনিতে চুলকানি হলে ঘরোয়া উপায় এ ই তা নিরাময় করা যায়। তবে যোনিতে চুলকানি হয় কেন এবং নির্দিষ্ট কারণ অনুসন্ধান করতে পারলে সহজেই চুলকানি প্রতিরোধ করা যায়। এক্ষেত্রে অনেকেই ওভার-দ্য-কাউন্টার যোনিতে চুলকানি দূর করার ক্রিমগুলি ব্যবহার করেন তবে হালকা ক্ষেত্রে উপশম দিলেও, গুরুতর সংক্রমণ ও যোনিতে চুলকানি হলে ঔষধ এর প্রয়োজন হতে পারে।
মনে রাখবেন আপনার চুলকানির সমাধানের জন্য চুলকানির মূল কারণটি নিশ্চিত করা ও সঠিক রোগ নির্ণয় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আপনার নির্দিষ্ট পরিস্থিতির জন্য সর্বোত্তম সমাধান খুঁজতে কোনও ক্রিম বা ওষুধ ব্যবহার করার আগে অবশ্যই একজন স্বাস্থ্যসেবা পেশাদারের সাথে পরামর্শ করুন।
এই ছিল আজকের যোনিতে চুলকানি দূর করার ক্রিমের নাম ও দূর করার উপায় সম্পর্কিত সকল তথ্য সংক্ষেপে বিস্তারিত জানাতে চেষ্টা করেছি। এর বাইরেও আপনার কোনো প্রশ্ন থাকলে তা কমেন্ট করে জানাবেন। আশা করছি আপনি আমার এই পোস্টটি পড়ে যোনিতে চুলকানি দূর করার ক্রিমের নাম ও দূর করার উপায় জানতে পেরেছেন।
এরপরও বুঝতে অসুবিধা হলে কমেন্ট করে জানাবেন। আর্টিকেলটি আপনার পরিচিতদের মাঝে শেয়ার করে দিতে পারেন। এতে করে তারাও যোনিতে চুলকানি দূর করার ক্রিমের নাম ও দূর করার উপায় সম্পর্কে জানতে পারবে। ধন্যবাদ।