বিদেশ থেকে মামলা করার নিয়ম – থানায় কেস করার নিয়ম

সমাজে বসবাস করার কারণে অনেক সময় অনেকের আইনের সহায়তা নেয়ার প্রয়োজন পড়ে। যেমন  থানায় মামলা করার নিয়ম, বিদেশ থেকে মামলা করার নিয়ম, কোর্টে মামলা করার নিয়ম এবং আইন মোতাবেক কিভাবে দ্বারস্থ হতে হয় এই বিষয়ে আমরা অনেকেই জানি না। আবার অনেকেই আছে এখন পর্যন্ত তারা থানাতেও যাতায়াত করে নি। 

বিদেশ থেকে মামলা করার নিয়ম

তাই আজকে আমরা আপনাদেরকে জানাব থানায় মামলা করার নিয়ম এবং কোর্টে মামলা করার নিয়ম নিয়ে বিস্তারিত তথ্য তাছাড়াও মামলা সম্পর্কে আমরা এখানে সম্পূর্ণ ধারণা দিব আশা করি সম্পন্নটা বিস্তারিত জানতে পারবেন। আবার অনেকেরি নানান কারনবশত বিদেশ থেকে মামলা করার দরকার পড়ে কিন্তু বিদেশ থেকে কিভাবে মামলা করতে হয় জানা নেই। 

কোন সহায়তার জন্য আপনাকে কোথায় যেতে হবে সেই সম্পর্কে এইখানে ধারণা দেওয়া হবে। আবার এমনটাও হতে পারে সঠিক সময়ে মামলা না করার কারণে গুরুত্বপূর্ণ আলামত গুলো নষ্ট হয়ে যায়। সম্পন্ন নিয়মকানুন সম্পর্কে বিস্তারিত আজকে জানিয়ে দিব আপনাদেরকে।

থানায় কেস করার নিয়ম

থানায় মামলা করার ক্ষেত্রে সাদা কাগজে অভিযোগকারীর বিস্তারিত বর্ণনা, অভিযুক্তদের নাম, অভিযুক্তদের ঠিকানা, বিস্তারিত ভাবে লিখে অভিযোগটি দিতে হবে। এটাকে বলা হয় এজাহার। আর থানায় যে রেকর্ড বইতে লিপিবদ্ধ করা হয় এজাহার সংযুক্ত করে নথিভুক্ত করা হয়ে থাকে সেটাকে বলা হয় এফআইআর বা ফাস্ট ইনফর্মেশন রিপোট। 

ভর্তিতে তদন্ত সাপেক্ষে তার নাম ঠিকানা বিস্তারিতভাবে আরো তথ্য যোগ করা হলে সেটাও এজাহার বা এফআইআর এর সাথে সংযুক্ত করা হয়ে থাকে। আপনি যেকোনো ধরনের মামলা করেন না কেন আগে আপনাকে অভিযোগকারীর বিস্তারিত বর্ণনা বলতে হবে এরপরে সেই বর্ণনার বিস্তারিত প্রমাণ সংরক্ষন করতে হবে। 

এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। ধর্ষণের মত ঘটনাকে অনেক সময়ই দেরি হওয়ার কারণে আলামত হারিয়ে যেতে পারে। আবার অনেক সময় হত্যা দড়িতে ঝুলিয়ে মৃত্যুর সময় স্বজনরা সেখানে আলামত নাড়াচাড়া করে ফেলে যা মামলা তদন্তের জন্য অনেকটাই ক্ষতি হয়ে যায়।

কিছু কিছু সময় দেখা যায় যখন থানার কর্মকর্তাদের উদ্দেশ্যে থানাতে মামলা কম দেখানোর তখন থানার তারা ছিনতাই ও চুরির ঘটনার ক্ষেত্রে মামলা না করে সরাসরি তারা জিডি করার পরামর্শ দেয়। কিন্তু এসব কিছু না করে সরাসরি মামলা করা উচিত। যদি থানার কোন কর্মকর্তা মামলা নিতে না চায় তাহলে উচ্চ কর্মকর্তাদের জানাতে হবে।

যেকোনো ধরনের মামলা হওয়ার পরেই একজন কর্মকর্তাকে তদন্ত কর্মকর্তা হিসেবে নিযুক্ত করা হয়। অনেক সময় ওসি নিজেও এই কাজে তদন্ত কর্মকর্তা হতে পারেন। আমার এই মামলার গোয়েন্দা, পুলিশ, সিআইডি স্থানান্তরিত হলে সেখানে নতুন তদন্ত কর্মকর্তা নিয়োগ করা হয়ে থাকে। তবে যে কোনো বাহিনী এ বিষয়টা তদন্ত করুক না কেন বা আটক হয় গেলেও স্থানীয় থানার মাধ্যমেই হবে যে কোন বাহিনী আটক করলে সেটার মামলায় স্থানীয় থানায় মামলা হয়।

বিদেশ থেকে মামলা করার নিয়ম

বিদেশ থেকে মামলা করা একটি জটিল প্রক্রিয়া, যা নির্ভর করে মামলার ধরন, সংশ্লিষ্ট দেশের আইন, এবং মামলা দায়ের করার স্থানের উপর। নিচে আপনার প্রশ্নগুলোর বিস্তারিত উত্তর দেওয়া হলো:

বিদেশ থেকে মামলা করার নিয়ম দেশভেদে ভিন্ন হয়। সাধারণত নিম্নলিখিত ধাপগুলো অনুসরণ করতে হয়:

  • মামলার ধরন নির্ধারণ: প্রথমে আপনাকে বুঝতে হবে মামলাটি কোন ধরনের (যেমন: দেওয়ানি, ফৌজদারি, শ্রম আইন, বাণিজ্যিক ইত্যাদি)।
  • আইনি পরামর্শ নেওয়া: একজন আইনজীবীর সাথে পরামর্শ করুন যিনি আন্তর্জাতিক আইন বা সংশ্লিষ্ট দেশের আইনে অভিজ্ঞ।
  • মামলা দায়ের করার স্থান নির্ধারণ: মামলাটি কোন দেশে বা কোর্টে দায়ের করা হবে তা নির্ধারণ করুন। এটি সাধারণত মামলার বিষয়বস্তু এবং সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোর অবস্থানের উপর নির্ভর করে।
  • আবেদন জমা দেওয়া: সংশ্লিষ্ট কোর্ট বা কর্তৃপক্ষের কাছে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা দিন।
  • আইনি প্রক্রিয়া অনুসরণ: মামলার প্রক্রিয়া শুরু হলে, আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিন।
আরো পড়ুনঃ-  অনলাইনে জিডি করার নিয়ম - অনলাইন জিডি ফরম

বিদেশ থেকে মামলা করতে কি কি লাগে?

  • বিদেশ থেকে মামলা করতে নিম্নলিখিত জিনিসগুলো প্রয়োজন হতে পারে:
  • আইনজীবী: একজন যোগ্য আইনজীবী যিনি সংশ্লিষ্ট দেশের আইন এবং আন্তর্জাতিক আইন সম্পর্কে অভিজ্ঞ।
  • প্রমাণ ও দলিল: মামলার সাথে সম্পর্কিত সকল প্রমাণ, চুক্তি, চিঠিপত্র, এবং অন্যান্য দলিল।
  • অনুবাদ: যদি দলিলপত্র অন্য ভাষায় হয়, তবে তা আদালতের ভাষায় অনুবাদ করতে হতে পারে।
  • ফি: আদালত ফি, আইনজীবীর ফি, এবং অন্যান্য খরচ।
  • পাওয়ার অফ অ্যাটর্নি: যদি আপনি ব্যক্তিগতভাবে উপস্থিত হতে না পারেন, তবে একজন প্রতিনিধি নিয়োগ করতে পারেন।

বিদেশ থেকে মামলা করতে কত টাকা লাগে?

বিদেশ থেকে মামলা করার খরচ নির্ভর করে নিম্নলিখিত বিষয়গুলোর উপর:

  • মামলার ধরন: দেওয়ানি মামলা, ফৌজদারি মামলা, বা বাণিজ্যিক মামলার খরচ ভিন্ন হয়।
  • আইনজীবীর ফি: আইনজীবীর অভিজ্ঞতা এবং খ্যাতির উপর ফি নির্ভর করে।
  • আদালত ফি: প্রতিটি দেশের আদালত ফি ভিন্ন হয়।
  • অনুবাদ ও অন্যান্য খরচ: দলিলপত্র অনুবাদ, কুরিয়ার খরচ, ভ্রমণ খরচ ইত্যাদি।

সাধারণত, বিদেশ থেকে মামলা করার খরচ কয়েক হাজার ডলার থেকে লক্ষাধিক ডলার পর্যন্ত হতে পারে।

কিভাবে বিদেশ থেকে মামলা করবেন?

বিদেশ থেকে মামলা করার জন্য নিম্নলিখিত ধাপগুলো অনুসরণ করুন:

  • প্রাথমিক পরামর্শ: একজন আইনজীবীর সাথে পরামর্শ করুন যিনি আন্তর্জাতিক আইনে অভিজ্ঞ।
  • মামলার প্রস্তুতি: সকল প্রমাণ ও দলিল সংগ্রহ করুন এবং প্রয়োজন হলে অনুবাদ করুন।
  • আবেদন জমা দেওয়া: সংশ্লিষ্ট আদালত বা কর্তৃপক্ষের কাছে মামলা দায়ের করুন।
  • আইনি প্রক্রিয়া অনুসরণ: আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিন।
  • পাওয়ার অফ অ্যাটর্নি: যদি আপনি ব্যক্তিগতভাবে উপস্থিত হতে না পারেন, তবে একজন প্রতিনিধি নিয়োগ করুন।

অতিরিক্ত তথ্য:

  • আন্তর্জাতিক আদালত: কিছু মামলা আন্তর্জাতিক আদালতে দায়ের করা যেতে পারে, যেমন হেগের আন্তর্জাতিক আদালত।
  • দ্বিপাক্ষিক চুক্তি: সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর মধ্যে বিদ্যমান চুক্তি বা সমঝোতা স্মারক (MoU) মামলার প্রক্রিয়াকে প্রভাবিত করতে পারে।

বিদেশ থেকে মামলা করা একটি সময়সাপেক্ষ এবং ব্যয়বহুল প্রক্রিয়া হতে পারে, তাই সঠিক পরিকল্পনা এবং আইনি সহায়তা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

কোর্টে মামলা করার নিয়ম

একজন ভুক্তভোগী তখনই কোর্টে মামলা করে যখন তার মামলা কোনো কারণবশত থানায় না নেই। কোর্ট যদি আপনার মামলাটী গ্রহণযোগ্য করে নেয় তখন সেই মামলাটি সংশ্লিষ্ট থানা কে এফআইআর (FIR) গ্রহণ করে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দিবে এবং উক্ত মামলাটি আদালতে আবেদন খারিজ করেও দিতে পারে। 

যিনি রাষ্ট্রদ্রোহী রয়েছেন তিনি কোন মামলা করার জন্য সরাসরি আদালত বিচার কার্যক্রম শুরু করতে পারবেন। তবে একটা বিষয়ে ক্লিয়ার থাকা ভাল যে, মূলত জমিজমা, পারিবারিক বিষয়, সম্পত্তি বা মালামাল, অর্থ ইত্যাদি বিষয়গুলো আদালতে দেওয়ানী মামলা হিসেবে মামলা করা হয়। শুধুমাত্র পারিবারিক নির্যাতন নারী সহিংসতার ব্যতীত। 

কোর্টে মামলার যেকোনো ধরনের সহায়তার জন্য আইনজীবীদের সহায়তা নিতে পারবেন। তবে মূলত ফৌজদারি এবং দেওয়ানী মামলার জন্য আলাদা ধরনের আইনজীবী কাজ করে থাকে সুতরাং আইনজীবিদের সহায়তা নিতে হলে সেটা আগে জেনে নেওয়া দরকার এই বিষয়ে।

প্রতারণা মামলা করার নিয়ম

প্রতারণার হচ্ছে একজন ব্যক্তি অন্যায়ভাবে, মিথ্যা তথ্য দিয়ে কিংবা বিশ্বাস ভঙ্গ করে তার অর্থ-সম্পদ লুট করে নেওয়া। যদি কোন ব্যক্তি অসদুপায় অবলম্বন করে অন্য ব্যক্তির ব্যক্তিগত কোন সম্পদ চুরি, ডাকাতি, অবৈধভাবে সম্পত্তি লিখে নেওয়া ইত্যাদি কাজ করে তাহলে সে প্রতারণা করার জন্য যথোপযুক্ত শাস্তি পাবে।

আরো পড়ুনঃ-  অনলাইনে জাতীয় পরিচয় পত্র সংশোধন

প্রতারণা মামলা দায়ের করতে হলে আপনাকে বেশ কয়েকটি পদ্ধতি অবলম্বন করতে হবে। প্রথমে আপনাকে নিম্নিলিখিত নিয়মগুলো সম্পর্কে জানতে হবে। 

  • প্রমাণ সংগ্রহঃ প্রথমত উপযুক্ত প্রমাণ সংগ্রহ করতে হবে। যেমনঃ নথি, ছবি, ম্যাসেজ, ইমেইল, ইত্যাদি।
  • আইনি পরামর্শ গ্রহণ করাঃ আপনার অভিযোগ নিয়ে যেকোন আইনজীবীর সাথে যোগাযোগ করতে হবে কিংবা নিকটস্থ থানার কোন পুলিশের সাথে যোগাযোগ করতে হবে। 
  • আদালতে মামলা দায়ের করাঃ অভিযোগের সাথে সংশ্লিষ্ট প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস, তথ্য সাথে নিয়ে আদালতে মামলা দায়ের করুন।

প্রতারণা মামলা দায়েরের পদ্ধতি

ধাপ-১ঃ প্রমাণ ও তথ্য সংগ্রহ করা

প্রথমে প্রতারণার শিকার ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে উপযুক্ত প্রমাণের ভিত্তিতে প্রতারণার বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে। প্রমাণ হিসেবে যেই তথ্যগুলো সংগ্রহ করতে হবে তা হলোঃ

  • প্রতারণার সাথে জড়িত ব্যক্তির নাম, ঠিকানা ও পরিচয়।
  • প্রতারণার সময়, স্থান এবং পরিস্থিতি উল্লেখ করতে হবে।
  • চুক্তি, ইমেইল, ম্যাসেজ, নথি এবং অন্যান্য সংশ্লিষ্ট তথ্যাদি থাকলে তা জমা দিতে হবে।

ধাপ-২ঃ  জিডি (সাধারণ ডায়েরি) করা

প্রমাণ সংগ্রহ করার পর নিকটস্থ থানায় গিয়ে জিডি করে রাখবেন। তাহলে আপনার প্রতারিত হওয়ার ঘটনা সম্পর্কে পুলিশ অবগত হতে পারবে এবং জিডির সাথে সংযুক্ত প্রমাণ যুক্ত করে দিবেন। তাহলে আপনার মামলার কার্যক্রম করতেও সুবিধা হবে।

ধাপ-৩ঃ লিখিত অভিযোগ দাখিল করা

  • থানায় সাধারণ ডায়েরি করার পর আপনাকে একটি লিখিত অভিযোগ দাখিল করতে হবে।
  • যিনি অভিযোগ করবেন তার নাম, ঠিকানা এবং পরিচয় উল্লেখ করা।
  • প্রতারণাকারী ব্যক্তি বা অভিযুক্ত ব্যাক্তির নাম, ঠিকানা, পরিচয় উল্লেখ করা।
  • ঘটনার বিস্তারিত তথ্য দিতে হবে।
  • উক্ত ঘটনার কোন সাক্ষী বা প্রত্যক্ষদর্শীর নাম, পরিচয় উল্লেখ করা।
  • প্রমাণ সমূহের তালিকা দিতে হবে।

প্রতারণা মামলার শাস্তি

বাংলাদেশের দন্ডবিধি ৪০৬ এবং ৪২০ ধারা অনুযায়ী অভিযুক্ত ব্যাক্তির অপরাধ আদালতে প্রমানিত হলে তার সর্বোচ্চ ৭ বছরের কারাদন্ড এবং নগদ অর্থ জরিমানা করা হবে। এছাড়া অপরাধের ধরণের উপর ভিত্তি করে শাস্তি কম-বেশি হতে পারে।

প্রতারণা মামলা একটি জটিল এবং সংবেদনশীল প্রক্রিয়া। এটি যথাযথভাবে আইনি পদক্ষেপ, উপযুক্ত প্রমাণ এবং সচেতনতার সাথে সম্পন্ন করতে হয়। তাহলেই আপনি সুষ্ঠু ও ন্যায় বিচার পাওয়ার আশা করতে পারেন। সমাজের মানুষের মধ্যে আইন-কানুন, সঠিক পরামর্শ এবং সচেতনতা বৃদ্ধি করার মাধ্যমে যেকোন ধরনের প্রতারণা মোকাবেলা করা সম্ভব বলে আমি মনে করি।

প্রতারণা প্রতিরোধে করণীয়

প্রতারণা একটি অত্যন্ত ঘৃণ্য এবং গুরুতর অপরাধ। এই সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে হলে সর্বপ্রথম সমাজের মানুষের মধ্যে সচেতনতা তৈরি করতে হবে। প্রতারণা প্রতিরোধে নিম্নোক্ত বিষয়গুলো খেয়াল রাখতে হবেঃ

  • সমাজের মানুষদের প্রতারণা সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা দেওয়া।
  • প্রতারণা করলে এর জন্য কীরূপ শাস্তি পেতে হবে তা জানানো।
  • পরিবার থেকে শুরু করে সমাজের সর্বস্তরে ধর্মীয় মূল্যবোধ, ন্যায়নীতি সম্পর্কে জ্ঞান দেওয়া যাতে প্রতারণার মত ঘৃণ্য অপরাধ থেকে সবাই বিরত থাকে।
  • আইনি সহায়তা গ্রহণ করা।

মানহানি মামলা করার নিয়ম

ফৌজদারি ব্যবস্থায় একজনের বিরুদ্ধে অপরাধ হলে পুরো সমাজ বা রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে অপরাধ করা হয়েছে বলে গণ্য করা হয়। এ জন্য রাষ্ট্র বাদী হয়ে মামলা করে। কিন্তু মানহানির মামলায় রাষ্ট্র কোনো পক্ষ হয়ে মামলা করে না। বাংলাদেশ দন্ডবিধির ৪৯৯ ধারা অনুযায়ী, কোনো ব্যক্তির খ্যাতি বা সুনাম নষ্ট করতে কেউ নিন্দাবাদ প্রণয়ন ও প্রকাশ করলে তাই মানহানি। 

এ অভিযোগে দন্ডবিধি (পেনাল কোড) ও দেওয়ানি কার্যবিধির বিধান মেনে টর্ট আইনের আলোকে মানহানির জন্য ক্ষতিপূরণ চেয়ে মামলা করা যায়। একজন ব্যক্তি যদি অন্য কোন ব্যক্তির সুনাম বা মান বা খ্যাতি যেটাই আমরা বলি না কেন, যদি সেটি উদ্দেশ্য প্রণোদিত হয়ে বা ঐ ব্যক্তির সুনাম/মান নষ্ট হবে।

আরো পড়ুনঃ-  মোবাইল ট্রেন টিকেট বুকিং - বাংলাদেশ রেলওয়ে টিকিট

জেনে শুনে শব্দের দ্বারা বা চিহ্ন ব্যবহারের মাধ্যমে বা কোন প্রতীক যা দৃশ্যমান তার মাধ্যমে নিন্দা প্রকাশ পায়, তাহলে ধরে নেওয়া হবে যে উক্ত শব্দ/চিহ্ন/প্রতীক দ্বারা ঐ ব্যক্তির মানহানি করা হয়েছে। কলঙ্ক দেওয়া, কুৎসা রটানো, লজ্জাকর অনুভূতি, মর্ম পীড়াদায়ক অনুভূতি, মিথ্যা অপবাদ দেওয়াকেই মানহানি বলা যেতে পারে। 

একজন ব্যক্তির সম্মানের প্রতি অসম্মান করা হলে বা সম্মান বিষয়ে হানিকর কিছু বলা হলে সেটিকে সাধারণ অর্থে মানহানি বলা হয়। আপনি হয়ত ভাবছেন যে, এইভাবে হিসেব করলে তো চোরকেও চোর বলা যাবে না, কারণ এতে তার মানহানি হবে। কিন্তু, তা নয়। 

আপনি যেমন কারো সুনাম নষ্ট করার জন্য কোন নিন্দা প্রকাশ করতে পারেন না, তেমনি আপনি কিছু কিছু ক্ষেত্রে সুনাম নষ্ট হলেও, মানহানি হলেও সত্য কথা বলতে পারবেন। 

যেভাবে মানহানির মামলা করবেন

সাধারণত মানহানিকর উক্তি দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তি মানহানির মামলা দায়ের করতে পারে। তবে ফৌজদারি কার্যবিধির ১৯৮ ধারা অনুসারে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তি ছাড়াও নিমোক্ত ব্যক্তিগন এই মামলা করতে পারবে। মানহানির মামলা ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তি ছাড়া মামলা করলে আদালত তা আমলে নিবেন না। 

আপনার মানহানি হলে আপনি মামলা করতে পারবেন, আবার আপনার মৃত বাবা, মা বা কোন আত্মীয়ের যদি মানহানি হয়ে থাকে তাহলেও আপনি মামলা করতে পারবেন। তাছাড়া, অপ্রাপ্ত বয়স্ক বা মানসিক বা শারীরিক ভাবে প্রতিবন্ধী কারো মানহানি করা হলে তার পক্ষে তার অভিভাবক মানহানির মামলা করতে পারবে। এককথায়, সংক্ষুব্ধ ব্যক্তি বা তার পক্ষে অভিভাবক মানহানির মামলা করতে পারবেন। 

দন্ডবিধির ৫০০ ধারা অনুযায়ী, কোনো ব্যক্তির মাধ্যমে কারও মানহানি প্রমাণিত হলে, ৫০১ ধারা অনুযায়ী কোনো ব্যক্তি অন্য ব্যক্তির মানহানিকর কোনো বিষয় মুদ্রণ (ছাপা) করলে এবং ৫০২ ধারা অনুযায়ী কারও জন্য মানহানিকর বিষয় সংবলিত কোনো দ্রব্য বিক্রি করলে সর্বোচ্চ দুই বছর পর্যন্ত যেকোনো মেয়াদে কারাদন্ড ও অর্থদন্ড হবে। আর মানহানির অভিযোগে ক্ষতিপূরণ দাবি করা ব্যক্তির মামলা নিষ্পত্তি হবে দেওয়ানি আদালতে। ক্ষতিপূরণ ও দন্ডবিধির উভয় মামলা জামিনযোগ্য। 

কোনো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম কিংবা যেকোনো ওয়েবসাইটে যদি মানহানিকর ছবি বা বক্তব্য প্রকাশ করা হয় তাহলে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন, ২০১৮ এর ২৯ ধারার অধীনে মামলা করা যায় এবং পুলিশ এ ধারার অভিযোগে বিনা পরোয়ানায় গ্রেপ্তারও করতে পারে। অর্থাৎ মানহানিকর বক্তব্য যদি অনলাইনের বাইরে হয় তাহলে এক ধরনের শাস্তি আর অনলাইনে হলে আরেক ধরনের শাস্তি। মানহানি অনলাইনে হলে তার জন্য সাইবার মামলা দায়ের করা যায়। 

যিনি মানহানির শিকার তিনি আদালতে অভিযোগ দায়ের করে জবানবন্দি প্রদানের মাধ্যমে মামলা দায়ের করতে হবে। আদালত সমন জারি করবেন অভিযুক্ত ব্যক্তির বিরুদ্ধে। অনলাইনে বা যেকোনো মাধ্যমে যদি মানহানির শিকার হন কেউ, তাহলে থানায় এজাহার দায়ের করা যায় কিংবা কোর্টে মামলা করা যায়। মানহানি অনলাইনে হলে তার জন্য সাইবার মামলা দায়ের করা যায়।

লেখকের শেষ মতামত

এই ছিল আজকের বিদেশ থেকে মামলা করার নিয়ম  সম্পর্কিত সকল তথ্য সংক্ষেপে বিস্তারিত জানাতে চেষ্টা করেছি। এর বাইরেও আপনার কোনো প্রশ্ন থাকলে তা কমেন্ট করে জানাবেন। আশা করছি আপনি আমার এই পোস্টটি পড়ে বিদেশ থেকে মামলা করার নিয়ম জানতে পেরেছেন।

এরপরও বুঝতে অসুবিধা হলে কমেন্ট করে জানাবেন। আর্টিকেলটি আপনার পরিচিতদের মাঝে শেয়ার করে দিতে পারেন। এতে করে তারাও বিদেশ থেকে মামলা করার নিয়ম সম্পর্কে জানতে পারবে। 

Leave a Comment