বর্তমানে ব্যক্তিগত পারিবারিক বা ব্যবসার প্রয়োজনে ব্যাংক থেকে অনেকেই ঋণ নিতে চান। এর কারণে সকলের প্রয়োজনীয়তা বিবেচনা করে বাংলাদেশের সরকারি-বেসরকারি ব্যাংকগুলো তাদের ঋণ দেয়ার প্রক্রিয়াও অনেক সহজ করেছে। এসব ব্যাংকের মাঝে ডাচ বাংলা ব্যাংকিং পার্সোনাল লোন সিস্টেমকেও ধরা যেতে পারে। আপনিও যদি এই ব্যাংক থেকে পার্সোনাল লোন নিতে চান সেক্ষেত্রে চলুন জেনে ডাচ বাংলা ব্যাংক পার্সোনাল লোন সম্পর্কিত বিস্তারিত তথ্য এবং সিস্টেম-ভিত্তিক গাইডলাইন।
এই ব্যাংকের বিশেষত্ব হচ্ছে অল্প পরিমাণে সুদে যখন তখন লোন পাওয়া যায়। যদি আপনি বৈধ ডকুমেন্ট দেখাতে পারেন। তবে আপনি খুব সহজেই ডাচ বাংলা ব্যাংক থেকে লোন গ্রহণ করতে পারবেন। প্রিয় পাঠকবৃন্দ, আজকে আমি আপনাদের সাথে ডাচ বাংলা ব্যাংক পার্সোনাল লোন সম্পর্কিত বিষয় নিয়ে আলোচনা করব। তাই আপনি এই পোস্টটি সম্পূর্ণ পড়বেন।
ডাচ বাংলা ব্যাংক লোন
অন্যান্য ব্যাংকের মতো ডাচ বাংলা ব্যাংক কতৃপক্ষও বিভিন্ন লোনের ব্যবস্থা করেছে। আপনি যদি মনে করেন, নির্দিষ্ট সময় পর এই লোন পরিশোধ করতে পারবেন এবং সুদের ব্যাপারটা কভার করতে পারবেন সেক্ষেত্রে এই লোন নিতে পারেন। বর্তমানে ডাচ বাংলা ব্যাংক সর্বনিম্ন ৫০ হাজার থেকে সর্বোচ্চ ২ কোটি টাকা পর্যন্ত লোনের ব্যবস্থা করেছে।
যা পেতে হলে বিভিন্ন ক্যাটাগরির লোন-পদ্ধতির উপর নির্ভর করে আবেদন করতে হবে। তার আগে উক্ত লোনটি নেয়ার যোগ্যতা আছে কিনা তা নিশ্চিত করতে হবে। বিস্তারিত জানতে আমাদের সাথেই থাকুন। তবে তার আগে বলে আপনি ডাচ বাংলা কতৃপক্ষ হতে বিভিন্ন ক্যাটাগরির লোন-সুবিধা নিতে পারেন।
- ডাচ বাংলা ব্যাংক স্যালারি লোন
- ডাচ বাংলা ব্যাংক হোম লোন
- ডাচ বাংলা ব্যাংক পার্সোনাল লোন
- ডাচ বাংলা ব্যাংক শিক্ষা লোন
পার্সোনাল লোন কি
ব্যক্তিগত আর্থিক সংকট দূর করতে ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে যেসব লোন গ্রহণ করা যায় তাকে পার্সোনাল লোন বলে। ডাচ বাংলা ব্যাংক থেকে পার্সোনাল লোন গ্রহণ করা যায়।
ডাচ বাংলা ব্যাংক পার্সোনাল লোন
ডাচ বাংলা ব্যাংকে যদি বেসরকারি সংস্থায় বেতনভোগী ব্যক্তিরা লোন সার্ভিস নিতে চান, তাহলে আপনি পার্সোনাল লোন গ্রহণ করতে পারেন৷ এই লোন মূলত ১৮ বছর থেকে ৭০ বছর বয়সী গ্রাহকরা গ্রহন করতে পারবেন। তবে আবেদনকারীর চাকরির বয়স মিনিমাম এক থেকে দুই বছরের মতো হতে হবে।
জেনে রাখা উচিত উপযুক্ত ডকুমেন্টস ছাড়া কখনোই কোনো গ্রাহকই বড় ধরনের কোনো লোন নিতে পারবেন না। এক্ষেত্রে এই লোনের জন্যে আবেদন করার প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সম্পর্কে জেনে নিতে হবে। যা জানতে আমাদের আর্টিকেলের পরবর্তী নির্দিষ্ট অংশে চোখ রাখতে পারেন।
ব্যক্তিগত কিংবা তার বিশেষ কোন প্রয়োজনে এই পার্সোনাল লোন গ্রহণ করা যাবে। পার্সোনাল লোন আপনি সর্বোচ্চ ২ লক্ষ টাকা পর্যন্ত লোন নিতে পারবেন। তবে সেক্ষেত্রে আপনাকে স্বনির্ভর হতে হবে। আর পার্সোনাল লোন গ্রহণ করতে অবশ্যই বেশ কিছু প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সংগ্রহ করে রাখতে হবে।
ডাচ বাংলা ব্যাংক পার্সোনাল লোন নিতে কি কি লাগবে
ডাচ বাংলা ব্যাংক থেকে পার্সোনাল লোন গ্রহণ করার জন্য অবশ্যই আবেদনকারীর বেশ কিছু প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট লাগবে। তাছাড়াও আরও বেশ কিছু শর্ত সাপেক্ষে আপনি লোন গ্রহণ করতে পারেন।
ডাচ বাংলা থেকে পার্সোনাল লোন গ্রহণ করার জন্য অবশ্যই আপনাকে স্বনির্ভর হতে হবে এবং আপনার মাসিক আয় ২০ হাজার টাকা হতে হবে। তবেই আপনি ডাচ বাংলা ব্যাংক নিতে সক্ষম হবেন। নিচে ডাচ বাংলা ব্যাংক পার্সোনাল লোন গ্রহণ করার জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্রগুলো দেওয়া হলো-
- আবেদনকারীর সদ্য তোলা পাসপোর্ট সাইজের রঙ্গিন ছবি প্রদান করতে হবে।
- আবেদনকারীর জাতীয় পরিচয় পত্রের ফটোকপি প্রদান করতে হবে।
- চাকুরীজীবীদের ক্ষেত্রে বেতন হিসাবের বিবরণী, হলে ইইন্ট্রোডাকশন লেটার ও অফিস আইডি প্রদান করতে হবে।
- আবেদনকারী ব্যবসায়ী হলে বিজনেস কার্ড প্রদান করতে হবে।
- আবেদনকারী ড্রাইভার হলে ড্রাইভিং লাইসেন্স প্রদান করতে হবে।
- আবেদনকারীর টেলিফোন, মোবাইল ফোন অথবা অন্যান্য ইউটিলিটি বিলের কপি প্রদান করতে হবে।
- সর্বশেষ ১ বছরের ব্যাংক হিসাব প্রদান করতে হবে।
- আবেদনকারীর ট্যাক্স সার্টিফিকেট প্রদান করতে হবে।
সাধারণত ডাচ বাংলা থেকে পার্সোনাল লোন গ্রহণ করতে চাইলে এসব ডকুমেন্ট লাগতে পারে। তাছাড়াও যদি অতিরিক্ত আরও বেশকিছু প্রয়োজনীয় কাগজপত্র বা ডকুমেন্ট লাগে তাহলে ব্যাংক থেকে আপনাকে বলে দিবে। তাই এসব কাগজপত্র লোন নেওয়ার আগে থেকেই সংগ্রহ করে রাখুন।
যারা পার্সোনাল লোন নিতে পারবে
আপনারা যারা পার্সোনাল গ্রহণ করতে চান তারা ডাচ বাংলা ব্যাংকের পার্সোনাল লোন গ্রহণ করতে পারবেন কি না তা আপনার জেনে রাখা প্রয়োজন। নিচে দেওয়া হলো-
- বিভিন্ন পেশাজীবি
- বেতনভোগী ব্যক্তি
- বাড়ির মালিক
- নূন্যতম আয় মাসিক ৩০ হাজার
- বয়সসীমা সর্বনিম্ন ১৮ বছর ও সর্বোচ্চ ৭০ বছর
- বাংলাদেশের নাগরিক
ডাচ বাংলা ব্যাংক পার্সোনাল লোন আবেদন
ডাচ বাংলা ব্যাংকের পার্সোনাল লোন আবেদন করতে হলে আপনাকে তাদের কিছু শর্ত বা ক্রাইটেরিয়া ফিলাপ করতে হবে। সাধারণভাবে একটি পার্সোনাল লোনের আবেদনের জন্য নিম্নলিখিত তথ্যগুলি প্রদান করতে হবেঃ
১. ব্যক্তিগত তথ্য
- আবেদনকারীর নাম
- পিতার নাম
- মাতার নাম
- জন্মতারিখ
- ধর্ম
- জাতীয়তা
- ন্যাশনাল আইডি নম্বর
- স্থায়ী ঠিকানা
- যোগাযোগের তথ্য ইত্যাদি।
২. আয়ের তথ্য
- বর্তমান বেতন বা আয়ের উৎস
- আয়ের প্রমাণ ডকুমেন্টস এর বিবরণ
- বেতন স্লিপ ইত্যাদি।
৩. ঠিকানার প্রমাণ ডকুমেন্ট
- বিদ্যুৎ/পানি বিল
- ব্যাংক স্টেটমেন্ট
- রেন্ট এগ্রিমেন্ট ইত্যাদি।
৪. অন্যান্য ডকুমেন্ট
- ব্যক্তিগত অবস্থান প্রমাণ করার জন্য পাসপোর্ট, ছবি, নিজের আইডি প্রুফ ইত্যাদি।
- এছাড়াও ডাচ বাংলা ব্যাংক পার্সোনাল লোনের জন্য চাকুরিজীবী ও ব্যবসায়ীদের ক্ষেত্রে অফিস আইডি কার্ড বা বিজনেস কার্ড শো করাতে হবে।
- আবেদনকারীর সম্পত্তি সম্পর্কিত তথ্য হিসাবে দিতে হবে ট্যাক্স সার্টিফিকেট এবং বাড়ি বা সম্পত্তির লিজ চুক্তিপত্র।
- ব্যাংক স্টেটম্যান্ট হিসাবে প্রতিটি আবেদনকারীকে বিগত ১ বছরের ব্যাংক স্টেটমেন্ট শো করাতে হবে।
পরিশেষে, উপরোক্ত সকল কাগজপত্রের সাথে সদ্য তোলা পাসপোর্ট সাইজের দুই কপি রঙিন ছবি সংযুক্ত করে দিতে হবে।
এই তথ্য ও ডকুমেন্টগুলি সঠিক ভাবে সম্পূর্ণ করে ডাচ বাংলা ব্যাংকের শাখায় গিয়ে তাদের সাথে যোগাযোগ করে আবেদন সম্পূর্ণ করতে পারবেন। এরপর ব্যাংক অফিসিয়ালরা আপনার আবেদন প্রক্রিয়াটি পর্যালোচনা করবেন এবং প্রয়োজনে লোনের অনুমোদন দেবেন।
ডাচ বাংলা ব্যাংকের পার্সোনাল লোনের পরিমাণ, সুদ, ও মেয়াদ
আপনি যদি ডাচ বাংলা ব্যাংক থেকে পার্সোনাল লোন গ্রহণ করতে চান তাহলে আপনি সর্বনিম্ন ৫০ হাজার থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ ২ লক্ষ টাকা পর্যন্ত পার্সোনাল লোন গ্রহণ করতে পারবেন। আমরা হয়তো অনেকেই ডাচ বাংলা ব্যাংকের পার্সোনাল লোনের পরিমাণ, সুদ, ও মেয়াদ সম্পর্কে জানি না। মূলত এজন্য পোষ্টের এই অংশে বিস্তারিত উল্লেখ করে দিয়েছি।
- লোনের পরিমাণ (সর্বনিম্ন) ৫০ হাজার টাকা
- লোনের পরিমাণ (সর্বোচ্চ) ২০ লাখ টাকা
- লোনের মেয়াদ ১ থেকে ৫ বছর
- সুদের হার (নতুন লোনের ক্ষেত্রে) ৮%
- সুদের হার (অন্য ব্যাংক থেকে টেক-ওভার) ৭.৫০%
- প্রসেসিং ফি বাবদ ( যদি নতুন লোন হয়) ০.৫ – ১%
- প্রসেসিং ফি বাবদ (অন্য ব্যাংক থেকে টেক-ওভার) নেই
উপরের তালিকায় উল্লিখিত তথ্য ভিন্ন ধরণের লোনের জন্য প্রযোজ্য। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে পার্সোনাল লোন ও অন্যান্য লোনের জন্য এই তথ্য প্রযোজ্য হতে পারে। এছাড়া আরও অতিরিক্ত বিস্তারিত তথ্য জানতে ডাচ বাংলা ব্যাংকের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে গিয়ে যোগাযোগ করুন।
লেখকের শেষ মতামত
আমার নিজের মতামত হচ্ছে, আমরা অনেকেই লোন নেওয়ার আগে যেমন অনেক ঝামেলা পোহাতে হয়, ঠিক তেমনি অজ্ঞতার না থাকার ফলে লোন নেওয়ার পরেও চরম বিপদে পড়তে হয়। অপরদিকে, এসব লোন নেওয়ার পূর্বে যদি সুদের হার, সময়সীমাসহ অন্যান্য তথ্য জানা থাকতো সেক্ষেত্রে পুরো বিষয়টি হয়তো আপনাকে বিপদের দিকে ছেড়ে দিতে না।
ব্যক্তিগত কিংবা আর্থিক সংকট দূর করার জন্য আমাদের বিভিন্ন সময় ব্যাংক থেকে লোন গ্রহণ করার প্রয়োজন হয়। ডাচ বাংলা ব্যাংক থেকে বিভিন্ন খাতে লোন প্রদান করে। তাই আপনারা যারা কম সুদে লোন নিতে চান তারা ডাচ বাংলা ব্যাংক পার্সোনাল লোন গ্রহণ করতে পারেন। যদি এই পোস্টটি আপনার কাছে তথ্যবহুল মনে হয় তবে আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করতে পারেন। ধন্যবাদ।
এই ছিল আজকের ডাচ বাংলা ব্যাংক পার্সোনাল লোন সম্পর্কিত সকল তথ্য। এখানে সংক্ষেপে বিস্তারিত জানাতে চেষ্টা করেছি। এর বাইরেও আপনার কোনো প্রশ্ন থাকলে তা কমেন্ট করে জানাবেন। আমরা আপনাদের সকল প্রশ্নের উত্তর দিয়ে থাকি।
তো বন্ধু আশা করছি আপনি আমার এই পোস্টটি পড়ে ডাচ বাংলা ব্যাংক পার্সোনাল লোন নিয়ে বিস্তারিত জানতে পেরেছেন। এরপরও বুঝতে অসুবিধা হলে কমেন্ট করে জানাবেন। আর্টিকেলটি আপনার পরিচিতদের মাঝে শেয়ার করে দিতে পারেন। এতে করে তারাও ডাচ বাংলা ব্যাংক পার্সোনাল লোন সম্পর্কে জানতে পারবে।