বুরো বাংলাদেশ এনজিও লোন পদ্ধতি – বুরো বাংলাদেশ লোন নেওয়ার যোগ্যতা

বুরো বাংলাদেশ এনজিও লোন পদ্ধতি ও বুরো বাংলাদেশ এনজিও লোন সম্পর্কিত বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে সাজানো হয়েছে আজকের এই আর্টিকেল। তাই আপনারা যারা বুরো বাংলাদেশ এনজিও লোন সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ সব তথ্য জানতে চান তাহলে এই আর্টিকেলটি শুধুমাত্র আপনার জন্য।

বুরো বাংলাদেশ এনজিও লোন পদ্ধতি

নিচে এই সকল বিষয়গুলো বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হয়েছে। বুরো বাংলাদেশ এনজিও সম্পর্কে সঠিক তথ্য পেতে এবং এই সংস্থাটির সকল গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো জানতে আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে সম্পূর্ণটা পড়ুন।

উপস্থাপনা

বুরো বাংলাদেশ এনজিও বাংলাদেশের দরিদ্র ও নিম্ন আয়ের জনগণের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক সহায়ক প্রতিষ্ঠান। এই সংস্থাটি তাদের বিভিন্ন লোন প্রোগ্রামের মাধ্যমে গ্রামীণ উন্নয়নে ব্যাপক ভূমিকা পালন করছে।

বুরো বাংলাদেশ কৃষক, ছোট ও মাঝারি ব্যবসায়ী এবং নারী উদ্যোক্তাদের জন্য বিভিন্ন ধরনের লোন সুবিধা প্রদান করে আসছে যাতে তাদের আয় বৃদ্ধির পাশাপাশি জীবনযাত্রার মান উন্নয়নে সহায়ক হয়। এই লোনের মাধ্যমে ব্যবসা সম্প্রসারণ, কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি এবং সামাজিক উন্নয়নের সুযোগ সৃষ্টি হয় এর ফলে স্থানীয় অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব পড়ে।

বুরো বাংলাদেশের সহজ শর্ত ও প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বেশি সংখ্যক মানুষ আর্থিক সেবা গ্রহণের সুযোগ পাচ্ছে যার মাধ্যমে তারা স্বাবলম্বী ও আত্মনির্ভরশীল হয়ে উঠছে।ত

বুরো বাংলাদেশ এনজিও

বুরো বাংলাদেশ একটি জাতীয় পর্যায়ের এনজিও (বেসরকারি সংস্থা), যেটা বাংলাদেশে দরিদ্র ও নিম্ন-মধ্যম আয়ের জনগোষ্ঠীর আর্থসামাজিক উন্নয়নের জন্য কাজ করে থাকে। ১৯৯০ সালে প্রতিষ্ঠিত হওয়া এই সংস্থাটি বিভিন্ন প্রোগ্রামের মাধ্যমে স্থানীয় পর্যায়ে আর্থিক অন্তর্ভুক্তি, স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষা, এবং কৃষি উন্নয়নসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে সহায়তা প্রদান করে থাকে।

প্রধানত মাইক্রোফাইন্যান্স বা ক্ষুদ্রঋণ প্রোগ্রামের মাধ্যমে দরিদ্র পরিবারগুলোকে আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হতে সহায়তা করা বুরো বাংলাদেশের অন্যতম লক্ষ্য। এই প্রোগ্রামের মাধ্যমে পরিবারগুলো ছোট ব্যবসা শুরু করতে, কৃষিকাজ করতে, শিক্ষার সুযোগ পেতে এবং স্বাস্থ্য ও বাসস্থান উন্নয়নে বিনিয়োগ করতে সক্ষম হয়।

এছাড়াও প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় ত্রাণ ও পুনর্বাসন কার্যক্রমেও বুরো বাংলাদেশ সক্রিয় ভূমিকা পালন করে। এনজিওটি বাংলাদেশ ব্যাংকের তত্ত্বাবধানে নিবন্ধিত এবং এটি দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বিস্তৃতভাবে কার্যক্রম পরিচালনা করে যাচ্ছে

আরো পড়ুনঃ-  আইএফআইসি ব্যাংক পরিবহন লোন - আইএফআইসি ব্যাংক বিডার্স লোন

বুরো বাংলাদেশ এনজিও লোন পদ্ধতি

বুরো বাংলাদেশ এনজিও তাদের গ্রাহকদের জন্য সহজ ও কার্যকর লোন পদ্ধতি গ্রহণ করেছে যেটা মূলত দরিদ্র ও নিম্ন আয়ের মানুষের আয় বৃদ্ধিতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। সাধারণত বুরো বাংলাদেশ এনজিও থেকে লোন পেতে হলে আবেদনকারীকে প্রথমে বুরো বাংলাদেশের সদস্যপদ গ্রহণ করতে হয়।

সদস্যপদ পাওয়ার পর নির্দিষ্ট কাগজপত্র ও প্রয়োজনীয় শর্তপূরণ করে লোনের জন্য আবেদন করা যায়।লোনের ধরন অনুযায়ী শর্ত এবং প্রক্রিয়া ভিন্ন হতে পারে যেমন সাধারণ ঋণ, কৃষি ঋণ, এসএমই ঋণ বা জরুরি প্রয়োজনে দুর্যোগ ঋণ।

বুরো বাংলাদেশ সরাসরি মাঠ পর্যায়ে কাজ করে তাই এই লোন গ্রহণের ক্ষেত্রে স্থানীয় শাখায় যোগাযোগ এবং যাচাই-বাছাই প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার মাধ্যমে লোন প্রদান নিশ্চিত করা হয়। ঋণ বিতরণের পর নির্দিষ্ট কিস্তিতে ঋণ পরিশোধ করতে হয় যেটা আবেদনকারীর আর্থিক সক্ষমতা অনুযায়ী নির্ধারণ করা হয়।

বুরো বাংলাদেশ এনজিও ঋণ প্রকারভেদ

বুরো বাংলাদেশ থেকে বিভিন্ন ধরণের ঋণ সুবিধা পাওয়া যায়। নিচে উল্লেখযোগ্য ঋণ সেবাগুলি দেওয়া হলোঃ

  • সাধারণ ঋণঃ নিম্ন আয়ের ব্যক্তিদের বিভিন্ন প্রয়োজন মেটানোর জন্য এই ঋণ প্রদান করা হয়।
  • কৃষি ঋণঃ কৃষকরা তাদের কৃষিকাজে সহায়তার জন্য এই ঋণ নিতে পারেন।
  • এসএমই ঋণঃ ছোট ও মাঝারি ব্যবসায়ী বা উদ্যোক্তাদের জন্য এই ঋণ প্রদান করা হয় এবং এই ঋণটি ব্যবসা সম্প্রসারণে সহায়ক।
  • মহিলা উদ্যোক্তা ঋণঃ নারী উদ্যোক্তাদের ব্যবসায়িক সহায়তার জন্য এই ঋণ দেওয়া হয়।
  • পানি ও পয়ঃনিষ্কাশন ঋণঃ পানীয় জল ও স্যানিটেশনের জন্য এই ঋণ দেওয়া হয়।
  • দুর্যোগ ঋণঃ প্রাকৃতিক দুর্যোগের পর জরুরি প্রয়োজনে সাহায্য প্রদানের জন্য এই ঋণ দেওয়া হয়।

এছাড়া, বুরো বাংলাদেশ ডিজিটাল ঋণ সুবিধাও প্রদান করছে, যা সহজে এবং দ্রুত পাওয়া যায়।

বুরো বাংলাদেশ এনজিও থেকে পেতে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র 

বুরো বাংলাদেশ এনজিও থেকে ঋণ পেতে হলে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র জমা দিতে হয়। সাধারণত জাতীয় পরিচয়পত্র (NID) বা জন্ম সনদ, বর্তমান ঠিকানার প্রমাণ (যেমন বিদ্যুৎ বিল বা ইউনিয়ন পরিষদ সনদ), আয়ের প্রমাণপত্র (কর্মসংস্থান সনদ বা ব্যবসার কাগজপত্র) প্রয়োজন হয়।

এর পাশাপাশি, সদস্যপদ ফরম পূরণ করতে হয় এবং এসএমই বা ব্যবসা ঋণের ক্ষেত্রে ব্যবসায়িক নিবন্ধন বা লাইসেন্স জমা দিতে হয়। কৃষি ঋণের ক্ষেত্রে জমির দলিল জমা দিতে হতে পারে। স্থানীয় শাখায় আবেদন করার সময় নির্দিষ্ট কাগজপত্রগুলোর প্রয়োজনীয়তা যাচাই করে ঋণ প্রদান করা হয়।

আরো পড়ুনঃ-  সোনালী ব্যাংক স্যালারি লোন - সোনালী ব্যাংক লোন পাওয়ার শর্তসমূহ

বুরো বাংলাদেশ এনজিও থেকে কারা লোন পাবেন

আপনারা যারা বুরো বাংলাদেশ এনজিও থেকে লোন নিতে চাচ্ছেন তাদের মনে একটি কমন প্রশ্ন এসে থেকে থাকে যে কারা এই সংস্থা থেকে লোন নিতে পারবে। তাই নিচে আলোচনা করা হয়েছে কোন শ্রেণীর বা পেশার ব্যক্তিরা এই সংস্থা থেকে লোন গ্রহণ করতে পারবে।

কৃষকরাঃ যারা কৃষি কাজে নিয়োজিত এবং যাদের চাষাবাদের জন্য লোন প্রয়োজন তারা এই সংস্থা থেকে লোন গ্রহণ করতে পারবে।

ছোট ও মাঝারি ব্যবসায়ী (এসএমই): উদ্যোক্তা বা ব্যবসায়ীরা যারা তাদের ব্যবসার সম্প্রসারণ বা উন্নতির জন্য এখান থেকে লোন নিতে পারবে।

মহিলা উদ্যোক্তাঃ বিশেষ করে নারীদের জন্য নির্দিষ্ট লোন সুবিধা রয়েছে। যারা নিজেদের ব্যবসা পরিচালনা করেন তারা এই লোন গ্রহণ করতে পারবেন।

নিম্ন ও মধ্য আয়ের পরিবারঃ যারা দৈনন্দিন প্রয়োজন মেটানোর জন্য লোনের প্রয়োজন অনুভব করেন তারা এখান থেকে লোন নিতে পারবেন।

দুর্যোগের শিকার ব্যক্তিঃ যারা প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন এবং জরুরি সহায়তার জন্য লোন নিতে চান তারা এই সংস্থাটি থেকে লোন গ্রহণ করতে পারবেন।

লোন পেতে হলে লোনগ্রহীতাদের বুরো বাংলাদেশের সদস্যপদ গ্রহণ করতে হয় এবং প্রয়োজনীয় কাগজপত্রসহ আবেদন করতে হয়।

বুরো বাংলাদেশ লোন নেওয়ার যোগ্যতা

বুরো বাংলাদেশ থেকে লোন নেওয়ার জন্য সাধারণত কিছু যোগ্যতার মানদণ্ড পূরণ করতে হয়। যোগ্যতার প্রধান শর্তগুলো হলোঃ

  • বয়সঃ সাধারণত ১৮ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে হতে হয়।
  • নাগরিকত্বঃ বাংলাদেশি নাগরিক হতে হবে এবং সংশ্লিষ্ট এলাকায় স্থায়ী বা অস্থায়ী বাসিন্দা হতে হবে।
  • আয়ের উৎসঃ ঋণগ্রহীতার একটি নির্দিষ্ট আয়ের উৎস থাকতে হবে, যেমন ব্যবসা, কৃষিকাজ, বা ছোটখাট কর্মসংস্থান।
  • সদস্যপদ গ্রহণঃ ঋণ পাওয়ার আগে বুরো বাংলাদেশের সদস্যপদ নিতে হবে।
  • ঋণ পরিশোধের ক্ষমতাঃ আবেদনকারীকে ঋণ পরিশোধের সক্ষমতা ও নিয়মিত আয়ের প্রমাণ দিতে হবে।
  • ব্যবসা বা কর্মসংস্থানের বৈধতাঃ এসএমই বা কৃষি ঋণের ক্ষেত্রে, বৈধ ব্যবসা বা কৃষি কাজ থাকতে হবে।

আবেদনকারীকে প্রয়োজনীয় কাগজপত্রসহ স্থানীয় শাখায় যোগাযোগ করতে হয় এবং কর্মকর্তারা যাচাই-বাছাইয়ের মাধ্যমে ঋণ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন।

বুরো বাংলাদেশ কৃষি লোন কিভাবে পাবেন

বুরো বাংলাদেশ এনজিও বর্তমানে কৃষি ক্ষেত্রে লোন সেবা চালু করেছে। ক্ষেত খামারের জন্য উদ্যোক্তা হতে এবং কৃষি কাজে উন্নত করায় ব্যুরো বাংলাদেশ কৃষি লোনের একমাত্র উদ্দেশ্য। বর্তমানে এই কৃষি লোন পরিবারের খাদ্য উৎপাদন বাড়ায়। বুরো বাংলাদেশ খামারি দের জন্য এই কৃষি লোনটি চালু করেছে।

আরো পড়ুনঃ-  সহজে ব্যাংক লোন পাওয়ার উপায় - সহজ কিস্তিতে লোন বাংলাদেশ

এখানে ১০ হাজার টাকা থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ ২৫ হাজার টাকা পর্যন্ত কৃষি ও খামারি ভাইরা লোন নিতে পারবেন। এবং তারা এই লোনের টাকা সাপ্তাহিক কিস্তি হিসেবে ৪৫ থেকে ৯০ দিনের মধ্যেই পরিশোধ করতে পারবেন।

এমনকি মাসিক কিস্তি হিসেব এর মাধ্যমে ১২ থেকে ৩৬ কিস্তিতেও এই লোনটি পরিশোধ করার সুযোগ রয়েছে। এজন্য যদি কেউ তার নিজ খামার এবং কৃষি কাজ উন্নত করতে চাই সেক্ষেত্রে সেই ব্যক্তি খুব সহজে বুরো বাংলাদেশ এনজিও কৃষি লোনের মাধ্যমে তার কৃষি কাজের ইচ্ছা পূরণ করতে পারবে।

তবে এর জন্য অবশ্যই খামারের বিষয়টি আবেদনপত্রের সাথে তুলে ধরতে হবে। ও ভিজিটের মাধ্যমে পরিদর্শন করে এরপরে কৃষি লোনের দেওয়ার জন্য ব্যক্ত হবে।

বুরো বাংলাদেশ এনজিও নিয়ে আরও তথ্য

ব্যুরো বাংলাদেশ বাংলাদেশের সব থেকে ভাল এনজিওগুলোর মধ্যে একটি। গত ৩২ বছর ধরে এখন পর্যন্ত তারা বাংলাদেশের সাধারণ জনগণদের তাদের সেবা দিয়ে যাচ্ছে। এখান থেকে আপনি ক্ষুদ্র লোন নিতে পারবেন। তারা ক্ষুদ্র লোনের পাশাপাশি আরো অন্যান্য সেবা দিয়ে থাকে।

যেমনঃ প্রশিক্ষণ, সঞ্চয় সেবা, রেমিস্ট্যান্ট গ্রহণ, এবং তাদের থেকে আপনি লোন নিয়ে মোবাইলে কিনতে পারবেন। আপনি সঞ্চয় সেবায় সর্বোচ্চ ১০% পর্যন্ত মুনাফা পেতে পারেন। এবং রেমিস্টানের টাকার ওপর ২.৫ % প্রণোদনা পাবেন।

বুরো বাংলাদেশ এনজিও বিভাগীয় অফিসের ঠিকানা

বুরো বাংলাদেশের বিভাগীয় অফিসগুলোর নির্দিষ্ট ঠিকানা জানতে আপনি তাদের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটের “Contact Us” বা “Office Locations” পেজে গিয়ে বিভাগীয় অফিসের ঠিকানা দেখতে পারেন।

এছাড়া সরাসরি প্রধান কার্যালয়ে যোগাযোগ করেও বিভাগীয় অফিসের বিস্তারিত ঠিকানা এবং ফোন নম্বর সংগ্রহ করা যাবে। তাদের প্রধান কার্যালয়ের হটলাইন নম্বর বা ইমেইলের মাধ্যমেও তথ্য জানতে পারেনঃ

  • ওয়েবসাইটঃ burobd.org
  • হটলাইনঃ +৮৮-০২-৯৮৯৯৭৮৬ (প্রধান কার্যালয়)

লেখকের শেষ মতামত

এই ছিল আজকের বুরো বাংলাদেশ এনজিও লোন পদ্ধতি সম্পর্কিত সকল তথ্য। এখানে সংক্ষেপে বিস্তারিত জানাতে চেষ্টা করেছি। এর বাইরেও আপনার কোনো প্রশ্ন থাকলে তা কমেন্ট করে জানাবেন। আমরা আপনাদের সকল প্রশ্নের উত্তর দিয়ে থাকি।

তো বন্ধু আশা করছি আপনি আমার এই পোস্টটি পড়ে বুরো বাংলাদেশ এনজিও লোন পদ্ধতি নিয়ে বিস্তারিত জানতে পেরেছেন। এরপরও বুঝতে অসুবিধা হলে কমেন্ট করে জানাবেন। আর্টিকেলটি আপনার পরিচিতদের মাঝে শেয়ার করে দিতে পারেন। এতে করে তারাও বুরো বাংলাদেশ এনজিও লোন পদ্ধতি সম্পর্কে জানতে পারবে। ধন্যবাদ।

Leave a Comment