কৃষি ব্যাংক কি কি লোন দেয় – কৃষি ব্যাংক লোন পরিশোধের নিয়ম

সাধারণত কৃষি ব্যাংক লোন নেয়ার জন্য অবশ্যই নিকটস্থ কৃষি ব্যাংকের শাখায় যেতে হবে। ব্যাংকের কর্মকর্তা থেকে অথবা বাংলাদেশ ব্যাংকের অফিশিয়াল ওয়েবসাইট থেকে আবেদন ফরম সংগ্রহ করে নিতে হবে। ঐ আবেদন ফরমে যে সকল তথ্য খুজতেছে সেই সকল তথ্য দিয়ে ফরমটি পূরণ করে আবেদন ফর্ম ব্যাংকে জমা দিতে হবে। এরপর, ব্যাংক কর্তৃপক্ষ আপনার সকল তথ্য যাচাই বাছাই করে নিবেন যদি আপনি লোন নেওয়ার জন্য যোগ্য হন তাহলে আপনাকে ঋণ প্রদান করা হবে।

কৃষি ব্যাংক কি কি লোন দেয়

আপনি যদি ঋণের জন্য যোগ্য হন তাহলে আপনাকে সরাসরি আপনার ব্যাংকে অথবা আপনার হাতে টাকা প্রদান করা হবে। এখন তো টাকা পেলেন এইবার আপনার কাজ হলো সঠিক স সময়ের মধ্যে ঋণ পরিশোধ করার ব্যাবস্থা নেওয়া। অর্থাৎ ঋণ পাওয়ার পর আপনার স্বপ্নের কাজ যত দ্রুত সম্ভব শুরু করা। 

আপনি চাইলে কৃষি ব্যাংক লোনের টাকা সরকারি অথবা চেকের মাধ্যমে ঋণ পরিশোধ করতে পারবেন। মোবাইল ব্যাংকিং ব্যবহার করার মাধ্যমে ও সেটা করা যায়। আজকের এই পোস্টে কৃষি ব্যাংক লোন পরিশোধের নিয়ম সম্পর্কে বিস্তারিত জানানোর চেষ্টা করেছি, তাই পোস্টটি সম্পূর্ণ পড়ার অনুরোধ রইল।

কৃষি ব্যাংক লোন কি

কৃষি ব্যাংক লোন বলতে সাধারণত শস্য, পশুপালন (গরু, ছাগল, মহিষ, গাভী ইত্যাদি), প্রাণিসম্পদ, মৎস্য চাষ, ফলমূল চাষের জন্য লোন প্রদান করাকে বোঝায়। মূলত কৃষি কাজের সকল চাহিদা পূরণ করার জন্য কৃষি ব্যাংক চলমান, প্রকল্প, এসএমই ও কৃষি ভিত্তিক শিল্প লোন প্রদান করে থাকে। কৃষি ব্যাংক মূল লক্ষ্য হলো খাদ্য ও গ্রামীণ অর্থনৈতিক আরো শক্তিশালী করা।

কৃষি ব্যাংক কি কি লোন দেয়

বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক কি কি লোন দেয় সেই বিষয়ে নিম্নে বিস্তারিত উল্লেখ করা হলঃ

স্বল্প মেয়াদী ঋণ

কৃষি ব্যাংক মূলত নানান ধরণের খাতে স্বল্প মেয়াদী ঋণ দিয়ে থাকে যা ঋন গ্রহনের ১৮ মাসের মধ্যে পরিশোধ করতে হয়। আমরা নিম্নে একেকটি খাত তুলে ধরেছি যাতে করে আপনি কোন খাতের জন্য এই স্বল্প মেয়াদী ঋণ গ্রহন করতে পারবেন সেটা বুঝতে সুবিধা হয়।

শস্য ঋণ: আপনার যদি শস্য বা দানাদার জাতীয় ফসল থেকে থাকে তাহলে আপনি এই ঋণটি গ্রহন করতে পারবেন। কৃষি ব্যাংকের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে দেয়া তথ্য অনুযায়ী স্বল্প মেয়াদী ঋনের আওতায় যেসব ফসলের জন্য শস্য ঋণ দেয়া হয় তা নিম্মে উল্লেখ করা হলঃ

  • রোপা আমন
  • বোরো
  • গম
  • আলু
  • আখ
  • সরিষা/বাদাম
  • ডাল/শীত কালীন শাকসবজি
  • আউশ/বোনা আমন
  • পাট
  • ভুট্টা
  • তিল/গ্রীষ্মকালীন শাক সবজী
  • তুলা
  • আদা/কচু
  • মৎস্য চাষ
  • চিংড়ি চাষ
  • একুয়াকালচার
  • রেণু উৎপাদন
  • লবণ চাষ
  • কলা চাষ ও বিবিধ  
  • শস্যগুদাম ও বাজারজাতকরণ
আরো পড়ুনঃ-  ইস্টার্ন ব্যাংক লোন সমূহ ২০২৫ (আপডেট তথ্য)

চা উৎপাদন ঋণ: আপনি যদি সিলেট কিংবা অন্য যেকোনো স্থানেই থাকেন না কেনো, যদি চা উৎপাদন সংক্রান্ত চাষ কার্যের জন্য ঋণ গ্রহন করতে চান তবে কৃষি ব্যাংক আপনাকে ঋণ দিবে স্বল্প মেয়াদী ঋনের আওতায়।

চলতি মূলধন ঋণ: আপনি সরাসরি কৃষিকাজ বা চাষ করে না, তবে আপনি যদি কৃষি সংক্রান্ত পরোক্ষ কাজের ব্যবসায়ে জড়িত থাকেন, তাহলেও আপনি স্বল্প মেয়াদী ঋনের আওতায় বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক লোন পাবেন। এক্ষেত্রে নিম্মে উল্লেখিত কাজ গুলোর মধ্যে যেকোনো একটি কাজের বা ব্যবসার সাথে আপনাকে যুক্ত থাকতে হবে।

  • রপ্তানী ঋণ
  • মৎস্য প্রক্রিয়াজাতকরণ
  • আলু সংরক্ষণ
  • কৃষি পণ্যের বিপণন
  • সার ও কীটনাশক ঔষধের ডিলার
  • কৃষি পণ্যের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী

মধ্যম মেয়াদী ঋণ

এই ঋণ মূলত স্বল্পমেয়াদী ঋণের চেয়ে পরিমাণে বেশি এবং দীর্ঘমেয়াদী ঋণের পরিমাণণের চেয়ে কম হয়ে থাকে। আমরা আপনাদের সুবিধার জন্য কোন কাজের জন্য মধ্যম এই মেয়াদী ঋণ পাবেন সেটা নিম্নে উল্লেখ করে দেয়া হলঃ 

  • গ্রামীন যানবাহন ক্রয়
  • পানের বর, রেশম চাষ, ফল ও অন্যান্য ফসলের বাগান
  • শিক্ষিত বেকার যুবক উন্নয়ন কর্মসূচী
  • সেচ যন্ত্রপাতি ক্রয়
  • পুকুরে মৎস্য চাষ
  • চিংড়ি চাষ (প্রকল্প আকারে)
  • সামুদ্রিক মৎস্য চাষ
  • কৃষি যন্ত্রপাতি / খামার যন্ত্রপাতি ক্রয়
  • গাভী পালন / গরু মোটাতাজাকরণ / ছাগল পালন / হাঁস-মুরগী পালন
  • পল্লী বিদ্যুতায়ন / তাঁত শিল্প / কুটির শিল্প 

মধ্যম মেয়াদী ঋণের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক এই সকল কাজের জন্য লোন ব্যবস্থা রেখেছে  ।

দীর্ঘ মেয়াদী ঋণ

আপনার যদি বড় পরিসরে কৃষি সংক্রান্ত শিল্প থাকে, তাহলে আপনি সেক্ষেত্রেও দীর্ঘ মেয়াদী ঋণের জন্য বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকে আবেদন করতে পারেন।কৃষি ব্যাংকের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে দীর্ঘমেয়াদী ঋণের ধরণে যে সকল খাত প্রকাশিত রয়েছে সেগুল নিম্নে উল্লেখ করা হলঃ 

  • দুগ্ধ খামার
  • গবাদী পশুর খামার
  • ফলের বাগান ,
  • ছোট আকারের কৃষি যন্ত্রপাতি উৎপাদন
  • চা বাগান উন্নয়ন
  • রাবার চাষ
  • চা চাষে লোন
আরো পড়ুনঃ-  পূবালী ব্যাংক কি সরকারি - পূবালী ব্যাংক এর সুবিধা

সাধারনত এটাই ব্যাসিক পর্যায়ে কৃষি ব্যাংক লোন এর প্রকারভেদ। এবার চলুন তাহলে কৃষি ব্যাংক লোন পরিশোধের নিয়ম ধাপে ধাপে জেনে নেওয়া যাক।

কৃষি ব্যাংক লোন পরিশোধের নিয়ম

স্বল্প মেয়াদি ঋণের ক্ষেত্রে: এই ঋণের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ১৮ মাসের মধ্যে কৃষি ব্যাংক লোন পরিশোধ করতে হবে। পশু পালন, শস্য উৎপাদন, মৎস্য চাষ, অর্থ-সামাজিক কর্মকান্ড, কৃষিজাত পণ্য ইত্যাদি জন্য এই স্বল্প মেয়াদি ঋণ দেওয়া হয়।

মধ্যম মেয়াদি ঋণের ক্ষেত্রে: এই ঋণের ক্ষেত্রে সাধারণত ১৮ মাস থেকে ৫ বছরের মধ্যে কৃষি ব্যাংক ঋণ পরিশোধ করতে হয়। সেচ ও কৃষি যন্ত্রপাতি, ফল এবং ফুলের চাষ, মাঝারি ধরনের প্রকল্প, মৎস্য চাষ, পশু পালন, গ্রামীণ পরিবহন ইত্যাদির জন্য এই লোন দেওয়া হয়।

দীর্ঘ মেয়াদি ঋণের ক্ষেত্রে: এই ঋণের ক্ষেত্রে ৫ বছরের উপর থেকে শুরু করে ঋণের ধরণের উপর নির্ভর করে ব্যাংক ঋণ পরিশোধ করতে হয়। এটি ব্যাংক থেকে নির্ধারণ করে দেওয়া হবে। সাধারণত কৃষি জাত খামার, উদ্যান উন্নয়ন, চা বাগান, কৃষি ভিত্তিক শিল্প, রপ্তানি যোগ্য দ্রব্যাদি উৎপাদন, রাবার চাষ ইত্যাদি ক্ষেত্রে এই ঋণ প্রদান করা হয়।

কৃষি ব্যাংক লোন পরিশোধে ব্যর্থ হলে করণীয়

ঋণ পরিশোধে ব্যর্থ হলে প্রার্থীকে ব্যাংকের সাথে যোগাযোগ করতে হয় এবং সমস্যার সমাধান করতে হয়। ব্যাংক প্রয়োজনে সময়সীমা বাড়িয়ে দিতে পারে বা অন্যান্য সুবিধা প্রদান করতে পারে। এছাড়া প্রার্থীদের জন্য বিশেষ পুনর্বাসন পরিকল্পনাও থাকতে পারে যা তাদের ঋণ পরিশোধে সহায়তা করে।

কৃষি ব্যাংক লোন সংক্রান্ত পরামর্শ

লোন গ্রহণের পূর্বে প্রার্থীদের কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় বিবেচনা করা উচিত। সঠিকভাবে গবেষণা করা, নিজের প্রয়োজন ও সামর্থ্য বিবেচনা করা, এবং ব্যাংক কর্তৃপক্ষের সাথে পরামর্শ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। প্রার্থীরা ব্যাংকের বিভিন্ন সেবা ও সুবিধা সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়।

ঋণ গ্রহণের পর সঠিক পরিকল্পনা ও বাজেট তৈরি করা প্রয়োজন। নির্দিষ্ট লক্ষ্যমাত্রা স্থির করা, খরচ ও আয়ের সঠিক হিসাব রাখা, এবং ঋণের ব্যবহার সঠিকভাবে পরিকল্পনা করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এভাবে প্রার্থীরা ঋণ ব্যবহার করে তাদের অর্থনৈতিক অবস্থার উন্নতি করতে পারেন।

ঋণ পরিশোধে সঠিক সময় মেনে চলা প্রার্থীদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। মাসিক বাজেট তৈরি করা, অপ্রয়োজনীয় খরচ কমানো, এবং ব্যাংকের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ রাখা প্রার্থীদের জন্য সহায়ক হতে পারে। এছাড়া সময়মতো কিস্তি পরিশোধ করলে প্রার্থীদের ক্রেডিট স্কোর উন্নত হয় যা ভবিষ্যতে ঋণ গ্রহণে সহায়ক হতে পারে।

আরো পড়ুনঃ-  সহজে ব্যাংক লোন পাওয়ার উপায় - সহজ কিস্তিতে লোন বাংলাদেশ

কৃষি ব্যাংকের সুযোগ সুবিধা

বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের সুযোগ এবং সুবিধা রয়েছে অনেক। কৃষকরা তেমন জামানত ছাড়াই কৃষি ব্যাংক থেকে তাদের কৃষি কাজের প্রয়োজনে লোন নিতে পারবে। লোন নেয়ার জন্য জামানত লাগেনা জন্য অনেক কৃষক তাদের কৃষি কাজের অর্থায়ন করতে এই ব্যাংক থেকে লোন নিতে পারে।

এছাড়াও, বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের বেশ কিছু সুযোগ-সুবিধা আছে। নিচে এগুলো তালিকা আকারে শেয়ার করা হলো –

  • কৃষি ব্যাংক থেকে কৃষকরা আধুনিক কৃষি যন্ত্রপাতি ক্রয়ের জন্য লোন নিতে পারবেন।
  • কৃষি ব্যাংক শস্য চাষের জন্য কৃষকদের লোন সুবিধা প্রদান করে।
  • কৃষির বিভিন্ন খাত যেমন ফসল চাষ, মাছ চাষ, প্রাণিসম্পদ পালন ইত্যাদিতে কৃষকরা স্বল্প সুদে লোন নিতে পারবেন।
  • মাছ চাষের সাথে জড়িত কৃষকরা কৃষি ব্যাংক থেকে মাছ চাষের জন্য লোন নিতে পারবেন।
  • গবাদি পশু পালন, মুরগি পালন ইত্যাদি প্রাণিসম্পদ খাতে কৃষকরা কৃষি ব্যাংক থেকে লোন নিতে পারবেন।
  • কৃষি ব্যাংক থেকে ৮% ইন্টারেস্ট রেটে লোন দেয়া হয়। ফলে, অন্যান্য ব্যাংক থেকে লোন দেয়া হয় জন্য কৃষকরা এই ব্যাংক থেকে সহজেই লোন নিতে পারেন। লোন নেয়ার জন্য আলাদা করে জামানতের প্রয়োজন পড়েনা।

লেখকের শেষ মতামত

কৃষি ব্যাংক লোন হলো বাংলাদেশে অন্যতম একটি লোন। বিশেষ করে কৃষক বা কৃষি কাজের মানুষদের জন্য বাংলাদেশের অন্যান্য ব্যাংকিং সেবার গুলোর মধ্যে কৃষি ব্যাংক অন্যতম। বাংলাদেশের কৃষি কাজের চাহিদা বৃদ্ধি করার জন্য এবং কৃষকের কাজে সহায়তা করার জন্য বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক “Krishi Bank Loan” প্রদান করে থাকে।

কৃষি ব্যাংক প্রতিটা কৃষকের স্বপ্ন পূরণের পথে অংশীদার হতে চায়। আপনি যদি একজন কৃষক হয়ে থাকেন তাহলে কৃষি ব্যাংকে লোন গ্রহন করে সঠিক পদ্ধতি অনুসরণ করে আপনি লোন পরিশোধের করবেন। অবশ্যই কৃষি ব্যাংক লোন আবেদন করার পূর্বে আপনার লোন পরিশোধ করার সামর্থ্য বিবেচনা করতে হবে।

এই ছিল আজকের কৃষি ব্যাংক কি কি লোন দেয় এবং কৃষি ব্যাংক লোন পরিশোধের নিয়ম সম্পর্কিত সকল তথ্য। এখানে সংক্ষেপে বিস্তারিত জানাতে চেষ্টা করেছি। এর বাইরেও আপনার কোনো প্রশ্ন থাকলে তা কমেন্ট করে জানাবেন। আমরা আপনাদের সকল প্রশ্নের উত্তর দিয়ে থাকি।

তো বন্ধু আশা করছি আপনি আমার এই পোস্টটি পড়ে আশা কৃষি ব্যাংক লোন পরিশোধের নিয়ম নিয়ে বিস্তারিত জানতে পেরেছেন। এরপরও বুঝতে অসুবিধা হলে কমেন্ট করে জানাবেন। আর্টিকেলটি আপনার পরিচিতদের মাঝে শেয়ার করে দিতে পারেন। এতে করে তারাও কৃষি ব্যাংক লোন পরিশোধের নিয়ম সম্পর্কে জানতে পারবে। ধন্যবাদ।

Leave a Comment