ঘন ঘন প্রস্রাব দূর করার উপায়

ঘন ঘন প্রস্রাবের বেগ আসা প্রায় এ সমস্যার মধ্যে অনেককেই পড়তে দেখা যায়। তবে এ সমস্যা সমাধানের উপায় কি সে সম্পর্কে অনেকের ধারনা নেয়। তাই তাদের উদ্দেশ্যে আমাদের আজকের আর্টিকেল।

ঘন ঘন প্রস্রাব দূর করার উপায়

ঘন ঘন প্রস্রাবের সমস্যায় যারা ভুগছেন তারা আমাদের আজকের আর্টিকেলটি পড়ুন। আমাদের আজকের আর্টিকেলটি পড়ার মাধ্যমে জেনে যাবেন ঘন ঘন প্রস্রাব দূর করার উপায় কি। এছারাও আমাদের আজকের আর্টিকেলটি পড়লে জানতে পারবেন ঘন ঘন প্রস্রাব কিসের লক্ষণ, ঘন ঘন প্রস্রাব হলে কি খেতে হবে, কি ব্যায়াম করতে হবে এবং ঘন ঘন প্রস্রাব বন্ধ করার ঔষধ কি।

ঘন ঘন প্রস্রাব কিসের লক্ষণ

ঘন ঘন প্রস্রাবের সমস্যা নিয়ে আমাদের মধ্যে অনেকেই ভোগেন। সারাদিন অথবা রাতে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি প্রস্রাব এ সমস্যার লক্ষণ কি তা আমাদের জানা প্রয়োজন। আমরা অনেকেই বিষয়টিকে গুরুত্বসহকারে দেখি না। তবে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি প্রস্রাব হওয়া হতে পারে স্বাস্থের কোনো ক্ষতির কারন। তাই চলুন বিস্তারিতভাবে জেনে নেওয়া যাক ঘন ঘন প্রস্রাব কিসের লক্ষণ।

মূত্রনালীর সংক্রামন: ইউরিনারি ট্র্যাক্ট ইনফেকশন মূত্রনালীতে সংক্রামনের কারনে ঘন ঘন প্রসাব হওয়ার লক্ষণ দেখা দিতে পারে। বিভিন্ন ব্যাকটেরিয়ার সংক্রামন এ সমস্যার জন্য দায়ী থাকে। এ সমস্যা হলে ঘন ঘন প্রস্রাব হবে এবং তার সাথে প্রস্রাবে জ্বালাপোড়া, ব্যাথা, প্রস্রাবে দুর্গন্ধ, প্রস্রাবের রং পরিবর্তন হয়ে থাকে।

ডায়াবেটিস: স্বাভাবিকের থেকে হঠাৎ করে প্রস্রাব বেড়ে যাওয়া হতে পারে ডায়াবেটিসের লক্ষণ। গ্লুকোজের মাত্রা শরীরে বেড়ে গেলে প্রস্রাবের মাধ্যমে তা বেড়িয়ে আসে যার ফলে ঘন ঘন প্রস্রাব হয়ে থাকে। ডায়াবেটিস এর কারনে ঘন ঘন প্রস্রাব হলে এর সাথে আরও বেশ কিছু লক্ষণ যেমন ক্ষুধা বৃদ্ধি, ক্লান্তি অনুভব, ওজন কমা প্রভৃতি দেখা দেয়।

মূত্রথলিতে পাথর: মূত্রথলিতে পাথর হওয়ার কারনে ঘন ঘন প্রস্রাবের বেগ আসতে পারে। এর সাথে প্রস্রাবে রক্তও দেখা যায়।

গর্ভাবস্থা: গর্ভাবস্থার সময় ঘন ঘন প্রস্রাব হতে পারে। এ সময় জরায়ুর আকার বড় হয়, ফলে ঘন ঘন প্রস্রাব হয়ে থাকে।

ডিহাইড্রেশন: শরীরে পানির ঘাটতি হলে এর লক্ষণ হতে পারে ঘন ঘন প্রস্রাব। অনেকের ক্ষেত্রে এমন হতে দেখা গেছে।

এসব ছাড়াও জরায়ুরোগ, রক্তে ক্যালসিয়াম বা পটাশিয়ামের ঘাটতি, কিছু ঔষধ গ্রহন, প্রোস্টেট গ্রন্থির সমস্যা হয়ে থাকলে লক্ষণ হিসেবে ঘন ঘন প্রস্রাব হয়ে থাকে। তবে এ কারণগুলো সম্ভাব্য, তাই ঘন ঘন প্রস্রাব এ সমস্যা যদি দীর্ঘস্থায়ী হয় তাহলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

আরো পড়ুনঃ-  নতুন ফ্রিজ ব্যবহারের নিয়ম - ফ্রিজের রেগুলেটর কত রাখা উচিত

ঘন ঘন প্রস্রাব দূর করার ঘরোয়া উপায়

ঘন ঘন প্রস্রাব একটি বিরক্তিকর সমস্যা। আর অনেক ব্যক্তিকে এ সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়েছে। এ সমস্যা আমাদের দৈনন্দিন জীবনে ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে। ঘন ঘন প্রস্রাব হতে পারে কোনো স্বাভাবিক কারনে কিংবা জটিল কোনো কারনে। গুরুত্বর কোনো কারনে যদি এ সমস্যা না হয়ে থাকে তাহলে ঘরোয়া উপায়ে কয়েকদিনের মধ্যে তা সারিয়ে তুলতে পারবেন সহজেই। তাই আসুন জেনে নেওয়া যাক ঘন ঘন প্রস্রাব দূর করার ঘরোয়া উপায় সম্পর্কে।

তুলসি পাতা: তুলসি পাতা বিভিন্ন ব্যাকটেরিয়া ও ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াই করে। মূত্রনালীর সংক্রামনের কারনে যদি আপনার ঘন ঘন প্রস্রাবের সমস্যা হয়ে থাকে তাহলে তুলসি পাতার সাহায্যে সেরে যেতে পারে এ সমস্যা। তাই এ সমস্যা সমাধানের জন্য কয়েকটি তুলসি পাতা ব্লেন্ড করে মধুর সাথে মিশিয়ে খাবেন।

আমলা: উচ্চ ভিটামিন সি পাওয়া যায় আমলার মধ্যে। এটি খেলে রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রনে আসে ফলে ঘন ঘন প্রস্রাবের সমস্যা কমে যায় অনেকটাই। তাই ঘন ঘন প্রস্রাবের সমস্যা দূর করতে আমলার রস খান।

জিরা: মূত্রাশয়ের কার্যকারিতা নিয়ন্ত্রন রাখতে সাহায্য করে থাকে জিরা। যার কারণে জিরা খেলে ঘন ঘন প্রস্রাবের বেগ কমে আসে। তাই এক কাপ পানিতে ২ চা চামচ জিরা নিয়ে পানিটুকু ভালোভাবে ফুটিয়ে খাবেন।

প্লেভিক ফ্লোর ব্যায়াম: পেটের পেশিকে শক্তিশালী করে এবং মূত্রাশয়ের নিয়ন্ত্রন বাড়ায় প্লেভিক ফ্লোর ব্যায়াম। যার ফলে ঘন ঘন প্রস্রাবের সমস্যা হ্রাস করতে সহায়তা করে থাকে। তাই নিয়মিত এ ব্যায়াম করার চেষ্টা করুন।

খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন: ঘন ঘন প্রস্রাব সমস্যার সমাধান পেতে হলে খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন আনুন। ক্যাফিন, অ্যালকোহল, কৃত্রিম মিষ্টি, মশলাদার খাবারগুলো এড়িয়ে চলুন।

ঘন ঘন প্রস্রাবের সমস্যা হলে উপরের বলা টিপসগুলো ফলো করবেন। আর ডায়াবেটিস রোগিদের এ সমস্যা দেখা দিলে ডায়াবেটিস কন্ট্রোলে রাখতে হবে। যদি ঘরোয়া উপায়ে সমাধান না পান তাহলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

ঘন ঘন প্রস্রাব হলে কি খাওয়া উচিত

ঘন ঘন প্রস্রাবের সমস্যা আমাদের পরিচিত একটি সমস্যার নাম। প্রায় অনেকের এটি হতে দেখা যায়। তবে এ সমস্যা জটিল কোনো কারনে নাও হতে পারে। যার কারনে ঘরোয়া প্রতিকারের সাহায্যে এ সমস্যা স্বাভাবিক অবস্থায় ফেরানো যায়। সেক্ষেত্রে আনতে হবে খাদ্যাভ্যাসে কিছু পরিবর্তন। কারণ এমন অনেক খাবার রয়েছে যেগুলো সমস্যাকে বাড়িয়ে দেয়। তাই যে খাবারগুলো সমস্যাকে বাড়ায় না সে খাবারগুলো খাদ্য তালিকায় রাখতে হবে এবং যে খাবারগুলো সমস্যাকে বাড়ায় সেগুলো এড়িয়ে চলতে হবে। তো চলুন জেনে নেওয়া যাক ঘন ঘন প্রস্রাব হলে কি খাওয়া উচিত।

আরো পড়ুনঃ-  ডালিম খাওয়ার উপকারিতা - ডালিম খাওয়ার নিয়ম

শাক-সবজি: ঘন ঘন প্রস্রাবের সমস্যা দেখা দিলে শাক-সবজি খাবেন। শাক-সবজি খেলে স্বাস্থের কোনো ধরনের অবনতি হবে না। তাই শাকসবজির মধ্যে ব্রোকলি, শসা, অ্যাসপারাগাস, গাজর, লেটুস ইত্যাদি খাবেন।

ফল: ঘন ঘন প্রস্রাবের সমস্যা হলে ফলের মধ্যে আপেল, কলা, নারকেল, তরমুজ, আঙ্গুর, ব্লাকবেরি, স্ট্রবেরি ইত্যাদি খাবেন। এগুলো খেলে সমস্যা বাড়ার সম্ভাবনা নেয়।

প্রোটিন: সামগ্রিক স্বাস্থের জন্য আপনার প্রোটিনজাতীয় খাবার খাওয়া গুরুত্বপূর্ন। আর এ খাবারগুলো ঘন ঘন প্রস্রাবের সমস্যায় কোনো ধরনের ক্ষতি করে না। তাই ঘন ঘন প্রস্রাবের সমস্যা হলে প্রোটিনজাতীয় খাবার যেমন-মুরগি, মাছ, ডিম ইত্যাদি পর্যাপ্ত পরিমাণে খাবেন।

ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার: ঘন ঘন প্রস্রাবের সমস্যা হলে ডায়েটে ফাইবার সমৃদ্ধ খাবারগুলো রাখবেন। ফাইবার সমৃদ্ধ খাবারগুলোর মধ্যে রয়েছে বার্লি, কাজুবাদাম, মটরশুটি, মসুর ডাল ইত্যাদি। এ খাবারগুলো মূত্রাশয়ের উপর চাপ কমিয়ে আনতে সহায়তা করবে।

এ খাবারগুলো আপনার ঘন ঘন প্রস্রাবের সমস্যায় খেতে পারবেন। তবে এমন কিছু খাবার রয়েছে যেগুলো আপনাকে এড়িয়ে চলতে হবে। জেনে নিন কোন খাবারগুলো খাওয়া যাবে না-

  • অতিরিক্ত চা এবং কফি
  • ক্যাফেইনযুক্ত খাদ্যদ্রব্য
  • অ্যালকোহল
  • অ্যাসিডিক ফল
  • ঝালযুক্ত খাবার
  • কোমল পানীয়
  • অতিরিক্ত মসলাযুক্ত খাবার
  • অতিরিক্ত চিনি
  • সোডা ইত্যাদি।

ঘন ঘন প্রস্রাব দূর করার ব্যায়াম

নিয়মিত শারিরিক ব্যায়াম করার ফলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। স্বাস্থ সুরক্ষায় ব্যায়াম আমাদের দৈনন্দিন জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ন অংশ। শরীরের সমস্যা সমাধানের জন্য ব্যায়ামের ভূমিকা রয়েছে। ঘন ঘন প্রস্রাব, এ সমস্যা দূর করতে নিয়মিত ব্যায়াম কার্যকারী ভূমিকা রাখে। তাই এ সমস্যা হলে ব্যায়াম করার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। তাই জেনে নিন ঘন ঘন প্রস্রাব দূর করার ব্যায়াম সম্পর্কে।

১. ঘন ঘন প্রস্রাবের সমস্যা দূর করতে নিয়মিত কেগেল ব্যায়াম করবেন। কেগেল ব্যায়াম করার ফলে মূত্রাশয় নিয়ন্ত্রনে আনা যায়। তাই আপনি যোনিতে পেশিগুলো চেপে ধরুন, এমনভাবে চেপে ধরবেন যাতে আপনার মনে হয় কেগেল ব্যায়াম করার জন্য প্রস্রাব আটকে রাখার চেষ্টা করছেন। এভাবে ৩ থেকে ৫ সেকেন্ড ধরে রাখুন। এ প্রক্রিয়াটি দিনে ৩ থেকে ৪ বার করার চেষ্টা করুন।

২. অনেক সময় পেলভিক ফ্লোর মাসলগুলো দুর্বল হয়ে যাওয়ার কারনে অনেকের ঘন ঘন প্রস্রাবের সমস্যা হয়ে থাকে। তাই ব্যায়ামের মাধ্যমে পেলভিক ফ্লোর মাসলগুলো শক্তিশালী করা প্রয়োজন। সেক্ষেত্রে ব্যায়ামের জন্য প্রথমে চিৎ হয়ে শুয়ে যাবেন। তারপর দুই পা মেঝের সাথে লাগিয়ে ভাঁজ করে আপনার পেট নিচের দিকে টান করবেন। এরপর পা দুটো বিভিন্ন অ্যাঙ্গেলে শূন্য করে পেটের দিকে, ডানে এবং বামে কয়েক সেকেন্ডের জন্য টানবেন। প্রতিদিন এ ব্যায়াম ৪ থেকে ৫ বার করার চেষ্টা করবেন।

আরো পড়ুনঃ-  রাতে ঘুমানোর সঠিক সময় কখন - কত ঘন্টা ঘুমানো উচিত

৩. প্রথমে চিৎ হয়ে শুয়ে দুই পা একসাথে মিলাবেন। এরপর দুই পা একসাথে মিলিয়ে সোজাভাবে ৩০ ডিগ্রি অ্যাঙ্গালে উপরের দিকে উঠিয়ে ১০ সেকেন্ড মতো ধরে রাখার চেষ্টা করবেন। আর যারা বয়স্ক রয়েছেন তাদের যদি এ ব্যায়াম করতে সমস্যা হয় তাহলে দুই পা একসাথে উপরের দিকে না উঠিয়ে প্রথমে এক পা কউঠাবেন এরপর অপর পা উঠিয়ে ধরে রাখবেন। এ ব্যায়ামটি প্রতিদিন ১০ বার করে করার চেষ্টা করবেন।
উপরের বলা ব্যায়ামগুলো নিয়মিত করলে ঘন ঘন প্রস্রাবের সমস্যায় অনেক উপকার পাবেন। সমস্যা যদি গুরুত্বর না হয় তাহলে এ সমস্যা দূর হয়ে যাবে বলে আসা করা যায়।

ঘন ঘন প্রস্রাব বন্ধ করার ঔষধ

ঘন ঘন প্রস্রাবের সমস্যা নিয়ে আমাদের মধ্যে অনেককেই অস্বস্তিতে ভুগতে হয়। এ সমস্যা সাধারনত জটিল কোনো কারনে হয় না। ঘরোয়া প্রতিকার যেমন-খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন, ব্যায়াম প্রভৃতি ঘরোয়া চিকিৎসার মাধ্যমে সেরে যায়। তবে অনেক সময় সমস্যা গুরুত্বর আকার নেয়। আর তখন এ সমস্যার জন্য আমরা ঔষধ খুঁজি। জেনে নিন ঘন ঘন প্রস্রাব বন্ধ করার ঔষধ সম্পর্কে।

অনেক সময় শরীরের অন্তর্নিহিত কোনো সমস্যার কারনে ঘন ঘন প্রস্রাবের সমস্যা হতে দেখা যায়। আর অন্তর্নিহিত সমস্যার কারনে ঘন ঘন প্রস্রাবের সাথে রক্ত, তলপেটে অতিরিক্ত ব্যাথা, জ¦র এ উপসর্গগুলো দেখা দিয়ে থাকে। আর এ উপসর্গের কারনে অবশ্যই আপনার ঘন ঘন প্রস্রাব দূর করতে ওষুধ সেবন করতে হবে। ঘন ঘন প্রস্রাব দূর করতে চিকিৎসকেরা সাধারনত যে ঔষধগুলো দিয়ে থাকেন সেগুলো হলো-

  • আয়োডিয়াম ২০০
  • লাইকোপোডিয়াম
  • হ্যালোনিসিয়াম ২০০
  • নাক্স ভোম
  • এসিড ফস ইত্যাদি।

তবে এ ঔষধ চিকৎসকের পরামর্শ ছাড়া গ্রহন করা যাবে না। ঘন ঘন প্রস্রাবের সমস্যা যেকোনো কারনে হতে পারে। চিকিৎসকেরা সে কারন বুঝে ঔষধ দিয়ে থাকেন। তাই চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া ঔষধ খাওয়া থেকে বিরত থাকবেন।

পরিশেষে বলতে চাই, ঘন ঘন প্রস্রাবের সমস্যার সাথে যদি অন্য কোনো জটিল উপসর্গ দেখা না যায় তাহলে ভয় পাওয়ার কারন নেয়। ঘরোয়া প্রতিকারের মাধ্যমে তা সেরে যাবে। তবে ঘরোয়া প্রতিকারে যদি সমস্যার সমাধান না হয় তাহলে দেরি না করে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিবেন।

Leave a Comment