সম্মানিত পাঠক, আপনি কি ২৬ মার্চ কি দিবস সেই সম্পর্কে বিস্তারিত যাবতীয় তথ্য জানতে চাচ্ছেন? তাহলে এই ২৬ মার্চ নিয়ে সঠিক সন্ধান পেতে আপনি সঠিক স্থানেই এসেছেন। আমরা আজকের এই ব্লগ পোষ্টে আপনাদের সুবিধার ক্ষেত্রে ২৬ মার্চ কি দিবস ও ২৬ শে মার্চ এর সংক্ষিপ্ত বক্তব্য সম্পর্কে আমরা বিস্তারিত আলোচনা সাজানোর চেষ্টা করবো।
আপনি যদি আমাদের আজকের সম্পন্ন ব্লগ পোষ্ট জুড়ে থাকেন, তাহলে ২৬ মার্চ কি দিবস ও ২৬ শে মার্চ এর সংক্ষিপ্ত বক্তব্য নিয়ে জেনে নেওয়ার পাশাপাশি ২৬ মার্চ স্বাধীনতার ভূমিকা জানতে পারবেন। তো চলুন আর বেশি কথা না বাড়িয়ে আমরা প্রথমে ২৬ মার্চ কি দিবস সেই বিষয়ে ধারণা নেওয়া যাক।
২৬ মার্চ কি দিবস
২৬শে মার্চ কি দিবস – এই দিবস সম্পর্কে বলতে গেলে বলে শেষ করা যাবেনা। এ সম্পর্কে লিখতে গেলে কখন যে চোখে অশ্রু আসবে কল্পনাই করতে পারবেন না। এই দিনটি সারাজীবন ইতিহাসের পাতায় ও আমাদের মনের মাঝে স্মরণীয় হয়ে থাকবে। কিন্তু এখনকার যুগে এসে আমরা অনেকেই মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস সম্পর্কে অবগত নই । যেটা আসলেই আমাদের প্রতিটা জাতির জন্যলজ্জিত।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ ভোরে হানাদার বাহিনীকে সর্বশক্তি দিয়ে প্রতিহত করার এবং চূড়ান্ত বিজয় না হওয়া পর্যন্ত লড়াই চালিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানান। এরপর ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধে অর্জিত হয় বাংলাদেশের স্বাধীনতা।
তো আশা করছি আপনারা এই অংশ থেকে ২৬ মার্চ কি দিবস তা জানতে পেরেছেন। এবার চলুন, ২৬ শে মার্চ কেন স্বাধীনতা দিবস সেই বিষয়ে নিচের অংশে জেনে নেওয়া যাক।
২৬ শে মার্চ কেন স্বাধীনতা দিবস
২৬শে মার্চ স্বাধীনতা দিবস তা আমরা সবাই জানি। কিন্তু আমরা অনেকেই জানি না কেন ২৬শে মার্চ স্বাধীনতা দিবস। তাই আজ আমরা আপনাদের জানাতে এসেছি কেন ২৬ মার্চকে স্বাধীনতা দিবস হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। তাছাড়া ২৬শে মার্চ সম্পর্কে আপনাদের কাছে কিছু অজানা তথ্য নিয়ে হাজির হয়েছি।এখন পর্যন্ত আমরা সবাই জানি যে, বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবস ২৬শে মার্চ পালিত হয়।
বাংলাদেশের সংগ্রাম শুরু হয় ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে যখন পাকিস্তানিরা বাঙালিদের উপর বে-সরকারী গণহত্যা চালায় এবং ২৬ মার্চ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রে স্বাক্ষর করেন। এরপর মেজর জিয়াউর রহমানের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঘোষণা সবার কাছে পৌঁছে যায়।১৯৪৭ সালে ভারত ও পাকিস্তান পৃথক হওয়ার পর পাকিস্তান দুটি রাষ্ট্রে পরিণত হয়।
একটি পূর্ব পাকিস্তান এবং অন্যটি পশ্চিম পাকিস্তান। পূর্ব পাকিস্তান বর্তমান বাংলাদেশ। তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান ও পশ্চিম পাকিস্তানের মধ্যে জাতিগত, রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও অধিকারগত পার্থক্য ছিল। তাদের মধ্যে এই মতানৈক্য ছিল মূলত ১৯৪৭ থেকে ১৯৭১ সাল পর্যন্ত এবং নানান পর্যায়ে সংঘর্ষ ও গণহত্যার ঘটনা ঘটেছিল।
এই নির্যাতন ও গণহত্যা থেকে বাংলাদেশ তথা পূর্ব পাকিস্তানকে মুক্ত করার দাবি আদায়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ শীর্ষস্থানীয় নেতা-কর্মী ও শীর্ষ পেশাজীবীরা বিভিন্নভাবে প্রতিবাদ করেন। আর এই প্রতিবাদ অনেক কঠিন পর্যায়ে যাওয়ার ফলে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যথাযম্ভব যত দ্রুত সম্ভব এই দেশে স্বাধীনতা ঘোষণা করেছিলেন।
এবং নয় মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মাধ্যমে ৩০ লাখ শহীদের প্রাণের বিনিময়ে বাংলাদেশ স্বাধীনতা লাভ করে। তাই ২৬শে মার্চ স্বাধীনতা দিবসের মূল কারণ হলো পশ্চিম পাকিস্তানি হানাদারদের হাত থেকে বাংলাদেশকে রক্ষা করা এবং স্বাধীনতা লাভ করা।
২৬ শে মার্চ এর সংক্ষিপ্ত বক্তব্য
আমার বক্তব্যর শুরুতে আমি মঞ্চের সামনে বসা মাননীয় প্রধান অতিথি, বিশেষ অতিথি, সম্মানিত সুধীজনদের প্রতি আমার আন্তরিক শুভেচ্ছা জানাতে চাই। বাংলাদেশের স্বাধীনতা লাখো প্রাণের দান, আমি প্রাণ দিয়ে দেশের স্বাধীনতার মান রক্ষা করব। আজ সেই মহান মানুষটিকে খুব মনে পড়ছে। যিনি পাকিস্তানি শাসনামলে ১২ বছরেরও বেশি সময় জেলে থাকা, একাধিকবার ফাঁসির মঞ্চের মুখোমুখি, অসংখ্য মিথ্যা মামলায় অসংখ্যবার কারা বরণ করেও এদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছেন।
তিনি হাজার বছরের বাঙালি জাতির শ্রেষ্ঠ জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। যার অসীম সাহসিকতা, দৃঢ় মনোভাব ও আপসহীন নেতৃত্ব বাঙালি জাতিকে সংগ্রামে সাহস যুগিয়েছিলেন। সেই সাথে স্মরণ করছি, সেইসব শহীদদের প্রতি যাদের আত্মত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত আমাদের আজকের এই স্বাধীনতা। প্রিয় উপস্থিতি আমরা সকলেই জানি যে, “স্বাধীনতা অর্জনের চেয়ে রক্ষা করা আরও কঠিন”।
তাই যদি আমরা আমাদের স্বাধীনতার আশা এবং আত্মত্যাগকে রক্ষা করতে চাই, তাহলে এই দেশকে অবশ্যই ভালবাসতে হবে। আমরা যদি সকলে মিলে একটি সংগথন গড়ে তুলতে পারি এবং আমরা যদি আমাদের নিজ নিজ দায়িত্ব নিয়ে কঠোর হতে পারি তাহলে ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত সোনার বাংলাদেশ গড়ে তুলতে পারবো ইনশাল্লাহ।
এই শুভদিন উপলক্ষ্যে, আমি আমাদের সমস্ত সশস্ত্র বাহিনী, আইন প্রয়োগকারী সংস্থা এবং প্রত্যেক ব্যক্তিকে আমার আন্তরিক কৃতজ্ঞতা জানাই যারা আমাদের সার্বভৌমত্ব রক্ষা এবং আমাদের স্বাধীনতা রক্ষায় অক্লান্ত অবদান রেখেছেন। আমাদেরকে ঐক্যের নীতি, ন্যায়বিচার এবং স্বাধীনতা আরও উজ্জ্বল বাংলাদেশের দিকে অগ্রসর করুক। আমাদের এই বাংলাদেশ দীর্ঘজীবী হোক! ধন্যবাদ সবাইকে।
২৬ মার্চ স্বাধীনতার ভূমিকা
বাংলাদেশকে স্বাধীন দেশ হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছিল মূলত কমান্ডো বাহিনী বঙ্গবন্ধুকে বন্দী করার আগেই। ইপিআরের ট্রান্সমিটারের মাধ্যমে তার ঘোষণা তৎকালীন ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম পর্যন্ত সারাদেশে ছড়িয়ে পড়ে। জন্ম নেয় স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ এবং পূর্ব পাকিস্তান নামক রাষ্ট্র চিরতরে মুছে যায়। কিন্তু সেই প্রাণপ্রিয় বাংলাদেশ এখন অবদি বেদনাদায়ক।
স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় যে ব্যক্তি এই সংগ্রামের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন তিনি ছিলেন তাজউদ্দীন আহমদ। তিনি ৩০ মার্চ পরিবারকে রেখে সীমান্ত অতিক্রম করেছিলেন। জুলাই মাসে নতুন যুদ্ধ শুরু করার পর অক্টোবরে বাংলাদেশ লিবারেশন আর্মি আরও শক্তিশালী ও আত্মবিশ্বাসী হয়ে ওঠে। তারা নিয়মিত পাকিস্তান সেনাবাহিনীর সীমান্ত ঘাঁটি আক্রমণ ও দখল করতে থাকে। গেরিলা আক্রমণও আরও সাহসী হয়ে ওঠে।
পাকিস্তান সেনাবাহিনী এই আক্রমণের জবাবে রাজাকারদের সাথে স্থানীয় লোকজনকে হত্যা করে এবং এর পাশাপাশি গ্রামবাসীদের বাড়িঘর পুড়িয়ে দেয়। ততক্ষণে সেনাবাহিনীর মনোবল ধীরে ধীরে ভাঙতে শুরু করেছে, এবং তারা সহজে সরে যেতে রাজি ছিল না।
এই সেনাদের মাধ্যমেই বাংলাদেশ নৈতিক ও আইনগতভাবে স্বাধীন বাংলাদেশ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। এই নতুন রাষ্ট্রে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান রাষ্ট্রপতি, সৈয়দ নজরুল ইসলাম বঙ্গবন্ধুর অনুপস্থিতিতে উপরাষ্ট্রপতি ও অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি এবং তাজউদ্দীন আহমদ প্রধানমন্ত্রী ছিলেন।
১৭ এপ্রিল মুজিবনগরে (মেহেরপুরের বৈদ্যনাথতলা) বাংলাদেশের প্রথম সরকার দেশি-বিদেশি সাংবাদিকদের সামনে শপথ গ্রহণ করে আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু করে। তাদের প্রথম দায়িত্ব ছিল বাংলাদেশের মাটিতে থাকা পাকিস্তান সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে সশস্ত্র সংগ্রাম করা।
২৬ মার্চ কি দিবস সম্পর্কে লেখকের মতামত
বন্ধুরা আশা করছি আমার ২৬ মার্চ কি দিবস এই আর্টিকেলটি আপনাদের কাছে ভালো লেগেছে। এই আর্টিকেলটিতে ২৬ মার্চ কি দিবস উল্লেখ করার পাশাপাশি, ২৬ শে মার্চ এর সংক্ষিপ্ত বক্তব্য এবং ২৬ মার্চ স্বাধীনতার ভূমিকা তুলে ধরেছি আশা করি আপনারা এগুলি বিষয়ে অবগত হয়েছেন।
আপনাদের যদি এই ব্লগ পোষ্টটি ভালো লেগে থাকে কিংবা আপনাদের মাঝে কোন মতামত থাকে, তাহলে অবশ্যই কমেন্ট করে জানাবেন এবং চাইলে শেয়ার করে অন্যদের জানানোর সুযোগ করে দিতে পারেন। আজকে আমরা আপনাদের মাঝে ২৬ মার্চ কি দিবস ও ২৬ শে মার্চ এর সংক্ষিপ্ত বক্তব্য নিয়ে বিশেষ কিছু বিস্তারিত অনেক তথ্য আলোচনা করলাম। আশা করি আজকের এই আর্টিকেলটি পড়ে আপনাদের অনেক উপকারে আসবে। ধন্যবাদ।