প্রিয় পাঠক আপনি কি ১৬ ডিসেম্বর ১৯৭১ এর বিশেষ ইতিহাস সম্পর্কে জানতে চাচ্ছেন? তাহলে এই পোস্টটি আপনার জন্য খুবই উপকার হতে চলেছে। কারন আমরা আজকের এই আর্টিকেলে ১৬ ডিসেম্বর ১৯৭১ এর ইতিহাস এবং ১৬ ডিসেম্বর স্মরণীয় কেন নিয়ে আমরা বিস্তারিত ভাবে আলোচনা করতে যাচ্ছি। আশা করছি আমরা এই ১৬ ডিসেম্বর ১৯৭১ এর ইতিহাস নিয়ে আপনাদের এমন কিছু তথ্য প্রদান করব যেগুলো জেনে আপনারা অবশ্যই উপকৃত হতে পয়ারবেন।
১৬ ডিসেম্বর ১৯৭১ এর বিশেষ ইতিহাস এবং ১৬ ডিসেম্বর স্মরণীয় কেন নিয়ে এখন আপনাদের মাঝে যে সকল আলোচনা তুলে ধরবো এগুলো আপনার নিত্যদিনের জীবনে বিভিন্নভাবে কাজে আসতে পারে। তাই অবহেলা না করে আজকের এই আর্টিকেলটি শেষ পর্যন্ত পড়ে বিস্তারিত জেনে নেওয়া।
উপস্থাপনা
আমাদের এই ছোট্ট দেশে প্রতিবছরের মত ২০২৪ সালেও ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবস উদযাপন হবে। মূলত দুনিয়া যতদিন টিকে থাকবে ১৬ই ডিসেম্বর বিজয় দিবস হিসেবেই পালিত হবে। এই দিনকে ঘিরে প্রতি বছরের মত এবারও সমস্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সহ বিভিন্ন পাড়া মহল্লাতেও বিভিন্ন ধরনের প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়ে থাকে।
বেশিরভাগ প্রতিযোগিতায় বিভিন্ন ধরনের ১৬ ডিসেম্বর কে ঘিরে স্মৃতিময় ছবিসহ বিভিন্ন রচনা প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়। বাংলাদেশের একজন সফল নাগরিক হিসেবে আমাদের সকলের উচিত গভীর শ্রদ্ধার সাথে উক্ত এই দিন বিজয় দিবস পালন করা।
১৬ ডিসেম্বর স্মরণীয় কেন
১৯৭১ সালের ১৬ই ডিসেম্বর স্মরণীয় কারণ দীর্ঘ ৯ মাস ধরে মুক্তিযুদ্ধের পর ১৯৭১ সালের ১৬ই ডিসেম্বর ঢাকা-এর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে পাকিস্তানি হানাদাররা প্রায় ৯১ হাজার ৬৩৪ সদস্য আনুষ্ঠানিকভাবে আত্মসমর্পণ করেছিল। তার ফলে আমাদের বাংলাদেশের অভ্যুদয় ঘটে স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে।
বাংলাদেশে প্রতি বছর ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবস পালিত হয়। এটি সেই দিনটিকে চিহ্নিত করে যখন ১৯৭১ সালে পাকিস্তানি সামরিক বাহিনী যৌথ বাংলাদেশি ও ভারতীয় বাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করে, বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের অবসান ঘটায়। এই দিনটি পাকিস্তানি সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে বাঙালির বিজয় এবং একটি স্বাধীন জাতি হিসেবে বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার প্রতীক।
১৬ ডিসেম্বর ১৯৭১ এর ইতিহাস
নিয়াজী আত্মসমর্পণ দলিলে স্বাক্ষর করতে রাজি হন। সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল যে আত্মসমর্পণ নথিতে বিজয়ী যৌথ বাহিনীর প্রধান জগজিৎ সিং অরোরা এবং পরাজিত বাহিনীর পক্ষে লেফটেন্যান্ট জেনারেল এ কে নিয়াজি স্বাক্ষর করবেন।
৯ মাস রক্তক্ষয়ী সশস্ত্র যুদ্ধের পর ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বাঙালি জাতি মুক্তিযুদ্ধে বহুল প্রতীক্ষিত বিজয় অর্জন করে। এই বিজয়ের মধ্য দিয়ে পূর্ব বাংলার বিশাল জনগণ পৃথিবীর মানচিত্রে বাংলাদেশ নামে একটি নতুন দেশের জন্ম দেয়।
হাজার হাজার মানুষের ‘জয় বাংলা’ স্লোগানে ঢাকায় আবেগঘন পরিবেশ সৃষ্টি হয়। ভারতীয় বাহিনীর যৌথ বাহিনীর প্রধান লেফটেন্যান্ট জেনারেল জগজিৎ সিং এবং পরাজিত পাকিস্তান সেনাবাহিনীর পূর্বাঞ্চলীয় প্রধান লেফটেন্যান্ট জেনারেল আমির আবদুল্লাহ খান নিয়াজী মুক্তিবাহিনী অরোরার কাছে সৈন্য ও তার অস্ত্র সহ সমর্পণ করেন।
এবং আত্মসমর্পণে স্বাক্ষর করেন। নথি মুক্তিবাহিনীর প্রতিনিধিত্ব করেন বাংলাদেশ বাহিনীর ডেপুটি গ্রুপ ক্যাপ্টেন এ কে খন্দকার। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ও মুক্তিবাহিনীর পক্ষ থেকে এস ফোর্স কমান্ডার লেফটেন্যান্ট কর্নেল কে এম সফিউল্লাহ যুদ্ধবিরতি শুরু করে।
সকাল সাড়ে ৮টার দিকে ভারতীয় সেনাবাহিনীর বিভাগীয় কমান্ডার মেজর জেনারেল গন্ধর্ব সিং নাগরাকে বহনকারী একটি সামরিক জিপ ঢাকার মিরপুর ব্রিজের কাছে থামে। ভারতীয় ও বাংলাদেশ বাহিনীর দুই সেনা কর্মকর্তা নিয়াজির জন্য নাগরার বার্তা পাঠায়। সেই বার্তাটি ছিল হচ্ছে ‘প্রিয় আবদুল্লাহ, আমি এখন ঢাকার মিরপুর এক ব্রিজে অবস্থান করছি। আপনার প্রতিনিধি পাঠান।
ঢাকায় মার্কিন কনস্যুলার অফিসে এর আগে নিয়াজি নিযুক্ত মিলিটারি অ্যাটাশেকে ভারতকে নিরস্ত্রীকরণ ও যুদ্ধবিরতি সম্পর্কে আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা অবহিত করার জন্য এক সময় অনুরোধ করেছিলেন। তখন ভারতের রাজধানীতে ভারত সরকারকে জানানো হয়েছিল মার্কিন দূতাবাসের মাধ্যমে।
বেলা ১১টার দিকে যৌথ বাহিনীর দুজন প্রতিনিধি নিয়াজির সদর দফতর থেকে ফিরে আসেন। মেজর জেনারেল জামশেদ নিয়াজির প্রতিনিধি হিসেবে আত্মসমর্পণের আনুষ্ঠানিক প্রস্তাব নিয়ে আসেন। দুপুর ১২টার দিকে নাগরা তাকে নিয়ে নিয়াজির অফিসে পৌঁছান।
এরপর শুরু হয় আত্মসমর্পণের শর্ত নিয়ে আলোচনা। ভারতীয় সেনাবাহিনীর ইস্টার্ন কমান্ডের চিফ অব স্টাফ মেজর জেনারেল জেএফআর জ্যাকব রাত একটার দিকে কলকাতা থেকে ঢাকায় আসেন। ততক্ষণ যৌথবাহিনী মিরপুর ব্রিজ পার হয়ে ঢাকায় প্রবেশ করতে শুরু করেছে। পাকিস্তান হানাদার বাহিনীর আত্মসমর্পণের খবর বিদেশী রেডিওতে প্রচারিত হওয়ার সাথে সাথে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর সান্ধ্য আইন উপেক্ষা করে।
নিয়াজী আত্মসমর্পণ দলিলে স্বাক্ষর করতে রাজি হন। সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল যে আত্মসমর্পণ নথিতে বিজয়ী যৌথ বাহিনীর প্রধান জগজিৎ সিং অরোরা এবং পরাজিত বাহিনীর পক্ষে লেফটেন্যান্ট জেনারেল এ কে নিয়াজি স্বাক্ষর করবেন।
বাংলাদেশের বিজয় দিবস ও স্বাধীনতা দিবসের মধ্যে কি পার্থক্য
বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবস এবং বিজয় দিবস বাংলাদেশের দুটি গুরুত্বপূর্ণ স্মরণীয় একটি দিন। তবে বর্তমানে জেনারেশন বাংলাদেশ স্বাধীনতা দিবস বিজয় দিবসের মধ্যে পার্থক্য কি তা সম্পর্কে দ্বিধাদ্বন্দে পড়ে যায়। বাংলাদেশের ইতিহাস সম্পর্কে সবাই জানা উচিত।
বিজয় দিবস
বাংলাদেশে প্রতি বছর ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবস পালিত হয়। এটি সেই দিনটিকে চিহ্নিত করে যখন ১৯৭১ সালে পাকিস্তানি সামরিক বাহিনী যৌথ বাংলাদেশি ও ভারতীয় বাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করে, বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের অবসান ঘটায়। এই দিনটি পাকিস্তানি সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে বাঙালির বিজয় এবং একটি স্বাধীন জাতি হিসেবে বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার প্রতীক।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবস
বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবস প্রতি বছর ২৬ মার্চ পালিত হয়। এটি ১৯৭১ সালে সেই দিনটিকে স্মরণ করে যখন বাংলাদেশ পাকিস্তান থেকে তার স্বাধীনতা লাভ করে। ঘোষণাটি স্বায়ত্তশাসন এবং স্বাধীনতার জন্য ৯ মাস দীর্ঘ সংগ্রামের অনুসরণ করে, যা বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ নামে পরিচিত, যা ২৬ মার্চ, ১৯৭১ সালে শুরু হয়েছিল এবং ১৬ ডিসেম্বর, ১৯৭১ সালে শেষ হয়েছিল।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবস ২৬ মার্চ, ১৯৭১ তারিখে পাকিস্তান থেকে স্বাধীনতার ঘোষণাকে স্মরণ করে। যখন বিজয় দিবস ১৬ ডিসেম্বর, ১৯৭১-এ অর্জিত বিজয় উদযাপন করে, যা বাংলাদেশের স্বাধীনতার দিকে পরিচালিত করে। মূলত বাংলাদেশের ইতিহাসে এই ২টি দিনই জাতীয় পরিচয়ে তাৎপর্য বহন করে।
২০২৪ সালে ১৬ ডিসেম্বর কততম বিজয় দিবস পালিত হবে
১৯৭১ সালে ১৬ ডিসেম্বর দীর্ঘ ৯ মাস ধরে যুদ্ধ করে আমাদের মুক্তি যোদ্ধারা বাংলাদেশের বিজয় দিবস অর্জন করে। তার পরপরই ১৯৭২ সালের ২২ জানুয়ারি একটি ঘোষণা দিয়ে এই মহান বিজয় দিবস ১৬ই ডিসেম্বর কে রাষ্ট্রীয়ভাবে বিজয় দিবস হিসেবে পালন করা হয়। সেই অনুসারে ১৬ ডিসেম্বর ২০২৪ সালে আমরা ৫২ তম বিজয় দিবস হিসেবে পালন করতে চলেছি। অর্থাৎ ১৬ ডিসেম্বর ২০২৪ কততম বিজয় দিবস পালিত হবে এ প্রশ্নের উত্তর আপনারা এতক্ষণে পেয়ে গেছেন।
১৬ ডিসেম্বর ১৯৭১ এর ইতিহাস নিয়ে লেখকের মতামত
আজকে আমরা ইতিমধ্যে আপনাদের মাঝে ১৬ ডিসেম্বর ১৯৭১ এর বিশেষ ইতিহাস এবং ১৬ ডিসেম্বর স্মরণীয় কেন সহ আরো বিভিন্ন তথ্য বিস্তারিতভাবে আলোচনা করেছি। আশা করা যায় এ সকল তথ্য আপনাদের মহামূল্যবান এই জীবনে বিশেষভাবে প্রয়োজনে আসবে।
এরপরও আপনাদের এ নিয়ে যদি আরো বিস্তারিত কিছু জানার থাকে তাহলে অবশ্যই আপনারা আমাদের কমেন্ট বক্সে কমেন্ট করে জানিয়ে দিতে পারেন। আমরা চেষ্টা করব অতি শীঘ্রই আমাদের মূল্যবান মতামত দিয়ে আপনার সাথে থাকার। সবাই ভাল থাকবেন সুস্থ থাকবেন এই বলে আজকে এখানেই শেষ করছি। আল্লাহ হাফেজ।