তাহাজ্জুদ নামাজের সময় কখন জানুন

সম্মানিত দ্বীনি ভাই ও বোনেরা আপনারা কি তাহাজ্জুদ নামাজের সময় বা তাহাজ্জুদ নামাজ কোন সময়ে পড়তে হয় সেই সম্পর্কে বিস্তারিত যাবতীয় তথ্য জানতে চাচ্ছেন? তাহলে আপনি তাহাজ্জুদ নামাজের সঠিক সময় জেনে নিতে একেবারে সঠিক জায়গাতেই প্রস্থান করেছেন। কেননা আমরা আপনাদের সুবিধার কথা ভেবেই  আজকের এই সম্পন্ন ব্লগ পোষ্টে কখন তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় করতে হয় সেই সম্পর্কে আলোচনা করার চেষ্টা করেছি। 

তাহাজ্জুদ নামাজের সময়

তো আপনি যদি আজকের সম্পন্ন ব্লগ পোষ্ট জুড়ে থাকেন, তাহলে তাহাজ্জুদ নামাজের সময় জেনে নেওয়ার পাশাপাশি তাহাজ্জুদ নামাজ কত রাকাত, তাহাজ্জুদ নামাজ কি দোয়া পড়তে হয় এবং জমির তাহাজ্জুদ নামাজ কি অন্ধকারে পড়তে হয় কিনা তা জানতে পারবেন। তাহলে চলুন আর বেশি কথা না বাড়িয়ে প্রথমে তাহাজ্জুদ নামাজের সময় সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক।

তাহাজ্জুদ নামাজের সময়

তাহাজ্জুদ নামাজের সময় মূলত রাতের মধ্যভাগে পড়া হয়ে থাকে। তাহাজ্জুদ নামাজ রাতের শেষ তৃতীয়াংশে পড়া সবচাইতে বেশি উত্তম। আমরা অনেকেই জানি যে তাহাজ্জুদের নামাজের মূল সময় শুরু হয় রাত ৩টা থেকে এবং ফজর আজানের পূর্ব মুহূর্ত পর্যন্ত। 

কেউ যদি ঘুম থেকে জাগার সম্ভাবনা না থাকে তাহলে এশার সালাতের পর দুই রাকাত সুন্নত এবং বেতেরের নামাজ হাতে রেখে তাহাজ্জুদ নামাজ পড়ে বেতের নামাজ পড়া জায়েজ রয়েছে। কিন্তু আপনি যদি পরিপূর্ণ তাহাজ্জুদের মর্যাদা পেতেহলে অবশ্যই আপনাকে রাত 3 টার পর থেকে তাহাজ্জুদের নামাজ পড়া আরম্ভ করতে হবে তাহলে পরিপূর্ণ মর্যাদা পাওয়া এবং আল্লাহকে কাছে পাওয়া সম্ভব।

আরো পড়ুনঃ-  ইসলামে ঘুমানোর সঠিক নিয়ম - ঘুমানোর আগে সুন্নাত সমূহ

তাহাজ্জুদ নামাজ কত রাকাত

মহিলাদের তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম এর দ্বিতীয় ধাপটি হলো তাহাজ্জুদ নামাজ কত রাকাত। উপরে আপনাদের তাহাজ্জুদ নামাজের সময় সম্পর্কে অবগত করা হয়েছে। আপনাদের তাহাজ্জুদ নামাজ কত রাকাত সে সম্পর্কে জানাবেন।

তাহাজ্জুদের নামাজ সুন্নতে মুয়াক্কাদা ৪ রাকাত হইতে ১২ রাকাত পর্যন্ত পড়া যায়। অর্থাৎ হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু কখনো ৪ রাকাত, কখনো ৮ রাকাত আবার কখনো ১২ রাকাত নামাজ আদায় করতেন। তাহাজ্জুদের সালাত ২ রাকআত করে আদায় করাটা সবচেয়ে বেশি উত্তম।

তাছাড়া হযরত আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ “রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লা” ১১ রাকাত পড়তেন এবং এটাই ছিল তাঁর নামায। তিনি সিজদাকে এমনভাবে দীর্ঘ করতেন যে, মাথা তোলার আগে পঞ্চাশটি আয়াত (কুরআনের) তিলাওয়াত করতে পারতেন।

তিনি ফজরের নামাযের পূর্বে ২ রাকাত (সুন্নাত) সালাত আদায় করতেন, অতঃপর তার ডান পাশে শুয়ে থাকতেন যতক্ষণ না আযানকারী এসে তাকে নামায সম্পর্কে অবহিত করেন। (বুখারী) তো আশা করছি আপনারা এই অংশ থেকে তাহাজ্জুদ নামাজ কত রাকাত তা জানতে পেরেছেন। এবার চলুন, তাহাজ্জুদ নামাজ কি দোয়া পড়তে হয় তা জেনে নেওয়া যাক।

তাহাজ্জুদ নামাজ কি দোয়া পড়তে হয়

আরবি উচ্চরনঃ “-আল্লাহুম্মা ইন্নি আস-আলুকাল হুদা, ওয়াত তুক্বা; ওয়াল আফাফা; ওয়াল গেনা “

বাংলা আনুবাদঃ “হে মহান রাব্বুল আলামিন আমি শুধমাত্র তোমারই হেদায়েত কামনা করি, সর্বদা তোমার তাকওয়া কামনা করি এবং তোমার কাছে আপনার কাছে পবিত্রতা কামনা করছি এবং সম্পদ সামর্থ্য ও সচ্ছলতা কামনা করি”। (মুসলিমঃ 2721; তিরমিজিঃ 3489; ইবনে মাজাহঃ3832;)

আরবি উচ্চরনঃ “- আল্লাহুম্মা লাকাল হামদু আংতা কায়্যিমুস সামাওয়াতি ওয়াল আরদ্বি ওয়া মান ফিহিন্না ওয়া লাকাল-হামদু। লাকা মুলকুস সামাওয়াতি ওয়াল আরদ্বি ফিহিন্না। ওয়া লাকাল হামদু আংতা নুরুস সামাওয়াতি ওয়াল আরদ। ওয়া লাকাল হামদু আংতাল হাক্কু। ওয়া ওয়াদুকাল হাক্কু। ওয়া লিক্বাউকা হাক্কু। ওয়াল জান্নাতু হাক্কু। ওয়ান নুরু হাক্কু। ওয়ান নাবিয়্যুনা হাক্কু, ওয়া মুহাম্মাদুন সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া-সাল্লাম হাক্কু। ওয়াস সাআতু হাক্কু। আল্লাহুম্মা লাকা আসলামতু, ওয়াবিকা আমাংতু, ওয়া আলাইকা তাওয়াক্কালতু। ওয়া ইলাইকা আনাবতু, ওয়া বিকা খাসামতু, ওয়া ইলাইকা হাকামতু। ফাগফিরিলি মা কাদ্দামতু ওয়া মা আখ্খারতু। ওয়া মা আসরারতু, ওয়া মা আলাংতু। আংতাল মুকাূ্দ্দিমু ওয়া আংতাল মুআখ্খিরু। লা ইলাহা ইল্লা আংতা লা ইলাহা গাইরুকা”।

আরো পড়ুনঃ-  কত টাকা থাকলে কুরবানি ওয়াজিব - কুরবানির সুন্নত সমূহ

তাহাজ্জুদ নামাজ পড়ে কিছু চাইলে কি কবুল হয়

আমাদের সকলের প্রাণ প্রিয় হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ) ইরশাদ করেছেন, “যে মহান আল্লাহ তা’আলা প্রতি রাতের শেষ তৃতীয়াংশে দুনিয়ার আকাশে আসেন এবং এ সময়ে যে মহান আল্লাহকে মন থেকে প্রাণ খুলে ডাকবে তিনি তার ডাকে সাড়া দেবেন। এবং আল্লাহর দরবারে হাত তুলে দুই চোখের পানি ফেলে চাই চাইবে তিনি তার সকল চাওয়া-পাওয়া দান করব। 

তাহাজ্জুদ নামাজ পড়ে সে সেময় যেই ব্যক্তি মহান আল্লাহর দরবারে নিজের সকল পাপ মুক্ত হওয়ার জন্য আল্লাহর নিকট মন থেকে ক্ষমা চাইবে তিনি তাকে অবশ্যই ক্ষমা করে দেবেন। এজন্য আমাদের প্রতিটা মুসলমান জাতির উচিত তাহাজ্জত নামাজের প্রতি গুরুত্ব দেওয়া। 

তাহলে আমরা এই হাদিস থেকে বুঝতে পারলাম যে তাহাজ্জতের আল্লাহ্‌র কাছে কিছু চাইলে কবুল হওয়ার সম্ভবনা কতটা। তাহাজ্জতের সময়ে মানে রাতের শেষ তৃতীয়াংশে আল্লাহ তায়ালা প্রথম আসমানে নেমে আসে এবং বান্দাকে বলতে থাকে তার কাছে চাওয়ার জন্য। তাই আমরা সকলেই বেশি বেশি সময় মতো তাহাজ্জতের নামাজ আদায় করার চেস্টা করবো ইনশাআল্লাহ।

তাহাজ্জুদ নামাজ কি প্রতিদিন পড়তে হয়

পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ ফরজ হওয়ার আগে রাসুলুল্লাহ (সা;) এর ওপর তাহাজ্জুদ নামাজ বাধ্যতামূলক ছিল। তাই রাসূলুল্লাহ (সা;) তাহাজ্জুদ নামাজ পড়া থেকে কখনো পিছপা হয়নি। আল্লাহর প্রিয় হতে হলে প্রতিদিন তাহাজ্জুদ নামাজ পড়া অতি উত্তম। তবে মাঝেমধ্যে বাদ পড়ে যায়, অথবা কোন কারনে নামাজ পড়তে পারে না এজন্য কোন গুনাহ হবে না। তবে নেক কাজ নিয়মিত করাই ভালো।

তাহাজ্জুদ নামাজ কি অন্ধকারে পড়তে হয়

অনেক মানুষ মনে করেন তাহাজ্জুদ নামাজ হালকা আলোতে বা অন্ধকারে পড়তে হয়। কিন্তু এটা ভুল ধারণা। কিন্তু এই ধারণার কোনো ভিত্তি নেই। পরিপূর্ণ অন্ধকারে সালত আদায়ের ব্যাপারে শরীয়তে এই বিষয়ে কোন বিধি-বিধান নেই। সুতরাং আপনি চাইলে তাহাজ্জুদ নামাজ আলোতে আদায় করতে পারেন আবার চাইলে অন্ধকারেও আদায় করতে পারেন সেটা একান্তই আপনার ব্যক্তিগত বিষয়। 

আরো পড়ুনঃ-  তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম ও নিয়ত বিস্তারিত জানুন

তাহাজ্জুদ নামাজের পর আমল

তাহাজ্জুদ নামাজের পর আসলে আমাদের কি কি আমল করা উচিত সেই বিষয়ে হয়তো আমরা অনেকেই জানি না। তো আপনি কি তাহাজ্জুদ নামাজের পর কি কি আমল করতে হয় তা জানতে চাচ্ছেন? তাহলে পোষ্টের এই অংশ টুকু থেকে জেনে নিন। তাহাজ্জুদ নামাজের পর আল্লাহর ৯৯ টি নাম পড়তে হবে। এছাড়াও যে আমলগুলো করতে হবে তা নিচে উল্লেখ করে দেয়া হল। সূরা পড়তে হবে যেমনঃ 

  • সূরা মূলক, 
  • সূরা দুখান, 
  • সূরা আর রহমান, 
  • সূরা মুয্যামিল, 
  • সূরা হাশর, 
  • সূরা মুদ্দাচ্ছির, 
  • সুরা ইয়াসিন,
  • সূরা কাহাফ ও অন্যান্য সূরা পড়া বরকতময়। 
  • এটি দোয়া কবুলের সর্বশ্রেষ্ঠ সময়। তাহাজ্জুদের আগে পরে কোরআন তিলাওয়াত করা উপকারী আমল।

তাহাজ্জুদ নামাজের সময় সম্পর্কে লেখকের মতামত

আমরা ইতিমধ্যে তাহাজ্জুদ নামাজের সময় বা তাহাজ্জুদ নামাজ কোন সময়ে পড়তে হয় সেই সম্পর্কে এই পোষ্টের মাধ্যমে আপনাদের জানানোর চেষ্টা করেছি। আশা করছি তাহাজ্জুদ নামাজের সময় নিয়ে লেখা এই পোষ্টটি আপনাদের কাছে ভালো লেগেছে। এই তাহাজ্জুদ নামাজে নিয়ে আপনার মনে কোন মতামত কিংবা মনে কোন প্রশ্ন থেকে থাকলে যেকোন সময় কমেন্ট করে জানাবেন।

আর আপনি যদি মনে করেন যে তাহাজ্জুদ নামাজের সময় আমার যেই বন্ধু এই বিষয়ে জানেন না তাকে শেয়ার করে জানার সুযোগ করে দিবেন। এজন্য আমাদের পোষ্টের শেষে শেয়ার অপশনে গিয়ে এই পোষ্টটি শেয়ার করতে পারেন। আজকে আমরা আপনাদের মাঝে তাহাজ্জুদ নামাজের সময় নিয়ে বিস্তারিত অনেক তথ্য আলোচনা করলাম। আশা করি আজকের এই আর্টিকেলটি পড়ে আপনাদের অনেক উপকারে আসবে।

Leave a Comment