গরমকালের তাপমাত্রা বাড়ার সাথে সাথে ত্বক থেকে অধিক পরিমাণে ঘাম নিঃসরণ হয়। এতে করে ত্বকের কোষগুলো মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে থাকে। গরমে ত্বক সতেজ রাখার জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করতে হবে এবং তরল জাতীয় খাবার বেশি খেতে হবে। অতিরিক্ত ঘামের কারণে তেল চিটচিটে ত্বক বারবার পানির সাহায্যে পরিষ্কার করলে ত্বক থাকে সুস্থ এবং উজ্জ্বল।
গ্রীষ্মকালে ত্বক সুস্থ রাখার জন্য প্রতিদিনের ত্বকের যত্ন নেওয়ার জন্য একটি রুটিন করে রাখতে পারেন। গরমকালে ব্যবহার করা যায় এমন ঘরে থাকা প্রাকৃতিক উপাদান দিয়েই সপ্তাহে অন্তত দুই দিন একটি ফেসপ্যাক তৈরি করে ত্বকে এপ্লাই করতে পারেন। গরমে ত্বক সুস্থ রাখার জন্য জেনে নিন গরমে ত্বকের যত্নে কিছু কার্যকরী টিপস।
গরমে কেন ত্বকের বিশেষ যত্ন প্রয়োজন
শিশু থেকে বয়স্ক পর্যন্ত সবাই গরমকালে ত্বকের বিভিন্ন সমস্যায় আক্রান্ত হয়ে থাকেন। এর প্রধান কারণ হলো: গরমে শরীরে পানি শূন্যতা তৈরি হয়, ফলে ত্বক হয়ে পড়ে নিষ্প্রাণ এবং বিবর্ণ। তাছাড়া গরম কালে ত্বকে পর্যাপ্ত যত্ন না নিলে ফুসকুড়ি-ব়্যাশ, চুলকানি, প্রচন্ড পরিমাণে ঘাম, ত্বকের ছিদ্রগুলো বন্ধ হয়ে যাওয়া ইত্যাদি সমস্যা তৈরি হয়। গ্রীষ্মকালে শরীরে পানি শূন্যতার কারনে ত্বকে ফুসকুড়ি ওঠার পাশাপাশি চোখের চারপাশ কালো হতে থাকে। গরমকালে অত্যাধিক পরিমাণে ঠান্ডা জাতীয় খাবার খেলে ত্বকের প্রদাহ শুরু হয় যা পদ্ধতিগতভাবে ত্বককে ব্রেকডাউন করে দেয়।
ঘরোয়া উপায়ে ত্বকের যত্ন
গরমকালে হাতের কাছে থাকা বিভিন্ন প্রাকৃতিক উপাদান দিয়েই স্কিন কেয়ার করা সম্ভব। গরমকালে মুখের রূপচর্চায় নিচের ফেসপ্যাক গুলো ব্যবহার করতে পারেন:
শসা ও লেবুর রস
প্রয়োজন মত শসা থেকে রস বের করে নিয়ে এর সাথে এক চা চামচ লেবুর রস মিশিয়ে মুখে কিছুটা সময় ম্যাসাজ করে ধুয়ে ফেলুন। আপনি চাইলে শসার রস ডিপ ফ্রিজে কিউব করে সংরক্ষণ করতে পারেন যা পরবর্তীতে ফ্রিজ থেকে বের করেই মুখে হালকা ভাবে ঘষতে পারেন।
শসার রস, টক দই, বেসন ও মধু
২ চা চামচ শসার রসের সাথে ১ চা চামচ টক দই এবং ১ চা চামচ মধু ভালোভাবে মিশিয়ে প্রয়োজন মত পরবর্তীতে বেসন মিশিয়ে একটি ঘন ফেসপ্যাক তৈরি করুন। গরমকালের ত্বক প্রাণবন্ত করতে এবং ত্বকের কালো দাগ দূর করতেই ফেস প্যাকটি কার্যকরী।
চন্দনের গুড়া ও তরল দুধ
দুই চামচ চন্দনের গুড়ার সাথে প্রয়োজন মত কাঁচা তরল দুধ মিশিয়ে ফেসপ্যাক তৈরি করে সপ্তাহে অন্তত দুইদিন মুখে লাগালে গরমকালে ত্বক সতেজ থাকবে। এবং ত্বকের বলি রেখা ও ধীরে ধীরে কমতে থাকবে।
গুড়া দুধ, মসুর ডাল ও ডাবের পানি
১ টেবিল চামচ গুড়া দুধের সাথে ১ টেবিল চামচ মসুর ডাল ভালোভাবে মিশিয়ে নিন। মিশ্রণটি তরল করার জন্য প্রয়োজন মতো ডাবের পানি ব্যবহার করুন। মিশ্রণটি ২০ মিনিট মুখে লাগালে গরম কালের রোদে পোড়া দাগ দূর হবে।
হলুদ গুঁড়া ও অ্যালোভেরা জেলি
১ চা চামচ হলুদ গুড়ার সাথে সমপরিমাণ অ্যালোভেরা জেলি মিশিয়ে মুখ এবং হাতে-পায়ে লাগাতে পারেন। এতে করে গরমে ত্বক টানটান থাকবে এবং তেল চিটচিটে ভাব দূর হবে।
চিনি এবং অলিভ অয়েল
গরমকালে ত্বক মসৃণ রাখার জন্য চিনি এবং অলিভ অয়েলের মিশ্রণ মুখে ৩০ মিনিট লাগিয়ে রাখুন। সপ্তাহে অন্তত দুই দিন এই মিশ্রণটি লাগালে ত্বক থাকবে মসৃণ এবং উজ্জ্বল।
চালের গুড়া ও তরমুজের রস
গরমে ত্বকে কালচে দাগ পড়ে যাওয়া থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য ব্যবহার করুন তরমুজের রস। তরমুজের রসের সাথে স্ক্রাব হিসেবে ব্যবহার করতে পারেন চালের গুড়া। এই মিশ্রণটি মুখে ১৫ মিনিট লাগিয়ে রাখলেই গরমের তেল চিটচিটে ভাব দূর হবে।
হলুদ গুঁড়া ও লেবুর রস
২ চা চামচ হলুদ গুঁড়ার সাথে পরিমাণ মতো লেবুর রস মিশিয়ে মুখ এবং হাতে-পায়ের যেসব স্থানে কালো দাগ পড়েছে সেখানে ম্যাসাজ করুন। সপ্তাহে অন্তত দুই দিন এই প্যাকটি লাগাতে পারলে ত্বক হবে টানটান এবং মসৃণ।
ত্বকের যত্নে পর্যাপ্ত পানি পানের ভুমিকা
পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করার অভ্যাস থাকলে ত্বক প্রাকৃতিকভাবেই থাকে উজ্জ্বল এবং প্রাণবন্ত। আমরা প্রতিদিন যে পরিমাণ পানি পান করি তা আমাদের শরীর থেকে ঘাম, মূত্র এবং নিশ্বাসের সাথে বের হয়ে আসে। তাই পানি যদি কম পান করা হয় তাহলে শরীরে পানি শূন্যতা তৈরি হয় এবং ত্বক রুক্ষ এবং শুষ্ক হয়ে যায়।
শরীরের প্রতিটি কোষ রক্তের মাধ্যমে হাইড্রেট থাকে পানি পান করার মাধ্যমে। শরীরের বিষাক্ত পদার্থ ও শরীর থেকে নির্গত করার জন্য পর্যাপ্ত পানি পানির প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। এছাড়া ত্বকের পিএইচ ভারসাম্য বজায় রাখতে, ব্রণের সমস্যা দূর করতে, ফুসকুড়ি বা জ্বালাভাব থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য, রোদে পোড়া দাগ দূর করতে এবং অকাল বার্ধক্য রোধের জন্য পানি পান করার প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম।
সঠিক সানস্ক্রিন নির্বাচন ও প্রয়োগের পদ্ধতি
শুধুমাত্র গরমেই নয়, যেকোনো ঋতুতে ত্বককে সূর্যের ক্ষতিকর রশ্মি থেকে বাঁচানোর জন্য সানস্ক্রিন ব্যবহারের কোন বিকল্প নেই। ঘর থেকে বের হওয়ার কিছুক্ষণ আগে সানস্ক্রিন মেখে তারপর ঘর থেকে বের হতে হবে। দীর্ঘ সময় ঘর থেকে বাইরে অবস্থান করার জন্য ৫০+ এসপিএফ যুক্ত সানস্ক্রিন ব্যবহার করুন। তবে নিজে থেকেই সানস্ক্রিন নির্বাচন না করে একজন ডার্মাটোলজিস্ট এর পরামর্শ অনুযায়ী সানস্ক্রিন ব্যবহার করলে ভালো ফল পাবেন।
দৈনিক ত্বক পরিচর্যা রুটিন
প্রতিদিনের ত্বকের যত্ন নেওয়ার জন্য ঘরোয়া উপাদান ব্যবহার করার পাশাপাশি একটি ভালো মানের ক্রিম ব্যবহার করার প্রয়োজন রয়েছে। প্রতিদিনের ত্বকের যত্ন কিভাবে নিবেন তা নিচে দেওয়া হলো:
- প্রতিদিন কয়েকবার পরিষ্কার পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে নিন, এতে করে ধুলাবালি মুখে আটকে থাকতে পারবেনা।
- আপনার পছন্দের যেকোনো একটি ফেসপ্যাক সপ্তাহে অন্তত একদিন মুখে লাগিয়ে রাখুন এবং ফেসওয়াস এর সাহায্যে মুখ পরিষ্কার করার অভ্যাস গড়ে তুলুন।
- প্রতিদিন মুখে টোনার হিসেবে গোলাপজল, মধু ব্যবহার করতে পারেন।
- রাতে ঘুমানোর আগে কোনভাবে ময়শ্চারাইজার ব্যবহার করতে ভুলবেন না, প্রাকৃতিক ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করতে চাইলে দুধ, অলিভ অয়েল, লেবুর রস ইত্যাদি ব্যবহার করতে পারেন।
- শসার রস ডিপ ফ্রিজে সংরক্ষণ পরবর্তীতে কিউব করে মুখে ম্যাসাজ করলে ভালো ফলাফল পাওয়া যায়।
- রাতে ঘুমানোর সময় মুখে ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করলে সকালে ঘুম থেকে উঠে সবার আগে পরিষ্কার পানি দিয়ে মুখ পরিষ্কার করে নিন। কোন প্রোডাক্ট যেন দীর্ঘক্ষণ মুখে থেকে মুখের উজ্জ্বলতা না কমায় সেদিকে খেয়াল রাখুন।
গরম মৌসুমে ব্যবহারের জন্য বিশেষ ত্বকের মাস্ক ও প্যাক
অন্যান্য ঋতুর তুলনায় গরম মৌসুমে ত্বকের যত্ন কিছুটা অন্যরকম ভাবে নিতে হয়। গরমে ত্বকের বিশেষ যত্নে মাক্স ও প্যাক ব্যবহার করলে ত্বক থাকবে সুরক্ষিত এবং কোমল। দৈনন্দিন ব্যস্ততায় আমরা অনেকেই ফেসপ্যাক তৈরি করার সময় বের করতে পারিনা। সে ক্ষেত্রে অবশ্যই রেডিমেড ফেসপ্যাক ব্যবহার করা যেতে পারে। তবে গরমে ত্বকে সুরক্ষিত রাখতে সপ্তাহে অন্তত দুই দিন আপনার পছন্দের ফ্রেশ মাক্স এবং প্যাক অবশ্যই ব্যবহার করবেন।
উপসংহার
প্রিয় পাঠক বৃন্দ, যারা প্রতিনিয়ত গরমের ত্বকের সমস্যায় ভুগছেন আশা করছি আমাদের আজকের আর্টিকেল গরমে ত্বকের যত্নে কিছু কার্যকরী টিপস তাদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ হবে। আমাদের স্কিন কেয়ার টিপস যদি আপনাদের ভালো লেগে থাকে তাহলে অবশ্যই কমেন্টের মাধ্যমে জানান এবং এরকম তথ্যবহুল আর্টিকেল পাওয়ার জন্য আমাদের ওয়েবসাইটের সাথেই থাকুন।